প্রসঙ্গ : মাংসাশী ও তৃণভোজী প্রাণীদের মধ্যে সাদৃশ্য, বৈসাদৃশ্য
Ankan Dutta,
মানুষের নিরঙ্কুশ নিরামিষ আহারের পক্ষে আপনি অনেক বক বকাইছেন। আপনার প্রতিটি পয়েন্টের জবাব দেওয়ার আগে, একটি বিষয়ে আপনাকে প্রশ্ন করছি, আপনি মাংসাসী প্রাণীদেরকে সম্পূর্ণ আমিষভোজী হিসেবে বিবেচনা করেছেন, সেটা ঠিক আছে, কিন্তু আমিষভোজী মানুষকে আপনি সম্পূর্ণ আমিষভোজী হিসেবে বিবেচনা করলেন কেনো ? মানুষ কি সম্পূর্ণ আমিষভোজী যে তাদের দেহের সিস্টেম সম্পূর্ণ মাংসাশী প্রাণীদের মতো হবে ?
একবেলায় পূর্ণ আহার করলে জলসহ একজন মানুষ গড়ে এক কেজি খাবার খায়, এই এককেজি খাদ্যের মধ্যে প্রাণীজ আমিষের পরিমাণ কতটুকু ? দরিদ্র বা নিম্নবিত্তরা তো প্রতিদিন মাছ মাংস কিনতেই পারে না, তাই তাদের অনেক বেলা যায় নিরঙ্কুশ নিরামিষ। মধ্যবিত্তরা প্রতিদিন মোটামুটি মাছ মাংস খেলেও, এর পরিমাণ গড়ে প্রতি বেলায় ১০০ গ্রামও নয়, বড়জোর এটা ৬০/৭০ গ্রাম হতে পারে; এর মধ্যে হিন্দুদের তো আবার মাঝে মাঝেই বিভিন্ন ধর্মীয় উপলক্ষ্যে নিরামিষ খেতেই হয়, তাই তাদের প্রাণীজ আমিষ গ্রহনের গড় হার আরও কম। উচ্চবিত্তরা প্রতিদিন মাছ মাংস খেতে পারলেও বিভিন্ন রোগ ব্যাধির কারণে তারা খাসি গরুর লাল মাংস এবং ডিমকে এড়িয়ে চলে, ফলে তাদেরও প্রাণীজ আমিষ গ্রহণের হার গড়ে প্রতিবেলায় ১০০ গ্রামের বেশি নয়, আর এই ধরণের উচ্চবিত্তের সংখ্যা সমাজে খুব বেশিও নয়। ফলে দেখা যাচ্ছে- একজন আমিষভোজী মানুষও প্রতিদিন যা খাবার খায়, তার ৯০ থেকে ৯৩ ভাগ খায় তথাকথিত নিরামিষ অর্থাৎ শাক সবজি, এই ধরণের খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত মানুষদের বডি সিস্টেমের মধ্যে আপনি মাংসাশী প্রাণীদের মতো বডি সিস্টেম খুঁজছেন ?
যা হোক, মানুষকে সম্পূর্ণ নিরামিষাশী প্রাণী বলার আগে, মানুষের উৎপত্তির পর তাদের খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসটা সংক্ষেপে জেনে নেওয়া দরকার-
অতীতে, গুহায় বাসকালে মানুষ- বাঘ, সিংহ প্রভৃতি হিংস্র প্রাণীর মাংসও খেয়েছে। আমরা হোমোস্যাপিয়েন্স প্রজাতির মানুষ, আমাদের উৎপত্তি আফ্রিকায়। আমাদের উৎপত্তির প্রায় একই সময়ে ইউরোপে উৎপত্তি হয়েছিলো নিয়ানডার্থাল প্রজাতির মানুষের। কিন্তু হোমোস্যাপিয়েন্সরা ইউরোপে ঢুকে পড়লে নিয়ানডার্থাল প্রজাতির মানুষদের সাথে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয় এবং হোমোস্যাপিয়েন্সরা নিয়ানডার্থালদেরকে সেই যুদ্ধে পরাজিত ক'রে হত্যা ক'রে খেয়ে ফেলে। এরপর পৃথিবী থেকে নিয়ানডার্থাল প্রজাতির মানুষই বিলুপ্ত হয়ে যায়।
জঙ্গলে ও গুহায় বাস করার সময় এবং কৃষিভিত্তিক সভ্যতা সৃষ্টির আগে পৃথিবীতে হত্যাই হতো নিহতদের মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে। বাঘ সিংহরা যদি মানুষকে হত্যা করতে পারতো, তাহলে তারা মানুষের মাংস খেতো, আর মানুষ যদি বাঘ সিংহকে হত্যা করতে পারতো, তাহলে মানুষ বাঘ সিংহের মাংস খেতো। সেই সময়ে বাঘ সিংহকে হিংস্র বলার কোনো সুযোগ নেই, কারণ, মানুষও বাঘ সিংহের মতো একই রকম হিংস্র ছিলো, আর সবারই বাস ছিলো জঙ্গলে। সুতরাং মানুষরূপী প্রাণী কর্তৃক পশুদেরকে হত্যা করে খাওয়া এবং পশু কর্তৃক মানুষের নিহত হয়ে তাদের পেটে যাওয়া, মানুষের উৎপত্তি থেকে শুরু করে কৃষিভিত্তিক সভ্যতা শুরুর আগে পর্যন্ত ছিলো নরম্যাল ব্যাপার।
শুরু থেকেই মানুষ স্বভাববশতই আরামপ্রিয় এবং ঝুঁকিহীন জীবন যাপনে আগ্রহী। কৃষি ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর মানুষ দেখলো যে, খাদ্য যোগানে পশু শিকার করতে গেলে যে পরিশ্রম এবং জীবনের ঝুঁকি, মাটি থেকে খাবার উৎপাদনে জীবনে ঝুঁকি তো নেই ই, অতটা পরিশ্রমও নেই। এই উপলব্ধি থেকেই মানুষ আস্তে আস্তে কৃষিভিত্তিক জীবন যাপনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার এই উন্নয়ন সমগ্র পৃথিবী জুড়ে এক সাথে হয় নি, এই দৌড়ে কোনো এলাকা এগিয়ে গেছে আবার কোনো এলাকা ছিলো অনেক পিছিয়ে। এই যেমন এখনও অস্ট্রেলিয়ার পাশের পাপুয়া নিউগিনি এবং ব্রাজিলের অ্যামাজন বনের আদিবাসী মানুষের জীবন যাপন আধুনিক উন্নত সভ্যতা থেকে প্রায় কয়েক হাজার বছর পিছিয়ে আছে। এই আদিম মানুষদের মতো, ১৮৬০ সালে ফিজির আদিবাসীরা এক খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারককে হত্যা করে তাকে পুড়িয়ে তার মাংস খেয়ে ফেলেছিলো, জোরপূর্বক কাউকে হত্যা করে মাংস খাওয়ার সেই ঘটনা ই ফিজির শেষ মানুষ খাওয়া ঘটনা, এরপর ব্রিটিশদের প্রভাবে তারা সভ্য হতে শুরু করে এবং মানুষের মাংস খাওয়ার ঘটনা আর ঘটে নি। কিন্তু ফিজি দ্বীপপুঞ্জের কিছু কিছু আদিবাসী গোষ্ঠী এখনও পরলোকগত পিতা মাতার মাংস খায়। শুধু তাই নয় অস্ট্রেলিয়ার আবিষ্কারক ক্যাপ্টেন জেমসকুকের দলবলকে তাহিতি দ্বীপের আদিবাসীরা হত্যা করে খেয়ে ফেলেছিলো। তার মানে মানুষ যে অন্যান্য প্রাণীর মাংস খেতো বা খায়, সেটা তো নরম্যাল ব্যাপার, মানুষ প্রাচীনকাল থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত মানুষের মাংসও ব্যাপকভাবে খেয়েছে।
সকল প্রকার প্রাণীর মাংস খেয়ে শুরু হওয়া মানুষের প্রজাতির যাত্রায়, কৃষিকাজের যুগে এসে প্রাণীজ আমিষের উপর নির্ভরতা অনেকখানি কমে যায়। আর স্বভাবতই কম ঝুঁকিপূর্ণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত মানুষ হিংস্র প্রাণী শিকার করে তার মাংস খাওয়ার পরিবর্তে হিংস্র নয় এমন প্রাণী শিকার করা শুরু করে, যেমন গরু ছাগল জাতীয় তৃণভোজী প্রাণী; শুধু তাই নয়, এরা হিংস্র নয় বলে, শিকার করার সময় এদেরকে জীবিত ধরতে পারলে তাদেরকে ধরে এনে বাড়িতে পালন শুরু করে এবং প্রয়োজন মতো সময়ে এদেরকে হত্যা করে মাংস খাওয়া শুরু করে। এভাবেই কৃষি সভ্যতা শুরুর আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিলো পশুপালন সভ্যতা। যে সভ্যতা বর্তমানে অনেক উন্নত হয়েছে আধুনিক মানুষের হাত ধরে, প্রাচীন কালের মতো নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য এখনও আমরা পশু পালন করি এবং কৃষি কাজ করি। সুতরাং মানুষকে নিরঙ্কুশ নিরামিষ প্রমাণ করার আগে শুরু থেকেই মানুষের খাদ্যাভ্যাসের বিবর্তনের ইতিহাসটা জেনে নিয়ে কথা বলা উচিত নয় কি ?
আপনি আপনার প্রবন্ধের শুরুতেই মানুষের সহজাত খাবার প্রবৃত্তির উদাহরণে মানুষের বাচ্চা ও বাঘের বাচ্চার উদাহরণ দিয়েছেন। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি গড়ে উঠে কিভাবে ? যেকোনো প্রাণী জন্মের পর থেকে তার পিতা মাতার মধ্যে যে আচরণ দেখে, সেটাই তার সহজাত প্রবৃত্তি হিসেবে গড়ে উঠে। কোনো মানব সন্তান কি তার জন্মের পর তার পিতা মাতাকে কোনো খরগোশের বাচ্চাকে জীবন্ত খেয়ে ফেলতে দেখে যে তার মধ্যে ঐ ধরণের সহজাত প্রবৃত্তি গড়ে উঠবে ? কোনো কথা বলার সময় আগে পিছে বহু চিন্তা-ভাবনা করে তারপর কথা বলতে হয়, না হলে কথায় যেমন মানুষ হাতি পায়, তেমনি কথা বলার জন্যই কিন্তু মানুষ পিষে যায় হাতির পায়, তাই কথা বলার সময় খুব সাবধানে ভেবে চিন্তে বলা উচিত নয় কি ?
একটি বাঘের বাচ্চা জন্মের পর থেকেই দেখে, তার মা অন্যান্য প্রাণীদেরকে হত্যা করে নিজে খাচ্ছে, তাই বাঘের বাচ্চাও সেটা শিখে ফেলে, যা তার সহজাত প্রবৃত্তি হিসেবে গড়ে উঠে। কিন্তু মানব সন্তান দেখে, তার পিতা মাতা বাজার থেকে খাদ্যদ্রব্য কিনে এনে রান্না করে তারপর খায় এবং তাকে খাওয়ায়, তাই মানব সন্তানের সহজাত প্রবৃত্তি কখনো বাঘের বাচ্চার মতো হবে না, এটা তো গেলো প্র্যাকটিক্যাল হ্যাবিট; সহজাত প্রবৃত্তির পেছনে যেকোনো প্রজাতির প্রাণীর ডিএনএতে অবস্থিত জিনও ভূমিকা পালন করে, তাই কোনো প্রাণীর সহজাত প্রবৃত্তি হঠাৎ করেই গড়ে উঠে না। মাংস রান্না করে খাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি, যেটা বহ শত বছর ধরে প্র্যাকটিসের ফলে গড়ে উঠেছে, এখন যে মানুষ আমিষভোজী, তার খাবার টেবিলে অনেকগুলো নিরামিষ পদের সাথে যদি মাছ মাংসের একাধিক পদ পরিবেশন করা হয়, তাহলে সে কোনটাকে বেটার মনে করবে ? অবশ্যই মাছ মাংসের আইটেম, আর এটাই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। শিশুকে দিয়ে সহজাত প্রবৃত্তির বিচার করা যায় না; কারণ, সহজাত প্রবৃত্তিকে প্রকাশ করার জন্য যে বুদ্ধি এবং শারীরিক শক্তি দরকার, তা শিশুর থাকে না।
মানুষকে ভেজিটেরিয়ান প্রমাণ করতে আপনি আপনার ২ নং পয়েন্টে বলেছেন- ছুঁচালো এবং চ্যাপ্টা দুই ধরণের দাঁতই মানুষের রয়েছে, কিন্তু মানুষের ছুঁচালো দাঁত, মাংসাশী প্রাণীদের তুলনায় দুর্বল এবং মানুষের চ্যাপ্টা দাঁত অনেক বেশি শক্তিশালী। এর কারণ হলো লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মানুষ কাঁচা মাংস চিবিয়ে খায় নি এবং মানুষের হাত থাকায় কোনো জীবন্ত প্রাণীকে ধরে তার মাংসও মানুষকে দাঁত দিয়ে ছিড়তে হয় নি। প্রস্তর যুগে মানুষ কাঁচা মাংস খেলেও, তা হাত দিয়ে মুখে তুলে খেয়েছে, ফলে মানুষের ছুঁচালো দাঁতের ব্যবহার কম হয়েছে, যেকারণে ছুঁচালো দাঁতগুলো দুর্বল হয়ে গেছে, অন্যদিকে রান্নাকৃত রেডি খাবার লক্ষ লক্ষ বছর ধরে খাবার ফলে মানুষের চ্যাপ্টা দাঁত অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে, এগুলো তো বিবর্তনেরই কথা, বিবর্তনের এই বিষয়টা স্বীকার করেন, আর মানুষ যে হান্ড্রেড পার্সেন্ট মাংসাশী থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কারণে আস্তে আস্তে খাদ্য তালিকায় নিরামিষ যুক্ত করেছে, সেটা স্বীকার করেন না কেনো ? যে কোনো খাদ্যদ্রব্য রান্না করার ফলে সেই খাদ্যের হার্ডনেস কমে যায় এবং লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সেই ধরণের রান্না করা খাবার খেয়েই মানুষের ছুঁচালো দাঁতের শক্তি কমে গেছে, এর মানে এই নয় যে সেগুলো কম শক্ত খাবার খাওয়ার জন্য শুরু থেকেই তৈরি। আর আপনার কিভাবে মনে হলো যে পেয়ারা ও আখ, রান্না করার মাংসের চেয়ে কম শক্ত ? আপনার বাড়িতে যদি ৪/৫ বছরের কোনো বাচ্চা থাকে, তাহলে তাকে একটি আখের টুকরা এবং রান্না করা কয়েক টুকরা মুরগী বা খাসি ভেড়ার মাংস খেতে দিয়েন, আর লক্ষ্য করেন, সে কোনটা খেতে পারে, তাহলেই আপনি বুঝবেন, কোন খাবার আসলে শক্ত ?
৩ নং পয়েন্টে আপনি বলেছেন- তৃণভোজী এবং মানুষ উভয়েরই পাচননালী শরীরের থেকে ৫ থেকে ৮ গুন বড়, অন্যদিকে মাংসাশী প্রাণীর পাচননালী তার শরীরের থেকে মাত্র ৩ গুন বড়।
-শুরুতেই তো প্রমাণ করে দিয়েছি যে, মানুষ যা খায়, তার প্রায় ৯০ থেকে ৯৩ শতাংশ হলো উদ্ভিজ্জাত খাদ্য, তাহলে তৃণভোজী প্রাণীদের সাথে মানুষের পাচননালীর মিল থাকবে না কেনো ?
এই পয়েন্টেই আপনি বলেছেন- মানুষের পাচক রস তুলনামূলকভাবে মাংসাশী প্রাণীর প্রাণীর তুলনায় দুর্বল।
- মাংসাশী প্রাণীরা কাঁচা মাংস খায়, সেই মাংস হজম করা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়, তাই তাদের পাচক রস যে অনেক শক্তিশালী হবে, সেটা তো নরম্যাল ব্যাপার। এর বিপরীতে মানুষ উদ্ভিজ্জাত খাবারই খায় ৯০ থেকে ৯৩ শতাংশ এবং যেটুকু প্রাণীজ জাত খাবার খায়, তার প্রায় ৮০ভাগ মাছ, যেটা উদ্ভিজ্জাত খাবারের মতোই খুবই সহজপাচ্য, আর বাকি যে ২০ শতাংশ মানুষ মাংস খায়, সেটাও রান্না করার ফলে তার হার্ডনেস অনেকখানিই কমে যায়, ফলে এটাও সহজ পাচ্য হয়ে উঠে, আর একারণেই মানুষের পাচক রস, মাংসাশী প্রাণীদের তুলনায় অনেক অনেক দুর্বল হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।
এই পাচক রসের ভিত্তিতেই আপনি জোর দিয়ে বলেছেন- এই ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে মানুষের পৌষ্টিকতন্ত্র কোনোভাবেই মাংস গ্রহণের জন্য উপযোগী নয় বা বলা যেতে পারে পারফেক্ট নয়।
-আপনার এই কথা সত্য হতো, যদি মানুষ, মাংসাশী প্রাণীদের মতো হান্ড্রেড পার্সেন্ট কাঁচা মাংসভোজী হতো, তারা কোনোভাবেই উদ্ভিজ্জাত খাবার বা মাছ না খেতো। কিন্তু আপনার তো এই ধারণাই নেই যে- মানুষ তার টোটাল খাবারের মাত্র ২% এর মতো মাংস খায়, আর সেটাও খায় রান্না করে, কাঁচা নয়। সুতরাং নিরামিষ আহারের পক্ষে আপনার পৌষ্টিকতন্ত্র থিয়োরি যে একটা বলদের গু, সেটা কিন্তু প্রমাণিত।
এছাড়াও ৪ নং পয়েন্টে, মাংসের এসিডিটির ব্যাপার টেনে এনে মাংস খাওয়াকে মানুষের পক্ষে যেরকম বিপজ্জনক প্রমাণ করার অপচেষ্টা করেছেন, সেটা যদি সত্য হতো, মানুষ মাংস খেতো আর টুপটাপ করে মরতো, কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটে না। খ্রিষ্টান বৌদ্ধ ইহুদিরা মুসলমানদের চেয়ে বেশি মাংস খায়, কিন্তু তারা সেটি খায় প্রক্রিয়াজাত করে চর্বিমুক্ত করার পর সুপারস্টোর থেকে কিনে, যে মাংস খুব ক্ষতির কারণ নয়; যেকারণে তাদের গড় আয়ু এখনই প্রায় ৮৫/৯০ বছর এবং সেটা প্রতিবছর বাড়ছে। এর বিপরীতে বাঙ্গালি মুসলমানরা খায় জবাই করা টাটকা খাসি গরুর লাল মাংস যেটা ভয়াবহ ক্ষতিকর ব্যাপার; কারণ, এগুলো চর্বিমুক্ত করা হয় না, এসব মাংস খেয়ে তারা হার্ট, ব্লাড প্রেসারের রোগে ভুগে এবং আকস্মিকভাবে মৃত্যুর মুখে পড়ে, কিন্তু তারা মাংসের এসিডিটির কারণে পেটে গ্যাস জমে মরে না, যেমনটা আপনি প্রমাণ করতে চেয়েছন।
৫, ৬ এবং ৭ নং পয়েন্টে বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের সাথে তৃণভোজী প্রাণীর যে মিল আপনি দেখিয়েছেন, সেটা সত্য। এর কারণ আমার উপলব্ধিতে আছে, যেটা আপনার নেই; আর সেই কারণটি হলো- তৃণভোজী প্রাণীর সাথে মানুষের খাদ্যভ্যাসের মিল প্রায় ৯৮%। তাহলে প্রায় সব ক্ষেত্রে মানুষের সাথে তৃণভোজী প্রাণীর বৈশিষ্ট্যের মিল থাকবে না কেনো ?
শেষের দিকে আপনি বলেছেন, মানুষের শরীরের জন্য যা প্রয়োজন, তা নিরামিষ আহার থেকেই পাওয়া যায়, এটা আমিও অস্বীকার করি না, যেকারণে তৃণভোজী প্রাণীরা লতা পাতা খেয়েই দিব্যি বহাল তবিয়তে টিকে আছে এবং মাংসাশী প্রাণীদের খাবার হয়ে মাংসাশী প্রাণীদেরকেও টিকিয়ে রেখেছে। প্রকৃতি নামের ঈশ্বর, পৃথিবীতে তৃণভোজী প্রাণীদের সংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মাংসাশী প্রাণীদেরকে সৃষ্টি করেছে, যে কারণে তৃনভোজী প্রাণীরা হলো মাংসাশী প্রাণীদের খাদ্য। তৃণভোজী প্রাণীরা নিরীহ হয়, তারা কাউকে আক্রমন করে না, কারণ লতা পাতা খেয়ে জীবন ধারণের জন্য তাদের সে মন মানসিকতা থাকে না, তাই মাংসাশী প্রাণীদের দ্বারা নিহত হওয়াই তাদের নিয়তি। তৃণভোজীরা মাংসাশী প্রাণীদের দ্বারা নিহত হয়, এই ঘটনাটা প্রমাণ করে যে তৃণভোজীরা দুর্বল, আর দুর্বলেরা সবলের দ্বারা অত্যাচারিত হয় এবং হবে, প্রকৃতির এই নিয়ম সর্বত্র প্রযোজ্য, এমনকি মানুষের ক্ষেত্রেও। এখন আপনি কি চান, মানুষকে- নিরামিষ খাইয়ে, দুর্বল করে, আমিষভোজী মানুষদের দ্বারা নিরামিষভোজীদেরকে অত্যাচারিত করতে, তাদেরকে বিলুপ্ত করতে ? যারা মানুষের নিরঙ্কুশ নিরামিষ ভোজনের পক্ষে কথা বলে, তাদের উদ্দেশ্য যা ই হোক, তারা কিন্তু নিরামিষভোজীদের বিলুপ্তির পক্ষেই কাজ করছে।
নিরামিষ আহার থেকে মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদানই পাওয়া সম্ভব, কিন্তু তা মানুষের আত্মরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত নয়, মানুষের নিরামিষ খাওয়ার পক্ষে আমার আপত্তিটা এখানেই। আমি চাই, হিন্দুরা আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে নির্যাতনমুক্তভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচুক, কেউ মারতে আসলে তাদেরকে মার দিক; মুসলমানদের হাতে মার খেয়ে, জমি জমা বাড়ি ঘর হারিয়ে আমি সাংবাদিক সম্মেলন করে বলতে চাই না যে- আমার উপর এই ধরণের নির্যাতন হয়েছে, আমি এর বিচার চাই। কারণ, বিচার চায় দুর্বলেরা। আমি কাউকে আক্রমন করবো না, কিন্তু আমার মধ্যে আমি সেই শক্তি সঞ্চয় করে রাখবো যে, কেউ আমাকে মারতে এলে, আমার জমি জমা বাড়ি ঘর দখল করতে এলে, আমার বাড়ির মেয়েদের দিকে নজর দিলে, তার হাত পা ভেঙ্গে দেবো এবং এই শক্তি ও মানসিকতার অর্জন, নিরঙ্কুশ নিরামিষ খেলে কখনোই হবে না, যেটা আমরা আমাদের চারপাশে তাকালেই দেখতে পাই। মানুষের আত্মরক্ষা আসলে যতটা দৈহিক শক্তির উপর নির্ভর করে, তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে মানসিকতার উপর, যে মানসিকতা অর্জন হয় প্রাণীজ আমিষ খেলে, নিরামিষ খেলে নয়; যেকারণে একটি সিংহের চেয়ে পাঁচগুন বেশি বড় দেহ ও বেশি শক্তি নিয়েও একটি মহিষ, সিংহের থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে না, সিংহের ভয়ে পালায়, সিংহের খাবারে পরিণত হয়।
একেবারে শেষে আপনি প্রোটিন সাপ্লেমেন্টের মাধ্যমে বডি বিল্ডিং এর কথা বলেছেন না, মহিষের মতো বিশাল শরীর বানিয়ে কী লাভ, যদি সেই শরীর ও শক্তি দিয়ে নিজের আত্মরক্ষা করতে না পারেন বা কারো উপকারে সেই শক্তিকে ব্যবহার করতে না পারেন ? প্রোটিন সাপ্লিমেন্টের উপাদানগুলো প্রাণীজ উৎস থেকে সংগৃহীত নয়, ফলে এগুলো খেলে হয়তো শরীর বাড়বে, শরীরে শক্তিও আসবে, কিন্তু সেই শক্তি ব্যবহার করার জন্য যে মানসিকতা দরকার, সেটাই তো আসবে না। তাই সিংহকে দেখে মহিষ যেমন ভয় পায়, বিশাল শরীর নিয়ে ছোট্ট সিংহের ভয়ে দৌড়ে পালায়, প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট খেয়ে বডি বানানোদের অবস্থাও হবে সেই রকম। কারণ, প্রাণীজ আমিষ গ্রহণের মূল উদ্দেশ্যই হলো- আক্রমন প্রতিহত করে আক্রমন করার মানসিকতা অর্জন করানো, যেটা পৃথিবীতে টিকে থাকার মূল ফ্যাক্ট, আর পৃথিবীতে টিকে থাকা-ই হলো সবকিছুর চুড়ান্ত কথা। কারণ, আপনি টিকে আছেন বলেই নিরামিষ আহারের পক্ষে এসব কুযুক্তিকে তুলে ধরতে পেরেছেন; আর আমি টিকে আছি বলেই, এসবের প্রতিবাদে আপনাকে থাপড়াতে উদ্যত হয়েছি।
শেষে, আপনার মতোই সবার উদ্দেশ্যে আমি বলছি- এখন সিদ্ধান্ত আপনার, প্রাণীজ আমিষ খেয়ে নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখবেন, না নিরামিষ খেয়ে নিজেদেরকে বিলুপ্ত করবেন ।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
---------
বি.দ্র # আমিষ নিরামিষ প্রসঙ্গে আপনাকে একটা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, আপনি যেহেতু নিরামিষ এবং প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট খেয়ে বডি বানানোতে বিশ্বাসী, সেহেতু আপনার এই মূহর্তের একটি ছবি, যে ছবিতে ফটোশপের মাধ্যমে তারিখ লিখে দেবেন, তারপর আপনি কত বছর সময় নিতে চান, তত বছর নেবেন এবং তারপর আপনার শক্তির এবং আমার আমিষ ভোজী কোনো এক ভক্তের শক্তির পরীক্ষা হবে, তারপর বোঝা যাবে যে আমিষ খেয়ে বানানো বডির শক্তি বেশি, না নিরামিষ+প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট খেয়ে বানানোর বডির শক্তি বেশি ? যদি আপনি এই চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেন, তাহলে আপনার বর্তমান ছবির উপর তারিখ এবং ফোন নং লিখে দেবেন, তার কয় বছর সময় নিতে চান, তা বলবেন, এই সময় শেষে আপনার সাথে আমি যোগাযোগ করবো আপনার শক্তি পরীক্ষার জন্য, এবং এও বলে রাখছি আপনার সাথে শক্তি পরীক্ষায় আমি যাবো না; কারণ, নানা কারণে হিন্দুসমাজের স্বার্থেই আমাকে হাইড থাকতে হয়, সমগ্র বাংলা জুড়ে আমার অনেক ভক্ত অনুরাগী আছে, যারা আমাদের কথামতো শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ অনুযায়ী চলে, তাদেরই কোনো একজনকে পাঠাবো আপনার দেওয়া ঠিকানা মোতাবেক, যদি নিরামিষ এবং প্রোটিন সাপ্লিমেন্টের উপর এই আত্মবিশ্বাস থাকে, তাহলে আমার এই চ্যালেঞ্জ গ্রহন কইরেন।
No comments:
Post a Comment