Monday 10 August 2020

২০২০ সালের জন্মাষ্টমী কেনো শ্রাবণ মাসে এবং স্মার্ত ও গোস্বামী মত কী ?


২০২০ সালের জন্মাষ্টমী কেনো শ্রাবণ মাসে এবং স্মার্ত ও গোস্বামী মত কী ?

সাধারণভাবে আমরা জানি যে- শ্রীকৃষ্ণের জন্ম ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে, এজন্যই শ্রীকৃষ্ণের জন্মোৎসব অনুষ্ঠানের নাম জন্মাষ্টমী। অষ্টমী তিথি, চান্দ্র মাসের একটি সময়ের নাম, যে চান্দ্রমাসকে সাধারণভাবে গণনা করা হয় ২৯ দিনে এবং বছর হয় ৩৫৪ দিনে। অন্যদিকে সৌর বছর হয় সাধারণভাবে ৩৬৫ দিনে। ধর্মীয় পর্ব বা অনুষ্ঠানগুলো চান্দ্রমাস অনুযায়ী হয়, কিন্তু চান্দ্র বছর যেহেতু সৌর বছরের চেয়ে সাধারণভাবে ১১ দিন আগেই শেষ হয়ে যায়, তাই সৌরবছরের গণনায় চান্দ্র মাসের তিথিগুলো প্রতিবছর ১১ দিন করে সামনে এগিয়ে আসে। এজন্যই প্রতিবছর শুধু দুর্গাপূজা নয়, সব পূজা ই ১১ দিন করে সামনে এগিয়ে আসার কথা। আমাদের পূজা পার্বনের মতো মুসলমানদের ঈদসহ অন্যান্য পর্বও চান্দ্র মাস অনুযায়ী হয় বলে ১১ দিন করে এগিয়ে আসে। যেকারণে ঈদসহ অন্যান্য মুসলিম উৎসব সারা বছর ধরে ঘুরতে থাকে। আমাদের পূজা পার্বনের অবস্থাও হতো এরকমই যদি আমাদের মলমাস সিস্টেম না থাকতো।

সৌরবছর এবং চন্দ্রবছরের মধ্যে সাধারণভাবে ১১ দিনের পার্থক্যের কারণে ৩২ সৌর মাসে যতদিন হয়, ঠিক প্রায় ততদিনই হয় ৩৩ চান্দ্র মাসে, ৩২ সৌর মাসে ২/১ দিন বেশি থাকে। একারণে প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর ৩২ সৌর মাসের দিন সংখ্যার সাথে ৩৩ চান্দ্র মাসের দিনসংখ্যার ব্যালান্স করা হয়। এই ব্যালান্স করতে গিয়ে ১টি চান্দ্র মাসের দিন সংখ্যা বাদ দেওয়ার পরও যে দুই এক দিন বেশি থাকে, সেই ২/১ দিন কে বাংলা কোনো মাসের সাথে যোগ করে দেওয়া হয়, যে কারণে কোনো বছর আষাঢ় মাস হয় ৩২ দিনে বা অন্যান্য মাসও দু একদিন বেশি হয় এবং নানা নিয়ম কানুনের উপর ভিত্তি করে বাংলা কোন মাসকে সেই বছর মলমাস ঘোষণা করা হয়, যে মাসে কোনো শুভ কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। 

এখন দিন সংখ্যাকে ব্যালান্স করার জন্য কল্পনায় যে চান্দ্রমাসকে ধরে নেওয়া হয়েছিলো, হিসেব মতো তাতেও তো তিথি নক্ষত্র এবং সেই তিথিতে পূজা পার্বণ ছিলো, সেগুলো যাবে কোথায় ? সেগুলোকে রেগুলার চান্দ্রমাসের ভিত্তিতে সৌরমাসেই ফেলে দেওয়া হয়, যার কারণে সকল প্রকার পূজা পার্বন এক ধাক্কায় প্রায় এক মাস পিছিয়ে যায় এবং চান্দ্র বছরের নিয়ম অনুযায়ী পরের বছর আবার ১১ দিন করে সামনে আসতে থাকে। তবে প্রতিবছরই যে মুসলমানদের ঈদের মতো আমাদের পূজা পার্বন ১১দিন করে সামনে এগিয়ে আসবে এবং তিন বছর পর আবার এক মাস পিছিয়ে গিয়ে আবার ১১ দিন করে সামনে আসতে থাকবে এমনটা নয়, আগেই বলেছি নানা হিসেব নিকেশের উপর ভিত্তি করে এই দিনগুলো ঠিক করা হয়, যেটা বোঝা সাধারণ মানুষের পক্ষে এককথায় অসম্ভব। কারণ, এগুলো জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষের উচ্চমাত্রার হিসেবে নিকেশ এবং জ্ঞানের ফসল, তাই সাধারণ বুদ্ধিতে এগুলো বোঝার চেষ্টা করা বৃথা। সাধারণ বুদ্ধিতে শুধু এটুকু জানাই যথেষ্ট যে- মলমাস সিস্টেমের কারণে পূজা বা হিন্দু উৎসরগুলোর দিন তারিখ প্রতিবছরই পাল্টায়, যে কারণে ভাদ্রমাসের জন্মাষ্টমী, কোনো কোনো বছর শ্রাবণ মাসেও হয়, যেমন হচ্ছে এই বছর ২০২০ সালে। এই একই কারণেই আশ্বিন মাসের দুর্গার অকাল বোধন কোনো বছর কার্তিক মাসে গিয়ে হয়। তবে এখানে একটা ব্যাপার লক্ষ্যণীয় যে- প্রতিবছর বিভিন্ন পূজাপার্বণ ভিন্ন ভিন্ন তারিখে অনুষ্ঠিত হলেও, Earlier এবং Later এর সময়ের ব্যবধান কখনো এক মাসের বেশি হয় না এবং এটাই হলো মুনি ঋষিদের মলমাসের জ্ঞানের ফল।

এ বছরের জন্মাষ্টমী উদযাপিত হবে দুই দিন- প্রথম দিন অর্থাৎ ১১ তারিখ স্মার্ত মতে, দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ১২ তারিখ গোস্বামী মতে। গোস্বামী মত হলো বৈষ্ণব মত, যে বৈষ্ণবেরা সনাতন ধর্মের প্রায় সমস্ত সিস্টেমে নাক গলিয়ে সনাতন ধর্মকে বৈষ্ণব মতবাদে কনভার্ট করার চেষ্টা করছে। তাই দেখা যায় গোস্বামী মতে একাদশীর দিনও কখনো কখনো আলাদা হয়।

স্মৃতিশাস্ত্র অধ্যয়ণ করে যারা পণ্ডিত, তাদেরকে বলে স্মার্ত পণ্ডিত, তারা যে মত প্রকাশ করে তাই স্মার্ত নামে পরিচিত। এই স্মার্ত মতই হলো সনাতন ধর্মের প্রকৃত মত। অপরদিকে গোস্বামী মত হলো বৈষ্ণবদের একটি মনগড়া মত। তাই সনাতনীদের উচিত, সকল ক্ষেত্রে স্মার্ত পণ্ডিতদের বিধি নিষেধকে ফলো করা।

জন্মাষ্টমী এলেই অনেকে প্রশ্ন তুলে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম দিন তো আছে, কিন্তু উনার মৃত্যু দিন কবে ? তাদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি আজকে-

প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যের বাস্তব সম্মত বিচার বিশ্লেষণ করে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তারিখ পাওয়া যাচ্ছে খ্রিষ্টপূর্ব ৩২২৬ সালের ১৮ আগস্ট, ১৮ আগস্ট বর্তমান সৌর ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১ ভাদ্র, কিন্তু প্রাচীন কালে যেহেতু চান্দ্রবর্ষ অনুযায়ী হিসেব করা হতো, যে চান্দ্রবর্ষে তিথি অনুযায়ী দিনের হিসেব করা হতো, সেহেতু এটা ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। অন্যদিকে শ্রীকৃষ্ণের তিরোধান দিবস পাওয়া যাচ্ছে ৩১০১ খ্রিষ্টপূর্বের ১৮ ফেব্রুয়ারি, এই হিসেবে শ্রীকৃষ্ণের ধরাধামে অবস্থান কাল হলো- ১২৫ বছর ৬ মাস।

জয় হিন্দ।

জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment