Thursday 1 October 2020

রাধাষ্টমীর ব্রত পালনের তথাকথিত ফল এবং বাস্তবতা :

রাধাষ্টমীর ব্রত পালনের তথাকথিত ফল এবং বাস্তবতা :

যারা মিথ্যা বলে এবং মিথ্যা আশ্বাস দেয়, তারাই বেশি বলে বা বাড়িয়ে বলে; কারণ, তারা জানে সত্য কথা বললে লোকজন তাদেরকে গ্রহণ করবে না, তাই তারা এমন কথা বলে যাতে লোকে প্রলোভনে পড়ে এবং তাদের প্রোডাক্ট কিনে বা তাদেরকে গ্রহন করে। ফটোপোস্টে দেখুন সেরকমই কিছু বিষয় তুলে ধরে মানুষ প্রলোভিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, যাতে মানুষ সবকিছু ছেড়ে রাধাকে এ্যাকসেপ্ট করে। কিন্তু মিথ্যা আশ্বাসে মেয়েরা বা নারী স্বভাবের মানুষই বিশ্বাস করতে পারে, কারণ, মেয়েরা প্রকৃত সত্য এবং বাস্তব কথাবার্তাকে কম পছন্দ করে, বিপরীতে মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে বেশি বিশ্বাস করে; কিন্তু কোনো প্রকৃত পুরুষ মিথ্যা আশ্বাসে কখনো ভুলে না, তাদেরকে ভোলানো যায় না। তাই রাধার ভক্তদের এই অপচেষ্টা একেবারে ব্যর্থ বলবো না, তবে বেশির ভাগই ব্যর্থ।

ফটোপোস্টের শুরুতেই দেখুন পদ্মপুরাণ ব্রহ্মখণ্ড ৭/৮ এর রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে- একহাজার একাদশী পালন করলে যে ফল লাভ হয়, এক রাধাষ্টমী পালন করলে তার চেয়ে শতগুন বেশী ফল লাভ হয়।

এখন বাস্তবতার নিরীখে এই তথ্যটি বিচার করে দেখা যাক-

এক বছরে একাদশী থাকে ২৬টি, এই হিসেবে সাড়ে ৩৮ বছর ধরে একাদশী পালন করলে একাদশী হবে ১০০১টি। এক রাধাষ্টমী পালন করলে নাকি এর শতগুন বেশী ফল লাভ হয়। তার মানে ৩ হাজার ৮৫০ বছর ধরে কোনো এক লোক যদি একাদশী পালন করে, তাহলে সে ফল লাভ করবে, এক রাধাষ্টমী পালন করলেই তার নাকি সেই ফল লাভ হবে। এই জন্যই এক কবি বলে গিয়েছেন, "যে কহে বিস্তর মিছা, সে কহে বিস্তর।"

যা হোক, একাদশী পালন করে আমরা ভাবি যে আমাদের পূণ্য হচ্ছে, এটা বিশ্বাসের ব্যাপার। কিন্তু একাদশী পালন করার কিছু বাস্তব শারীরিক উপকারিতা আছে, যেমন- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, যার ফলে স্ট্রোকে ঝুঁকি কমে, পাকস্থলীর যাবতীয় রোগের উপশম হয়, হজমশক্তি বাড়ে, অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় যেসব শারীরিক ও মানসিক সমস্যা বাড়ে একাদশীর উপবাসের ফলে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে। এক রাধাষ্টমীর উপবাস করলে কোনো লোকের ৩৮৫০ বছর ধরে এসব সমস্যা নিয়ন্ত্রণের দরকার নেই, মানুষের যে সাধারণ গড় আয়ু, যেমন ৭০/৮০ বছর, এই সময় ধরে তার এসব নিয়ন্ত্রণে থাকবে তো ? যদি থাকে তাহলে আমি রাধাষ্টমী পালন করতে রাজী।

এরপর যে বাকোয়াজ ঝাড়া হয়েছে, সেটা হলো- রাধাষ্টমী পালনের ফলে মানুষের কোটি জন্মের পাপরাশি বিনষ্ট হয়।

কোনো আত্মার তো এক কোটি জন্মই হয় না। কোনো আত্মার জন্ম হয় সর্বোচ্চ ৮৪ লক্ষ বার, এর মধ্যে মানুষ হিসেবে জন্ম মাত্র ৪ লক্ষ বার। তাহলে কোটি জন্মের কথা আসছে কোথা থেকে ? কোনো কথা বলার সময় একটু হিসেব করে বলা দরকার যে, সেটা বাজেকথা হয়ে যাচ্ছে না তো ?

এরপর বলা হয়েছে-

সুমেরু পর্বত সমান সোনা দান করলে যে ফল লাভ হয়, একটিমাত্র রাধাষ্টমী ব্রত পালন করলে তার শতগুন আধিক ফল লাভ হয়।

-যে ব্যক্তি এসব বাল ছাল লিখেছে, তার কোনো ধারণাই নেই যে সুমেরু পর্বত কত বড় ? সারা পৃথিবীতে যত সোনা আছে সমস্ত একত্রিত করলেও সুমেরু পর্বতের সমান হবে না। আর এত সোনা যার কাছে থাকবে সে নিশ্চয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবে। এই পরিমান ধন দান করে সে পৃথিবীর বহু মানুষের উপকার করতে পারবে, এতে তার যে পুন্য হবে, তার চেয়ে শতগুন পূন্য নাকি হবে একটিমাত্র রাধাষ্টমী ব্রত পালন করে ! 

এতগুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার, সনাতন ধর্মের প্রধান প্রধান যে গ্রন্থগুলো, যেমন- গীতা, বেদ, উপনিষদ, এসবে নেই কেনো ? দেশের গুরুত্বপূর্ণ আইনের বিধান কি, দেশের সংবিধান ছাড়া আইনের কোনো চটি বইয়ে থাকে ? আর আইনের কোনো চটি বইয়ে যদি এই রকম কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকেও, কিন্তু সেটা যদি সংবিধান মোতাবেক না হয়, তাহলে সেটা হাইকোর্ট বা সুপ্রীমকোর্ট মানতে বাধ্য কী ?

এরপর দুটি ধারায় যে বলা হয়েছে-

২. গঙ্গা ইত্যাদি সমস্ত পবিত্র তীর্থে স্নান করে যে ফল লাভ হয়, একমাত্র রাধাষ্টমী পালন করলে সেই ফল লাভ হয়।

৩. যে মূর্খ রাধাষ্টমী ব্রত পালন করে না, সে শতকোটি কল্পেও নরক থেকে নিস্তার পেতে পারে না।

এসব সম্পর্কেও দেশের সংবিধান আইন সম্পর্কে উপরে যা বললাম, সেই একই কথা প্রযোজ্য, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার, অথচ সনাতন ধর্মের প্রধানগ্রন্থগুলোতে তার বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত নেই, ব্যাপারটা কি স্বাভাবিক ? নিশ্চয় স্বাভাবিক নয়, আর যেটা স্বাভাবিক নয়, সেটাই মিথ্যা।

সুতরাং এই রাধাষ্টমী সম্পর্কে ফটোপোস্টে যা বাজে বকা হয়েছে, তার যে কোনো ভিত্তি নেই, সেটা আমার পাঠক বন্ধুদেরকে বোঝাতে পেরেছি বলে আমি মনে করছি।

জয় হিন্দ।

জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment