Monday 25 May 2020

নকুল কুমার বিশ্বাসের- “ভাগবত পড়ে ভগবানকে পাইছো নি”- গানের জবাব


নকুল কুমার বিশ্বাসের- “ভাগবত পড়ে ভগবানকে পাইছো নি”- গানের জবাব :

সারাদেশের লোক যদিও নকুলকে হিন্দু মনে করে, কিন্তু নকুল মনে প্রাণে হরিচাঁদ ঠাকুরের মতুয়াবাদে বিশ্বাসী একজন লোক, আর মতুয়ারা হিন্দুদের ঘরে শত্রু বিভীষণ; কারণ, এরা হিন্দুদের নাম পদবী ব্যবহার করে, কিন্তু হিন্দুধর্ম পালন করে না, উল্টো মাঝে মাঝে কিছু হারামজাদা, হিন্দুধর্ম সম্পর্কে কঠোরভাবে সমালোচনা বা বাজে মন্তব্য করে, নকুল এই শ্রেণীর একজন লোক।

যা হোক, নকুল তার “ভাগবত পড়ে ভগবানকে পাইছো নি” গানে হিন্দুধর্ম সম্পর্কে কঠোর সমালোচনা করেছে এবং এই সমালোচনা এতটাই কঠোর যে- তার মতে হিন্দুধর্ম কোনো ধর্মই নয়, এটা শুধু রং তামাশা এবং ফুর্তি। সাধারণভাবে একবার কেউ গানটা শুনলে হয়তো বুঝতে পারবে না যে নকুল হিন্দুধর্মের কোন জায়গায় কুঠারাঘাত করেছে, কিন্তু কয়েকবার গানটা গভীর মনোযোগসহ শুনলে বা আমার এই প্রবন্ধটি পড়ার পর আপনি বুঝতে পারবেন যে নকুল আসলে হিন্দুধর্মের কোথায় আঘাত করেছে ?

একটা গানে একই কথা বারবার আসে, তাই গাওয়ার জন্য যে গান লিখা হয়, তাতে একই কথা বারবার না লিখে, সেই লিরিকে নানারকম সংকেত রাখতে হয় যাতে গায়ক বুঝতে পারে কোথায় কোন লাইনটি একাধিকবার আসবে, কিন্তু এখানে যেহেতু আমি গান গাইছি না বা কারো গাওয়ার জন্যও নকুলের লিরিকটি তুলে ধরছি না, তাই সেই সব ইঙ্গিত আমি দেবো না, নকুল তার গানে যে কথাগুলো বলেছে, আমি শুধু সেগুলোই তুলে ধরে তার জবাব দিচ্ছি-

যা হোক, নকুল তার গানের শুরুতেই বলেছে-

“পূজা করো, যজ্ঞ করো, মালা জপো, টিকি ধরো
একদিন ঘরের খবর লইছো নি, ভাগবত পড়ে ভগবানকে পাইছো নি”

-মানুষ ঘরের খবর আবার কী নেবে ? ঘরের খবর নেওয়া মানে তো ঘর সংসার ঠিকমতো চলছে কিনা, সেটা, তো ঘর সংসার ঠিক না্ থাকলে কেউ কি ধর্ম কর্ম করতে পারে ? মনে টেনসন থাকলে কেউ কি ধর্মে মনোযোগ দিতে পারে ? পারে না। তার মানে- কেউ যদি পূজা করে, যজ্ঞ করে, তার ঘর সংসার সব ঠিকমতো চলছে, তার পারিবারিক জীবনে কোনো সমস্যা নেই, এটাই বোঝাই; এটা নিয়ে আবার কাউকে প্রশ্ন করার দরকার কী ? এর সাথে নকুল বলেছে, ভাগবত পড়ে ভগবানকে পাইছো নি ? ভাগবত পড়ে ভগবানকে আবার কিভাবে পাওয়া যায় ? ভাগবত পড়ে ভগবানকে জানা যায়, আর যাকে জানা যায়, তাকে পাওয়ার পথও এক সময় পাওয়া যায়। সুতরাং ভগবানকে পাইয়ে দেওয়ার দায়িত্ব ভাগবতের নয়, ভগবানকে পাওয়া নির্ভর করে কোনো ব্যক্তির নিজের সাধনার উপর, সে ব্যাপারে কথা না বলে নকুল ভগবানকে পাওয়ার ব্যাপারে ভাগবত পড়ার দোষ ধরছে কেনো ?

যা হোক, এর পরে নকুল বলেছে-

“অজ্ঞ হইয়া যজ্ঞ করো না জানিয়া বাপের নাম
ওই, না বুঝিয়া পূজিতেছো মাটির গড়া কৃষ্ণ রাম।”

নকুল শুরুতেই যজ্ঞ করাকে তো ফালতু বলেছে, গানের ছন্দে এখানে আবারও বললো, এর সাথে আরো বললো হিন্দুরা না বুঝে নাকি মাটির গড়া কৃষ্ণ রাম কে পূজা করছে !

যজ্ঞ করা এবং দেবতাদের পূজা করা সনাতন ধর্মীয় কালচার, এই দুটোকে বাদ দিলে সনাতন ধর্ম বলেই কিছু থাকে না। নকুল এই দুটো বিষয়কে ফালতু বলে আসলে সনাতন ধর্মকেই ফালতু বলেছে; কারণ, নকুল বলেছে হিন্দুরা না বুঝে মাটির গড়া কৃষ্ণ ও রামকে পূজা করছে। কিন্তু রাম ও কৃষ্ণ ঐতিহাসিক চরিত্র এবং হিন্দু পুরাণ মতে রাম ভগবান এবং শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর। মানুষ কারো মূর্তি গড়ে তার রূপকে স্মরণ করতে বা স্মরণ করাতে, বর্তমানে মাটির মূর্তির পরিবর্তে ছবিও সেই একই কাজ করছে; কিন্তু ছবি ত্রিমাত্রিক নয় বলে কারো মূর্তি বা ভাস্কর্যই সেই ব্যক্তিকে শারীরিক দিক থেকে বোঝানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকর। এই মূর্তি গড়া কিভাবে ফালতু বিষয় হতে পারে ? এটা যদি ফালতু বিষয় হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটার উপর উচ্চতর পড়াশোনা করায় কেনো বা ঢাকার ফার্মগেটের খামার বাড়িতেই বা শেখ মুজিবের বিশাল মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে কেনো ?

রাম এবং কৃষ্ণের মতো নকুলের হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ঠাকুরও ঐতিহাসিক চরিত্র। তো মতুয়াদের আস্তানায় কি হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের কোনো মূর্তি বা ছবি নেই ? সেই মূর্তি বা ছবিকে কি মতুয়ারা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে না ? যদি তারা এটা না করে তাহলে কিভাবে মতুয়ারা হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় ? ছবি বা মূর্তি হলো কোনো কিছুকে শ্রদ্ধা জানানোর প্রতীক, যেমন প্রতীক একুশে ফেব্রুয়ারির শহীদ মিনার বা ‘৭১ এর জাতীয় স্মৃতিসৌধ। তো শহীদ মিনার বা স্মৃতিসৌধে কি মানুষ শ্রদ্ধা জানায় কিছু না বুঝে ? আবার কিছু না বুঝেই কি মতুয়ারা হরিচাঁদ বা গুরুচাঁদকে শ্রদ্ধা বা সম্মান জানায় ? মতুয়ারা যদি জেনে বুঝে হরিচাঁদ গুরুচাঁদের মূর্তি বা ছবিতে শ্রদ্ধা সম্মান বা জানায়, তাহলে এক্ষেত্রে রাম ও কৃষ্ণের মূর্তি বা ছবিতে শ্রদ্ধা বা সম্মান জানানোয় হিন্দুদের দোষ কী ?

মতুয়ারআ আসলে মুসলমান রোগে আক্রান্ত, মুসলমানরা যেমন গভীরভাবে না ভেবে কোনো বিষয়ে মন্তব্য করে, মতুয়ারাও তেমন, এর মধ্যে নকুলও অন্তর্ভূক্ত।

এরপর নকুল বলেছে-

“তুলসীর মালা জপিতেছো, ভাবিয়া কি দেখিয়াছো
টিকি ধরে কী পাইয়াছো, হিসাবে মিলাইছো নি..”

এসব নিয়ে ভাবারই বা কী আছে আর হিসাব মেলানোরই বা কী আছে ? পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, তোমরা কর্ম করে যাও ফল প্রদানের দায়িত্ব আমার, হিন্দুরা শ্রীকৃষ্ণের সেই কথা মেনে চলে তার নামে তুলসীর মালা জপে, এতে ভাবার কী আছে ? আর হিন্দুরা কি মতুয়াদের মতো এত সঙ্কীর্ণমনা বা ছোটলোক যে হিসেব মিলিয়ে ধর্মকর্ম করবে ?

এরপর নকুল বলেছে-

“পাষান পূজায় আসান হইয়া জীবনের দুঃখ ব্যথা
ও দেখো হাদিসে করিয়া হদিস চতুর্বেদেও সেই কথা…

নকুলকে বলছি-  হাদিস তো মুহম্মদের কথা ও কাজের বর্ণনা, যে মুহম্মদ, গায়ের জোরে মক্কা দখলের পর কাবা ঘরে থাকা ৩৬০ টি মূর্তিকে ভেঙ্গে ফেলেছিলো, সেই হাদিসে তো বলা থাকবেই যে পাষাণ পূজায় কিছু হয় না; কিন্তু বেদেও এই কথা বলেছে, সেটা আপনাকে কে বললো ? মিথ্যা প্রচার করে অমুসলিমদের ধোকা দেওয়ার ইসলামিক নাম তাকিয়া, ইসলামিক রোগে আপনি তো অনেক আগে থেকেই আক্রান্ত, তাই মুহম্মদ ও ইসলামের প্রশংসা করে গান করেন, তো ইসলাম ও মুসলমানদের ছোঁয়ায় থাকতে থাকতে কি আপনাকেও তাকিয়া ধরেছে নাকি যে বেদের নামে মিথ্যাচার করছেন ? জাকির নায়েকের মতো মুসলমানরা ভাবে হিন্দুরা তো বেদ পড়ে না, তাই বেদ নিয়ে যা বলবো, তাই তারা বিশ্বাস করবে, সেই একই ভাবনা কি আপনিও ভাবেন নাকি ? শোনেন, এখন হিন্দুধর্ম নিয়ে কেউ কোনো উল্টা পাল্টা কথা বললে, জ্ঞান দিয়ে থাকে থাপড়ানোর মতো ব্যক্তির জন্ম হয়েছে, সুতরাং হিন্দুধর্ম সম্পর্কে কথাবার্তা বলার আগে একটু ভেবে চিন্তে বলবেন, এই গানের জন্য আপনাকে তো একদিন থাপ্পড় খেতেই হবে, ভবিষ্যতে যেন এরকম আর কোনো দুষ্কর্ম না করেন, সেদিকে নজর রাইখেন।

এর সাথে আপনি বলেছেন-

“একটি বছর হইলে পুর্তি মাটি নিয়া করছ ফুর্তি
ঘরে আছে জ্যান্ত মূর্তি তাহার পূজা করছো নি।”

-হিন্দুরা মাটি নিয়ে ফুর্তি করে, না ? পূজার জন্য হিন্দুরা শ্রদ্ধা ও ভক্তি নিয়ে মূর্তি তৈরি করে, এটা আপনার কাছে ফুর্তি মনে হয় ? ফুর্তি মানে জানেন ? ফুর্তি মানে সেটা, যেটা আপনি আপনার বউ এর সাথে বা আপনার টিভি অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে আসা মেয়েদের সাথে করেন। শালা লম্পট কোথাকার ? তোর ফুর্তির আরো খবর জানি, যেটা এখানে প্রকাশ করে কারো সংসারকে ভাঙতে চাই না। কিন্তু তোর চিন্তা ও মুখে লাগাম দে, না হলে কোনো কিছুই গোপন থাকবে না, জেনে রাখ, তোর হাঁড়ির খবর আমি জানি, সেই হাঁড়ি ভেঙ্গে গেলে সমাজে মুখ দেখাতে পারবি না।

এরপর তুই বলেছিস-

“তোমার ময়লা মনে বয়লা হাতে গলায় পড়ো রুদ্রাক্ষর
ভক্ত তুমি বড়ই শক্ত গেরুয়ায় দিচ্ছে স্বাক্ষর
আইছো হাট বাজারে রং লাগাইয়া, পরার কাপড় ছাপাইয়া
কৃষ্ণ নামের রং মাখাইয়া মনটারে রাঙাইছো নি..”

-কেউ যদি ভেতর থেকে নিজেকে না রাঙায়, উপরে উপরে নিজেকে রাঙাতে পারে না, দু একজন ব্যতিক্রম থাকতে পারে, কিন্তু সেই দু একজনকে দিয়ে সবাইকে বিচার করা যায় না। কে কৃষ্ণ নামে নিজেকে রাঙিয়েছে, সেটা তুই উপরে দেখে বুঝবি কিভাবে ? তুই যে এত বড় লম্পট, টিভি অনুষ্ঠানে চান্স দেওয়ার নাক করে প্রত্যেকটি মেয়ের দেহের স্বাদ নিস, সেটা কি তোর ভদ্রবেশী চেহারা দেখে কেউ বুঝতে পারবে ? আমি তো কোনো দিন কপালে তিলক কাটি নি, মাথা ন্যাড়া করে টিকিও রাখি না, আবার গেরুয়া পোষাকও পরি না, কিন্তু কেউ কি আমার কাছে এসে দাবী করতে পারবে যে, আমার চেয়ে সে বড় কৃষ্ণ ভক্ত ? পারবে না। কারণ, আমি শ্রীকৃষ্ণের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাজ করি, তাকে নিয়ে ব্যবসা করি না, আর অন্যরা কৃষ্ণভক্তি বা কৃষ্ণ নামের আড়ালে শ্রীকৃষ্ণের জীবনের আসল ঘটনা না জেনে তাকে নিয়ে শুধু ব্যবসা করে না, তার নামে বদনাম করার পথও অন্যদেরকে দেখিয়ে দেয়। সুতরাং কার ভেতরটা কোন রং এ কতটা রঞ্জিত, সেটা নিয়ে তুই বলার কে ?

এরপর তুই বলেছিস-

ঈশ্বর নিরাকার ভাবে সর্বব্যাপী আছেন
অথচ আমরা তীর্থ যাত্রা দ্বারা তার সর্বব্যাপিত্বকে ক্ষুণ্ন করি, মহাভারতে বলা একথা সত্য কি না ?”

-একথা তুই শুধু হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বললি কেনো ? ঈশ্বর নিরাকার, সর্বব্যাপী, সেটা সবাই জানে। এটা কি মুসলমানরা জানে না ? তোর মতুয়ারা জানে না ? যদি তারা জেনেই থাকে তাহলে মুসলমানরা কেনো মক্কায় যায়, সে বিষয়ে তুই কোনো প্রশ্ন তুললি না কেনো ? তোর মতুয়ারা কেনো বছরে একবার বাংলাদেশের ওড়াকান্দি এবং পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুরনগরে সমবেত হয়ে হরিচাঁদের নামে নাচানাচি করে ? হরিচাঁদকে তো তোরা মতুয়ারা হিন্দুধর্মের টার্ম “পূর্ণব্রহ্ম” মনে করিস, পূর্ণব্রহ্ম মানে তো ঈশ্বর, আর ঈশ্বর তো সব জায়গাতেই থাকে, তাহলে তোদের ওড়াকান্দি বা ঠাকুরনগরে সমবেত হওয়ার দরকার কী ? শোন, মোবাইল নেটওয়ার্ক, মোবাইল টাওয়ারের অধীন সব জায়গাতে কম-বেশি থাকলেও, মোবাইল সিগন্যাল সবেচেয়ে শক্তিশালী হয় সেই মোবাইল টাওয়ারের আশে পাশে, একইকরমভাবে সব জায়গায় ঈশ্বর থাকলেও তীর্থক্ষেত্রগুলোতে ঈশ্বরের প্রভাব সবচেয়ে বেশি, তাই হিন্দুরা যেমন বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্র দর্শনে যায়, তেমনি মুসলমানরা যায় মক্কা মদীনয়া, একই কারণে তোরা দৌড়াস ঠাকুরনগর বা ওড়াকান্দি।

এরপর বলেছিস-

“কাশিতে নাই শিব আর কালী, কী দেখতে যাও খালি খালি
মনের ঘরে বনমালী একদিন খুঁইজা তারে দেখছো নি…”

কাশিতে শিব আর কালী নেই, কিন্তু মক্কার কাবায় আল্লা আছে তাই না ? তোর সাহস আছে- মক্কার কাবায় বা মসজিদে আল্লা নেই একথা বলার ? সাহস আছে- মক্কা মদীনায় নেই আল্লা, কেনো করো হজের নামে চিল্লাপাল্লা- বলে গান গাওয়ার ? সাহস আছে- বছর ঘুরে কেনো মাটির মূর্তি পূজা করিস- এর মতো - কেনো প্রতি বছর নিরীহ পশু জবাই করিস- বলার ? সাহস আছে- তিলক টিকিতে ভগবানকে পাইছো নি’র- মতো -দাড়ি টুপিতে আল্লাকে পাইছো নি- প্রশ্ন তোলার ? সাহস আছে- পাষান পূজায় হয় না আসান জীবনের দুঃখ ব্যথা… বলার মতো- নামায রোযায় হয় না কিছু সকলই শুধু বৃথা… বলার ? সাহস আছে- না বুঝিয়া পূজিতেছো মাটির গড়া কৃষ্ণ রাম… বলার মতো- না বুঝিয়া করিতেছো, নিরীহ পশুর রক্ত স্নান… বলার ? আছে সাহস বলার- তুলসীর মাল জপিতেছো, ভাবিয়া কী দেখিয়াছো…টিকি ধরে কী পাইয়াছো, হিসাবে কী মিলাইছো নি…, ভাগবত পড়ে ভগবানকে পাইছো নি- বলার মতো -তসবীর মালা জপিতেছো, ভাবিয়া কী দেখিয়াছো… কোরান পড়ে আল্লাকে পাইছো নি.- বলার ?

আমি জানি এগুলো বলার তোর সাহস নেই; কারণ, তুই একটা অর্ধেক মরদ, তুই বুলি ফুটাইতে পারিস শুধু হিন্দুদের বেলায়; কারণ, তুই ভালো করে জানিস যে হিন্দু এবং হিন্দুধর্ম সম্পর্কে যা ই বলিস, আর যে কুযুক্তিই দেখাস হিন্দুরা তোর ঘাড়ে চাপাতির কোপ দিতে যাবে না। কিন্তু এর এক শতাংশও্ যদি ইসলাম ও মুসলমানের নামে বলিস, তোর জীবন থাকলেও গান গাওয়ার জন্য তোর জিহ্বা এবং হারমোনিয়াম বাজানোর জন্য তোর আঙ্গুল থাকবে না। তুই আসলে শক্তের ভক্ত, তাই মুসলমানদেরকে তেল দেওয়ার জন্য ইসলাম ও মুসলমানদের প্রশংসা করে গান বানাস, যেখানে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রশংসা করার মতোই কিছু নেই।

মসজিদের প্রতি আকর্ষণ হেতু নতুন একটি মসজিদ বানানোর জন্য তুই দুই কোটি টাকা দিয়েছিস, যেখানে মসজিদই হলো ইসলামি সন্ত্রাসের আঁতুর ঘর। আমার তো এখন এই কথা ভাবলেই খারাপ লাগে যে এক সময় আমি তোর বড় ভক্ত ছিলাম এবং তোর গানের ক্যাসেট কিনে অনেক টাকা তোকে দিয়েছি, যে টা্কা তুই মুসলমানদেরকে দিয়েছিস মসজিদ বানানোর জন্য। আমার সেই টাকা দিয়ে তুই মন্দির না বানা, যদি গরীব দুঃখীদের সেবার জন্য বা কাপড় চোপড় কেনার জন্য দিতিস, তাতেও আমি খুশি হতাম।

যে মসজিদ বানানোর জন্য তুই দুই কোটি টাকা মুসলমানদেরকে দিয়েছিস, তোর কি মনে হয়, সেই মসজিদে তোকে কোনো দিন তোর এই নকুল কুমার নাম থাকাকালীন ঢুকতে দেবে ? তোর এই নকুল কুমার নাম কোনো দিন মসজিদের দেয়ালে বাঁধিয়ে রাখবে ? যদি তুই এটা ভাবিস, তাহলে আমি বলবো, মুসলমান ও ইসলাম সম্পর্কে এখনও তুই অজ্ঞ। হিন্দুরা অজ্ঞ হয়ে যজ্ঞ করতে পারে, কিন্তু তুই মুসলমান ও ইসলাম সম্পর্কে চুড়ান্ত অজ্ঞ, ইসলাম ও মুসলমানদেরে প্রকৃতরূপ সম্পর্কে তুই কিছুই জানিস না।

শোন, ইসলাম মুসলমানদেরকে নির্দেশ দিয়েছে- যারা অমুসলিম তাদের সাথে বন্ধুত্ব না করতে, তাদেরকে হত্যা করতে, তাদের নারী ও ধন সম্পদ লুঠ করতে, তাদেরকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে, দেশে থাকতে দিলেও তাদের থেকে জিজিয়াকর নিতে। কোনো শরিয়া আ্ইন শাসিত দেশে কোনো মুসলমান যদি কোনো অমুসিলমকে কোনো কারণে হত্যা করে, এর জন্য সেই মুসলমানের কোনো শাস্তি হবে না। পৃথিবীতে মুসলমানরাই শুধু মুসলমানদের ভাই ও বন্ধু, অন্য কাউকে মুসলমানরা কোরানের নির্দেশেই বন্ধু হিসেবে নিতে পারবে না। এই ইসলাম ও মুসলমানদের প্রশংসা করে তুই গান বানাস ? তুই কি জানিস, নিজের টাকা দিয়ে তুই যে মসজিদ মুসলমানদেরকে বানিয়ে দিয়েছিস, তুই মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত সেই মসজিদে কোনো দিন ঢুকতে পারবি না ? তুই মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত সেই মসজিদের দেওয়ালে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তোর নাম তারা রাখবে না।
যদিও বাস্তবতার কারণে মসজিদের উদ্বোধনের সময় তারা তোর নাম মসজিদের ভিত্তি ফলকে রাখতে বাধ্যও হয়, সেটা তারা পরে খুলে ফেলবে এবং এটা তারা কখনোই মন থেকে মেনে নিতে পারবে না, এটা কি তুই জানিস ?

আমি জানি তোর ছেলে উচ্চ লেভেলের বিদেশি শিক্ষায় শিক্ষিত, তাই বিয়ের বাজারে পাত্র হিসেবে সে নিশ্চয় অনেক উপযুক্ত; ইসলাম ও মুসলমানের প্রশংসা করে তুই এত গান গাইলি, দুই কোটি টাকা খরচ করে তাদের জন্য মসজিদ বানিয়ে দিলি, তো কোনো মুসলমানকে তোর ছেলের সাথে তার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দেখিস তো সে কী বলে ? আমি জানি সে প্রথমেই বলবে, একজন কাফের বা হিন্দু হয়ে আপনি কিভাবে এই ধরণের প্রস্তাব দেওয়ার সাহস করেন ? ভদ্রতার খাতিরে সে যদি এই কথা নাও বলে এবং জামাই হিসেবে তার যদি তোর ছেলেকে তার উপযুক্ত মনে হয়, তাহলে সে তোকেই উল্টো প্রস্তাব দেবে যে, আপনার ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে পারি, কিন্তু প্রথমে তাকে ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হতে হবে, এই প্রস্তাবে আপনি কি রাজী ?

তুই তো ইসলাম সম্পর্কে অনেক জ্ঞানে জ্ঞানী, তো মুসলমানদের চরিত্র সম্পর্কে আমি যে কথাটা বললাম, তোর ছেলের যদি এখনও বিয়ে না হয়, ছেলের বিয়ের জন্য কোনো মুসলমানকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আমার কথাটাকে মিলিয়ে দেখিস। বাস্তবতা হলো- পৃথিবীর কেউ কখনো মুসলমানদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি, ভবিষ্যতেও পারবে না; তুই কী ভেবেছিস, মুসলমানদের প্রশংসা করে গান গাইয়ে আর তাদেরকে খুশি করার বা রাখার জন্য দুই কোটি দিয়ে মসজিদ বানিয়ে দিলেই কি তারা তোকে মন থেকে বন্ধু হিসেবে মেনে নেবে ? নেবে না। জিহাদ শুরু হলে তোর গলা ই আগে কাটবে এবং তোর বাড়ির মেয়েদেরকে আগে ধর্ষণ করবে এবং তোর ধন সম্পদই আগে লুঠ করতে যাবে এটা ভেবে যে এই সালা দুই কোটি টাকা খরচ করে মসজিদ বানায়, নিশ্চয় এর আরো অনেক টাকা পয়সা আছে। জিহাদ শুরু হলে মুসলমানরা তোর সাথে এই আচরণ করবে, কারণ তুই কাফের। আর কাফেরদের সাথে এই আচরণ করতেই কোরাণ হাদিসে মুসলমানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যা হোক, গানের শেষে তুই বলেছিস-

"শোনো আমার হিন্দু ভাই ভগ্নিগণ"

-তুই কি নিজেকে হিন্দু মনে করিস যে হিন্দুদেরকে তুই ভাই ভগ্নি বলে সম্বোধন করলি ? তুই যদি হিন্দু হতিস তাহলে এইভাবে হিন্দুদের সমালোচনা করে গান বানাতে পারতিস ? তুই পারতিস মনু সংহিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জেনে মনুসংহিতার রেফারেন্সে হিন্দুদের সমালোচনা করতে ? পারতিস না। তাই খবরদার এখন থেকে আর নিজেকে হিন্দু বলে দাবী করবি না।

তারপর বলেছিস-

"এই দেহের মধ্যেই গয়া কাশি শ্রীক্ষেত্র আর বৃন্দাবন।"

-এই দেহের মধ্যে ওড়াকান্দি, ঠাকুরনগর, মক্কা, মদীনা নেই ? তুই সে বিষয়ে কিছু বললি না কেনো ? নাকি সে বিষয়ে বললে নিজের পাছায় আর কাপড় না থাকার সম্ভাবনা ?

এরপর বলেছিস-

"যাও পাসপোর্ট আর ভিসা করে হরকে দেখতে হরিদ্বারে"

-মক্কা মদীনায় যেতেও তো মুসলমানদের পাসপোর্ট আর ভিসা লাগে, সে ব্যাপারে তোর মন্তব্য কী ? হিন্দুরা তো হরিদ্বারে গিয়ে তবু হরকে দেখতে পায়, মুসলমানরা মক্কা মদীনায় গিয়ে কী দেখতে পায় ?

এরপর বলেছিস-

"একদিন যেতে হবে পরপারে, তাহার ভিসা আনছো নি"

-পরপারে যেতে আবার পাসপোর্ট ভিসা লাগ- কবে, কার ? পরপারের পাসপোর্ট ভিসা কেউ নিতে চায় না; কারণ, পরপারে কেউ যেতে চায় না। কিন্তু তোর জন্য পরপারের পাসপোর্ট ভিসা তাড়াতড়ি হওয়া খুব জরুরী, জানি না তোর এই পাসপোর্ট ভিসা ঈশ্বর তোকে কবে দেবে ? কেননা, যতদিন তুই বেঁচে থাকবি, ততদিন তো তুই এইরকম গান বানিয়ে হিন্দুদেরকে কষ্ট দিতেই থাকবি।

যা হোক, তুই যে কোরান নিয়ে, কোরানের প্রশংসা করে গান বানাস, তুই কি জানিস ইসলামে গান বাজনা সব নিষেধ ? গান বাজনা অভিনয়সহ যেকোনো শিল্পের চর্চা হলো সনাতনী কালচার। তুই রাতদিন সনাতনী কালচারের মধ্যে ডুবে থাকিস, আর নিজেকে মতুয়া ভাবিস এবং সেই সনাতনী কালচারের মাধ্যমেই ইসলামের প্রশংসা করিস এবং হিন্দুদেরকে বাঁশ দিস, তোর মতো মাদারচোদ আর কি কেউ আছে ? নাই। আসলে তুই হলি সেই ধরণের ব্যক্তি, যে মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়ে, মায়ের বুকের দুধ খেয়ে জীবন বাঁচিয়ে, মায়ের হাতে লালিত পালিত হয়ে বড় হওয়ার পর এখন বলছিস যে, মা আসলে ভালো না।

যা হোক, এতক্ষণ যা বলেছি সব নকুলের উদ্দেশ্যে, এখন বলছি আমার পাঠকদের উদ্দেশ্যে, নকুলের চরিত্র বোঝার পর নকুলকে নিয়ে প্রাথমিক রিয়্যাকশন হিসেবে নিচের এই কবিতা বা গানটি লিখেছিলাম, সেটা দেখে নিন নিচে-

যদি মরে হারামজাদা নকুলও বিশ্বাস
বঙ্গের হিন্দুরা ফেলবে স্বস্তিরও নিঃশ্বাস।

হিন্দু পরিচয়ে গান গায় নিয়ে কোরআন,
মন্দিরে না দিয়ে দেয় মসজিদেতে দান।

ভুল ব্যাখ্যা দেয় কৃষ্ণ বেদব্যাসের,
হিন্দুধর্মকে বানায় উপহাসের।

সেজে হিন্দু, হিন্দুধর্মে করে এ আঘাত
মুসলমান আর নকুলে নেই কোনো তফাত।

মতুয়া এই হারামজাদার কোনো কথা শুনে
পাবেন না কষ্ট কভু কোনো হিন্দু মনে।

থাকিবেন সাবধান এই নকুল(বেজি) থেকে,
রাখিবেন তার থেকে দূরে, ছেলে মেয়েকে।

আগাগোড়া লম্পট এই নকুলও বিশ্বাস-
টিভিতে চান্সের নামে মেয়েদের করে সর্বনাশ।

উপরে শালা ভালো মানুষ, ভেতরে শয়তান,
হিন্দুদের করতে ছোট, গায় ইসলাম নিয়ে গান।

ছিলাম আমি বড় ভক্ত এক সময় তার,
স্বরূপ জেনে তার প্রতি এখন আমার এরূপ ব্যবহার।
----------------------------
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment