Tuesday, 2 June 2020

নির্জলা একাদশী কী ?


নির্জলা একাদশী কী ?

নির্জলা একাদশীর অপর নাম পাণ্ডব বা পাণ্ডবা একাদশীর উপবাস। পাণ্ডব নাম দেখেই বুঝতে পারছেন এর সাথে পাণ্ডবদের কোনো কাহিনী জড়িত আছে। নির্জলা একাদশী সেই সমস্ত লোকদের জন্য যারা পাণ্ডু পুত্র ভীমের মতো না খেয়ে একবেলাও থাকতে পারে না। তাই তাদের জন্য সারা বছরের সমস্ত একাদশীতে ছাড় থাকলেও এই নির্জলা একাদশীতে নেই, আর এজন্যই এটা এত কঠোর এবং কঠিন, জল পর্যন্ত স্পর্শ করা নিষেধ, এক কথায় সারা বছরের কষ্ট একদিনে।

পুরাণের এই গল্পটা এরকম : একদিন যুধিষ্ঠির, শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞেস করলেন একাদশী মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানার জন্য। শ্রীকৃষ্ণ মহর্ষি ব্যাসদেবকে এই তথ্যটি জানানোর জন্য বললেন। ব্যাসদেব বললেন, উভয় পক্ষের অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষের ও শুক্লপক্ষের একাদশী দিনে ভোজন না করে উপবাস ব্রত পালন করবে। দ্বাদশীর দিনে স্নান করে শুচিশুদ্ধ হয়ে নিত্যকৃত্য সমাপনের পর শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করে খা্দ্য গ্রহণ করবে। এরপর সাধুসজ্জন ও দরিদ্রদের ভোজন করাবে। যে সকল ব্যক্তি নরকে যেতে চায় না, তাদের সারা জীবন এই একাদশী ব্রত পালন করা উচিত। পাপকর্মে রত ও ধর্মহীন ব্যক্তিরাও যদি এই একাদশী দিনে ভোজন না করে, তবে তারা নরকযন্ত্রণা থেকে রক্ষা পায়।

মহর্ষি ব্যাসদেবের মুখে এসব কথা শুনে গদাধর ভীম ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো, হে মহর্ষি- মাতা কুন্তী, দ্রৌপদী, ভ্রাতা যুধিষ্ঠির, অর্জুন, নকূল ও সহদেব এরা কেউই একাদশীর দিন ভোজন করে না। আমাকেও অন্ন গ্রহণ করতে নিষেধ করে। কিন্তু দু:সহ ক্ষুধা যন্ত্রণার জন্য আমি উপবাস থাকতে পারি না। ভীমের এই কথা শুনে ব্যাসদেব বললেন, যদি দিব্যধাম লাভে তোমার একান্ত ইচ্ছা থাকে, তবে উভয় পক্ষের একাদশীতে ভোজন করো না। উত্তরে ভীম বললো, আমার নিবেদন এই যে, উপবাস তো দূরের কথা, দিনে একবেলা ভোজন না করে থাকাও আমার পক্ষে অসম্ভব। তাই প্রতিটি একাদশী পালনে আমি একেবারেই অপারগ। হে মহর্ষি, বছরে একটি মাত্র একাদশী পালন করে যাতে আমি দিব্যধাম লাভ করতে পারি এরকম কোন একাদশীর কথা আমাকে বলুন। তখন ব্যাসদেব বললেন, জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে জলপান পর্যন্ত না করে সম্পূর্ণ উপবাস থাকবে, এতে অনায়াসে সারা বছরের একাদশীর ফল লাভ হবে। বছরের অন্যান্য একাদশী পালনের সময় অজান্তে যদি কখনও ব্রতভঙ্গ হয়ে যায, তা হলে এই একটি মাত্র একাদশী পালনে সেই সব দোষ দূর হয়। এরূপ একাদশী ব্রত পালনে যে প্রকার পুণ্য সঞ্চিত হয়, এখন তা শ্রবণ কর। সারা বছরের সমস্ত একাদশীর ফলই এই একটি মাত্র ব্রত উপবাসে লাভ করা যায়। ব্যাসদেব আরও বললেন, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাকে বলেছেন,

‘বৈদিক ও লৌকিক সমস্ত ধর্ম পরিত্যাগ করে যারা একমাত্র আমার শরণাপন্ন হয়ে এই নির্জলা একাদশী ব্রত পালন করে তারা সর্বপাপ মুক্ত হবে।’

এই একাদশী ব্রত ধনধান্য ও পুন্যদায়িনী। যমদূতগণ এই ব্রত পালনকারীকে মৃত্যুর পরও স্পর্শ করতে পারে না। পক্ষান্তরে বিষ্ণুদূতগণ তাঁকে বিষ্ণুলোকে নিয়ে যান। ভীম ঐদিন থেকে নির্জলা একাদশী পালন করতে থাকায় এই একাদশী ‘পান্ডবা নির্জলা বা ভীমসেনী একাদশী’ নামে প্রসিদ্ধ হয়েছে। এই নির্জলা একাদশীতে পবিত্র তীর্থে স্নান, দান, জপ, কীর্তন ইত্যাদি যা কিছু মানুষ করে তা অক্ষয় হয়ে যায়। যে ব্যক্তি ভক্তিসহকারে এই একাদশী মাহাত্ম পাঠ বা শ্রবণ করেন তাঁরও স্থান হয় বৈকুন্ঠধামে ।

এই নির্জলা একাদশীকে জৈষ্ঠমাসের শুক্লপক্ষের একাদশী বলা হলেও, তিথির ফেরে এটি ২ বছর পর একবার আষাঢ় মাসে গিয়ে পড়ে, যেমন আশ্বিন মাসের দুর্গাপুজা কোনো কোনো বছর কার্তিক মাসে গিয়ে হয়।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ

No comments:

Post a Comment