Wednesday, 22 July 2020

আমিষ নিরামিষ প্রসঙ্গে Sodkirti Das এর মন্তব্যের জবাব :


আমিষ নিরামিষ প্রসঙ্গে Sodkirti Das এর মন্তব্যের জবাব :

আমার প্রবন্ধের জবাবে আপনি যে প্রবন্ধ লিখেছেন, সবই প্রায় আপনার মনগড়া কথা। আপনার মতো বৈষ্ণবদের এই সব মনগড়া কথা বাঙ্গালি হিন্দুরা প্রায় ৪০০ বছর ধরে শুনে আসছে, তাই দয়া করে এবার শাস্ত্রসম্মত কথা বলতে শিখুন; কারণ, এখন আর সেই দিন নেই যে- আপনারা যা বলবেন, লোকজন তাই বিশ্বাস করবে।

আপনি বলেছেন- "পিয়াজ রসুন ও মুসুরী ডাল আসুরিকভাবাপন্ন লোকদের খাবার।"

-আপনার এই কথার শাস্ত্রীয় রেফারেন্স কী ?

আপনার মতো গুটিকতক বৈষ্ণব, যাদের সংখ্যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ০.০০১%ও নয়, তারা ছাড়া পৃথিবীর সমস্ত লোক রান্নায় পেঁয়াজ রসুন ব্যবহার করে এবং নানাভাবে তা খায়, সেই সাথে মসুরির ডালও খায়, তাহলে এরা কি সবাই আসুরিক ভাবসম্পন্ন অসুর ? ধরে নিলাম তারা আসুরিক ভাবাপন্ন মানুষ তথা অসুর, আর আপনারা বৈষ্ণবরা, দেবতা; তো আপনারা এ পর্যন্ত জগতের কোন কল্যানটা করেছেন ? অসুরদের থেকে ভিক্ষা নিয়ে তো আপনাদের জীবন চলে, আধুনিক বিজ্ঞানের সবকিছু তো আপনার মতে যারা অসুর, তাদেরই দান, আর যে দান করে সে দেবতা, যে ভিক্ষা করে সে নয়; বৈষ্ণব শাস্ত্রমতে বৈষ্ণবরা যে ভিক্ষুক জাতি, ভিক্ষা ছাড়া এদের কোনো কর্ম নেই, স্ত্রী নেই, সংসার নেই, সন্তান নেই, সেটা কি আপনি জানেন ? নিজে বিয়ে শাদী করে সংসার করেছেন, স্ত্রীর সাথে শুয়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, আর নিজেকে মহান বৈষ্ণব ভাবছেন, তাই না ? আপনার কর্ম অনুযায়ী ই আপনি বৈষ্ণব নন, তাই হয়তো আপনাকে ভিক্ষা করে খেতে হয় না, কিন্তু মনে রাখবেন আপনার মতে- যারা পেঁয়াজ রসুন খেয়ে অসুর, তাদের কাছেই আপনার প্রতিদিনের জীবন যাত্রার ঋণ ১০০% ।
পেঁয়াজ রসুন নিয়ে যখন আপনার এত আপত্তি, তখন আপনাকে এখনই দেখাই যে এটি কত উপকারী একটি সবজি-

আধুনিক বিজ্ঞানের মতে- পেঁয়াজে ৮৬.৮ শতাংশ পানি, ১.২ শতাংশ প্রোটিন, ১১.৬ শতাংশ শর্করা, ০.১৮ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ০.০৪ শতাংশ ফসফরাস ও ০.৭ শতাংশ লোহা থাকে। এছাড়াও রয়েছে খাদ্য আঁশ, ভিটামিন এ, বি ও সি। অল্প পরিমাণে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম , অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস কোরাসিটিন এবং সালফারও । তাই স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের অভিমত, প্রতিদিন ১০০ গ্রাম থেকে ১৫০ গ্রাম পর্যন্ত পেঁয়াজ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। একারণেই যারা কুসংস্কারবশত পেঁয়াজ খায় না, তারা এসব উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হয়।

পেঁয়াজ খেলে কী কী শারীরিক উপকার হয়, সেগুলো দেখে নিন নিচে-

১) কাঁচা পেঁয়াজ এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং হার্টকে সুস্থ রাখে, ফলে অকাল মৃত্যু ঝুঁকি কমে।

২) কাঁচা পেঁয়াজের ভিটামিন সি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং এই ভিটামিন সি ত্বক ও চুলকে ভালো রাখে।

৩) পেঁয়াজ দেহের বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৪) পেঁয়াজ রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, রক্তে শর্করার মাত্রাকে বাড়তে দেয় না। সেই সঙ্গে ইনসুলিনের ঘাটতি যাতে দেখা না দেয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে, ফলে ডায়াবেটিসের প্রকোপ বৃদ্ধির সুযোগই থাকে না।

৫) পেঁয়াজের রস এবং মধু মিশ্রণ করে খেলে জ্বর, সাধারণ ঠান্ডা, এলার্জি ইত্যাদি নিরাময় হয়।

৬) নাক থেকে রক্তপাত বন্ধ করার জন্যে কাঁচা পেয়াজ সাহায্য করে।

৭) পেঁয়াজ বিষণ্নতা কমায়, ঘুমে সাহায্য করে এবং ক্ষুধা বাড়ায়।

৮) পেঁয়াজ স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায়, ফলে একাধিক ব্রেন ডিজিজ হওয়ার আশঙ্কা কমে।

৯) পেঁয়াজের মধ্যে এ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এ্যান্টি ভাইরাল বৈশিষ্ট্য আছে যা জীবাণু প্রতিরোধ করে এবং কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং দাঁত ও মাড়ির রোগ দূর হয়।

এবার দেখা যাক রসুনের উপকারিতা কী ?

রসুনের মধ্যে আছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন A,B,C,D, ক্যালসিয়াম, কপার, পটাসিয়াম আয়রন, ফসফরাস, ও ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম ও ফাইবার । এছাড়াও আমাদের শরীরে যা দরকার মোটামুটি সবই পাওয়া যায় রসুনের মধ্যে |

ফলে মানুষের দেহে এমন কোনও রোগ বালাই নেই যার প্রতিষেধক হিসেবে রসুন কাজ করে না । রসুনের মধ্যে সকল রোগ আরোগ্য করার উপায় সৃষ্টিকারী উৎস বিদ্যমান । হার্ট সুস্থ রাখা থেকে শুরু করে ওজন কমানো পর্যন্ত রসুনের ভূমিকা রয়েছে । গবেষকদের মতে খালি পেটে রসুন খাওয়া হলে হজমের গণ্ডগোল রোধ হয় ।
রান্নায় ব্যবহার ছাড়াও রসুনে অনেক রকমের ঔষধীয় গুনাগুন আছে | প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় রসুনের ব্যবহার চলে আসছে | আসুন দেখে নিই রসুনের গুণাগুণগুলো-

১) রসুন খুব নিউট্রিসাস‚ কিন্তু এতে খুব কম ক্যালোরি থাকে।

২) রসুনের সাপ্লিমেন্ট বা কাঁচা রসুন খেলে ফ্লু এবং কমন কোল্ড তাড়াতাড়ি সেরে যায় | এর কারণ রসুন খেলে ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা অনেকটা বেড়ে যায় |

৩) রসুন রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, ফলে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ যেমন হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক এর ঝুঁকি কমে। রসুন খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে তাই ক্রনিক ডিসিজ কম হয়, ফলে কারো দীর্ঘজীবি হওয়ার সম্ভবনা অনেকেটাই বেড়ে যায় |

৪) নিয়মিত রসুন খেলে শরীরে খারাপ Cholesterol কমে যায় এবং ভালো Cholesterol এর বৃদ্ধি হয়, এতে হার্ট সুস্থ থাকে, ফলে অকালমৃত্যু রোধ হয় |

৫) রসুনে উপস্থিত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ‘সেল ড্যামেজ' এবং ‘এজিং‘ রোধ করে, ফলে মানুষ তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যায় না বা জবুথবু হয়ে পড়ে না | রসুন খাওয়ার ফলে অ্যালঝাইমারস ডিসিজ এবং ডিমেনশিয়ার মতো রোগের হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যায় |

৮) রসুনে উপস্থিত সালফার, অরগ্যান ড্যামেজ থেকে এবং শরীরকে বিষাক্ত lead থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য ক'রে শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে, যার ফলে শরীর নানা রোগব্যাধি থেকে মুক্ত থাকে |

৯) রসুন মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা ঠিক রাখে, যা যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে | এর ফলে ঋতুস্রাব এবং হাড় সংক্রান্ত সমস্যা অনেকটা কমে যায় |

১০) রসুনে অ্যান্টি ভাইরাল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টি আছে, তাই দ্রুত স্কিন ইনফেকশন সারিয়ে তোলে ।

যা হোক, বৈষ্ণব মতবাদে জীবহত্যা মহাপাপ, যদিও কোনো বৈষ্ণবের ক্ষমতা নেই জীবহত্যা না করে জীবন যাপন করার। সংসার করতে গেলে মশা, মাছি, তেলোপোকা, ইঁদুর, কীটপতঙ্গ বাধ্যতামূলক মারতেই হয়। সেই প্রাচীন কাল থেকেই প্রায় সব হিন্দু গরু পালন করে, বৈষ্ণবরাও এর বাইরে নয়, ইদানিং অনেক বৈষ্ণব- মুরগী, হাঁস, খাসি, ভেড়াও পালন করে; প্রায় সব বৈষ্ণব নামধারী হিন্দু- মুরগী, হাঁস, খাসি, ভেড়ার মাংসও খায়, আর যে ব্যক্তি যে জীবকে খায়, সেই ব্যক্তি সেই জীবের হত্যার কারক। এছাড়াও শাস্ত্র মেনে হিন্দুরা গরুর মাংস না খেলেও, পালন করা গরু তারা মুসলমানদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হয়, আর মুসলমানরা সেই গরুকে হত্যা করে তার মাংস খায়। এতে মুসলমানদের গোহত্যাজনিত যে পাপ হয়, তার অর্ধেক ভাগিদার হয় ঐ মুসলমানদের কাছে যে হিন্দু গরু বিক্রি করেছে, তার। জীবহত্যা যদি পাপ বা মহাপাপ হয়, তাহলে প্রায় সব হিন্দু শুধু অন্যান্য প্রাণী হত্যাজনিত পাপই করছে না, তারা গোহত্যাজনিত পাপেও অভিযুক্ত। শাস্ত্র বলছে অকারণে জীব হত্যা করা যাবে না বা দেবতাদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত নয়, এমন পশুর মাংস খাওয়া যাবে না। তার মানে দেবতাদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত পশুর মাংস খাওয়া যাবে, যদিও তাতে জীব হত্যা করতেই হবে। নিজেকে অহিংস রাখার জন্য না হয় জীব হত্যা না করা হলো, কিন্তু পেঁয়াজ রসুনের দোষটা কী ? এগুলো তো আর চলমান জীব নয়। অন্যান্য সবজির মতো এগুলোও সাধারণ সবজি; আদা, মরিচ, আলু খাওয়া গেলে পেঁয়াজ রসুনে সমস্যা কোথায় ? পেঁয়াজ রসুন বৈষ্ণবদের পাছা কবে কিভাবে মারলো, যে তাকে একেবারে খাবার পাত থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে ?
যা হোক, এরপর আপনি বলেছেন- "সব খাবারেই কম বেশী আমিষ থাকেই এবং বৈষ্ণবগন সব খাবার পূজার বেদীতে ভগবানকে নিবেদন করে । তারপর সেই প্রসাদ গ্রহন করেন।"

-এই কথা তো আমরাই বলি যে সব খাবারেই আমিষ থাকে, তাহলে স্পেশিয়ালি মাছ মাংসকে নিষিদ্ধ করার কারণটা কী ? জীব হত্যা করতে হয় বলে না হয় প্রাণীজ আমিষ বাদ, কিন্তু পেঁয়াজ রসুন দোষটা করলো কোথায় ? পেঁয়াজ রসুন ভগবানকে নিবেদন করলে ভগবান যদি রাগ করে থাকে, তাহলে পেঁয়াজ রসুনকে ভগবান সৃষ্টি করেছে কেনো ? পেঁয়াজ রসুন বা প্রাণীজ আমিষ ভগবানকে নিবেদন করা যাবে না, এটা আসলে বৈষ্ণবদের মনগড়া তথ্য, যার কোনো শাস্ত্রীয় ভিত্তি নেই এবং তা আপনি কখনো শাস্ত্র থেকে প্রমাণ করতে পারবেন না।
এরপর আহার্য বস্তুর শুদ্ধতা প্রসঙ্গে বেদ গীতার রেফারেন্স দিয়ে আপনি বলেছেন- আহার্য বস্তু শুদ্ধ হয় যজ্ঞ অনুশীলনের দ্বারা অর্থাৎ , ভগবানকে নিবেদন করার মাধ্যমে। এবং আহার্যদ্রব্য যদি শুদ্ধ হয় , তা হলে সেই আহার্য গ্রহণের ফলে জীবের সত্তা শুদ্ধ, সত্তা শুদ্ধ হওয়ার ফলে ভগবৎস্মৃতি শুদ্ধ হয় । সেই শুদ্ধস্মৃতির ফলে সে জড়জাগতিক সমস্ত দুঃখময় বন্ধন দশা থেকে প্রকৃত মুক্তি লাভকরে।

-বেদের যুগে যজ্ঞে কি পশু হত্যা করে তার মাংস নিবেদন করা হতো না ? বেদে এমন অনেক রেফারেন্স আছে, যেখানে পশু হত্যা করে তার মাংস নিবেদন করার কথা বলা আছে। তার মানে যজ্ঞের মাধ্যমে পশুর মাংসও শুদ্ধ হয়, আর সেই শুদ্ধ মাংস খেলে কোনো সমস্যা নেই, তাতেও জীবের সত্ত্বা শুদ্ধ হয়, সত্তা শুদ্ধ হওয়ার ফলে ভগবৎস্মৃতি শুদ্ধ হয় । সেই শুদ্ধস্মৃতির ফলে সে জড়জাগতিক সমস্ত দুঃখময় বন্ধন দশা থেকে প্রকৃত মুক্তি লাভ করে। আপনার কথাতেই তো প্রমাণ হচ্ছে যে- প্রাণীজ আমিষে কোনো সমস্যা নেই, যদি সেটা যজ্ঞের মাধ্যমে ভগবানকে নিবেদন করা হয়, তাহলে আপনি আমিষ আহারের বিরোধিতা করছেন কেনো ?

এরপর আপনি আবার সেই ভাঙ্গা ঢোল বাজিয়েছেন এই বলে যে- "মাছ মাংস পিঁয়াজ রসুন মসুর ডালের মত আমিষ বস্তু ভগবানের উদ্দেশ্যে নিবেদন যোগ্য নয় । এইরকম আমিষ খাদ্য অপবিত্র বা অমেধ্য বস্তু । যারা ভগবদ্ভক্তির প্রতি আগ্রহী নয় , সেই তামসিক শ্রেণীর মানুষদের কাছে আমিষ বস্তু প্রিয় হয়, “অমেধ্যং তামস প্রিয়ং”।

-এখানে আপনি বলেছেন, আমিষ খাদ্য অমেধ্য অর্থাৎ অপবিত্র, তাহলে দেখা যাক অমেধ্য শব্দটি গীতার যে শ্লোকে আছে, সেখানে আসলে কী বলা হয়েছে ?

গীতার সেই ১৭/১০ নং শ্লোকটি হলো-

“যাতযামং গতরসং পূতি পর্যুষিতং চ ষৎ।
উচ্ছিষ্টমপি চামেধ্যং ভোজনং তামসপ্রিয়ম্।।”

এর অর্থ- যে খাদ্য অনেক আগে রান্না করা হয়েছে, যার রস শুকিয়ে গেছে, যা দুর্গন্ধযুক্ত, বাসী, উচ্ছিষ্ট ও অপবিত্র, তা তামসিক লোকেদের প্রিয় ।

-এখানে কি বলা আছে যে- মাছ মাংস পিঁয়াজ রসুন মসুর ডালের মত আমিষ জাতীয় খাবার অপবিত্র বা অমেধ্য বস্তু ?

আপনাদের সমস্যা কি জানেন ? আপনারা শাস্ত্র ঠিকই পড়েন, কিন্তু শাস্ত্রের বাণী ঠিকমতো বোঝেন কি বোঝেন না, সেটা জানি না, কিন্তু যখন শাস্ত্রকে ব্যাখ্যা করেন, তখন নিজে যা বিশ্বাস করেন, তাকে শাস্ত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করেন বা করতে চান। গীতায় যেখানে স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে যে- যে খাদ্য অনেক আগে রান্না করা হয়েছে, যার রস শুকিয়ে গেছে, যা দুর্গন্ধযুক্ত, বাসী, উচ্ছিষ্ট ও অপবিত্র, তা তামসিক লোকেদের প্রিয় । অথচ আপনি বলছেন- মাছ মাংস পিঁয়াজ রসুন মসুর ডালের মত আমিষ হলো তামসিক শ্রেণীর মানুষদের কাছে প্রিয় , এরপর আবার পাণ্ডিত্য দেখাতে গিয়ে সংস্কৃত ভাষায় বলেছেন “অমেধ্যং তামস প্রিয়ং” ! যেন দুচারটা সংস্কৃত বললেই লোকজন ধরে নেবে যে আপনি অনেক ভালো শাস্ত্র বোঝেন, তাই আপনার কথা অভ্রান্ত ! শোনেন, সেই দিন এখন আর নেই, গত ছয় বছরে অনেক হিন্দু পাড়ায় অনেক ছেলে মেয়েকে অনলাইনের মাধ্যমেই আমি তৈরি করেছি, যারা আপনার মতো বৈষ্ণবদের কথাকে শুধু চ্যালেঞ্জ জানাতেই পারে না, তাদেরকে ধরে জ্ঞান দ্বারা থাপড়াতেও পারে।

যা হোক, এরপর আপনি- সত্ব গুনের আহার হল, বিভিন্ন শাক, সবজি, আতপ অন্ন, সাগু, ফল মুল, দুধ ঘি, ছানা- এই ধরণের কিছু বাল ছাল বকেছেন, যেগুলোর জবাব আগেই দিয়েছি, তাই সেই প্রসঙ্গ আর তুললাম না। কিন্তু এসব বলা শেষে গীতার রেফারেন্স দিয়ে আপনি বলেছেন-“ তুমি যা কিছু আহার কর সে সমস্তই আমাকে অর্পণ করে গ্রহণ কর"- (গীতা ৯/২৭ ) । ভগবান তো এখানে বলে নি যে- তুমি এটা খাও বা ওটা খাও। কিন্তু এর পর আবার এক জায়গায় বলেছেন- "তবে কলির প্রভাবে আজকের মানুষ মাছ মাংসকে প্রিয় খাদ্য বলে মনে করছে । কিন্তু তা ভগবানকে নিবেদন করার নির্দেশ কোথাও দেওয়া হয়নি ।"

-তাহলে আপনাকে এটাও বলতে হবে যে- বিভিন্ন শাক, সবজি, আতপ অন্ন, সাগু, দুধ, ঘি, ছানা- এগুলো ভগবানকে নিবেদন করতে কোথায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ? আবার এ প্রসঙ্গে গীতার 'পত্রং পুষ্পং ফলং' এর উদাহরণ কিন্তু দিতে যাবেন না; কারণ, এখানে শুধু পাতা, ফুল এবং ফলের কথা কিন্তু বলা হয়েছে, অন্য কিছুর নয়।

এরপর আপনি বলেছেন-বনের রাজা মাংসাশী বাঘ বা সিংহ হল কথার কথা, সবল নিরামিষ আহারী হাতির কাছে এরা ইঁদুর তুল্য।

- এই ইঁদুর তুল্য বাঘ সিংহই হলো কিন্তু শিকারী, আর মস্ত হাতি তার শিকার; আমিষ খাওয়ার গুন বা উপকারিতা আর নিরামিষ খাওয়ার অপকারিতার ব্যপারটা বুঝতে পারছেন ? এছাড়াও শুনে রাখুন, যারা নিরামিষভোজী প্রাণী, তারাই অন্যের বশ্যতা স্বীকার করে বা করতে বাধ্য হয়, যেকারণে হাতি বিশাল দেহ আর প্রচুর শক্তি নিয়েও ক্ষুদ্র মানুষের পোষ মেনে দাসে পরিণত হয়, কিন্তু আমিষখেকো বাঘ সিংহের শরীর খুব বড় নয়, আবার শক্তিতেও তারা যে প্রাণীকূলে শ্রেষ্ঠ, সেটাও নয়, তারপরও কোনো বাঘ সিংহকে মানুষের পোষ মেনে মানুষের দাস হতে দেখেছেন ? আজ নিরামিষ খাওয়া নিয়ে যতই গর্ব করেন, মনে রাখবেন, এই নিরামিষই একদিন আপনাদেরকে অন্যের দাস বানাবে।

এছাড়াও আপনি বললেন না, মাংসাষী বাঘ সিংহ বনের রাজা, এটা হলো কথার কথা, তেমনি আপনি যে বলেছেন- মাছ - মাংসভোজী বাঙ্গালীদের তুলনায় নিরামিষভোজী মারাঠী , গুজরাটী , রাজস্থানীরা অনেক বেশী সবল ও স্বাস্থ্যবান- এটাও আসলে কথার কথা। নিরামিষ খেয়েই মারাঠী, গুজরাটি, রাজস্থানীরা যদি অনেক বেশী সবল ও স্বাস্থ্যবান হতো অর্থাৎ এই থিয়োরি যদি সত্য হতো, তাহলে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যারা মাছ মাংস খায় না, তাদেরকে বাধ্যতামূলক প্রতিদিন ৪টি করে ডিম খেতে সরকার নির্দেশ দিতো না।

এরপর যে বলেছেন- অতএব শরীরের পুষ্টি ও সবলতা মাছ মাংস খাওয়ার উপর নির্ভর করে না ।

-এ প্রসঙ্গে বলছি, শরীরের পুষ্টি ও সবলতা পুরোপুরি মাছ মাংসের উপর নির্ভর না করলেও যুদ্ধ করার শক্তি এবং আক্রমন প্রতিহত করার মানসিকতা কেবল মাছ মাংসের উপরই নির্ভর করে, আর এটাতো চিরন্তন সত্য যে, যারা আক্রমন করে না বা সেই মানসিকতা রাখে না, তারাই অন্যদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। সুতরাং যারা নিরামিষ খাবে, হয় তারা অন্যদের আক্রমনে বিলুপ্ত হবে, অথবা যৌনশক্তির অভাবে সন্তানের জন্মহার কমে গিয়ে বিলুপ্ত হবে, তার মানে এদের বিলুপ্তি নিশ্চিত।

এরপর প্রবন্ধের একজায়গায় আপনি বলেছেন- মানুষ, রক্ত মাংস যুক্ত অমেধ্য বস্তুকে আহার করে জীবনের মাঝামাঝি থেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ঘর আর হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতেই থাকে।

-আপনার এই কথা প্রযোজ্য মুসলমানদের ক্ষেত্রে, যারা খাসি ও গরুর মাংসের মতো ক্ষতিকর মাংস পেলেই খায় বা পরবে খায়। লাল মাংসের ক্ষতিকর দিকের কারণেই মুসলমানরা ৩৫/৪০ বছর বয়সের পর থেকেই নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ঘর আর হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে, আর অকালে মরতে থাকে। কিন্তু হিন্দুরা, যারা শখের বসে সপ্তাহে একদিন বা মাসে একদিন বা মাঝে মাঝে হাঁস মুরগী কবুতর জাতীয় পাখির মাংস খায়, তারা কোনো শারীরিক সমস্যায় পড়বে না, বরং তারা শারীরিক উপকারিতা ই পাবে। কিন্তু একদিন খাক বা একবেলা খাক, কেউ যদি খাসির লাল মাংস খায়, সে অবশ্যই একটু হলেও নিজের ক্ষতি করবে; কারণ, লাল মাংস শরীরের জন্য সর্বদায় ক্ষতিকর। যুবক বয়সে এটার ক্ষতিকর দিক শরীর সামলে উঠতে পারলেও বা জোয়ারের কারণে নদীর খানাখন্দ চোখে না পড়লেও, ৪৫/৫০ এর পর শরীর এই ক্ষতি কিছুতেই সহ্য করতে পারে না, তাই ঐ বয়সের পর লাল মাংস সর্বদায় পরিত্যাজ্য। যেকারণে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষেরা ৫০ এর পর লাল মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছে এবং নিরামিষের দিকে ঝুঁকছে, যেটা ঐ বয়সের জন্য সঠিক। কিন্তু যুবক বয়সে নিরামিষ খাওয়া বা বাল্যকাল থেকেই নিরামিষ খাওয়া এককথায় বংশসহ আত্মহত্যার শামিল; কেননা, আজ হোক বা কাল হোক ঐ বংশের বিলুপ্তি ঘটবেই, এটা ঘটবে সন্তান জন্মদানের অক্ষমতায় বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন শিশুর মৃত্যু হয়ে বা চৈতন্যদেবের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐ বাড়ির ছেলের সংসার ত্যাগের মাধ্যমে, ঘটনা যেদিক থেকেই ঘটুক নিরামিষভোজীর পরিবারের বংশের বিলুপ্তি অবশ্যম্ভাবী।

নিরামিষভোজী ব্যক্তিকে আপাতদৃষ্টিতে রোগব্যধি মুক্ত মনে হলেও ৪০ বছরের পর এদের অবস্থা ভয়াবহ হয়ে উঠে। ৪০ এর পর এদের না থাকে উদ্যম, না থাকে সাহস, আর না থাকে শক্তি, এরা তখন জবুথবু মাংসপিণ্ড মাত্র। পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র এই ধরণের মানুষদের দেখা যায়, যাদেরকে দেখে জবুথবু মাংসপিণ্ড ছাড়া আমার অন্য কিছুই মনে হয় নি। এই ধরণের লোকদের নিয়ে কি কোনো জাতি সামনে এগোতে পারে ?

নিরামিষ খাওয়ার প্র্যাকটিক্যাল ক্ষতিকর দিক কী, এবার সে সম্পর্কে দুটি ঘটনা বলছি-

আমার মা খুব ধর্মপ্রাণ মানুষ, আমার বাল্যকালে তিনি যখন এক বৈষ্ণব গুরুর কাছে দীক্ষা নেন, তখন থেকেই প্রথমে বৃহস্পতি ও রবিবার তিনি মাছ খাওয়া ছাড়েন, এর পর আস্তে আস্তে সব বারেই তিনি মাছ খাওয়া ছাড়েন এবং এক পর্যায়ে নিরঙ্কুশ নিরামিষে চলে যান। অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে বাড়িতে মাছ মাংস রান্না করলেও তিনি সেটা সহ্য করতে পারেন না, এ সম্পর্কে নানা বিরূপ মন্তব্য করতে থাকেন, এটা নিয়ে মাঝে মাঝেই আমাদের সাথে তার মনোমালিন্য, কথা কাটাকাটি হতে থাকে। এভাবে বছর বিশেক চলার পর তিনি ভয়াবহ রোগের কবলে পড়েন, পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা যায় তার যক্ষা হয়েছে এবং এর ফলে ঘাড়ের একটি হাড় প্রায় সম্পূর্ণ ক্ষয়ে গেছে, ঘাড় নিয়ে তার প্রচুর ব্যথা, ঘাড়ের নার্ভ সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ায় এক পর্যায়ে তিনি সম্পূর্ণ চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়েন।।

এই পরিস্থিতিতে আমার মায়ের চিকিৎসা করানো হয় ঢাকার নিউরোসায়েন্স হসপিটালে, ডাক্তাররা মায়ের নিরামিষ খাদ্যাভ্যাসের কথা জানতে পারে এবং তাঁকে কঠোরভাবে নিষেধ করে দেন নিরামিষ না খেতে, মাকে সুস্থ করে তোলা এবং বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে আমার ছোটবোন জোর করে মাকে মাছ খাওয়ায়, বেঁচে থাকা এবং সুস্থ থাকার লোভে মা ও মাছ খেতে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে আমাদের প্রায় ১ লক্ষ টাকা খরচ করে মা সুস্থ হয়ে উঠে।

কিন্তু ঐ যে মাথার উপর বসে আছে চৈতন্যদেব এবং তার নিরামিষ থিয়োরি। এর ফলে কয়েক মাস যেতে না যেতে আমার মা আবার নিরামিষ খেতে শুরু করে, জীবনের শেষ বছরগুলোতে মা যে আবার আমাদেরকে ভোগাবে, এ ব্যাপারে আমার কোনোই সন্দেহ নেই।

আমার গ্রাম সম্পর্কীয় আরেক কাকা, মাত্র বছর দশেক হয়েছিলো নিরামিষ খাচ্ছে। এর মধ্যেই তার যক্ষা ধরা পড়ে। চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ করে তুলে তার ছেলেরা। এই কাকা মাঝে মাঝে আমার কাছে আসে ধর্ম বিষয়ে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করতে, একদিন সে বললো, আমার কেনো যক্ষা হবে, সেটাই তো বুঝলাম না। আমি বললাম- নিরামিষ কতদিন হলো খাচ্ছেন ? বললো- ১০ বছর। আমি বললাম- এটাই কারণ।

আমার আরেক গ্রাম সম্পর্কীয় কাকাতো ভাই এবং তার স্ত্রী, বহু বছর ধরে নিরঙ্কুশ নিরামিষ খায়, তার নিরামিষ ভাবনা এমনই প্রখর যে, পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আমিষ খায় এবং তা বাড়িতে রান্না করে ব'লে, সে নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্য বাড়িতে গিয়ে ভাড়া থাকতে চায়। আমার এই কাকাতো ভাইয়ের দুই দুইটি পুত্র সন্তান এক বছর বয়সের মধ্যে রোগে ভুগে মারা গেছে; কারণ, তারা ছিলো দুর্বল ডিম্বানু ও শুক্রানুর তৈরি, ফলে তাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ছিলো, দেহে কোনো এ্যান্টিবায়োটিকই কাজ করে নি।

সুতরাং কাদেরকে নিয়ে হসপিটালে বেশি দৌড়াদৌড়ি করতে হয়, সেটা সম্ভবত আর বুঝিয়ে বলতে হবে না।
সুস্থ থাকার জন্য মানুষকে আমিষ কমিয়ে নিরামিষ বেশি খেতে হবে পঞ্চাশের পর, আবার সুস্থ থাকার জন্য মানুষকে নিরামিষের চেয়ে বেশি আমিষ খেতে হবে জন্ম থেকে পঞ্চাশ বছর বয়সের আগে।

প্রবন্ধের এক স্থানে আপনি বলেছেন- "প্রকৃতিতে আমরা দুই ধরনের জীব দেখতে পাই।মাংশাসী ও শাকাহারী।মাংশাসীরা যেমন বাঘ,সিংহ শাক-সবজি খায় না, তেমনই হাতি,গন্ডার,ঘোড়া,হরিণ -এরা অন্য প্রাণীর মাংস খায় না, শুধু শাক-সবজি ফলমূল খায়।বৈজ্ঞানিকভাবে যদি আমরা বিচার করি তাহলে দেখি শাকাহারী প্রাণীদের সাথে মানুষের মিল বেশি।"

-আপনি এই কথা কেনো বললেন যে শাকাহারী প্রাণীদের সাথে মানুষের মিল বেশি ? কেনো বলতে পারলেন না যে মানুষ সম্পূর্ণ শাকাহারি প্রাণী ?

পৃথিবীতে মানুষের উদ্ভব এবং বিবর্তনের ইতিহাস জানেন ? মানুষ যখন জঙ্গলে বাস করতো, তখন মাঝে মাঝে জঙ্গলের হিংস্র প্রাণীদের সাথে মানুষের লড়াই হতো, এই লড়াইয়ে যে জিততো, সে পরাজিতদের মাংস খেতো। এই সূত্রে আপনার পূর্বপুরুষও শুধু মাছ নয় বা খাসি ভেড়া নয়, বাঘ সিংহের মাংসও খেয়েছে। কিন্তু মানুষ যখন কৃষিজীবি হয়েছে, তখন বাঘ সিংহের সাথে লড়াইটা কমে গিয়েছে, ফলে মানুষের মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমে গিয়েছে, আর একারণেই শাকাহারি বৈশিষ্ট্য মানুষের মধ্যে গ্রো করেছে। এখন বুঝতে পারছেন তো যে মানুষের মধ্যে শাকাহারি বৈশিষ্ট্য কেনো বেশি ? কেনো মানুষ সম্পূর্ণ শাকাহারি প্রাণীর মতো নয় ?

প্রবন্ধের শেষের দিকে আপনি নিজেই প্রশ্ন করেছেন- #কেন ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণ ও মহর্ষি মনু মাছ মাংস খেতে নিষেধ করেছেন ?

- শ্রীকৃষ্ণ যে মাছ মাংস খেতে নিষেধ করেছেন, এর শাস্ত্রীয় প্রমাণ আপনি দিতে পারবেন ? যদি না পারেন তাহলে এসব বাকোয়াজ কথা বার্তা বলা বন্ধ করুন, না হলে শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার করার জন্য হাতের কাছে পেলে কিন্তু ছোট বড় মানবো না।

যা হোক, এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি নিজেই বলেছেন- কারন মাছ - মাংস রজ ও তমোগুণের সঞ্চারক অখাদ্য।
গীতা দ্বারা প্রমাণ করতে পারবেন যে মাছ মাংস রজ ও তমোগুনের সঞ্চারক খাদ্য ? যদি না পারেন, তাহলে আগের অনুচ্ছেদে যা বললাম, সেটা আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।

আপনি আরো বলেছেন- "মানুষ আজ উগ্র প্রকৃতির হয়েছে , বিশ্বযুদ্ধ বাধাতে চাইছে , সর্বত্র উচ্ছৃঙ্খলতা, মহামারী চলছে । এর মূলেও আমিষ বস্তুর প্রতিক্রিয়া অনস্বীকার্য।"

-আর যারা এসব করছে তারা মুসলমান, যে মুসলমানদের দ্বারা হিন্দুরা প্রায় এক হাজার বছর ধরে নির্যাতিত নিপীড়িত, এই মুসলমানদেরকে ঠেকানোর জন্যই হিন্দুদেরকে তলোয়ার ধরতে হবে, যেটা নিরামিষ খেয়ে হবে না, তার জন্য প্রাণীজ আমিষ খেতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে সবার জন্য নিরামিষ খাবার চালু করার পেছনে আপনার উদ্দেশ্য কী, হিন্দুদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা, না তাদেরকে বিলুপ্ত করা ?

এরপর আপনি বলেছেন- "পশু - পাখি মাছ ব্যাঙ ও কীট - পতঙ্গের রক্তমাংস হাড় — এগুলি শাস্ত্রে অমেধ্য বা অপবিত্র বলা হয়েছে ।"

-এতই যদি শাস্ত্র সম্পর্কে আপনার জ্ঞান, তাহলে এই কথা কোথায় বলা হয়েছে, তার রেফারেন্স দেন নি কেনো ? এতে কি বোঝা যায় না যে- আপনার সব কথা, আপনার মনগড়া ?

শেষে বলেছেন- "শ্ৰীমনুসংহিতার নির্দেশ অনুসারে , যদি কেউ এই জন্মে মাছ মাংস খেতে চায়, তবে জন্মান্তর চক্রে যখন সে অনুরূপ একটি দেহ লাভ করবে , তখন অনুরূপভাবেই নিজের রক্ত মাংস হাড় হৃৎপিণ্ডটাকে অপরকে খাদ্যরূপে নিবেদন করতে বাধ্য হতে হবে।"

আপনি কি মনে করেছেন, কোনো আত্মাকে যখন পৃথিবীতে সৃষ্টি করা হয়, তখন তাকে প্রথমবারেই মানুষরূপে সৃষ্টি করা হয় ? ৮০ লক্ষবার বিভিন্ন উদ্ভিদ, কীটপতঙ্গ, পশু পাখি রূপে জন্ম নেওয়ার পর আত্মা মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে জন্ম নেয়। তার মানে মানুষ হিসেবে যে আত্মা পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছে, সে কিন্তু পৃথিবীর প্রায় সকল প্রাণীর সুখ দুঃখকে ভোগ করেই এসেছে, এখন অন্যান্য প্রাণীরূপে সে যাদের কারণে দুঃখ কষ্ট ভোগ করেছে, তারা কি তার কারণে আবার দুঃখ কষ্ট ভোগ করবে না ? এমন না হলে কর্মের ভিত্তিতে ফল, শাস্ত্রের সেই ব্যাখ্যা কি মিথ্যা হয়ে যাবে না ?
আপনি মনুসংহিতার রেফারেন্স দিয়েছেন না, এবার মনুসংহিতা থেকে আপনাকেও কিছু রেফারেন্স দিচ্ছি এবং তা মাংস খাওয়ার পক্ষে-

"জগতে যা কিছু পদার্থ আছে, তা প্রাণীই হোক বা উদ্ভিদ হোক, সে সবই ব্রহ্মা জীবের অন্ন বলে নির্দেশ দিয়েছেন।

অতএব প্রাণধারণের জন্য স্থাবর জঙ্গম সবকিছুই জীবগণের ভোজ্য।"-(মনুসংহিতা, ৫/২৮)

"হস্তবিশিষ্ট মানুষেরা হস্তবিহীন মাছ প্রভূতি আহার করে।"-(মনুসংহিতা, ৫/২৯)

"যজ্ঞ করে মাংস ভোজন করবে কারণ যজ্ঞের হুতাবশিষ্ট যে মাংস তার ভোজনকে দৈব প্রবৃত্তি বলে।" -(মনুসংহিতা, ৫/৩১)

"যে মানুষ শ্রাদ্ধে দেবলোকে ও পিতৃলোকে যথাবিধি মাংস নিবেদন করে ঐ মাংস ভোজন না করে, সে মৃত্যুর পর একুশ পশুযোনি প্রাপ্ত হয়।"-(মনুসংহিতা, ৫/৩৫)

"শাশ্বত বৈদিক বিধি আশ্রয় করে মন্ত্রসংস্কৃত পশুর মাংস খাওয়ায় কোনো বাধা নেই।"-(মনুসংহিতা, ৫/৩৬)
"যজ্ঞের অঙ্গস্বরূপ যে পশুবধ, তা সিদ্ধ করার জন্য প্রজাপতি ব্রহ্মা নিজেই পশুসমূহ সৃষ্টি করেছেন, আর যজ্ঞ এই সমগ্র জগতের ভূতি বা পুষ্টির সাধক। সেই কারণে যজ্ঞে যে পশুবধ, তা বধই নয়, এই রকম পশুবধে কোনো পাপ নেই।"-(মনুসংহিতা, ৫/৩৯)

"এই স্থাবর জঙ্গমাত্মক জগতে বেদবিহিত যে পশু হিংসা নিয়ত আছে অর্থাৎ অনাদিকাল থেকে চলে আসছে, তাকে অহিংসা বলেই জানতে হবে।"-(মনুসংহিতা, ৫/৪৪)

এছাড়াও নিজের দেহকে অন্যের খাদ্য হতে দিতে আপনার এত আপত্তি কিসের ? মুনি ঋষিদের দেওয়া বিধানকে বাদ দিয়ে আপনারা বৈষ্ণবরাই তো মৃত দেহকে আগুনে পোড়ানোর পরিবর্তে মাটিতে পুঁতে রাখার বিধান তৈরি করেছেন। মাটিতে পুঁতে রাখলে লাশ কি পোকা মাকড়ে খায় না ? পরের জন্মের কথা বাদ দেন, আপনার দেহ এই জন্মেই যে পোকা মাকড়ে খাবে, সেই বিষয়ে আগে চিন্তা করেন।

শেষে আপনার উদ্দেশ্যে শুধু এই কথাটিই বলছি- আমি যা বলি, সেটা শাস্ত্র থেকেই বলি এবং সেটা যে শাস্ত্র সম্মত তা প্রমাণ করার ক্ষমতা আমার আছে, বৈষ্ণবদের মতো আমি মনগড়া কথা ব'লে তা শাস্ত্রের কথা বলে চালাই না।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment