Tuesday, 4 August 2020

ইসলামে গরু কুরবানী দেওয়ার কোনো বিধান নেই :


ইসলামে গরু কুরবানী দেওয়ার কোনো বিধান নেই :

গরু কুরবানী দেওয়া মুসলমানদের জন্য ফরজও নয়,  সুন্নতও নয়। ‘ফরজ’ তাকেই বলে যা মুসলমানদের জন্য অবশ্য কর্তব্য, অর্থাৎ নিজেকে মুসলমান ব’লে ভাবলে যা মুসলমানদেরকে অবশ্যই করতে হবে; আর সুন্নত সেটাই, যা মুসলমানদের জন্য অবশ্য কর্তব্য নয়, কিন্তু নবী করে গিয়েছে ব’লে, নবীকে ভালোবাসার খাতিরে, নবীর মতো জীবন যাপন করে তাকে খুশি করে তার মতো হওয়ার চেষ্টা করা আর কি। এই দুই দিক থেকেই গরু কুরবানী দেওয়া বা গরুর মাংস খাওযা যে মুসলমানদের জন্য হালাল নয়, সেটা আমি প্রমান করে দেবো এই পোস্টের শেষের দিকে; তার আগে কুরবানী সংক্রান্ত অন্যান্য বিধানগুলো সম্পর্কে কিছু আলোচনা সেরে নিই।

কুরবানী সম্পর্কে মুসলমানরা যে কথা জোর দিয়ে বলে থাকে, তা হলো-

“কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব।”
ফরজ ও সুন্নতের সংজ্ঞা উপরে দিয়েছি, এখানে ‘ওয়াজিব’ সম্পর্কে বলে নিই, তাহলে পুরো ব্যাপারটা বুঝতে সুবিধা হবে।

উপরেই নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন, ফরজ হলো কোরানের সেই সব কঠোর নির্দেশ যা মুসলমানদেরকে অবশ্যই মানতেই হবে এবং যা না মানলে মুসলমানরা কাফের হয়ে যাবে। কিন্তু ওয়াজিব এত কঠোর বিষয় নয়, এটা যার পক্ষে মানা সম্ভব সে মানবে, আর যার পক্ষে মানা সম্ভব নয় সে মানবে না; এতে তার মুসলমানিত্ব খারিজ হয়ে সে কাফের হয়ে যাবে না, এই বিধানের আওতাভূক্ত হলো কুরবানী।

এবার দেখুন কুরবানী সংক্রান্ত কিছু হাদিস এবং হাদিসগুলো পড়ার সময় খুব ভালো করে খেয়াল করবেন এগুলোর রেফারেন্স, কেনো বললাম এই কথা, সেটা বুঝতে পারবেন হাদিসগুলোর বর্ণনা শেষ হলেই-

১. ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’- (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫)

২. “প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।”-
(আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫) 

৩. “মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। যিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা উত্তম।” - (মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫)

৪. “উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়।” – (কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫)

৫. “যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়।” – (কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫)

৬. “গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে।” – (কাযীখান ৩/৩৫০)

এটা নিয়ে কিছু বলা দরকার। যখনই কোনো মুসলমানকে এই কথা বলা হয় যে, গরু কুরবানী দিয়ে আসলে তারা দুধের উৎপাদনের ক্ষতি করছে, তখনই তাদের মুখস্থ করা উত্তর হলো- আমরা সাধারণত বলদ বা ষাঁড় গরু কুরবানী দিই, আর গাই গরু কুরবানী দিলেও সেটা দিই বয়স্ক বা অনুৎপাদনশীল গরু, ফলে কুরবানীর বিধান দুধের উৎপাদনের কোনো ক্ষতি করে না।

ইসলামের মিথ্যাগুলোকে চাপা দেওয়ার জন্য মুসলমানরা সব সময় এমনভাবে রেডি হয়ে থাকে যে, সেগুলো শোনার পর অপ্রস্তুত অমুসলিমদের পক্ষে আর কিছু বলার থাকে না, এমনকি এক সময় আমি নিজেও এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারি নি। কিন্তু এই ক্ষতিকর হাদিসে স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে,

“গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয।”

তার মানে দুধের গরুকেও তারা হত্যাযোগ্য বলে মনে করে এবং হত্যা করে; শুধু তাই নয় এই মুসলমানরা কী ধরণের নরপশু এবং রাক্ষস, তার প্রমাণ পাওয়া যায় এই হাদিসের বাকি অংশ থেকে; কারণ, তারা বিধান দিয়ে রেখেছে,

“জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে।”

এ থেকে স্পষ্ট যে দুধের উৎপাদন এবং সে সম্পর্কে ভাবার চেয়ে মুসলমানদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো পশু কুরবানী দিয়ে রক্তপিপাসু আল্লাকে খুশি রাখা এবং মুসলমানরা করেও তাই।

বর্তমানে বাংলাদেশে গরুর দুধের ভয়াবহ সংকট এবং এজন্য বাজারে শুধু ভেজাল নয়, নকল দুধেরও অভাব নেই এবং এটা নিয়ে মুসলমানদের আক্ষেপেরও শেষ নেই, তাদের অভিযোগ হলো- বাজারে দুধ পাওয়া যায় না বা ভালো দুধ পাওয়া যায় না।

আমি বলি কি, নির্বিচারে গো হত্যার অপরাধে মুসলমানদের তো কখনো দুধ পাওয়া বা খাওয়া ই উচিত নয়, তারপরও যখন তারা গরুর দুধ খেতে চাইবে, তখন তাদেরকে গরুর দুধের পরিবর্তে গরুর মুত খেতে দেওয়া উচিত।

কোনো বুদ্ধিমান মানুষ বা জাতি, ফলের জন্য গাছকে বাঁচিয়ে রাখে, কিন্তু এই নির্বোধ মুসলমানরা গাছ তো কাটেই তার থেকে আবার ফলও চায়!

কুরবানী সম্পর্কে মুসলমানদের আরো একটি বহুল মিথ্যাচার হলো- নবী ইব্রাহিম যেমন আল্লার নির্দেশে তার আদরের সন্তান ইসমাইলকে, মায়া-মমতা ত্যাগ করে কুরবানী দিতে উদ্যত হয়েছিলো; তেমনি আমাদেরকেও- বাড়িতে পশু লালন পালন করে তার উপর মায়া-মমতা সৃষ্টি হলে, সেই মায়া-মমতাকে ত্যাগ করে পশু কুরবানী করার নিয়ম।

কিন্তু নিচের এই হাদিস কী বলছে, দেখুন-

৭. “কুরবানীর পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন হালচাষ করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি। সুতরাং কুরবানীর পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তবে পশমের মূল্য, হালচাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিবে।”- (মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, নায়লুল আওতার ৩/১৭২, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০০)

এখানে স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে, কুরবানীর পশু কেনার পর তার থেকে উপকার নেওয়া জায়েয নয়; যাকে হত্যা করা হবে বা যাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার থেকে উপকার কে চায় ? তবু কুরবানীর জন্য পশু কেনা হলে, সেই পশুর ক্ষেত্রে এই বিধান কিছুটা বাস্তব সম্মত; কারণ, যাকে হত্যা করা হবে তাকে আর কোনো কাজে খাটাতে কেউই চায় না।

কিন্তু এই হাদিসের অন্য অংশ,

“(পশু)নির্দিষ্ট করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন হালচাষ করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি।” এটা কতটা বাস্তব সম্মত, সেটা এবার দেখুন-
কোনো মুসলিম পরিবারে, তাদের কোনো গৃহপালিত পশুকে তারা যখন কুরবানীর জন্য সিলেক্ট করে, তখন সেটা তারা করে কমপক্ষে তিন মাস আগে এবং বেশি পক্ষে নয় মাস আগে। এই তিন, ছয় বা নয় মাস, সময় যেটাই হোক, কুরবানীর জন্য পশু সিলেক্ট করার পর সেই পশুকে কি কোনো মুসলমান বসে বসে খাওয়ায় ? খাওয়ায় না। বরং এমনও দেখা গেছে, কুরবানীর দুই তিন আগ পর্যন্ত তারা পশুকে দিয়ে ভার বওয়ায়, গরুর থেকে দুধ দোহন করে, তারপর কুরবানীর দিন তাকে জবাই করে!

আমরা সাধারণত জানি যে, কুরবানীর মাংস তিনভাগে ভাগ করার নিয়ম, কিন্তু নিচের এই হাদিস কী বলছে, দেখুন-

৮. “কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই।” –(বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০) 

এখানে বলা হলো, “অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই।”

এই সব হাদিস যে নিজেদের সুবিধার জন্য বানানো, সেটা আর একটু পরই আপনারা হাতে নাতে প্রমান পাবেন।

৯. “কুরবানীর গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয।”- (ইলাউস সুনান ৭/২৮৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০)

জায়েয তো হবেই, কারণ, যারা যে মাংস খায় না, তাদেরকে সেই মাংস খাইয়ে বা খাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়ে তাদের ধর্মের উপর আঘাত করাই তো মুসলমানদের মূখ্য উদ্দেশ্য।

১০. “খাসিকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী করা উত্তম।” – (ফাতহুল কাদীর ৮/৪৯৮, মাজমাউল আনহুর ৪/২২৪, ইলাউস সুনান ১৭/৪৫৩)

কিন্তু কুরবানীর প্রথম শর্ত নাকি পশুকে নিখুঁত হতে হবে। একটা পশুকে ধরে তার যৌনাঙ্গের বিকৃতি ঘটিয়ে তাকে খাসি বা বলদ করা হচ্ছে, তারপরও সেই পশু নিখুঁত থাকে কিভাবে ? অবশ্য খতনার নামে নিজেদের লিঙ্গের আগা কেটে প্রত্যেকটা মুসলমানই তো এক একটা বিকৃত প্রাণী, তারা যৌন ক্ষমতাহীন বলদ বা খাসিকে বিকৃত বলে ভেবে নিজেদেরকে অপমান করবে কেনো ?

উপরে যে ১০টি তথাকথিত হাদিসের রেফারেন্স দিলাম, সেগুলো দেওয়া হয়েছে-

১. মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯;

২. আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫),

৩. আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫)

৪. মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫

৫. কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

৬. কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫ (দুই হাদিসের একই রেফারেন্স)

৭. কাযীখান ৩/৩৫০

৮. মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, নায়লুল আওতার ৩/১৭২, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০০

৯. বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০

১০. ইলাউস সুনান ৭/২৮৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০

হাদিস হলো মুহম্মদের জীবনের কথা ও কাজের বর্ণনা এবং এগুলো লোকের মুখ থেকে শুনে শুনে লিখা হয় মুহম্মদের মৃত্যুর পরবর্তী ২০০ থেকে ৩০০ বছরের মধ্যে। হাদিস অনেকেই সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ করেছে, তাদের মধ্যে থেকে জনের হাদিসকে সহীহ বা সত্য বলে মুসলমান পণ্ডিতরা স্বীকৃতি দিয়েছে, এগুলোকে বলে সহীহ সিত্তা বা ছয়টি সহীহ হাদিস, এই সহীহ হাদিস সংকলকদের নাম হলো-

১। সহীহ বুখারী

২। সহীহ মুসলিম

৩। জামে তিরমিযী

৪। সুনানে আবু দাউদ

৫। সুনানে নাসায়ী

৬। সুনানে ইবনে মাজাহ

ভালো করে খেয়াল করে দেখুন তো, উপরে কুরবানী সংক্রান্ত যে হাদিসগুলোর কথা উল্লেখ করলাম, সেগুলো এই ছয় জনের সংকলন করা কারো হাদিস কি না ?
একটিও নয়।

তার মানে হলো কুরবানীর নামে মুসলমানরা যে হাদিসগুলোর কথা উল্লেখ করে থাকে, সেগুলো একটিও সত্য নয়, সবই মিথ্যা বা জাল।

এসব মিথ্যাচারের বিপরীতে, এবার দেখা যাক কুরবানী সম্পর্কে কোরান এবং মুহম্মদের জীবনী কী বলে ?

কুরবানী সম্পর্কে সূরা কাওসারের ২ নং আয়াতে বলা আছে,

‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানী কর।’ ( কোরান, ১০৮/২)

এটা পড়ে মনে হতে পারে, ঠিকই তো আছে ? কোরানে তো পশু কুরবানী করার কথা বলা আছে, গরুও তো একটি পশু, তাহলে গরু কুরবানী করতে সমস্যা কোথায় ?

কিন্তু এটা সুবিধাবাদী মুসলমানদের করা কোরানের বাংলা অনুবাদ, এসব অনুবাদে মুসলমানরা তাদের সুবিধামতো, মানে যেভাবে অনুবাদ করলে ইসলামের মান বজায় থাকে এবং মানুষকে ধোকা দিয়ে ইসলামকে টিকিয়ে রাখায় যায়, সেভাবে আরবী শব্দের অর্থ পাল্টে দিয়ে তাকে বাংলায় অনুবাদ করেছে, এর বহু প্রমান আছে, আজকে একটা প্রমান দেখাবো; মুসলমানদের এই জুয়াচুরির জন্যই মুসলমানদের দ্বারা অনূদিত কোনো কোরানের অনুবাদ হান্ড্রেড পার্সেন্ট সত্য নয়।

কোরানে যা ই লিখা থাক, আর মুহম্মদ তার জীবনে যত অপকর্মই করে থাকুক না কেনো, মুসলমানরা বিশ্বাস করে, সে সবকে ছাপিয়ে যদি মুহম্মদের প্রশংসা করা যায়, তাহলে পরকালে আল্লার পতিতালয় বেহেশতে গিয়ে ৭২ হুরকে দোচার (প্রথম দুই বর্ণের স্থানান্তর হবে) সুযোগ পাওয়া যাবে; তাই তারা হাদিসের বই ছাপানোর সময় অনেক হাদিসকে ডিলিট করে দিয়েছে বা দেয় এবং আলোচনার সময় সেই সব হাদিসের উল্লেখ করে না; কিন্তু কোরানের আয়াত সংখ্যা যেহেতু নির্দিষ্ট, সেহেতু কোরানের আয়াতকে তারা ডিলিট করতে না পারলেও কোরানের আরবী শব্দের অর্থ তারা খুব সহজেই বদলে দিয়ে অমুসলিমদেরকে ধোকা এবং ইসলামকে পজিটিভ করে তোলার চেষ্টা করে, আর এসব তারা করে একমাত্র ৭২ হুরের আশায়। কিন্তু একজন অমুসলিমের তো এসব ধান্ধা নেই, তার না আছে মুহম্মদ ও আল্লাকে খুশি করার চেষ্টা, না আছে পরকালে গিয়ে ৭২ হুরকে পাওয়ার আশা, তাই তার পক্ষে নিরপেক্ষ অনুবাদ করা সম্ভব এবং সেই কাজটিই করেছিলেন গিরিশচন্দ্র সেন, মুসলমানরা যাকে আদর করে বলে “ভাই গিরিশ সেন”

ধান্ধাবাজ মুসলমানরা যে কোরানের শব্দের অর্থ বদলে দিয়ে কোরান অনুবাদ করে বা ছাপায়, এটা সচেতন ও বিদগ্ধ মুসলিম মহল বেশ ভালোভাবেই অবগত, কিন্তু কোরানের প্রকৃত অনুবাদই বা কোথায়, যা থেকে প্রকৃত সত্যকে জানা যাবে ? এই সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের “দিব্য প্রকাশ” নামে এক প্রকাশনী ২০০৪ সালে গিরিশের করা কোরানের অনুবাদ হুবহু প্রিন্ট করে; টীকা-টিপ্পনি, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং গুনে ও মানে যে কোরানের ধারে কাছে যাওয়ার ক্ষমতা কোনো মুসলমান অনুবাদিত কোরানের নেই, সেই কোরানে সূরা কাওসারের ২ নং আয়াতে কী বলা আছে দেখুন,

“অনন্তর তুমি আপন প্রতিপালকের জন্য নামাজ পড় এবং উষ্ট্র বলিদান কর।” (কোরান, ১০৮/২)

অথচ এই লাইনটিকে মুসলমানরা অনুবাদ করেছে,

‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানী কর।’ ( কোরান, ১০৮/২)

এই আয়াতে কোরানে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে যে, উটকে কুরবানী করতে; কিন্তু বাঙ্গালি মুসলমানরা, গায়ের জোরে গরুকে জবাই করে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত দেওয়ার জন্য এই আয়াতে উটের জায়গায় পশু শব্দ বসিয়ে দিয়ে পশুর সমর্থক শব্দ হিসেবে গরু কুরবানীকে জায়েজ করে নিয়েছে।

উট ই যে কুরবানী করার বিধান, সেই নিদর্শন আছে মুহম্মদের জীবনীতেও; কারণ, মুহম্মদ শেষ বার হজ করতে যাওয়ার সময় ৭০টা উট নিয়ে গিয়েছিলো এবং মুহম্মদ নিজের হাতে ৬৩টা উট জবাই করে ক্লান্ত হয়ে পড়লে পরে আলী বাকি উটগুলোকে জবাই করে। এছাড়াও ভৌগোলিক কারণে আরবে কোনো গরু নেই, তাই কুরবানীর জন্য গরুকে জবাই করা কোনো ভাবেই ইসলাম সম্মত নয়।

কোরান হাদিসের এই সাক্ষ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, কুরবানী যদি করতে হয়, করতে হবে উটকে; কারণ, এটাই কোরানের নির্দেশ এবং নবীর সুন্নত। আর এটাও সারা পৃথিবীর যত্রতত্র করা যাবে না, এ ব্যাপারে কোরানের নির্দেশ আছে এবং সেটা হলো-

“এই সমস্ত আনআমে তোমাদের জন্য নানাবিধ উপকার রয়েছে এক নির্দিষ্ট কালের জন্য; অতঃপর উহাদের কুরবানীর স্থান প্রাচীন গৃহের (কাবা) নিকট।” (লাক্বুম - আতিক। [ ২২: ৩৩] )

এ থেকে স্পষ্ট যে কুরবানী করতে হবে কাবা ঘরের নিকট এবং তা শুধু মাত্র হজ করতে গিয়ে; কারণ, এটাই কোরানের নির্দেশ এবং নবীর সুন্নত।

আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে এখনও গরু কুরবানী দেওয়া হয় না; কারণ, ভৌগোলিক কারণে সেখানে গরুকে পালন করা হয় না, তাই সেসব দেশে গরু পাওয়া যায় না; এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে যারা কাজ করে, তাদের কাছে এমনও শুনেছি যে, গরুর মাংস খাওয়া তো দূরের কথা, গরুর মাংসের কথা শুনলেই তারা নাকি নাক সিটকায়।

আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে প্রধানত যে পশু কুরবানী করা হয়, সেটা হলো উট; আর দ্বিতীয়ত ভেড়া জাতীয় দুম্বা। উপরেই বলেছি, উট কুরবানীর কথা বলা আছে কোরানে, এছাড়াও মুহম্মদ নিজে কখনো উট ছাড়া কিছু কুরবানী করে নি। কিন্তু উটের পাশাপাশি দুম্বা কুরবানীর কারণ হলো, ইব্রাহিম-ইসমাইলের তথাকথিত কুরবানীর ঘটনায় ইসমাইলের পরিবর্তে নাকি কুরবানী হয়েছিলো দুম্বা; সেই জন্য উট ছাড়াও দুম্বা কুরবানী দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু কিছুতেই অন্য কোনো পশু নয়।

এছাড়াও আমরা জানি, ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ হলো- কালেমা, নামাজ, রোযা, হজ, যাকাত। এগুলোর মধ্যে কালেমা কোনো অনুষ্ঠান নয়, বিশ্বাস, যা আচরণে প্রদর্শিত না হলে দেখা যায় না; কিন্তু অন্য চারটি স্তম্ভ হলো অনুষ্ঠান, এগুলো আচরণে না এলে পালন ই হয় না। এই চারটি স্তম্ভের মধ্যেও কুরবানী নেই। তার মানে এটি বাধ্যতামূলক নয়, এজন্যই একে বলে ওয়াজিব। তাহলে মুসলমানরা কোরান হাদিসের বিরুদ্ধে গিয়ে পুরো বাংলা ও ভারতে বছরের একটি সময় গরু হত্যার উৎসবে মাতে কেনো বা সারা বছর ধরে গরু খায় কেনো ?

কারণ, একটাই। গরু হিন্দুদের কাছে দেবতা এবং পূজ্য, সেই গরুকে যদি কোনোভাবে হত্যা করা যায় বা তার সম্মানের অবমাননা করা হয়, তাহলে তো হিন্দুরা কষ্ট পাবে, মুসলমানদের উদ্দেশ্য তো আসলে সেটাই, যেকোনোভাবে হিন্দুদেরকে মানসিক ও শারীরিকভাবে আঘাত করে তাদেরকে পর্যুদস্ত করা। এজন্যই বাংলা ও ভারতে- মুসলমান নামক নরপশুরা, পাইকারী হারে গরুকে হত্যা করে নিজেদের জিহাদী উদ্দেশ্যকে পালন করে চলেছে; যদি এর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে এটা চলতেই থাকবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এটাকে কি আমরা চলতেই দেবো, না গরুকে রক্ষা করে আমরা আমাদের দেবতার সম্মান ও সমৃদ্ধি বাড়ানোর পথকে বাঁচিয়ে রাখবো ?

কোরান হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে মুসলমানদের সাইকোলজিতে আঘাত করে কিভাবে গো হত্যা বন্ধ করতে তাদেরকে প্ররোচিত করা যায়, সেই তথ্যগুলো এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে দিয়ে দিলাম, এই সাইকোলোজিক মেডিসিন পৃথিবীর সব এলাকার সব মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য, কিন্তু যে এলাকায় হিন্দুরা সংখ্যাগুরু এবং মুসলমানরা সংখ্যালঘু, সেসব এলাকার জন্য আইন ও বল প্রয়োগ করে গো হত্যা বন্ধই শ্রেষ্ঠ পথ, যেটা ভারতের অনেক এলাকায় শুরু হয়ে গিয়েছে এবং আমি আশা ও প্রার্থনা করছি, তা যেন চলতে থাকে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোরানের প্রকৃত তথ্য এবং নবীর সুন্নতকে ফলো করে মুসলমানরা যদি গো হত্যা বন্ধ করে, তাহলে তাদের কুরবানীর কী হবে ?

প্রথম কথা হচ্ছে, কুরবানী করা মুসলমানদের জন্য ফরজ নয়, ওয়াজিব। ফরজ ও ওয়াজিব কী বিষয় তার ব্যাখ্যা উপরে দিয়েছি। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, কোরান মতেও কুরবানী করতে হবে, শুধু মাত্র হজে গিয়ে কাবার আশে পাশে। তারপরও মুসলমানরা যেহেতু রাক্ষস জাতি এবং গত ১৪০০ বছর ধরে তারা রাক্ষসের মতো বিশাল বিশাল গরু খেয়ে এসেছে, সেহেতু তারা তো রাতারাতি এসব ছাড়তে পারবে না, তাই তাদের জন্য আমার পরামর্শ হলো- কুরবানী যদি করতেই হয়, তাহলে দুম্বার সমগোত্রীয় ভেড়াকে তারা কুরবানী করতে পারে, আবার ভেড়ার সমগোত্রীয় বলে ছাগলকেও তারা কুরবানী করতে পারে, কারণ, ছাগল গরুর মতো অত উপকারী প্রাণী নয়। আর মাংস খাওয়া ই যদি মুসলমানদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, তাহলে সমাজ সংসারের সমৃদ্ধির কোনো ক্ষতি না করে তারা শুকর কুরবানী করে তার মাংস খেতে পারে; কারণ, পৃথিবীতে এই একটি প্রাণীই মানুষকে তার মাংস ছাড়া অন্য কোনো উপকার দিতে পারে না। তাই মাংস খেলে সবার জন্য শুকরের মাংসই বেস্ট।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment