Friday, 22 May 2020

আর্য সমাজীদের ঈশ্বর দয়ানন্দ সরস্বতীর মিথ্যা, প্রতারণা ও ভণ্ডামি


আর্য সমাজীদের ঈশ্বর দয়ানন্দ সরস্বতীর মিথ্যা, প্রতারণা ও ভণ্ডামি :

আর্য সমাজীরা খুব গভীরভাবে একটা কথা বিশ্বাস করে যে- সবার উপর দয়ানন্দ সরস্বতী সত্য, তাহার উপর নেই। তাই দয়ানন্দজী যা লিখে গেছেন, যা বলে গেছেন একমাত্র তাহাই ধ্রুব সত্য, এর বাইরে বা এর বিরুদ্ধে অন্যেরা যা কিছু লিখেছে বা বলেছে তার কোনো কিছুই সত্য নয়। আর্য সমাজীদের মতে- এজন্য সত্য নয় বা বিশুদ্ধ নয় দয়ানন্দ সরস্বতী এবং তার অনুসারীরা ছাড়া অন্য কারো বেদভাষ্য বা বেদের অনুবাদ বা বেদানুকূল কোনো গ্রন্থ। এককথায় আর্য সমাজ যা গ্র্যান্ট বা মঞ্জুর করে না, সে সবই মিথ্যা, আর্য সমাজীরা যাকে সত্য বা সঠিক বলবে, জগতে একমাত্র সেটাই সত্য।

মুসলমানরা যেমন এক কাল্পনিক আল্লাকে সাত আসমানের উপরে রেখে মুহম্মদকে তাদের পয়গম্বর বানিয়ে তাকে বিশ্বনবী প্রচার করে, আর্য সমাজীরাও তেমনি এক নিরাকার ব্রহ্মকে উপরে রেখে, সেই নিরাকার ব্রহ্মের একমাত্র প্রার্থিব প্রতিনিধি হিসেবে দয়ানন্দ সরস্বতীকে সামনে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে, এজন্য বিক্রম বর্মন নামের এক আর্য সমাজী এটাও প্রচার করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে যে- ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রীকৃষ্ণের চেয়েও নাকি দয়ানন্দ বেশি লড়াই করেছেন, এদের ধৃষ্টতাই এদেরকে একদিন ইতিহাসে পরিণত করবে, যেমন ইতিহাসে পরিণত হয়েছে ব্রাহ্ম সমাজ।।

যারা ব্রাহ্ম সমাজ সম্পর্কে জানেন না, তাদের অবগতির জন্য বলছি- ভারতে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদু দ্বারকানাথ ঠাকুর এবং রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ব্রাহ্ম সমাজ, যারা আর্য সমাজীদের মতোই এক নিরাকার ব্রহ্মে বিশ্বাস করতো, মূর্তি পূজা, অবতারবাদসহ সনাতন ধর্মের অন্য কিছুই বিশ্বাস করতো না, মাত্র ২০০ বছরের মাথা্য় সেই ব্রাহ্ম সমাজের স্থান এখন শুধু ইতিহা্সের পাতায়; শ্রীকৃষ্ণকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য এবং অপমান করে কথা বলায় আর্য সমাজীদের পরিণতিও যে সেই একই হবে, এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি এবং সেটা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।

যে দয়ানন্দ সরস্বতীকে নিয়ে আর্য সমাজীরা এত লাফালাফি করে, সেই দয়ানন্দ সরস্বতী ছিলো একজন মিথ্যুক এবং প্রতারক। কারণ, তিনি শুধু সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন মন্ত্র এবং শ্লোককে নিজের ইচ্ছামতোই অনুবাদ করেন নি, সেই সব মন্ত্রের বিকৃতিও ঘটিয়েছেন। ইতোমধ্যে রায়ন চক্রবর্তী নামের এক সনাতনী যোদ্ধা, এই বিষয়গুলোকে ইউটিউবে তথ্য প্রমাণ সহ প্রচার করেছে, যারা তার ভিডিওগুলো দেখেন নি, তাদের জন্য আমি সেই বিষয়গুলো এখানে রেফারেন্স সহ উল্লেখ করছি-


দয়ানন্দ সরস্বতীর সেই বিখ্যাত গ্রন্থ সত্যার্থ প্রকাশের সপ্তম সমুল্লাসে মনু সংহিতার ১ম অধ্যায়ের ২৩ নং শ্লোকের উল্লেখ আছে। এই শ্লোকের উল্লেখে কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা আছে এর অনুবাদে, সেটা কোথায়, দেখাচ্ছি নিচে-
মনু সংহিতার সেই শ্লোকটি হলো-

"অগ্নিবায়ুরবিভ্যস্তু ত্রয়ং ব্রহ্ম সনাতনম্।
দুদোহ যজ্ঞসিদ্ধ্যর্থমৃগ্যজুঃসামলক্ষণম্।"

এর অনুবাদ হিসেবে দয়ানন্দ লিখেছে, "পরমাত্মা আদি সৃষ্টিতে মনুষ্য উৎপন্ন করিয়া অগ্নি প্রভূতি চারি মহর্ষিদের দ্বারা ব্রহ্মাকে চারিবেদ শিক্ষা দিয়েছিলেন, আর ব্রহ্মা, অগ্নি, বায়ু, আদিত্য এবং অঙ্গিরার নিকট হইতে ঋক, যজুঃ, সাম এবং অথর্ববেদ শিক্ষা লাভ করিয়াছিলেন।"

অথচ মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, মেধাতিথি এবং কুল্লুক ভট্টের ভাষ্যে মনুসংহিতার এই শ্লোকের অনুবাদ দেওয়া আছে এরকম-

"সেই ব্রহ্মা যজ্ঞসমূহ সম্পাদনের জন্য অগ্নি, বায়ু এবং সূর্য এই তিনটি দেবতা থেকে যথাক্রমে ঋক যজু ও সামসংজ্ঞক সনাতন তিনটি বেদ দোহন করেছিলেন।"

এই দুই অনুবাদের মধ্যে পার্থক্য হলো- দয়ানন্দ বলেছেন চার ঋষি এবং চার বেদের কথা, কিন্তু অন্য অনুবাদকগণ বলেছেন তিন ঋষি এবং তিন বেদের কথা। শ্লোকটি আবার ভালো করে পড়ে দেখুন, সেখানে "অগ্নিবায়ুরবিভ্যস্তু" দ্বারা তিন ঋষি, "ত্রয়ং ব্রহ্মসনাতম" দ্বারা তিন বেদ এবং "যজ্ঞসিদ্ধ্যর্থমৃগ্যজুঃসামলক্ষণম্" দ্বারা ঋক, যজু ও সামবেদের কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু দয়ানন্দ এর মধ্যে অঙ্গিরাসহ চারজন ঋষি এবং অথর্ববেদসহ চারবেদকে খুঁজে পেয়েছে। এরপরও আর্য সমাজীরা বলবে দয়ানন্দের অনুবাদই সঠিক, বাকি সব মিথ্যা!



এরপর দয়ানন্দ, তার "অথ সংস্কারবিধিঃ" নামক একটি পুস্তকের "অথ সমাবর্ত্তনসংস্কারবিধিং বক্ষ্যামঃ" নামক অধ্যায়ে মনু সংহিতার ৩ নং অধ্যায়ের ৩ নং শ্লোকটি উল্লেখ করেছে এভাবে-

তং প্রতীতং স্বধর্মেণ ধর্মদায়হরং পিতুঃ
স্রগ্বিণং তল্প আসীনর্মহয়েৎ প্রথমং গবা।।

এবং এর অর্থ হিসেবে দয়ানন্দ লিখেছে- যে বিদ্বান পিতা মাতার পুত্র শিষ্য ও ব্রহ্মচারী হয়, সে স্বধর্মানুসারে পিতৃস্থানীয় সেই আচার্য্যকে উৎকৃষ্ট সেই আসনে উপবেশন করাইয়া এবং পুষ্পমাল্যে বিভূষিত করিয়া প্রথমে গো দান করিবে, পরে যথাশক্তি বস্ত্র এবং ধনাদিও দান করিয়া আদর সম্মান করিবে।

কিন্তু মনুসংহিতার যেকোনো সংস্করণে এই মন্ত্রটি দেওয়া আছে এভাবে-

"তং প্রতীতং স্বধর্মেণ ব্রহ্মদায়হরং পিতুঃ
স্রগ্বিণং তল্প আসীনর্মহয়েৎ প্রথমং গবা।।"

এবং এর অর্থ হিসেবে মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন-

"ব্রহ্মচরর্যরূপ ধর্মে যে পুত্র খ্যাতি লাভ করেছে এবং পিতার নিকট থেকে বেদ এবং ধন লাভ করার অধিকারী যে পুত্র, তাকে মাল্যদ্বারা অলঙ্কৃত করে, উৎকৃষ্ট শয্যায় উপবেশন করিয়ে গোসাধন মধুপর্কের দ্বারা পিতা বা তার অভাবে আচার্য তাকে সম্মানিত করবেন।

এবার, দয়ানন্দের উল্লিখিত শ্লোক এবং মনুসংহিতায় উল্লিখিত শ্লোক খেয়াল করুন, মনুসংহিতার "ব্রহ্মদায়হরং" শব্দটির পরিবর্তে দয়ানন্দ, "ধর্মদায়হরং" শব্দ বসিয়েছে এবং অনুবাদই পাল্টে দিয়ে মনুসংহিতায় যেখানে যোগ্যপুত্রকে সন্মানিত করার কথা বলা হয়েছে, সেখানে দয়ানন্দ, আচার্যকে- গরু, বস্ত্র ও ধন দ্বারা সন্মানিত করার কথা বলেছে।

শাস্ত্রকে যে ব্যক্তি এভাবে নিজের স্বার্থে বিকৃত করে, সে কী ? সে তো একটা মিথ্যুক এবং প্রতারক, কেননা শাস্ত্রের বিকৃতির দ্বারা সে ব্যক্তি ও সমাজের সাথে প্রতারণা করেছে, করছে। কোনো আর্য সমাজীর যদি ক্ষমতা থাকে তো আমার এই অভিযোগগুলি যেন খণ্ডণ করে।


এছাড়াও দয়ানন্দ, ভাগবতের প্রহ্লাদ ও হিরণ্যকশিপুর গল্পটিকে সত্যার্থপ্রকাশে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে তার সমালোচনা করেছে। আর্য্যাবর্তের সীমা কতদূর পর্যন্ত ? এই প্রশ্নের জবাবে সত্যার্থ প্রকাশের অষ্টম সমুল্লাসে, মনুসংহিতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের ১৭ নং শ্লোকের "ব্রহ্মাবর্তং" শব্দটিকে পাল্টে দিয়ে "দেশমায়্যার্বত্তং" করেছে। এরপর সত্যার্থ প্রকাশের একাদশ সমু্ল্লাসে মনু ও শতরূপার উতপত্তি বিষয়ে ভাগবতের নামে বিকৃত তথ্য প্রচার করেছে। এছাড়াও দয়ানন্দ, তার সত্যার্থ প্রকাশের তৃতীয় সমুল্লাসে মনুসংহিতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের ২৮ নং শ্লোকটি ঠিকঠাকভাবে উল্লেখ করলেও, এই একই শ্লোক চতুর্থ সমু্ল্লাসে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে, সেখানে 'ব্রতৈ' এর পরিবর্তে 'জপৈ' লিখেছে এবং জপৈ দিয়েই ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছে, সুতরাং এটা যে প্রিন্টিং মিসটেক, এটা বলার কোনো সুযোগ নেই।

আর্য সমাজীদের ঈশ্বর দয়ানন্দের বিরুদ্ধে এই আটটি অভিযোগের মধ্যে প্রথম তিনটি অভিযোগের প্রমাণ ফটোসহ দিলাম, বাকি পাঁচটি অভিযোগের প্রমাণের ফটো দিলাম না ফটোসংখ্যা বেশি হয়ে যাবে বলে। কিন্তু কোনো আর্য সমাজী যদি এ ব্যাপারে ঘেউ ঘেউ করে এবং দয়ানন্দের বিরুদ্ধে উত্থা্পিত অভিযোগের তথ্য প্রমাণ চায়, তাহলে সেগুলো আচাঁছা বাঁশ রূপে তাদের ইয়ের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য আমার কাছে যে মজুদ আছে, সেটা যেন মনে রাখে।

কেউ যখন মিথ্যা বলে, তথন সে সেটা নিজের স্বার্থ বা উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্যই বলে এবং কেউ যখন এটা করে তখন তাকে মিথ্যুক এবং প্রতারক বলে; কারণ, মিথ্যুক, মিথ্যা্ বলে অন্যদের সাথে প্রতারণাই করে; দয়ানন্দ সরস্বতী, তার সত্যার্থ প্রকাশে ভাগবতের গল্পগুলো এবং মনুসংহিতার শ্লোকগুলোকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে এটা প্রমান করেছে যে, সে একটা মিথ্যুক এবং প্রতারক এবং ধর্মের লেবাসধারী কেউ যখন মিথ্যার মাধ্যমে অন্যদের সাথে প্রতারণা করে, তখন তাকে বলে ভণ্ড, এই সূত্রে দয়ানন্দ সরস্বতী একজন ভণ্ডও।

এই মিথ্যুক, প্রতারক এবং ভণ্ড দয়ানন্দ সরস্বতীর উপর ভর করে আর্য সমাজীরা আমার মতো অসংখ্য কৃষ্ণভক্তদেরকে, শ্রীকৃষ্ণের ঈশ্বরত্বের পক্ষে কথা বলায়- চ্যালেঞ্জ করে, গালাগালি করে; এমন কি পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কেও তারা আজে বাজে কথা বলে।

যা হোক, এই পোস্টে দয়ানন্দ সরস্বতীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তুলে ধরলাম, কোনো আর্য সমাজীর যদি ক্ষমতা থাকে তো এই সব অভিযোগকে খণ্ডন করুক, আর যদি তারা তা না পারে, তাহলে যেন গর্তে ঢুকে থাকে, অযথা যেন ঘেউ ঘেউ না করে।

এখানে আরেকটা বিষয়- সাধারণভাবে আর্য বলতে সনাতন ধর্মের অনুসারীদেরকেই বোঝায়, কিন্তু দয়ানন্দ সরস্বতীর অনুসারীরা নিজেদেরকে আর্য বলে পরিচয় দিয়ে থাকে, যা মোটেই তাত্ত্বিকভাবে সঠিক নয়। আর্য আমরাই, যারা সনাতনী হিন্দু। দয়ানন্দ সরস্বতীর অনুসারীদেরকে যদি আর্য বলে সম্বোধন করা হয়, তাহলে এই আর্য শব্দটি ভবিষ্যতে একটি খারাপ অর্থ বহন করবে, যেহেতু দয়ানন্দ সরস্বতী একজন মিথ্যুক, প্রতারক এবং ভণ্ড। তাই এই পোস্টে আমি- দয়ানন্দ সরস্বতীর অনুসারীদেরকে বোঝাতে "আর্য সমাজী" শব্দগুচ্ছটি ব্যবহার করেছি। এখন থেকে আপনারাও দয়ানন্দ সরস্বতীর অনুসারীদেরকে বোঝাতে "আর্য সমাজী" টার্মটি ব্যবহার করবেন এবং আর্য বলতে সনাতনী হিন্দুদেরকে বোঝাবেন, তাহলেই রক্ষা হবে আর্য শব্দের প্রকৃত অর্থ এবং বজায় থাকবে এর মহিমা।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment