Saturday, 23 May 2020

কপিলদেব আসলে কে এবং আর্য সমাজীদের প্রতি ক্ষেদ


কপিলদেব আসলে কে এবং আর্য সমাজীদের প্রতি ক্ষেদ :

দয়ানন্দ সরস্বতী একজন মহর্ষি; শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর নয়, একজন যোগীপুরুষ; ঈশ্বর সাকার হতে পারেন না, তিনি নিরাকার এবং কেউ যদি শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর মনে করে বা তা প্রচার করে, তাকে- পৌরাণিক পোপ, শিশু, মূর্খ, বালক এবং আরো সব উচ্চারণ অযোগ্য শব্দে তাদেরকে গালাগালি করা, এগুলো ছাড়া আর্য সমাজীদের মাথায় আর কিছু নেই; তাই মুসলমান এবং নাস্তিকরা যখন সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বা আর্য সমাজীদের একমাত্র ধর্মগ্রন্থ বেদ নিয়ে কোনো সমালোচনা বা কটূক্তি করে, তারা সে সব ব্যাপারে কোনো কথা বলে না, সে সবের বিরুদ্ধে কোনো প্রবন্ধ লিখে অনলাইনে পোস্ট করে না; তাদের শুধু একটাই চিন্তা আর একটাই কাজ, সেটা হলো- শ্রীকৃষ্ণ যে ঈশ্বর নন এবং দয়ানন্দ সরস্বতী যে মহর্ষি, সেটা প্রমাণ করতে শাস্ত্রের অলি গলি খুঁজে বেড়ানো। কিন্তু তাদের সম্মিলিত সমস্ত অপচেষ্টা যেমন শ্রীকৃষ্ণের কৃপায় এতদিন আমি একাই ব্যর্থ করে এসেছি, ভবিষ্যতেও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে আমি বিশ্বাস করি।

আর্য সমাজীরা একটা কথা বলুন তো, উপরে আমি যে বিষয়গুলো উল্লেখ করলাম, সেগুলো ছাড়া আপনারা কি অন্য কোনো বিষয়ে কোনোদিন কোনো প্রবন্ধ লিখে অনলাইনে পোস্ট করেছেন ?

এবার আপনাদের বিপরীতে আমার পোস্টের বিষয়গুলো একটু খেয়াল করুন, দেখবেন, সনাতন ধর্ম বিরোধী সকলের সমালোচনা এবং কটূক্তির জবাব একের পর এক আমি একাই দিয়ে চলেছি। এমনকি আপনাদের একমাত্র ধর্মগ্রন্থ বেদের সমালোচনার জবাবও আমি একাই দিই। সনাতন ধর্মের অন্যান্য বিষয়ে না হয় আপনাদের এলার্জি, কিন্তু বেদ সম্পর্কিত কটূক্তির জবাব আপনারা দেন না কেনো ? নাকি সে সব বিষয়ে জবাব দেওয়ার কোনো ক্ষমতাই আপনাদের নেই ?

আপনাদের একজন আছে না, তুষার সরকার; যার একমাত্র কাজ হলো শ্রীকৃষ্ণের মতো কে কে বিশ্বরূপ দেখিয়েছে, শ্রীকৃষ্ণের মতো কে কে নিজেকে ঈশ্বর হিসেবে প্রকাশ করেছেন, সে সব খুঁজে বের করে শ্রীকৃষ্ণকে সেই সব অখ্যাত ব্যক্তিদের সাথে তুলনা করে শ্রীকৃষ্ণকে তাদের সমান করার মাধ্যমে ছোট করা; এই যেমন- এই প্রবন্ধের সাথে যুক্ত ফটোপোস্টে দেখুন, কপিলদেবকে ঈশ্বর প্রমাণ ক'রে সে শ্রীকৃষ্ণকে ছোট করার চেষ্টা করেছে, শ্রীকৃষ্ণের মতো কপিলদেবও নিজেকে ঈশ্বর হিসেবে প্রকাশ করেছেন ব'লে। কিন্তু গীতায় শ্রীকৃষ্ণ যে নিজে বলে গিয়েছেন, কপিলদেবও স্বয়ং তিনিই, সেটা কি তুষার চোখে দেখে না ? দেখুন গীতার ১০/২৬ নং শ্লোক, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, "সিদ্ধানাং কপিলো মুনিঃ" যার অর্থ- সিদ্ধপুরুষদের মধ্যে আমি কপিল মুনি। তো এই কপিল মুনি যদি নিজেকে ঈশ্বর হিসেবে প্রকাশ করে, তাহলে সমস্যা কোথায় ? সমস্যা হলেন আপনারা আর্য সমাজীরা। আপনারা এত ভালো বোঝেন যে, তা অন্যদেরকে সহজ কথায় বুঝাতে পারেন না অথবা আপনার নিজেরাই কিছু বোঝেন না, তাই অন্যেরা আপনাদের কথা বোঝে না।

আপনারা শুধু- বেদ, উপনিষদকে সনাতন ধর্মের ধর্মগ্রন্থ মনে করেন; পুরান, গীতা, রামায়ণ, মহাভারত এগুলো ধর্মগ্রন্থ মনে করেন না, তাই এগুলোকে সনাতন ধর্ম বিরোধীদের কটূক্তি থেকে রক্ষার কোনো চেষ্টা করেন না, কিন্তু বেদকে তো সমালোচনার হাত থেকে রক্ষা করবেন ? সেটাও করেন না কেনো ? বেদের অনেক প্রসঙ্গের সাথে ভাই ফোঁটা প্রসঙ্গে- যম ও যমীর কথোপকথন নিয়ে আপনাদের একটাও প্রবন্ধ আজ পর্যন্ত আমার চোখে পড়লো না কেনো ?

কিন্তু আমি আপনাদের মতো একচোখা নই, আমি গীতাকে যেমন সর্বোচ্চ রেসপেক্ট দিই, তেমনি বিকৃত পুরাণগুলো সম্পর্কেও প্রকৃত সত্য যুক্তির সাথে তুলে ধরি, সেই সাথে বেদকেও ডিফেন্ড করার জন্য লিখি। আপনারা যেমন গীতা সম্পর্কে বাজে কথা বলেন, তেমনি আমি বেদ সম্পর্কে বাজে কথা বলি না; কারণ, আপনারা গীতা, পুরাণকে সনাতন ধর্মের অংশ মনে করতে না পারেন, কিন্তু আমি বেদকে সনাতন ধর্মের ভিত্তি মনে করি।

আপনারা, দয়ানন্দ সরস্বতীর কিছু অনুসারীরা, যাদের সংখ্যা সমগ্র সনাতনী সমাজের ০.০১%ও নয়, তারা ছাড়া, বাকি ৯৯.৯৯% এর বেশিও হিন্দু শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর মনে করে এবং সেটা শাস্ত্র দ্বারা প্রমাণিত; যেমন- ভাগবত ও মহাভারতের কৃষ্ণ সম্পর্কিত প্রতিটি ঘটনায় প্রমাণিত যে শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর; গীতার প্রায় প্রতিটি বাণীতে প্রমাণিত যে শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর; শ্রীকৃষ্ণ যে ঈশ্বর সেই অভিমত প্রকাশ করেছেন বঙ্কিমচন্দ্রও। অর্জুন তো শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দেখে শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর হিসেবে মেনে নিয়েছেনই, মহাভারতের ভীষ্মও যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে তাঁকে প্রথম অর্ঘ্য দিতে যুধিষ্ঠিরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন; গীতাশাস্ত্রী জগদীশচন্দ্র ঘোষও শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর হিসেবে স্বীকার করেছেন।

গীতায় শ্রীকৃষ্ণ যে শুধু কথার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন যে তিনি ঈশ্বর, ব্যাপারটা তো শুধু এমন নয়, ভাগবত ও মহাভারতে বর্ণিত অসংখ্য ঘটনায় শ্রীকৃষ্ণ কাজে প্রমাণ করেছেন যে তিনি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর। এই সবের প্রেক্ষিতে যখন প্রায় হান্ড্রেড পার্সেন্ট হিন্দু বিশ্বাস করে যে শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ঈশ্বর, তখন আপনাদের এত সমস্যা কেনো আর কোথায় ? আপনারা- কপিল মুনি, ঋষিকা বাকসহ যাদেরকেই শ্রীকৃষ্ণের মতো ঈশ্বর প্রমাণ করতে চেয়েছেন, তাঁরা তো শুধু থিয়োরিটিক্যালি নিজেদেরকে ঈশ্বর হিসেবে প্রকাশ করেছেন, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হিসেবে তাদের কোনো প্র্যাকটিক্যাল কাজ দেখাতে পারবেন কি, যেমন শ্রীকৃষ্ণ- ভাগবত ও মহাভারতে অসংখ্য বার দেখিয়েছেন ? পারবেন না। শুধু কথায় কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না, কিন্তু কাজে বিশ্বাস করে সবাই। এই কাজ দ্বারা প্রমাণিত যে শ্রীকৃষ্ণ সর্বশক্তিমান ঈশ্বর। তাছাড়া কপিলমুনি, ঋষিকা বাকসহ যাদের কথা আপনারা বলেছেন, তাঁরা যে শ্রীকৃষ্ণেরই অন্য রূপ, সেটা তো গীতা দ্বারাই প্রমাণিত। এতকিছুর পরও শ্রীকৃষ্ণের ঈশ্বরত্ব নিয়ে আপনাদের এত চুলকানী কেনো ? কেনো ?

সাধারণ একজন ব্যক্তি দয়ানন্দ, যার বেদের জ্ঞান আছে বলে যিনি প্রণম্য এবং যিনি বেদ রচনা করেন নি বলে ঋষিও নন, তাকে আপনারা মহর্ষি বানিয়ে প্রকৃত মহর্ষিদেরকে অপমান করেছেন বা করছেন। ভাগবত, পুরাণ, গীতা না মানলেও এবং কোনো প্রকার সাকারে বিশ্বাস না করলেও, বিকৃত ওঁ এর প্রতীক (ও৩ম) ব্যবহার করেন এবং আর্য সমাজীদের মন্দিরে দয়ানন্দর ছবি বড় করে বাঁধিয়ে রেখে তার দুপাশে রাম ও শ্রীকৃষ্ণের ছবি ছোট করে রেখে তাঁদেরকে অপমান করার পাশাপাশি নিজেরা ভণ্ডামি করেন। এসব কেনো ?

যদি ক্ষমতা থাকে তো আপনারা, সমস্ত আর্য সমাজীরা, সম্মিলিতভাবে বোর্ড বসিয়ে আমার এই প্রবন্ধের জবাব দিয়েন।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment