Saturday, 23 May 2020

গীতায় ১৮/৪৬ বা ১৮/৬২ তে শ্রীকৃষ্ণ কোন ঈশ্বরের কথা বলেছেন ?


#Sanjay_Sarkar,

আপনি গীতার ৯/২৯ এবং ১৮/৬৫ নং শ্লোক সম্পর্কে যে প্রশ্ন তুলেছেন, তার প্রেক্ষিতে আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করছি, আপনাকে সেগুলোর কোনো উত্তর দিতে হবে না, সেগুলো নিয়ে শুধু ভাববেন; কারণ, সেই প্রশ্নগুলোর জবাব আমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আপনার নেই, প্রশ্নগুলি হলো-

১. যেসব দম্পতির একাধিক সন্তান থাকে, সেইসব পিতা মাতা সন্তানদেরকে শিশুকালে, সবাইকেই সমান দৃষ্টিতে দেখে, কারো সাথে তারা কোনোরকম পক্ষপাতিত্ব করে না, সকলের সমান সুযোগ সুবিধা, সমান শিক্ষা নিশ্চিত করারই শুধু চেষ্টা করে না, সকলকেই সমান রকম ভালোও বাসে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে কেনো কোনো সন্তান, পিতা মাতার কাছে প্রিয় হয়ে উঠে, আর অন্য কেউ হয়ে উঠে অপ্রিয় ?

২. কোনো শিক্ষক যখন নতুন কোনো ক্লাসে যায়, ক্লাসের সকল ছাত্র-ছাত্রীকে সে সমান দৃষ্টিতে দেখে ক্লাস শুরু করে, কিন্তু দু চারদিন যেতেই ক্লাসের কোনো কোনো স্টুডেন্ট সেই শিক্ষকের প্রিয় হয়ে উঠে। এমন কেনো হয় ? প্রিয় থেকে কেউ কেনো সময়ের স্রোতে অপ্রিয় হয়ে উঠে ?

এই দুটি বিষয় নিয়ে ভাববেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন, কেনো শ্রীকৃষ্ণ গীতার ৯/২৯ নং শ্লোকে বলেছেন, "সকলকেই আমি সমান দেখি, বিশেষ কাহারো প্রতি আমার বিদ্বেষ নাই, আমার প্রিয় বা অপ্রিয় কেহ নাই। কিন্তু যাঁহারা ভক্তির সহিত আমার অর্চনা করেন, আমি তাঁহাদের সহিত থাকি এবং তাঁহারাও আমাতে থাকেন" ?

শ্রীকৃষ্ণ সকলকে সমান দৃষ্টিতে দেখেন ব'লেই, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অধর্মীদের প্রধান হওয়া সত্ত্বেও দুর্যোধনকে নিজের নারায়ণী সেনা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং এরপর যুদ্ধের ঠিক পূর্বমূহুর্তে শান্তি প্রস্তাব নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ হস্তিনাপুর গেলে, দুর্যোধন শ্রীকৃষ্ণকে বন্দী করে রাখার চেষ্টা করার পরও শ্রীকৃষ্ণ তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেন নি, দুর্যোধনকে তিনি তার নারায়ণী সেনা দিয়েই দেন। এই আচরণ কি কোনো মানুষের পক্ষে করা সম্ভব, যদি তিনি ঈশ্বর না হন ?

কথায় বলে, রতনে রতন চেনে; তাই অর্জুনের সাথে শ্রীকৃষ্ণের পরিচয় হওয়ার পর থেকেই, অর্জুন বুঝতে পেরেছিলেন যে শ্রীকৃষ্ণ আসলে কী, তাই অর্জুন হয়ে উঠে শ্রীকৃষ্ণের একান্ত ভক্ত, শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গ ও উপদেশ লাভ করার পরও যেটা হয়ে উঠতে পারে নি অর্জুনের অপর চার ভাই। অর্জুনের এই একান্ত ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়েই শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে গীতার জ্ঞান দান করেন এবং তাঁর বিশ্বরূপ দর্শন করান, যে কথা শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, গীতার ১১/৪৭ নং শ্লোকে, এভাবে-

"হে অর্জুন, আমি তোমার উপর সন্তুষ্ট হইয়া নিজের যোগপ্রভাবে তোমাকে আমার এই তেজোময় অনন্ত, আদ্য, বিশ্বাত্মক পরমরূপ দেখাইলাম। ইহার পূর্বে তুমি ছাড়া অপর কেহ আমার এই রূপ দেখে নাই।"

শ্রীকৃষ্ণ সকলের উদ্দেশ্যে বলেছেন, কেউ আমার প্রিয় নয়, কেউ অপ্রিয় নয়, কিন্তু অর্জুনকে বলেছেন- তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়। শ্রীকৃষ্ণ কেনো সেটা বলেছেন, এবার বুঝতে পারছেন ? অর্জুন, তাঁর কর্ম, সাধনা ও ভক্তিতে শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় হয়ে উঠতে পেরেছিলেন বলেই, শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুনকে তাঁর প্রিয়র জায়গায় স্থান দিয়েছেন, এটা অর্জুনের অর্জন, অর্জুনের প্রতি শ্রীকৃষ্ণের দয়া নয়; যেমন কোনো কোনো সন্তান, তার পিতা মাতার কাছে সেই প্রিয়ত্ব অর্জন করে, কোনো কোনো স্টুডেন্ট তার প্রিয়ত্ব অর্জন শিক্ষকের কাছে, বাকিরা- কর্ম, আগ্রহ ও ভক্তির অভাবে তা হারায়।

এছাড়াও একজন যেমন সকলের কাছে প্রিয় হতে পারে না, তেমনি সকলেও একজনের কাছে প্রিয় হতে পারে না, যেটা সামাজিক বাস্তবতা; এই বাস্তবতাকেই শ্রীকৃষ্ণ প্রকাশ করেছেন অর্জুনের মাধ্যমে। আর এই প্রিয় ও অপ্রিয়র মানদণ্ড হলো- কারো প্রতি তার- ভক্তি, আগ্রহ ও নিষ্ঠা।

এবার আসি, শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে আপনার পরের কটূক্তিতে-

গীতার ১৮/৪৬ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,

"যাঁহার ইচ্ছায় জীবের উৎপত্তি বা কর্মচেষ্টা, যিনি এই সমস্ত জগৎ ব্যাপিয়া আছেন, মানব নিজ নিজ কর্মদ্বারা তাহার অর্চনা করিলে সর্বসিদ্ধ হয়।"

আবার ১৮/৬২ তে বলেছেন, "হে অর্জুন, তুমি সর্বতোভাবে তাঁহার শরণ লও, তবেই তাঁহার দয়ায় তুমি পরম শান্তি ও শাশ্বত পদ পাইবে।"

শুধু এই দুটি শ্লোকেই নয়, শ্রীকৃষ্ণ পরোক্ষভাবে নিজের কথা বলেছেন, এরকম আরো কিছু শ্লোক গীতায় আছে। সুতরাং ১৮/৪৬ বা ১৮/৬২ তে শ্রীকৃষ্ণ, যে ঈশ্বরের কথা বলেছেন, সেটাও যে তিনিই, সেটা বোঝাতেও গীতায় শত শত শ্লোক তিনি বলেছেন। এসব নিয়ে কোনো দ্বিধা বা শ্রীকৃষ্ণের ঈশ্বরত্ব নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই বলেই, সেই প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত কোনো গীতা ভাষ্যকার, গীতার টীকা টিপ্পনী কোথাও এসব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নি, কিন্তু আর্যসমাজীরা যেহেতু নিজেকে কোনো এক স্বঘোষিত মহর্ষির শিষ্য ভাবে, যিনি বেদ মন্ত্র রচনা না করেও তার অনুসারীদের কাছে শুধু ঋষি নয় মহর্ষি, যিনি ক্ষমতা রাখেন মনুসংহিতার বিভিন্ন শ্লোকের শব্দ বদলে দিয়ে সেগুলোর অর্থের পরিবর্তন ঘটানোর, যিনি ক্ষমতা রাখেন সনাতন ধর্মের পরম পবিত্র অক্ষর ওঁ-কে বিকৃত করে "ও৩ম্" লিখার; যার শিষ্যরা নিরাকারে বিশ্বাস করলেও পরমব্রহ্মের অক্ষর প্রতীক ওঁ এর বিকৃত রূপ "ও৩ম্" ব্যবহার করে, মন্দিরে স্বঘোষিত মহর্ষির আকার বা প্রতীক, ছবি বাঁধিয়ে রাখে, কোথাও কোথাও স্বঘোষিত মহর্ষির মূর্তিও বানায়; এই বিকৃত ও নষ্ট চিন্তার অনুসারী #Sanjay_Sarkar প্রশ্ন তুলেছে, শ্রীকৃষ্ণ কি "আমি" ও "তুমি" শব্দের মাঝের পার্থক্য জানে না ?

গীতার ৩/৩২ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, যেসব ব্যক্তি আমার কথার দোষ ধরে, তারা মূর্খ ও জ্ঞানভ্রষ্ট। সুতরাং মূর্খ ও জ্ঞানভ্রষ্ট #Sanjay_Sarkar শুনে রাখ, শ্রীকৃষ্ণ গীতায়, জগৎ ও জীবনের এমন কিছু রহস্য ও তত্ত্বের কথা বলেছেন, যা পূর্বে কেউ কখনো বলতে পারে নি, সেই শ্রীকৃষ্ণ- আমি ও তুমি শব্দের মধ্যে পার্থক্য জানে না বুঝে না, এমন কথা তোর মাথায় এলো কিভাবে ? পরোক্ষ উক্তিতে শ্রীকৃষ্ণ যে কথা বলেছেন, প্রত্যক্ষ উক্তিকে শ্রীকৃষ্ণ বহু জায়গায় সেই কথাগুলোই বলেছেন; এতেই প্রমাণিত হয় পরোক্ষ উক্তিতে শ্রীকৃষ্ণ যে ঈশ্বরের কথা বলেছেন, বাস্তবে সেটা তিনিই; তিনি পরোক্ষ উক্তির ঐ কথাগুলো বলেছেন, অর্জুনকে বিভিন্ন বিষয় বোঝাতে গিয়ে এবং নিজের কথার মধ্যে বৈচিত্র আনতে। কারণ, একই কথা যদি একইভাবে একাধিকবার বলা হয়, সেটা ভালো শোনায় না বা তার সাহিত্যিক মূল্য কমে যায়। যেমন কোরানে একই বিষয়ে একই ধরণের বাক্য বহু আয়াতে বলা হয়েছে, যার ফলে কোরানের তো কোনো সাহিত্যিক মূল্যই নেই। কোরানের মতো একই ধরণের বাক্য গীতায় পুনরুক্তি হয়ে হয়ে এর সাহিত্যিক মূল্য হারালে এবং ঈশ্বর হিসেবে শ্রীকৃষ্ণের গুরুত্ব নেমে গেলে বা কমে গেলে, তোরা আর্য সমাজীরা খুব খুশি হতিস, তাই না ? কেননা, তাহলে স্বঘোষিত মহর্ষির "সত্যার্থপ্রকাশ"কে ধর্মগ্রন্থ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে দয়ানন্দ সরস্বতীকে "আর্য সমাজ" নামক ধর্মীয় মতবাদের প্রবর্তক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে খুব সুবিধা হতো, তাই তো ? এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই তো তোরা তোদের প্রতীক "ও৩ম্" চালু করেছিস, চালু করেছিস দয়ানন্দের নামে আর্য সমাজের মন্দির; কোনো কোনো আর্য সমাজী প্রচার করছে- সনাতন সমাজের জন্য দয়ানন্দের অবদান নাকি শ্রীকৃষ্ণের চেয়ে বেশি !

এই মূর্খ, কোনো ব্যক্তির নামে কি কোনো মন্দির হয় ? কোনো ব্যক্তি কি দেবতার স্থানে বসে পূজা বা শ্রদ্ধা-ভক্তি পেতে পারে ? এই তোদের বেদের জ্ঞান ? পূজা প্রার্থনা পাবার একমাত্র অধিকারী ঈশ্বর এবং ঈশ্বরের বিভিন্ন শক্তির প্রকাশ বিভিন্ন দেব-দেবী। তোরা নিরাকার ব্রহ্মকে মানিস, তো তোদের মন্দিরে সাকার দয়ানন্দ বা সাকার "ও৩ম্" কেনো ? নাকি তোরা পুরুষ, না নারী; এখনও সেটাই ঠিক করতে না পেরে মাঝামাঝি হিজড়ার পর্যায়ে আছিস ?

শেষ কথা বলছি- গীতার ৭/৬ এ শ্রীকৃষ্ণ যে বলেছেন, "আমিই জগতের উৎপত্তি ও প্রলয়ের মূল কারণ" সেটাই চিরন্তন ও পরম সত্য; এই কথা অর্জুনকে বোঝাতে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণ, যে শব্দ বা বাক্যেরই ব্যবহার করুন না কেনো, তাতে কিছু মূর্খ আর্য সমাজী ছাড়া প্রাচীন ও মধ্যযুগেও যেমন কারো প্রশ্ন ছিলো না, বর্তমান কালেও নেই। বুঝেছিস ? যদি না বুঝে থাকিস, ঘেউ ঘেউ করতে থাক, আর দেখ, কোনো কৃষ্ণভক্তকে তোদের দলে টানতে পারিস কি না ?

মানুষ যা কর্ম করে, ফল সেই হিসেবেই পায়। এই প্রবন্ধের শেষ দিকে তোর উদ্দেশ্যে যে আমি অভদ্র ভাষা প্রয়োগ করেছি, তোর কমেন্টে তুই শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে- গাজাখোর, পাগল ও মূর্খ- শব্দগুলো প্রয়োগ করেছিস ব'লে। মানে তোর উদ্দেশ্যে আমার গালিগুলো ছিলো- তোরই কর্মের ফল, যে ধরণের কর্মের ফলে মহাভারতের শিশুপাল তার মস্তক হারিয়েছিলো। খেয়াল রাখিস, শ্রীকৃষ্ণের বিরুদ্ধে তোদের অপরাধের সীমা যেন ১০০ পার না হয়, তাহলে তোদের পরিণতিও কিন্তু শিশুপালের মতোই হবে। কারণ, অপরাধের সীমা পার করলে কেউ কিন্তু আর কথা বলার জন্য ধরাধামে থাকে না।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment