Wednesday 27 May 2020

গীতায় শ্রীকৃষ্ণ "আমার জন্ম ও মৃত্যু নেই- বলে আসলে কী বুঝিয়েছেন ?"


#Acharya_shubhash_Shastri,

যেহেতু আপনি বেদের সাথে সাথে গীতাও মানেন, যার প্রমাণ আমার কাছে আছে, যেটা ফটো হিসেবে এই প্রবন্ধের সাথে পোস্ট করেছি, সেহেতু আপনাকে প্রশ্ন করছি- আপনার কথার প্রমাণ কি  আপনি গীতা থেকে দিতে পারবেন ?

আমি জানি আর্যরা শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর হিসেবে এবং অন্যান্য অবতারগণকে ভগবান হিসেবে স্বীকার করে না এবং বাঙ্গালি আর্যদের গুরু হিসেবে আপনিও এর ব্যতিক্রম নন এবং সেকারণেই আপনি উক্ত মন্তব্যটি করেছেন, তাই আপনার কাছে আমার অনুরোধ, আপনি গীতার আলোকে আপনার মন্তব্যের ব্যাখ্যা দেবেন এবং শ্রীকৃষ্ণ গীতায় কেনো বলেছেন যে আমার জন্ম ও মৃত্যু নেই, সেই ব্যাখ্যাটিও দেবেন। এ প্রসঙ্গে আমার পাঠকরা দেখে নিন- গীতায় শ্রীকৃষ্ণ

"আমার জন্ম ও মৃত্যু নেই- বলে  আসলে কী বুঝিয়েছেন ?"

সাধারণভাবে কোনো প্রাণী বা জীবসত্ত্বার জন্ম হলো পৃথিবীতে তার আগমন এবং মৃত্যু হলো পৃথিবী থেকে তার বিদায় নিয়ে চলে যাওয়া, এই জন্ম সাধারণভাবে চলমান প্রাণীদের ক্ষেত্রে নারী গর্ভের মাধ্যমে এবং উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ফলের মধ্যেকার বীজ এবং নানা ধরণের অঙ্গজ প্রজননের মাধ্যমে হয়ে থাকে। প্রাণীদের ক্ষেত্রে জন্ম ও মৃত্যু একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, আমার জন্ম ও মৃত্যু নেই ( গীতা, ৪/৬); আমি জন্মরহিত (গীতা, ১০/৩); এর কারণ কী ?

জন্ম ও মৃত্যু যেকোনো জীবের জন্য একটি সাধারণ প্রক্রিয়া, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ যখন গীতায় বলেন যে- আমার জন্ম ও মৃত্যু নেই, আমি জন্মরহিত- তখনই, শ্রীকৃষ্ণ যে সাধারণ কেউ নয়, সে কথাই প্রমাণ করে।

গীতার চতুর্থ অধ্যায়, জ্ঞানযোগের শুরুতেই শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, এই জ্ঞানযোগ আমি সূর্যকে বলেছিলাম, সূর্য মনুকে বলেছিলো, মনু ইক্ষ্বাকুকে বলেছিলো। তখন অর্জুন জিজ্ঞেস করেন, আপনার জন্ম পরে, সূর্যের জন্ম আগে, তাহলে আমি কিভাবে বুঝবো যে আপনি তা সূর্যদেবকে বলেছিলেন ?

এর জবাবে শ্রীকৃষ্ণ বলেন, আমার এবং তোমার বহুবার জন্ম হয়ে গিয়েছে, আমি সেই সবই জানি, কিন্তু তুমি তা জানো না।

এইখানেই আসলে ঈশ্বর এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্থক্য। সাধারণ মানুষের তার পূর্বজন্মের কথা সাধারণভাবে মনে থাকে না, কিন্তু ঈশ্বরের তা মনে থাকে, যেহেতু তিনি সর্বজ্ঞানী। এরপর শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,
"আমার জন্ম ও মৃত্যু নেই। আমি সকলের ঈশ্বর, আমি নিজ প্রকৃতিতে আশ্রয় করিয়া নিজ মায়াবলে নিজেকে সৃষ্টি করিয়া থাকি (গীতা, ৪/৬); এবং কখন তিনি পৃথিবীতে আবির্ভূত হন, সেকথা বলেছেন, গীতার ৪/৭ নং শ্লোকে এভাবে-

"যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজামহ্যম।।"

এর অর্থ- যখনই ধর্মের গ্লানি অর্থাৎ অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখনই আমি নিজেকে সৃষ্টি করিয়া থাকি।

ঈশ্বরের এই নিজেকে সৃষ্টির রূপই হলো অবতারগণ। তাই কোনো অবতারের জন্ম কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূর্ণশক্তি ভগবান বিষ্ণু, যখন দেবকীর গর্ভের মাধ্যমে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হতে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি কংসের কারাগারে দেবকী ও বসুদেবকে দর্শন দিয়ে তাদেরকে একথা জানিয়েছিলেন যে, তিনি আসতে যাচ্ছেন তাদের পুত্ররূপে।

সাধারণ মানুষের জন্ম তার নিজের হাতে থাকে না, তাই সে পরিকল্পনা করে তার জন্ম কোনো নির্দিষ্ট পিতা-মাতা বা নির্দিষ্ট পরিবার বা নির্দিষ্ট স্থানে ঘটাতে পারে না। কিন্তু ঈশ্বর তার জন্ম নিজের পরিকল্পনা মতোই ঘটাতে পারেন। তাই শ্রীকৃষ্ণ তার আগমনী বার্তা তাঁর জন্মের অন্তত ১০ বছর পূর্বে দেবকী ও বসুদেবের বিয়ের সময়ই দৈব বাণীতে ঘোষণা করে তিনি কংসকে সাবধান করেছিলেন এবং সেই মতোই তিনি দেবকীর গর্ভের মাধ্যমে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন; সাধারণ মানুষের জন্ম এবং ঈশ্বরের জন্মের মধ্যে আসলে পার্থক্য এটাই, ঈশ্বর জন্ম নেন তার নিজের পরিকল্পনা মতো, কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্ম তার নিজের হাতে নেই, থাকলে- কেউ, দরিদ্র পরিবারে, দরিদ্র দেশে, বিশেষ করে অনেকে মুসলিম সমাজে জন্ম নিয়ে বাল্যকালেই কিছু বুঝে উঠার আগেই নিজের লিঙ্গঅগ্রচর্ম হারাতো না বা বোরকা নামক বস্তায় বন্দী হতো না।

তাই আমার জন্ম নেই বলতে শ্রীকৃষ্ণ বুঝিয়েছেন, সাধারণ জীব যেমন তার জন্মের সাথে সাথে পৃথিবীতে তার আগমনী বার্তা ঘোষণা করে এবং মৃত্যুর সাথে সাথে যেমন তার বিলুপ্তিও ঘোষিত হয়; ঈশ্বরের জন্ম ও মৃত্যু আসলে সেরকম কোনো ব্যাপার নয়; পৃথিবীতে ঈশ্বরের জন্ম ও মৃত্যু ঘটে তাঁর নিজস্ব পরিকল্পনায়, বিগত সময়ের যেসব জন্মের কথা তাঁর স্মরণেও থাকে, কিন্তু সাধারণ মানুষের যা মনে থাকে না। অবতার হিসেবে পৃথিবীতে ঈশ্বরের এই যে বার বার জন্ম ও মৃত্যু, যেটা প্রকৃতপক্ষে জন্ম ও মৃত্যু নয়, যেটা প্রকৃতপক্ষে শুধু মর্ত্যে প্রাণীরূপ ধারণের জন্য তাঁর আসা ও যাওয়া, এটাকে বোঝাতেই শ্রীকৃষ্ণ গীতাতে বলেছেন- আমার জন্ম ও মৃত্যু নেই; আর আগেই বলেছি, কোনো প্রাণীর মৃত্যু হলে পৃথিবী থেকে সেই প্রাণীর বিলুপ্তি ঘোষিত হয়, কিন্তু অবতাররূপী ভগবান বা ঈশ্বরের প্রার্থিব দেহ ত্যাগের সাথে সাথেই তাদের বিলুপ্তি ঘোষিত হয় না, তারা আবার ফিরে আসেন নতুন কোনো রূপ নিয়ে, তাই পৃথিবীতে তাদের আবির্ভাব ও তিরোভাব আসলে তাদের জন্ম ও মৃত্যু নয়, এটা জাস্ট যাওয়া ও আসা মাত্র, যে কথা শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন এভাবে- আমার জন্ম ও মৃত্যু নেই।

আমার জন্ম ও মৃ্ত্যু নেই, এই কথা বলার মাধ্যমেও আসলে শ্রীকৃষ্ণ প্রমাণ দিয়েছেন যে তিনি ঈশ্বর, সাধারণ কোনো মানুষ নন; কারণ, কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে কি এই কথা বলা সম্ভব যে- তার মৃত্যু নেই ?

পৃথিবীতে বর্তমানে যাদের অস্তিত্ব আছে, তাদের সবারই জন্ম হয়েছে, কিন্তু কেউ বলতে পারবে না যে তার মৃত্যু নেই বা মৃত্যু হবে না; কারণ, মরতে সবাইকে হবেই। কিন্তু যখন কেউ বলে যে তার জন্ম ও মৃত্যু নেই, তখন বুঝতে হবে যে এটা সাধারণ কোনো ব্যাপার নয় বা এই কথা যিনি বলছেন, তিনি সাধারণ কেউ নন। কিন্তু এই বিষয়টিই ঢোকে না আর্য নামক কিছু মূর্খের মাথায়, যারা মানসিকভাবে পড়ে আছে সেই বেদ উপনিষদের যুগে!
একটা বিষয় আমার মাথায় ঢোকে না, যে আর্যরা দাবী করে তারা এত জ্ঞানী, ধর্ম সম্পর্কে তারা এত জানে, তাহলে তারা সনাতন ধর্ম সম্পর্কে প্রবন্ধ লিখে সেগুলো ফেসবুক ইন্টারনেটে প্রকাশ বা প্রচার করে না কেনো ? নিজস্ব তাগিদে মানুষকে ধর্ম সম্পর্কে জানানোর বিষয়টি না হয় বাদই দিলাম, জাকির নায়েক মার্কা মুসলমানরা যখন বেদ নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার চালায়, সেই সব কটূক্তির জবাব দিতেও কেনো কোনো আর্য কলম ধরে না ? আমার পোস্টের কমেন্টে এসে আমাকে মূর্খ বললেই যেমন আমি মূর্খ প্রমাণিত হয়ে যাবো না, তেমনি সে কথা কেউ বিশ্বাসও করবে না। যখন আপনি আমার কথার ভুল নির্দিষ্ট করে বলতে পারবেন এবং সে ব্যাপারে সঠিক যুক্তি ও তথ্য উপস্থাপন করতে পারবেন, তখনই প্রমাণিত হবে যে আমি মূর্খ, আর আপনি জ্ঞানী; এর বাইরে আমার ব্যাপারে যদি কোনো কথা বলেন, সেটা হবে রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরের ঘেউ ঘেউ, এখন নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিন নিজেদেরকে কী প্রমাণ করতে চান- মূর্খ, জ্ঞানী, না রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুর ?

আশা করছি, আমি কী বলছি সেটা যেমন আর্যরা বুঝতে পেরেছে, তেমনি এক আর্যের প্রশ্ন- আমার জন্ম ও মৃত্যু নেই- বলতে শ্রীকৃষ্ণ কী বুঝিয়েছেন, সেটাও আমার বন্ধুদের কাছে ক্লিয়ার হয়েছে।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment