Friday 11 September 2020

পশ্চিমবঙ্গে বাম আমলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস : সাঁইবাড়ি, মরিচ ঝাঁপি, ও বিজন সেতু


পশ্চিমবঙ্গে বাম আমলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস : সাঁইবাড়ি, মরিচ ঝাঁপি, ও বিজন সেতু


কমিউনিস্টদের প্রিয় রং লাল। আবার রক্তের রং ও লাল। তাই রক্তও কমিউনিস্টদের প্রিয়। কমিউনিস্ট তথা বামেদের এই অযথা রক্ত ঝরানোর অনেকগুলো নৃশংস ও বিভৎস কাহিনীর মধ্যে থেকে মাত্র তিনটি ঘটনা এবং কমিউনিজম ও ইসলামের সাদৃশ্যকে জানতে ও বুঝতে হলে পড়ুন এই নিচের এই লেখাটি :

বিজন সেতু :

১৯৯০ সালের এপ্রিল মাসের এক সকাল। স্থান, কসবার বিজন সেতু। সি.পি.এম এর হার্মাদ বাহিনী ১৭ জন আনন্দ মার্গীকে পুড়িয়ে মারে এই সেতুর উপর । থানা কাছেই, কিন্তু পুলিশকে ঘটনাস্থলে যেতে দেওয়া হলো না। ঘটনা তো একটা ঘটেছে, তার ইনভেস্টিগেশন তো হওয়া দরকার। এই কেসের ইনভেস্টিগেশনের দায়িত্ব দেওয়া হলো কসবা থানার গঙ্গাধর ভট্টাচার্যকে। কিন্তু তার কাজে সিপিএম সন্তুষ্ট হলো না। একদিন তিনি ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। একটি মোটর সাইকেলের পেছনে সিটে বসে কান্তি গাঙ্গুলী নামে একজন গঙ্গাধরকে গুলি করে চলে গেলো। মৃত্যু হলো গঙ্গাধরের। কিন্তু পুলিশ কান্তি গাঙ্গুলীকে খুঁজে পেলো না। কয়েক বছর পর, সেই কান্তি গাঙ্গুলীর আবির্ভাব ঘটলো সিপিএমের নেতা হিসেবে। বামফ্রন্টকে সন্তুষ্ট করার পুরস্কার হিসেবে সে বড় পদ পেলো এবং পরে মন্ত্রীও হয়েছিলো।

জানা যায় উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় রানী রাসমনি এস্টেট এর কিছু জমি ঐ আনন্দমার্গী সন্ন্যাসীদের দখলে ছিলো। সেই জমি দখল করতেই বামফ্রন্ট সরকারের হাইকমান্ড এর নির্দেশে এই ঘটনা ঘটানো হয়। আর এর মূল খলনায়ক, জ্যোতি বসু- সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভোট চুরি করে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার অনন্য রেকর্ডের জন্য- যিনি মরে গিয়েও, পশ্চিমবঙ্গের জগদ্দল পাথর হিসেবে, দীর্ঘদিন ইতিহাসে বেঁচে থাকবেন।

মরিচঝাঁপি :

১৯৭১ সালের যুদ্ধে, মুসলমানদের তাড়া খেয়ে বাংলাদেশ থেকে কয়েক লক্ষ হিন্দু, উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে ঢুকে পড়লে, ভারত সরকার তাদেরকে নিয়ে গিয়ে রাখে দণ্ডকারণ্যে। সেখানে তারা মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ, ১৯৭৮ সালের জানুয়ারি মাসে সিপিএম এর সমর মুখার্জি, মার্ক্সবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের রাম চ্যাটার্জি এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের অশোক ঘোষ দণ্ডকারণ্যে গিয়ে উদ্বাস্তুদের নেতা সতীশ মণ্ডলের সাথে দেখা ক'রে, প্রকাশ্য জনসভায়, তাদেরকে পশ্চিমবঙ্গে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। কিছুদিনের মধ্যেই প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার সর্বস্ব হারানো উদ্বাস্তু হিন্দু দণ্ডকারণ্য ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসে এবং এর মধ্যে ৩২ হাজার উদ্বাস্তু হিন্দু, সুন্দরবনের মরিচ ঝাঁপি নামক দ্বীপের মতো একটি জায়গায় আশ্রয় নেয়। কলোনীর নাম রাখা হয় নেতাজী নগর। কিন্তু জ্যোতি বসুর সরকার হঠাৎ মত পরিবর্তন করে, যেভাবেই হোক উদ্বাস্তুদের মরিচ ঝাঁপি থেকে উৎখাত করতে হবে। জারি করা হয় ১৪৪ ধারা ও অর্থনৈতিক অবরোধ। বন্ধ করে দেওয়া হয় জল ও খাদ্য সরবরাহ।

সেদিনগুলোর ঘটনা স্মৃতিচারণ করে পুলিশ ও কমিউনিস্ট হায়েনাদের হাত থেকে বেঁচে ফিরে আসাদের একজন নারায়ণ মন্ডল উল্লেখ করেন - 

সেদিন ৩০ থেকে ৩৫ টি লঞ্চ সহকারে পুলিশ পুরো দ্বীপটিকে ঘিরে ফেলে। কুমিরমারি থেকে খাবার জল আনতে যাবো, সেই পরিস্থিতিও ছিল না। আমাদের জীবনকে দূর্বিসহ করে তোলার জন্য তারা উঠে-পরে লেগেছিল। অসহায়ভাবে খিদের জ্বালায় তাই আমরা নারকেলের পাতা ও ঘাস (যদু পালং) খেতে বাধ্য হই। বাচ্চাদের অনেকেই শুধু ডায়রিয়াতেই মারা যায়। পাশের কুমিরমারি গ্রাম থেকে খাবার জল, ঔষুধ এবং আহার-সামগ্রী যোগানের জন্য অবরোধের ১০ম দিনে আমরা মরিয়া হয়ে উঠি। নারীদের দেখে অন্তত দয়া হবে এই আশায় আমরা একটা নৌকাতে ১৬ জন মহিলাকে পাঠায়। কিন্তু "ইন্দ্রজিৎ এমভি৭৯" নামের একটি লঞ্চ দ্রুত গতিতে নৌকাটির নিকট এগিয়ে আসে এবং নদীর মাঝপথে নৌকাটিকে বিধ্বস্ত করে। ১৪ জন নারীকে আমরা ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করি। আর পরবর্তীতে বাকি দুজন কে বাগনান জঙ্গল থেকে উদ্ধার করি, যাদের উপর শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল। 

অবশেষে ১৯৭৯ সালের ৩১ জানুয়ারি, ১ হাজার পুলিশ ও সিপিএমের গুণ্ডাবাহিনী আক্রমন করে উদ্বাস্তুদের। চারেদিকে অবরুদ্ধ, পালানোর কোনো পথ নেই। জলে কুমীর, ডাঙ্গায় পুলিশ। অর্থনৈতিক অবরোধে, অনাহারে ও অসুখে এবং সর্বশেষ পুলিশ ও সিপিএমের হার্মাদ বাহিনীর আক্রমনে মারা পড়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার হিন্দু, ৫/৭ হাজার এদিক ওদিক পালিয়ে কোনোরকমে প্রাণ রক্ষা করে।

এই ঘটনার শিকার একজন শরণার্থী মুকুন্দ মন্ডল স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন - 

দুপুর ৪টে নাগাদ পুলিশরা আমাদের উপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। আমরা সে সময় একটা নৌকাতে করে দ্বীপ ছেড়ে পাশের কুমিরমারি গ্রামে পালাতে চাইছিলাম। চারদিক প্রবল আতংক ভর করেছিলো। সে সময় আমার নাতনির বয়স ছিল মাত্র ৮ বছর। এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে একটা গুলি তার গায়ে এসে লাগে এবং নৌকাতেই তার মৃত্যু হয়। আমাদের তার মৃত দেহ নদীর জলে ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। আমরা এতোটাই অসহায় হয়ে পড়েছিলাম সেই সময়।

হত্যার পর পুলিশ ও সিপিএমের দলীয় কর্মীরা মৃতদেহগুলোকে নদীতে ফেলে দেয়। আবার অনেকেরই নদী সাঁতরে পালাতে গিয়ে ডুবে মৃত্যু হয। 

ঘটনার পঞ্চদশ দিনে কোলকাতা হাই কোর্ট মরিচঝাঁপি দ্বীপে খাবার জল, প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং ডাক্তারদের প্রবেশের অনুমতি প্রদান করে। শেষতক অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়ে পেরে না উঠে তৎকালীন রাজ্যের সিপিআই(এম) সরকার মে মাসের দিকে জোরপূর্বক দ্বীপটিকে খালি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের উক্ত দ্বীপে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পুলিশের সহায়তায় দলীয় ক্যাডাররা মে মাসের ১৬ তারিখ ৩০০ টি পরিবারের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়।

কেন্দ্রে তখন জনতা সরকার। দিল্লি থেকে জনতা পার্টির একটি সংসদীয় দল মরিচ ঝাঁপি আসে ঘটনার তদন্ত করতে, কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার, তাদেরকে মরিচ ঝাঁপিতে ঢুকতেই দেয় নি।

এখানে অনেকগুলো প্রশ্ন। কেনো উদ্বাস্তুদেরকে পশ্চিমবঙ্গে আসতে বলা হলো ? আর কেনোই বা তাদেরকে আবার উৎখাত করার প্রয়োজন দেখা দিলো ? কারণ কি এটাই যে, উদ্বাস্তুরা ছিলো সবাই হিন্দু ? আর হিন্দুদেরকে মারলে সাম্প্রদায়িক তকমা পাওয়ার ভয়ে কেউ কোনো কথা বলবে না ? উদ্বাস্তুরা মুসলমান হলে বামফ্রন্ট কি এদের গায়ে হাত দিতো ? নিশ্চয় না। এর পরিবর্তে মরিচ ঝঁপিতে মসজিদ-মাদ্রাসা বানিয়ে দিয়ে তাদেরকে রাজার হালে থাকার ব্যবস্থা করে দিতো। বাস্তবে হয়েছেও তাই। হিন্দুদের উৎখাত করার পরেই মরিচ ঝাঁপি ভরে গেছে মুসলমানে । আগে ছিলো বামফ্রন্টের, এখন সেখানে তৃণমূলের এক চেটিয়া ভোট। আসলে এই ঘটনা ঘটানোর কোনো কারণই ছিলো না। বামফ্রন্টের হিন্দুদের প্রতি দরদ না থাক, সামান্য মনুষ্যত্ববোধ থাকলেও কি তারা এইভাবে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করতে পারতো ? প্রকৃতপক্ষে সিপিএম ছিলো একটি খুনী সরকার। মানুষ খুন করা ছিলো তাদের নেশা। তাদের প্রতীক যেমন লাল রং, তেমনি লাল রক্তেও ছিলো তাদের নেশা এবং সেই রক্ত হতে হবে অবশ্যই হিন্দুদের। উদ্বাস্তুদের এই ঘটনার শুরু থেকে শেষ, বিস্তারিত পাওয়া যাবে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পূর্ব-পশ্চিম উপন্যাসে।

সাঁইবাড়ি :

পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের শাসনামলে ( ১৯৪৭-১৯৬৭) প্রধান বিরোধী দল ছিলো বামেরা এবং তাদের প্রধান নেতা ছিলো জ্যোতি বসু। কেন্দ্রীয় সরকারের জ্বালানী তৈলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কলকাতায় বাস ট্রাম পুড়িয়ে এই সময় আরও বিখ্যাত হয় জ্যোতি বসু । ১৯৬৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে হটিয়ে অ-কংগ্রেসীদলগুলো সরকার গঠন করে, নাম হয় যুক্তফ্রন্ট সরকার। এই সরকারের অংশ ছিলো বামেরা, তাই জ্যোতিবসু হয় উপমূখ্যমন্ত্রী। দু বছর পর এই সরকারের পতন হলে আবারও নির্বাচন হয় এবং আবারও যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করে এবং আবারও জ্যোতি বসু হয় উপমূখ্যমন্ত্রী। উপমূখ্যমন্ত্রী হলেও জ্যোতিবসুর হাতেই ছিলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তথা পুলিশ প্রশাসন।

বাম অর্থাৎ কমিউনিস্টের আদর্শ এবং ইসলামের আদর্শের মধ্যে খুব একটা ফারাক নেই, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে দারুন মিল। যেমন- কমিউনিস্টরা মনে করে, যারা তাদের পার্টির সমর্থক নয়, দরিদ্র হলেও তারা দরিদ্র নয়, তাই তাদের জন্য পার্টি কিছু করবে না। একই ভাবে ইসলাম মনে করে, যারা মুসলমান নয় বা ইসলামে বিশ্বাস করে না, তারা মানুষ ই নয়, ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট জীব। আমার এই তথ্যটি বিশ্বাস করতে কষ্ট হলে কোরানের ৮/৫৫ আয়াত খুলে দেখে নিতে পারেন। ঐ আয়াতে বলা হয়েছে, "নিশ্চয় আল্লাহতায়ালার নিকট যমীনের বুকে বিচরণ শীল জন্তু প্রাণীর মধ্যে নিকৃষ্টতম হচ্ছে সেই সব লোক যারা মহাসত্য ( ইসলাম) কে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে, পরে তারা কোনো প্রকারেই তা কবুল করতে প্রস্তুত হয় নি।"

আবার যারা তুলনামূলক ধনী, কিন্তু পার্টিকে সমর্থন করে না, তারা কমিউনিস্টদের কাছে শ্রেণী শত্রু নামে পরিচিত এবং এদেরকে হত্যা করে শ্রেণীশত্রু খতম করা কমিউনিস্টদের একটা আদর্শ। ইসলামেও তেমনি সকল অমুসলিমকে হত্যা করতে বা তাদেরকে জোর ইসলামে দীক্ষিত করার কথা বলা হয়েছে। আবারও যদি কষ্ট স্বীকার করতে চান, তো দেখতে পারেন কোরানের ৯/৫ আয়াতটি।

"হত্যা কর যেখানেই তাদের পাও এবং তাদের ধরো, ঘেরাও করো এবং তাদের প্রতিটি ঘাঁটিতে তাদের খবরাখবর নেওয়ার জন্য শক্ত হয়ে বসো। অতঃপর তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তাহলে তাদেরকে তাদের পথ ছেড়ে দাও।"

এই আয়াতের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, অমুসলিমদের হত্যা করো, আর তারা যদি মুসলমান হয় তাদেরকে ছেড়ে দাও।

তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যোতিবসুর প্রচ্ছন্ন আস্কারা পেয়েই পশ্চিমবঙ্গের বামেরা রাজ্য জুড়ে শুরু করে দেয় পার্টির নামে চাঁদাবাজি, আর চাঁদা না দিলেই মারধোর, লুঠপাট, খুন। রাজ্য জুড়ে সিপিআইএম এর উচ্ছৃঙ্খলতা ও অরাজকতা সইতে না পেরে, দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকারের মূখ্যমন্ত্রী অজয় মুখার্জি তার প্রতিবাদ করলে, সিপিআইএম এর ক্যাডার বাহিনী মহাকরণেই (বাংলাদেশে বলে সচিবালয়) অজয় মুখার্জিকে শারীরিক নির্যাতন করে। এর ফলে, Ò'এই অসভ্য বর্বর সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আর থাকতে চাই না' বলে ১৬ই মার্চ, ১৯৭0 তিনি পদত্যাগ করেন। ফলে মাত্র ১৩ মাসের মাথায় পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙ্গে যায় এবং প্রবল ক্ষমতাশালী বামেরা একদিনেই প্রশাসনিকভাবে ক্ষমতাশুন্য হয়ে যায়। সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডের মূলে ছিলো এই রাজনৈতিক পটভূমি।

সাঁইরা ছিলো ব্রিটিশ আমলের জমিদার এবং কংগ্রেসের একনিষ্ঠ সমর্থক। তাই কংগ্রেসকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করা যুক্তফ্রন্ট সরকারের - নিজেদের অভ্যন্তরীন কোন্দলে - আকস্মিক পতনে স্বভাবতই কংগ্রেস সমর্থকরা খুশি হয় এবং বর্ধমানের কংগ্রেসীরা একটি আনন্দ মিছিল বের করে এবং তাতে সাঁইরা অংশ নেয়। অন্যদিকে কংগ্রেসের আনন্দ দেখে মনিহারা ফনীর মতো সিপিএম সমর্থকরা রাগে ফুঁসতে থাকে এবং ১৭ মার্চ রাজ্য জুড়ে বাংলা বন্ধের ডাক দেয়।

এর আগে একটা ঘটনা ঘটেছিলো, ১৯৬৯ সালের ১১ই ডিসেম্বর বর্ধমানের আলমগঞ্জে কংগ্রেসের সক্রিয় সমর্থক ইন্দ্রভূষণ গড়িয়াকে সিপিএম সমর্থকরা বোমা মেরে খুন করে। সেই হত্যামামলা সংক্রান্ত বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল সাঁই পরিবার।

কোনো এক এলাকায় জমিদার থাকা মানেই, ঐ এলাকার অন্যান্য লোকজন চাষাভূষা, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ এবং তাদের মধ্যে থেকে - জমিদারদের সাধারণ কিছু অত্যাচার এবং তাদের ক্ষমতা ও বিলাস ব্যসনে - জমিদারদের প্রতি ঈর্ষান্বিত কিছু লোক থাকবেই। সাঁইরাও এর ব্যতিক্রম ছিলো না। যেহেতু তাদের জমিদারীর ক্ষমতা চলে গিয়েছিলো ঘটনার মাত্র কিছু বছর আগে, ১৯৫৩ সালে, তাই জমিদারদের ক্ষমতার দাপটে অত্যাচারিত কিছু লোক তখনও বেঁচে ছিলো এবং তারা স্বাভাবিকভাবেই সাঁই পরিবারের উপর ক্ষুব্ধ ছিলো। এর সাথে যুক্ত হয়েছিলো কমিউনিস্টদের শ্রেণীশত্রু থিয়োরি, যেহেতু সাঁইরা বামেদের সমর্থক ছিলো না। তাই কমিউনিস্ট আদর্শ অনুসারে সাঁই পরিবার ছিলো খতম যোগ্য; কিন্তু এর জন্য তো সময়, সুযোগ ও ইস্যু দরকার। এই তিনটিই মিলে গিয়েছিলো ১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ।

সাঁইরা ছিল পাঁচ ভাই- প্রণব, মলয়, নবকুমার, উদয় ও বিজয় এবং বোন ছিলো ৭ জন। ঘটনার দিন এক বোন বাড়িতে ছিলো এবং সেও হয়েছিলো এই নৃশংস ঘটনার শিকার ও প্রত্যক্ষদর্শী।

১৭ মার্চ তারিখে সাঁইবাড়িতে এক নবজাত শিশুর নামকরণের উৎসব ছিলো।ঠিক ঐ দিনই আকস্মিকভাবে ডাক দেওয়া বন্ধ সফল করার জন্য সিপিএম সমর্থকরা একটি মিছিল বের করে। সাঁইবাড়িতে যখন অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছিলো, তখন সিপিএমের মিছিল বড় রাস্তা ছেড়ে সাঁইবাড়ির সরু গলিতে এসে ঢুকে। বিরোধী পক্ষের মিছিলে ৫০/৬০জন লোক দেখে প্রণব সাঁই এর মা মৃগনয়না দেবী বাড়ির মেইন গেট বন্ধ করে দেয়, যাতে মিছিলের লোকজন বাড়ির মধ্যে ঢুকে নামকরণ অনুষ্ঠানে কোনো বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, যেহেতু তারা শত্রুপক্ষ। এতেই আঁতে ঘা লাগে সিপিএমের লোকজনের, তারা অপমানিত বোধ করে।

কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান

মহাভারতের কথা অমৃত সমান।

সংস্কৃত থেকে বাংলায় মহাভারত অনুবাদ করার সময়, কাশীরাম দাস মহাভারতের মুল্যায়ন করতে গিয়ে উপরের এই অমূল্য কথাটি বলে গিয়েছেন। কারণ, মহাভারতের প্রতিটি কথা, প্রতিটি ঘটনার মধ্যে এত শিক্ষা লুকিয়ে আছে যে, একমাত্র মহাভারতকে অনুসরণ করলেই জীবনের অনেক জটিলতা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।এবং এই মহাভারত সব দিক থেকে এতটাই বিশুদ্ধ গ্রন্থ যে, "মহাভারত কি অশুদ্ধ হয়ে যাবে ?" ব'লে একটা প্রবাদ আছে। আর মানে হলো, মহাভারত এতটাই শুদ্ধ যে, কেউ যদি মহাভারত বর্ণনা করতে গিয়ে কোথাও ভুল করে, সে অন্য জায়গায় গিয়ে আর কাহিনী মেলাতে পারবে না। সেই মহাভারতের একটি বাণী হলো, ভিলেন অর্থাৎ "দূরাত্মার ছলের অভাব হয় না।" সেই দিন সিপিএমের লোকজনেরও ছলের অভাব হলো না।

মিছিলের ভেতর থেকে একজন বললো, সাঁইবাড়ির ভেতর থেকে মিছিলে একটি ইট মেরেছে, কেউ বললো বোমা মেরেছে, কেউ বললো ভাতের গরম ফ্যান ফেলেছে।

ইসলামের অনুসারীরা যেমন অন্ধ হয়, তাদের যেমন কোনো বিচার বুদ্ধি থাকে না, মুহম্মদ যা বলে গেছে ও করে গেছে, তা যেমন অন্ধ বিশ্বাসে করে ফেলে; ঠিক তেমনি কমিউনিস্টের অনুসারীরাও, পার্টির লিডাররা যা বলে তারা তা অন্ধের মতো বিশ্বাস করে এবং সেইভাবে কাজও করে। লিডাররা যেই বললো, সাঁইবাড়ি থেকে মিছিলের উপর ইট, বোমা মেরেছে; অমনি প্রায় হাজার দেড়েক কমিউনিস্ট পন্থী লোকজন- লাঠি, হেঁসো, টাঙ্গি, বল্লমের মতো দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে সাঁইবাড়ি ঘিরে ফেললো। তারপর শুরু হলো এ্যাকশন।

প্রথমেই দরজা ভেঙ্গে তারা বাড়ির ভেতরে ঢুকে। ভয় পেয়ে প্রণব সাঁই খাটের তলে গিয়ে লুকায়। তাকে বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খাটের তলা থেকে বের করে এবং বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়েই হত্যা করে।

এরপর, ওদের বাড়ির এক দিদিকে, উঠানে চিৎ করে শোয়ায় এবং তার চার হাত পা চার দিক থেকে চেপে ধরে তার বুকের উপর তার ছোট ভাইকে উপুর করে শোয়ায় এবং ঐ অবস্থাতেই ভাইকে হেঁসো দিয়ে জবাই করে। এতে রক্তে ভেসে যায় দিদির মুখ, বুক। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছিটকে গিয়ে পড়ে মা মৃগনয়নার মুখে। দিদির দেহের উপরই তার ছোট ভাইয়ের মৃত্যু হয়।

ঘটনা ছিলো সকাল ১০টার দিকে, বাড়ির গৃহশিক্ষক জীতেন্দ্রনাথ রায়, ঘটনার ভয়াবহতা বুঝতে পেরে সাঁইবাড়ি থেকে বেরোনোর জন্য, লুকানো অবস্থান থেকে, রান্না ঘরের পেছন দিয়ে প্রাচীর টপকিয়ে পালানোর চেষ্টা করে, কিন্তু দুর্ভাগ্য তার, পা পিছলে পড়ে যান। টের পেয়ে সিপিএম সমর্থকরা ঐ জায়গাতেই তাকে কুপিয়ে খুন করে।

এমনিতেই পুরোনো জমিদার, তার উপর ধনী, বাড়িতে চাকর বাকর থাকা খুবই স্বাভাবিক| বিপদের এই দিনে সেরকম দুজন চাকর, মনিবদের বাঁচানোর চেষ্টা করছিলো, সেই দুজনের মাথায় কুড়াল দিয়ে আঘাত করা হয়। পরের দিন হাসপাতালে সেই দুজন মারা যায়।

চোখের সামনে দুই ছেলেসহ এতগুলো মানুষের মৃত্যু দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় ঐ বাড়ির মা মৃগনয়না দেবী। কিছু পড়ে তার জ্ঞান ফিরলে ছেলেদের রক্ত দিয়ে ভাত মেখে, সেই ভাত মৃগনয়নার মুখে গুঁজে দেয় সিপিএমের ঐ নরপশুরা।

এই ঘটনা জানার পর থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে জীবনে যতবারই "সিপিএম" লিখবো, বানানটা লিখবো "ছিঃপিএম"।

বড় পরিবার, বেশি লোক, সেই বাড়ির রান্নার চুলাও নিশ্চয় অনেক বড় হবে। এ্যাকশন শেষে যাবার সময় সেই চুলার মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যায়, যার নামকরণের অনুষ্ঠান চলছিলো, সেই তিন মাস বয়সী ছোট্ট শিশুকে, হাসপাতালে দীর্ঘ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পরে যে কোনোরকমে বেঁচে যায় এবং আধাপোড়া শরীর ও "অমৃত" নাম নিয়ে বড় হয়।

নৃশংসতার ক্ষেত্রেও ইসলাম ও কমিউনিস্টদের কত মিল তা বোঝার জন্য উপরের ঘটনাগুলোর সাথে ১৯৪৬ সালের নোয়াখালির ঘটনাগুলোর তুলনা করে দেখুন। অসংখ্য ঘটনা থেকে নোয়াখালির মাত্র দুটি ঘটনা উল্লেখ করছি :

ঘটনা (1) : ২৬.১০. ১৯৪৬ তারিখের স্টেটসম্যান পত্রিকায় এই ঘটনাটি ছাপা হয়। এই পত্রিকার এক সাংবাদিক, ভূক্তভোগী একটি বাচ্চা মেয়ের কাছ থেকে ঘটনাটি শুনে পত্রিকায় ছাপেন। সেই ঘটনাটি এরকম : "১০ অক্টোবর সকালে গোলাম সারোয়ারের সভা থেকে বেরিয়ে আসা ৩ নং দলটি ঐ মেয়েটির বাড়িতে এসে মুসলিম লীগের তহবিলে ৫০০ টাকা চাঁদা চায়। চাঁদা না দিলে বাড়ির সবাইকে খুন করা হবে বলে হুমকি দেয়। প্রাণের বয়ে মেয়েটির বাবা ওদের ৫০০ টাকা দিয়ে দেন। কিছুক্ষণ বাদে ওরা আবার আসে, সাথে এক বিরাট জনতা। ঐ বাড়ির একজন অভিভাবক, যিনি ছিলেন পেশায় মোক্তার, তিনি ঐ উত্তেজিত মুসলমানদের শান্ত করতে এগিয়ে যান। কিন্তু তিনি কোনো কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করার আগেই তার মাথা কেটে ফেলা হয়। এরপর মুসলমানরা পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক লোক, যিনি মেয়েটির দাদু, তাকে খুন করে। এরপর মেয়েটির বাবার পালা। মেয়েটির বাবাকে তারই সদ্য খুন হওয়া পিতার মৃতদেহের উপর শুইয়ে দেওয়া হয়। তখন মেয়েটির ঠাকুমা,তার ছেলেকে বাঁচানোর জন্য ছেলের দেহের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং ওদের কাছে ছেলের প্রাণ ভিক্ষা চাইতে থাকেন। কিন্তু তাতে মুসলমানরা ঐ বৃদ্ধা মহিলার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে এবং তার অচৈতন্য দেহকে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এরপর আবার মেয়েটির বাবাকে মারতে উদ্যোগী হয়। মেয়েটি ভয়ে এতক্ষণ ঘরের কোণে লুকিয়ে থেকে এসব দেখছিলো। বাবার প্রাণ বাঁচানোর জন্য সে তখন ঘর থেকে বেরিয়ে আসে এবং ঘাতক মুসলমানের হাতে ৪০০ টাকা ও কিছু গহনা দিয়ে কাকুতি মিনতি করে তার বাবাকে না মারার জন্য। এরপর ঐ ঘাতক মুসলমান, বাম হাতে ঐ টাকা-গয়না গ্রহন করে এবং ডান হাতে থাকা দা দিয়ে মেয়েটির বাবার মাথা কেটে ফেলে।"

ঘটনা (২) : পাড়ার সকল হিন্দু বাচ্চাদেরকে হিন্দুদেরই খড়ের গাদার উপর মই দিয়ে তুলে দিয়ে চারধানে কেরোসিন পেট্রোল দিয়ে মুসলমানরা আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো; তারপর বাচ্চারা, মা বাবা বলে চিৎকার করছিলো, এই শুনে উপস্থিত মুসলমানরা উল্লাস প্রকাশ করছিলো আর মজা দেখছিলো। কিছুক্ষণ পর আধা পোড়া বাচ্চাগুলো খড়ের গাদা থেকে গড়িয়ে পড়লে ওদের পা ধরে নিকটবর্তী পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলো ।

এক জনের দেহের উপর ফেলে আরেকজনকে জবাই করতে এবং ছোটো ছোটো শিশুদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করতে কমিউনিজম এবং ইসলাম কীরকম সিদ্ধহস্ত, সেটা একবার চিন্তা করুন।

যা হোক, ঘটনার দিনই প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দীলিপ কুমার ভট্টাচার্য নামে এক ব্যক্তি ৬২ জনের নামে বর্ধমান থানায় মামলা দায়ের করে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী প্রায় সবাই ছিলো ছিঃপিএমের লোক। ঘটনার সময় ওদের ভয়ে সাধারণ লোক সবাই দোকান পাট বন্ধ করে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলো। আর যারা ঘটনাক্রমে ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছিলো, ছিঃপিএমের লোকজনের ভয়ে হিমশীতল আতঙ্ক তাদের গ্রাস করেছিলো, নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে, সবাই মুখ বন্ধ রাখাই উচিত বলে মনে করেছিলো। 

তারপরও ৭৮ জন লোক, সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সাক্ষ্য দিতে রাজী হয়।

১৯৭০ সালের ৬ জুন, বর্ধমান টাউন হলে মুখার্জি কমিশন বসে সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য। সেই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হয় গুলমনী রায়। সাঁইবাড়ির জীবিত সদস্যদের এবং অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের সাক্ষ্য না দেওয়ার জন্য ছিঃপিএমের লোকজন প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপের কাছে মাথা নত না করায় ছিঃপিএমের লোকজন সাঁই পরিবারের আরেক ছেলে নবকুমারকে, রায়নার আহ্লাদিপুরে টাঙ্গি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। এর ফলে সব সাক্ষী ভয়ানকভাবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং তদন্তের কাজ চালিয়ে যাওয়াই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতদসত্ত্বেও তদন্তকারীদের সামনে মূল দোষী রাঘব বোয়ালদের নাম উঠে আসে। সরাসরি খুন করার জন্য অভিযুক্ত হয়- ছিঃপিএম দলের মেমারির তৎকালীন বিধায়ক বিনয় কোঙার; নিরুপম সেন, মানিক রায়, অমল হালদার এবং এসএফআই নেতা পল্টু ব্যানার্জি। এই ৫ জন সহ মোট ১১১ জনের নামে, ১৯৭১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চার্জ শিট দাখিল হয় বর্ধমান দায়রা জজ আদালতে। ১৯৭১ সালেই বর্ধমানের সেসন জজ ৮জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। এর পর শুরু হয় আপিল মামলা। কিন্তু সেখানে সাক্ষীদের উপর ক্রমাগত হুমকি ধমকির কারণে কলকাতা হাইকোর্টের আদেশে এই মামলাটি ১৯৭৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আলীপুর দায়রা আদালতে স্থানান্তরিত হয়।

এরপর মামলাটি ঢিমে তালে চলছিলো। কিন্তু ১৯৭৭ সালে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে সিপিএম এককভাবে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই ৩০ হাজার বন্দীকে মুক্তি দিয়ে জেল থেকে ছেড়ে দেয়, যাদের অধিকাংশই ছিল তাদের দলের লোক, মার্কসবাদী। সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদেরও প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। আসামী মানিক রায় ছিলো পলাতক। পরে অনিল বসু নামে লোকসভায় এম.পি নির্বাচিত হয়।

এর পরে "অল ইন্ডিয়া লিগ্যাল এইড ফোরাম" এর পক্ষ থেকে জয়দীপ মুখার্জি এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন। সুপ্রিম কোর্ট, কলকাতা হাইকোর্টকে কেস রেকর্ডস পাঠাতে বলে। হাইকোর্ট জানায় সাঁইবাড়ির সকল রেকর্ডস চুরি হয়ে গেছে। মামলা ডিসমিস। এভাবে বামেদের তিন যুগের দুঃশাসনে চাপা পড়ে যায় সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডের সকল ঘটনা এবং একইভাবে চাপা পড়ে, পরিস্থিতির চাপ সইতে না পেরে উন্মাদ হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো, সাঁই পরিবারের ছেলে উদয় সাঁই এর "আর্ত চিৎকার"।

(বি.দ্র. - নেট ঘেঁটে এবং বই পুস্তক পড়ে বাম আমলের সন্ত্রাস সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি, তার ভিত্তিতেই, নতুন প্রজন্মকে জানানোর স্বার্থে, অনেক ঘটনা থেকে শুধু মাত্র তিনটি ঘটনা নিয়ে এই লেখাটি আমি লিখেছি। যদি কোনো তথ্যগত ত্রুটি থেকে থাকে এবং কারো যদি সেই সঠিক তথ্য জানা থাকে, তাহলে আমাকে সেই বিষয়টি ইনফর্ম করার জন্য অনুরোধ করছি, যাতে পরের পোস্টে বিষয়গুলো সংশোধন করে দিতে পারি।)

জয় হিন্দ।

No comments:

Post a Comment