Saturday, 23 May 2020

শ্রীকৃষ্ণ কি ঈশ্বর না, যোগীপুরুষ ? - ১


#Ajay_Dey,

আপনি আমাকে বালক ভাবেন আর মূর্খ ভাবেন, তাতে আমার কোনো আপত্তি নাই; কারণ- শকুনের ভাবনা অনুযায়ী যদি গরু মরতো, তাহলে পৃথিবীতে কোনো গরুই থাকতো না।

যা হোক, আপনি বলেছেন- গীতার ৭০০ শ্লোক পড়ে আমি নাকি নিজেকে পণ্ডিত মনে করি।

-গীতার ৭০০ শ্লোক পড়ে আমি নিজেকে পণ্ডিত মনে করি না, আমি নিজেকে পণ্ডিত মনে করি গীতার বাণীর অর্থ বুঝি ব'লে। কারণ, গীতার কিছু  Key Point  সম্পর্কে আমি এমন কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছি, যা ইতোপূর্বে কেউ দিতে পারে নি। তার মধ্যে একটি হলো- সকাম ও নিষ্কাম কর্ম। আমি বলার আগে সবাই এটাই মনে করতো বা জানতো যে- যে কর্মের ফল আশা করা হয় না, সেটাই নিষ্কাম কর্ম। কিন্তু বাস্তবে এটি নিষ্কাম কর্ম নয়। কারণ, পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যক্তি নেই যিনি ফলের আশা না করে কোনো কর্ম করতে পারেন। এমন কি শ্রীকৃষ্ণ নিজেও ফলের আশা না করে কোনো কর্ম করেন নি। শ্রীকৃষ্ণ আমৃত্যু কাজ করেছেন একটি ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার আশায়, তাহলে শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে নিষ্কাম কর্মের সাধারণ ও প্রচলিত ব্যখ্যা অনুযায়ী নিষ্কাম কর্ম করলেন ? তাই আমি মনে করি- ফলের আশা না করে কর্ম করা নিষ্কাম কর্ম নয়, ঈশ্বর আমাকে দিয়ে এই কর্মটি করাচ্ছেন, এই মনোভাব নিয়ে কোনো কর্ম যদি করা হয়, সেটাই হলো নিষ্কাম কর্ম। এই ব্যাখ্যা আমিই প্রথম দিয়েছি এবং সেটাও ২০১৬ সালে এবং সেটাও কোনো বই পড়ে নয়, নিজের উপলব্ধি থেকে। গীতার এরকম আরও কিছু বিষয় আছে, যেগুলো সম্পর্কে আমি নতুন নতুন ধারণা দিয়েছি, তাই আমি নিজেকে গীতা সম্পর্কিত পণ্ডিত মনে করতেই পারি, কিন্তু এটা শুধু গীতার ৭০০ শ্লোক পড়ে অর্জন হয় নি, এটা অর্জিত হয়েছে সত্য উপলব্ধি করার ক্ষমতা থেকে।

এরপর আপনি বলেছেন- বেদ হলো সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ।

-যদি এটা সত্য হতো- তাহলে আপনার হাতে বর্তমানে এন্ড্রয়েড ফোন থাকতো না, বাটন ফোন থাকতো। কিন্তু আমি বলি- বেদ হলো সনাতন ধর্মের আদি বা ভিত্তিগ্রন্থ বা সনাতন ধর্মের মূল। আমার কথাটা বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখবেন।

এরপর আপনি বলেছেন- মোক্ষলাভ করাই হলো আমাদের ধর্মের চুড়ান্ত অর্জন।

-কিন্তু এই মোক্ষলাভ করার পথ ও পদ্ধতির জ্ঞান আপনি পেতে পারেন একমাত্র গীতা থেকে। তাহলে কী প্রমাণ হয়, বেদ সনাতন ধর্মের প্রধান গ্রন্থ, না গীতা ?

আমি বেদের মোক্ষ বিষয়ে কথা বলেছিলাম, এর বিপরীতে আপনি যজুর্বেদের ৩১/১৮ নং মন্ত্রের রেফারেন্স দিয়েছিলেন, যেখানে বলা আছে- “আমি এ মহান পুরুষকে জেনেছি, যিনি অবিদ্যার অতীত ও আদিত্যের মতো বর্ণবিশিষ্ট। তাকে জেনেই মৃত্যুকে অতিক্রম করা যায়, এছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।

-এখানে মোক্ষের ধারণাটি স্পষ্ট নয়। কারণ, এখানে শুধু মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে, যা অতিক্রম করে অমর হওয়া যায়। কিন্তু মোক্ষ বিষয়টি হলো জন্ম ও মৃত্যুকে অতিক্রম করা। তাছাড়াও যজুর্বেদ ৩১/১৮ নং মন্ত্রটিকে মোক্ষের কমপ্লিট ধারণা হিসেবে ধরে নিলেও বেদের কোথাও কি এই মোক্ষ প্রাপ্তির পথ ও পদ্ধতি বিষয়ে কিছু বলা আছে ? যদি না থাকে তাহলে কিভাবে বেদকে আপনি মোক্ষ প্রাপ্তির চুড়ান্ত সমাধান হিসেবে ধরে নিচ্ছেন ? আর বেদে যদি মোক্ষ প্রাপ্তির চুড়ান্ত কোনো পথ বা পদ্ধতি না থাকে, তাহলে কিভাবে বেদ সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্ম গ্রন্থ হতে পারে, যেখানে সনাতন ধর্মের চুড়ান্ত লক্ষ্য হলো মোক্ষ অর্জন করা ?

যদি ক্ষমতা থাকে, আমি যেমন প্রতিটি পয়েন্ট ধরে ধরে জবাব দিই, আপনিও সেরকম দেবেন। আর তা না করে যদি আমাকে মূর্খ বলে দায় সারেন, তাতে আমি মূর্খ প্রমাণিত হবো না, মূর্খ প্রমাণিত হবেন আপনি বা আপনারা আর্য সমাজীরা।

এরপর আপনি আমাকে গাধা বলেছেন, তাতেও আমার কোনো আপত্তি নাই। কারণ, আমি জানি- কোনো বিশেষণ বা গালি কারো প্রতি নিক্ষেপ করা হলে, সেই ব্যক্তি যদি সেই গালির উপযুক্ত না হয়, তাহলে সেটা গালি নিক্ষেপকারীর উপরই বর্ষিত হয়। তাই আমাকে গাধা বলে নিজেকেই গাধা প্রমাণ করলেন কি না সেটা ভেবে দেখবেন।

আপনি এও বলেছেন, আর্য সমাজীদের বেদভাষ্য পড়ে আমি অন্যদের কথার জবাব দিই।

-আপনাদের একটা প্রব্লেম হলো, আমার সম্পর্কে সবকিছু না জেনেই আমার সম্পর্কে মন্তব্য করেন। এই যেমন আপনারা আমাকে মনে করেন বেদ বিরোধী, কিন্তু বাস্তবে তা মোটেও আমি নই। আমি যদি বেদ বিরোধী হতাম, বেদকে সনাতন ধর্মের ভিত্তি বলে কখনোই স্বীকার করতাম না। আমি আমার কথায় ও লেখায় সনাতন ধর্মের প্রকৃত সত্যকে প্রচার করি এবং তাতে যার যে অবস্থান, সেভাবেই তাকে মূল্যায়ণ করি এবং এই কাজ করতে গিয়ে যেখান থেকে যা প্রয়োজন তাই গ্রহন করি। বেদের আপনারা একটা ইংরেজি ভার্সন বের করতে পারেন, কিন্তু সত্যার্থ প্রকাশের মতো বেদ আপনাদের বাপ দাদার পৈতৃক সম্পত্তি নয় যে বেদের কোনো অনুবাদকে আমি ব্যবহার করতে পারবো না। শুধু তাই নয়, যেটা ভালো, তাকে গ্রহন করতেও আমার কোনো লজ্জা নেই। যদি দয়ানন্দ সরস্বতীর কোনো কথাকে আমার বাস্তব বলে মনে হয়, আমি সেটাকেও গ্রহন করবো, আর যেটা আমার কাছে খারাপ বলে মনে হবে, আমি সেটারও সমালোচনা করবো।কারণ, এটাই আমার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য; আমি শুধু সত্যের পূজারী, কোনো দল, মত বা ব্যক্তির পূজারী নই। এটাও শুনে রাখেন, যদি সনাতনের চেয়ে অন্য কোনো ধর্ম আমার কাছে বাস্তব এবং সত্য মনে হতো, আমি সনাতন ত্যাগ করে সেটাই গ্রহন করতাম। আমি সনাতনের পক্ষে প্রচার করি, সনাতনী হিসেবে আমার জন্ম হয়েছে ব'লে নয়, সনাতন আমার কাছে সত্য ও বাস্তব বলে মনে হয়েছে এবং এটা জগতের জন্য কল্যানকর বুঝতে পেরেই আমি এখনও সনাতন ধর্মে আছি এবং তার প্রচার করছি।

আপনি এও বলেছেন- ডিবেটে ডাকলে আমি কখনো যাই না বা কমেন্ট বক্সে কোনো উত্তর দিই না।

- প্রকৃত জ্ঞানী এবং বুদ্ধিমানেরা কখনো কারো সাথে তর্ক করে না, তারা প্রকৃত সত্যকে প্রকাশ করে মাত্র। কারণ, তর্ক করে কখনো কারো সাথে জেতা যায় না। যদি আপনার এই জ্ঞানটা থাকতো, আপনি আমার বিরুদ্ধে কখনোই এই অভিযোগ আনতেন না। আমার বিচারে- যারা তর্ক করে, তারা নিকৃষ্ট শ্রেণীর মূর্খ। আপনাদের- আর্য সমাজীদের- জ্ঞান বুদ্ধি যখন আমার লেভেলে উত্তীর্ণ হবে, তখন আপনারাও আমার মতো ভাবতে শিখবেন এবং তখন আমার মতোই কারো সাথে ডিবেটে বা কমেন্ট বক্সে তর্ক বিতর্ক না করে শুধু সত্যকে প্রকাশ করবেন। আমি কমেন্ট বক্সে কথা বলি না, কারণ সেখানে বেশি তথ্য প্রমাণ দেওয়া যায় না, তাই কমেন্টের বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ লিখে পোস্ট করি। যে ব্যক্তি পোস্ট লিখে জবাব দেয় বা পোস্ট লিখার মতো তথ্য উপাত্ত এবং ক্ষমতা যার থাকে, সে ভয়ে কমেন্ট বক্সে কথা বলে না, এমনটা ভাবা আর্য সমাজীদের পক্ষেই সম্ভব, কোনো সুস্থ মস্তিষ্ক্যের ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা, যে ব্যক্তি সমুদ্রের জলরাশিকে ভয় পায় না, সে ভয় পাবে নদীর সামান্য গভীরতার জলকে ?

তুমি হাসালে মোরে বালিকা !

জয় হিন্দ।

(বি.দ্র # আপনার পোস্টের বাকি অংশেরও উত্তর পাবেন শীঘ্রই। প্রস্তুত থাকুন। এতদিন আপনার পোস্টের জবাব দিতে পারি নি; কারণ, আমার ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।)

No comments:

Post a Comment