Saturday, 5 September 2020

নপুংসক ব্যক্তি যাদের আদর্শ, তারা নপুংসকই হয় :


নপুংসক ব্যক্তি যাদের আদর্শ, তারা নপুংসকই হয় :

ফটোপোস্টের গদাধরের পৈতৃক নাম নিশ্চয় গদাধর নয়, সে নিজেকে কঠিন এবং খাঁটি বৈষ্ণব হিসেবে তুলে ধরার জন্য নিশ্চয় এই নামটি নিয়েছে।

বৈষ্ণব মতবাদের গদাধর, চৈতন্যদেবের একজন শিষ্য এবং সখা। চৈতন্যদেবের নির্দেশে নিত্যানন্দের সাথে থেকে তিনি প্রেমভক্তি প্রচার করেন এবং শেষ পর্যন্ত পুরীর মন্দিরে চৈতন্যদেবের সাথেই নিহত হন বলে অনেকের ধারণা, যেহেতু চৈতন্যদেবকে পুরীর মন্দিরের ভেতর হত্যা করার পর থেকে গদাধরকে কোথাও আর কেউ দেখে নি এবং চৈতন্যদেব যখন শেষ বারের মতো পুরীর মন্দিরে প্রবেশ করে, তখন নাকি গদাধরও চৈতন্যদেবের সাথে ছিলো।

এই গদাধরের স্ত্রী, সংসার ও ছেলে মেয়ের কোনো খবর পাওয়া যায় না, এ থেকে ধারণা করা হয় যে- তিনি ছিলেন প্রকৃত বৈরাগী, যিনি নারীর মুখ দর্শন করেন নি। আর কোনো পুরুষের পক্ষে তখনই এটা করা সম্ভব যখন তিনি হবেন সম্পূর্ণ নপুংসক।

সেই গদাধরের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই ইসকন সদস্য নিজের নাম নিয়েছে গদাধর, নপুংসক হওয়া ছাড়া এর সামনে বিকল্প কোনো পথ আছে কি ?

ফটোপোস্টে দুইজন মুসলিম এবং একজন হিন্দুর দাঁড়ানোর এটিচিউডকে লক্ষ্য করুন। হিন্দুটিকে দেখেই মনে হচ্ছে যে, সে দুর্বল- দৈহিক শক্তি এবং জ্ঞানে। মুসলমানরা তাকে এমন কিছু প্রশ্ন করেছে, যার উত্তর খুঁজে না পেয়ে সে মাথা নত করে আছে। এর মূল কারণ সে চৈতন্য এবং রাধার ভক্ত। আর যে ব্যক্তি, চৈতন্য এবং রাধার ভক্ত, তার বিনাশের জন্য অন্য কিছুর কোনো প্রয়োজনই নেই। কেননা, চৈতন্যদেবের নীতি হলো- মেরেছে কলসির কানা, তাই বলে কি প্রেম দেবো না ? এছাড়াও চৈতন্য চরিতামৃতে বৈষ্ণবদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে- 

"তরুসম সহিষ্ণুতা বৈষ্ণব করিবে।

ভর্তসনা তাড়নে কারে কিছু না বলিবে।।

কাটিলে তরু যেন কিছু না বোলয়।

শুকাইয়া মৈলে তবু জল না মাগয়।।"

অর্থাৎ বৈষ্ণবদেরকে যদি কেটেও ফেলে, তবু সে কিছু বলতে পারবে না, সে মরতে থাকবে, কিন্তু প্রেম দিতে থাকবে।

চৈতন্যদেবের শিষ্যরা নিরঙ্কুশ নিরামিষ খায়, এই নিরামিষ খেয়েও নাকি মানুষ অনেক শক্তিশালী হতে পারে বলে অনেক ইসকন ভক্ত আবার আমাকে এটা সেটার উদাহরণ দেখায়। তাদের এইসব কথা যে ভাবের, বাস্তবের নয়, তারা এরকম ইসলামি দাওয়াতের মুখোমুখি হলে বুঝতে পারবে, যেমন বুঝতে পেরেছে চৈতন্যভক্ত, তৃণভোজী গদাধর।

কোন প্রশ্নের মুখে পড়ে গদাধর এভাবে মাথা নত করে আছে, সেটা না জানলেও ধারণা করছি, মুসলমানরা রাধা নিয়েই তাকে প্রশ্ন করেছে, যেহেতু যেখানে তারা দাঁড়িয়ে কথা বলছে, সেটা রাধা মন্দির।

মুসলমানরা রাধা নিয়ে যেসব প্রশ্ন করে, সে সব প্রশ্ন এখন আমি- রাধাভক্তদের উদ্দেশ্যে করছি, দেখুন তো উত্তর দিতে পারেন কি না ? ধরে নিন, আমি ঐ দুই মুসলমানের একজন এবং আপনি গদাধর, আমার প্রশ্নগুলো শুনলেই বুঝতে পারবেন, কেনো আপনাদের গদাধর মাথা নিচু করে আছে ?

মুসলমানদের প্রশ্ন- আচ্ছা, এটা তো আপনাদের রাধামন্দির, তো রাধার সাথে আপনাদের ভগবান কৃষ্ণের সম্পর্ক কী ?

গদাধর- রাধা হলেন আদ্যাশক্তি মহামায়া।

মুসলমান- আমরা এসব আদ্যাশক্তি মহামায়া টায়া শুনতে চাই নি, আমি জিজ্ঞেস করছি- রাধা, কি কৃষ্ণের স্ত্রী ?

গদাধর- না।

মুসলমান- তাহলে রাধা কার স্ত্রী ?

গদাধর- আয়ান ঘোষের।

মুসলমান- তাহলে রাধা কৃষ্ণের স্ত্রী নয়, অন্য কারো স্ত্রী ?

গদাধর- হুমম।

মুসলমান- তাহলে আপনাদের ভগবান কৃষ্ণ, অন্য একজনের স্ত্রীর সাথে প্রেম করছে, এটা কি কৃষ্ণের লাম্পট্য নয় ?

গদাধর- না, মানে, হ্যাঁ, ব্যাপারটা সেরকম নয়। রাধা লক্ষ্মীর অবতার, আর শ্রীকৃষ্ণ বিষ্ণুর অবতার, আর বিষ্ণু ও লক্ষ্মী স্বামী স্ত্রী। স্বর্গে- এক দেবতা, লক্ষ্মীকে স্ত্রী হিসেবে প্রার্থনা করেছিলো বলে, সেই দেবতা পৃথিবীতে আয়ান ঘোষ নামে জন্ম নেয় এবং রাধা হিসেবে জন্ম নেওয়া লক্ষ্মীর সাথে তার বিয়ে হয়, কিন্তু সামান্য এক দেবতা তো আর বিষ্ণুর স্ত্রী লক্ষ্মীর সাথে সহবাস করতে পারে না, তাই আয়ান ঘোষ নপুংসক হয় এবং রাধা, কৃষ্ণের সাথে প্রেম করেন, যে প্রেম নিষ্কাম অর্থাৎ কামনাশূন্য।

মুসলমানআপনাদের এসব আজগুবি কাহিনীতে আমাদের কোনো ইন্টারেস্ট নেই, আচ্ছা বলেন তো রাধা ও কৃষ্ণের এইসব প্রেমের কাহিনী আপনাদের কোন কেতাবে আছে ?

গদাধরব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে।

মুসলমান- সেই কেতাবে তো রাধা ও কৃষ্ণের যৌনলীলার ছড়াছড়ি, আমি নিজে পড়েছি, তাহলে আপনি কিভাবে বলছেন যে- রাধা ও কৃষ্ণের প্রেম নিষ্কাম বা কামনাশূন্য ?

গদাধর- নিরুত্তর, মাথা নিচু করে ভাবছে কী জবাব দেবে ?

মুসলমান- আচ্ছা, এসব বাদ দেন। রাধার সাথে যে কৃষ্ণের প্রেম ছিলো, সেটা তো আপনারা স্বীকার করেন, আবার এটাও স্বীকার করেন যে রাধা, কৃষ্ণের স্ত্রী নয়। তাহলে রাধা ও কৃষ্ণের যে প্রেম হয় সেটা হয় পরকীয়া। এই পরকীয়া প্রেমের প্রচার করে আপনারা সমাজকে কি শিক্ষা দিচ্ছেন ? সবাইকে কি কৃষ্ণের মতো পরকীয়া প্রেম করতে বলছেন ?

গদাধর- নিরুত্তর।

মুসলমান- বাদ দেন এসব কথা। আপনি কি বিয়ে করেছেন ?

গদাধর- না।

মুসলমান-ভবিষ্যতে বিয়ে করবেন ?

গদাধর-না।

মুসলমান-আপনার মতো সব হিন্দু যদি বিয়ে না করে, তাহলে তো আপনাদের বাচ্চাকাচ্চাও হবে না। তাহলে আপনাদের মৃত্যুর পর আপনাদের এইসব মন্দিরে পূজা করবে কে ?

গদাধর- নিরুত্তর।

আমার ধারণা এই ধরণের প্রশ্নের মুখে পড়েই গদাধর নিরুত্তর হয়ে মাথা নিচু করে আছে। কারণ, বৈষ্ণব মতবাদ ইসলামের মতোই সম্পূর্ণ অবাস্তব থিয়োরি, বাংলার এমন কোনো বৈষ্ণব নেই, যে আমার তিনটি প্রশ্নের উত্তর যুক্তিসম্মতভাবে দিতে পারে। কারণ, পৃথিবীতে কেউই প্রকৃত বৈষ্ণব নয়, সবাই নামে বৈষ্ণব।

সম্পূর্ণ অবাস্তব থিয়োরি এবং অশাস্ত্রীয় ভ্রান্ত বিশ্বাসকে ধারণ ও লালন করার জন্যই গদাধরের এই অবস্থা। শুধু গদাধরের নয়, মুসলমানদের প্রশ্নজিহাদের মুখে পড়লে সকল ইসকনির এই একই অবস্থা হবে। তবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, এই মুসলমানরা শুধু একবারই গদাধরকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েই তারা হাল ছেড়ে দেবে, তারা বার বার ঐ মন্দিরে গদাধরের কাছে যাবে, গদাধরকে নানারকম প্রশ্ন করবে, তাকে হেয় করবে, এ থেকে বাঁচার জন্য গদাধরকে ঐ মন্দির থেকে পালাতে হবে। আর যদি গদাধরের পালানোর কোনো জায়গা না থাকে, সে এক সময় বাধ্য হবে ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হতে।

কিন্তু এর বিপরীতে আমার মতো কৃষ্ণভক্ত, যে নিরামিষ খায় না বলে যার শরীর দুর্বল নয়, আক্রান্ত হলে যার আক্রমন প্রতিহত করার মানসিকতা আছে, যার আত্মরক্ষার ক্ষমতাও আছে, তাদের কাছে এসে যদি কোনো মুসলমান ইসলামের দাওয়াত দেয়, সেই মুসলমানের এরকম বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার কোনো অপশন নেই, আমাদের পাল্টা প্রশ্নের মুখে পড়ে বাপ বাপ করে পালাতে বাধ্য হবে।

ইসলামের প্রাথমিক যুগ অর্থাৎ মুহম্মদের মদীনায় পলায়নের (৬২৩ খ্রি.) পর থেকে মধ্যযুগ অর্থাৎ ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত, মুসলমানরা অমুসলিমদের গলায় তরবারি ধরে বলেছে- হয় ইসলাম গ্রহণ কর, নয়তো মৃত্যুকে বরণ কর। ইসলামের সেই তরবারির জোর আর নেই, এখন কোনো মুসলমান যদি ঐ থিয়োরিতে ইসলাম প্রচার করতে যায়, সে নিজেই মার খাবে বা মরে যাবে, যেমন মরেছে ইরাক সিরিয়ার আইএস জঙ্গীরা। তাই ইসলাম প্রচার করতে মুসলমানদের এখন প্রশ্নজিহাদ এবং ব্রেইন ওয়াশ থিয়োরিই ভরসা। একারণে ইসলামের দাওয়াত প্রসঙ্গে মুসলমানদের সাথে পেশীশক্তির লড়াইয়ের কথা বাদ দিলাম, মুসলমানরা এখন যেহেতু জ্ঞানশক্তির সাহায্যে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছে, সেহেতু এখন আমাদেরকেও জ্ঞানশক্তি দিয়েই তাদের সাথে লড়াই করতে হবে, যেটা আমাদের জন্য অনেক সহজ।

পৃথিবীতে যেমন একজনও খাঁটি বৈষ্ণব নেই, তেমনি একজনও খাঁটি মুসলমান নেই। তাই জ্ঞানশক্তির জোরে বৈষ্ণবদেরকে পরাজিত করা যেমন কোনো ব্যাপার নয়, তেমনি মুসলমানদেরকে পায়ের নিচে ফেলাও কোনো বিষয় নয়। এই পৃথিবীতে এমন কোনো বৈষ্ণব বা এমন কোনো মুসলমান নেই যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে ৩ মিনিট বুক ফুলিয়ে লেকচার দিতে পারে। মুসলমানদের সাথে আমার ঘটা দুটো ঘটনার উদাহরণ দিচ্ছি-

একবার আমি এবং এক হুজুর মুসলমান পাশাপাশি বসে ছিলাম। মুসলমানদের স্বভাব তো ধর্ম নিয়ে চুলকানো, তাই সুযোগ পেলেই তারা ধর্ম নিয়ে চুলকাবে। হঠাৎ সে বলে উঠলো- আমাদের যে রোযা, এটা কিন্তু দেহের জন্য খুব উপকারী। আপনারা রোযা রাখেন না কেনো ?

জবাবে আমি শুধু এটাই বলেছি- যদি রোযা এতই উপকারী হয়, তাহলে তা সারা বছর রাখেন না কেনো ?

ব্যস, এরপরই ঐ মুসলমান আর একটা কথাও তখন মুখ দিয়ে বের করে নি এবং তার পরেও ধর্ম নিয়ে কোনো কথা আমার সাথে কোনোদিন আলোচনা করে নি।

আরেকদিন আরেক মুসলমান আমার কাছে এসে বসে হিন্দুধর্ম নিয়ে এটা সেটা বলছিলো, যেটা ঠিক কটূক্তি নয়, সমালোচনা বলা যেতে পারে। ভাবলাম, এর মুখ বন্ধ করতেই হবে। আমি জানতাম সে এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করে, তাই বললাম- তোর ফোনে কোনো অডিও ভিডিও গান আছে ? বললো- আছে। আমি বললাম- গান শুনতে ভালো লাগে ? বললো- লাগে। তখন আমি বললাম, তুই জানিস, ইসলাম মতে গান শোনা হারাম ? সে চুপ করে গেলো। তারপর আমি বললাম- নিজে আগে প্রকৃত মুসলমান হ, তারপর অন্যের ধর্মের সমালোচনা করিস বা অন্যের কাছে গিয়ে ইসলামের গুনগান বা প্রচার করিস। তারপর থেকে ঐ মুসলমান আর কোনোদিন আমার সামনে এসে ঐরকম কথাবার্তা আর কোনোদিন বলে নি।

মুসলমানদেরকে কথায় পরাজিত করতে গেলে আপনাকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে হবে। ঈশ্বরের কৃপায় ইসলাম সম্পর্কে আমার এমন নলেজ যে, কোনো মুসলমানের ক্ষমতা নেই কোনো একটি বিষয় নিয়ে আমার সামনে বক্তৃতা মারার। যে বিষয়ে কথা বলবে, সেই বিষয়েই এমন প্রশ্ন করবো, যে তার উত্তর দিতে গিয়ে কূল কিনারা খুঁজে পাবে না, বাপ বাপ করে আমার কাছ থেকে পালাবে।

আর বৈষ্ণবদের সাথে লড়াইয়ের কথা আর কী বলবো, এরা তো কখনো আলোচনাতেই বসতে চায় না। এরা এমন ভাবারু যে, এরা ভাবে- আমি যা বুঝি, সেটাই চুড়ান্ত সত্য, সেটা অন্য কেউ বোঝে না এবং সেই জ্ঞান অন্য কাউকে বলা যাবে না, তাই বৈষ্ণবদেরকে কোনো প্রশ্ন করলেও তার উত্তর পাওয়া যায় না। কোনো না কোনো অজুহাতে তারা এড়িয়ে যায়। পেটে বোম মারলেও মুখ দিয়ে কিছু বাড়ায় না, এই প্রবাদ, বৈষ্ণবদের এই ধরণের আচরণের কারণেই সৃষ্টি হয়েছে। আসলে এরা তো মূর্খ, সনাতন ধর্মের প্রকৃত জ্ঞান তো এদের নেই ই, যে মতবাদ এরা পালন করে, সেই বৈষ্ণব মতবাদ সম্পর্কেও এদের টোটাল জ্ঞান নেই, যেখানে মুখ খুলবে, সেখানেই এরা ধরা খাবে, তাই সবক্ষেত্রে মৌনতাকেই এরা অবলম্বন করে, যেটা মূর্খদের বৈশিষ্ট্য; কারণ, মুখ খুললেও তো তাদের জারিজুরি সব ফাঁস।

যা হোক, একবার আমার গ্রামে এক ইসকন সদস্য এলো একেবারে বউ নিয়ে। বিয়ে করার পরও সে না কি বৈষ্ণব বা বৈরাগী! যে চৈতন্যদেব স্ত্রীকে ত্যাগ করেছিলো, এক নারীকে সম্বোধন করার অপরাধে যে চৈতন্যদেবে তার এক শিষ্য ছোটহরিদাসকে বর্জন করেছিলো, যাকে সে কোনো দিন ক্ষমা করে নি, সেই চৈতন্যদেবের অনুসারীরা আবার বিয়ে করে, স্ত্রীর সাথে যৌনক্রিয়া করে, আবার সন্তানের জন্মও দেয়, এরা পালন করে সম্পূর্ণ সনাতনী কালচার, আবার নিজেকে পরিচয় দেয় বৈষ্ণব হিসেবে ! একই সাথে কেউ যেমন নারী ও পুরুষ হতে পারে না, তেমনি একই সাথে কেউ সনাতনী এবং বৈষ্ণব হতে পারে না। তাই বিয়ে শাদী ও সংসার করা এবং নিজেকে বৈষ্ণব বলে পরিচয় দেওয়া সম্পূর্ণ ভাণ্ডমিক ব্যাপার।

যা হোক, বিয়ে করা সেই ইসকনী- অস্ট্রেলিয়া, না ফিজির কোনো এক মন্দিরে থাকে। তার আগমন উপলক্ষ্যে পাড়ার লোকজন তাকে নিয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করলো, সেখানে গেলাম। বক্তৃতার এক পর্যায়ে সে বললো- চৈতন্যদেব, কলিহত জীবকে উদ্ধার করার জন্য আবির্ভূত হয়েছিলেন। এই তথ্যকে ভিত্তি করে আমি বললাম- চৈতন্যদেব যদি কলিহত জীবকে উদ্ধার করার জন্য আবির্ভূত হন, তাহলে তার জন্ম ১৫৩৩ খ্রিষ্টাব্দে কেনো, কেনো তার জন্ম কৃষ্ণের তিরোধানের পরপরই কলিযুগের শুরুতে সেই প্রায় ৫ হাজার ৩শ বছর আগে হয় নি ?

-আমার এই প্রশ্নের জবাবে সে ধানাই পানাই শুরু করে বললো- না, নাম তো সব যুগেই ছিলো।

আমি বললাম- আমার প্রশ্ন তো এটা নয়, আমি ঠিক যে পয়েন্টে কথা বলেছি, আপনি ঠিক সেই পয়েন্টেই কথা বলবেন।

এরপর সে এটা সেটা হাবি জাবি বলে টাইম পাস করতে লাগলো এবং আমি রাধা ও চৈতন্য বিরোধী কথাবার্তা বলি ব'লে কিছু লোক শুরু থেকেই আমার বিরোধী ছিলো, তারা ঐ ইসকন সদস্যের কথায় সাঁয় দিয়ে যেতে লাগলো। এভাবে সংখ্যাধিক্য মূর্খের কাছে আমার প্রশ্নের পয়েন্ট কোনো গুরুত্বই পেলো না। তারা যে বিশ্বাস করে, কলিহত জীবকে উদ্ধার করার চৈতন্যদেব আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং এই বিশ্বাস নিয়ে তারা সেই ছোটবেলা থেকেই ভজগৌরাঙ্গ লহগৌরাঙ্গের নাম ব'লে ব'লে যে চিৎকার করে আসছিলো, আমার যুক্তিকে মেনে নিলে তাদের সেই বিশ্বাস ভুল প্রমাণিত হয় ব'লে, তারা আমাকে গুরুত্ব না দিয়ে সেই ইসকনির কথাতেই নাচতে লাগলো, যেহেতু ইসকনির কথাকে মেনে নিলে তাদের লালিত বিশ্বাস ভুল বলে প্রমাণিত হয় না।

আরেকটি তথ্যে সে বললো, উপনিষদ ১০৮টি, আমি তাকে বললাম উপনিষদ ১২ টি। কিন্তু এই তথ্য প্রমাণ করার জন্য তখন আমার কাছে উপনিষদ সমগ্র ছিলো না বলে তর্ক আর বাড়ালাম না, ভাবলাম এই মূর্খের সাথে তর্ক করে কোনো লাভ নেই। আর যদিও তার কাছে, কেনো উপনিষদ ১২টি, কেনো ১০৮টি নয়, সেটা প্রমাণ করার চেষ্টা করি, তখন সে বলবে এই সব গ্রন্থ গ্রহনযোগ্য নয়, কিন্তু কোন গ্রন্থ এবং সেটা কেনো গ্রহন যোগ্য সেটাও তারা বলবে না, তাদের মনোভাব এরকম - আমরা যেটা বিশ্বাস করি এবং প্রচার করি, একমাত্র সেটাই ঠিক, বাকিগুলো সব মিথ্যা। যেমন- ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের প্রসঙ্গে আমি যখন বললাম, ঐ গ্রন্থে রাধা ও কৃষ্ণের যৌনলীলার ছড়াছড়ি, সেই গ্রন্থের রেফারেন্স দিয়ে আপনি রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমের সম্পর্ককে মেনে নিচ্ছেন কিভাবে ? তখন সে বললো- একই শ্লোকের মধ্য কেউ আধ্যাত্মিকতা দেখতে পায়, কেউ দেখতে পায় যৌনলীলা, এটা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গীর সমস্যা যে কে কিভাবে কোন বিষয়কে দেখবে ? তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম- আপনি কি কখনো ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ পড়ে দেখেছেন ? বললো- না। তখন তাকে বললাম, তাহলে আপনি কিভাবে সেই গ্রন্থ থেকে রাধা ও কৃষ্ণের নিষ্কাম প্রেমের ব্যাপারে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন ? আর ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের অনুবাদ যদি ভুলভাবে করা হয়ে থাকে, আপনার এত বড় সংগঠন এতদিন ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের সঠিক অনুবাদ বের করে নি কেনো ?

এরপরেও তার সেই একই ধানাই পানাই, হিন্দুধর্মের অনেক গ্রন্থ, সেগুলো একজীবনে পড়ে শেষ করা যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি।

তর্ক বিতর্কের একটি নিয়ম হলো- আপনি যদি একা হন, আর আপনার প্রতিপক্ষরা যদি সংখ্যায় বেশি হয়, তাহলে আপনি যতই যুক্তির কথা বলেন, মূর্খ প্রতিপক্ষদের কাছে আপনি পরাজিত হবেনই হবেন। সেদিন আমার অবস্থাও হয়েছিলো তাই, ঐ মূর্খ কোনো যুক্তির ধার ধারবে না বলে এক সময় আমি নিজেই চুপ মেরে গিয়েছিলাম। আর দর্শক সারিতে বসে প্রশ্ন করে মঞ্চে উপবিষ্ট আলোচকদের সাথে পেরে উঠা যায় না। কারণ, যে ব্যক্তি মঞ্চে উপবিষ্ট থাকে এবং পূর্বেই কিছু বক্তৃতা রাখার সুযোগ পায়, মনোবৈজ্ঞানিক কারণেই তার বক্তব্যের সাথে অনেকেই একমত থাকে, তারা তাকে প্রটেক্ট করে। তাই কারো সাথে তর্কে জিততে হলে দর্শক সারি থেকে প্রশ্ন করে জেতা যাবে না, বসতে হবে সমানে সমানে এবং আপনার অনুসারীর সংখ্যাও হতে হবে পর্যাপ্ত, যারা আপনার কথাকে সাপোর্ট করবে। আর মঞ্চে উপবিষ্ট কোনো আলোচককে যদি প্রশ্ন করে আটকাতে হয়, যখন সে কোনো ভুল তথ্য দেবে, তখনই তাকে পাল্টা প্রশ্ন করতে হবে, তার বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর তাকে প্রশ্ন করে আটকানো যাবে না। কারণ, তার বক্তৃতা শুনে বেশ কিছু লোক তার ভক্ত হয়ে যাবে, তারা তাকে সাপোর্ট করবে। সেদিন আমারও হয়েছিলো এই ভুল, তাকে বেশকিছুক্ষণ বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ দিয়েছিলাম, এটা না করে প্রথম থেকেই তাকে আটকাতে হতো, সেদিনের সেই অনুষ্ঠানে এই শিক্ষাটা আমার হয়েছে।

আমার এলাকায় এক বৈষ্ণবগুরু আছে, যার আছে প্রায় হাজারখানেক শিষ্য। তাকে একদিন কাছে ডেকে বসিয়ে আমার রাধা ও কৃষ্ণ সম্পর্কিত সিদ্ধান্তের কথা জানালাম। সে আবার কথায় ওস্তাদ, কেউ কোনো প্রশ্ন করলে সেটার সঠিক উত্তর তার কাছে থাক বা না থাক, সাত সমুদ্র তেরো নদীর পাড়ের কাহিনী বানিয়ে এমনভাবে কিছুক্ষণ বক্তৃতা দেবে, যে পরে ঐ প্রশ্নকারী কোনো কথাই বলতে পারবে না, সে যা বলবে, তাই মুখ বুঝে শুনতে বাধ্য হবে। তার এই বেশিষ্ট্যের কথা আমি জানতাম বলে- আমি বললাম, আমি আপনাকে যা প্রশ্ন করেছি, আপনি শুধু তারই উত্তর দেবেন, সেটা হলো - বালক বয়সে, যেটা ১১ বছর বয়সের পূর্বেই, শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন থেকে মথুরায় যান কংস বধের উদ্দেশ্যে, তারপর আর কোনোদিন কৃষ্ণ, বৃন্দাবনে যান নি, রাধারও বৃন্দাবনের বাইরে কোথাও যাওয়া কোনো প্রমাণ নেই, তাহলে যুবক কৃষ্ণের সাথে যুবতী রাধার দেখা হলো কখন, আর তাদের মধ্যে প্রেমই বা হলো কখন, যেটা আপনারা হরিবাসরে লীলাকীর্তনের মাধ্যমে প্রচার করেন ?

এতে সে বললো, সামনের মাসে আমার কোনো কাজ নেই, অনেক সময় ফ্রি আছে, তখন তোর সাথে বসবো, এরপর প্রায় ৩ বছর কেটে গেছে, এখনও সে আমার সাথে বসে নি।

আরেক জন লীলাকীর্তনওয়ালা বৈষ্ণব, যে বিভিন্ন হরিবাসের লীলাকীর্তন করে হাজার হাজার টাকা আয় করে, তার কাছেও আমার এই রাধা-কৃষ্ণ সম্পর্কিত বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়েছিলো, সে বলেছিলো দু দিন পর ঢাকা থেকে একজন লোক আনিয়ে আমার সাথে আলোচনায় বসবে, এই ঘটনার পরও প্রায় ৩ বছর কেটে গেছে, আজ পর্যন্ত তার ক্ষমতা হয় নি আমাকে মোকাবেলা করার।

এসব ঘটনা থেকে আমি এটা বুঝতে পেরেছি যে, এইসব বৈষ্ণবরা, কোনো দিনই আমার সাথে বসে প্রকৃত সত্যকে বুঝবে না বা গ্রহন করবে না, এদেরকে ধরে থাপড়িয়ে থাপড়িয়ে প্রকৃত সত্যকে বোঝাতে হবে এবং কেবল তার পরেই তারা সেটাকে গ্রহন করবে এবং শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার বন্ধ করবে, বর্তমানে সেই প্রস্তুতি আমি নিচ্ছি।

যা হোক, বৈষ্ণবদের জ্ঞানশক্তির জোর যখন এরকম, তখন তারা যে কোনো মুসলমানের প্রশ্নের মুখে টিকে থেকে নিজেদের বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখতে পারবে, এমন কোনো সম্ভাবনা নেই; এদেরকে হয় পালাতে হবে, নয়তো ইসলাম গ্রহন করে নিজের মান বাঁচাতে হবে। কারণ, টিকে থাকার জন্য অভ্রান্ত থিয়োরিকে ধারণ করতে হয়, যা নিয়ে কেউ কখনো কোনোরকম প্রশ্ন তুলতে পারবে না; সেই অভ্রান্ত থিয়োরি শুধু আপনাকে বাস্তবতার জ্ঞানই দেবে না, কিভাবে নিজে টিকে থাকতে হয় এবং তথ্যের জ্ঞানে অপরকে পরাজিত করতে হয়, সেই শক্তিও দেবে। যা বৈষ্ণব বা ইসলাম, কোনো মতবাদেই নেই।

ইসলাম এখনও পৃথিবীতে টিকে আছে শুধু মুসলমানদের- অন্ধবিশ্বাস, চাপা এবং চাপাতির জোরে। যখন মুসলমানরা যুক্তি মানতে শিখবে এবং বিরোধী শক্তিকে দমন করার অস্ত্র চাপাতিকে ত্যাগ করবে, তখনই ইসলাম পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। অবাস্তব মতবাদ ইসলামের তবু নিজেকে টিকিয়ে রাখার মতো দুটি প্রধান শক্তি আছে- গলাবাজী এবং চাপাতি; বৈষ্ণব মতবাদের তো এর কোনোটিই নেই, এরা টিকে থাকবে কিভাবে ? গলাবাজী এবং চাপাতি চালানো, এই দুটোর জন্য লাগে রাগ এবং দৈহিক শক্তি, যা নিরামিষ খেয়ে অর্জন করা যায় না, তাহলে বৈষ্ণব মতবাদ পৃথিবীতে টিকে থাকবে কিভাবে ?

চৈতন্যদেবের জন্মের পর প্রায় ৫০০ বছর ধরে কেউ তার মতবাদের বাস্তবতা এবং তার দ্বারা সনাতন হিন্দু সমাজের ক্ষতির বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে নি, তাই এতদিন ধরে টিকে আছে এবং ঘটেছে বৈষ্ণব মতবাদের প্রসার, কিন্তু বর্তমানে এটি নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাই বৈষ্ণবরা রাধা এবং চৈতন্যদেবকে ত্যাগ করে যদি সম্পূর্ণভাবে কৃষ্ণে সমর্পিত না হয়, এদের বিলুপ্তি নিশ্চিত এবং এদের দ্বারাই মুসলমানরা সনাতন ধর্মের বেশি ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম হবে, তাই বৈষ্ণব মদবাদের বিরুদ্ধে আমার এই লড়াই, আমি চাই সকল মতপথ ভুলে সবাই শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণের শরণ নিক; কারণ একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই রক্ষার পথ, মুক্তির পথ; বাকি সব বোগাস, মিথ্যা।

জয় হিন্দ।

জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment