রামচন্দ্রের শম্বুক হত্যা : প্রকৃত সত্যটা কী ?
রামচন্দ্র, তপস্যা করার অপরাধে শম্বুক নামে এক শুদ্রকে হত্যা করেছে, এমন কথা বলা আছে রামায়ণের উত্তরকাণ্ডের ২৪ নং উপাখ্যানে, ৭২ থেকে ৭৬ সর্গে।
এই উপাখ্যানটি রাজশেখর বসু তার বাল্মীকি রামায়ণে অনুবাদ করেছেন এভাবে-
"একদিন এক বৃদ্ধ গ্রামবাসী ব্রাহ্মণ তাঁর কিশোর বয়স্ক মৃত পুত্রকে নিয়ে রাজদ্বারের এসে সরোদনে বলতে লাগলেন, পূর্বজন্মের কোন পাপের ফলে আমি এই একমাত্র পুত্রকে মৃত দেখছি ? পুত্র, তুমি যৌবন লাভের পূর্বেই গত হয়েছ, তোমার জননী আর আমিও তোমার শোকে শীঘ্র প্রাণত্যাগ করব। আমি কখনো মিথ্যা বলিনি, হিংসা করি নি। অন্য কোন পাপও করি নি। কোন্ দুষ্কৃতের ফলে এই বালক পিতৃকার্য না করে যমলোকে গেল ? নিশ্চয় রামের কোনও মহৎ পাপ আছে তাই তার রাজ্যে এই বালকের অকালমৃত্যু হল। অন্য রাজ্যে এমন ঘটে না। মহারাজ, তুমি আমার বালককে জীবিত কর, নতুবা আমি পত্নীর সঙ্গে রাজদ্বারে মরব। ব্রহ্মহত্যার পাপভাগী হয়ে তুমি সুখে থাক ভ্রাতাদের সহিত দীর্ঘায়ু লাভ কর। রাজার দোষেই প্রজারা বিপদগ্রস্ত হয়, রাজা অধর্মচারী হলে প্রজা মরে। অথবা নগর ও গ্রামের লোক দুষ্কার্য করছে, রাজা তাদের শাসন করেন না, তারই এই ফল। রাজার দোষেই এই বালকের মৃত্যু হয়েছে।
ব্রা্হ্মণের করুণ বিলাপ শুনে রাম দুখার্ত হয়ে বশিষ্ঠাদি ঋষি ও ভ্রাতৃগণকে ডেকে আনালেন। মার্কণ্ডেয় কাশ্যপ গৌতম নারদ প্রভূতিও এলেন। রাম বালকের অকালমৃত্যুর কারণ জিজ্ঞাসা করলে নারদ বললেন, সত্যযুগে কেবল ব্রাহ্মণরাই তপস্যা করতেন, তখন অকালমৃত্যু ছিল না। ত্রেতাযুগে ক্ষত্রিয়রাও তপস্যায় প্রবৃত্ত হলেন, ব্রা্হ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের মধ্যে বিশিষ্টতা রইল না, সেজন্য তখন চাতুর্বণ্য স্থাপিত হল। এই সময়ে অধর্মের একপাদ পৃথিবীতে এল। ত্রেতাযুগে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের শুশ্রুষা করাই বৈশ্য শুদ্রের বিশেষত শুদ্রের কর্ম হল। তারপর অধর্মের দ্বিতীয় পাদ ও দ্বাপর যুগ এল, বৈশ্যরাও তপস্যা করতে লাগল। কিন্তু শুদ্রের তখন সে অধিকার হল না। হীনবর্ণ শুদ্রেরা ভবিষ্যতে কলিযুগে ঘোর তপস্যা করবে, কিন্তু দ্বাপরে তাদের পক্ষে তপস্যা পরম অধর্ম। মহারাজ, তোমার রাজ্যে কোন দুর্বুদ্ধি শুদ্র তপস্যা করছে, সেই পাপেই এই বালক মরেছে। তুমি সর্বত্র অনুসন্ধান কর।"
… এরপর রাম সেই শুদ্রকে খুঁজতে খুঁজতে রাজ্যের দক্ষিন দিকে গিয়ে দেখলেন,
"শৈবাল পর্বতের উত্তরে এক বৃহৎ সরোবরের তীরে অধোমুখে লম্ববান হয়ে একজনা তপস্বী কঠোর তপস্যা করছেন। রাম তাকে বললেন, সুব্রত, তুমি ধন্য। আমি দাশরথি রাম, কৌতূহল বশে প্রশ্ন করছি- কেন এই দুষ্কর তপস্যা করছ ? তোমার অভীষ্ট কি স্বর্গলাভ না আর কিছু ? তুমি কোন্ জাতি, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, না শুদ্র, সত্য বল।
তপস্বী অধোমস্তকে থেকেই উত্তর দিলেন, আমি সশরীরে দেবত্ব লাভের নিমিত্তে তপস্যা করছি। রাম, আমি দেবলোক জয় করতে চাই। মিথ্যা বলবো না, আমি জাতিতে শুদ্র, নাম শম্বুক। রাম তখনই খড়গ কোষমুক্ত করে শুদ্র তপস্বীর শিরশ্ছেদ করলেন। আকাশ খেকে পুষ্পবৃষ্টি হল, দেবগণ বললেন, রাম, তুমি আমাদের প্রিয়কার্য করেছ, তোমার জন্যই এই শুদ্র স্বর্গাধিকারী হল না'। তুমি অভীষ্ট বর প্রার্থনা কর। রাম ইন্দ্রকে বললেন, সেই ব্রাহ্মণপুত্রকে জীবনদান করুন। দেবতারা বললেন, কাকুৎস্থ, নিশ্চিত হও, আজ সেই বালক জীবনলাভ করে তার আত্মীয়দের সাথে মিলিত হয়েছে। এই শুদ্রের নিধনের সঙ্গে সঙ্গেই সে জীবনলাভ করেছে।"
এই ছিলো রাজশেখর বসু কর্তৃক অনুবাদিত বাল্মীকি রামায়ণের রামচন্দ্র কর্তৃক তথাকথিত শুদ্র শম্বুক হত্যার ঘটনার বর্ণনা। এবার ঘটনার বিশ্লেষণে ঢোকা যাক-
ঘটনার শুরুতেই আমরা দেখতে পাই, এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ, তার ছেলের অকাল মৃত্যুর জন্য রামকে দায়ী করছে; কারণ, রাম তার রাজ্যের রাজা।
-আচ্ছা, পৃথিবীর কোনো কালে কি মানুষের আয়ূ নির্দিষ্ট ছিলো যে, জন্ম হলেই যেকোনো মানুষ একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকবে ?
না, এমনটা কখনোই ছিলো না এবং এমনটা কখনোই কোনো গ্রন্থে দেখা যায় নি। সনাতন ধর্মীয় কোনো গ্রন্থে এরকম উদাহরণ আর দ্বিতীয়টি নেই। সুতরাং ঐ বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের এই বিশ্বাস সত্য নয় যে রামের কারণেই তার ছেলের অকাল মৃত্যু হয়েছে, যেহেতু পৃধিবীতে কোনো মানুষের আয়ু নির্দিষ্ট নয় এবং কে কতদিন বেঁচে থাকবে, নির্দিষ্ট করে কেউ কখনো বলতে পারে না।
এরপর আমরা দেখতে পাই, ব্রাহ্মণের করুণ বিলাপ শুনে রাম বশিষ্ঠাদি ঋষি ও ভ্রাতৃগণকে ডেকে আনালেন। মার্কণ্ডেয় কাশ্যপ গৌতম নারদ প্রভূতিও এলেন।
-বশিষ্ঠাদি ঋষি রামের সভাসদ হতে পারেন, তাদেরকে ডাকলেই রাম তাদেরকে পেতে পারেন, কিন্তু নারদ কি রামের সভাসদ যে বশিষ্ঠাদি ঋষি ও রামের ভাইদের সাথে সাথে তিনিও রামের রাজসভায় হাজির থাকবেন ? নারদ, ব্রহ্মার মানসপুত্র, সৃষ্টির শুরুতে ব্রহ্মা নিজেই নারদকে বলেছিলেন প্রজা সৃস্টি করতে, কিন্তু প্রজা সৃষ্টি করলে তাকে এক জায়গায় স্থিতু হতে হবে বলে নারদ প্রজা সৃষ্টিতে রাজী হন নি, তারপর থেকেই নারদ সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করতে সব সময় স্বর্গ থেকে মর্ত্যে ঘুরে বেড়ান এবং নারদ সব সময় নিজের ইচ্ছাতেই সব জায়গায় যান। সেই নারদ, রামের রাজসভায় সভাসদ হয়ে বসে থাকবেন, বিষয়টি কেমন বেমানান বা অযৌক্তিক মনে হচ্ছে না ?
এরপর রাম বালকের অকালমৃত্যুর কারণ জিজ্ঞাসা করলে নারদ বললেন, সত্যযুগে কেবল ব্রাহ্মণরাই তপস্যা করতেন, তখন অকালমৃত্যু ছিল না। ত্রেতাযুগে ক্ষত্রিয়রাও তপস্যার প্রবৃত্ত হলেন, ব্রা্হ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের মধ্যে বিশিষ্টতা রইল না, সেজন্য তখন চাতুর্বণ্য স্থাপিত হল।
-সত্যযুগে কেবল ব্রাহ্মণরাই তপস্যা করতো এবং অকাল মৃত্যু ছিলো না, এটা অন্য কোনো সনাতনী ধর্মগ্রন্থে পাওয়া যায় না, সুতরাং এই প্রসঙ্গটিও প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়; আর ত্রেতাযুগে যদি চাতুর্বণ্য স্থাপিত হয়, তাহলে সত্যযুগে ব্রাহ্মণের কথা আসছে কিভাবে ? যতক্ষণ চতুর্বর্ণের ভাগ না হয়েছে, ততক্ষণ তো ব্রা্হ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র বলে কিছু থাকারই কথা নয়।
উপরের এই আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, এই উপাখ্যানটি আসলে একটি মিথ্যা উপাখ্যান, যার উদ্দেশ্য হলো রামের মাধ্যমে শুদ্রদেরকে শুধু হেয় নয়, ধ্বংস করা। কোনো শুদ্র বিদ্বেষী ব্রাহ্মণ যে এই মিথ্যা উপাখ্যানটি রামায়নে জুড়ে দিয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমার এই দাবীর প্রমাণ দিচ্ছি নিচে-
আমাদের সমাজে প্রচলিত রামের জীবন কাহিনীতে, যুদ্ধ থেকে ফেরার পর বেশ কিছু অসঙ্গতি আছে, যেগুলো নিয়ে মানুষ নানারকম প্রশ্ন তুলতে পারে। যেমন- সীতার চরিত্র নিষ্কলুষ কিনা, তার জন্য একবার সীতার অগ্নিপরীক্ষা নিয়ে রাম তাকে গ্রহণ করে। এরপর সীতা, গর্ভবতী হওয়ার পর প্রজাদের মধ্যে আবার সীতার চরিত্রের নিষ্কলুষতা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়, ফলে রাম, প্রজাদের মন রক্ষার্থে সীতাকে বনবাস দেয়। রামের চরিত্রের সঙ্গে এই বিষয়গুলো ঠিক যায় না। সীতার যখন অগ্নিপরীক্ষা হয়েছে, তখন সেটা প্রকাশ্যে দিবালোকে হয়েছে, অনেক লোক সেখানে উপস্থিত ছিলো, তারপর আবার প্রজাদের মনে সীতা, যিনি তাদের মহারাণী, তার চরিত্র নিয়ে গুঞ্জন ঠিক শোভা পায় না। কারণ, সীতা কোনো সাধারণ নারী ছিলেন না, ছিলেন রামের স্ত্রী, অযোধ্যার মহারাণী; চারিত্রিক দোষ ত্রুটিতে একজন সাধারণ নারীর প্রতি আঙ্গুল তোলা খুব সহজ, কিন্তু একজন সম্ভ্রান্ত বা পাওয়ারফুল নারীর প্রতি কোনো দোষ ত্রুটিতে আঙ্গুল তোলা অত যে সহজ নয়, সেটা আমরা আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পারি। তাই সীতার চরিত্র নিয়ে সাধারণ প্রজারা প্রশ্ন তুলেছে বা প্রশ্ন তুলতে পারে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যা্য় না বা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
যুদ্ধ থেকে ফেরার পর রামের চরিত্রের এই সব নানা অসঙ্গতি ও আপত্তিকর ব্যাপার সম্পর্কে রাজশেখর বসু তার অনুবাদিত রামায়ণের ভূমিকায় বলেছেন,
"এই আপত্তির একটা উত্তর দেওয়া যেতে পারে। বর্তমান বাল্মীকি রামায়ণের কতক অংশ পরে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যেমন উত্তরকাণ্ড। যুদ্ধকাণ্ডের শেষে রামায়ণ মাহাত্ম্য আছে, তাতেই প্রমাণ হয় যে মূল গ্রন্থ সেখানেই সমাপ্ত।
মহাভারতের অন্তর্গত রামোপখ্যানে রাবনবধের পর রামের সীতা প্রত্যাখ্যান এ সীতার শপথের বৃত্তান্ত আছে, কিন্তু নির্বাসন ও পাতালপ্রবেশ নেই। অতএব বাল্মীকি দুবার নিষ্ঠুরতা করেন নি, কঠোর রাজধর্মের আদর্শ দেখাবার জন্য শুধু একবার সীতার অগ্নিপরীক্ষার বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁর মূল কাব্য মিলনান্ত, অযোধ্যায় ফিরে যাবার পর রাম সীতার আবার বিচ্ছেদ হয়েছিল এমন কথা বাল্মীকি লিখেন নি। সীতার বনবাস আর পাতাল প্রবেশের জন্য তিনি দায়ী নন।"
একজন ইংরেজ গবেষক A Berriedale Keith এর মতে, যিনি মূল রামায়ণের সাথে উত্তরকাণ্ড জুড়ে দিয়েছেন তার সময় সম্ভবত খ্রি.পূ. ২০০ থেকে ৪০০ অব্দ। এই প্রাচীন কবি সম্পর্কে রাজশেখর বসুর মন্তব্য-
"এ কথা নিশ্চিত যে মূল গ্রন্থে যিনি সীতার নির্বাসন প্রভূতি জুড়ে দিয়েছেন তিনিও অতি প্রাচীন এবং তাঁর কবিত্ব সামান্য নয়।… তিনি নিজের স্বাতন্ত্র রাখেন নি, তাঁর রচনা বাল্মীকির রচনার সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে সমস্তই এখন বাল্মীকির নামে চলে।"
যা হোক, সীতার চরিত্র নিয়ে প্রজাদের অভিযোগ, অন্তঃসত্ত্বা সীতার বনবাস, অভিমানী সীতার পাতালপ্রবেশ এবং রামচন্দ্র কর্তৃক শম্বুক হত্যার মতো ঘটনাগুলো রয়েছে রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে, আর রামায়ণের উত্তরকাণ্ড যে বাল্মীকি দ্বারা রচিত নয়, পরবর্তীতে কোনো কবির দ্বারা এটি রামায়ণের সাথে জুড়ে দেওয়া, তথ্য প্রমাণসহ সেই বিষয়টি আমার পাঠকবন্ধুদেরকে বোঝাতে পেরেছি বলে আমি মনে করছি; ফলে রামের হাতে শুদ্র শম্বুক হত্যার মতো কোনো ঘটনা ই বাস্তবে ঘটে নি, যিনি এই উপাখ্যানটি লিখে রামায়ণের সাথে জুড়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন, তিনি ছিলেন কোনো কারণে প্রবল শুদ্র বিদ্বেষী, রামের হাতে তাই এক শুদ্রকে নির্মমভাবে হত্যা করিয়ে তিনি জাস্ট তার প্রতিশোধ নিয়েছিলেন মাত্র।
শম্বুক হত্যার কাহিনীতে আরেকটি অসঙ্গতি আছে। যেমন-রাম যখন দেখে যে- শৈবাল পর্বতের উত্তরে এক বৃহৎ সরোবরের তীরে অধোমুখে লম্ববান হয়ে একজন তপস্বী কঠোর তপস্যা করছে, তখন রাম তাকে বলে, আমি দাশরথি রাম, কৌতূহল বশে প্রশ্ন করছি- কেন এই দুষ্কর তপস্যা করছ ? তোমার অভীষ্ট কি স্বর্গলাভ না আর কিছু ? তুমি কোন্ জাতি, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, না শুদ্র, সত্য বল।
তপস্বী তখন অধোমস্তকে থেকেই উত্তর দেয়, আমি সশরীরে দেবত্ব লাভের নিমিত্তে তপস্যা করছি। রাম, আমি দেবলোক জয় করতে চাই। মিথ্যা বলবো না, আমি জাতিতে শুদ্র, নাম শম্বুক। রাম তখনই খড়গ কোষমুক্ত করে শুদ্র তপস্বীর শিরশ্ছেদ করে। আকাশ খেকে পুষ্পবৃষ্টি হয়, দেবগণ বলে, রাম, তুমি আমাদের প্রিয়কার্য করেছ, তোমার জন্যই এই শুদ্র স্বর্গাধিকারী হল না'। তুমি অভীষ্ট বর প্রার্থনা কর।
- রামচন্দ্র হলেন, রাবনবধকারী লঙ্কাবিজয়ী বীর অযোধ্যার রাজা, আর তার রাজ্যের একজন সাধারণ তপস্বী তাকে এইভাবে নামধরে সম্বোধণ করে বলবে, "রাম, আমি দেবলোক জয় করতে চাই।" এটা কি সম্ভব ?
এরপর রাম যখন তাকে হত্যা করে তখন আকাশ খেকে পুষ্পবৃষ্টি হয়, দেবগণ বলে, রাম, তুমি আমাদের প্রিয়কার্য করেছ, তোমার জন্যই এই শুদ্র স্বর্গাধিকারী হল না'।
-আমরা জানি, স্বর্গের রাজা হলেন দেবরাজ ইন্দ্র, আর ইন্দ্র যেকোনো মূল্যে যে তার রাজ্য এবং রাজত্বকে রক্ষা করতে সর্বদায় তৎপর, যেটা আমরা অহল্যা ও গৌতমের কাহিনী, যে কাহিনীতে- গৌতম মুনি তপস্যার দ্বারা এমন শক্তি অর্জন করে ফেলেছিলো যে, যে শক্তি দিয়ে সে স্বর্গলোক জয় করতে পারতো, সেই শক্তিকে নষ্ট করার জন্য ইন্দ্র, গৌতমের স্ত্রী অহল্যার সাথে গৌতমের ছদ্মবেশে যৌনক্রিয়া করে, যেটা জানতে পেরে গৌতম, অহল্যা এবং ইন্দ্রকে অভিশাপ দেয়, যার ফলে গৌতমের তপস্যার সমস্ত শক্তি নষ্ট হয়- স্বর্গলোককে রক্ষার জন্য যে ইন্দ্র এমন দুষ্কর্মও করতে পারে, সেই ইন্দ্র, শম্বুকের তপস্যার শক্তিকে নষ্ট করার জন্য রামের উপর নির্ভর করে বসে থাকবে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। শম্বুক নামের কেউ যদি সত্যিই স্বর্গ দখল করার চেষ্টা করতো, ইন্দ্র, নিজেই তার প্রতিবিধান করতো বলে আমি মনে করি।
আবার দেখুন শম্বুককে হত্যা করার পর দেবগণ রামকে বলে,
"তুমি অভীষ্ট বর প্রার্থনা কর।"
রাম কি কোনো সাধারণ মানুষ যে সে দেবতাদের নিকট বর প্রার্থনা করবে ? রাম ই তো স্বয়ং বিষ্ণু বা নারায়ণ, যিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল কারণের কারণ; আর দেবতারা হলেন সেই বিষ্ণুর থেকেই উৎপন্ন এক একটি সত্ত্বা বা দেবশক্তি, যারা বিষ্ণুর বলেই বলীয়ান, তাহলে এই দেবতারা কিভাবে রামকে বর দিতে পারে ? বিষ্ণুর কোনো অবতার কি, কখনো, কোনো ঘটনাতে কোনো দেব-দেবীর কাছে সাহায্য চেয়েছে ? এমন ঘটনা কি কোনো পুরাণে আছে ?
নেই।
রামায়ণের উত্তরকাণ্ডের এই সকল ঘটনা বিশ্লেষণ করে আমি নিশঙ্কোচে বলতে পারি যে- উত্তরকাণ্ডে বর্ণিত সমস্ত কাহিনী মিথ্যা ও বানোয়াট, বাল্মীকি মুনি এই ঘটনাগুলো লিখেন নি, ফলে রামচন্দ্র, শম্বুক হত্যার দায়ে দায়ী নয়।
আশা করছি, বিষয়টি সবার কাছে ক্লিয়ার হয়েছে।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
-----------------------------------------
বি.দ্র # বাংলাদেশে, ঘরে বসে কুরিয়ারের মাধ্যমে যারা রাজশেখর বসুর রামায়ণ, মহাভারত; গদ্য ভাগবত, বেদ, উপনিষদসহ সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন গ্রন্থ পেতে চান, তারা আমার সাথে যোগাযোগ করুন।
No comments:
Post a Comment