Sunday 16 August 2020

মুঘলদের রাজত্বকাল কি ভারতের স্বর্ণযুগ ছিলো ?


মুঘলদের রাজত্বকাল কি ভারতের স্বর্ণযুগ ছিলো ? 

ফটো পোস্টের বক্তব্যটি যেহেতু প্রচার করছে 'ইসলামিক সমাধান' নামের একটি সংগঠন বা গ্রুপ, অর্থাৎ মুসলমানরা, সেহেতু এর পেছনে কতটা সত্যতা রয়েছে, সেটা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে, যেহেতু এটা কোনো জাতীয় পত্রিকার কাটিং নয়। মুসলমানদের ব্যাপারে এই সন্দেহের কারণ হলো- এরা চাঁদে যাওয়া নীল আর্মস্ট্রংকে নিয়েও মিথ্যা গল্প প্রচার করেছিলো, যে নীল আর্মস্ট্রং চাঁদ থেকে ফিরে মুসলমান হয়ে গিয়েছে। চীনের প্রেসিডিন্টকেও এরা মুসলমান বানিয়ে প্রচার করেছে, অং সান সুচি এবং সানি লিওনকে এরা মুসলমান হিসেবে প্রচার করতে ছাড়ে নি। এই মুসলমান, মিথ্যাই যাদের প্রধান অবলম্বন, তাদের কোনো কথাকে কিভাবে বিশ্বাস করা যায় ?

যা হোক, স্বরা ভাস্কর যদি ফটো পোস্টের কথাগুলো বলেও থাকে, সেটা ভারতে- নেহেরু মার্কা ইতিহাস পড়ানোর ফল, যে ইতিহাসে মুসলমান সম্পর্কে খারাপ কোনো কিছু বলা নেই, আর মুসলমান সম্পর্কে খারাপ কোনো কিছু না বলে তাদের সম্পর্কে ভালো ভালো কথা লিখে ইতিহাস বই ছাপানোর নির্দেশ স্বয়ং নেহেরু দিয়েছিলো বলেই, এটাকে বলে নেহেরু মার্কা ইতিহাস

যা হোক, ফটোপোস্টে যে বলা হয়েছে- মুঘলরা যদি ভারতের মাটিতে পা না দিতো, তাহলে ভারতবর্ষ এখনও দুশো বছর পিছিয়ে খাকতো।

-মুঘলরা হলো মুসলিম রাজবংশ, এরা আগের কয়েকটি মুসলিম রাজবংশের ধারাবাহিকতায় ভারতের দখল করে। ভারতে মুসলমানদের আগমনের আগে ভারতে ছিলো নালন্দার মতো পৃথিবীর সেরা অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়, সেই সময় ভারতের শিক্ষিতের হার ছিলো প্রায় ৫৮%, মুসলমানরা এসে সেগুলো পুড়িয়ে দেয়, ধ্বংস করে; বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ব্রাহ্মণদের দ্বারা পরিচালিত অনেক ছোটো ছোট টোল প্রায় প্রতিটি গ্রামে ছিলো, মুসলমান শাসকরা সেগুলোও বন্ধ করে দেয়, ফলে ভারতে শিক্ষার হার ২% এ নেমে আসে। তাছাড়া, ভারতে- মুসলমানরা তাজমহল, লালকেল্লা, কুতুব মিনারসহ এটা ওটা নির্মান করেছে বলে যে নেহেরু মার্কা ইতিহাসে প্রচার করা হয়, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, মুসলমানরা ভারতে কিছুই নির্মান করে নি, এরা শুধু গায়ের জোরে দখল করে তাকে ইসলামিক রূপ দিয়েছে মাত্র, তাহলে মুসলিম বা মুঘল শাসনামলে ভারত সামনের দিকে এগিয়েছে, না পিছিয়েছে ?

ফটোপোস্টে এরপর বলা হয়েছে- মেয়েদেরকে এখনও মৃত স্বামীর সাথে চিতায় জ্বলতে হতো।

-কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে ভারতে মুসলমানদের মতো বিদেশী অপশাসনের ফলেই সতীদাহের মতো প্রথার উদ্ভব হয়েছিলো। কারণ, সতীদাহ সনাতন ধর্মের কোনো প্রথা নয়, যেহেতু বেদে বিধবাদেরকে পুনরায় বিয়ে করতে বলা হয়েছে এবং ভারতের প্রকৃত ইতিহাস- রামায়ণ ও মহাভারতে যেহেতু সতীদাহের মতো ঘটনার কোনো উল্লেখ নেই। সতীদাহ সম্পর্কে মুসলমানরা এটাও প্রচার করে যে- ঔরঙ্গজেব নাকি সতীদাহ প্রথা বন্ধ করেছিলো! কিন্তু মুসলমান নামের মূর্খরা অঙ্কের এই হিসেব বোঝে না যে- রাজা রামমোহনের প্রচেষ্টায় লর্ড বেন্টিংক সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে আইন পাশ করে ১৮২৯ সালে, যখন ঔরঙ্গজেব কেনো, ভারতে কোনো মুসলিম শাসনই নেই। কিন্তু মুসলমানরা তো মিথ্যার ধারক, বাহক ও প্রচারক, ওরা সত্য তথ্যে কান দেবে কেনো ?

শেষে যে বলা হয়েছে- "হিন্দুস্থানে মুঘলদের রাজত্বকাল একটা স্বর্নযুগ ছিল।"

-এখানে স্বর্ন বানান যেমন ভুল, তেমনই ভুল এই তথ্য। বাস্তবে ভারতে শুধু মুঘলদের রাজত্বকালই নয়, পুরো মুসলমান শাসনের যুগই ছিলো অন্ধকার। রামায়ণ, মহাভারত যুগের কথা বাদ দিলেও, তার পরবর্তী বিভিন্ন হিন্দু শাসক, যেমন -চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের অধীনে ভারত যে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও শক্তিতে অকল্পনীয় উন্নতি করেছিলো, যার কারণে গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের সেনাপতি সেলুকাস পর্যন্ত চন্দ্রগুপ্তের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দিয়ে সন্ধি করতে বাধ্য হয়েছিলো, বাস্তবে সেটাই ছিলো ভারতের স্বর্ণযুগ, আর তার তুলনায় মুসলমান শাসনের যুগ ছিলো অন্ধকার যুগ, তাই একে কিছুতেই শাসন বলা যায় না, বলতে হবে দুঃশাসন।

সুতরাং মুসলমানদের এইসব প্রচার যে বাস্তবতার ভিত্তিতে সম্পূর্ণ মিথ্যা, আশা করছি, সেটা আমার বন্ধুদেরকে বোঝাতে পেরেছি।

জয় হিন্দ।

No comments:

Post a Comment