“হিন্দুধর্মে পূজা নিষিদ্ধ :- রেফারেন্স সহ প্রমান দিলাম :- ১. না তাস্তেপ্রাতীমা আস্থি ( রীগ বেদ ৩২ অধ্যায় ৩ নং অনুচ্ছেদ ) অর্থাৎ ঈশ্বরের কোনপ্রতি মূর্তি নেই।”
Reshma Parvin নামের এই মুমিনা, রেফারেন্স হিসেবে ভুল বানানে উল্লেখ করেছে, “রীগ বেদ ৩২ অধ্যায় ৩ নং অনুচ্ছেদ,” কিন্তু এই শ্লোকটা আসলে আছে “শুক্ল যজুর্বেদ” এর ৩২ অধ্যায়ের ৩ নং অনুচ্ছেদ নয়, ৩ নং মন্ত্রে । বেদ ঘেঁটে এসব না লিখে যদি কেউ কপি পেস্ট এর নীতি গ্রহণ করে তাহলে তো তার এসব ভুল হবেই। কোনো কিছুর রেফারেন্স দিতে গেলে যে, সঠিকভাবে সেটা দিতে হয়, সেটাও কি এই মুসলিমরা জানে ? যার রেফারেন্স ভুল, তার অনুবাদ যে কতটা সঠিক হবে, সেটা তো সহজেই অনুমেয়। যা হোক, যে মন্ত্রটা সে উল্লেখ করেছে, “না তাস্তেপ্রাতীমা আস্থি” এই মন্ত্রটাও ভুলে ভরা, সঠিক বানানে মন্ত্রটা হলো- “ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদযশ”, এর অর্থ হিসেবে রেশমা লিখেছে, “ঈশ্বরের কোনপ্রতি মূর্তি নেই।” কিন্তু কোলকতার হরফ প্রকাশনী, যার মালিক একজন মুসলমান, তার প্রকাশিত বেদ এ, এর অনুবাদ দেওয়া আছে, “এ পুরুষের তুলনা দেবার কোনো বস্তু নেই। তার মহৎ যশ আছে।”
যেহেতু এই শ্লোকের মধ্যে প্রতিমা ব’লে একটা শব্দ আছে, সেহেতু মুসলমানরা এর অনুবাদ করে, “ঈশ্বরের কোনো প্রতিমা নেই”, তাহলেও এটা ঠিক আছে, কারণ, হিন্দুরা যাকে ঈশ্বর বলে মনে করে সেই পরমব্রহ্ম বা ব্রহ্মের তো কোনো প্রতিমা নেই ই। ব্রহ্মের তিনটা রূপ- ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের মূর্তি আছে, আছে আরো অন্য দেব-দেবীর, কিন্তু ব্রহ্মের কি কোনো মূর্তি আছে ? ব্রহ্মের তো কোনো মূর্তি বা প্রতিমা নেই। তাহলে তো তা ঠিকই আছে, বেদ এর নির্দেশকে মেনে হিন্দুরা ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের কোনো মূর্তি তৈরি করে নি।
এর বিপরীতে ইসলামের অবস্থা কী, সেটা এবার দেখা যা্ক :
মুসলমানরা জোর গলায় বলে যে, আল্লা নিরাকার। কিন্তু আল্লা যে নিরাকার নয়, তার বহু প্রমান কোরান হাদিসে আছে, কয়েকটির উদারহণ দিচ্ছি-
কোরানের ৬৯/১৩-১৮ আয়াতে বলা আছে,
“পরে যখন শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে। তখন ভূতল ও পর্বতরাশিকে উপরে তুলে একই আঘাতে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেওয়া হবে।...সেই দিন আকাশ দীর্ণ বিদীর্ণ হবে এবং তার বাঁধন শিথিল হয়ে পড়বে। ফেরেশতাগণ তার আশ পাশে উপস্থিত থাকবে। আর আটজন ফেরেশতা সেই দিন তোমার রবের আরশ নিজেদের উপর বহন করতে থাকবে।”
এই সূরা অনুযায়ী, এটা বোঝা যায় যে, কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত আল্লা সপ্তম আসমানের উপর স্থাপিত একটি সিংহাসন, যার ইসলামিক নাম আরশ, তাতে বসে থেকে পৃথিবীসংশ্লিষ্ট সবকিছুর পরিচালনা করে। আবার শব-ই-বরাতের রাতে আল্লা নাকি সেই সপ্তম আসমান থেকে নেমে প্রথম আসমানে আসে এবং হকারের মতো নাকি চিৎকার করে বলতে থাকে যে, “কে আছো ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেবো ইত্যাদি ইত্যাদি”। এটা শব-ই-বরাতের রাতের মহিমা বোঝানোর জন্য মুসলমানদের বহুল প্রচারণা থেকেই শোনা, তাই এটার আর রেফারেন্স দিলাম না। ঘটনা যদি তাই হয়, তাহলে আল্লা শুধু শব-ই-বরাতের রাত বাদ দিয়ে সারা বছর সপ্তম আসমানে একটি আরশের উপর বসে থাকে, যে সপ্তম আসমান কেয়ামতের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে আল্লা সমেত, আল্লার সেই আরশ, ৮ জন ফেরেশতা বহন করবে বলে কোরানের ৬৯/১৩-১৮ আয়াতে বলা আছে। এই প্রেক্ষাপটে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে আল্লা, আরশ নামের কোনো সিংহাসনে বসে থাকে, সে নিরাকার হয় কিভাবে ?
শুধু এখানেই শেষ নয়, মুসলিম হাদিসের ৪০/৬৮০৯ ও ৩২/৬২৩৫ এবং বুখারির ৪/৫/৫৪৩ নং হাদিসে বলা হয়েছে যে, আল্লা ৬০ হাত বা ৯০ ফুট লম্বা।
নিরাকার আল্লা ৬০ হাত বা ৯০ ফুট লম্বা হয় কিভাবে ?
আল্লা যে ৬০ হাত বা ৯০ ফুট লম্বা, এই কাহিনীর উৎস হলো, হাদিসে বলা আছে, প্রথম মানব আদম ছিলেন ৬০ হাত বা ৯০ ফুট লম্বা, আর আল্লা, নিজের আদলে মানব আদমকে সৃষ্টি করেছেন (সহীহ মুসলিম, ২৮৭২), সেই হিসেবে আল্লা ৬০ হাত বা ৯০ ফুট লম্বা।
আল্লা যদি নিরাকারই হয়, তাহলে ইসলামে আল্লার এই রূপের স্বীকৃতি কেনো ?
বেদ এ ঈশ্বরের কোনো রূপের বর্ণনা দেওয়া নেই এবং যেহেতু বলা আছে, যে ঈশ্বরের কোনো রূপ বা প্রতিমা নেই, সেহেতু হিন্দুরা ঈশ্বর বা ব্রহ্মের কোনো প্রতিমা নির্মান করেনি। অন্য দেব-দেবতার যেহেতু আকার আকৃতির বর্ণনা দেওয়া আছে, সেহেতু হিন্দুরা তাদের রূপ অনুযায়ী তাদের মূর্তি নির্মান করেছে, এটা হিন্দুরা পারে বলেই করেছে, কিন্তু মুসলমানরা যেহেতু শিল্প সংস্কৃতি বর্জিত একটি বর্বর জাতি এবং এজন্য যেহেতু তাদের কোনো কিছু নির্মান বা গড়ার কল্পনাশক্তি নেই, সেহেতু তারা কোরান হাদিসে আল্লার স্পষ্ট রূপের বর্ণনা থাকা সত্ত্বেও প্রচার করে যে, আল্লা নিরাকার, যাতে তাদেরকে আল্লার মূর্তি বানানোর মতো কষ্ট স্বীকার না করতে হয়। হিন্দুরা একটি সৃষ্টিশীল জাতি, যদি তোরা বলিস, কোরান হাদিসের বর্ণনা মতো, তোদেরকে একেবারে বিনা পয়সায় আল্লার মূর্তি তৈরি করে দেবো, তাকে মসজিদের ভেতর স্থাপন করে তার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করিস; কেননা, এটা অনেক মুসলমানেরই উপলব্ধি যে, হিন্দুদের তো সামনে মূর্তি থাকে, যার সামনে বসে তারা পূজা প্রার্থনা করে, আমাদের সামনে কী থাকে, কার উদ্দেশ্যে আমরা প্রার্থনা করি ? এর মানে হলো- কোনো কিছুর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করার জন্য হিন্দুদের সামনে কিছু থাকে, মুসলমানদের সামনে তো সেটাও থাকে না।
এরপর কপি-পেস্টকারী লিখেছে,
“২.যারা নিজের বিবেক বুদ্ধি হারিয়েছে তাঁরাই মূর্তিপূজা করে (ভগবৎ গীতা অধ্যায় ৭, অনুচ্ছেদ ২০নম্বর ) । রেফারেন্স সহ দিলাম।”
যদিও রেশমা রেফারেন্স হিসেবে লিখেছে, “গীতা অধ্যায় ৭, অনুচ্ছেদ ২০নম্বর” কিন্তু এটা হবে আসলে অধ্যায় ৭, অনুচ্ছেদ নয়শ্লোক নং ২০।
যা হোক, এই শ্লোকের অর্থ হিসেবে ইসকন প্রকাশিত গীতায় বলা হয়েছে,
“জড় কামনা বাসনার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে, তারা অন্য দেব-দেবীর শরণাগত হয় এবং তাদের স্বীয় স্বভাব অনুসারে বিশেষ নিয়ম পালন করে দেবতাদের উপাসনা করে।”
এই শ্লোকের দ্বারা গীতায় মূ্র্তি পূজাকে যে নিষিদ্ধ করা হয় নি, নিরুৎসাহিত করা হয়েছে মাত্র, সেটা একটু পরেই বুঝতে পারবেন। তার আগে এই শ্লোকের আসল অর্থটা আপনাদের কাছে একটু পরিষ্কার করি।
এই শ্লোকে বলা হচ্ছে, “জড় কামনা বাসনার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে, তারা অন্য দেব-দেবীর শরণাগত হয়”- এখানে জ্ঞান মানে ক্ষমতা, যে ক্ষমতার দ্বারা কাউকে উপলব্ধি করা যায়, কারো কাছে পৌঁছানো যায়। এখন আপনি কল্পনা করুন, আপনি গ্রামের একজন সাধারণ মানুষ, আপনার পক্ষে কি কোনোভাবে, একাকি, সরাসরি, দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছানো সম্ভব ? সম্ভব নয়। যদি তার সাথে দেখা করার বিশেষ কোনো কারন আপনার কাছে থাকে এবং সেজন্য আপনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চান, তাহলে আপনাকে প্রথমে আপনার গ্রামের বা ইউনিয়নের কোনো পাতিনেতার দ্বারস্থ হতে হবে, সেই পাতিনেতা আপনাকে নিয়ে যাবে থানার নেতার কাছে, থানার নেতা নিয়ে যাবে জেলার নেতার কাছে, জেলার নেতা নিয়ে যাবে কোনো মন্ত্রীর কাছে, সেই মন্ত্রী নিয়ে যাবে কোনো প্রভাবশালী মন্ত্রীর কাছে, এবং তার পর প্রধানমন্ত্রী চাইলে তার সাথে আপনার দেখা হতে পারে।
হিন্দু ধর্মের ঈশ্বর হলো, এই প্রধানমন্ত্রীর মতো, যার ভক্ত হওয়া সহজ, যার গুণগান করা সহজ, কিন্তু যার কাছে পৌঁছানো সহজ নয়, তার কাছে পৌঁছতে হলে আপনাকে জ্ঞানে বিশেষ ক্ষমতাবান হতে হবে, এককথায় ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করতে হবে। কিন্তু সকলের পক্ষে কি সেই ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করা সম্ভব ? সম্ভব নয়। তাহলে এই ব্রহ্মজ্ঞান অর্জনের পথ বা ঈশ্বরকে পাওয়ার পথটা কী ? এই পথই হলো নিজের জ্ঞান ও বুদ্ধি অনুসারে বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করা, যার স্বীকৃতি পরমেশ্বর দিয়ে রেখেছেন, গীতার ৭/২১ নং শ্লোকে,
"যো যো যাং যাং তনুং ভক্ত শ্রদ্ধয়ার্চিতুমিচ্ছতি।
তস্য তস্যাচলং শ্রদ্ধাং তামেব বিদধাম্যহম।।"
এর অর্থ,পরমাত্মারূপে আমি সকলের হৃদয়ে বিরাজ করি। যখন কেউ দেবতাদের পূজা করতে ইচ্ছা করে, তখনই আমি সেই সেই ভক্তের, তাতেই অচলা শ্রদ্ধা বিধান করি।
স্বল্পজ্ঞানীদের পক্ষে করা এই মূর্তি পূজা যে বৃথা নয় এবং এই মূর্তি পূজার ফল যে, স্বয়ং ঈশ্বরই তার ভক্তকে প্রদান করে, সে কথা বলা আছে গীতার ৭/২২ নং শ্লোকে,
"স তয়া শ্রদ্ধয়া যুক্তস্তস্যারাধনমীহতে।
লভতে চ ততঃ কামান্ময়ৈব বিহিতান্ হিতান্।"
এর অর্থ, সেই পুরুষ শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে যেই দেব বিগ্রহের পূজায় তৎপর হন এবং সেই দেবতার মাধ্যমে আমারই দ্বারা বিহিত কাম্য বস্তু অবশ্য লাভ করেন।
এখানে শ্রীকৃষ্ণ বললেন, যে ব্যক্তি যে দেবতার পূজাই করুক, সে আমার দ্বারাই তার ফল লাভ করে। এখানেও দেবতাদের পূজাকে স্বীকৃতি দেওয়া হলো।
কিন্তু এই দেব পূজার ফল যে অস্থায়ী, সে কথা বলা হয়েছে গীতার ৭/২৩ নং শ্লোকে এবং এই ৭/২০-২৩ নং শ্লোকের মাধ্যমে এই কথাও বলে দেওয়া হয়েছে যে, না জানা বা অল্পবুদ্ধির কারণে অন্য দেব-দেবীর পূজাকে স্বীকার করে নেওয়া হলেও চরম লক্ষ্য বা মোক্ষপ্রাপ্তির জন্য একমাত্র ঈশ্বরকেই ভজনা বা তার কাছে প্রার্থনা করতে হবে, কিন্তু যাদের কাছে সেই ব্রহ্মজ্ঞান নেই বা যাদের এখনও সেই জ্ঞান অর্জন হয় নি, প্রধানমন্ত্রী রূপ ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর জন্য নেতা বা পাতিনেতা রূপ দেব-দেবীর আশ্রয় তাদেরকে নিতেই হবে। কারণ, পৃথিবীর সকল মানুষ যেমন সমান জ্ঞান ও ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নেয় না, তেমনি একজন্মে সকল মানুষের পক্ষেও ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়। জন্ম জন্মান্তর ধরে বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করতে করতে কোনো এক জন্মে হয়তো পরমেশ্বরের কাছে পৌঁছানো যাবে, যেমন নদী এঁকে বেঁকে বিভিন্ন পথ ধরে কোনো না কোনো এক সময় সমুদ্রে পৌঁছেই যায়।
এরপর শ্রীমতি রেশমা পারভীন লিখেছে,
“৩. হিন্দুরা অনেক দেব দেবির পুজা করলেওহিন্দু ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে হিন্দুদের কেবল মাত্র এক জন ইশ্বরের উপাসনা করতেবলা হয়েছে॥ বেদের ‘ব্রহ্ম সুত্র’ তে আছে “একম ব্রহ্মা দ্বৈত্য নাস্তিনহিনা নাস্তি কিঞ্চন” অর্থাৎ ইশ্বর এক তার মত কেউ নেই কেউ নেই সামান্যও নেই। আরও আছে “সে একজন তারই উপাসনা কর” (ঋকবেদ ২;৪৫;১৬)। “একম এবম অদ্বৈত্তম” অর্থাৎ সে একজন তাঁর মত আর দ্বিতীয় কেউ নেই (ঋকবেদ ১;২;৩) । “এক জনেইবিশ্বের প্রভু” (ঋকবেদ ১০;১২১;৩)।”
রেশমাকে এখানে আমি হিন্দু হিসেবেই উল্লেখ করলাম এজন্য যে, হিন্দু হিসেবে তার জন্ম হয়েছে এবং যেহেতু তার খতনা করানো হয় নি, সেহেতু সে হিন্দুই আছে; এর মূল কারণ, মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া ছেলেদের খতনা করানোর মাধ্যমে মুসলিম হিসেবে রূপান্তর করা হয়, কিন্তু মেয়েদেরকে মুসলিম হিসেবে রূপান্তরের কোনো ব্যবস্থা নেই, সেই সূত্রে রেশমাসহ সকল ইসলামি নামধারী মেয়ে হিন্দু।
যা হোক, ৩ নং ধারায় রেশমা যা বলতে চেয়েছে তার মূল কথা হলো- হিন্দু শাস্ত্রে একজন ঈশ্বরের উপাসনা করতে বলা হয়েছে। এখন দেখা যাক, বহু দেব-দেবীর পূজা করলেও হিন্দুরা একজনেরই উপাসনা করে কিনা বা হিন্দুরা কার উপাসনা করে ?
পরমব্রহ্ম বা ঈশ্বরের তিনটি কার্যকরী রূপের নাম- ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বর; এ্ররা কোনো আলাদা আলাদা সত্ত্বা নয়, একই ঈশ্বরের আলাদা তিনটি রূপের নাম। ব্রহ্ম যখন সৃষ্টি করেন, তখন তার নাম ব্রহ্মা, যখন পালন করেন, তখন তার নাম বিষ্ণু এবং যখন ধ্বংস করেন, তখন তার নাম মহেশ্বর বা শিব। সুতরাং ব্রহ্মা, বিষ্ণু বা মহেশ্বর হিসেবে আমরা যারই পূজা করি না কেনো তা শেষ পর্যন্ত এক ব্রহ্মেরই পূজা।
আবার ব্রহ্মেরসৃষ্টিকারী রূপের নাম ব্রহ্মা এবং ব্রহ্মার নারীশক্তি হলো সরস্বতী, সুতরাং সরস্বতী পূজা করা মানে হলো ব্রহ্মার পূজা করা এবং ব্রহ্মার পূজা মানেই হলো ব্রহ্মের পূজা। একইভাবে বিষ্ণুর নারী শক্তি হলো লক্ষ্মী এবং শিবের নারী শক্তি হলো দুর্গা বা কালী। সুতরাং লক্ষ্মী এবং দুর্গা বা কালীর পূজা করা মানেই হলো বিষ্ণু বা শিবের মাধ্যমে এক পরমব্রহ্মেরই পূজা করা।
এছাড়াও গীতার মধ্যে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, আমিই কার্তিক, আমিই রাম, আমি বলরাম, এমন কিছু নেই যাতে আমি নেই, এর প্রমান শ্রীকৃষ্ণ দিয়েছেন, অর্জুনকে তার বিশ্বরূপ প্রদর্শনের মাধ্যমে, যে বিশ্বরূপের মধ্যে সমস্ত দেব-দেবীর স্থান ছিলো। এই তথ্য এটা প্রমান করে যে, যেকোনো দেব-দেবীকে আশ্রয় করেই ঈশ্বরের কাছে পৌঁছা যায় এবং যে কোনো দেব-দেবীর পূজা মানেই প্রকারান্তরে এক ঈশ্বরেরই পূজা।
৪ নং ধারায় শ্রীমতি রেশমা লিখেছে,
“৪. হিন্দু ধর্মে মুর্তি পুজা করতে নিষেধকরা হয়েছে॥ ভগবত গীতা – অধ্যায় ৭ – স্তব ২০ - [ যাদের বোধশক্তি পার্থিবআকাঙক্ষার মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে শুধু তারাই উপদেবতার নিকটে উপাসনা করে। ] ৫. ভগবত গীতা – অধ্যায় ১০ – স্তব ৩ - [ তারা হচ্ছে বস্তুবাদি লোক ,তারাউপদেবতার উপাসনা করে ,তাই তারা সত্যিকার স্রস্টার উপাসনা করে না।] ৬.যজুর্বেদ – অধ্যায় ৪০- অনুচ্ছেদ ৯ – [ অন্ধতম প্রভিশান্তি ইয়ে অশম্ভুতিমুপাস্তে – যারা অশম্ভুতির পুজা করে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। তারাঅধিকতর অন্ধকারে পতিত হয় শাম মুর্তির পুজা করে । অশম্ভুতি হল – প্রাকৃতিকবস্তু যেমন- বাতাস,পানি,আগুন । শাম মুর্তি হল – মানুষের তৈরী বস্তু যেমন -চেয়ার ,টেবিল ,মূর্তি ইত্যাদি।]”
এতে যা লিখা হয়েছে, এগুলোর আর আলাদা করে উত্তর দেবার প্রয়োজন বোধ করছি না, একটু ভলো করে খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন যে, এগুলোর জবাব উপরেই দেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু ৪ নং ধারার শেষের দিকে রেশমা সাহা লিখেছে,
“যারা অশম্ভুতির পুজা করে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। তারা অধিকতর অন্ধকারে পতিত হয় (যারা)শাম মুর্তির পুজা করে । অশম্ভুতি হল – প্রাকৃতিকবস্তু যেমন- বাতাস,পানি,আগুন । শাম মুর্তি হল – মানুষের তৈরী বস্তু যেমন -চেয়ার ,টেবিল ,মূর্তি ইত্যাদি।”
এখানে রেশমা দত্ত বলেছে, “অশম্ভুতি হল – প্রাকৃতিক বস্তু যেমন- বাতাস, পানি, আগুন”। এই প্রসঙ্গে রেশমা দত্তকে জিজ্ঞেস করছি- আগুন, পানি বা বাতাস ছাড়া কি একদিনও চলতে পারবেন ? পারবেন না। তাহলে যে বস্তু ছাড়া একদিনও চলতে পারবেন না, সেগুলোকে পূজা করলে দোষ কী ? এখানে আপনি ইসলামী বলদের মতো পাল্টা প্রশ্ন করতে পারেন- আগুন পানি, বাতাসকে পূজা্ করবো কেনো, এগুলোকে যে সৃষ্টি করেছে, সেই আল্লার এবাদত করবো। সৃষ্টি রহস্য জানেন না ব’লে মূর্খের মতো এধরণের প্রশ্ন করতেই পারেন, তবে শুনে রাখুন, প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই পানি ও বাতাস পৃথিবীতে আছে, এর বহু পর প্রস্তর যুগের মানুষের হাতে তৈরি হয় আগুন, আর আপনি যে আল্লাকে এদের সৃষ্টিকর্তা বলে মনে করছেন, সেই আল্লার জন্ম হয়েছে মাত্র ১৪০০ বছর আগে ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে মুহম্মদের হাতে। পৃথিবীর ৮৩% মানুষ আল্লাকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করে না; কিন্তু তারা আগুন, পানি ও বাতাসের সাহায্যে বেঁচে আছে। কোরানে তো বলা আছে, আল্লা মহাশক্তিশালী, তাকে যারা না মানবে, তাদেরকে সে নরকের আগুনে অনন্তকাল ধরে পোড়াবে, আরো কত কীভাবে শাস্তি দেবে ( কোরান-৩৩/৬১, ৫/৭২, ৫/৭৩,৪৮/১৩), তাহলে আপনার মতে সেই আল্লার সৃষ্টি- আগুন, পানি ও বাতাস; এই পৃথিবীর ৮৩% অমুসলিম তথা কাফেরদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে কেনো ? নাকি আল্লা বলে কিছু নেই বলেই এটা সম্ভব হচ্ছে ?
এরপর রেশমা দাস বলেছে,
“শাম মুর্তি হল – মানুষের তৈরী বস্তু যেমন -চেয়ার ,টেবিল ,মূর্তি ইত্যাদি।” এবং এই শাম মূর্তির যারা পূজা করে তারা নাকি অধিকতর অন্ধকারে নিমজ্জিত।
আপনার বাড়িতে নিশ্চয় চেয়ার, টেবিল বা এই জাতীয় মনুষ্য নির্মিত ফার্নিচার আছে। সেগুলো যাতে ভালো থাকে, দীর্ঘদিন টিকে, সেজন্য সেগুলোকে কি যত্ন আত্তি করেন না ? নিশ্চয় করেন। এই যত্ন-আত্তিই হলো পূজা। কারণ, পূজা মানে হলো শ্রদ্ধা বা সম্মান দেখানো বা যত্নের দৃষ্টিতে দেখা। এখন নিজেই সিদ্ধান্ত নেন, শাম মূর্তি অর্থাৎ মানুষের তৈরি জিনিস পত্রকে আপনি শ্রদ্ধা বা পূজা করেন কিনা ? এখানে আরেকটা বিষয় ভুলে যাবেন না, মসজিদও কিন্তু মানুষের তৈরি এবং কোরান শরীফ, সেও পুস্তক আকারে মানুষেরই বানানো; এগুলোর প্রতি কিন্তু খবরদার সম্মান প্রদর্শন করবেন না।
শেষে, কুমারী রেশমা রানী, গভীর হতাশা নিয়ে লিখেছে,
“পূজানিষিদ্ধের এইসব কথা বা রেফারেন্সহিন্দুরা কখনো মানতে চাইবে না”,
মানতে চাইবে কেনো সোনা, যার ক্লাস থ্রির জ্ঞান নেই, সে যদি নিজেকে এম.এ পাস মনে করে এবং সেই হিসেবে বাজে বকে তার কথা অন্য কেউ মানবে কেনো ? সাগর দেখো নি ব’লে, কুয়ার ভেতর বাস করে তুমি নিজেকে মস্ত বড় জীব ভাবতে পারো, কিন্তু আমরা তো সাগরের জীব, আমরা জানি তিমি কত বড় হয় আর তার শক্তিও কতখানি।
একেবারে শেষে, কুমারী রেশমা দাস, গভীর আক্ষেপ নিয়ে লিখেছে,
“একটা কথা, যে জেগেজেগে ঘুমায়, তাকে ঘুম থেকে জাগানো খুব কঠিন”
ঠিকই তো, এই যেমন তোমায় জাগানোর জন্য কত কথা বললাম, কত নামে ডাকলাম, তাতে কি তোমার ঘুম ভাঙবে ? ইসলামের নোংরা কুয়ো থেকে বেরিয়ে তুমি কি হিন্দু ধর্মের সমুদ্রে অবগাহন করবে ? আমার তো তা মনে হয় না।
শেষে আরেকটা ভুল না ধরে দিয়েই পারছি না, কপি পেস্ট এর ফোর্স এত যে, একবার কপি পেস্ট করতে গিয়ে যে, দুই বার কপি পেস্ট হয়ে গেছে সেটা কুমারী রেশমার নজরেই আসে নি। এমন ঘটেছে আমার দুই পোস্টের দুই জায়গায়, যার একটা স্ন্যাপশট ফটো পোস্ট আকারে এই পোস্টের সাথে যুক্ত করে দিলাম, একটু কষ্ট করে দেখে নিয়েন, তাহলেই বুঝতে পারবেন, আমি যা বলেছি, সত্য কিনা ?
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
No comments:
Post a Comment