"দাদা বেদে যে গোমাংস খাওয়া নিষেধ করা আছে শুধু তার প্রমাণটা দিন প্লিজ।"
প্রথমে উপরের এই কাতর অনুরোধটি আমাকে করেছিলো আমার এক ফেসবুক ফ্রেণ্ড, আমার ইনবক্সে। তার এই কাতর অনুরোধের কারণ হলো- মুসলমানদের এই ধরণের প্রশ্ন বা মন্তব্য যে- হিন্দু শাস্ত্রের কোথায় গরুর মাংস খেতে নিষেধ করা হয়েছে বা এরা মনগড়া ধর্ম পালন করে ইত্যাদি ইত্যাদি।
মুসলমানদের এই ধরণের প্রশ্নে হিন্দুদের দুর্বল হওয়ার মূল কারণ হলো- যেহেতু এক লাখে গড়ে একজন হিন্দুও বেদ চোখে দেখে নি বা পড়ে নি যে তাতে কী লেখা আছে; তাই মুসলমানদের এইসব প্রশ্ন জিহাদে আত্মবিশ্বাসহীন হিন্দুরা ভাবে, সত্যিই কি হিন্দু শাস্ত্রে গরুর মাংস খেতে নিষেধ করা আছে, নাকি মুসলমানদের কথাই সত্য ?
একটা কথা মনে রাখবেন, যে যা, সে চাইবে তার মতো আচরণ অন্যরা করুক। একজন চোরকে গিয়ে যদি বলেন, আমি আপনার সাথে চুরি করতে যাবো, সে কিন্তু মোটেই অখুশি হবে না। আবার কোনো মুসলমানকে গিয়ে যদি বলেন, আমি আমার কাকাতো বোনকে পছন্দ করি, তাকে বিয়ে করতে চাই, সেই মুসলমানও কিন্তু ভীষণ খুশি হয়ে তাদের নোংরা কালচার রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে করার সুবিধার পক্ষে নানা রকম যুক্তি দেখাবে। একই কারণে রাক্ষস জাতি মুসলমান, কোরান হাদিসে যাদেরকে গরু খেতে নির্দেশ দেওয়া নেই এবং আরবীয় মুসলমানদের গরু খাওয়ার উদাহরণও নেই, কিন্তু হিন্দুরা যেহেতু গরুকে দেবতা মনে করে, তাই শুধুমাত্র হিন্দুদেরকে মানসিক কষ্ট দেওয়ার জন্য, এই রা্ক্ষসেরা জিহাদের অংশ হিসেবে গরুকে জবাই করে এবং তার মাংস খায়; তো এই অসভ্য রাক্ষসরা তো চাইবেই তাদের মতো অন্যেরা হয়ে যাক, হিন্দুরাও গরুর মাংস খাক; এজন্যই তারা হিন্দুদের মনোবলকে দুর্বল করার জন্য এই ধরণের প্রশ্ন করে যে, হিন্দুরা কেনো গরুর মাংস খায় না বা হিন্দু ধর্মের কোনো গ্রন্থে কি গরুর মাংস খেতে নিষেধ করা হয়েছে ?
হিন্দু শাস্ত্রের কোথায় গরুর মাংস খেতে নিষেধ করা আছে, তার প্রমান দেবো আজকের এই প্রবন্ধে; আর সেই সাথে নিরামিষভোজীরাও প্রমান পাবেন যে, গরু ছাড়া অন্য প্রাণীর মাংস খেতে হিন্দু শাস্ত্রে কোনো বাধা নেই।
শুক্লযজুর্বেদ এর ১৩ অধ্যায়ের ৪৯ নং শ্লোকের প্রথম অংশে বলা আছে,
“ইমং সাহস্রং শতধারমুৎসং ব্যচ্যমানং সরিরস্য মধ্যে ঘৃতং দুহানামদিতিং জনায়াগ্নে মা হিংসীঃ পরমে ব্যোমন্।”
এর অর্থ হলো- উৎকৃষ্ট স্থানে স্থিত এ গোরূপ পশুকে হিংসা করো না, এ গাভী সহস্র উপকারক্ষম, শত সংখ্যক ক্ষীরধারাযুক্ত, উৎসের মতো বহু স্রোতযুক্ত, বহু লোকের উপজীব্য ও তাদের জন্য ঘৃতের কারণ দুগ্ধক্ষরণকারী এবং অদীনা।
এখানের ‘অদীনা’ শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ এবং এর অর্থ হলো- যে গরীব নয়।
এই শ্লোকে, স্পষ্টভাবে গরুকে হিংসা করতে অর্থাৎ তাকে হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং গরু যে সবচেয়ে উপকারী প্রাণী সে কথাও বলা হয়েছে এবং এই শ্লোকেরই আগে পরে বলে দেওয়া হয়েছে কোন কোন পশুর মাংস খাওয়া যাবে। যেমন- ১৩/৪৭ নং শ্লোকে বলা হয়েছে,
“যদি খাবার ইচ্ছা হয় তাহলে শুদ্ধ কিম্পুরূপ পশু ভক্ষণ করো, তা দিয়ে তোমার জ্বালারূপ তনু পুষ্ট করে এখানে থাকো।”
এখানের কিম্পুরূপ মানে কৃষ্ণমৃগ বা কালো হরিণ।
শুধু গরুকেই নয়, ঘোড়াকেও হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে বেদে: কারণ, ১৩/৪৮ নং শ্লোকে বলা হয়েছে,
“এ এক খুর বিশিষ্ট পশু অশ্বকে হিংসা করো না, সে সর্বদা হ্রেষা শব্দ করে এবং বেগশালীর মধ্যে বেগবান। তোমাকে বন্য গৌরবর্ণ মৃগ দিচ্ছি তা দিয়ে জ্বালারূপ তনু পুষ্ট করে এখানে থাকো।”
এছাড়াও ১৩/৫০ নং শ্লোকে বলা হয়েছে,
“তোমাকে বন্য উট দিচ্ছি, তা দিয়ে শরীর পুষ্ট করে এ স্থানে থাকো।”
এরপর ১৩/৫১ নং শ্লোকে বলা হয়েছে,
“তোমাকে বন্য শারভ দিচ্ছি, তা দিয়ে শরীর পুষ্ট করে এ স্থানে থাকো।”
এই শারভও এক প্রকার হরিণ।
এছাড়াও শুক্লযজুর্বেদের ১২/৭৩ নং শ্লোকে বলা আছে,
“তোমরা অবধ্য গাভীগনকে মুক্ত করো।”
এখানে অবধ্য মানে যাকে হত্যা করা যায় না।
শুক্ল যজুর্বেদের পর এবার দেখুন ঋগ্বেদে গো হত্যা সম্পর্কে কী বলা আছে-
ঋগ্বদের ১ম মণ্ডলের ১৬৪ নং সূক্তের ৪০ নং ঋক বা শ্লোকে বলা আছে,
“হে অহননীয় গাভী, তুমি শোভন শস্য তৃণাদি ভক্ষণ করো এবং প্রভূত দুগ্ধবতী হও। তাহলে আমরাও প্রভূত ধনবান হবো। সর্বকাল ধরে তৃণ ভক্ষণ করো এবং সর্বত্র গমন করে নির্মল জল পান করো।”
এই শ্লোকের শুরুতেই বলা হয়েছে, হে অহননীয় গাভী, যার মানে যাকে হত্যা করা যাবে না।
এরপর ঋগ্বেদের ১০/৮৭/১৬ নং শ্লোকে বলা হয়েছে,
“যে হত্যা করবার অযোগ্য গাভীর দুগ্ধ হরণ করে; হে অগ্নি, নিজ বলে তাদের মস্তক ছেদন করে দাও।”
এই শ্লোকেও বুঝিয়ে দেওয়া হলো যে, গরু হত্যা যোগ্য নয়।
এছাড়াও ঋগ্বেদের ৮/১০১/১৬ নং শ্লোকে বলা হয়েছে,
“নির্দোষ অদিতি গো দেবীকে হিংসা করো না।”
দিতি অসুরদের এবং অদিতি দেবতাদের মাতা, এই সূত্রে সকল দেবতার মা হলো গো দেবী, আর যেখানে বেদে বলা হচ্ছে দেবতাদের মাতা হলো গরু, সেখানে গরুকে তো মানুষের নিজেদের মায়ের মতো বিবেচনা করতেই হবে।
সুতরাং বেদ এ যে গো হত্যা নিষেধ এবং গরু যে মানুষের মাতৃতুল্য, এটি স্পষ্ট। কিন্তু এখানে বাঁকা প্রশ্ন উঠতে পারে যে, গরুকে হত্যা করা না হয় হিন্দুদের জন্য নিষেধ, তাই বলে কি গরুর মাংস খাওয়াও নিষেধ ?
বাজারে দোকানীরা মুরগী বিক্রি করার জন্য জীবিত মুরগী নিয়ে বসে থাকে। আপনি যখন বাজারে যান এবং একটি মুরগী পছন্দ করেন, তখন দোকানদার সেই মুরগীকে জবাই করে আপনাকে দেয়। তাহলে এই মুরগীটা কার কারণে নিহত হলো, আপনার জন্য, না দোকানদারের জন্য ?
নিশ্চয় আপনার জন্য। কারণ, আপনি না কিনলে দোকানদার ঐ মুরগীকে হত্যা করতো না। তার মানে যে ব্যক্তি খায়, সেই ব্যক্তি ঐ পশু বা পাখি হত্যার জন্য দায়ী।
এখন বেদে যদি এই ধরণের নির্দেশ থাকতো যে, গরুকে হত্যা করা যাবে না, কিন্তু তার মাংস খাওয়া যাবে, তাহলে এটা ভণ্ডামী হতো; কারণ, একটু আগেই বলেছি- যে ব্যক্তি, যে পশু বা পাখির মাংস খায়, সেই ব্যক্তি প্রত্যক্ষভাবে সেই পশু বা পাখিকে হত্যা না করলেও পরোক্ষভাবে হত্যা করে। এই ধরণের একটি ভণ্ডামী বৌদ্ধ মতবাদে আছে, সেখানে বলা আছে- কোনো প্রাণীকে সরাসরি হত্যা করা যাবে না, কিন্তু অন্যের হত্যা করা পশুর মাংস খাওয়া যাবে। তাহলে এখানে প্রশ্ন হচ্ছে- যে ব্যক্তি পশুকে হত্যা করলো, তার তো পাপ হলো, তাহলে সেই পাপের দায় কে নেবে ? এছাড়া একটু আগেই আমার যুক্তি জেনেছেন যে, যে ব্যক্তি যে পশুর মাংস খায়, সেই পশুর মৃত্যুজনিত পাপ সেই ব্যক্তির, দোকানদার বা কসাইয়ের নয়। কারণ, কোনো ব্যক্তি মাংস কিনতে যায় বলেই দোকানীরা পশু-পাখিকে হত্যা করে।
যা হোক, কোরান হাদিসে যে গরু হত্যার কোনো নির্দেশ নেই, এ প্রসঙ্গে আমার আগের একটি পোস্টের কিছু অংশের কপি পেস্ট দেখে নিন-
------------------
ধান্ধাবাজ মুসলমানরা যে কোরানের শব্দের অর্থ বদলে দিয়ে কোরান অনুবাদ করে বা ছাপায়, এটা সচেতনও বিদগ্ধ মুসলিম মহল বেশ ভালোভাবেই অবগত, কিন্তু কোরানের প্রকৃত অনুবাদই বা কোথায়, যা থেকে প্রকৃত সত্যকে জানা যাবে ? এই সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের “দিব্য প্রকাশ” নামে এক প্রকাশনী ২০০৪ সালে গিরিশের করা কোরানের অনুবাদ হুবহু প্রিন্ট করে; টীকা-টিপ্পনি, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং গুনে ও মানে যে কোরানের ধারে কাছে যাওয়ার ক্ষমতা কোনো মুসলমান অনুবাদিত কোরানের নেই, সেই কোরানে সূরা কাওসারের ২ নং আয়াতে কী বলা আছে দেখুন,
“অনন্তর তুমি আপন প্রতিপালকের জন্য নামাজ পড় এবং উষ্ট্র বলিদান কর।” (কোরান, ১০৮/২)
অথচ এই লাইনটিকে মুসলমানরা অনুবাদ করেছে,
‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানী কর।’ ( কোরান, ১০৮/২)
এই আয়াতে কোরানে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে যে, উটকে কুরবানী করতে; কিন্তু বাঙ্গালি মুসলমানরা, গায়ের জোরে গরুকে জবাই করে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত দেওয়ার জন্য এই আয়াতে উটের জায়গায় পশু শব্দ বসিয়ে দিয়ে পশুর সমর্থক শব্দ হিসেবে গরু কুরবানীকে জায়েজ করে নিয়েছে।
উট ই যে কুরবানী করার বিধান, সেই নিদর্শন আছে মুহম্মদের জীবনীতেও; কারণ, মুহম্মদ শেষ বার হজ করতে যাওয়ার সময় ৭০টা উট নিয়ে গিয়েছিলো এবং মুহম্মদ নিজের হাতে ৬৩টা উট জবাই করে ক্লান্ত হয়ে পড়লে পরে আলী বাকি উটগুলোকে জবাই করে। এছাড়াও ভৌগোলিক কারণে আরবে কোনো গরু নেই, তাই কুরবানীর জন্য গরুকে জবাই করা কোনো ভাবেই ইসলাম সম্মত নয়।
কোরান হাদিসের এই সাক্ষ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, কুরবানী যদি করতে হয়, করতে হবে উটকে; কারণ, এটাই কোরানের নির্দেশ এবং নবীর সুন্নত। আর এটাও সারা পৃথিবীর যত্রতত্র করা যাবে না, এ ব্যাপারে কোরানের নির্দেশ আছে এবং সেটা হলো-
“এই সমস্ত আনআমে তোমাদের জন্য নানাবিধ উপকার রয়েছে এক নির্দিষ্ট কালের জন্য; অতঃপর উহাদের কুরবানীর স্থান প্রাচীন গৃহের (কাবা) নিকট।” (লাক্বুম - আতিক। [ ২২: ৩৩] )
এ থেকে স্পষ্ট যে কুরবানী করতে হবে কাবা ঘরের নিকট এবং তা শুধু মাত্র হজ করতে গিয়; কারণ, এটাই কোরানের নির্দেশ এবং নবীর সুন্নত।
আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে এখনও গরু কুরবানী দেওয়া হয় না; কারণ, ভৌগোলিক কারণে সেখানে গরুকে পালন করা হয় না, তাই সেসব দেশে গরু পাওয়া যায় না; এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে যারা কাজ করে, তাদের কাছে এমনও শুনেছি যে, গরুর মাংস খাওয়া তো দূরের কথা, গরুর মাংসের কথা শুনলেই তারা নাকি নাক সিটকায়।
আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে প্রধানত যে পশু কুরবানী করা হয়, সেটা হলো উট; আর দ্বিতীয়ত ভেড়া জাতীয় দুম্বা। উপরেই বলেছি, উট কুরবানীর কথা বলা আছে কোরানে, এছাড়াও মুহম্মদ নিজে কখনো উট ছাড়া কিছু কুরবানী করে নি। কিন্তু উটের পাশাপাশি দুম্বা কুরবানীর কারণ হলো, ইব্রাহিম-ইসমাইলের তথাকথিত কুরবানীর ঘটনায় ইসমাইলের পরিবর্তে নাকি কুরবানী হয়েছিলো দুম্বা; সেই জন্য উট ছাড়াও দুম্বা কুরবানী দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু কিছুতেই অন্য কোনো পশু নয়।
এছাড়াও আমরা জানি, ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ হলো- কালেমা, নামাজ, রোযা, হজ, যাকাত। এগুলোর মধ্যে কালেমা কোনো অনুষ্ঠান নয়, বিশ্বাস, যা আচরণে প্রদর্শিত না হলে দেখা যায় না; কিন্তু অন্য চারটি স্তম্ভ হলো অনুষ্ঠান, এগুলো আচরণে না এলে পালন ই হয় না। এই চারটি স্তম্ভের মধ্যেও কুরবানী নেই। তার মানে এটি বাধ্যতামূলক নয়, এজন্যই একে বলে ওয়াজিব। তাহলে মুসলমানরা কোরান হাদিসের বিরুদ্ধে গিয়েপুরো বাংলা ও ভারতে বছরের একটি সময় গরু হত্যার উৎসবে মাতে কেনো বা সারা বছর ধরে গরু খায় কেনো ?
কারণ, একটাই। গরু হিন্দুদের কাছে দেবতা এবং পূজ্য, সেই গরুকে যদি কোনোভাবে হত্যা করা যায় বা তার সম্মানের অবমাননা করা হয়, তাহলে তো হিন্দুরা কষ্ট পাবে, মুসলমানদের উদ্দেশ্য তো আসলে সেটাই, যেকোনোভাবে হিন্দুদেরকে মানসিক ও শারীরিকভাবে আঘাত করে তাদেরকে পর্যুদস্ত করা। এজন্যই বাংলা ও ভারতে- মুসলমান নামক নরপশুরা, পাইকারী হারে গরুকে হত্যা করে নিজেদের জিহাদী উদ্দেশ্যকে পালন করে চলেছে; যদি এর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে এটা চলতেই থাকবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এটাকে কি আমরা চলতেই দেবো, না গরুকে রক্ষা করে আমরা আমাদের দেবতার সম্মান ও সমৃদ্ধি বাড়ানোর পথকে বাঁচিয়ে রাখবো ?
--------------------------------
উপরের এই আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, ইসলামে যেমন গরু হত্যার কোনো নির্দেশ নেয়, তেমনি নেই সনাতন ধর্মেও। আর সনাতন ধর্মের উৎপত্তি কালে যেহেতু অন্য কোনো ধর্মীয় মতবাদ ছিলো না, সেহেতু সনাতন ধর্ম সর্বজনীন, মানবজাতির জন্য প্রথম এবং একমাত্র জীবন বিধান; যাতে গরুকে হত্যা না করে, তাকে যত্ন ও পালন করে, তার মাধ্যমে আর্থিক সমৃদ্ধি আনার কথা বলা হয়েছে। তাই শুধু হিন্দুদের জন্য নয়, পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য গরুকে হত্যা করা বা তার মাংস খেয়ে গরু হত্যার কারণ হওয়া নিষেধ।
কিন্তু এরপরেও প্রশ্ন হচ্ছে, বেদের নির্দেশ না মেনে হিন্দুরা যদি গরুর মাংস খায়, তাহলেই বা ক্ষতি কী, সারা পৃথিবী জুড়েই তো গরুর মাংস খাওয়া হচ্ছে ?
পৃথিবীতে একটি বহুল আলোচিত বিষয় হচ্ছে রেড মিট বা লাল মাংস, যা বলতে বাংলা এলাকায় প্রধানত গরুর মাংসকেই বোঝায়, এখন দেখে নিন এই লাল মাংস খাওয়ার অপকারিতা, আর ভাবুন কেনো আমাদের মুনি ঋষিরা গরুর মাংস তথা লাল মাংস খেতে এত কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন-
-----------------------
লাল মাংসের প্রধান ক্ষতি হলো, এর উচ্চ মাত্রার ট্রাইগ্লিসারাইড (টিজি) ও এলডিএল, যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হিসেবে পরিচিত। এই কোলেস্টেরল ধমনির প্রাচীরকে পুরু করে তোলে। ফলে হৃপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। এভাবে চলতে থাকলে একপর্যায়ে রক্তনালির ব্লক তথা হৃদরোগের অন্যতম কারণ হয়ে দেখা দেয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা প্রতিদিন ১০০ গ্রামের বেশি লাল মাংস খান, তাঁদের হৃদরোগে মৃত্যুঝুঁকি ১৫ শতাংশ, ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি ১১ শতাংশ এবং বৃহদন্ত্র ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি।
লাল মাংসে থাকে এক বিশেষ ধরনের ইনফ্লামেটরি যৌগ, যা পাকস্থলীর প্রদাহের জন্য দায়ী। এই যৌগ পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের ক্যান্সারের জন্যও দায়ী। ফুসফুস আক্রান্ত হওয়া, কোলন ও স্তন ক্যান্সারেও এর ভূমিকা থাকে। যত বেশি লাল মাংস খাওয়া হবে, এসবের ঝুঁকি ততই বাড়ে। অতিরিক্ত লাল মাংস গাউট, আর্থ্রাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেপটিক আলসার, পিত্তপাথর, প্যানক্রিয়াসের প্রদাহ, কিডনি রোগ প্রভৃতি সৃষ্টি করতে পারে।
অনেকে বলতে পারেন, লাল মাংসের তো কিছু উপকারী দিকও আছে। হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। একটা বন্ধ ঘড়িও দিনে দুবার সঠিক টাইম দেয়, তাই বলে ঘড়িটাকে আপনি অকেজো মনে করেন, না চালু মনে করেন ? লাল মাংসের উপকারী দিক ১০%, আর অপকারী দিক ৯০%। লাল মাংসের এই ১০% উপকারী দিক আপনার জীবন বাঁচানোর জন্য অপরিহার্য নয় এবং এটা অন্য কোনো সোর্স থেকেও আপনি পেতে পারেন; কিন্তু গরুর মাংসের অপকারী দিক আপনার জীবন ছিনিয়ে নিতে পারে, তাহলে এই রিস্কটা আপনি কেনো নিতে যাবেন ?
দাবা খেলায় মন্ত্রীকে বিসর্জন দিয়ে তার বদলে সাধারণ সৈন্যকে খাওয়া যেমন বুদ্ধিমানের কাজ নয়, তেমনি ১০% উপকারী দিকের কথা বিবেচনা করে ৯০% বিপদ ডেকে আনাও বুদ্ধিমানের পরিচয় নয়। হিন্দুদেরকে মানসিকভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্য, গায়ের জোরে পাইকারী হারে গরুকে হত্যা করে তার মাংস খেয়ে মুসলমানরা আসলে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনছে, এটা নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা নয়, নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে অপরের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়া; মুসলমানদের মতো বলদ কোনো জাতি পৃথিবীতে আর একটাও কি আছে ?
আমার বিবেচনায় তো একটাও নেই।
লাল মাংসের যে উপকারী দিক, সেটা সপ্তাহে মাত্র ২৫০ গ্রাম লাল মাংস খেয়েই পাওয়া সম্ভব, এটাই বিশ্ব ক্যান্সার গবেষণা ফাণ্ডের মত এবং এই পরিমান মাংস- ছাগল, ভেড়া বা হরিণ থেকেই পাওয়া সম্ভব, তার জন্য গরু হত্যার কোনো প্রয়োজন নেই।
লাল মাংসের উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কিত একজন মুসলমান ডাক্তারের লেখা প্রবন্ধ পাবেন নিচের এই লিঙ্কে-
http://www.somewhereinblog.net/blog/kyd11/29703744
এই সকল দিক বিবেচনা করেই আমাদের মহান জ্ঞানী মুনি ঋষিরা, যাদের দেয়া্ একটি তথ্যকেও কেউ আজ পর্যন্ত অবাস্তব বা ভুল বলতে পারে নি, তারা বিধান দিয়ে গেছেন গরুকে হত্যা না করে তাকে যত্ন ও পালন করতে, নিজেদের সমৃদ্ধি ও সুখের জন্য এবং আমি আশা করছি, এই বিষয়টি আজ এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আমার পাঠকবন্ধুদেরকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
No comments:
Post a Comment