Wednesday 26 August 2020

বহু দেবতা বা ঔঁ এর মাধ্যমে মানুষ আসলে কার উপাসনা করে ?



বহু দেবতা বা ঔঁ এর মাধ্যমে মানুষ আসলে কার উপাসনা করে ?

Raj AB Barman,

সনাতন ধর্মের তত্ত্বকে বুঝতে বা উপলব্ধি করতে ইসলাম প্রভাবিত মন নিয়ে করলে চলবে না; কারণ, ইসলাম কোনো ধর্ম নয়, ওটা ব্যক্তিগত মতবাদ, যে মতবাদ জগত ও জীবনের সকল রহস্যকে ব্যাখ্যা করতে পারে না।

সনাতন ধর্মে বহু দেব-দেবীর পূজা প্রচলিত, এর মানে এই নয় যে হিন্দুরা আলাদা আলাদা ঈশ্বরের উপাসনা করে। সকল দেব-দেবীর মাধ্যমে হিন্দুরা এক ঈশ্বরেরই পূজা করে, যে কথা বলা হয়েছে, গীতায়, এই ভাবে-

"যে যে ভক্ত ভক্তিযুক্ত হইয়া যে যে দেবমূর্তি অর্চনা করিতে ইচ্ছা করে, আমি সেই সকল ভক্তের সেই সেই দেবমূর্তিতে ভক্তি অচলা করিয়া দিই। সেই ভক্তি নিয়া, সে সেই দেবমূর্তি অর্চনা করিয়া থাকে এবং সেই দেবতার নিকট ইইতে নিজ কাম্যবস্তু লাভ করিয়া থাকে, প্রকৃতপক্ষে আমিই সেই কামনা পূর্ণ করিয়া থাকি।"- (গীতা, ৭/২১,২২)

এবং

"হে অর্জুন, যাঁহারা শ্রদ্ধা করিয়া অন্য দেবতার পূজা করে, তাঁহারাও না জানিয়া আমাকেই পূজা করে।"- (গীতা, ৯/২৩)

সুতরাং বহু দেবতার পূজা করলেও হিন্দুরা যে সেই সব দেতার মাধ্যমে এক ঈশ্বরেরই পূজা করে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

এই সব কথা শ্রীকৃষ্ণ গীতাতে বলেছেন, এখন শ্রীকৃষ্ণই যে ঈশ্বর, তার প্রমাণ কী ?

শ্রীকৃষ্ণ যে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর, সেটা তার জীবনের নানা ঘটনায় প্রমাণিত। এ সম্পর্কে আমার অন্য প্রবন্ধ আছে, সেটা পড়া থাকলে জানেন বা না পড়া থাকলে পড়লে জানবেন, সেই একই কথা গীতাতেও বলা আছে, দেখুন নিচে-

"আমিই এই জগতের পিতা, মাতা, বিধাতা ও পিতামহ।… আমিই ব্রহ্মবাচক ওঙ্কার এবং আমিই ঋক সাম যজুঃ প্রভৃতি সকল বেদ।"- (গীতা, ৯/১৭)

গীতায় এই রকম বহু শ্লোক আছে, যার দ্বারা প্রমাণ হয় যে শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ঈশ্বর এবং আমার অনেক প্রবন্ধে এই বিষয় সম্পর্কে আলোচনাও করেছি, তাই এখানে সেই বিষয় আর আলোচনা করছি না।

কিন্তু এখানে সমস্যা হলো- আর্য সমাজীরা তো বিশ্বাসই করে না যে গীতায় সাতশত শ্লোক আছে, তারা বলে গীতা নাকি ৭০ শ্লোকের এবং এ সম্পর্কে নানা কুযুক্তিও তারা হাজির করে। ব্যাপারটা -যাকে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা নয়- যা অপছন্দ করি, তা পুরোটাই অস্বীকার। এ থেকে আমার ধারণা, পছন্দ না হলে আর্য সমাজীরা নিজের পিতা মাতাকেও অস্বীকার করবে।

এই আর্য সমাজী, তার পোস্টে বলেছে- এক ঈশ্বর/পিতা ঔঁ কেই উপাসনা করো। এই ঔঁ যে কী বা কে, তা দেখে বা বুঝে নিন নিচে-

গীতার ১৭/২৩ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন "ওঁ তৎ সৎ" এই তিন প্রকারে পরমব্রহ্মের নাম নির্দেশ করা হয়েছে। সুতরাং ওঁ দ্বারা যে পরমব্রহ্মকে বোঝায়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আবার গীতার ১০ম অধ্যায়ের ২৫ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, বাক্যসমূহের মধ্যে আমি একাক্ষর, ওঁ-কার। অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণই যে ওঁ-কার বা শ্রীকৃষ্ণই যে পরমব্রহ্ম, সেটা এই শ্লোক দ্বারা প্রমাণিত। 

এছাড়াও ওঁ উচ্চারণ করলেই যে শ্রীকৃষ্ণ স্মরণ করা হয়, সে কথা শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলেছেন, গীতার ৮/১২-১৩ নং শ্লোকে, এভাবে-

"… আত্মসমাধিরূপ যোগে অবস্থিত হইয়া, ওঁ- এই ব্রহ্মাত্মক একাক্ষর উচ্চারণপূর্বক আমাকে স্মরণ করিতে করিতে যে যোগী দেহত্যাগ করেন, তিনি পরমগতি লাভ করেন।"

গীতার এই তিনটি রেফারেন্স থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে ওঁ দ্বারা পরমব্রহ্ম বা ব্রহ্ম বা শ্রীকৃষ্ণকে বোঝায়।

সুতরাং হিন্দুরা বহু দেবতার পূজা করুক বা ঔঁ-কেই উপাসনা করুক, তারা যে এক ঈশ্বরেরই পূজা করে সেটা প্রমাণিত। যদিও আমি জানি যে- এই সব তথ্য প্রমাণ আর্য সমাজীদের মাথায় ঢুকবে না; কারণ, তারা তো আর্য নয়, বর্জ্য, আর বর্জ্য সেটাই, যেটা ভ্যালুলেস।

জয় হিন্দ।

জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ

No comments:

Post a Comment