Thursday 6 August 2020

বসুদেব ও বাসুদেবের মধ্যে পার্থক্য কী ?


বসুদেব ও বাসুদেবের মধ্যে পার্থক্য কী ?

Ramesh Debnath,
আপনার মস্তিষ্ক যে সুস্থ নয়, সেটা সম্ভবত আপনি জানেন না। কিন্তু আমরা, যারা আপনার পোস্ট রেগুলার ফেসবুকে দেখতে বাধ্য হই, তারা বুঝতে পারি। কারণ, আপনি অকারণে কোনো কোনো পোস্টে এমন স্ট্যাটাস দেন, যার কোনো অর্থই নেই।

কোনো কিছু লিখার উদ্দেশ্য হলো মানুষকে বোঝানো। আপনার লিখা পড়ে কেউ যদি বা অনেকেই যদি কিছু বুঝতে না পারে, তাহলে আপনার লিখার উদ্দেশ্য কী ? প্রতিটি মানুষ সাধারণ জ্ঞান বুদ্ধি সম্পন্ন, তাই তাদেরকে যদি কোনো কিছু বুঝিয়ে বলা যায়, সেটা যতই জটিল হোক, তারা সেটা বুঝবে, যদি কোনো বিষয় বেশি জটিল হয়, তাহলে তার জন্য সহজ উদাহরণ ব্যবহার করতে হবে, যে দায়িত্বটা লেখকের। তাই যেকোনো ভাবেই হোক, কেউ যদি তার পাঠকদেরকে বিষয়টি বোঝাতে ব্যর্থ হয়, সে লেখকই নয়, তার লেখা ছেড়ে দিয়ে অন্য কিছুতে মন দেওয়া উচিত। এ পর্যন্ত আপনার অনেক স্ট্যাটাস দেখেছি, যেগুলোর কোনো মাথামুণ্ডু নেই, তারপরও সেগুলো ইগনোর করেছি, কিন্তু আজ আর ইগনোর করতে পারলাম না, বিষয়টার গুরুত্বের কারণে। কোন বিষয়ে কথা বলছি, সেটা নিশ্চয় ফটোপোস্ট দেখে বুঝতে পারছেন ?

গীতার ৭/১৯ নং শ্লোকের সমালোচনা করতে গিয়ে আপনি সিদ্ধান্তে এসেছেন যে- পিতা ও পুত্রের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই এবং এ প্রসঙ্গে শেষে প্রশ্ন করেছেন যে- তবে কি কৃষ্ণই দৈবকীর স্বামী ?

শ্রীকৃষ্ণের নাম বাসুদেব। কোনো পিতা মাতা তাদের সন্তানের যে নাম রাখে, সেটা সাধারণ মানুষের কাছে পিতা মাতার ইচ্ছা বলে মনে হলেও এর পেছনে কাজ করে ঈশ্বরের গোপন উদ্দেশ্য। কারণ, একটি নাম একটি ব্যক্তির জীবনে তার কাজ কর্ম ও মন মানসিকতায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তাই ব্যক্তির যে নাম- তার পেছনে ঈশ্বরের গোপন উদ্দেশ্যে এবং সেই নামের সার্থকতা লুকিয়ে থাকে। অনেক সময় পিতা মাতার নামের সাদৃশ্যে রাখা হয় সন্তানের নাম, আবার বড় ভাই বোনদের নামের সাথে মিল রেখেও ছোট ভাই বোনের নাম রাখা হয়। কিন্তু আমার নাম উত্তম, যে নামের সাথে আমার পিতা মাতা বা অন্য ভাইবোনদের নামের কোনো সাদৃশ্য নেই। আমার এই নামের পেছনে ঈশ্বরের হয়তো এই উদ্দেশ্য ছিলো যে- আমাকে দিয়ে তিনি জগতের উত্তম কাজগুলো করাবেন, বাস্তবে আমি করছিও তাই এবং আমার নামের প্রভাবের কারণেই কোনো দিন আমি এমন কাজ করি নি বা করতে পারি নি, যার জন্য লোকে আমার বদনাম করতে পারে। তাই যেকোনো ব্যক্তির নাম একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, নামের এই গুরুত্ব জ্যোতিষ শাস্ত্র দ্বারাও প্রমাণিত। তাহলে শ্রীকৃষ্ণের নাম যে বাসুদেব, সেটার কি কোনো অর্থ নেই ? তিনি পৃথিবীতে বসুদেবের পুত্র বলেই কি বাসুদেব। বাসুদেব নামের কি অন্য কোনো গভীর তাৎপর্য নেই ?

বাসুদেব এর দুটি অংশ, বাসু আর দেব। দেব শব্দে বোঝায় দেবতা, আর বাসু শব্দটি এসেছে বাস করা থেকে। তার মানে যে দেবতা বাস করেন, তিনিই বাসুদেব; তিনি কোথায় বাস করেন, এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়- সবার হৃদয়ে, যেহেতু তিনি অন্তর্যামী। তার মানে সবার হৃদয়ে যিনি বাস করেন তিনিই বাসুদেব। আর গীতা দ্বারা প্রমাণিত যে শ্রীকৃষ্ণই সবার হৃদয়ে বাস করেন। তাই শ্রীকৃষ্ণ হলেন বাসুদেব। শ্রীকৃষ্ণের নাম বাসুদেব, তিনি শুধু বসুদেবের পুত্র বলে নয়। তিনি সবার হৃদয়ে বাস করেন বলেই তিনি বাসুদেব।

রমেশ দেবনাথকে বলছি- উপরের আলোচনা দ্বারা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে, শ্রীকৃষ্ণের পিতার নাম বাসুদেব নয়, বসুদেব। তাই গীতার ৭/১৯ নং শ্লোক দ্বারা একই সাথে পিতা ও পুত্রকে বোঝানো হয় নি, বাসুদেব দ্বারা শ্রীকৃষ্ণকেই বোঝানো হয়েছে। এই প্রসঙ্গে আপনি আরো বলেছেন- "অর্থকারী বাসুদেব শব্দটাকে অভেদ করে দেখিয়েছে", আমি তো বুঝতিই পারছি না এখানে কোন অর্থকারী বাসুদেব শব্দকে অভেদ করে দেখিয়েছে ? আপনার সমস্যাই হলো এটা- যা বলেন, তা ক্লিয়ার করে বলতে পারেন না। আর যখন কোনো বক্তব্য ক্লিয়ার হয় না, সেটা নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। আপনি নিজেই বাসুদেবের পিতার নাম যে বসুদেব, সেটা জানেন না; আবার অর্থকারী উপর দোষ চাপাচ্ছেন এবং নিজের সেই ভুল উপলব্ধি দিয়ে প্রশ্ন করছেন- তবে কি কৃষ্ণই দৈবকীর স্বামী ? বসুদেবের স্ত্রীর নাম যে দৈবকী নয়, দেবকী; সেটাও তো আপনি ঠিক মতো জানেন না। এমন অল্পজ্ঞান নিয়ে আপনি কেনো আসেন ফেসবুকে ধর্ম প্রচার করতে ? আপনার প্রচারে যে সাধারণ হিন্দুরা বিভ্রান্ত হতে পারে, সেটা কি আপনি জানেন ?

গীতার এই শ্লোক মতে- বাসুদেব অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণই সব। এই সূত্রে শ্রীকৃষ্ণই বসুদেব, আবার শ্রীকৃষ্ণই দেবকী, শ্রীকৃষ্ণই আমি, শ্রীকৃষ্ণই আপনি; অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণই সবকিছু বা সবাই। আপনি যদি এই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্নটি করে থাকেন, তাহলেও তো দেবকীর স্বামী শ্রীকৃষ্ণ হয় না, আবার বসুদেব আর বাসুদেব্ও এক হয় না। তাহলে আপনি কোন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্নটি করেছেন ?

আমি নিশ্চিত জানি, আমার এই প্রবন্ধের জবাব আপনি এমন মন্তব্য করবেন, যার কোনো অর্থই নেই। কিন্তু আপনার সব ছাগলামি মন্তব্যের জবাব আমি দেবো না, দেবো শুধু সেটার, যার দ্বারা হিন্দু সমাজে বিভ্রান্ত সৃষ্টি হতে পারে, যেমন আজকের বিষয়টি।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ

No comments:

Post a Comment