অযোধ্যার রাম মন্দিরের রক্তাক্ত ইতিহাস:
রাম মন্দির নির্মিত হয় একাদশ শতাব্দীতে অর্থাৎ ১ হাজার থেকে ১১শ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে। এটা আমার মত নয়, প্রত্নতত্ত্ববিদদের মত।
১৫২৬ সালে প্রথম পানিপথের যুদ্ধে ইবরাহিম লোদীকে পরাজিত করে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর, দিল্লি দখল করে। এরপর মুসলমান শাসকদের যে চিরাচরিত প্রথা, ক্ষমতা দখল করেই ইসলামের ঝাণ্ডা উড়ানো এবং অমুসলিমদের উপাসনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে মসজিদ বানানো বা তাকে মসজিদে রূপান্তরিত করা, বাবর সেদিকে নজর দেয়। এজন্য বাবরের নির্দেশে তার সেনাপতি মীর বাকি খাঁ, ১৫২৭/২৮ সালে অযোধ্যা আক্রমন ক'রে প্রথমে কিছু হিন্দুকে হত্যা করে এবং বাকিদের বন্দী করে। এরপর ভারতের প্রধান রাম মন্দির, যা রামের জন্মভূমি অযোধ্যাতেই অবস্থিত, সেটার উপরের অংশ ভেঙ্গে ফেলে এবং মন্দিরের মূল ভিত্তির উপরেই মসজিদ তৈরি করে, যেটা বাবরি মসজিদ নামে পরিচিত। এই মসজিদ তৈরি করার সময়, যেসব হিন্দুদেরকে বন্দী করে রাখা হয়েছিলো, তাদের গলা কেটে প্রথমে একটি পাত্রে সেই রক্ত সংগ্রহ করা হয় এবং তারপর জলের পরিরর্তে চুন-সুড়কির সাথে সেই রক্ত মিশিয়ে মন্দিরের মূল ভিতের উপরই ইটের পর ইট গেঁথে মসজিদ নির্মান করা হয়। তাই ইসলামি প্রথাসম্মত মসজিদ এটা নয়, ইসলামের বিজয় অভিযানে হিন্দুদের মনোবল ভাঙতে যত্রতত্র অসংখ্য মন্দির ভেঙ্গে যেমন বিজয় স্মারক নির্মিত হয়েছিলো, বাবরি মসজিদও তেমনি বাবরের একটা বিজয় স্মারক। একইভাবে বাবর সম্ভল ও চান্দেরীর মন্দির ভেঙ্গে তাকে মসজিদে রূপান্তরিত করে এবং গোয়ালিয়রের নিকটবর্তী জৈন মন্দির ও বিগ্রহ ধ্বংস করে।
বাবর যে রাম মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ বানিয়েছে, এর ঐতিহাসিক প্রমান হলো, বাবরের আমলেই হিন্দুরা ২১ বার লড়াই করেছিলো মন্দির উদ্ধারের জন্য। বাবর যদি মন্দির না ভেঙ্গে পৃথক একটি জায়গায় মসজিদ নির্মান করতো, তাহলে কি হিন্দুরা সম্রাট নির্মিত মসজিদকে ভেঙ্গে দিয়ে সেখানে মন্দির স্থাপন করার জন্য ২১ বার লড়াই করার মতো দুঃসাহস দেখাতো ? আর এরকম দুঃসাহস দেখালে বাবর কি হিন্দুদের অস্তিত্ব তার সাম্রাজ্যে রাখতো ? এরপর হুমায়ূনের রাজত্বকালে ১০ বার এবং আকবরের রাজত্বকালে ২০ বার হিন্দুরা রামজন্মভূমিতে মন্দির উদ্ধারের জন্য লড়াই করে। শেষে আকবর একটি আপোষ নিষ্পত্তি করে মসজিদের পাশেই রাম মন্দির নির্মানের অনুমতি দেয় এবং ছোট একটি মন্দির নির্মিত হয়। এসব উল্লেখ আছে, আকবরের শাসন কালের ইতিহাস "দেওয়ান-ই-আকবরি" তে। ওখানে মন্দির যদি না ই থাকতো তাহলে, হিন্দুরা এতবার লড়াই কেনো করলো, কেনো এইসব লড়াই এর ইতিহাস মুঘল ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হলো আর কেনোই বা আকবর একটি আপোষ মীমাংসা করে মন্দির নির্মানে অনুমতি দিলো ?
যা হোক, আকবর মন্দির নির্মানে অনুমতি দেওয়ায় এবং মসজিদের পাশে একটি মন্দির নির্মিত হওয়ায় জাহাঙ্গীর এবং শাজাহানের আমলে এ নিয়ে কোনো লড়াই সংগ্রাম হয় নি। কিন্তু ঔরঙ্গজেবের সেটা সহ্য হলো না। সে একটি বাহিনী পাঠায় ঐ মন্দির ধ্বংস করার জন্য। ১০ হাজার লোক নিয়ে বৈষ্ণব দাস মহারাজ নামে এক সাধু, ঔরঙ্গজেবের এই বাহিনীকে প্রতিরোধ করে, ফলে সেবার মন্দির রক্ষা পায়। এরপর আরো কয়েক বার ঔরঙ্গজেব মন্দির ধ্বংসের জন্য তার বাহিনী পাঠায়, কিন্তু প্রতিবারই হিন্দু এবং শিখগুরু গোবিন্দ সিংহের নেতৃত্বে শিখরা মিলে মন্দিরকে রক্ষা করে বা দখলকৃত মন্দিরকে আবার উদ্ধার করে। কিন্তু ঔরঙ্গজেব দমবার পাত্র ছিলো না। মুঘল সৈন্যরা এক রমজান মাসের সপ্তম দিনে হঠাৎ আক্রমন করে আকবরের সময়ে মসজিদের পাশে নির্মিত হওয়া ঐ রাম মন্দিরকে ভেঙ্গে ফেলে এবং হিন্দুরা বাধা দিতে এলে প্রায় ১০ হাজার হিন্দুকে হত্যা করে। মুঘলদের আরেক ইতিহাসের বই আলমগীর নামায় এই ঘটনার উল্লেখ আছে।
এরপর ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় হনুমান গড়ির মোহন্ত উদ্ভব দাস, অস্ত্র হাতে নিয়ে রামজন্মভূমিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। সেই সময় অযোধ্যার নবাব ফরমান আলীর মুসলিম সৈন্যদের সাথে হিন্দুদের যুদ্ধ হয়। শেষে নবাব একটি ফরমান জারি ক'রে একটি প্রাচীর ঘেরা জায়গায় মন্দির নির্মান ও পূজা উপাসনার অনুমতি দিয়ে যুদ্ধের অবসান ঘটায় এবং হিন্দু ও মুসলমান সৈন্যরা মিলিতভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিপাহী বিদ্রোহে অংশ নেয়। মূলত নবাব এই আপোষ করতে বাধ্য হয়েছিলো সিপাহী বিদ্রোহে হিন্দু ও মুসলিম সৈন্যের একত্রিত করার স্বার্থে| কিন্তু সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে এইসব কিছুই জলে যায়। ইংরেজরা ঐ রাম জন্মভূমিরই একটি তেঁতুল গাছে অনেককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারে এবং নবাবের ফরমান ইংরেজরা বাতিল করে দেয়; ফলে আবারও হিন্দুরা ঐ স্থানে পূজা-প্রার্থনার অধিকার হারায়। শুধু তাই নয়, ইংরেজরা ঐ তেঁতুল গাছটিকেও সমূলে উপড়ে ফেলে।
এরপর ১৯১২ সালে হিন্দুরা নির্মোহী আখড়ার সন্ন্যাসীদের নেতৃত্বে বহু প্রাণের বিনিময়ে জন্মভূমির একাংশ উদ্ধার করে এবং বাকি অংশ উদ্ধারের জন্য লড়াই হয় ১৯৩৪ সালে। এরপরই ইংরেজরা অযোধ্যার ঐ স্থানে হিন্দু মুসলমান সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়। সেই থেকেই বাবরি মসজিদে কেউ নামাজ পড়ে নি। ফৈজাবাদ কালেক্টরির রেকর্ডে লিপিবদ্ধ আছে এসব ইতিহাস। ভাঙার সময় বাবরি মসজিদ ছিলো যে একটি পরিত্যক্ত মসজিদ, তা জঙ্গল ও গাছপালায় ভরা এবং ক্ষয়ে যাওয়া মসজিদের দেয়ালের ছবি দেখে তা সহজেই বোঝা যায়।
১৫২৭ সাল থেকে হিন্দুরা রাম মন্দির উদ্ধারের জন্য লড়াই করেছে বা চেষ্টা করেছে, ছোট বড় মিলিয়ে মোটামুটি ৭৬ বার। ৭৭ তম বারের প্রচেষ্টায় ১৯৯২ সালে, বিজেপির নেতৃত্বে হিন্দুরা- দখল, রূপান্তর ও অসহিষ্ণুতার প্রতীক বাবরি মসজিদকে ধুলায় মিশিয়ে দেয়। কিন্তু এই শেষ বারের প্রচেষ্টাও ছিলো প্রায় সোয়া ২ বছরের। বিজেপির সমর্থনে হিন্দুরা প্রথম ২০ সেপ্টম্বর, ১৯৯০ সালে জনসংকল্প দিবস পালন করে। এরপর বহু জেল জরিমানা হুমকি ধামকিকে অগ্রাহ্য করে কিছু প্রাণের বিনিময়ে ৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২ সালে ভেঙে ফেলে বাবরি মসজিদ। তাই এই ৬ ডিসেম্বর হিন্দুদের কাছে "শৌর্য দিবস" হিসেবে বিবেচিত ও পরিচিত ।
কিন্তু মন্দির এখনও নির্মান হয় নি। তাই লড়াই এখনও শেষ হয় নি। এ লড়াই ততদিন চলবে, যতদিন না রামের জন্মভূমিতে রাম মন্দিরের চূড়া কমপক্ষে তিন মাইল দূর থেকে দেখা না যায় এবং মুসলিম দুঃশাসনের আমলে, ভারতে, মন্দিরের উপর নির্মিত সমস্ত মসজিদ, ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া না যায়।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রী রাম। জয় শ্রীকৃষ্ণ।
No comments:
Post a Comment