Thursday 3 June 2021

শিব ও বিষ্ণুর মনে হয় ভূগোল জ্ঞান ছিল না ?

 


শিব ও বিষ্ণুর মনে হয় ভূগোল জ্ঞান ছিল না ?

“পুরাণের ভাষ্য মতে সতী দেহ ত্যাগ করলে শিব,নিজ স্ত্রীর দেহকে স্কন্দে করে, পাগলের মত নেচেছিলেন। আর এই সময়ে বিষ্ণু এসে সেই দেহকে, একান্ন খন্ড করে কেটে ছড়িয়ে দিল, শুধু ভারতবর্ষে। শিব ও বিষ্ণুর মনে হয় ভূগোল জ্ঞান ছিল না।”

এটা সহ আরও কিছু মন্তব্য করেছে কোনো এক মূর্খ, যার টোটাল কমেন্টটি আমি ফটো হিসেবে এই পোস্টের সাথে যুক্ত করে দিয়েছি, সেটা নিশ্চয় দেখে নিয়েছেন, এগুলোরই জবাব দিবো এই প্রবন্ধে, তাই কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক-

সতীর একান্ন পিঠের অবস্থান যেহেতু শুধু ভারতীয় উপমহাদেশে, সেহেতু এই মুসলমান এই প্রশ্ন তুলেছে যে- শিব ও বিষ্ণুর মনে হয় ভূগোল জ্ঞান ছিলো না।

এই প্রশ্নকর্তাকে জিজ্ঞেস করছি, ১৯৭১ সালের আগের ইতিহাসে কি বাংলাদেশ শব্দটি এবং বাংলাদেশের অস্তিত্ব দেখাতে পারবেন ? পারবেন কি ১৯৪৭ সালের আগে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে ? পারবেন না। একইভাবে প্রমাণ করতে পারবেন না ৫ হাজার বছর আগের ইতিহাসের দ্বারা বর্তমানের প্রায় ২০০ এর বেশি দেশের অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে।

পৃথিবীর সবেচেয়ে পুরোনো সভ্যতা হলো সিন্ধু সভ্যতা, যার সূচনা হয়েছিলো বর্তমান থেকে প্রায় ১২ হাজার বছর পূর্বে এবং এটা টিকে ছিলো প্রায় ৪ হাজার বছর। সিন্ধু সভ্যতার পরে এর পাশেই গড়ে উঠেছিলো আর্য সভ্যতা। এই সিন্ধু এবং আর্য সভ্যতাতেই পৌরাণিক কাহিনীগুলোর জন্ম এবং এই কাহিনীগুলোর যখন জন্ম, তখন পৃথিবীতে সভ্যতা ছিলো মাত্র একটি এবং পৃথক পৃথক দেশ বলতে কিছু ছিলো না, সেই সময় বর্তমানের ইউরোপ, আফ্রিকা, রাশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া ভূখণ্ডে কিছু লোকজন ছিলো বটে, কিন্তু তাদের সভ্যতার কোনো জ্ঞান ছিলো না, বলা যেতে পারে তারা ছিলো জঙ্গল বা গুহা নিবাসী; পৌরাণিক কাহিনীর কোনো জ্ঞান তাদের ছিলো না, তারা সতীর একান্ন পিঠের কী বুঝবে ? তাই সতীর দেহের একান্ন খণ্ডকে এমন সব জায়গায় ফেলা হয়, যে সব স্থান ছিলো সিন্ধু বা আর্য সভ্যতার অন্তর্ভূক্ত, এই পরিকল্পনায় যে, এসব স্থানের সংস্পর্শে এসে অনার্য বা অসভ্য লোকজন সভত্যার জ্ঞান লাভ করবে।

কোনো একটা দেশের সরকার, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, যেখানে বিদ্যুৎ নেই, রাস্তা ঘাট নেই, নেই স্কুল কলেজ, সেখানে কি বিশ্ববিদ্যালয় গড়বে ? গড়বে না। একইভাবে দেশের কোনো একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল পেতে পারে না কোনো বিমানবন্দর। কোনো একটি দেশের সরকার, দেশের সেই স্থানেই একটি বিশ্ববিদ্যালয় বা বিমানবন্দর স্থাপন করবে, যে এলাকার লোকজন জ্ঞান বুদ্ধি ও ধন সম্পদে সেটা পাবার যোগ্য; যেমন- বাংলাদেশে, ঢাকার পর একমাত্র সিলেট জেলায় আছে ব্রিটেন বা যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনের শাখা অফিস, এর একমাত্র কারণ লন্ডনের সাথে সিলেট এলাকার লোকজনের ডাল ভাতের সম্পর্ক, সিলেট এলাকার অসংখ্য লোকজন লন্ডনে বসবাস করে এবং বলতে গেলে তারা প্রতিদিন লন্ডনে যাতয়াত করে, তাই তাদের সুবিধার্থে ব্রিটেন সরকার সিলেটে দূতাবাসের অফিস বসিয়েছে, শুধু তাই নয় সিলেট থেকে সরাসরি লন্ডন যাওয়ার বৈমানিক সুবিধাও তারা পেয়েছে, এই সুবিধা কিন্তু সারা বাংলাদেশের অন্য কোনো এলাকার লোকজন পায় নি, তার মানে যে এলাকার লোকজন যেটা পাওয়ার যোগ্য, তারা ঠিক সেটাই পায়। এই বিবেচনায় সিন্ধু বা আর্য সভ্যতার যুগে সতীর একান্ন পীঠ পাবার যোগ্য যেসব এলাকার লোকজনের ছিলো, তারাই সেই সব পীঠাস্থানের সুযোগ সুবিধা পেয়েছে।

কোনো পীঠস্থান শুধু একটি মন্দির বা পূজা কেন্দ্র নয়, সেটা একটা জ্ঞানকেন্দ্রও। কোনো একটি দেশের একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সারা পৃথিবীর লোকজন যেমন জ্ঞান লাভ করে আসে, তেমনি পীঠস্থান দর্শন করেও লোকজন সেই সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করে আসে। এখন যেসব এলাকায় পীঠস্থান রয়েছে, সেসব এলাকার লোকজন তো ঐতিহাসিকভাবেই ভাগ্যবান, যেমন কারো বাড়ির পাশে যদি কোনো মেডিক্যাল কলেজ থাকে, তার মতো লাকি আর কে আছে ? সে সকালে বাড়ির পান্তা খেয়ে কলেজে গিয়ে ক্লাস করে এসে আবার দুপুরে বাড়ির খাবার খেতে পারে, একইভাবে পীঠস্থান এলাকার লোকজন বিনা পরিশ্রম ও বিনা অর্থ ব্যয়ে পীঠস্থানের সুখ সুবিধা এবং পীঠস্থানে যাওয়ার পূণ্য অর্জন করতে পারে, কিন্তু যাদের সেই সৌভাগ্য নেই, তাদের এখন উচিত বা কর্তব্য হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে জ্ঞান অর্জনের মতো পীঠস্থানে গিয়ে জ্ঞান ও পূণ্য অর্জন করা।

আশা করছি- সতীর একান্ন পিঠ কেনো ভারতীয় উপমহাদেশে তার জবাব আমার বন্ধুদের মুখে তুলে দিতে পেরেছি। এবার যাওয়া যাক এই মন্তব্যের পরের অংশে, যেখানে মন্তব্যকারী বলেছে-

“যদি শিব ও বিষ্ণু বিশ্বরে পরিচালক ও স্রষ্টা হন, এবং সতী যদি মহামায়া হন, তবে দেহের খন্ডিত অংশ,
পৃথিবীর অন্য দুর দেশে ও তো যাওয়া কর্তব্য ছিল, তা যায় নাই কেন ? একটি কথা স্মরণে নেওয়া দরকার, যখন পৌরাণিক যুগে, মূর্খ ও অর্বা চীনদের দ্বারা পুরাণ লিখিত হয়, এই লেখকদের ভূগোল সম্পর্কে ভাল জ্ঞান ছিল না। এক দেশের সাথে অন্য দেশের, যোগাযোগ ও যাতায়াত ছিল সীমাবদ্ধ। তাই মূর্খতা বশে, শিব ও বিষ্ণ ঈশ্বরের গুণবাচক নাম জুড়ে দিয়ে,,কাল্পিক কালীমূর্ত্তি তৈরি করে,ভূয়া পীঠস্থান গড়ে তুলে ভন্ড সাধু ও পান্ডাদের চলছে, সহজ সরল জন সমাজেকে ধর্মের নামে শোষন, ও অবাধে লুষ্ঠন। শিব ঈশ্বরের গুণবাচক নাম।”
-এসব বিষয়ের আলোচনা উপরেই হয়ে গিয়েছে, তাই এগুলো আর পয়েন্ট টু পয়েন্ট আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না। শুধু এই মন্তব্যকারীকে বলবো- আপনার বাপের বাপের বাপের বাপের বাপের বাপের বাপের উচিত ছিলো আপনার নাম কী হবে তা নির্ধারণ করে একটি দলিল লিখে রেখে যাওয়া। আমার এই কথার উত্তরে এখন আপনিই বলবেন, তার কী প্রয়োজন ? আমার যে জন্ম হবে সেটাই তো ছিলো অনিশ্চিত, তাহলে সাত পুরুষ আগে নাম ঠিক করার কী প্রয়োজন ? এই একইভাবে প্রয়োজন ছিলো না পৌরাণিক কাহিনী রচয়িতা মুনি ঋষিদের সারা পৃথিবীর ভূগোল জ্ঞানের; কারণ, তখন সভ্যতা বলতে ছিলো শুধু আর্য ও সিন্ধু সভ্যতার অধিভূক্ত এলাকা তথা ভারতীয় উপমহাদেশ, আর বাকি পৃথিবী ছিলো জঙ্গলাকীর্ণ, সেই জঙ্গল এলাকা নিয়ে ভেবে তারা নিজেদের সময় নষ্ট করতে চায় নি, একইভাবে তারা চায় নি কোনো জঙ্গলের মধ্যে কোনো পীঠস্থান প্রতিষ্ঠা করে তার মাহাত্ম্যকে হারাতে।

এরপর মন্তব্যকারী বলেছে,

“বামন পুরাণে দারুবনের কাহিনী নিম্নরূপঃ 
বস্ত্র ত্যাগ করে, সুদর্শন শিব ঘুরে বেড়াতেন। একদিন এভাবে মনিদের তপোবনে এলেন। মুনিগন তখন গভীর ধ্যানে মগ্ন। এমন সময় মুনিপত্নীগণ, শিবের সুঠাম দেহ দেখে, কামে বিমোহিত হয়ে, সভ্যতার সীমা লঙ্ঘন করে, যৌনতায় লিপ্ত হোলেন। ! মুনিগণ ধ্যানে ঐ অপকর্মের কথা জানতে পেরে, শিবকে ধরে পাথরে ঠুকে, শিবের লিঙ্গচ্ছেদ, করলেন। সেই খন্ডিত লিঙ্গ স্বর্গ, মর্ত, পাতালে সব ধ্বংস করতে লাগল। মুনিগণ ভয় পেয়ে গেলেন, এবং শিবের স্তব করতে লাগলেন। তখন দৈব আওয়াজ হলো, পাবর্তী যোনিরূপ ধারণ করলে, ঐই লিঙ্গ যোনিতে প্রবেশ করবে, এবং সব কিছু শান্ত হবে।। মুনিদের পার্থনায় ফলে পার্বতী স্ত্রী, যোনীর আকৃতি ধারণ করলেন,?? এবং শিবের খসে পড়া লিঙ্গ ঐই যোনীর মধ্যে প্রবেশ করলো???। সেখানে হতেই শুরু হলো লিঙ্গ পূজা।

এ ছারা কুর্মপুরাণে ও স্কন্দপুরাণে, এমন কদর্থ পূর্ণ লেখা শিবের নাম লেখা হয়েছে, যা উল্লেখ না করাই ভাল।”

(মন্তব্যটি পড়ার সুবিধার্থে এটিকে এডিট করেছি, এর আসল রূপ পাবেন ফটোপোস্টে)

-এর আগে আমি বহুবার বলেছি পুরাণগুলো নানাভাবে বিকৃত হয়েছে এবং তাতে নানা উদ্ভট ও অশ্লীল উপাখ্যান যুক্ত হয়েছে। বামন পুরাণের রেফারেন্সে এখানে শিবের যে কাহিনী এই মুমিন বলেছে,. সেটা যে মোটেই সত্য নয়, তার প্রমাণ আমি শিব সম্পর্কিত প্রচলিত কাহিনী থেকেই দিচ্ছি-

প্রথমেই সে বলেছে- “বস্ত্র ত্যাগ করে, সুদর্শন শিব ঘুরে বেড়াতেন।”

এমন কোনো ঘটনা শিবের কাহিনীতে থাকতেই পারে না। কারণ, শিব প্রয়োজন ছাড়া কোথাও যায় না, প্রয়োজন না হলে কারো সাথে কথাও বলে না। সব সময় ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে থাকা শিবের স্বভাব, তাই বস্ত্র ত্যাগ করে শিবের ঘুরে বেড়ানোর কোনো প্রশ্নই উঠে না। ফলে এর পরবর্তী কাহিনী- মুনিদের স্ত্রীর সাথে শিবের যৌনমিলন এবং শিবকে ধরে মুনিদের পাথরে ঠোকা এবং শিবের লিঙ্গচ্ছেদ একটি আকাশ কুসুম কল্পনা মাত্র। যে বা যারা এই কাহিনী বলে বা বিশ্বাস করে, সে বা তারা শিব সম্পর্কে কিছুই জানে না; শিব সর্বশক্তিমান দেবতা, সকল দেবতার সম্মিলিত শক্তি তার মধ্যে আছে বলেই তার নাম দেবাদিদেব মহাদেব। পৌরাণিক কাহিনীতে পাওয়া যায়, মুনি ঋষিরা তার দর্শন লাভের জন্য শত শত বছর ধরে ধ্যান করতো, তাই কোনো ভাবে তার দর্শন পেয়ে মুনি ঋষিরা তার সাথে এমন আচরণের কথা ভাবতেই পারবে না, আর লিঙ্গচ্ছেদ তো আরো পরের ব্যাপার। তারপরও যদি ধরে নিই যে মুনিরা ধরে শিবের লিঙ্গচ্ছেদ করেছিলো, তারপর সেই কাটা লিঙ্গ নিয়ে যে কাহিনীর অবতারণা করা হয়েছে, সেটা কতটুকু বাস্তব, সেটা এবার দেখা যাক-

বলা হয়েছে সেই খণ্ডিত লিঙ্গ স্বর্গ, মর্ত্য পাতালের সব ধ্বংস করতে লাগলো, শিবের এই কাটা লিঙ্গের যদি এত ক্ষমতা থাকে, তাহলে শিবের কত শক্তি চিন্তা করুন, এত শক্তিমান শিবকে ধরে কি পাথরে ঠোকা বা তার লিঙ্গ কাটা সম্ভব ?

এরপর বলা হয়েছে, শিবের ঐ কাটা লিঙ্গকে শান্ত করার জন্য পার্বতী যোনী রূপ ধারণ করে এবং শিবের কাটা লিঙ্গ ঐ যোনীর মধ্যে প্রবেশ করে শান্ত হয়। এখন পাথরের শিবলিঙ্গের নিচের অংশ যদি যোনী হয় এবং যোনীর মধ্যে যদি শিবের লিঙ্গ প্রবিষ্ট বলে কল্পনা করা হয়, তাহলে যোনীর উপরের দিকে লিঙ্গের মাথা থাকে কিভাবে ? যৌনকর্মের সময় যোনীর ভেতরে লিঙ্গের মাথাকে প্রবেশ করানো হয় এবং যোনীর বাইরে থাকে লিঙ্গের গোড়ার দিকের অংশ, আর গোড়ায় থাকে লিঙ্গের অণ্ডকোষ, এই যদি হয় প্রকৃত ঘটনা, তাহলে শিবলিঙ্গে শিবের লিঙ্গ বলে যাকে মুসলমানরা বলে থাকে সেটার মাথা বা লিঙ্গমনি যোনীর বাইরে বা উপরে থাকে কিভাবে ? শিবের পাষাণ প্রতীক যদি পার্বতীর যোনী ও শিবের পুংলিঙ্গ হয় এবং লিঙ্গটি যদি যোনীতে প্রবিষ্ট অবস্থায় থাকে, তাহলে লিঙ্গমনি যোনীর ভেতরে থাকার কথা, তা বাইরে কেনো ?

শিবলিঙ্গ নিয়ে যাদের মাত্রাতিরিক্ত চুলকানী, তারা যেন আমার এই প্রশ্নের জবাব দিয়ে যায়।

আশা করছি- সনাতন ধর্ম সম্পর্কে ফটোপোস্টে উল্লিখিত কটূক্তির জবাব আমার বন্ধুরা পেয়ে গেছে।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

Friday 16 October 2020

ঈশ্বর নিরাকার হলে দেব-দেবীদের আকার বা রূপ কিভাবে এলো ?

ঈশ্বর নিরাকার হলে দেব-দেবীদের আকার বা রূপ কিভাবে এলো ?

গীতার দ্বাদশ অধ্যায়ের ১ নং শ্লোকে অর্জুন, শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করেছেন-

"সতত ভগবানে সর্বকর্ম দিয়া যাঁহারা তোমার উপাসনা করেন, আর যাঁহারা নির্গুণ ব্রহ্মের উপাসনা করেন, এই উভয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সাধক কে ?"

এর জবাবে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-

"হে পার্থ, যাঁহারা আমাতে মন নিবিষ্ট করিয়া নিত্যযুক্ত হইয়া আমাকেই পরম শ্রদ্ধার সহিত উপাসনা করে, তাঁহারাই আমার মতে শ্রেষ্ঠ সাধক।"- (গীতা, ১২/২)

এই শ্লোকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে- ভক্তিমার্গে বা ভক্তিপথে ব্যক্ত উপাসনাই শ্রেষ্ঠ। তবে জ্ঞানমার্গে নির্গুণ ব্রহ্মের উপাসনাও নিষ্ফল নয়, এই পথেও স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণকেই পাওয় যায়, যেকথা শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন এর পরের শ্লোক, গীতার ১২/৩,৪ এ, এভাবে-

"কিন্তু যাঁহারা সর্বত্র সমবুদ্ধি সম্পন্ন, সর্বপ্রাণীর মঙ্গলপরায়ণ হইয়া, ইন্দ্রিয়গুলিকে বিষয় হইতে সংযত করিযা, যাঁহারা- অনির্দেশ্য, অব্যক্ত, সর্বব্যাপী, অচিন্ত্য, কূটস্থ, অচল, ধ্রুব, অক্ষর ব্রহ্মের উপাসনা করেন, তাঁহারাও আমাকে প্রাপ্ত হন।"

সগুন-নির্গুণ বা সাকার-নিরাকার, উভয়ই ঈশ্বরের বিভাব, তবে এর মধ্যে সাকার উপাসনা শ্রেষ্ঠ; কারণ, সকলের পক্ষে নিরাকার উপাসনা করা সম্ভব নয়। যে কথা শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন গীতার ১২/৫ নং শ্লোকে, এভাবে-

"যাঁহারা নির্গুন ব্রহ্মের উপাসনা করেন, তাঁহাদের অধিক কষ্টভোগ হয়। কারণ, দেহধারীগণ অধিক কষ্টে নির্গুণ ব্রহ্ম বিষয়ক নিষ্ঠা লাভ করতে পারেন।"

এই শ্লোকের সরল অর্থ হলো- নির্গুণ ব্রহ্ম বিষয়ক জ্ঞান ও নিষ্ঠা লাভ করা সকলের পক্ষে সহজ ও সম্ভব নয়। কারণ, দেহাত্মবোধ বিদূরিত না হলে নির্গুন ব্রহ্মে স্থিতিলাভ করা যায় না। আর এই অবস্থায় উত্তীর্ণ হতে পারেন শুধুমাত্র উচ্চস্তরের সাধকগণ, যা সাধারণ মানুষের শুধু নাগাল নয়, চিন্তারও বাইরে। এই সমস্যার সমাধানেই ব্যক্ত উপাসনা পদ্ধতির প্রয়োজন, যে উপাসনা পদ্ধতির পক্ষে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,

"যাঁহারা মৎপরায়ন হইয়া, আমাতে সর্বকর্ম সমর্পণ করিয়া, একমাত্র আমাকে ধ্যান করিতে করিতে উপসনা করেন, হে পার্থ, আমি তাঁহাদেরকে মৃত্যুময় সংসার সাগর হইতে উদ্ধার করিয়া থাকি।"-(গীতা, ১২/৬,৭)

তাই শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশ হলো- "আমাতেই মন স্থির করো, বুদ্ধি আমাতেই নিবিষ্ট করো, তাহা হইলে দেহান্তে তুমি আমাকেই পাইবে।"- (গীতা, ১২/৮)

আর শ্রীকৃষ্ণকে পেলেই যে মোক্ষলাভ হয়, সেটা তো গীতার ছত্রে ছত্রে প্রমাণিত।

যা হোক, প্রতীক উপাসনা বা মূর্তি পূজার কেনো প্রয়োজন, সে সম্পর্কে গীতাশাস্ত্রী শ্রীজগদীশ চন্দ্র ঘোষ, তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ "শ্রীগীতা"র ভূমিকায় বলেছেন-

"যাহা নির্গুণ, নির্বিশেষ, নিষ্ক্রিয়… মনুষ্য তাহা ধারণ করিতে পারে না এবং তাহার সহিত ভাব-ভক্তির কোনো সম্বন্ধও স্থাপন করিতে পারে না। তাহা অচিন্ত্যরূপ, নিজ বোধরূপ…। অথচ কোন তত্বে চিত্ত স্থির না করিলে আত্মবোধও জন্মে না। এই হেতু নির্গুণ ব্রহ্ম উপাসনায় মন স্থির করিবার জন্য প্রতীক উপাসনা অর্থাৎ যাহা ব্রহ্ম নয়, তাহাকে ব্রহ্মরূপে ভাবনা করার ব্যবস্থা।"

জগদীশচন্দ্রের এই মত থেকে স্পষ্ট যে- নির্গুণ ব্রহ্মে চিত্ত স্থির করার জন্য প্রথমে প্রতীক উপাসনার প্রয়োজন। শুরুতে প্রতীক উপাসনার মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে নত হয়ে, তার সাথে ভাব-ভক্তির সম্বন্ধ স্থাপন করে, আস্তে আস্তে আত্মবোধ জাগ্রত হলে সাধক নির্গুণ ব্রহ্মের উপাসনার উপযুক্ত হয়।

-একারণে শুরুতেই কাউকে নির্গুণ ব্রহ্মের উপাসনা করতে বলা আসলে তাকে অথৈ মহাসমুদ্রে ফেলে দেওয়া, যেখানে সে শুধু হাবুডুবুই খাবে এবং হাবুডুবু খেতে খেতেই তার ভবলীলা সাঙ্গ হবে। কিন্তু সে এই সংসাররূপ সাগরে বেঁচে যাবে, যদি সে কোনো খড়কুটা রূপ কাষ্ঠ পায়, এই কাষ্ঠই আসলে একটি প্রতীক, যাকে অবলম্বন করে সে বেঁচে যাবে এবং আস্তে আস্তে নির্গুণ ব্রহ্মের উপাসনার উপযুক্ত হবে।

সাধারণ মানুষের পক্ষে নিরাকারে মন নিবিষ্ট করা সম্ভব নয় বলেই, বাস্তবতা মেনে নিয়ে বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলনের প্রতীক "শহীদ মিনার" স্থাপন করা হয়েছে'; স্থাপন করা হয়েছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদের প্রতীক ঢাকার সাভারের "জাতীয় স্মৃতিসৌধ"। একই কারণে স্থাপন করা হয়েছে ঢাকার মীরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতীক "বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধ"। এই ব্যবস্থা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয়, পৃথিবীর সকল দেশে রয়েছে। এই সব প্রতীকের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে সেই বিষয়টি আগে ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং সেই সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান প্রদান করা হয়, এরপর নিজ ক্ষমতা ও আগ্রহ অনুসারে কোনো ব্যক্তি সেই প্রতীককে অবলম্বন করেই সেই বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করে এবং সে সম্পর্কে আরও উচ্চতর জ্ঞান লাভ করে; একারণেই শুরুটা হওয়া চাই প্রতীককে অবলম্বন করে, এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই নিরাকার ঈশ্বরের উপাসনার মাধ্যম হিসেবে প্রথম ধাপ হলো সাকার উপাসনা, যাকে সনাতন ধর্মে বলা হয়েছে মূর্তিপূজা।

মূর্তির মাধ্যমে বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করতেই করতেই মানুষ এক সময় ঈশ্বর সম্পর্কে উচ্চতর জ্ঞান অর্জন করতে পারে, তখন তারা বুঝতে পারে- যেকোনো দেব-দেবীর পূজার মাধ্যমে আসলে ঈশ্বরেরই পূজা করা হয় এবং সকল দেব-দেবী প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের বিভিন্ন কার্যকারী রূপ, তখন তারা সব ছেড়ে এক ঈশ্বরের প্রতীক শ্রীকৃষ্ণে মন নিবিষ্ট করে এবং এইভাবে উপাসনা করতে করতে এক সময় তারা নিরাকার ব্রহ্মের উপলব্ধি করতে পারে এবং সেই নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করতে করতে এক সময় তার সাথে একাত্ম হয়ে মোক্ষ লাভ করে। সুতরাং সাকার উপাসনা আসলে নিরাকার উপাসনারই প্রথম ধাপ এবং সাকার উপাসনা দুই ধাপে বিভক্ত, প্রথম ধাপে বহু দেব-দেবীর পূজা-প্রার্থনা এবং দ্বিতীয় ধাপে এক ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণের পূজা-প্রার্থনা।

সনাতন ধর্ম হলো বাস্তবতার ধর্ম, এই সব বাস্তবতাকে না বুঝে যারা সরাসরি নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনার কথা বলে, তারা আসলে বাস্তবতাকে অস্বীকার করে। যেমন কোনো নিরাকার ব্রহ্মের সাধক, কখনোই তারা ছোট বাচ্চাকে বোঝাতে পারবে না যে নিরাকার ব্রহ্ম আসলে কী ? ফলে সেই বাচ্চাকে দিয়ে সে কখনো নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করাতে পারবে না। এমনটি হলে সেই ছোট বাচ্চা ধর্মপথ থেকে বিচ্যুত হবে, এর থেকে বাঁচতে প্রথমে সেই ছোট বাচ্চাকে কোনো প্রতীককে নমস্কার করা শিখাতে হবে, প্রতীকের সামনে নত হওয়া শিখাতে হবে, যার মাধ্যমে সে নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনার একেবারে প্রাথমিক ধাপে প্রবেশ করবে।

যেসব হিন্দু সরাসরি নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনার কথা বলে, তারা আসলে সামাজিক বাস্তবতাকে না বুঝে অবাস্তব থিয়োরি ইসলামের অনুসারী মুসলমানদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তা বলে। কারণ, আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় মুসলমানরা এক নিরাকার আল্লার উপাসনা করে; কিন্তু কোরান হাদিসে আল্লার আকারের বর্ণনা দেওয়া আছে, সেই বর্ণনা মোতাবেক মূর্তি তৈরি করলে সেটা হিন্দুদের মতো হয়ে যায় বলে তারা সেটা করে না। এছাড়াও কোরান, হাদিসের বইকে তারা শ্রদ্ধা করে, যেটা প্রতীক উপাসনার পর্যায়ে পড়ে; তারা পশ্চিম দিককে শ্রদ্ধা ক'রে সেদিকে পায়খানা প্রস্রাব করে না বা পশ্চিমদিকে পা দিয়ে ঘুমায় না, এটাও একধরণের প্রতীকী উপাসনা। যেকোনো মসজিদকে তো তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে এবং তার জন্য দো্য়াও পড়ে। মসজিদ দেখে শ্রদ্ধা ভক্তি করা এবং তার জন্য দোয়া দরূদ পড়া কি প্রতীক উপাসনা নয় ? একই কথা প্রযোজ্য মক্কার কাবা শরীফ এবং তার ছবির ক্ষেত্রেও। হিন্দুদের বিভিন্ন দেব-দেবীর ছবি ঘরে রাখার মতো মুসলমানরাও বিভিন্ন দর্শনীয় মসজিদ, বিশেষ করে মক্কার কাবা শরীফের ছবি ঘরে রাখে এবং তাকে শ্রদ্ধা ভক্তি করে, যা একধরণের প্রতীক উপাসনা ই। বর্তমানে আরবি হরফে লেখা "আল্লাহু" এবং "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম" লেখা ছবিও মুসলমানদের কাছে শ্রদ্ধার প্রতীকে পরিণত হয়েছে, তাই এগুলো তারা ঘরের মধ্যে, বাড়ির গেটে সেট করে রাখে। এগুলোও কি প্রতীক উপাসনা নয় ?

সনাতন ধর্মে উপাসনাযোগ্য প্রতীকের তো শেষ নেই, ইসলামে কী কী প্রতীকের উপাসনা করা হয়, তার বর্ণনা সংক্ষেপে উপরে দিয়েছি; খ্রিষ্টান মতবাদে- যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মরার ছবি, সদ্যজাত যীশু এবং তার মা মেরীর ছবি এবং শুধু মেরীর ছবিও খুবই শ্রদ্ধার প্রতীক এবং এগুলোর মাধ্যমের খ্রিষ্টানরা তাদের নিরাকার ঈশ্বরের উপাসনা করে। বৌদ্ধ মতবাদেও গৌতম বুদ্ধের ছবি এবং তার মূর্তি বৌদ্ধদের উপাসনার মাধ্যম। ধর্ম এবং ধর্মীয় মতবাদে প্রতীক উপাসনা তো মাস্ট, রয়েছে যেকোনো দেশের প্রতীক, পতাকা; এমনকি যেকোনো জনসংঘ, দল বা বাণিজ্যিক কোম্পানিরও প্রতীক বা লোগো থাকে, যেগুলো সেই জনসংঘ, দল বা কোম্পানির লোকের কাছে বেশ শ্রদ্ধার বিষয়। এমন কি যে আর্য সমাজীরা নিরাকার উপাসনার পক্ষে এত গলা ফাটায়, তারাও ওঁ এর একটি বিকৃতি রূপ "ও৩ম" ব্যবহার করে, এটা কি সাকার উপাসনা নয় ? যেকোনো প্রতীক তো সাকার ই। এভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে পৃথিবীর সর্বত্র প্রতীক উপাসনা রয়েছে এবং এটাই সনাতন ধর্মের প্র্যাকটিক্যাল শিক্ষা। তাই জেনে বা না জেনে, জ্ঞানে বা সজ্ঞানে- পৃথিবীর সকল মানুষ সনাতনী বিধি বিধান পালন বা চর্চা করে আসছে।

এসব বিষয় উপলব্ধি না করে, মুসলমানদের সস্তা প্রচার- আমরা এক নিরাকার আল্লার উপাসনা করি- তে প্রভাবিত হয়ে, সকল সনাতনীর জন্য নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা চালুর চিন্তা ও তার প্রচার করা মূর্খামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ, সকল মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি কখনো এক হয় নি, কখনো এক হবেও না, তাই সকলের জন্য এক নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা কখনো বাস্তব সম্মত নয়।

প্রতীক উপাসনার বাস্তবতা কোথায়, এ সম্পর্কে একটি উদাহরণ নিচে দিচ্ছি-

ধরে নিন, বাংলাদেশ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ কোনো এক বিদেশী বাংলাদেশ ঘুরতে এসে কোনো এক জেলা শহরে তিন রাস্তার মোড়ে উঁচু বেদীর উপর নির্মিত কোনো এাকটি মূর্তি দেখতে পেলো। এটা সম্পর্কে কৌতূহলী হলে প্রথমেই সে তার গাইডকে জিজ্ঞেস করবে- এটা কী, আর এটা এখানে কেনো ? এর জবাবে গাইড তাকে জানাবে, এটা মুক্তিযুদ্ধের একটি প্রতীক। তারপর সেই বিদেশী জিজ্ঞেস করত পারে মুক্তিযুদ্ধ কী, এটা কত সালে হয়েছিলো এবং সে সময় কী কী ঘটেছিলো ? এর জবাবে গাইড তাকে যা ই জানাক, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সে আগ্রহী হলে সে নেট ঘেঁটে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করবে, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে যাবে, ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবে, মীরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যাবে, বাংলাদেশের পতাকার বিবর্তনের ইতিহাস পড়বে, দেশের সকল জেলায় ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত ভাস্কর্যগুলো দেখতে যাবে, এভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর সে এমন উচ্চতর জ্ঞান লাভ করবে, যখন তার কাছে প্রথম দেখা সেই জেলা শহরের ভাস্কর্যটির হয়তো অতটা গুরুত্বই থাকবে না, যদিও তার জানার শুরুটা হয়েছিলো এখান থেকেই।

সনাতন ধর্মে নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনার স্তরে পৌঁছতে কোনো বিগিনারকে প্রতীক উপাসনা বা মূর্তিপূজা ঠিক 

এইভাবে নিবিষ্ট করে এবং পর্যায়ক্রমে তাকে উচ্চস্তরে পৌঁছে দেয়।

তাই প্রতীক উপাসনা বা মূর্তিপূজা নিরর্থক নয়; এটা উচ্চ স্তরের সাধকদের জন্য নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করে ব্রহ্ম লাভের প্রথম পদক্ষেপ মাত্র। নিরর্থক তারা, যারা মূল বিষয় না বুঝে শুরুতেই সবার জন্য নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনার কথা বলে। যদিও গীতার বহুশ্লোক অনুযায়ী মোক্ষ লাভের জন্য কষ্টসাধ্য নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনার কোনো প্রয়োজনই নেই, একমাত্র শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান এবং তাতে মন নিবিষ্ট করাই যথেষ্ট। তারপরও যারা নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করে মোক্ষ লাভ করতে চান, করতে পারেন, কিন্তু আপনাদের জন্যও স্টার্টিং পয়েন্ট হলো কোনো প্রতীক উপাসনা বা মূর্তির পূজা। আমার এই কথা যে কতখানি সত্য ও বাস্তব, সেটা নিজেদের জীবনের দিকে তাকালেই তার প্রমাণ পাবেন, আজ যারা নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা বলে গলা ফাটাচ্ছেন, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পরই কি আপনারা সেই জ্ঞান পেয়ে গিয়েছিলেন ? ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রথম যাকে পেয়েছিলেন, তিনিও একজন আকার, তিনি মা। তারপর জ্ঞান বুদ্ধির বিকাশের সাথে সাথে দেব-দেবীর মূর্তি বা ছবির সামনে আপনাকে নত হওয়া শিখিয়ে আপনার বাবা মা আপনাকে শিখিয়েছিলো কিভাবে ভগবানের পূজা করতে হয় এবং তার কাছে প্রার্থনা করতে হয়। শিশুকাল থেকে সেই আকার বা প্রতীককে ধরেই ধর্মীয় জগতে আপনার পথচলা, যে পথ চলতে চলতে আপনি আজ নিরাকার ব্রহ্মের চিন্তায় পৌঁছে গেছেন। তাই নিরাকার ব্রহ্মের বিষয়টা শুরুতে কেউ বোঝে না, বোঝা সম্ভব নয়; আকার দিয়েই প্রথমে কাউকে কোনো বিষয় বোঝাতে হয়, তারপর সে আস্তে আস্তে নিরাকারের দিকে এগিয়ে যায়, যার পারিভাষিক টার্ম হচ্ছে- মূর্ত থেকে বিমূর্ত।

তাই নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা সাকার দিয়েই শুরু হয় বা শুরু করতে হয়, এখন প্রশ্ন হলো- ঈশ্বর তো নিরাকার, তাহলে দেব-দেবীরা কোথা থেকে এলো আর তাদের আকারই বা কিভাবে কল্পিত হলো ?

আমরা জানি- শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুনকে যে বিশ্বরূপ প্রদর্শন করেছিলেন, তাতে তিনি নিজের মধ্যেই সকল দেব-দেবীকে প্রদর্শন করিয়েছিলেন। সেই থেকেই দেব-দেবীদের রূপ কল্পিত হয়েছে এবং সেই কল্পনা অনুসারে দেব-দেবীদের মূর্তি নির্মান করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান হয়, তাহলে এই দেব-দেবীদের তার কী প্রয়োজন আর আমরাই বা কেনো ঐ সকল দেব-দেবীর পূজা করে থাকি ?

-সনাতন ধর্ম বাস্তবতার ধর্ম এবং এটা সব সময় আমাদেরকে বাস্তবতার শিক্ষা দেয়। যেকোনো দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সেখানে রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী একজন প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি থাকে। তিনি রাষ্ট্রপরিচালনার সুবিধার্থে তার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জন্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী নিয়োগ করে থাকেন, এদেরকে সহায়তা করার জন্য থাকে বিভিন্ন পদমর্যাদার সরকারী কর্মচারীবৃন্দ। সবাই মিলে রাষ্ট্রটাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ বা ভারতের ক্ষেত্রে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হলেন রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, কিন্তু তিনি একা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারেন না, রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য তিনি নির্ভর করেন তার সরকারী কর্মচারীসহ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীদের উপর, যদিও এদের সকলের যে ক্ষমতা, তা প্রধানমন্ত্রীরই দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রী চাইলে তাদের সেই ক্ষমতাকে কেড়ে নিতেও পারেন।

সমাজ বা রাষ্ট্রব্যবস্থার এই বাস্তবতার শিক্ষাকেই লালন করা হয় বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজার মাধ্যমে। কারণ- বাস্তব জীবনে মানুষ শুধু কোনো একজনকে সন্তুষ্ট করে চলতে পারে না, তাকে প্রতিদিনের জীবনে, প্রতিটা ক্ষেত্রে নানাজনকে সন্তুষ্ট করে পথ চলতে হয়। শুরু করছি একেবারে বাড়ি থেকে- আপনার বাড়িতে যতজন সদস্য, ততজনকেই সন্তুষ্ট করে আপনাকে চলতে হবে, মন রক্ষা করে চলতে হবে পাড়া প্রতিবেশীদেরকেও। আপনি যদি ব্যবসায়ী হন, সকল কাস্টমারের মন আপনাকে রক্ষা করতে হবে। আপনি যদি চাকুরীজীবী হন, অফিসের সকলের মন যুগিয়ে আপনাকে চলতে হবে। মন রক্ষা করে চলতে হবে আপনার এলাকার মেম্বার, কমিশনার, চেয়ারম্যানসহ ছোট বড় সকল রাজনৈতিক নেতাদের; কারণ, কখন যে কাকে আপনার প্রয়োজন হবে, সেটা আপনি নিজেও জানেন না, তাই সকলের মন রক্ষা করে না চললে আপনি সামাজিকভাবে বিপদে পড়বেন। এই যাদের মন রক্ষা করে বা তাদেরকে সন্তুষ্ট করে আপনার চলতে হচ্ছে, এরা সকলেই একেক প্রকারের, একেক ক্ষমতার অধিকারী দেব-দেবী, যাদের সকলের মাথার উপরে রয়েছে রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী প্রধানমন্ত্রী।

আবার রাষ্ট্রের একজন সাধারণ ব্যক্তির পক্ষে রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী প্রধানমন্ত্রীর সাথে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাত করা প্রায় অসম্ভব বা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আবার এমন ব্যক্তিও রয়েছে, যারা চাইলেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা সাক্ষাত করতে পারে; হয় এরা জন্মসূত্রে প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়, নয়তো কর্ম ও গুণে এরা নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর নিকটে নিয়ে যেতে পেরেছে। তো যে সাধারণ নাগরিকের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করা সম্ভব নয়, সেই সাধারণ নাগরিকও যদি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চায়, প্রথমত তাকে প্রধানমন্ত্রীর ভক্ত হতে হবে, তারপর তার দেখা করার পক্ষে উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে, তারপর তাকে গিয়ে ধরতে হবে গ্রামের পাতিনেতাকে, পাতিনেতা গিয়ে ধরবে শহরের নেতাকে, সেই নেতা গিয়ে ধরবে এমপিকে, এমপি যদি মন্ত্রী না হয়, সে গিয়ে ধরবে কোনো মন্ত্রীকে, সেই মন্ত্রী যদি সিনিয়র মন্ত্রী না হয়, সে গিয়ে ধরবে কোনো সিনিয়র মন্ত্রীকে, যে প্রধানমন্ত্রীর খুব ঘনিষ্ঠ, সেই মন্ত্রী যদি চায় তো, সে সেই সাধারণ ব্যক্তির সাথে প্রধানমন্ত্রীর দেখা করিয়ে দিলেও দিতে পারে। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী প্রধানমন্ত্রীরূপ ঈশ্বরকে পাওয়ার এই প্রসেস আসলে সনাতন ধর্মের দেবতত্ত্বের মধ্যে নিহিত। যেকোনো দেব-দেবীর পূজায় যে ভক্তি সে নিজের মধ্যে সৃষ্টি করে, সেই ভক্তি তাকে আস্তে আস্তে ঈশ্বরের সান্নিধ্যে নিয়ে যায় বা যেতে পারে।

কোনো মানুষ শুধু একজনকে সন্তুষ্ট করে চলতে পারে না, যেটা আগেও বলেছি; জীবন যাপনের তাগিদেই তাকে নানাজনকে নানাভাবে সন্তুষ্ট করে চলতে হয়, সমাজ জীবনের এই শিক্ষাই দেওয়া হয় বহু উদ্দেশ্যে বহু দেব-দেবীর পূজার মাধ্যমে। যে কারণে সনাতন ধর্মে বহ দেব-দেবীর পূজার ব্যবস্থা রয়েছে, আর বহু দেব-দেবী যে সনাতন ধর্মে স্বীকৃত সেটা তো শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপের মধ্যেই রয়েছে। এছাড়াও শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন- সকল দেবতার পূজার মাধ্যমে আসলে তারই পূজা করা হয় (৯/২৩) এবং দেব-দেবীদের পূজা করে ভক্তরা যে ফল লাভ করে, সেটা শ্রীকৃষ্ণই দেয় (৭/২২) তাই বহু দেব-দেবীর পূজা যে সনাতন ধর্ম স্বীকৃত তাতে কোনো সন্দেহ নেই এবং ঈশ্বর নিরাকার হলেও তাকে বোঝা এবং পাওয়ার সুবিধার্থে প্রথমে তার আকাররূপ কোনো দেব-দেবীর আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়, সেই দেব-দেবীর পূজা করে নিজের মধ্যে ভক্তি সৃষ্টি করতে হয়। মানুষ যেহেতু কোনো আকার বা প্রতীক ব্যতীত নিজের ভক্তি শ্রদ্ধাকে প্রদর্শন করতে পারে না, যেকারণে শহীদ মিনার বা জাতীয় স্মৃতিসৌধের সৃষ্টি, সেহেতু নিরাকার ঈশ্বরের প্রতি নত হতে বা তার প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যম হিসেবে দেব-দেবীদের উৎপত্তি, যা সমাজ ব্যবস্থার বাস্তবতার প্রতিরূপ।

আলোচনার শেষে সারসংক্ষেপ হিসেবে বলা যায়- দেবদেবীরা হলেন ঈশ্বরের বিভিন্ন শক্তি বা ক্ষমতার প্রকাশ, যেমন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার প্রকাশ হলো তার মন্ত্রী আমলাসহ সকল সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী বৃন্দ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেমন সকলে পৌঁছতে পারে না, তাকে বিভিন্ন নেতা মন্ত্রীর হাত ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছতে হয়, তেমনি বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা করে নিজের মধ্যে ভক্তির সৃষ্টি করে ঈশ্বরের সান্নিধ্যে যাওয়া যায়। ঈশ্বর নিরাকার হলেও নিরাকারের সামনে যেহেতু কেউ নত হতে পারে না বা কোনো নিরাকারে ভক্তি শ্রদ্ধা অর্পন বা প্রদর্শন করা যায় না, সেহেতু ভক্তদের সুবিধার্থেই ঈশ্বরের বিভিন্ন সাকার শক্তির প্রকাশ দেবদেবীদের মূর্তি বানিয়ে তার সামনে নত হয়ে তার মাধ্যমে ঈশ্বরের আরাধনা করে ঈশ্বরের প্রতি যে আমাদের ভক্তি আছে, তার প্রমাণ আমাদেরকে দিতে হয়, এজন্যই নিরাকার ঈশ্বরের সাকার শক্তিরূপ দেব-দেবীদেরকে পূজা আমাদের করতে হয়, যেহেতু আমরা স্বল্পজ্ঞানী সাধারণ মানুষ; কিন্তু যখন আমাদের জ্ঞানের উন্নয়ন ঘটবে, যখন আমরা বুঝতে পারবো যে এক শ্রীকৃষ্ণই সব, তখন সবধরণের মূর্তি পূজা ছেড়ে শুধু শ্রীকৃষ্ণে মন নিবিষ্ট করলেই হবে, যদিও এটা সাকার উপাসনা ই এবং ঈশ্বর প্রাপ্তির তুলনামূলক সহজ পথ এটা। কিন্তু যদি কেউ এর চেয়েও কঠিন পথে নিরাকার ঈশ্বরের সাধনা করতে চায়, সেটাও সে করতে পারে, কিন্তু তার ফল হবে একই, যেকারণে- গীতার ১২/৩,৪ এ বলা হয়েছে,

"কিন্তু যাঁহারা সর্বত্র সমবুদ্ধি সম্পন্ন, সর্বপ্রাণীর মঙ্গলপরায়ণ হইয়া, ইন্দ্রিয়গুলিকে বিষয় হইতে সংযত করিযা, যাঁহারা- অনির্দেশ্য, অব্যক্ত, সর্বব্যাপী, অচিন্ত্য, কূটস্থ, অচল, ধ্রুব, অক্ষর ব্রহ্মের উপাসনা করেন, তাঁহারাও আমাকে প্রাপ্ত হন।"

নিরাকার ব্রহ্মের কঠিন সাধনা করে যদি শেষ পর্যন্ত শ্রীকৃষ্ণকেই প্রাপ্ত হয়, তাহলে নিরাকার ব্রহ্মের এই কঠিন সাধনার দরকার কী, গীতার মতে- শ্রীকৃষ্ণের সাকার সাধনাতেই আমি তো তাকে লাভ করতে পারছি ?

নিরাকার ঈশ্বরের সাকার রূপ দেব-দেবীর কল্পনা কেনো করা হয়েছে এবং তাদের পূজা আমাদেরকে কেনো করতে হয়, আশা করছি- উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমার পাঠক বন্ধুদেরকে তা বোঝাতে পেরেছি।

জয় হিন্দ।

জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

নকল ভগবানকে আসল মনে করা অনুকূল ভক্তদের কাছে কিছু প্রশ্ন:

নকল ভগবানকে আসল মনে করা অনুকূল ভক্তদের কাছে কিছু প্রশ্ন:

তিনি যদি পূর্ণব্রহ্ম হন, তাহলে ১৯৪৬ সালের অক্টোবর মাসে, নোয়াখালিতে মুসলমান কর্তৃক হিন্দু হত্যার পর, পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের রক্ষার্থে কোনো স্টেপ না নিয়ে, নভেম্বর মাসে তিনি তার জন্মস্থান পাবনার আশ্রম এবং হাজার হাজার শিষ্য ও অনুরাগীদের ছেড়ে, স্থায়ী ভাবে ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে পালিয়ে গিয়েছিলেন কেনো ?

তিনি পূর্ণব্রহ্ম হলে তার পাবনার আশ্রম ১৯৭১ সালে মুসলমানরা দখল করে কিভাবে ? 

আশ্রমের সেই জমির উপর ই বর্তমানে পাবনা মেন্টাল হসপিটাল অবস্থিত।

পূর্ণব্রহ্ম কেনো এখন পর্যন্ত সেই আশ্রমের ভূমি উদ্ধার করতে তার অনুসারীদের সাহায্য করতে পারে নি ?

অনুকূল চন্দ্র বলেছে- 

“বুদ্ধ, ঈশায় বিভেদ করিস

চৈতন্য রসুল কৃষ্ণে, 

জীবোদ্ধারে হন আবির্ভাব

একই ওঁরা তাও জানিস নে ?”

-এই কথা বলে শ্রীকৃষ্ণের সাথে অন্যদেরকে সমান করে দেখে, অনুকূল, শ্রীকৃষ্ণকে ছোট করেছে কি না ?

“মেয়ের চাকরি মহাপাপ” বলে অনুকূল নারী সমাজকে ছোট করেছে কি না, যেখানে সনাতন ধর্মে নারী ও পুরুষকে সমমর্যাদা দেওয়া হয়েছে ?

এছাড়াও হিন্দু মহাসভায় যোগদান না করার প্রসঙ্গে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে অনুকুল ঠাকুর বলেছিলেন-

"আমি নির্ঘাত জানি, রসুল এসেছিলেন সর্বমানবের মঙ্গলের জন্যে, সংহতির জন্যে, শান্তির জন্যে।  রসুল ও কোরাণের দোহাই দিয়ে দেশকে খণ্ডিত করার পরিকল্পনা বানচাল করে দিন। আমি তো বুঝি---- খাঁটি  হিন্দু, খাঁটি মুসলমান, খাঁটি  খ্রীষ্টান, খাঁটি বৌদ্ধ এঁদের মধ্যে কোন তফাৎ নেই। সবাই  বাঁচা- বাড়ার  পূজারী”

এটা বলে অনুকূল হিন্দুদের জন্য কোনো উপকার করেছে, না অপকার করেছে ? 

অনৃকূল ভক্তদেরকে বলছি- অনুকূল চন্দ্রকে নিয়ে প্রচার করার আগে, আগে এই সব প্রশ্নের জবাব দেবেন, না হলে ঘেউ ঘেউ করা বন্ধ করবেন; কারণ, সনাতন ধর্ম নিয়ে কাউকে আর ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।

জয় হিন্দ।

-----------------------------

এছাড়াও কিছু নির্বোধের কাছে অনুকূল হলো পূর্ণব্রহ্ম বা ভগবান, আবার কারো কাছে কল্কি অবতার অনুকূলের শেষ জীবনের কিছু ট্রাজেডির কথা জানতে হলে পড়ুন নিচের এই লেখাটি, লিখেছেন- কুশল চক্রবর্তী, লেখাটি পড়ুন আর ভাবুন অনুকূল কোনো পূর্ণব্রহ্ম হতে পারে কি না, আর যেসব নির্বোধ তাকে পূর্ণব্রহ্ম বা অবতার ভাবে, তাদের গতি কী ? 

“এই সেদিন চট্টগ্রামের দেওয়ানজী পুকুরপাড়ের সৎসঙ্গ আশ্রম থেকে অনুকূল ঠাকুরের জীবনী এবং বাণীর অনেকগুলো বই নিলাম। এর মধ্যে "প্রেমের যমুনা কাঁদিয়া আকুল" নামক বইটি পড়ে আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। অনুকূল ঠাকুরের শেষ জীবনের কথা নিয়েই বইটি প্রধানত রচিত।" সে বইতে "ইতিহাসের একটি অলিখিত মসীলিপ্ত অধ্যায়" নামক অধ্যায়ে যে তথ্যগুলো তা নিচে পর্যায়ক্রমে দিচ্ছি-

১. অনুকূল ঠাকুরের শেষ সময়ে, বিশেষ করে শেষের দুইবছর তার বড় ছেলে তার হাত থেকে সকল ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে পার্লার ভবন সংলগ্ন একটি ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে (বাথরুমে) একরকম বন্ধী করেই রাখে।

২.সেই বন্ধীদশা থেকে মুক্তির জন্যে অনুকূল ঠাকুর সর্বদাই হা হুতাশ, হায় হায় করে নিজের গালে নিজেই থাপ্পড় মারতেন। বিভিন্ন রকমের আত্মপ্রলাপ বকতেন।যেমন- মা! মা!; হায় আমার একি হইল! ; আমি পাবনা যাবো- আমি পাবনা যাবো; আমি বন্ধী শাহজাহান! ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু চারদিকে ছিলো তার বড় ছেলের সতর্ক পাহারা - যাতে তার বড় ছেলের লোক ছাড়া কেউ যেন তার সাথে দেখা করতে না পারে।

৩.এই সময়ে অনুকূল ঠাকুরের তীব্র মস্তিষ্কবিকৃতি দেখা যায়! কোলকাতা থেকে বিভিন্ন মনোচিকিৎসক এসে তার নিয়মিত চিকিৎসা করতো। এই সময়ে সে প্রচণ্ড অবহেলায় বাথরুমের পাশে ছোট্ট একটা রুমে থাকতেন এবং দিবারাত্রি হা হুতাশ এবং কান্না করতেন। এবং বলতেন - " আমি বন্ধী শাহজাহান - আমাকে ignore করা হয়- insult করা - আমি সবই বুঝতে পারি!"

৪. অনুকূল ঠাকুরের মৃত্যুর সময়ের ঘটনাক্রম:

১৯৬৯ সালের ২৬ জানুয়ারি (ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস)

* সকালে ঠাকুরের ৯৮ ডিগ্রী জ্বর এবং তার সাথে কাসি।

* রাত্রি দশটার পরে পেটে বায়ু জমে এবং বুকে ব্যথা শুরু হয়ে ঘন ঘন জলের তৃষ্ণা পেতে থাকে।

* ঠাকুর ননীগোপাল মণ্ডল নামে এক ডাক্তারকে অনুরোধ করেন যেন তার সাথে থাকে এবং তার ঘরে ঘুমায়, কিন্তু ডা. ননীগোপাল সেইদিন ছিলেন না। তার ১১ টার পরে থেকে ঠাকুরের অসুস্থতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। শুয়ে থাকলে অসুস্থতা বাড়ে, তাই উঠে বসেন। এভাবেই ক্ষণিক বসা, ক্ষণিক শোওয়া করতে করতে তিনি প্রচণ্ড অস্থির এবং দুর্বল হয়ে পরেন।

* রাত্রি ৩ টায় ঠাকুর আরো অসুস্থ হয়ে পরেন। তার প্রচণ্ড শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট দেখা দেয়। তখন ঠাকুর তার পাশে কাউকে না দেখে হঠাৎ সুধাপাণিমাকে বলেন -

" আর সবাই কোথায় গেল? তুই ছাড়া আমার কাছে আর কেউ নেই! বড় খোকা, মণি, কাজল কখন আসবে?"

* রাত্রি ৪. ২৫ মিনিটে ঠাকুরের অবস্থা প্রচণ্ডভাবে খারাপ হতে থাকায় তাকে কাজলদা ( ডাক্তার ছোট ছেলে) এসে দুটি ইনজেকশন দেয়, কিন্তু কোন কাজ হয় হচ্ছে না দেখে অক্সিজেন দিতে যান। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেখেন অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই! দুইদিন আগেই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কেউ সরিয়ে রেখেছে (ছোটদাপন্থীদের সিলিন্ডার সরানো বিষয়ে বড়দার প্রতি সন্দেহ)। ঠাকুরের অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে দেখে কাজলদা নিজেই অক্সিজেন আনতে ছুটে গেলেন।

 * ৪. ৫০ মিনিটে অক্সিজেন আনতে দেরি করায় আর অক্সিজেন দেয়া যায়নি ; কাজলদা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ঘরে ঢুকে অবস্থা বেগতিক দেখে, আবার ইঞ্জেকশন দিলেন, নাকের ভিতরে নল ঢুকিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া চালু করতে আপ্রাণ চেষ্টা করলেন। কিন্তু অবশেষে সকল সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থকাম করে দিয়ে ঠাকুর মৃত্যুবরণ করেন। ইতিমধ্যে বড়দা (বড় ছেলে)এসে উপস্থিত হন।

* ২৭ জানুয়ারি থেকে তার বড় ছেলের ( অমরেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী) সক্রিয় (ছোড়দাপন্থীদের ভাষায় বিতর্কিত) কার্যক্রমে অনেক দুঃখজনক, হৃদয়বিদারক ঘটনার সূত্রপাত ঘটে, যা ভাষায় প্রকাশ করায় মতো নয়! আগ্রহীরা বইটি থেকে পড়ে নিবেন। অনুকূল ঠাকুরকে যখন শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় একটি বেঞ্চে শুইয়ে। দুইপাশে তার হাত ঝুলতে থাকে! প্রচণ্ড তাড়াহুড়া করে তার মৃতদেহ শ্মশানঘাটে নেয়া হয়। তার দেহকে যখন অগ্নিসংস্কার করা হয় তখন তার দেহ থেকে টাটকা তাজা রক্ত বের হতে থাকে। দাহকার্য বিলম্ব হচ্ছে দেখে বড়দা অধৈর্য হয়ে বারবার বলছে- " কিরে হলো?আর কত দেড়ী? "( এইসকল বিভিন্ন ঘটনায় ছোটদা পন্থীদের প্রচণ্ড সন্দেহ বড়দার প্রতি)।

*২৮ জানুয়ারির সকালবেলা তার বড় ছেলে ঠাকুরের পার্লার ঘরে বসে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করে," বাবা আমাকে তার খাটে বসতে বলেছেন "বলেই পরবর্তীকালে ঠাকুরের খাটে বসা সহ সকল ক্ষমতা নিজের কব্জায় নিয়ে নেন। পাশাপাশি ৫৭ সালের একটা গুপ্ত দলিলের দোহাই দিয়ে নিজেকে "সৎসঙ্গ " এর Spiritual Head and Guide ঘোষনা করে তার অন্যদুই ভাইকে প্রায় সকল কিছু থেকেই বঞ্চিত করেন। এবং সেখান থেকেই শুরু হয় সৎসঙ্গ এর বড়দাপন্থী -ছোটদাপন্থী পরস্পর বিরোধী সমান্তরাল সংগ্রাম। এর শেষ কবে হবে তা আমরা কেউ জানি না!

( এই লেখাটি আমি "প্রেমের যমুনা কাঁদিয়া আকুল" বইয়ের ৫৯ পৃষ্ঠা থেকে ৬৭ পৃষ্ঠা অনুসরণে সংক্ষেপে লিখেছি। মূলত জানার জন্যেই এই লেখাটি লেখা। আমি অনুকূলপন্থীদের কাছে বিশেষ করে বড়দাপন্থীদের কাছে এর যৌক্তিক, তথ্যপূর্ণ মতামত আশাকরছি। অনুকূল ঠাকুরের শেষজীবনের এই করুন পরিণতির কথা পড়ে মনটা বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে যায় আমার। তাই এই সম্পর্কে আমি বিস্তারিত জানতে চাই।)

----------------------------

সৎসঙ্গ এবং অনুকূল সম্পর্কে আরেকজনের মন্তব্য পড়ুন  নিচের এই প্রবন্ধে-

সৎসঙ্গ বা অনুকূল ঠাকুরের শিষ্যরা ভ্রান্ত পথে আছে।কারন, ধর্মের পথ হচ্ছে গুরু ও কৃষ্ণের প্রতি অনুগত থাকা।কিন্তু এখানে সবাই অনুকূল ঠাকুরের প্রতি অনুগত, কৃষ্ণের প্রতি নয়।এর কারন হল, সৎসঙ্গের কেউ অনুকূল ঠাকুরের কাছ থেকে দীক্ষা নেইনি।নিয়েছে হাবিজাবি মানুষদের কাছ থেকে, আর নাম দিয়েছে অনুকূল ঠাকুরের। অনুকূল ঠাকুর আজ থেকে ৫০ বছর আগে দেহ ত্যাগ করেছেন।তবু এখনো তার নামে দীক্ষা দেওয়া হয়।অর্থাৎ এখন যারা সৎসঙ্গ থেকে দীক্ষা নিবে, তারা কোন দিন পরলোক গত গুরু অনুকূল ঠাকুরের কোনদিন সাক্ষাৎ পাবে না।বুঝতে পারছেন আমাদের কত বোকা বানানো হচ্ছে। গুরুর কাছে যেতে হয়, তার মুখের কথা শুনতে হয়।কিন্তু সৎসঙ্গীরা হচ্ছে দুর্ভাগা, তারা কোনদিন তাদের গুরু অনুকূল ঠাকুরকে দেখেনি, কোনদিন দেখবেও না। দীক্ষা দেওয়ার নামে এটি একটি মালটিন্যাসনাল কোম্পানি। মার্কেটিং অফিসার নামে হাজার হাজার ঋত্বিক নিয়োগ দেওয়া হয়।তারপর তাদের গ্রামে গ্রামে পাঠানো হয়,যাও যে ভাবে পারো অনুকূল ঠাকুরের নামে দীক্ষা দিয়ে এসো।এখন এই অফিসার ঋত্বিকরা তাদের চাকুরী বাঁচানোর জন্য হন্যে হয়ে গ্রামে গ্রামে, এলাকায় এলাকায় ঘুরে বেড়ায়।মাসে যদি ৫০ থেকে ১০০ টি দীক্ষা দিতে না পারে,তবে ঋতিক চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হবে।তখন কি লজ্জা? এই ভয়ে তারা মানুষদের দীক্ষা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন।বিভিন্ন লোভ দেখান অথবা বিভিন্ন ভয় দেখান। যারা সৎসঙ্গ থেকে দীক্ষা নিয়েছেন, তারা জানেন, দীক্ষার সময় শপথ করানো হয় যে, আজ থেকে অনুকূল ঠাকুরকে প্রতিষ্ঠা করাই আমার জীবনের মূল লক্ষ্য।আপনের কি মনে হয়, এটা অনুকূল ঠাকুরের কথা? এটা অন্য কোন ব্যক্তির কথা।অনুকূল ঠাকুরের কাছ থেকে যদি দীক্ষা নিতেন, তবে আপনাকে শিখাতো,ভগবানকে প্রতিষ্ঠা করা তোমার জীবনের মূল লক্ষ্য হোক। আপনি সৎসঙ্গ মন্দিরে গিয়ে ভগবানের কোন ছবি বা বিগ্রহ পাবেন? পাবেন না। কারন এরা অনুকূল ঠাকুরকে ভগবান বানিয়ে, তাকেই আসনে বসিয়ে রেখেছে।সৎসঙ্গের ভগবান বা সৃষ্টিকর্তা হচ্ছে অনুকূল ঠাকুর।তাদের অন্য আর কোন ঈশ্বর নেই। হয়তো বা কোন একদিন বলবে আমরা হিন্দু না আমরা সৎসঙ্গী।আমাদের সৃষ্টিকর্তা ভগবান অনুকূল। আর তার মুখের বাণী পুর্ণপুথি। এই কথা গুলোর প্রমাণ চান? আমাকে দুজন ঋত্বিক বলেছিল, তুমি গলায় তুলসীর মালা কেন পড়েছো, ছিড়ে ফেল,কলিযুগে কোন তুলসীর মালা নেই।আবার আরেক জন বলেছিল, তুমি শিব মন্দিরে, কৃষ্ণ মন্দিরে কেন যাবে, আমরা সৎসঙ্গী, আমাদের অনুকূল ঠাকুর আছে। এখন এই যদি হয় তাদের মনোভাব, তাহলে ভবিষ্যতে তো আরো ব্যাপক আকার ধারন করবে। অনুকূল ঠাকুরকে আগে গুরু বলতো, তারপর যুগাবতার বলা শুরু করলো, আর এখনতো সরাসরি ভগবানই বলা হয়।আর ভবিষৎতে হয়তো বা বলবে, পরমেশ্বর ভগবান অনুকূল ঠাকুর আমাদের সকলের সৃষ্টিকর্তা, তাই আমাদের শুধু মাত্র তারই উপসনা করা উচিত, তারই শরণাগত হওয়া উচিত, অন্য আর কেউর নয়। অনুকূল ঠাকুরের বউ, ছেলে মেয়ে, নাতি,পুতি এদের সবাইকে নিয়ে একটা ভগবান পরিবার।মন্দিরে শুধু এরাই থাকবে, আর কেউ নয়।সাধারণ হিন্দু যদি কখনো সৎসঙ্গ মন্দিরে যায়, সে অবশ্যয় তখন প্রশ্ন করিবে, যে এটা কোন পরিবারের মন্দির???

বি: দ্র: উপরের কথা গুলো পড়ে, কোন নাম ধারী অনুকূল ঠাকুরের শিষ্য কষ্ট নিবেন না।আপনেরা কথা গুলো চিন্তা করেন, সব কথা সত্যি কিনা।মন্দির হওয়া উচিত ছিল, মূল আসনে থাকবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, আর পাশে থাকবে সৎসঙ্গের প্রতিষ্ঠাতা গুরু হিসেবে অনুকূল ঠাকুর। তাহলে কত সুন্দর হতো।কিন্তু অতি পাকনা শিষ্যরা কি বানিয়ে রেখেছে।আর দীক্ষা হবে পরম্পরা ধারায়। অনুকূল ঠাকুর এখন আর সামনে নেই, তাই এখন গুরু হিসেবে অন্য কাউকে তৈরি করতে হবে। সে শিষ্যের সকল দায়িত্ব নিবে।আর ভুল প্রচার না করে, অনুকূল ঠাকুরকে ভগবান না বানিয়ে কৃষ্ণ ভক্তি প্রচার করতে হবে। অনুকূল ঠাকুরও একজন পরম কৃষ্ণ ভক্ত,তিনি সব সময় কৃষ্ণ কথাই বলতেন।

 @@ আসুন আমরা কিছু অনুকূল ঠাকুরের বাণী পড়ি।

 ১। মন ওখান থেকেই ঠিক হবে। ও তোর আধার ঘরে জ্বলবে আলো,হরে কৃষ্ণ বল। ( আলোচনা প্রসঙ্গে/২১/ পৃ.২২৮ ) ২। সমস্ত গীতার মধ্যে ঘুরে ফিরে ঐ ইষ্ট প্রাণ হওয়ার কথা, ঐ কৃষ্ণ প্রাণ হওয়ার কথা, সমস্ত মহাপুরুষদের কথা ঐ, শিক্ষাই ঐ, কাজই ঐ । ঐ টুকুর অভাবেই তো জন্ম জন্মাতরে কত কষ্ট। ভগবানকে যে বুকে বয়ে নিয়ে বেড়ায় তার আবার পরোয়া কি। ( আলোচনা প্রসঙ্গে/৬/ পৃ.২০৭ ) ৩। কৃষ্ণ ভিন্ন উপায় নাই আর সংসারে । ( পুন্যাপুথি- ১০/৮৫ ) ৪। তোদের লক্ষ্য ভগবান। (পুন্যপুথি- ১১/৩২ ) ৫। কৃষ্ণ নামে বিপদ থাকে না। বিপদ আপদ আসতে পারে না। ( পুন্যপুথি- ১২/৫৯ ) ৬। কেবল দিবি, বলবি কৃষ্ণনাম করতে, সব দূর হবে । ( পুন্যপুথি- ১২/৬১ ) ৭। যে যায়গায় নাম কীর্তন হয় না, সে যায়গা শ্মশান বলে জানবি। হরে কৃষ্ণ নামে আধিব্যাধি সব দূর হয়, মুক্তি তার করতলে । ( পুন্যপুথি-১৭/২) ৮। সেই বিবেকের আকুল আহ্বান শুনে হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ বলে ডাকায় তার সকল দুঃখ ঘুচে যায়। ( পুন্যপুথি-১৮/৩) ৯। জীব কৃষ্ণের নিত্য দাস যবে ভুলি গেলা, মায়া পিশাচী তার গলে দরি দিলা মানুষ যদি ভগবানের বাঁধনেবাঁধা না থাকে, তাহলে শয়তানের বাঁধনে বাঁধা পড়বেই যে কোন না কোন রকমে । ( আলোচনা প্রসঙ্গে,২য় খন্ড, ১২/১২/১৯৪১ ) ১০। ভগবান, ঈশ্বর, ঠাকুর বললে কেমন জানি আকাশের কেউ বা শূন্য শূন্য মনে হয়, তার থেকে কৃষ্ণ বললে নিজের বা আমার কৃষ্ণ মনে হয়। তাই ভগবান, ঈশ্বর , ঠাকুর এর চেয়ে কৃষ্ণ বললেই ভাল হয়। ( আলোচনা প্রসঙ্গে- ১৪ পৃষ্টা-৩৩) -------------------------------------------- এখন আমাদের বিবেক দিয়ে চিন্তা করা উচিত, আমরা কোন পথে আছি।আমরা কি এখন বেদ গীতা অনুসারে চলবো, নাকি নিজেদের মত বিভিন্ন মত তৈরি করে, হিন্দু জাতিকে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করবো।এই সমস্যা কিন্তু শুধুমাত্র সৎসঙ্গে না, রামকৃষ্ণ মিশন, মাতুয়া সংঘ এই রকম অনেকেই। এদিক দিয়ে ইসকন, গৌড়ীয় মঠ,নিম্বাক অনেকটাই ভাল, কারন তাদের মূল লক্ষ্য কৃষ্ণ। আমরা যে সংঘেই থাকি, আমাদের মূল লক্ষ্য হোক, এক ঈশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি।

Thursday 1 October 2020

নারায়ণের কি দুই স্ত্রী ?

নারায়ণের কি দুই স্ত্রী ?

দেব দেবীদের স্বামী বা স্ত্রী বলে কিছু নেই। পার্থিব জগতে শুধু নারী শক্তি বা শুধু পুরুষ শক্তি অপূর্ণ এবং নারী ও পুরুষের সম্মিলিত শক্তিই যেহেতু পূর্ণশক্তি, এই তত্ত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য দেবতাদের শক্তির অর্ধাংশকে নারী শক্তি হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে, যাকে স্থূল বিবেচনায় আমরা স্ত্রী হিসেবে মনে করি। তাই দেব-দেবীদের স্বামী স্ত্রী তত্ত্ব খুব সাধারণ মানুষকে বোঝানোর জন্য, উচ্চস্তরের জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্য নয়।

যা হোক, এই সাধারণ দৃষ্টিতে বিষ্ণু বা নারায়ণের স্ত্রী হিসেবে লক্ষ্মীকে কল্পনা করা হয় বা বলা হয়। এটাই মোটামুটিভাবে সবর্জন পরিচিত। কিন্তু ফটোপোস্টে দেখুন, নারায়ণের স্ত্রী হিসেবে দুজনকে দেখানো হয়েছে এবং তার পক্ষে যজুর্বেদের ৩১/২২ নং মন্ত্রের রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে, যা মোটেই সত্য নয়, নিচে তার প্রমাণ দিচ্ছি-

যজুর্বেদের যে মন্ত্র ফটোপোস্টে লিখা হয়েছে, সেটা মোটামুটি ঠিকই আছে, শুধু প্রথম শব্দ 'হ্রীশ্চ' এর স্থলে 'শ্রীশ্চ' হবে। কিন্তু এর অনুবাদে যে ভাব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, সেটা প্রায় সম্পূর্ণ ভুল; হরফ প্রকাশনীর বেদ থেকে আমি এর অনুবাদ তুলে দিচ্ছি এবং অগ্নিবীর কর্তৃক প্রকাশিত ড. তুলসী রাম শর্মা এর ইংরেজিতে অনুবাদিত বেদ থেকেও একটি স্ন্যাপশট দিচ্ছি, যা থেকে আপনারা বুঝতে পারবেন যে #Amit_Barman এর ফটোপোস্টে এই মন্ত্রের যে অনুবাদ দেওয়া হয়েছে সেটা ভুল এবং এখানে নারায়ণের দুই স্ত্রীর বিষয়ে কোনো কথাই বলা হয় নি। নিচে দেখে নিন মন্ত্রটির অনুবাদ-

"হে আদিত্য, সম্পদ ও সৌন্দর্য তোমার পত্নীস্থানীয়, দিন রাত তোমার পার্শ্বস্থানীয়, নক্ষত্রগুলি তোমার রূপ, দ্যাবা পৃথিবী তোমার বিস্তৃত মুখ সদৃশ, এরূপ তোমার নিকট প্রার্থনা করি- পরলোক আমার ইষ্ট হোক, আমি যেন সর্বলোকাত্মক হই।"

-এখানে ভালো করে খেয়াল করুন, মন্ত্রের শুরুতেই বলা হয়েছে- সম্পদ ও সৌন্দর্য তোমার পত্নীস্থানীয়, এই সম্পদ ও সৌন্দর্যকেই শ্রী বা লক্ষ্মী বলা হয়, যে কারণে সাধারণভাবে বিষ্ণু বা নারায়ণের স্ত্রীর নাম লক্ষ্মী। এখানে সম্পদ ও সৌন্দর্য দ্বারা দুই সত্ত্বাকে বোঝানো হয় নি, বোঝানো হয়েছে একই সত্ত্বাকে। তুলসী রাম শর্মার ইংরেজি অনুবাদেও দেখুন, বলা হয়েছে- Beauty is yours, Glory is yours, এই বিউটি এবং গ্লোরি আলাদা বিষয় নয়, একই বিষয়। যার বিউটি থাকে, তার যেমন গ্লোরি থাকে, তেমনি যার গ্লোরি থাকে, তার বিউটিও থাকে। এখানে বিউটি মানে সৌন্দর্য এবং গ্লোরি মানে সম্পদ, ঐশ্বর্য; যারা একে অপরের পরিপূরক; তাই যেখানে সম্পদ থাকে, সেখানে সৌন্দর্যও থাকে; যেখানে সম্পদ বা ঐশ্বর্য থাকে না, সেখানে সৌন্দর্যও থাকে না। একারণে সম্পদ এবং সৌন্দর্যকে আলাদা ধরে নেবার কোনো কারণ নেই এবং এটার উপর ভিত্তি করে আদিত্য বা নারায়ণের দুই স্ত্রী, এটা ধরে নেবারও কোনো কারণ নেই।

সাধারণভাবে নারায়ণের স্ত্রীর নাম লক্ষ্মী; যিনি- সম্পদ, সৌন্দর্য ও সৌভাগ্য হিসেবে কল্পিত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে লক্ষ্মী হলেন নারায়ণের নারীশক্তি, যে নারীশক্তি- সম্পদ, সৌন্দর্য এবং সৌভাগ্যের আধার। তাই যার জীবনে নারী অর্থাৎ স্ত্রী থাকে না, তার জীবনে এসব পরিপূর্ণভাবে থাকে না। কিন্তু ব্যতিক্রমভাবে যার জীবনে এসব কিছুমাত্রায় থাকে, তার জীবনে কোনো নারীর অভাবও হয় না।

যা হোক, নারায়ণের স্ত্রী যে একজন এবং তিনি লক্ষ্মী হিসেবে কল্পিত, আশা করছি উপরের আলোচনা দ্বারা আমার পাঠক বন্ধুদেরকে তা বোঝাতে পেরেছি।

জয় হিন্দ।

জয় শ্রী নারায়ণ।

পরিণত বয়সে বীর্যপাত- সমস্যা, না সামাধান ?

পরিণত বয়সে বীর্যপাত- সমস্যা, না সামাধান ?

সাধু-সন্ন্যাসী-ব্রহ্মচারী-মহারাজদের অকারণ বীর্যধারণের মাতামাতির বিরুদ্ধে আমি একটি প্রবন্ধে এ কথা বলেছি যে- পরিণত বয়সে প্রয়োজনে বীর্যপাত কোনো সমস্যাই নয়, বরং এটা দেহের জন্য নানাভাবে উপকারী বা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান। আমার প্রায় সব পাঠকই বিষয়টি মেনে নিয়েছে, কিন্তু আর্য সমাজের অবাস্তব থিয়োরি দ্বারা প্রভাবিত #Anonno_Asim এর মাথায় আমার ঐ প্রবন্ধটি মনে হয় বাজ ফেলেছে, তাই সে আমার বক্তব্যের বিরুদ্ধে একটি প্রবন্ধ লিখে পোস্ট করেছে, যা ফটো আকারে আমার এই প্রবন্ধের সাথে যুক্ত করে দিয়েছি, তার বক্তব্যকে খণ্ডন করবো আমার এই প্রবন্ধে-

দিব্যজ্ঞানী #Anonno_Asim তার পোস্টের শুরুতেই বলেছে,

"পোষ্ট দাতা #Rupok_Ray ব্রহ্মচর্য বলতে কি বুঝে সেটা সে নিজেও বোধগম্য নয়। বোধগম্য হবেই বা কিভাবে যে হস্তমৈথুন নামক ভয়ানক অভ্যাসের সাফাই গাইছে সে কিভাবে সংযম নামক জিনিটা বুঝবে।"

-ব্রহ্মে বিচরণ করাই হলো ব্রহ্মচর্য, কিন্তু বর্তমানে সাধু-সন্ন্যাসী-ব্রহ্মচারী-মহারাজরা ব্রহ্মচর্য বলতে আমাদের পাবলিকের মাথায় ঢুকিয়েছে বীর্যকে ধারণ করা, যেন বীর্যকে ধারণ করে তারা জগতের বিশাল কল্যান করে ফেলবে! তাই যেহেতু তারা বীর্যকে ধারণ করে, সেহেতু তারা নিজেদেরকে ভাবে উর্ধ্ব জগতের মানুষ, তাই যারা বীর্যকে ধারণ করে না, তারা হলো বীর্যধারকদের কাছে কামিনীকাঞ্চণে বশীভূত নিম্নস্তরের খুবই সাধারণ মানুষ। আর একারণে তথাকথিত বীর্যধারক ব্রহ্মচারীদের কাছে, বিয়ে-শাদী করা, সন্তানের জন্ম দেওয়া মানুষেরা হলো ইতরশ্রেণীর মানুষ, আর ইতরশ্রেণীর মানুষের যৌনতায় জন্ম নিয়েও তারা হলো দেবতাশ্রেণীর মানুষ ! এ প্রসঙ্গে আমি শুধু একটি কথা ই বলবো- বীর্যধারণ যদি খুবই গুগরুত্বপূর্ণ হতো, তাহলে মহামুনি বেদব্যাস- ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু ও বিদুরের জন্মের জন্য নিজের বীর্য ত্যাগ করতো না, আর বৈদিক ঋষিরা বিয়ে করে সন্তানের জন্ম দিতো না। চৈতন্যদেবের অনুসারী সাধু-সন্ন্যাসী-ব্রহ্মচারী-মহারাজদের ভাব দেখলে মনে হয়, এরা এক একজন বেদব্যাসের চেয়েও বড় মুনি এবং বেদ রচয়িতা ঋষিদের চেয়েও বড় ঋষি।

যা হোক, পরিণত বয়সে প্রয়োজনে হস্তমৈথুনের মাধ্যমে বীর্যপাত যে ভয়ানক কিছু নয়, সেটা বিভিন্ন গবেষণা দ্বারা বার বার প্রমাণিত হয়েছে, এই প্রবন্ধে সেগুলোই আজ আলোচিত হবে, তার আগে হস্তমৈথুনের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জেনে নেওয়া যাক-

অতি প্রাচীনকাল থেকেই হস্তমৈথুন মানব সমাজের একটি অঙ্গ হয়ে আছে । পুরুষের হস্তমৈথুনের পাথরে আঁকা ছবি অনেক পাওয়া গেছে । চতুর্থ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মাল্টার একটি মন্দিরে হস্তমৈথুন রত একজন নারীর একটি পোড়ামাটির মূর্তি পাওয়া গেছে।

প্রাচীন সুমেরীয়রা হস্তমৈথুন কে যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর একটি উপায় হিসাবে চর্চা করত । পুং হস্তমৈথুন প্রাচীন মিশরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তখনকার ফারাওদের নীলনদের তীরে বছরের একটি বিশেষ সময়ে হস্তমৈথুন করা বাধ্যতামূলক ছিল ।

প্রাচীন হিন্দু গ্রন্থ কামসুত্রতেও হস্তমৈথুনের উল্লেখ আছে। প্রাচীন গ্রীকরা হস্তমৈথুনকে যৌন হতাশা থেকে মুক্তির সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় বলে মনে করত । প্রাচীন গ্রীসে মেয়েদের হিস্টিরিয়ার চিকিৎসা হস্তমৈথুন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা হতো । কিন্তু ১৭১৬ সালে এটাকে ভয়াবহ পাপ হিসেবে আখ্যায়িত করে লিফলেট প্রচার করা হয় এবং বলা হয় এটা করলে যৌনশক্তি লোপ, গনোরিয়া এবং মৃগী রোগ দেখা দেয় । ১৭৬০ সালে Samuel-Auguste Tissot. নামের এক ব্যক্তি একে মানবদেহের প্রতি ভয়াবহ ক্ষতিকর এবং অসংখ্য রোগ সৃষ্টিকারী হিসাবে বর্ণনা ক'রে L’Onanisme নামে একটি বই লিখে । কিন্তু এসব ভ্রান্ত ধারনার অবসান ঘটতে শুরু করে যখন ১৮৯৭ সালে H. Havelock Ellis, তার বিখ্যাত বই Studies in the Psychology of Sex নামক বই লেখেন । তারপর থেকেই মানুষ এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে।

এতক্ষণ আমি হস্তমৈথুনের যে ইতিহাস বললাম, সেটা সত্য কি না, তা প্রমাণ পাবেন নিচের এই লিঙ্কে ক্লিক করে-

http://shadhinbangla24.com/bn/news/317578?fbclid=IwAR1_XRbC6s59Z-DnxBrgGvB2fu8DyFUFI-M6mpV9axeWCRva8aMkfQxjhBc

বর্তমান সময়ে যুবসমাজের মাথায় হস্তমৈথুন ভয়াবহ রূপ নিয়ে পরিচিতি পেয়েছে হাটে বাজারে যৌনশক্তি বর্ধক ঔষধ বিক্রেতা হকারদের মাধ্যমে, যেহেতু বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত কোনো পু্রুষ হস্তমৈথুন না করে থাকতে পারে না, আবার অনেকে দৈহিক সুখের নেশাতেও দিনের পর দিন হস্তমৈথুন করে থাকে, সেহেতু হকাররা পুরুষের এই স্বভাবকে কাজে লাগিয়ে প্রচার করে যে হস্তমৈথুন করার ফলে তারা এক সময় যৌনশক্তিহীন হয়ে পড়বে, বিয়ের পর সহবাসের মাধ্যমে স্ত্রীকে খুশি করতে পারবে না, স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাবে, দিনের পর দিন এসব শুনতে শুনতে পুরুষেরা ভয় পেয়ে যায়, বাস্তবেও তারা দেখে হস্তমৈথুন করতে গেলে খুব তাড়াতাড়ি তাদের বীর্যপাত হয়ে যাচ্ছে, এমনকি ঘন ঘন স্বপ্নদোষ হয়েও তাদের শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, তখন তারা ধরে নেয়ে সত্যিই হস্তমৈথুন খুব খারাপ একটি বদঅভ্যাস, তাই এতদিন যা করার করেছে, আর করবে না, এখন ঔষধ খেয়ে যৌনশক্তিকে ঠিক রাখতে হবে, যাতে বিয়ের পর স্ত্রীর কাছে লজ্জা পেতে না হয়, এই সিদ্ধান্ত থেকেই সে দ্বারস্থ হয় ঐসব হকারদের বা কোনো যৌনশক্তি বর্ধক ঔষধ বিক্রেতা কোম্পানির কাছে, আর এতেই তারা তাদের ভুল প্রচারের ফসল ঘরে তুলে নিজেদের পকেট ভরাতে পারে।

কিন্তু বিয়ের পূর্বের এই দ্রুত বীর্যপাত যে কোনো রোগ বা সমস্যা ই নয়, সেটা আপনি বুঝতে পারবেন, এই বিষয়ে কোনো শিক্ষিত ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গেলে, তারা একবাক্যে বলবে, এটা কোনো সমস্যা ই নয়, বিয়ের পর এমনি ই সব ঠিক হয়ে যাবে, বাস্তবে ঠিক হয় ও। বিয়ের মূল উদ্দেশ্যে যেহেতু যৌনতা, তাই বিয়ের পর এটা নিয়ে সব পুরুষই এই টেনশনে থাকে যে, সে ঠিক মতো পারবে তো, আর এতেই তার দ্রুত বীর্যপাত হয়ে যায়, কিন্তু কিছুদিন যেতেই যখন যৌনতা সাধারণ বিষয় হয়ে উঠে, এটা নিয়ে আর কোনো টেনশন থাকে না, তখন আস্তে আস্তে সময় বৃদ্ধি হতে থাকে এবং এক সময় মনে হয়, তাড়াতাড়ি হয় না কেনো ? তবে এটা সম্পূর্ণ সুস্থ শরীরের জন্য প্রযোজ্য, যারা শারীরিকভাবে দুর্বল, নিয়মিত ব্যায়াম বা খেলাধুলা করে না, তারা যতই ভালো খাবার খাক, বিয়ের পর যৌনশক্তির সমস্যায় কিছু না কিছু ভুগবেই, সেক্ষেত্রে তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। এ প্রসঙ্গে ভারতের অ্যাপেলো গ্লেনিগলস হসপিটালের বিশিষ্ট ইউরোলজিস্ট ডা. ত্রিদিবেশ মণ্ডল বলেছেন, " হস্তমৈথুন দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন সমাজে একটি ক্ষতিকারক এবং অনৈতিক জিনিস হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে এখন এটি গৃহীত হয়েছে যে এটি মোটেই সত্য নয়।"

যা হোক, প্রবন্ধের এক স্থানে #Anonno_Asim বলেছে,

"মিসেস রুপশ্রী রায়/রুপক রায় ব্রহ্মচর্য মানে সারাজিবন বিয়ে না করে থাকা না বা ব্রহ্মচারী হয়ে থাকা নয় বা আপনার কথা নুপুংস হয়ে যাওয়াও নয়। ব্রহ্মচর্য মানে একটা নির্দিষ্ট বয়স অব্দি অর্থ্যাৎ বিয়ে হবার আগ পর্যন্ত বীর্যকে ধারন করা আর সংযমের সহিত জীবন ধারন করা।"

-ওরে বলদা, আমি তো আমার সেই পোস্টের শিরোনামেই সেই কথা বলে দিয়েছি যে, পরিণত বয়সে বীর্যপাত, আমি কি আমার প্রবন্ধে অপরিণত বয়সে বীর্যপাতের পক্ষে সাফাই গেয়েছি ? যারা বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানী, তারা কথা বুঝে কথা বলে, আপনার মতো একটু গুতা খেয়েই ছাগলের মতো লাফায় না।

এরপর #Anonno_Asim বলেছে,

"আর আপনি আপানার লিখাতে বলেছেন যুবক বয়সে হস্তমৈথুন কোন ক্ষতিকর নয় ইহা খুব উপকারি,শরিরের জন্য খুব ভাল স্বাস্থের জন্য ভাল,যুবক বয়সে হস্তমৈথুন না করলে স্বাস্থের ক্ষতি হয়,আপনি তো মিয়া দেখি বিজ্ঞনের উপরে ডক্টরেট করা।তা এই থিওরি টা কোন বিজ্ঞানির থেকে ধার করা যে যুবক বয়সে উত্তেজনা হলে হস্তমৈথুন উপাকারি.?"

-দেহে প্রবল যৌনউত্তেজনা শুরু হলে, তা প্রশমনে হস্তমৈথুন যে কোনো খারাপ বিষয় নয়, তা দেহের জন্য উপকারী ই, তা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে নানাভাবে প্রমাণিত, এর জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডক্টরেট হওয়ার দরকার নেই, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান এবং নিজের শরীরের বাস্তবতা চিন্তা করলেও বোঝা যায়। আলোচনার সকল স্তরে এই কথাটা মনে রাখবেন যে, আমি কিন্তু বলেছি- পরিণত বয়সে প্রয়োজনে হস্তমৈথুনের কথা; হস্তমৈথুন আপনি যখনই করবেন, তখনই সুখ অনুভব করবেন, যে কারণে যুবক যুবতীরা খেয়ালের বশে হস্তমৈথুন করে থাকে, কিন্তু শারীরিক চাহিদা সৃষ্টি না হলে হস্তমৈথুন করে চুড়ান্ত সুখ যেমন আপনি কখনোই পাবেন না, তেমনি এই ধরণের চাহিদাবিহীন হস্তমৈথুনে আপনার শরীরের ক্ষতিই হবে।

প্রয়োজনে হস্তমৈথুন করলে আপনি কী ধরণের শারীরিক ও মানসিক উপকার পেতে পারেন, সেগুলো দেখে নিন নিচে-

সুস্থ থাকতে সপ্তাহে কতবার বীর্যপাত করা উচিত?

এই প্রশ্নের জবাবে পূর্বোল্লিখিত অ্যাপেলো গ্লেনিগলস হসপিটালের বিশিষ্ট ইউরোলজিস্ট ডা. ত্রিদিবেশ মণ্ডল বলেছেন, "সহবাস বা মৈথুনের মাধ্যমে প্রতিদিনই করতে পারেন। তবে সপ্তাহে একদিন করার তুলনায় যাঁরা রোজ বা সপ্তাহে তিন-চারদিন করেন তাঁদের শরীর বেশি ভাল থাকে।"

এছাড়াও প্রায় সকল বিশেষজ্ঞ বলেন যে- হস্তমৈথুন শরীর এবং স্বাস্থ্যের জন্য একটি মনোরম, উপকারী অভিজ্ঞতা। এর মাধ্যমে যে সকল উপকার পাওয়া যায়, সেগুলো হলো-

১. ক্যান্সার থেকে রক্ষা : এক্সএনইউএমএক্স- এ অস্ট্রেলিয়ায় করা একটি গবেষণা অনুসারে সপ্তাহে একাধিকবার বীর্যপাত করা পুরুষদের প্রেস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে, এই একই ধরণের কথা বলেছে, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অবস্থিত ক্যান্সার এপিডেমিওলজি কেন্দ্র, তারা জোর দিয়ে বলেছে- ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে সপ্তাহে পাঁচ বারের বেশি বীর্যপাত ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

২. শক্তি দেয় : বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের যৌনাঙ্গের পেশীসহ অন্যান্য পেশী দুর্বল হয়ে পড়ে। নিয়মিত যৌনক্রিয়া বা হস্তমৈথুন এই পেশীগুলোকে সবল রাখে। এটি ইরেক্টাইল ডিসফাংশন এবং মূত্রত্যাগের অনিয়মকে প্রতিরোধ করে। ইরেক্টাইল ডিসফাংশন হলো যৌন উত্তেজনা না আসা। অর্থাৎ আপনি যদি দীর্ঘদিন যৌনক্রিয়া না করেন, তখন দেখবেন যখন প্রয়োজনে যৌনক্রিয়া করতে চাইছেন, তখন উত্তেজনা না আসায় যৌনক্রিয়াই করতে পারছেন না। ব্যাপারটি এমন- কাজ না করে ফেলে রাখলে যেমন অস্ত্রপাতি ভোঁতা হয়ে যায়, তার ধার থাকে না বা তা কাজের উপযোগী থাকে না, তেমনি যৌনতাও, আপনি যদি রেগুলার এটার প্রয়োগ না করেন, এক সময় এটাও তার কার্যকারিতা হারাবে।

৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি : হরমোন থেরাপিস্ট জেনিফার লণ্ড বলেছেন, বীর্যপাত কর্টিসোল হরমোনের মাত্রাকে বৃদ্ধি করে, যা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে।

৪. মেজাজে ফুরফুরে ভাব আনতে সাহায্য করে : বীর্যপাতে- দেহে ডোপামিন বা অক্সিটোসিনের তো নিউরো রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটে, যা মানুষকে সুখী করে বা সন্তুষ্টি প্রদান করে। গ্লোরিয়া ব্র্যাম নামের এক যৌন বিজ্ঞানী বলেছেন, ডোপামিন নিঃসরণের একটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হলো হস্তমৈথুন বা বীর্যপাত।

৫. মানসিক চাপ কমায় : এ প্রসঙ্গে ড. হল নামের একজন যৌনবিজ্ঞানী বলেছেন- আপনি যদি কখনো প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকেন, তখন হস্তমৈথুনের মাধ্যমে বীর্যপাত আপনাকে এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে পারে।

৬. ঋতুস্রাবজনিত ব্যথা কমায় : ঋতুস্রাবজনিত ব্যথায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভোগে অবিবাহিত মেয়েরা, যেহেতু তারা যৌনক্রিয়া করে না। বিবাহিত নারী, যারা রেগুলার যৌনক্রিয়া করে তারা এই সমস্যায় তেমন ভোগেই না। এসব ক্ষেত্রে যৌনক্রিয়ার সুযোগহীন নারী যদি হস্তমৈথুন মাধ্যমে তাদের আর্গাজম ঘটায়, তারা এই সমস্যাকে অনেক খানি ই কমিয়ে আনতে পারে।

৭. ভালো ঘুমে সাহায্য করে : নানা কারণে মানুষ অনিদ্রায় ভুগে থাকে, আর অনিদ্রা দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটি ব্যাপার। বিবাহিতরা এই অনিদ্রা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পারে যৌনক্রিয়ার মাধ্যমে; কারণ, যৌনক্রিয়ায় পরিশ্রম হয়, শরীরের ক্যালোরি ক্ষয় হয় এবং পেশীগুলোর ব্যায়াম হয়। কিন্তু যারা সিঙ্গেল, তারা হস্তমৈথুন করেও এই একই ধরণের শারীরিক উপকার পেতে পারে।

এতক্ষণ আমি হস্তমৈথুন বা বীর্যপাতের যেসব উপকারিতার কথা বললাম, সেগুলোর সত্যাসত্যের প্রমাণ পাবেন নিচের এই লিঙ্কে-

https://www.1faydalari.com/bn/masturbasyonun-faydasi/

এছাড়াও ঘুমের মধ্যে যদি কেউ প্রচণ্ড উত্তেজনা বোধ করে এবং স্বপ্নদোষের মাধ্যমে বীর্যপাত না ঘটে, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব হস্তমৈথুনের মাধ্যে বীর্যপাত করিয়ে ফেলাই ভালো, না হলে ভালো ঘুম তো হবেই না, এর সাথে জননাঙ্গের এলাকায় ব্যথাসহ নানা ধরণের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

সুতরাং চিকিৎসা বিজ্ঞান মতে পরিণত বয়সে প্রয়োজনে নির্দিষ্ট পরিমাণে হস্তমৈথুন শরীরের পক্ষে ভালোই। অল্প ক্ষেত্রে শারীরিক বা মানসিক কোন ক্ষতিসাধন করে না। তবে মনে রাখতে হবে Excess is everything bad.

এডাল্ট বয়সে নারী ও পুরুষের জন্য যৌনতা একটি স্বাভাবিক বিষয়, এই বয়সে যদি তারা যৌনক্রিয়া না করে, তাহলেই নানা ধরণের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার মুখোমুখী হয়। ২৫ এর পর কোনো নারী যদি বৈধ যৌনক্রিয়ার করার পর্যাপ্ত সুযোগ না পায়, সেই নারীর শুধু চেহারার উজ্জ্বলতা ই নষ্ট হয় না, সে নানা ধরণের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার মুখোমুখী হয়। প্রবাসীদের স্ত্রীদের মধ্যে এই ধরণের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা বেশি দেখা যায়। যেকোনো ডাক্তারের সাথে কথা বললেই আমার এই কথার সত্যতার প্রমাণ পাবেন। এই সমস্যা থেকে তারা মুক্তি পেতে পারেন হস্তমৈথুনের মাধ্যমে নিজেদের অর্গাজম ঘটিয়ে।

#Anonno_Asim, আপনি আপনার পোস্টে টেস্টোস্টেরন হরমোন প্রসঙ্গে বলেছেন, এটা একজন পুরুষকে পুরুষ বানায়, এই কথা আমিই প্রথম বলেছি আমার এ সম্পর্কিত আগের পোস্টে; যা হোক, এ প্রসঙ্গে আপনি টেস্টোস্টেরণ হরমোন কী, পুরুষের শরীরে এর ভূমিকা কী, এসম্পর্কে নানা কথা বলে শেষে প্রশ্ন করেছেন-এটা এমন একটি হরমোন যা দ্বারা আপনার পুরুষত্ব প্রকাশ পায় আর সেটাই যদি আপনি নষ্ট করেন তো আপনি বিয়ের পর স্ত্রী সঙ্গই করবেন কিভাবে আর সুস্থ,জ্ঞানী সন্তানই বা কিভাবে জন্ম দিবেন.?

আমার পোস্টে আমি বরাবরই কিন্তু বলেছি পরিণত বয়সে শারীরিক উত্তেজনায় বীর্যপাত করার কথা, অপরিণত বয়সে নয়, সেটা কি আপনার মাথায় ঢোকে না ?

এ প্রসঙ্গে আপনি আরো বলেছেন- হস্তমৈথুন এর জন্য তো এমনি ই নপুংসক হয়ে যাবেন।

- প্রাপ্ত বয়স্ক হলে কোনো পুরুষ যদি তার সঙ্গিনীর সঙ্গে যৌনক্রিয়া না করে বা হস্তমৈথুন না ক'রে, এই শক্তিটাকে দমন করে, তাহলে বেশ কয়েক বছর পর সে এমনিতেই যৌনক্ষমতাহীন নপুংসকে পরিণত হবে। আর এটা হবে তার যৌনশক্তিকে ব্যবহার না করার জন্য। পরিণত বয়সে বীর্যপাত, সেটা যেভাবেই হোক, মানুষের যৌনক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখে এবং মানুষকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখে। একটা কথা মনে রাখবেন, যতদিন কোনো মানুষ যৌনজীবনে ফিট, ততদিনই সে সকল কাজে সক্ষম, কিন্তু যখনই তার যৌনজীবন শেষ হয়ে যাবে, তখনই সে বৃদ্ধ। আর মানুষের এই কর্মক্ষমতাকে ধরে রাখার একমাত্র উপায় হলো রেগুলার যেকোনো উপায়ে বীর্যপাত ঘটানো।

এরপর আপনি স্বরূপানন্দ,প্রনবানন্দ বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ,চৈতন্য দেব প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেছেন - এনারা বিয়ে না করে সমাজ,দেশ,মানুষের হিতার্তে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন, এটাই তাঁদের ভুল, এজন্য তাঁদের অনুসারি কম ?

-আপনি যাদের কথা উল্লেখ করললেন, বাস্তবে, সমাজে কি এদের কোনো উপকারি ভূমিকা আছে ? চাণক্য নীতি অনুসারে পুত্রহীন পরিবারকে যেমন শূন্য বা ভ্যালুলেস বিবেচনা করা হয়, তেমনি যে ব্যক্তি সন্তানের জন্ম দেয় নি, সেও সামাজিক প্রেক্ষাপটে মূল্যহীন। আমরা হিন্দুরা নির্বোধ বলেই এদেরকে আমরা মহাপুরুষ মনে করি, এদেরকে শ্রদ্ধা বা পূজা করে নিজেদের সর্বনাশ করি। বাংলায় এত এত মহাপুরুষ, তা সত্ত্বেও বাংলার হিন্দুদের এই দুর্দশা কেনো ? কেনো বাংলার হিন্দুদেরকে ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে দেশান্তরিত ও ধর্মান্তরিত হতে হচ্ছে ? হচ্ছে এই কারণেই যে এরা মহাপুরুষ নয়, অধমপুরুষ বা নপুংসক। সমাজে- এদের উপকারী যে ভাব, সেটা আধ্যাত্মিক, বাস্তবিক নয়। প্রণবানন্দের সংগঠন ভারত সেবাশ্রম সংঘ, হিন্দু যুবকদেরকে নিরামিষ খাইয়ে তাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হীনদুর্বল বানাচ্ছে; তাই যদি না হয়, তাহলে ভারত সেবাশ্রম সংঘের ছাত্রাবাসে থাকা কোনো যুবক কি আজ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কিছু করে হিন্দু জাতির মুখ উজ্জ্বল করতে পেরেছে ?

রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের সংগঠন রামকৃষ্ণ মিশন তো সর্বধর্ম সমন্বয়ের নামে মাঝে মাঝে সভা করে হিন্দু যুবক যুবতীদেরকে অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে উৎসাহিত করে, এটা হিন্দুসমাজের জন্য উপকারী, না ক্ষতিকর সংগঠন ?

চৈতন্যদেবের আদর্শে এ পর্যন্ত শত শত যুবক- বিয়ে করে নি, সন্তানের জন্ম দেয় নি, তারা সংসার ত্যাগ করে বৈরাগী হয়ে ভিক্ষা করে জীবন অতিবাহিত করেছে, করছে; এদের দ্বারা সমাজের কী উপকার হয়েছে ?

ধরে নিলাম, এদের সম্পর্কে আমার যে অভিমত বা ধারণা তা ভুল, তাহলে এত সব বীর্যধারণকারী আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন মহাপুরুষ বাংলায় থাকতে- আজকে বাংলার হিন্দুদের পায়ের তলায় মাটি নেই কেনো ? কেনো আমরা এই ভেবে শঙ্কিত হচ্ছি যে- বাংলার হিন্দুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার ? এইভাবে চলতে থাকলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এখানে সুরক্ষিত থাকবে না, হয় তারা ইসলামে কনভার্ট হতে বাধ্য হবে, নয় তারা নিহত হবে, কেনো এই ভাবনা আমাদেরকে গ্রাস করছে ?

আমি যা বলি, তা দূরদৃষ্টিতে সঠিক কি না, তার একটি উদাহরণ দিচ্ছি, যদি আপনার মাথায় মাল থাকে, তাহলে ঠিক বুঝতে পারবেন-

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পর বাংলায় এমন কোনো হিন্দু ছিলো না যে- সে, রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমকে স্বীকার করতো না। যদিও এ নিয়ে অনেকের মনে নানা প্রশ্ন জাগতো, কিন্তু খোলাখুলি এটার বিরোধিতা করার মতো জ্ঞান বা সাহস কারোরই ছিলো না। ২০১৬ সালে প্রথম আমি, এই যুবক শ্রীকৃষ্ণের জীবনে যুবতী রাধা বলে যে কেউ নেই, সেই মত প্রকাশ করি, আর এতে প্রায় সমস্ত হিন্দুর একটি প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস, যা প্রায় ৮০০ বছর ধরে চালু ছিলো, তা ধ্বসে পড়ে এবং আজ পর্যন্ত কেউ আমার এই মতের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাকে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারে নি। 

আপনি আমাকে ফেসবুক ফণ্ডিত বলে টিটকারী মারতেই পারেন, কিন্তু তাতে আমার পাণ্ডিত্যের কোনো ক্ষতি হবে না বা কেউ আমার পাণ্ডিত্যের উপর মাস্তানিও করতে পারবে না। একটা কথা মনে রাখবেন, শ্রীকৃষ্ণের জীবদ্দশায় অখণ্ড ভারতের বেশির ভাগ লোক শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর মনে করতো না, তাতে শ্রীকৃষ্ণ যে ঈশ্বর নয়, সেটা প্রমাণ হয় নি। বরং যত সময় গড়িয়েছে শ্রীকৃষ্ণের ঐশ্বরিক মহিমার প্রকাশ ততবেশি বৃদ্ধি এবং প্রচারিত হয়েছে। একইভাব আপনিও আমার পাণ্ডিত্যকে স্বীকার করতে না পারেন, তাতে আমার পাণ্ডিত্যের প্রভাব বা মহিমা কমে যাবে না, বরং তা বাড়ছে এবং বাড়বে; কারণ, প্রকৃত সত্য আমার জ্ঞানের আধার।

এরপর অনুকূল, হরিচাঁদ বিষয়ে আপনি যে বলেছেন- "পঁচা খাবারে মাছির একটু উৎপাত বেশিই হয়।আশা করি বুঝছেন।" এর দ্বারা আপনি বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে পারবেন না। আমি আমার ঐ পোস্টে বলেছি- সম্পূর্ণ ভ্রান্ত থিয়োরি হওয়া সত্ত্বেও শুধু একটি সঠিক কাজ, বিয়ে করা এবং সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্যই আজ অনুকূল, হরিচাঁদের রমরমা। আর আমার এই কথার দ্বারা তাদেরকে আমি সমর্থন করি নি, বাস্তবতাকে প্রকাশ করেছি মাত্র।

আর আমি যে অনুকূলকে আমার গুরুদেব মানি না, সেটা আমার পোস্ট রেগুলার পড়লে বুঝতে পারতেন। অনুকূলের সৎসঙ্গকে আমি বলি অসৎসঙ্গ, আর তার সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করাও আমার একটি লক্ষ্য, কিন্তু এটা এত সহজে ধ্বংস করা সম্ভব হবে না, শুধু তার উত্তরাধিকারী রেখে যাওয়ার জন্যই। কারো বীর্য যখন সন্তানের জন্ম দেয়, সেটা তার শক্তিতে পরিণত হয়। অনুকূল, হরিচাঁদ সেই শক্তির চারা রোপন করে গেছে; অন্যান্য বলদের মতো নিজের আদর্শকে ধরে রাখার জন্য অন্য মানুষের বীর্যের শক্তির উপর নির্ভর করে নি। অনুকূল যে মুসলমানদের ভয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছে, এটা তার ভুল আদর্শের ফলে, যে ভুল আদর্শের বিরুদ্ধেই আমার লড়াই। আপনি যদি আপনার পিতার আদর্শ সন্তান হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি আপনার পিতার শক্তি, আর আপনার মতো শক্তির জন্ম হয়েছিলো আপনার পিতার বীর্যক্ষয়ের ফলেই, কথাটা মনে রাখবেন। অনুকূল আর হরিচাঁদ বীর্যক্ষয় করেছিলো বলেই আজ তাদের অনুসারীর সংখ্যা লক্ষ লক্ষ বা কোটি কোটি, সেই তুলনায় অন্যদের অনুসারীদের সংখ্যা তো হাতে গোনা যাবে। এই তথ্যগুলো কী প্রমাণ করে, বীর্যক্ষয়ের শক্তি নাই ?

এরপর আপনি বলেছেন- "যা হোক পারলে সবাইকে হস্তমৈথুন, বীর্যক্ষয়ের ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরে নিরুৎসাহিত করুন হস্তমৈথুন করার প্রশ্রয় নয়।"

-আমি চাই মানুষের সার্বিক কল্যান, তাই যেটা বাস্তব এবং উপকারী, সেই উপদেশই আমি মানুষকে সব সময় দিই, সেটা যারা গ্রহন করবে, নিশ্চয় তারা উপকৃত হবে; ক্ষুধা লাগলে মানুষকে যেমন খেতেই হবে, তেমনি পায়খানা চাপলে তাকে মল ত্যাগ করতেই হবে, একইভাবে উত্তেজনা প্রবল হলে তাকে তার প্রশমন করতেই হবে, সঙ্গিনী থাকলে হয় সঙ্গিনীর কাছে গিয়ে, নয়তো নিজের হাত ব্যবহার করে, এটাই বাস্তবতা; এই বাস্তবতা যে না মানবে সে হবে নপুংসক বা দিব্যজ্ঞানী, যার দ্বারা সমাজের বিন্দুমাত্র উপকার হবে না; কারণ, সে নিজেই সুস্থ নয়, এই ধরণের দু চার জন ব্যক্তির মনোরঞ্জনের জন্য আপনার মতো নির্বোধের কথা আমি শুনবো, সেটা আপনি ভাবলেন কিভাবে ? বীর্যধারণের পক্ষে তো খুব সাফাই গাইছেন, বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন যে আপনি উত্তেজনার বশে কখনো হস্তমৈথুন করেন নি ? ভণ্ড কোথাকার ?

এরপর বিবাহিত জীবনে বীর্যক্ষয়ের কথা বলতে গিয়ে মনু সংহিতার রেফারেন্স দিয়ে বলেছেন- মাসে একবার স্ত্রী সহবাস করার নিয়ম। আপনি যদিও মনুসংহিতার সব রেফারেন্স মানেন না, যেটা আপনার পছন্দ হয়, সেটা মানেন, আর যেটা পছন্দ হয় না, সেটাকে গঙ্গা জলে চুবিয়ে আনতে বলেন। যা হোক, আমি চাই আপনি বিয়ের পর মনু সংহিতার এই রেফারেন্সটা মেনে চলবেন, যাতে আপনার স্ত্রী পরপুরুষের সাথে সেক্স করার একটি যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে পায় যে, তার স্বামী তাকে প্রয়োজন মতো সময় দেয় না বা তার স্বামীর কোনো যৌনশক্তি নেই; কেননা, যার যৌনশক্তি আছে, তার পক্ষে তো স্ত্রী কাছে থাকলে সহবাসের জন্য ৩০ দিন ধৈর্য ধরা সম্ভব নয়, এটা সম্ভব একমাত্র নপুংসকদের জন্যই। তাই আমি চাই মনুর বিধান মতো আপনি ৩০ দিন পর পর যৌনমিলনে যাবেন, আর এর ফাঁকে আপনার স্ত্রী যদি আপনাকে তালাক দিয়ে বাপের বাড়ি চলে না যায়, তাহলে পরপুরুষ দ্বারা তার দেহের চাহিদা মেটাক এবং পরের বাচ্চা, আপনাকে দিয়ে মানুষ করাক; কেননা, আপনাদের মতো দিব্যজ্ঞানী এবং নপুংসকদের তো এটাই একমাত্র শাস্তি।

এ প্রসঙ্গে আরো বলেছেন- স্বামী স্ত্রীর সম্মতিতে এর অধিকবারও সহবাসের নিয়ম আছে ?

-এই অধিকবারটা কত ? বিয়ের পর একজন সক্ষম পুরুষ প্রায় প্রতিদিনই দুই তিনবার যৌনমিলন করে এবং এভাবে চলে প্রায় ২/৩ মাস, বীর্যক্ষয় যদি এতই ক্ষতির কারণ হয়, সেই সময় তো ঐ পুরুষের শেষ হয়ে যাবার কথা; কিন্তু তা হয় না, প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিয়ের পর পুরুষেরা স্বাস্থ্যবান হয়, এটা কেনো এবং কিভাবে ? আর স্বামী স্ত্রীরা নিজের সম্মতিতে সহবাস করে, না জোর ক'রে করে ? বলদ, কথা বলাটাও শিখতে হয়।

এরপর বলেছিস- তয় বীর্যক্ষয় টা একমাত্র সন্তান জন্ম দেয়াতেই ব্যবহারের বিধান আছে।

-সন্তান জন্মদান ছাড়া যদি বীর্যক্ষয় না করা যায়, তাহলে তোর মনুসংহিতায় যে মাসে একবার স্ত্রী সহবাসের নিয়ম আছে, সেই সহবাস কিভাবে হবে ? বীর্যপাত ছাড়া তো কোনো পুরুষের সাটিসফেকশন আসবে না এবং এটা প্রমাণিত যে, যৌনক্রিয়ার সময় বীর্যপাতে যত দেরী হয়, পুরুষরা তত হিংস্র হয়ে উঠে; আর বীর্যপাত ছাড়া কোনো সক্ষম পুরুষের পক্ষে তো যৌনক্রিয়া শেষ করাও সম্ভব নয়। তাহলে বীর্যপাতহীন এই সহবাসের ধরণটা কী ? ঠিকঠাক ব্যাখ্যা দিবি, না হলে যদি তোকে কোনো দিন হাতের কাছে পাই, থাপড়িয়ে তোর দাঁত ভেঙ্গে দেবো, কথাটা মনে রাখিস।

এছাড়াও সন্তানের জন্ম ছাড়া যদি বীর্যপাতের কোনো বিধান না থাকে, তাহলে মানুষকে একটি সন্তানের জন্য শুধু মাত্র একবারই বীর্যপাত করতে হবে, সেই একবারেই যে সে তার স্ত্রীর গর্ভসঞ্চার করতে পারবে, তার গ্যারান্টি কী ? বিজ্ঞানের এত উন্নতির পরেও পৃথিবীর কোনো মানুষ তো আজ পর্যন্ত জানে না যে- মাসের মধ্যে কোন দিন নারীর ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বানু, নারীর জড়ায়ুতে এসে উপস্থিত থাকে শুক্রানুর সাথে মিলনের জন্য। তাই কোনো মানুষের পক্ষে এটা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় যে সে একবার বীর্যপাত করেই তার স্ত্রীর গর্ভসঞ্চার করতে পারবে। একবার বীর্যপাতের ফলেই অবশ্য যেকোনো নারীর গর্ভসঞ্চার হয়, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো মানুষ জানে না, সেই দিনটি মাসিক চক্রের কোন দিন, মানুষ একটা ধারণা নিয়ে যোনীগর্ভে বীর্যপাত করতে থাকে, বেশ কয়েকবার বীর্যপাতের ফলে হয়তো কোনো বারে সেটা লেগে যায়, কিন্তু সেটা দৈবের খেলা, মানুষের এখানে কিছু করার নেই।

আর শুধুমাত্র সন্তান জন্মদানের জন্যই যদি বীর্যক্ষয় করার বিধান থাকে, তাহলে প্রতিমাসে একবার করে স্ত্রী সহবাসের কথা বলছিস কেনো ? বীর্যপাতহীন স্ত্রী সহবাস কি সম্ভব ? আর তোর মহাপুরুষেরা কি তোর মনুর ঐ বিধান মতে মাসে একবারও বীর্যপাতহীন স্ত্রী সহবাস করতো ? বা সন্তানের জন্মের জন্যও কি তারা স্ত্রী গ্রহণ করে তার যোনীতে বীর্যপাত করেছে ?

তোর ক্ষমতাই নেই আমার এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার, তাই তোর কাছে তা আশাও করি না। আর কথা প্রসঙ্গে কথা বাড়াতে আমার কোনো আপত্তি নেই; কারণ, আমি কথা বলতে জানি এবং সেটা যুক্তিযুক্তভাবেই। তুই তো আমাকে অনুরোধ করেছিস, এসব প্রচার থাকতে দূরে থাকতে, কিন্তু আমি তোকে আদেশ দিচ্ছি, আমার প্রচারের পথে এসব ভুল ভাল পোস্ট লিখে কখনো আমার সময় নষ্ট করবি না, আর সেগুলোর দ্বারা মানুষকে বিভ্রান্ত করবি না। আমার পোস্টের প্রচারকে তুই কোনোরকমেই বাধাগ্রস্ত করতে পারবি না; কারণ, সেই ক্ষমতা তোর নেই, তাই এটা নিয়ে কোনো কথা বললাম না।

জয় হিন্দ।

জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

অথর্ববেদ চতুর্থস্থানীয় বেদ, প্রকৃত বেদ নয় :

অথর্ববেদ চতুর্থস্থানীয় বেদ, প্রকৃত বেদ নয় :

#Anonno_Asim,

আপনার এই কাউন্টার পোস্টটা যথাসময়ে আমার নজরে আসে নি ব'লে, যথা সময়ে তার উত্তর দিতে পারি নি। কারণ, কারো নজরে আনার জন্য কিভাবে পোস্ট করতে হয়, সেটা আপনি জানেন না, তাই আমার নজরে আপনার পোস্ট না আসার যে ব্যর্থতা, সেটা আপনার।

যা হোক, কাউন্টার পোস্টের প্রথম প্যারাতেই আপনি লিখেছেন,

" প্রথমত ভাই আমি কোন আর্যসমাজীর নই।বেদে পক্ষে আছি দেখেই আপনি আমায় আর্য সমাজির লোক বানাচ্ছেন.?. ইহা হাস্যকর।

- আমার এক পরিচিত ব্যক্তি বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল হলো দুইটা- একটা আওয়ামীলীগ, অন্যটা এন্টি আওয়ামী লীগ। এর সরল মানে হলো একদল আওয়ামী লীগের পক্ষে, অন্যদলগুলো যে নামেরই হোক না কেনো, তারা আওয়ামীলীগের বিপক্ষে। আপনি আর্য সমাজিদের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলবেন, আর যদি কেউ আপনাকে আর্য সমাজি বলে ধরে নেয়, সেটা হাস্যকর হবে কেনো ? 

হিজড়াদের মতো ঢং করে কথা বললে লোকে আপনাকে হিজড়াই বলবে। যদি নিজেকে হিজড়া প্রমাণ করতে না চান প্রথমে ঐ ঢং ছাড়ুন, মানে বলতে চাইছি নিজেকে আর্য সমাজী হিসেবে পরিচিত করতে না চাইলে প্রথমে ওদের সুরে কথা বলা ছাড়ুন। তবে আপনার এই নিজেকে আর্য সমাজী হিসেবে স্বীকার করতে না চাওয়া একটা বিষয় প্রমাণ করে যে- আর্য সমাজীদেরকে আমি ঠিক মতো পঁচাতে পেরেছি, তাই কেউ নিজেকে আর আর্য সমাজী বলে পরিচয় দিতে চাইছে না; আর্য সমাজীরা বর্তমানে বর্জ্য সমাজী।

তারপর আপনি বলেছেন-

"যেকোন সনাতনী আর্য আর সে বেদকে সাপোর্ট করবে যদি সে আপনার মত ফেসবুক পন্ডিত না হয়ে অন্তত শাস্ত্র পড়েন আর বুঝেন।"

-ফেসবুক হোক, আর বাস্তবে মাঠে হোক যেখানেই পণ্ডিতি দেখানো হোক না কেনো শাস্ত্রজ্ঞান অবশ্যই প্রয়োজন। আপনার শাস্ত্রজ্ঞানের পরিচয় যেমন আপনার পোস্ট, তেমনি আমার শাস্ত্রজ্ঞানের পরিচয় হলো আমার পোস্ট, আর আমার এই পোস্টেই প্রমাণ হয়ে যাবে যে- কে কতটা শাস্ত্র জানে বা বোঝে। আর নিজে যে কাজটা করেন, সেটা নিয়ে অন্যকে টিটকারী মারেন কিভাবে ? আপনার পোস্টে কি আপনি নিজের পাণ্ডিত্যকে জাহির করার চেষ্টা করেন নি বা করেন না ? তাহলে ফেসবুক পণ্ডিত বলে আমাকে বা অন্য টিটকারী মারা কেনো ?

এরপর আপনি বলেছেন,

"Satya Sandhyani Biswanath অন্যের (রুপক রায় দার) পোষ্ট কপি করে না দিয়ে নিজে লিখুন, অন্তত কিছু বুঝতে বা জানতে পারবেন।"

-আপনাকে কে বললো যে সত্য সন্ধানী বিশ্বনাথ আর রূপক রায় আলাদা ব্যক্তি ? রূপক রায় বর্তমানে কোনো একজন ব্যক্তি নয়, একটি প্রতিষ্ঠান, একটি ব্র্যান্ড; যে প্রতিষ্ঠানের বহু সদস্য আছে, যারা নিজ দায়িত্বেই রূপক রায় ব্র্যান্ডের পক্ষে প্রচারের কাজ করে, তাই এখানে কপি পেস্টের কোনো ব্যাপার নেই, ব্যাপার আছে শুধু প্রচারের।

তারপর মূল প্রসঙ্গে আপনি বলেছেন,

"আপনি একটা নাস্তিক, কারণ স্মৃতি শাস্ত্র বলে, যে ব্যক্তি বেদের নিন্দা অর্থাৎ অপমান করে,(বেদ) ত্যাগ ও (বেদ) বিরুদ্ধ আচরণ করে তাহাকে "নাস্তিক" বলে।"- মনুসংহিতা-২/১১

-নিন্দা কাকে বলে, জানেন তো ? যে যা নয়, তার সম্পর্কে যদি সেটা বলা বা প্রচার করা হয়, তাহলে সেটা হয় নিন্দা। আমি বেদ ত্যাগ করেছি, সেটা কি আপনি আমার কোনো পোস্টের রেফারেন্স দিয়ে প্রমাণ করতে পারবেন ? আমি বেদকে সনাতন ধর্মের ভিত্তি মনে করি, যদি আমি বেদকে ত্যাগ করতাম, তাহলে কি এই কথা বলতে পারতাম ? আপনারা আর্য সমাজীরা আসলে তাদের বিরুদ্ধেই মনুসংহিতার এই বাণীকে প্রয়োগ করে তাদেরকেই বেদ বিরোধী তকমা দেন, যারা বেদের নয়, আপনাদের কথার বিরোধিতা করে; কারণ, আপনারা নিজেদেরকে মনে করে বেদের একমাত্র পার্থিব এজেন্ট। যা হোক, মনুসংহিতার এই রেফারেন্সকে অবলম্বন করেছেন, তার মানে মনুসংহিতা আপনার কাছে সনাতন ধর্মের প্রামাণ্য গ্রন্থ, আপনার এই স্ট্যান্ডার্ড যেন মনুসংহিতার সকল রেফারেন্সের বেলায় ঠিক থাকে।

এরপর আপনি বলেছেন-

"আমি আগের পোষ্টে যাষ্ট অথর্ব বেদ থেকে প্রমান করে দিয়েছিলাম যে বেদ পরমাত্মা থেকে সৃষ্টি আর বেদ স্বয়ং ঈশ্বরের বাণী।কিন্তু উনি ওটা না মেনে পণ্ডিতি করে অর্থব বেদকেই সরাসরি অস্বিকার করেছে।ইহা অতিব হাস্যকর। উনি মনুর-১/২৩ শ্লোক দেখিয়ে প্রমান রেখেছেন অর্থব বেদ বেদের অংশ নয়। কিন্তু এটা উনার অলীক কল্পনা বই কিছুনা। কারণ মনু বলেছে স্মৃতি আর শ্রুতির বিরোধ হলে শ্রুতিই প্রামান্য বলে গণ্য। তাই তার ওই মনুর-১/২৩ শ্লোক গ্রহণীয় নয়।ওটা গঙ্গা জলে চুবিয়ে আনুন গিয়ে।"

-মনু যদি বলে থাকে যে, শ্রুতি (বেদ) আর স্মৃতি (অন্যান্য+মনুসংহিতা)র মধ্যে বিরোধ হলে শ্রুতিই প্রামান্য বলে গণ্য হবে, এতকিছুর রেফারেন্স দিয়েছেন, তো এর রেফারেন্স দেন নি কেনো ? রেফারেন্স দিলে একটু গবেষণা করে দেখতাম, কোনো লোক কিভাবে নিজের কথাকেই মিথ্যা বলে স্বীকার করে। আপনার কাছে মনুসংহিতার ২/১১ সঠিক, কিন্তু ১/২৩ ঠিক নয়; ব্যাপারটি স্ববিরোধী হয়ে গেলো না ? আর যার ভিত্তিতে স্ববিরোধী অবস্থানে আছেন, সেটারও রেফারেন্স দিতে পারেন নি, আপনার কথাকে সঠিক বলে ধরে নিই কিভাবে ? ফেসবুক পণ্ডিত বলে আমাকে খোঁটা দিচ্ছেন, কিন্তু নিজের পণ্ডিতিও কী প্রমাণ করতে পারছেন বা পেরেছেন ?

এরপর বলেছেন,

"চলুন অথর্ব বেদ যে বেদেরই চার খন্ডের একটি এটা দেখে আসি। উনি গীতা থেকেও একটা প্রমান দিয়েছেন। চলুন আমি গীতার জন্মদাতা উপনিষদ হতে ঘুরে আসি, #ছান্দোগ্য_উপনিষদ-৩/৪/১ অথর্ববেদোক্ত মন্ত্র রাশিই মধুকর।"

-এখানে আপনি বলেছেন, ছান্দোগ্য উপনিষদের ৩/৪/১ এ বলা আছে, "অথর্ববেদোক্ত মন্ত্র রাশিই মধুকর।" তাহলে দেখা যাক এই মন্ত্রে আসলেই কী বলা আছে-

এই মন্ত্রটি হলো- "মধুনাড্যোহথর্বাঙ্গিরস এব মধুকৃত" যার অর্থ হলো- অথর্বাঙ্গিরস মন্ত্রসমূহই মধুকর।

-অথর্ব একজন ঋষি এবং আঙ্গিরসও একজন ঋষি, এদের উভয়ের কার্য একই প্রকারের বলে দুজনের নাম একসাথে যুক্ত হয়ে অথর্বাঙ্গিরস হয়েছে, ঋগ্বেদে উল্লিখিত এদের মন্ত্রই যে শ্রুতিমধুর, এখানে সেই কথা বলা হয়েছে। এখানে কোথায় বলা আছে যে অথর্ববেদোক্ত মন্ত্ররাশিই মধুকর ? বাস্তবে যদি এই কথা বলাও হতো, তাহলে তিন বেদের মধ্যে প্রধান যে বেদ, সেই ঋগ্বেদকেও কি ছোট করা হতো না ? শাস্ত্রের অপব্যাখ্যা করে কিভাবে কোনো বিষয়কে নিজের মতে এনে প্রচার করতে হয়, তাতে যে আপনারা বিশেষজ্ঞ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

যা হোক, ছান্দোগ্য উপনিষদের একটি মন্ত্রের বিকৃত ব্যাখ্যার পর, অপর মন্ত্রের কী হাল করেছেন, এবার সেটা দেখাচ্ছি-

ছান্দোগ্যোপনিষদ এর ৭/১/২ এর রেফারেন্স দিয়ে আপনি বলেছেন, এখানে নাকি লিখা আছে,

"হে ভগবান আমি ঋগ্বেদ অবগত আছি।হে ভগবান আমি যজুর্বেদ,সামবেদ,চথুর্থ স্থানীয় অথর্ববেদ ...... অবগত আছি।"

কিন্তু এই মন্ত্রের অর্থে লিখা রয়েছে, "নারদ বলিলেন- ভগবান, ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ চতুর্থস্থানীয় অথর্ববেদ, ইতিহাস পুরাণ নামক পঞ্চম বেদ… আমি এই সবই জানি।"

এখানে ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ এর পর সরাসরি কেনো বলা হলো না যে অথর্ববেদ, কেনো বলা হলো চতুর্থস্থানীয় অথর্ববেদ ? এর কারণ হলো অথর্ববেদ, অন্য তিনিটি বেদের পর্যায়ে পড়ে না, বেদের পরিশিষ্ট হিসেবে একে চতুর্থ বেদ হিসেবে আমরা ধরে নিয়েছি, যেকারণে ইতিহাস পুরাণকে পঞ্চম বেদ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে। এই রেফারেন্সের ভিত্তিতে যদি আমরা অথর্ববেদকে চতুর্থ বেদ হিসেবে ধরে নিই, তাহলে রামায়ণ-মহাভারত এবং পুরাণগুলোকেও পঞ্চম বেদ হিসেবে ধরে নয়, স্বীকার করে নিতে হবে; তাহলে আর প্রচলিতভাবে বেদ চারটি একথা বলা যাবে না, বলতে হবে- বেদ ৫টি। তাহলে আপনারা কি এখন এই কথা বলবেন যে- বেদ ৫টি ?

সত্যিই শাস্ত্রের বিকৃত ব্যাখ্যার প্রচারে আপনাদের যে প্রতিভা, তাতে আমি মুগ্ধ।

যা হোক, এরপর মহাভারত শান্তিপর্বের যে রেফারেন্স দিয়েছেন, তার শ্লোক উল্লেখ করেন নি বলে বুঝতে পারছি না যে এখানে আসলেই কী বলা আছে। তাই এটা নিয়ে আর কিছু বললাম না, শুধু এই কথা বলছি যে, যে একটি মিথ্যা তথ্য দিতে পারে, সে যে ১০০টা তথ্যও মিথ্যা দিতে পারে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সংস্কৃত শ্লোকসহ বাংলা অনুবাদের মহাভারত সবার কাছে নেই, তাই সবার পক্ষে মহাভারতের ঐ রেফারেন্সের ক্রসচেক করা সম্ভব না হলেও গীতা কিন্তু সবার কাছেই আছে, তাই আপনার দেওয়া গীতার শ্লোক দিয়েই প্রমাণ হবে যে, মহাভারতের ঔ শ্লোকের রেফারেন্স আপনি সত্য বলেছেন কি না ?

গীতার ১৫/১৫ রেফারেন্স দিয়ে আপনি বলেছেন, এখানে নাকি বলা আছে-

"চারবেদের একমাত্র জ্ঞাতব্য আমিই।আমি বেদান্তের সৃষ্টিকর্তা এবং আমিই বেদজ্ঞ।"

কিন্তু এই মন্ত্রটি হলো- "বেদৈশ্চ সর্বৈরহমেব বেদ্যো বেদান্তকৃদ বেদবিদেব চাহম" এবং এর অনুবাদ হলো- আমিই বেদসমূহের একমাত্র জ্ঞাতব্য, আমিই বেতান্তের অর্থ প্রকাশক এবং আমিই বেদবেত্তা।

এখানে কি বলা আছে যে চারবেদের একমাত্র জ্ঞাতব্য আমিই ? এখানে বলা হয়েছে বেদসমূহ। আর গীতার ৯/১৭ নং শ্লোকেই তো বলা হয়েছে বেদ তিনটি, যথা- ঋক, সাম ও যজুর্বেদ।

আপনার ধান্ধাবাজি সত্যিই মনোমুগ্ধকর।

সুতরাং উপনিষদ, বেদ, গীতা, কোনোটি দ্বারাই প্রমাণ হয় না যে বেদ চারটি, আর আমি যে প্রশ্ন তুলবো, আমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে সেটা আপনি কেনো, পুরো আর্য সমাজ মিলেও সমাধান করতে পারবে না।

এরপর আপনি ঋগ্বেদের ১০/১৮/২ নং মন্ত্রের রেফারেন্স দিয়ে বলেছেন, পবিত্র বেদে পরমাত্মা বলেছে...

"শুদ্ধ এবং পবিত্র হও তথা পরোপকারময় জীবনযুক্ত হও।" কিন্তু বাস্তবে এই মন্ত্রে বলা আছে- "তোমরা শুদ্ধ পবিত্র ও যজ্ঞানুষ্ঠানকারী হও।" এটা যদি পরমাত্মার বাণী হয়, তাহলে এর আগের মন্ত্রে যে বলা আছে, "আমাদের সন্তানসন্তুতি বা লোকজনকে হিংসা করো না।" এটা পরমাত্মার বাণী কিভাবে হয় ? বেদ যদি সরাসরি পরমাত্মার বাণী হয়, তাহলে বেদের সকল কথা ই তো পরমাত্মার বাণী হবে, তাই না ? তাহলে আমাকে বোঝান, "আমাদের সন্তানসন্তুতি বা লোকজনকে হিংসা করো না।" ব'লে পরমাত্মা এখানে কী বলেছেন বা কী বুঝিয়েছেন ?

এই মন্ত্রটি মৃত্যু দেবতার উদ্দেশ্যে সংকুষুক ঋষি লিখেছেন, সেখানে তিনি মানবের উদ্দেশ্যে বলেছেন, "তোমরা মৃত্যুর পথ ছেড়ে যাও, তাহলে উৎকৃষ্ট ও অতিদীর্ঘ আয়ু প্রাপ্ত হবে, তোমাদের গৃহ- সন্তানসন্ততি ও ধনে পরিপূর্ণ হবে। তোমরা শুদ্ধ পবিত্র ও যজ্ঞানুষ্ঠানকারী হও।"

মূলত সংকুষুক ঋষি এখানে- মানুষ যেন দীর্ঘায়ু হয়, তারা যেন ধন-সম্পত্তিতে এবং সন্তানে সুখী হয়, সেজন্য মানুষদেরকে উপদেশ দিয়েছেন শুদ্ধ পবিত্র ও যজ্ঞানুষ্ঠানকারী হতে। এখানে পরমাত্মার বাণীর কিছু নেই।

তাছাড়াও Devas বা সংস্কৃত 'উত দেবা' শব্দের অর্থ যে- মনস্বী বিদ্বান ব্যক্তি, মহাপুরুষ বা আচার্য, সেটা আপনি আর্য সমাজ কর্তৃক প্রকাশিত কোনো পুস্তক ছাড়া অন্য কোনো গ্রন্থ থেকে রেফারেন্স দিয়ে প্রমাণ করবেন। যদি না পারেন…। আর একটা শব্দের যে অনেকগুলো অর্থ থাকে, সেটা আমি জানি; কারণ, আমি বাংলাসাহিত্যে মাস্টার্স করা লোক। এই যেমন আপনার নাম অসীম, অসীম শব্দের একটা অর্থ কিন্তু শূন্য বা জিরো, এই হিসেবে তো আমরা ধরেই নিতে পারি যে আপনি শূন্য বা একটা খালি কলসী, যার ভেতরে কোনো মাল নেই ?

আর অথর্ববেদ সম্পর্কে আপনার নিজের ধারণাই তো ভূল, আপনি আবার আমার ধারণাকে ভুল বলেন কিভাবে ? আবার দাবী করছেন, আমার ভুল ধারণাকে ভেঙ্গে দিয়েছেন ? খালি কলসী এখন দেখছি সত্যিই বাজে বেশী।

এছাড়াও একেবারে শেষে যে বলেছেন- 

ঘোমটার নিচে খেমটা ড্যান্স না দিয়ে বোরকা খুলে বাইরে বেরোন।

এর মানেটা কী ? একটা উদাহরণ দিতে গেলেও যে প্রাসঙ্গিকভাবে দিতে হয়, সেই কমনসেন্স কি আপনার আছে ? এই যে আপনার পোস্টের জবাব আমি পোস্ট লিখে পাবলিকলি দিয়ে আপনাকে ন্যাংটা করছি, এতেই কি প্রমাণ হয় না যে- আমি ঘোমটার নিচে বা বোরকার মধ্যে নেই ?

ওঁ নমঃ শিবায়, জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ- এসব আমার সমাপ্তিসূচক শ্লোগান, যখন এসব নিজের পোস্টে ব্যবহার করা শুরু করেছেন, তখন আপনার নিয়তি কী, সেটা বুঝতে পারছেন ? থাক আর বললাম না; কারণ, যদি মরদ হন, তাহলে অর্ধেকেই বুঝে যাবেন। কারণ, কথায় বলে- অর্ধেক বললেই মর্দে বোঝে।

জয় হিন্দ।

জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

রাধাষ্টমীর ব্রত পালনের তথাকথিত ফল এবং বাস্তবতা :

রাধাষ্টমীর ব্রত পালনের তথাকথিত ফল এবং বাস্তবতা :

যারা মিথ্যা বলে এবং মিথ্যা আশ্বাস দেয়, তারাই বেশি বলে বা বাড়িয়ে বলে; কারণ, তারা জানে সত্য কথা বললে লোকজন তাদেরকে গ্রহণ করবে না, তাই তারা এমন কথা বলে যাতে লোকে প্রলোভনে পড়ে এবং তাদের প্রোডাক্ট কিনে বা তাদেরকে গ্রহন করে। ফটোপোস্টে দেখুন সেরকমই কিছু বিষয় তুলে ধরে মানুষ প্রলোভিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, যাতে মানুষ সবকিছু ছেড়ে রাধাকে এ্যাকসেপ্ট করে। কিন্তু মিথ্যা আশ্বাসে মেয়েরা বা নারী স্বভাবের মানুষই বিশ্বাস করতে পারে, কারণ, মেয়েরা প্রকৃত সত্য এবং বাস্তব কথাবার্তাকে কম পছন্দ করে, বিপরীতে মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে বেশি বিশ্বাস করে; কিন্তু কোনো প্রকৃত পুরুষ মিথ্যা আশ্বাসে কখনো ভুলে না, তাদেরকে ভোলানো যায় না। তাই রাধার ভক্তদের এই অপচেষ্টা একেবারে ব্যর্থ বলবো না, তবে বেশির ভাগই ব্যর্থ।

ফটোপোস্টের শুরুতেই দেখুন পদ্মপুরাণ ব্রহ্মখণ্ড ৭/৮ এর রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে- একহাজার একাদশী পালন করলে যে ফল লাভ হয়, এক রাধাষ্টমী পালন করলে তার চেয়ে শতগুন বেশী ফল লাভ হয়।

এখন বাস্তবতার নিরীখে এই তথ্যটি বিচার করে দেখা যাক-

এক বছরে একাদশী থাকে ২৬টি, এই হিসেবে সাড়ে ৩৮ বছর ধরে একাদশী পালন করলে একাদশী হবে ১০০১টি। এক রাধাষ্টমী পালন করলে নাকি এর শতগুন বেশী ফল লাভ হয়। তার মানে ৩ হাজার ৮৫০ বছর ধরে কোনো এক লোক যদি একাদশী পালন করে, তাহলে সে ফল লাভ করবে, এক রাধাষ্টমী পালন করলেই তার নাকি সেই ফল লাভ হবে। এই জন্যই এক কবি বলে গিয়েছেন, "যে কহে বিস্তর মিছা, সে কহে বিস্তর।"

যা হোক, একাদশী পালন করে আমরা ভাবি যে আমাদের পূণ্য হচ্ছে, এটা বিশ্বাসের ব্যাপার। কিন্তু একাদশী পালন করার কিছু বাস্তব শারীরিক উপকারিতা আছে, যেমন- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, যার ফলে স্ট্রোকে ঝুঁকি কমে, পাকস্থলীর যাবতীয় রোগের উপশম হয়, হজমশক্তি বাড়ে, অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় যেসব শারীরিক ও মানসিক সমস্যা বাড়ে একাদশীর উপবাসের ফলে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে। এক রাধাষ্টমীর উপবাস করলে কোনো লোকের ৩৮৫০ বছর ধরে এসব সমস্যা নিয়ন্ত্রণের দরকার নেই, মানুষের যে সাধারণ গড় আয়ু, যেমন ৭০/৮০ বছর, এই সময় ধরে তার এসব নিয়ন্ত্রণে থাকবে তো ? যদি থাকে তাহলে আমি রাধাষ্টমী পালন করতে রাজী।

এরপর যে বাকোয়াজ ঝাড়া হয়েছে, সেটা হলো- রাধাষ্টমী পালনের ফলে মানুষের কোটি জন্মের পাপরাশি বিনষ্ট হয়।

কোনো আত্মার তো এক কোটি জন্মই হয় না। কোনো আত্মার জন্ম হয় সর্বোচ্চ ৮৪ লক্ষ বার, এর মধ্যে মানুষ হিসেবে জন্ম মাত্র ৪ লক্ষ বার। তাহলে কোটি জন্মের কথা আসছে কোথা থেকে ? কোনো কথা বলার সময় একটু হিসেব করে বলা দরকার যে, সেটা বাজেকথা হয়ে যাচ্ছে না তো ?

এরপর বলা হয়েছে-

সুমেরু পর্বত সমান সোনা দান করলে যে ফল লাভ হয়, একটিমাত্র রাধাষ্টমী ব্রত পালন করলে তার শতগুন আধিক ফল লাভ হয়।

-যে ব্যক্তি এসব বাল ছাল লিখেছে, তার কোনো ধারণাই নেই যে সুমেরু পর্বত কত বড় ? সারা পৃথিবীতে যত সোনা আছে সমস্ত একত্রিত করলেও সুমেরু পর্বতের সমান হবে না। আর এত সোনা যার কাছে থাকবে সে নিশ্চয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবে। এই পরিমান ধন দান করে সে পৃথিবীর বহু মানুষের উপকার করতে পারবে, এতে তার যে পুন্য হবে, তার চেয়ে শতগুন পূন্য নাকি হবে একটিমাত্র রাধাষ্টমী ব্রত পালন করে ! 

এতগুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার, সনাতন ধর্মের প্রধান প্রধান যে গ্রন্থগুলো, যেমন- গীতা, বেদ, উপনিষদ, এসবে নেই কেনো ? দেশের গুরুত্বপূর্ণ আইনের বিধান কি, দেশের সংবিধান ছাড়া আইনের কোনো চটি বইয়ে থাকে ? আর আইনের কোনো চটি বইয়ে যদি এই রকম কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকেও, কিন্তু সেটা যদি সংবিধান মোতাবেক না হয়, তাহলে সেটা হাইকোর্ট বা সুপ্রীমকোর্ট মানতে বাধ্য কী ?

এরপর দুটি ধারায় যে বলা হয়েছে-

২. গঙ্গা ইত্যাদি সমস্ত পবিত্র তীর্থে স্নান করে যে ফল লাভ হয়, একমাত্র রাধাষ্টমী পালন করলে সেই ফল লাভ হয়।

৩. যে মূর্খ রাধাষ্টমী ব্রত পালন করে না, সে শতকোটি কল্পেও নরক থেকে নিস্তার পেতে পারে না।

এসব সম্পর্কেও দেশের সংবিধান আইন সম্পর্কে উপরে যা বললাম, সেই একই কথা প্রযোজ্য, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার, অথচ সনাতন ধর্মের প্রধানগ্রন্থগুলোতে তার বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত নেই, ব্যাপারটা কি স্বাভাবিক ? নিশ্চয় স্বাভাবিক নয়, আর যেটা স্বাভাবিক নয়, সেটাই মিথ্যা।

সুতরাং এই রাধাষ্টমী সম্পর্কে ফটোপোস্টে যা বাজে বকা হয়েছে, তার যে কোনো ভিত্তি নেই, সেটা আমার পাঠক বন্ধুদেরকে বোঝাতে পেরেছি বলে আমি মনে করছি।

জয় হিন্দ।

জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।