Thursday 21 May 2020

ভীষ্ম উত্তরায়ণ পর্যন্ত অপেক্ষা করার কারণ ও ঈশ্বরের সাথে ঘুষখোরের পার্থক্য


#Ankan_Bhattacharjee,

১. পিতামহ ভীষ্ম যদি দেহত্যাগের জন্য উত্তরায়ণ পর্যন্ত অপেক্ষা না করতো, তাহলে উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের জ্ঞান পৃথিবী কোথা থেকে পেতো? কারণ, সভ্যতার ইতিহাসে মহাভারতই প্রথম পৃথিবীকে দিন ও রাত্রির ছোট বড়র হিসাব বা উত্তরায়ণ দক্ষিণায়নের জ্ঞান দিয়েছে।

গীতায় পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ যে বলেছেন- তিনি সকলের প্রতি সমদর্শী অর্থাৎ যার যা কর্ম, তাকে সেভাবেই ফল দেন; ভীষ্মের জন্য স্পেশাল ব্যবস্থা হলে কি অন্যদের প্রতি ঈশ্বর বৈষম্য করতেন না ?

সবচেয়ে বড় কথা হলো- ভীষ্মের যে সত্যিই ইচ্ছামৃত্যুর ক্ষমতা ছিলো, সেটার প্রমাণ দেখানোর জন্য কি তার দেহত্যাগের জন্য উত্তরায়ণ পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার ছিলো না ?

আশা করছি- উত্তরটি পেয়ে গেছেন।

এবার আসি পরের প্রসঙ্গে-

২. গিভ এন্ড টেক অর্থাৎ দেওয়া এবং নেওয়া হলো প্রকৃতির নিয়ম। যদি আপনি কিছু দেন, তার বিনিময়ে আপনি অবশ্যই কিছু পাবেন। একটি পরিবারেরও প্রধান ব্যক্তি চায়, সবাই তার প্রতি অনুগত থাকুক, এর বিনিময়ে সে সবার সুখ সুবিধা অর্থাৎ থাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা নিশ্চিত করে। অনুগত না থেকে বা বিনা দানে কেউ যদি কোনো প্রতিদান পায়, সেটা প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধ। প্রকৃতির এই নিয়ম বিরুদ্ধ ব্যাপার ঈশ্বর কিভাবে ঘটাতে পারে, যেহেতু ঈশ্বর নিজেই প্রকৃতি ?

একজন ক্ষমতাবান ব্যক্তির যদি অনুগত থাকা যায় বা তার প্রশংসা করা যায় অর্থাৎ তেল মারা যায়, বিপদে আপদে অবশ্যই তার সাহায্য পাওয়া যাবে; কারণ, এটাই প্রকৃতির নিয়ম। একজন সরকারী কর্মচারী, সরকারী নিয়ম মেনে যেকোনো সাধারণ ব্যক্তির কাজ করে দিতে বাধ্য, কিন্তু সেটা যদি তিনি না করেন, সেটা রাষ্ট্রের দুর্বলতা, সেক্ষেত্রে সরকারী সেবা পেতে কাউকে ঘুষ দিতে হয়, আর এর ফলে ঘুষখোর তৈরি হয়, যেটা অবৈধ সিস্টেমের ফল। একজন সাধারণ মানুষ দেশের নিয়ম মেনে সুস্থ ও সুন্দরভাবে দেশে বসবাস করতে পারে, কিন্তু যখন সে নিয়মের ব্রেক করে, তখন তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য জেল-হাজতে রাখা হয়, সেই জেল হাজতে যদি সে সুন্দরভাবে থাকে এবং সব নিয়ম মেনে চলে, তাহলে জেলকর্তৃপক্ষ তার সদাচারণের পুরস্কার স্বরূপ তার শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে দিয়ে তাকে জেল থেকে মুক্ত করে দিতে পারে, এটা ঐ ব্যক্তির অর্জন। একইভাবে পরমাত্মার সাথে তার চিন্ময়ধামে থাকতে না চেয়ে আমরা জীবাত্মারা জগতের সুখ দুঃখ ভোগ করতে চেয়েছি ব'লে, ঈশ্বর আমাদেরকে এই জগতে সৃষ্টি করেছেন এবং শর্ত দিয়েছেন যে, যদি আমরা তার প্রতি অনুগত থাকি এবং সদাচরণ করি, তাহলে জীবাত্মারূপে আমরা যেমন সুখ শান্তি ভোগ করবো, তেমনি তিনি আমাদেরকে মুক্তি দিয়ে তাঁর চিন্ময়ধামে আশ্রয় দেবেন, যাকে বলা হয় মোক্ষ।

মানুষ ভুল করে যেমন জেলে যায়, তেমনি জীবাত্মারা ভুল করে পৃথিবীতে এসেছে। এই ভুল শোধরানোর একমাত্র উপায় হলো ঈশ্বরের প্রতি অনুগত এবং সদাচার, এটা আমরা করতে বাধ্য নই, কিন্তু যদি করি তার ফল আমাদের জন্য ভালো। কিন্তু রাষ্ট্রের দুর্বলতায় যে ঘুষখোর শ্রেণী তৈরি হয়, তাদেরকে ঘুষ না দিয়ে আপনার অন্য কোনো উপায় নেই। এছাড়াও ঈশ্বর কারো কাছে চায় শুধু আত্মসমর্পণ এবং সদাচার, কিন্তু ঘুষখোরেরা চায় অর্থবিত্ত, অন্যভাবে বলতে গেলে ঈশ্বরের কাছে আমরা শুধু আত্মসমর্পণ করি বা তাঁর প্রতি অনুগত থাকি, কিন্তু ঘুষখোরদের টাকা দিই; তাই বাস্তবে ঈশ্বরকে দেওয়া এবং ঘুষখোরকে দেওয়া একইরকম মনে হলেও, দুইটার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য আছে।

আনুগত্য ব্যতীত ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আমরা বিভিন্ন মন্দির ও আশ্রমে যে অর্থ দিই, সেটা দান, আর দানের কোনো বাস্তবিক প্রত্যাশা থাকে না; কিন্তু ঘুষখোরকে যা দিই, তার বাস্তবিক প্রত্যাশা থাকে। তাই ঘুষখোরকে দেওয়া অর্থ হলো ইনভেস্ট, কিন্তু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিবেদিত দান হলো সামাজিক কল্যান; কারণ, সেটা যেভাবেই হোক সমাজের কল্যানেই ব্যয় হবে। ফলে ঘুষখোরকে দেওয়া অর্থ পার্থিব কামনা-বাসনা যুক্ত, কিন্তু ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ব্যয়িত অর্থ পার্থিব কামনা-বাসনা মুক্ত।

আশা করছি- উপরের আলোচনা থেকে ঘুষখোরকে দেওয়া অর্থ এবং ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিবেদিত অর্থ আপাতদৃষ্টিতে এক মনে হলেও, গভীর দৃষ্টিতে যে অনেক পার্থক্য বহন করে, সেটা আমার বন্ধুদেরকে বোঝাতে পেরেছি।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment