শ্রাদ্ধ কতদিনে করতে হবে ?
কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর কতদিন পর তার আত্মার মুক্তির জন্য শ্রাদ্ধ শান্তি করতে হবে, এটা নিয়ে সমাজে বেশ দ্বিধাবিভক্ত মত আছে। এই নানা মতের কারণ, মনু সংহিতার একটি শ্লোক, যে শ্লোকে বলা আছে,
“শুধ্যেদ্বিপ্রো দশাহেন দ্বাদশাহেন ভূমিপ।
বৈশ্যপঞ্চদশাহেন শূদ্রো মাসেন শুধ্যতি।।“ (মনু সংহিতা- ৫/৮৩)
অর্থাৎ জন্ম বা মরণে ব্রাহ্মণের দশদিন, ক্ষত্রিয়ের দ্বাদশ দিন, বৈশ্যের পঞ্চদশ দিন এবং শূদ্রের একমাস অর্থাৎ ত্রিশ দিন অশৌচ থাকে; ইহার পর শুদ্ধ হয়”।
মনুর রেফারেন্স দিয়ে পুরোহিত দর্পনেও একথা বলা আছে।
কিন্তু আমি আগেই প্রমান করে দিয়েছি যে, মনু সংহিতা হিন্দু ধর্মের কোনো প্রামান্য গ্রন্থ নয়; এ সম্পর্কে আমার
“স্বায়ম্ভূব মনু কে আর কেনোই বা লিখা হয়েছিলো মনু সংহিতা” নামের একটি প্রবন্ধ আছে, যারা সেটা পড়েছেন, তারা বিষয়টি জানেন; আর যারা এখনও সেটা পড়েন নি, সেটা পড়লে জানতে ও বুঝতে পারবেন।
যা হোক, মনু সংহিতার এই শ্লোকে বলা হয়েছে, ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের ১২ দিন; বৈশ্যের ১৫ দিন এবং শুদ্রের ৩০ দিন অশৌচ থাকে। কিন্তু মনু সংহিতারই অপর একটি শ্লোকে বলা আছে,
“সপিণ্ডের মৃত্যু হলে দশ দিন অশৌচ হবে”- ৫/৫৯
যে গ্রন্থে একই বিষয়ে দুই ধরণের কথা থাকে, সেই গ্রন্থে যে ভেজাল আছে, তাতে তো কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু মনুসংহিতার এই একই কথা (৫/৫৯) বলা আছে গরুর পুরাণে, সেখানে বলা আছে,
“সপিণ্ডদিগের মরণাশৌচ দশাহ”- ৬/১০
অর্থাৎ অশৌচ পালন করতে হবে ১০ দিন।
এখানে সপিণ্ড মানে যারা পিণ্ডদানের অধিকারী।
মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে কয়টি পিণ্ড দিতে হবে, তার থেকেও কতদিন অশৌচ পালন করতে হবে, তার একটি নির্দেশনা আছে।
এটা প্রচলিত মত এবং সবাই জানে যে, মৃতের উদ্দেশ্যে ১০ দিনে ১০টি পিণ্ড দিতে হয়। এই ১০ দিনে ১০টি পিণ্ড দিয়ে একাদশতম দিনে শ্রাদ্ধ করাই যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু ১০টি পিণ্ড দিয়ে ১৫ বা ৩০ তম দিনে শ্রাদ্ধ করলে আত্মা এই বাকি দিনগুলোতে ক্ষুধায় কষ্ট পায়, মৃতের আত্মার শান্তির জন্যই তো এত কিছু, তাহলে ১০ দিনে ১০ টি পিণ্ড দিয়ে একাদশতম দিনে শ্রাদ্ধ না করে ১৫ বা ৩০ তম দিনে শ্রাদ্ধ করার কি কোনো যুক্তি আছে ?
একাদশতম দিনেই যে শ্রাদ্ধ শান্তি করতে হবে, এর একটি জোরালো প্রমান আছে বরাহ পুরাণের একটি মন্ত্রে, সেখানে বলা আছে,
“একাদশ দিনে যথাবিধি একোদ্দিষ্ট বিধিক পিণ্ডদান করিবে, অনন্তর স্নানান্তর শুচি হবে। মনুষ্যগণের মধ্যে বিপ্র, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র, এই চারি বর্ণের একোদ্দিষ্ট একইরূপ।” – (১৮৮/৬,৭)
এছাড়াও কোনো ব্যক্তি মারা যাওয়ার ৪র্থ ও ১০ম দিনে বিশেষ পিণ্ড দিতে হয়, একে বলে পূরক পিণ্ড। এ থেকেও প্রমাণিত যে ১০ম দিনে পূরক পিণ্ড দিয়ে এগারোতম দিনেই শ্রাদ্ধশান্তি করতে হবে।
এ থেকে স্পষ্ট এবং প্রমাণিত যে সকলের জন্য মরণাশৌচ ১০ দিন এবং এগারোতম দিনেই শ্রাদ্ধ বা মহাপ্রভু শ্রীকৃষ্ণের ভোগ দিয়ে লোকজনকে অন্ন ও জল দান করতে হবে।
ফটোপোস্টের একটিতে প্রশ্ন করা হয়েছে, শ্রাদ্ধে আমিষ খাওয়া যায় কি না ? হ্যাঁ যায়।
আশা করছি শ্রাদ্ধ সম্পর্কিত আমার এই প্রবন্ধটি শ্রাদ্ধের দিন সম্পর্কিত বিভ্রান্তি দূরীকরণে সাহায্য করবে।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
No comments:
Post a Comment