Friday 11 September 2020

জন্মান্তর কী এবং মোক্ষলাভ কিভাবে করা যায় ?


জন্মান্তর কী এবং মোক্ষলাভ কিভাবে করা যায় ?

#Sadman_Sakib_Ra'ad

সালাম ওয়ালাইকুম, আপনার আদাবের জবাবের উত্তরে শুধু আপনাকে সালাম দিলাম না, এর পেছনে অন্য একটি উদ্দেশ্যও আছে, যেটা আপনাকে বলবো এই প্রবন্ধের শেষে দিকে, এখন আপনার ১, ২ ও ৭ নং প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি, দেখে নিন নিচে-

আপনার প্রথম প্রশ্ন জন্মান্তর কী ?

-জন্মান্তর এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে যেকোনো আত্মা, তার পূর্ববর্তী সকল জন্মের কর্মফল অনুযায়ী বর্তমান জন্ম লাভ করে। বিষয়টিকে আমরা স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণীতে পাশ করার সাথে তুলনা করতে পারি। ক্লাস ওয়ানে একজন যেভাবে পড়াশোনা করে, তার ফল পায় সে ক্লাস টুতে রোল নং অনুযায়ী; ক্লাসে টু এর কর্মের ফল সে ভোগ করে ক্লাস থ্রিতে, ক্লাস থ্রির ফল ভোগ করে ক্লাস ফোরে, এভাবে আগের বছরের কর্মের ফল সে ভোগ করে বর্তমান বছরে। এবং শেষ পর্যন্ত একজন এস.এস.সি বা মাধ্যমিকে কী রেজাল্ট করবে, সেটা নির্ভর করে বিগত দশ বছর ধরে সে যেভাবে পড়াশোনা করেছে তার উপর এবং চুড়ান্তভাবে পড়াশোনার ভিত্তিতে সে কোন কর্ম করে জীবন অতিবাহিত করবে, সেটা নির্ভর করে তার সারা জীবনে পড়াশোনার কর্মের উপর।

জন্মান্তর যে ধ্রুব সত্য, তার প্রমাণ আমদের চারপাশেই রয়েছে। পৃথিবীর সকল প্রাণী জন্মান্তর প্রক্রিয়ার অধীন, অন্যান্য প্রাণীর কষ্টকর জীবন যাপনের কথা বাদ দিলেও, শুধু মানুষের কথাই যদি বিবেচনা করি, তাহলে আমরা দেখতে পাবো- এখানে কেউ সুন্দর, কেউ ধনী, কেউ কুৎসিত, কেউ গরীব, কেউ বিখ্যাত তার নিজ কর্মে বা জন্মসূত্রে, আবার কেউ অখ্যাত, তাদেরকে কেউ চিনেই না; কেউ শারীরিকভাবে পঙ্গু তো কেউ মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী, কেউ নারী বা কেউ পুরুষ বা কেউ নপুংসক, কেউ জন্মসূত্রেই মেধাবী তো কেউ জন্মসূত্রেই মেধাহীন; কেউ জন্মসূত্রেই যুক্তিবাদী তো কেউ জন্মসূত্রেই অন্ধবিশ্বাসী; কারো জন্ম ধনীদেশে তো কারো জন্ম গরীবদেশে। এভাবে হাজারো ক্ল্যাসিফিকেশনে মানুষের জন্ম; ইসলাম অনুযায়ী যদি একই সময়ে সকল আত্মা বা রুহকে সৃষ্টি করা হয়ে থাকে, তাহলে তারা সবাই নিষ্পাপ, তাদের কারো কোনো দোষ বা ত্রুটি নেই, তাহলে সকল রুহ বা আত্মার একই সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নেওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে তা আমরা দেখতে পাই না, এখানে কেউ কোনো দিক থেকে কারো সমান নয়- না ধনে, না জ্ঞানে, না সৌন্দর্যে, না জনপ্রিয়তায়, না আয়ুতে, কেউ কেউ তো নানারকমের শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী, আবার কেউ নিহত হয় গর্ভেই। ইসলামি সিদ্ধান্ত মতে- আল্লাহ, এই নানাভাবে মানুষের জন্ম দিয়ে কারো সাথে অন্যায় করেছেন, আবার কারো সাথে পক্ষপাতিত্ব করেছেন, কিন্তৃ সৃষ্টিকর্তা কি কারো সাথে পক্ষপাতিত্ব বা অন্যায় করতে পারেন ? যদি তিনি কারো সাথে পক্ষপাতিত্ব করেন, তাহলে কিভাবে ন্যায়বিচারক ?

কোরানের বহু জায়গায় বলা আছে- আল্লাহ, যার সাথে খুশি যা কিছু করতে পারে। কিন্তু তার সৃষ্ট করা জীব হিসেবে আল্লার এই স্বৈরাচারী সিস্টেমকে আমরা কেনো মানবো ? ক্লাস ফাইভে আমি যা পড়াশোনা করেছি, তার যোগ্য পুরস্কার যদি আমি ক্লাস সিক্সে না পাই, ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষককে আমি মানবো কেনো বা তাকে রেসপেক্ট করবো কেনো ? পৃথিবীর সকল নারী জাতীয় প্রাণী, পুরুষ জাতীয় প্রাণীদের তুলনায় একটু কষ্টভোগ বেশি করে এবং সুযোগ সুবিধা একটু কম পায়। ইসলাম, খ্রিষ্টান, ইহুদি মতবাদ অনুসারে পৃথিবীতে সকল প্রাণীর জন্ম মাত্র একবারই, সেই হিসেবে মানুষের জন্মও একবারই। তাহলে নারী হিসেবে জন্ম নেওয়া মানুষেরা আল্লাকে কি এই প্রশ্ন করতে পারে না যে- কোনো আমাকে পৃথিবীতে নারী হিসেবে জন্ম দিয়ে আমাকে এত কষ্ট ভোগ করিয়েছেন ?

ইসলাম যদি এমন কথা বলতো যে পৃথিবীতে যারা নারী হিসেবে জন্ম নেবে, তার পরকালে বিশেষ সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে। ইসলামে তো সেটাও নেই। যারা পুরুষ হিসেবে পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে নানারকম সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছে, তারাই আবার মৃত্যুর পর বেহেশতে গিয়েও ৭২ হুর পাওয়া সহ নানারকম সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে, কিন্তু নারীদের জন্য সেরকম কোনো সুযোগ সুবিধাই নেই; নারীরা, বেহেশতে স্বামীর প্রাপ্ত ৭২ হুরের দাসী হিসেবে জীবন কাটাবে আর তার স্বামী, কোন হুরের পর কোন হুর নিয়ে শুচ্ছে সেটা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবে। নারীর প্রতি এই অবিচারের জন্য কোনো নারী কি আল্লাকে এই প্রশ্ন করতে পারে না যে- কেনো পৃথিবীতে আপনি আমাকে নারী হিসেবে জন্ম দিয়েছিলেন, যে জন্মে শুধু কষ্টই আর কষ্ট, আবার মৃত্যুর পর বেহেশতেও নারীদের জন্য কিছু নেই ?

এই একই প্রশ্ন পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীও আল্লাকে করতে পারে যে কেনো তাদেরকে মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে সৃষ্টি না করে ইতর শ্রেণীর প্রাণী হিসেবে সৃষ্টি করে তাদেরকে এত কষ্ট দেওয়া হলো ? সকল রূহকে তো তিনি একই সাথে সৃষ্টি করেছিলেন এবং সবাই ছিলো নিষ্পাপ, তাহলে কেনো তাদের সাথে এমন বৈষম্য করা হলো ? মানুষ ছাড়া পৃথিবীতে অন্যান্য প্রাণী হিসেবে জন্ম নেওয়া জীবজন্তুগুলো এই প্রশ্নগুলো অবশ্যই করবে, আর মানুষরা আল্লাকে প্রশ্ন করবে, কেনো আমাকে গরীব করে পৃথিবীতে সৃষ্টি করলেন ? কেনো আমাকে কুৎসিত রূপে সৃষ্টি করলেন ? কেনো আমাকে নারী হিসেবে সৃষ্টি করলেন ? কেনো আমাকে শারীরিক পঙ্গু হিসেবে সৃষ্টি করলেন ? কেনো আমাকে মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে সৃষ্টি করলেন ? কেনো আমাকে অন্ধবিশ্বাসী হিসেবে সৃষ্টি করলেন ? কেনো আমাকে মেধাহীন হিসেবে সৃষ্টি করলেন ? কেনো আমাকে ক্ষমতাহীন হিসেবে সৃষ্টি করলেন ? কেনো আমাকে অজনপ্রিয় হিসেবে সৃষ্টি করলেন ? কেনো আমাকে গরীব দেশে সৃষ্টি করলেন ?

আল্লার কাছে এই সব প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। কোরানে যদিও বহুবার বলা হয়েছে যে- আল্লাহ সর্বশক্তিমান, তাই তিনি তার পেশীশক্তির জোরে একজন স্বৈরাচারী সম্রাটের মতো তার সৃষ্ট জীবদের মুখ বন্ধ রাখতে পারেন, তাহলে তিনি কি মানুষের শ্রদ্ধা ভক্তি অর্জন করতে পারেন ? আল্লার পরিস্থিতিও এমন, তিনি সবার সাথে ন্যায় করেন না, কাউকে খারাপভাবে জন্ম দিয়ে কষ্ট দেন, আবার কাউকে ভালোভাবে জন্ম দিয়ে সুখ প্রদান করেন, আর যারা সুখে আছে, তাদের সংখ্যা খুবই কম, দুরাবস্থার মধ্যে থাকা মানুষের সংখ্যাই বেশি, আর মানুষ ছাড়া পৃথিবীর সকল প্রাণী তো যন্ত্রণাময় জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়, মানুষদের দ্বারাও তারা কুরবানীর সময় নির্বিচারে হত্যা ছাড়াও নানারকমের অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে মৃত্যু বরণ করতে বাধ্য হয়। এই সব প্রাণীরা আল্লাকে নানারকম প্রশ্ন করতেই পারে বা করবেই, যার কোনো জবাব আল্লার কাছে তো নেই ই, আল্লার অনুসারী মুসলমানদের কাছেও নেই।

এর বিপরীতে এই পুরো সিস্টেমকে সনাতন ধর্মে জন্মান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করে একেবারে সকলের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ সনাতন ধর্মে বলেই দেওয়া হয়েছে জীবন হলো আত্মার ভ্রমণ এবং প্রতিটি আত্মার এই ভ্রমণ শুরু হয়েছে একেবারে পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া প্রথম এককোষী প্রাণী এ্যামিবা দিয়ে। সময়ের সাথে সাথে বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বহুকোষী জটিল প্রাণীদের উৎপত্তির স্তর অতিক্রম করে অপেক্ষাকৃত উন্নত প্রাণীদের সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে আত্মারা ঐ ধরণের প্রাণীদেহ ধারণ করে উন্নত শ্রেণীর জীবের সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছে। জীবজন্তুর শ্রেণীকে অতিক্রম করে প্রাণীদের জন্য শ্রেষ্ঠ দেহ হলো মানবদেহ, একটি আত্মাকে সকল ইতর শ্রেণীর প্রাণীর দেহ ধারণ করে তাদের সকল প্রকার সুখ দুঃখকে ভোগ করে মানবদেহ ধারণের যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। এই যোগ্যতা অর্জনের বার সনাতন ধর্ম মতে ৮০ লক্ষ বার, অর্থাৎ ৮০ লক্ষ বার একটি আত্মা বিভিন্ন প্রাণী রূপে জন্ম নিয়ে মানবদেহ পায় এবং মানবদেহ পাওয়া মাত্রই সে সুন্দর, সুস্থ, সক্ষম শরীর পায় না, মানবরূপে প্রথম জন্মেই পায় না ধনী, জ্ঞানী, বিখ্যাত ও মানী পরিবারে জন্ম নিতে, পায় অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরের দেহ, পরিবেশ ও আর্থিক অবস্থা।

জন্মান্তর প্রক্রিয়ার জ্ঞান শুধু মানুষই বুঝতে পারে, এই জ্ঞানকে হৃদয়ে ধারণ করে যখন কোনো মানুষ সনাতন ধর্মের বিধি বিধান মতে চলে তখন সে পরের জন্মে, পূর্বের জন্মের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় জন্ম নিতে পারে, এভাবে জন্ম নিতে নিতে এক পর্যায়ে সে মোক্ষের জ্ঞান অর্জন করতে পারে, তখন সে সমাজের জন্য সর্বোচ্চ কল্যাণকর কর্ম করে ঈশ্বরের সাথে লীন হয়ে মোক্ষ অর্জন করতে পারে, যে মোক্ষ অর্জন করার পর এই যন্ত্রণাময় পৃথিবীতে কারো আর জন্ম হয় না।

আগেই বলেছি একটি আত্মা ৮০ লক্ষবার বিভিন্ন ইতর শ্রেণীর প্রাণী হিসেবে জন্ম নিয়ে তাদের সুখ দুঃখ ভোগ করে মানবরূপে জন্ম নিতে পারে। এই মানবরূপেও একটি আত্মাকে সর্বোচ্চ ৪ লক্ষবার জন্ম নিতে হয়। কিন্তু এই চার লক্ষবার জন্মের শেষেই যে সে মোক্ষলাভ করবে বা করতে পারবে এমন নয়, সে আগেও মোক্ষলাভ করতে পারে বা কেউ সঠিক পথ না পেয়ে মোক্ষ লাভ নাও করতে পারে, এভাবেই কল্প এক সময় শেষ হয়ে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে পৃথিবীর সৃষ্টি প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়ে যেতে পারে।

সমগ্র মহাবিশ্বের অসংখ্য গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে, মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এখনও সেখানে পৌঁছতে পারে নি ব'লে সেগুলোর প্রমাণ আমরা পাচ্ছি না, কিন্তু মহাবিশ্ব জুড়ে যে অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ড আছে এবং সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে, একথা প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি আগে রচিত সনাতনধর্মীয় গ্রন্থে বলা আছে। তাই পৃথিবী থেকে প্রাণ বিলুপ্ত হয়ে গেলেও যারা মোক্ষ লাভ করতে পারে নি, তাদের কর্মফল অনুযায়ী জন্ম হবে অন্য ব্রহ্মাণ্ডের অন্য কোনো গ্রহে এবং প্রতিটি মানুষের এই জন্মান্তর প্রক্রিয়া চলতে থাকবে অনন্তকাল ধরে যতক্ষণ সে ঈশ্বরের সাথে লীন হয়ে মোক্ষলাভ না করতে পারে।

আশা করছি- এই পোস্টে আপনার ১, ২ ও ৭ নং প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি, বাকিগুলোর জবাব দেবো পরের পোস্টে।

এবার বলি- কেনো আপনাকে পোস্টের শুরুতেই সালাম দিয়েছি। আমার কথা শুনে আপনি মন খারাপ করেন আর যা ই করেন, প্রকৃত বাস্তব ব্যাপার হচ্ছে- পৃথিবীতে কোনো প্রকৃত মুসলমান সুখে নেই, শান্তিতে নেই। কোরানের নির্দিশেই একজন প্রকৃত মুসলমান, কখনো কোনো অমুসলিমের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারে না, তার ভালো চাইতে পারে না, সে যদি ইসলামের দাওয়াত গ্রহন না করে তাকে হত্যা ক'রে তার ধন সম্পদ ও স্ত্রী কন্যাকে অধিকার করা মুসলমানদের কর্তব্য। মুসলমান নামধারী হলেও খুব কমসংখ্যক মুসলমানের পক্ষেই অমুসলিমদের প্রতি কোরানের যে নির্দেশ সেটা পালন করা সম্ভব। কারণ, এগুলো সম্পূর্ণ অমানবিক। কারো মধ্যে যদি সামান্যতম মানবিকতা থাকে এবং কেউ যদি যুক্তিবাদী হয়, তাহলে তার পক্ষে কিছুতেই কোরানের এসব নির্দেশ মানা সম্ভব নয়। আবার কোরানের সব নির্দেশ না মানলে কারো পক্ষে প্রকৃত মুসলমান হওয়াও সম্ভব নয়, আর প্রকৃত মুসলমান না হলে কেউ কোনো দিন বেহেশতেও যেতে পারবে না। এই ধর্মীয় নির্দেশ এবং বাস্তবতার দ্বিধাদ্বন্দ্বে অনেক মুসলমানই প্রচুর অশান্তিতে ভুগে।

আবার মুসলিম সমাজ যেহেতু আচারহীন, এরা কোনো কাজে তিথি নক্ষত্র দিন বার মাস কিছুই মানে না, বাস্তু ও জ্যোতিষ শাস্ত্রে বিশ্বাস করে না বা সেগুলো মানেও না, সেহেতু এদের জীবনে দুর্ঘটনার কোনো শেষ নেই; অনেক টাকা পয়সা খরচ করে হয়তো মেয়ের বিয়ে দিলো, কিন্তু সেই বিয়ে টিকলো না, কয়েক মাস পরেই মেয়ে হয়তো তালাক খেয়ে বা তালাক নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো, এটা একটা মানুষের জীবনে কঠিন অশান্তি; এরকম আরো ছোটখাটো অনেক ব্যাপার আছে, যেগুলো নিয়ে মুসলমানরা ভীষণভাবে অশান্তিতে থাকে।

খতনা করার ফলে কোনো মুসলমান যেমন প্রকৃত যৌনসুখ কখনোই পায় না, তেমনি আচারহীনতার কারণে কোনো মুসলমান সাংসারিক জীবনে প্রকৃত শান্তিও কখনোই পায় না। কারণ, মুসলমানরা প্রকৃত শান্তির সংজ্ঞাই জানে না। নিজেদের আচার এবং ধর্মবিশ্বাসের কারণেই মুসলমানরা যে চিরদিন অশান্তিতে থাকবে, এটা সম্ভবত আপনাদের নবী, মুহম্মদ বুঝতে পেরেছিলো, তাই এক মুসমলমান অপর মুসলমানের সাথে দেখা হলে এমন একটা কথা বলার সিস্টেম চালু করেছিলো, যাতে মুসলমানদের জীবনের অশান্তি কিছুটা লাঘব হয়। যেকারণে এক মুসলমান অপর মুসলমানকে আরবিতে বলে- আস সালামু ওয়ালাইকুম, যার অর্থ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, জবাবে অপর মুসলিমও বলে- আপনার উপরও শান্তি বর্ষিত হোক। এই দুটো বাক্য থেকেই প্রমাণিত যে কোনো মুসলমান বাস্তবে শান্তিতে নেই, সবাই অশান্তিতে আছে, তাই একে অপরের জন্য দোয়া করে যাচ্ছে, যাতে তারা শান্তিতে থাকে।

একজন কোটিপতি ব্যক্তিকে কেউ যদি এই বলে দোয়া করে যে তুমি কোটিপতি হও, একজন পুত্রবতী নারীকে কেউ যদি এই বলে দোয়া বা আশীর্বাদ করে যে-তুমি পুত্রবতী হও, তাহলে কোটিপতি বা পুত্রবতী কারোরই যেমন খুশী হওয়ার কোনো কারণ নেই, যেহেতু তারা আগে থেকেই ঐসবের মালিক, সেরকম যে ব্যক্তি শান্তিতে আছে, তাকেও আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক বললে তার খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই, যেহেতু সে শান্তিতে আছে।

এইসব বিবেচনায়, ইসলামি সম্ভাষণ- আস সালামু ওয়ালাইকুম, যার অর্থ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক- প্রমাণ করে যে কোনো মুসলমান শান্তিতে নেই। আপনিও যেহেতু একজন মুসলমান এবং যেহেতু আপনি হিন্দুদেরকে আদাব দিয়ে আপনার লিখা শুরু করেছেন, সেহেতু আদাবের জবাবে আমারও তো কিছু বলা উচিত, তাই আপনাকেও সালাম দিয়ে আমার লেখা শুরু করেছি, এই সালামের মধ্যে শুধু আপনাকে সম্ভাষণ করাই আমার উদ্দেশ্য ছিলো না, আমার মনে হলো, যেহেতু মুসলমানরা সব সময় অশান্তিতে থাকে, তাই তাদের জন্য একটু শান্তি প্রার্থনাও করা যাক, আপনাকে সালাম দেওয়ার পেছনে আমার মনে আসলে এই থিম কাজ করেছে।

আর আপনি যে কী কারণে হিন্দুদের উদ্দেশ্যে সালাম দিয়ে অপনার লিখা শুরু করেন নি, সেটাও কিন্তু আমি জানি।

আপনারা মনে করেন হিন্দুরা কাফের, তাদেরকে সালাম দিয়ে তাদের শান্তি কামনা করা গুনাহ বা পাপ, তাই কোনো হিন্দুকে সালাম দেওয়া যাবে না, এই শিক্ষা, আপনাদেরকে ছোট বেলা থেকেই দেওয়া হয়, আর এই কারণেই আপনি সালাম না দিয়ে বেয়াদবের বিপরীত শব্দ আদাব দিয়ে আপনার লিখা শুরু করেছেন। ঠিক বলেছি কি না বলেন ? কিন্তু আমরা হিন্দুরা আপনাদের মতো শুধু মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি না, আমরা যখন প্রার্থনা করি, তখন বলি- "সর্বে ভবন্তু সুখিন," অর্থাৎ বিশ্বের সকল প্রাণী সুখী হোক; আর এটাই হলো সনাতন ধর্ম এবং ইসলামের মধ্যে পার্থক্য।

জয় হিন্দ।

জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment