আর্য স্বপন, নামযজ্ঞ, কৃষ্ণ এবং বেদ :
যে Arya swapon এক পাতা বাংলা শুদ্ধ করে লিখতে পারে না, বিরা্মচিহ্নের ব্যবহার জানে না, অধিকাংশ বাক্যগঠন যার অশুদ্ধ, সে এসেছে জ্ঞান দিতে, একে আপনারা কী বলবেন ?
যা হোক, যে আর্যরা কৃষ্ণকে ঈশ্বর হিসেবে মানে না, সেই আর্যরা আবার শ্রীকৃষ্ণের মুখের বাণী গীতার রেফারেন্স দিয়ে বেদের যাগযজ্ঞের পক্ষে সাফাই গাইছে; আর্যদেরকে বলছি- শ্রীকৃষ্ণের কোনো মূল্যই যদি তোদের কাছে না থাকে, তার বাণী নিয়ে তোরা টানাটানি করছিস কেনো ? নাকি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আর কোনো অবলম্বন পাচ্ছিস না, তাই শ্রীকৃষ্ণের শরণ নিচ্ছিস ?
এই স্বপন আর্য, যার বাংলা বানান এবং বাক্যগঠন সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই নেই, সে কৃষ্ণ ভক্তদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার জন্য গীতার একটি রেফারেন্স ১৮/৫ দিয়ে বলেছে- যজ্ঞ, দান ও তপস্যারূপ কর্ম ত্যাগ করা উচিত নয়, ইহা অবশ্যকরণীয়। যজ্ঞ, দান ও তপস্যা মনীষীদেরও চিত্ত শুদ্ধি কর- এই কথা বলে এবং আরো কিছু যোগ করে স্বপন আর্য বেদের যাগযজ্ঞের দিকে ইঙ্গিত করেছে এবং বর্তমানে কোথাও কোথাও হরিবাসরের নামে যে নামযজ্ঞ হয়, তাকে কটাক্ষ করেছে; কিন্তু এই মূর্খ যদি জানতো যে, এসম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ আরো কী কী বলেছে, তাহলে সেই কৃষ্ণ
ভক্তদের সম্পর্কে সে এই কটূক্তিগুলো করতো না বলেই আমার বিশ্বাস।
যা হোক, দেখে নিন, উল্লিখিত প্রসঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ কী কী বলেছেন-
বেদের যাগযজ্ঞ হচ্ছে দ্রব্যময়, সেখানে বিভিন্ন প্রকার দ্রব্য দেবতাদের উদ্দেশ্যে অর্পণ করা হয়, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ গীতার ৪/৩৩ নং শ্লোকে বলেছেন,
"শ্রেয়ান্ দ্রব্যময়াদ্ যজ্ঞাজ্ জ্ঞানযজ্ঞঃ পরন্তপ।
সর্বং কর্মাখিলং পার্থ জ্ঞানে পরিসমাপ্যতে।।"
এর অর্থ- দ্রব্যময় যজ্ঞ হতে জ্ঞানযজ্ঞ শ্রেষ্ঠ। কেননা, সর্বকর্ম জ্ঞানের বিকাশে শেষ হইয়া যায়।
এর মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণ বেদের যাগযজ্ঞ থেকে জ্ঞানযজ্ঞকে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করেছেন এবং এই জ্ঞান বা জ্ঞানীদের সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ গীতার ৭/১৬,১৭ নং শ্লোকে বলেছেন,
"আর্ত অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু ও জ্ঞানী- এই চার প্রকার ভক্ত বা পুন্যাত্মা ব্যক্তির মধ্যে জ্ঞানীই শ্রেষ্ঠ। জ্ঞানী সতত আমাতেই যুক্তবিত্ত এবং একমাত্র আমাতেই ভক্তিমান। আমি জ্ঞানীর প্রিয় এবং জ্ঞানীও আমার অত্যন্ত প্রিয়।
অনেক মূর্খ বৈষ্ণব গোস্বামী, জ্ঞানের চেয়ে ভক্তিকেই শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে এবং এটা বলার মাধ্যমে তারা নিজেদের অজ্ঞানতাকে শুধু আড়াল করাই নয়, নিজেদের অজ্ঞানতাকে শ্রেষ্ঠ বলে তার পক্ষে সার্টিফিকেট আদায়েরও চেষ্টা করে। কিন্তু ভক্তি না থাকলে যেহেতু জ্ঞান অর্জন করা যায় না, সেহেতু বহির্বাস যেমনই হোক, গলায় কাঠের মালা বা কপালে তিলক না থাক, যে জ্ঞানী, তার মধ্যে যে ভক্তি আছে, তাতে কোনোই সন্দেহ নেই।
যা হোক, এবার দেখুন, যারা বেদ অনুযায়ী যাগযজ্ঞ করে, তারা আসলে কী করে এবং তাদের উদ্দেশ্যটা কী ?
শ্রীকৃষ্ণ গীতার ৯/২০ নং শ্লোকে বলেছেন,
"ত্রৈবিদ্যা মাং সোমপাঃ পূতপাপা যজ্ঞৈরিষ্টা স্বর্গতিং প্রার্থয়ন্তে।
তে পুণ্যমাসদ্য সুরেন্দ্রলোকমশ্নন্তি দিব্যান্ দিবি দেবভোগান্।।"
এর অর্থ- ত্রিবেদী যাজ্ঞিকেরা যজ্ঞাদি দ্বারা আমার পূজা করিয়া যজ্ঞ শেষে সোমরস পানে পাপ হইতে মুক্ত হইয়া স্বর্গলোক প্রার্থনা করেন, তাহারা পুন্যফলে স্বর্গে গিয়া দিব্য স্বর্গসুখ ভোগ করেন।
অর্থাৎ এখানে শ্রীকৃষ্ণ বললেন, যারা যজ্ঞ করে তারা শ্রীকৃষ্ণেরই পূজা করে এবং তাদের উদ্দেশ্য স্বর্গপ্রাপ্তি এবং এর পরের শ্লোক ৯/২০ এ শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- যারা শুধু স্বর্গ কামনা করে, তারা স্বর্গ পায়, কিন্তু পুণ্যক্ষয় হলে আবার মর্ত্যলোকে জন্ম নেয়, এভাবে তারা জন্মমৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্তি না পেয়ে বারবার যাতয়াত করতে থাকে; কিন্তু গীতার শিক্ষা মানুষকে মোক্ষ অর্থাৎ চুড়ান্ত মুক্তি দেয়।
এখানে স্বপন আর্যর উদ্দেশ্যে আমার একটি প্রশ্ন, আপনি তো শ্রীকৃষ্ণের কথা মতো গীতার ১৮/৫ রেফারেন্স দিয়ে যজ্ঞের পক্ষে সাফাই গাইছেন, কিন্তু ৯/২০ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ যে বললেন, যারা যজ্ঞ করে তারা শ্রীকৃষ্ণেরই পূজা করে, সেটা কি মানেন ? এছাড়াও শ্রীকৃষ্ণ গীতার ৩/৩২ নং শ্লোকে বলেছেন,
"যে সকল ব্যক্তি আমার মতের দোষ ধরে এবং আমার মতানুসারে কাজ না করে, সে সকল ব্যক্তি মূঢ় ও জ্ঞানভ্রষ্ট বলিয়া জানিবে।"
আপনারা তো শ্রীকৃষ্ণের কথামতো কাজ করেন না, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের কথানুযায়ী আপনারা কি নিজেদেরকে মূর্খ ও জ্ঞানভ্রষ্ট বলে মনে করেন ? আপনার দেওয়া ১৮/৫ যেমন গীতার রেফারেন্স, তেমনি ৯/২০ বা ৩/৩২ ও কিন্তু গীতার রেফারেন্স; একটা মানবেন, আরেকটা মানবেন না, সেটা কিন্তু চলবে না। আপনি যখন গীতার রেফারেন্স দিয়েছেন, তখন গীতার সবকিছু আপনাকে মানতে হবে, আর এই সবকিছু মতো, আমরা দেখছি, যারা শ্রীকৃষ্ণকে মানে না, তারা এক একজন অকাট মূর্খ, যার মধ্যে আর্যরা তথা আপনিও।
যা হোক, যারা সনাতন ধর্মের শ্রেষ্ঠ জ্ঞান গীতা আসার পরও শুধু বেদ নিয়েই পড়ে আছে, তাদের মন যে ঈশ্বরে নেই, সে সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ গীতার ২/৪২,৪৩,৪৪ নং শ্লোকে বলেছেন,
"কতগুলি অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন লোক বেদের কর্মকাণ্ডের স্বর্গফলাদী প্রকাশক প্রীতিকর বাক্যে অনুরক্ত, তাদের মতে ইহা ছাড়া অন্য তত্ত্ব নাই। জন্ম কর্ম ফল প্রদ বহুক্রিয়াযুক্ত ভোগৈশ্বর্যে তাহারা সর্বদা কামনাপরায়ণ ও স্বর্গকামী হয়। ইহাতে মুগ্ধ ভোগৈশ্বর্যে আসক্ত ব্যক্তির বুদ্ধি ঈশ্বরে স্থির থাকে না।"
এছাড়াও গীতার ২/৪৬ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, "ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলাশয়ে যে প্রয়োজন সিদ্ধ হয়, এক বিস্তীর্ণ মহাজলাশয়ে সেই সমস্তই সিদ্ধ হয়। সেইরূপ বেদোক্ত কাম্যকর্মসমূহে যে ফল লাভ হয়, ব্রহ্মবেত্তা ব্রহ্মনিষ্ঠ পুরুষের সেই সমস্তই লাভ হয়।"
বেদ এবং বেদপন্থীদের সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ কী কী বলেছেন, তা এতক্ষণ শুনলেন; এবার দেখুন স্বপন আর্য নামযজ্ঞ নিয়ে যে কটূক্তি করেছে, সে সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ কী বলেছেন -
কারো নাম স্মরণ করা মানে তার আশ্রয় নেওয়া, এই সূত্রে শ্রীকৃষ্ণের নামকে কেন্দ্র করে কোনো অনুষ্ঠান যাকে বলে নামযজ্ঞ তা করার মানে হলো শ্রীকৃষ্ণের চরণে আশ্রয় পাওয়ার জন্য একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান করা। কারা এই নাম যজ্ঞের অনুষ্ঠান করে, সে সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ গীতার ৯/১৩ নং শ্লোকে বলেছেন-
"যাহারা সাত্ত্বিকী প্রকৃতিকে আশ্রয় করেন, সেই মহাত্মাগন, আমি সর্বভূতের কারণ এবং অব্যয়স্ববরূপ, ইহা জানিয়া এক মনে আমার উপাসনা করেন।"
এই উপাসনার পদ্ধতিটা কী, সেটা শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ৯/১৪ নং শ্লোকে, সেখানে তিনি বলেছেন,
"সততং কীর্তয়ন্তো মাং যতন্তশ্চ দৃঢ়ব্রতা।
নমস্যন্তশ্চ মাং ভক্ত্যা নিত্যযুক্তা উপাসতে।।"
এর অর্থ- তাহারা সর্বদায় আমার নামকীর্তন করিয়া, যত্নশীল ও দৃঢ়ব্রত হইয়া ভক্তিসহ আমাকে প্রণাম করিয়া নিত্য যোগ সহকারে আমার উপাসনা করেন।
যা হোক, অনেক অর্থহীন কথাবার্তা বলার পর স্বপন আর্য তার স্বভাবসিদ্ধ ভুল বানান ও ভুল বাক্যগঠনে স্ট্যটাসের শেষে বলেছে,
"যে নাম কনো তপস্যা করা ঋষি দেয় নি। সে নামে কখন মুক্তি হবে না বানোর।"
আরে ছাগল, কোনো কিছু সম্পর্কে বলতে গেলে, আগে সে সম্পর্কে আগা-গোড়া জানতে হয়, তারপর মন্তব্য করতে হয়। কৃষ্ণ নাম কোনো তপস্যা করা ঋষি দেয় নি; কারণ, সে নাম দিয়ে গেছেন স্বয়ং কৃষ্ণ; কৃষ্ণ যেখানে বলেছেন যে কী করতে হবে, সেখানে অন্য কেউ সেই বিষয়ে কথা বলতে যাবে কেনো ? ঋষিরা কি আর্যদের মতো মূর্খ নাকি যে, কৃষ্ণের উপর দিয়ে কথা বলবে ?
তাছাড়াও গীতা যদি ভালো করে পড়ে বুঝতিস, তাহলে এটা জানতে পারতিস যে একমাত্র কৃষ্ণ নামেই মানুষের চুড়ান্ত মুক্তি বা মোক্ষ লাভ হতে পারে, বেদ নির্দেশিত যাগযজ্ঞের মাধ্যমে নয়। যাগযজ্ঞ করে খুব বেশি হলে মানুষ স্বর্গ পেতে পারে, সেই স্বর্গসুখ শেষে তাকে আবার পৃথিবীতে জন্ম নিতে হবে এবং যতক্ষণ মানুষ বেদ ছেড়ে গীতার নির্দেশ না মানবে ততক্ষণ তাকে এই জন্মান্তরের জ্বালা ভোগ করতেই হবে।
যারা কিছু জানে না তাদেরকে মূর্খ বলে না, তারা হলো অজ্ঞানী; যারা কিছু বুঝতে চায় না তাদেরকে বলে মূর্খ, আর্য সমাজীদেরকে হাজার বোঝালেও তারা বুঝে না, তাই তাদেরকে আমি ডাইরেক্ট বলি মূর্খ; আমার এই প্রবন্ধ পড়ে কোনো আর্য কোনো জ্ঞান নেবে, সেই আশা আমি করি না। কিন্তু জ্ঞানাভিলাষী আমার পাঠক বন্ধুরা যদি এ থেকে কোনো শিক্ষা নেয় এবং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করে তাহলেই আমার পরিশ্রম সার্থক।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
"ওঁ সহানা ভবতুঃ" [ ঈশ্বর আমাদেরকে রক্ষা করুন( আর্য সমাজীদের হাত থেকে)]
No comments:
Post a Comment