Monday 24 August 2020

শুধু কন্যার পিতা মাতার করুণ পরিণতি :


শুধু কন্যার পিতা মাতার করুণ পরিণতি :

হিন্দু সমাজে কিছু দম্পতি আছে, যাদের চিন্তা-ভাবনা এতটাই ফার্স্ট, যারা চীনের এক সন্তান নীতির এত ঘোর সমর্থক, যারা দেশের জনসংখ্যা কমাতে এত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে- সন্তান না থাকলে লোকে আঁটকুড়ো বলবে, সকালে উঠে লোকজন তাদের মুখ দেখতে চাইবে না, এই ভয়ে- কোনরকমে একটি সন্তান হওয়ার পর, সেই সন্তান যদি কন্যাও হয়, দ্বিতীয় সন্তানের কথা আর চিন্তা করে না। এদের কিছু এতই মূর্খ, কিছুর আত্মবিশ্বাস এতই দুর্বল, আবার কিছু এতই অলস যে, এরা ভাবে একটিই যথেষ্ট, আর দরকার নেই; আর অন্যরা ভাবে আরেকটি সন্তান হলে খাওয়াবে কি বা মানুষ করবে কিভাবে ? এই ভাবনা থেকে নিজেদের আঁটকুড়ো বা বাঁজা বদনাম ঘুচাতে কোনরকমে একটি সন্তানের জন্ম দিয়ে, সেই সন্তান মেয়ে হলেও দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেয় না, এদের যে কী পরিণতি হয়, সেটাই আলোচনা করবো এই প্রবন্ধে- 

মানুষের সন্তান জন্ম দেওয়ার পার্থিব উদ্দেশ্যেই হলো- নিজের বংশ রক্ষা এবং বৃদ্ধকালের অবলম্বন। যদি কারো একটি মাত্র সন্তান হয় এবং সেটা কন্যা হয়, তাহলে তার এই দুই উদ্দেশ্যের কোনটাই পূরণ হয় না। দুটো ফটোপোস্টের একটিতে দেখুন- একমাত্র কন্যাকে বিয়ে দেওয়ার পর, বৃদ্ধ পিতা মাতা বাধ্য হয় মেয়ে জামাইয়ের বাড়ি গিয়ে থাকতো, উপায় তো নেই, বৃদ্ধ বয়সে তারা তো পরিশ্রম করে টাকা পয়সা আয় করতে পারবে না, আবার অসুস্থ হলেও সেবা যত্ন করার কোনো লোক তাদের নাই। তাই আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে মেয়ে জামাইয়ের বাড়ি গিয়ে উঠা। মনে রাখবেন, বিয়ের পর কোনো ছেলের শ্বশুড় বাড়িতে গিয়ে থাকা বা উঠা যতট অসম্মানের, ঠিক তেমনি বৃদ্ধ পিতা মাতার, মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে গিয়ে থাকাটাও ততটাই অসম্মানের। একমাত্র মেয়ে তো চাইবেই, বাপ মা এসে তার কাছে থাকুক, কিন্তু জামাই যদি না চায় বা শ্বশুড় শাশুড়িকে টানার মতো আয় রোজগার যদি জামাইয়ের না থাকে, তাহলে জামাই তাদেরকে দেখা শোনা করবে কিভাবে ? আর স্বামীর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে সংসার করা কি কোনো মেয়ের পক্ষে সম্ভব ?

নবদ্বীপ রেলস্টেশনে নির্বাসন পাওয়া এই বৃদ্ধ দম্পতির ক্ষেত্রে ঠিক এই ঘটনা ই ঘটেছে; হয় তাদের জামাই অমানুষ, সে চায় নি অসহায় শ্বশুড় শাশুড়িকে দেখাশোনা করতে; না হয় সে অভাবী, তার ক্ষমতা নাই তাদেরকে ভরণপোষণ করতে। তাই তাদের এই করুণ পরিণতি, তাদের কোনো ঠাঁই নেই, ক্ষুধা লাগলে খাবার নেই, রোগব্যাধিতে ঔষধ পথ্যের ব্যবস্থা নেই। কিন্তু এই পরিণতি তাদের হতো না, যদি তাদের একটি ছেলে থাকতো। অনেকে বলতে পারেন, ছেলে থাকলেই যে বাপ মাকে ভাত দেবে বা দেখাশোনা করবে, তার কী গ্যারান্টি ? ছেলের কাছে বাপ মা যদি ভাত না পায়, সেটা তাদের কর্মের ফল, ছেলেকে যদি সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারে, তাহলে সেই ছেলে অবশ্যই বাপ মাকে দেখা শোনা করবে।

আর বাপ মাকে দেখা শোনা করে না, এমন ছেলে শতকরা ২/১ জন হতে পারে, এতে শতকরা ৯৮/৯৯ জনের ভয় পাওয়ার কারণ কী ? নিজের নির্বুদ্ধিতাকে ঢাকার অজুহাতও মানুষের কাছে থাকে; ছেলে, বাপ মাকে দেখবে না, এই ভয়ে যদি ছেলের জন্ম না দেয়, তাহলে প্রথম সন্তান ছেলে হলে তাকে কি ফেলে দেয় ? বরং প্রথম সন্তান ছেলে হলে তো সবাই একটু বেশিই খুশি হয় এই ভেবে যে- এই সন্তান তাদের বৃদ্ধ বয়সের অবলম্বন হবে এবং বংশ রক্ষা করবে। পুত্র সন্তানই পিতা মাতার অবলম্বন এবং এটাই প্রকৃতির নিয়ম, একাধিক সন্তান না নিয়ে পুত্র সন্তান জন্মের সেই সুযোগকে আপনি বাধাগ্রস্ত কেনো করছেন, আপনারা কি নিশ্চিত যে আপনার ছেলে বৃদ্ধ বয়সে আপনাদেরকে দেখবেই না ? যদি আপনারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকেন, তাহলে ভাবুন যে আপনারা কত খারাপ পিতা মাতা, সন্তানকে সুশিক্ষিত করে বড় করে তোলার কোনো আত্মবিশ্বাসই আপনাদের নেই।

যা হোক, প্রথম সন্তান মেয়ে হলে, দ্বিতীয় সন্তান যে ছেলে হবে তারও তো কোনো গ্যারান্টি নেই। যারা এমনটা মনে করে, তাদের সামাজিক বাস্তবতার কোনো জ্ঞানই নেই। সমাজের শতকরা ৮০ থেকে ৯০ দম্পতির প্রথম সন্তান ছেলে হলে দ্বিতীয় সন্তান মেয়ে হয়, আবার প্রথম সন্তান মেয়ে হলে দ্বিতীয় সন্তান ছেলে হয়। ১০ থেকে ২০% দম্পতির শুধু ছেলে হয় বা শুধু মেয়ে হয়। সবমিলিয়ে সমাজে ছেলে মেয়ের সংখ্যা সাধারণভাবে প্রায় সমান থাকে। তাহলে প্রথম সন্তান মেয়ে হলে দ্বিতীয় সন্তান কেনো আপনি নেবেন না ? প্রথমটা ছেলে হলে দ্বিতীয়টা মেয়ে হলেও তো কোনো সমস্যা নেই, আপনি সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করলেন। আর প্রথমটা মেয়ে হওয়ার পর দ্বিতীয়টা মেয়ে হলেও কি খুব অসুবিধা ? যদিও শুধু কন্যা সন্তানের জনক জননীর শেষ জীবন খুব একটা ভালো যায় না, সামাজিক বাস্তবতার কারণে, তারপরও তো একটা বিকল্প থাকলো। যদি বড় মেয়ে জামাই দেখাশোনা না করে, তাহলে দ্বিতীয় অপশান হিসেবে তো ছোটো মেয়ে জামাই থাকলোই। একজন অক্ষম বা অমানুষ হলেও দ্বিতীয়টা তো সক্ষম বা মানুষ হতে পারে। আর সব সন্তানই যে পূর্ণ আয়ু ভোগ করে মারা যাবে, তার তো কোনো গ্যারান্টি নেই; মানুষ যেকোনো বয়সে মারা যেতে পারে, এক্ষেত্রে সন্তান যদি একটা হয়, সেটা ছেলে হোক বা মেয়ে, সে যদি ইয়াং বয়সেই মারা যায়, তাহলে সেই পিতা মাতার ভবিষ্যৎ কী বা ভবিষ্যৎ গতি কী ?

দ্বিতীয় ফটোপোস্টে দেখুন- এই অধ্যাপক একটি মাত্র কন্যার জন্ম দিয়ে, একটিই যথেষ্ট বিবেচনা করে দ্বিতীয়র কোনো চিন্তা করে নি। মেয়ে বড় হলে তাকে বিয়ে দিতেই হবে এবং সে শ্বশুড় বাড়ি চলেই যাবে, এই অধ্যাপকের কন্যাও তার ব্যতিক্রম নয়, বিয়ের পর সে হয়তো স্বামীর সাথে বিদেশে বা কর্মসূত্রে বিদেশে থাকে। অন্যদিকে তার স্ত্রীও মারা গেছে, ফলে সে এই বয়সে এসে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে। নিঃসঙ্গতা একটা ভয়াবহ বিষ, যা মানুষকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়, এই অধ্যাপকও তার শিকার। তাই এই ৭২ বছর বয়সে সে আবার বিয়ে করেছে, কিন্তু এটি কি তার সঠিক সিদ্ধান্ত ?

শাস্ত্রে পরিষ্কার করে বলা আছে- বৃদ্ধের তরুণী মেয়েকে বিয়ে করা চলবে না। যদি কোনো বৃদ্ধ, কোনো তরুনীকে বিয়ে করে, তাহলে তার জীবনে অশান্তি বা কষ্ট মাস্ট। এর মূল কারণ হলো- যৌনতা। একজন তরুণীর যে যৌনক্ষুধা, সেটা একজন সক্ষম যুবকই মেটাতে পারে, এমনকি ২০/২৫ বছরের একজন তরুণীর যৌনক্ষুধা মেটানোর ক্ষমতা ৪০/৪৫ বছরের একজন পৌঢ় পুরুষেরও নেই। সেখানে ৭২ বছরের এই বৃদ্ধ কিভাবে এমন তরতাজা যুবতীর যৌনক্ষুধা মেটাবে ? এই বিষয়টিই এই বৃদ্ধের জীবনে যে ঘোর অন্ধকার টেনে নিয়ে আসবে, এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

মানুষের প্রতিটা সম্পর্ক স্বার্থের উপর নির্ভরশীল। আমার ধারণা এই তরুণী, এই বৃদ্ধকে বিয়ে করেছে তার সম্পত্তির জন্য। তরুণীর হিসেব, ৭২ বছরের এই বুড়ো আর কতদিন বাঁচবে, সে মরলেই স্ত্রী হিসেবে সমস্ত সম্পত্তি তার। বুড়ো মরলেই সমস্ত সম্পত্তি তার, এরপর সে তার কোনো পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে সুখে কাল কাটাবে। কিন্তু বুড়ো মরার আগেই এই মেয়েটি যা করবে, তাহলো- এই মেয়েটি তার বয়ফ্রেন্ডকে দিয়ে নিয়মিত যৌনক্ষুধা মেটাবে, যেটা এই বৃদ্ধ এক সময় জেনে যাবে, কিন্তু কিছু করতে পারবে না, মনের কষ্ট তাকে মনেই পুষে রাখতে হবে এবং গুমড়ে গুমড়ে মরতে হবে। এমনও হতে পারে, এই তরুণী স্ত্রী, তার বৃদ্ধ স্বামীর বাড়িতেই তার পছন্দের পুরুষের সাথে যৌনমিলন করবে, এতে যদি ঐ বৃদ্ধ কোনো বাধা দেয়, প্রথমত সে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হবে এবং খুব বেশি সমস্যা সৃষ্টি করলে সে খুন হয়ে যাবে। তার মানে ঘটনা যেদিক দিয়ে ঘটুক, শাস্ত্রের বাণী অমান্য করায়, এই বৃদ্ধ অধ্যাপকের জীবনে কষ্টের দিন শুরু হলো বলে।

৭২ বছর বয়সে কোনো পুরুষের যৌনশক্তি থাকা বলতে গেলে এককথায় অসম্ভব। আর যৌনশক্তি ছাড়া স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কখনো টিকে না। আমি একজনকে জানি, যার ডায়াবেটিস ছিলো বলে সে যৌনমিলনে ছিলো অক্ষম, কিন্তু তার স্ত্রী হঠাৎ এ্যাকসিডেন্টে মারা যাওয়ায়, তার দুই ছেলেকে এবং সংসার দেখাশোনার জন্য সে আরেকটি বিয়ে করে, যদিও সেই স্ত্রী ছিলো যুবতী নয়, মধ্যবয়স্ক, তারপরও বাসর রাতে সে স্যাটিসফায়েড হয় নি বলে পরের দিনই তাকে তালাক দিয়ে চলে গেছে। গৌন উদ্দেশ্যে যা ই থাকুক, বিয়ের মূখ্য উদ্দেশ্য হলো যৌনতা, এই যৌনতা যদি ঠিক মতো না হয়, সেই বিয়ে কখনো সুখের হয় না, হবে না; বরং এই ধরণের বিয়ে জীবনে কঠিন ট্রাজেডি ডেকে আনতে পারে, যেটা ঘটতে চলেছে ঐ বৃদ্ধ অধ্যাপকের জীবনে। বৃদ্ধ বয়সে তরুনী মেয়েকে বিয়ে করে এই অধ্যাপক যেমন খবরে এসেছে, তেমনি সে যে আবারও কোনো দুঃখজনক ঘটনার মাধ্যমে খবরে আসবে তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই এবং সেটা খুব শীঘ্রই।

ঐ অধ্যাপক যে নিঃসঙ্গতা কাটাতে এই বিয়ে করেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু ঐ তরুণীর উদ্দেশ্যে শুধু ঐ বৃদ্ধের নিঃসঙ্গতা দূর করা নয়, তার নিশ্চয় অন্য কোনো পরিকল্পনা আছে, যার ইঙ্গিত উপরে আমি দিয়েছি; কারণ, কোনো মেয়ে এই ভাবে তার জীবনকে নষ্ট করবে, এটা অসম্ভব। প্রতিটা মেয়ে তার জীবনে যেমন পর্যাপ্ত যৌনসুখ চায়, তেমনি চায় পর্যাপ্ত ধন সম্পদ, যে ধন সম্পদ দিয়ে সে সুখে জীবন কাটাতে পারে, এই মেয়ের গোপন উদ্দেশ্য যে এই বৃদ্ধের ধন সম্পত্তি হাতানো, এটা অনেকটা দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার।

এই বৃদ্ধ অধ্যাপক জীবনের শেষ যে ভুলটি করলো, সেটা হলো- এই তরুণীকে বিয়ে করা। সে যদি পঞ্চাশোর্ধ কোনো বয়স্ক বিধবাকে বিয়ে করে তার নিঃসঙ্গতা দূর করার প্ল্যান করতো, তাকে আমি কিছুটা বুদ্ধিমান মনে করতাম। কিন্তু তাকে আমি চুড়ান্ত বুদ্ধিমান মনে করতাম, যদি তার এই বয়সে নিঃসঙ্গতা দূর করার কোনো প্রয়োজনই না পড়তো।

এই কাণ্ডজ্ঞানহীন অধ্যাপক একটি মাত্র মেয়ের জন্ম দিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছে, যার ফলে তার জীবনে অন্য ঘটনাগুলো ঘটেছে। সে যদি একাধিক সন্তান নিতো, হতে পারতো, তাদের মধ্যে একটি ছেলে থাকতো, সেই ছেলে, এই বৃদ্ধের অবলম্বন হতো, এই ছেলেকে বিয়ে দিলে তার স্ত্রী বাড়ি আসতো, ছেলের বউ তার দেখাশোনা করতো, ছেলের বউয়ের সন্তান হলে, সেই সন্তান তার খেলার সঙ্গী হতো, এতেও তার নিঃসঙ্গতা কাটতো। তার মানে এই বৃদ্ধের যে নিঃসঙ্গতা, সেটা তার নির্বুদ্ধিতার ফল।

যে কন্যা, তার পিতা মাতার একমাত্র সন্তান, তার জীবনেও কোনো সুখ নেই। বিয়ের কথাবার্তা শুরু হলেই তার এই টেনশন শুরু হয়ে যায় যে বিয়ের পর সে যখন শ্বশুড়বাড়ি চলে যাবে, তখন তার বাপ মাকে কে দেখবে ? অথচ তার যদি এক বা একাধিক ভাইবোন থাকে, তাহলে তাকে কিন্তু এই দুশ্চিন্তা গ্রাস করে না। সে তো দেখতেই পায় যে, সে চলে গেলেও তার বাপ মাকে দেখার জন্য তার অন্য ভাই বা বোন রয়েছে, তখন সে নিশ্চিন্তে বিয়ে করে শ্বশুড় বাড়িতে গিয়ে সংসার করতে পারে।

যে ব্যক্তির একটি মাত্র কন্যা, সেই কন্যার সাথে ছেলের বিয়ে দিয়েও ছেলের বাড়ির লোকজন নানারকম সমস্যায় ভুগে। কারণে অকারণে তাদের ছেলের বউ তার বাপ মায়ের জন্য চিন্তা করে, টেনশন করে, এর ফলে সে নিজ সংসারে ঠিক মতো মনোযোগ দিতে পারে না, শ্বশুড় শাশুড়ি বা স্বামীর প্রতি ঠিকমতো খেয়াল রাখে না বা রাখতে পারে না। কারণ, বাপ মায়ের কিছু হলেও তাকে ছুটে আসতে হয় বাপের বাড়ি। এই ভাবে এক কন্যা সন্তানের জনক-জননীরা, শুধু নিজেদেরকে নয়, মেয়ের শ্বশুড়বাড়ির লোকজনকেও সমস্যাইয় ফেলে।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- এক কন্যা সন্তানের জনক জননীর বৃদ্ধবয়সের অবলম্বন যেমন থাকে না, তেমনি তাদের মৃত্যু হলে বংশরক্ষারও কেউ থাকে না, বংশের বিলুপ্তি ঘটে। যার ফলে সমাজের জনসংখ্যা কমে, এভাবে সমাজের ক্ষয় হতে থাকে। তার মানে এক কন্যা সন্তানের জন্মদাতারা বাস্তবে সমাজের কোনো উপকারই করে না, সমাজের অপকার করে।

প্রকৃতির নিয়মই এটাই যে- আপনি যদি সমাজের উপকার করেন, আপনার বিপদে সমাজ আপনার পাশে দাঁড়াবে। এক কন্যা সন্তানের জনক জননীরা বাস্তবে সমাজের কোনো উপকার করে না বলে তাদের বিপদে সমাজও তাদের পাশে থাকে না, তাদের ঠাঁই হয় রেলস্টেশনে বা অবস্থা হয় নিঃসঙ্গ।

তাই আমার বন্ধুদের প্রতি আমার পরামর্শ- ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, দুটো সন্তান অবশ্যই আপনাকে নিতে হবে, তিন চারটি নিতে পারলে আরো ভালো। এই তিন চারটি সন্তানের মধ্যে একটি বা দুটি সন্তান অবশ্যই আপনার ছেলে হবে, তাতে আপনার বৃদ্ধ বয়সের অবম্বন যেমন হবে, তেমনি তার দ্বারা আপনার বংশ রক্ষাও হবে। আর যদি আপনার তিন চারটি সন্তানই ছেলে হয়, তারা সমাজের জন্য শক্তি হবে। সেই ছেলেদের দ্বারা আপনি যেমন সমাজের জন্য কাজ করতে পারবেন, তেমনি ছেলেদের দ্বারা অসহায় কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকেও সাহায্য করতে পারবেন, তাদের মেয়েদের সাথে নিজের ছেলেদের যৌতুকবিহীন বিয়ে দিয়ে। তার মানে আপনার পুত্র শুধু আপনার শক্তি নয়, আপনার সকল শুভ কাজেরও সহায়ক।

প্রায় সব হিন্দু একাধিক সন্তানের জন্ম নিয়ে এই দুশ্চিন্তায় ভোগেন যে- তাদেরকে মানুষ করবে কিভাবে ? এই চিন্তাটা প্রায় সম্পূর্ণ অমূলক। যার ভাগ্য নিয়ে সে ই জন্ম নেয় এবং যে যা হবার তাই হয়। ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য নরেন্দ্র মোদীকে কোনো ধনী ও বিখ্যাত পরিবারে জন্ম নিতে হয় নি, তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে এবং তার বাপ চা বিক্রি করে তাকে বড় করেছে। সুতরাং মানুষ করার চিন্তা আপনাকে করতে হবে না, আপনার যদি শুধু ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত কোনো সন্তানকে খাইয়ে পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষমতা থাকে, আপনি সন্তানের জন্ম দিতে পারেন এবং এটা মনে করতে পারেন যে এই ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত আপনি আপনার সন্তানের পেছনে যা খরচ করেছেন, সেটা আপনার ইনভেস্ট, এই সন্তান আপনাকে ১৬ বছরের পর থেকে শুধু দেবেই আর দেবে, আপনার থেকে আর কিছুই নেবে না এবং যেটা দেবে, সেটা আপনার খরচের ১০০ গুন বেশি। অবশ্য এই ঘটনা তখনই ঘটবে, যখন আপনি সম্পূর্ণ পরিকল্পনা করে আপনার বাচ্চার পেছনে ইনভেস্ট করবেন।

পরিশেষ আমার বন্ধুদের কাছে অনুরোধ- এক কন্যা সন্তানের জনক হয়ে বাঁজা ও আঁটকুড়ো বদনাম ঘুচাতে পেরেছি বলে মনে করে আত্মতৃপ্তি নিয়ে বসে থাকবেন না। যদি থাকেন, তাহলে আপনাদের পরিণতি হবে ফটো পোস্টে উল্লিখিত দুটো ঘটনার মতো। প্রথম সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, একাধিক সন্তানের জন্ম দেন, এতে একটি যদি কোনো কারণে মারাও যায়, বিকল্প অপশান আপনার থাকবে। সবগুলোই যদি ছেলে হয়, তারা যেমন আপনার শক্তি হবে, তেমনি তাদের দ্বারা আপনি মহৎ কাজও করতে পারবেন। আর যদি সবগুলো আপনার মেয়েও হয়, এটাকে ঈশ্বরের ইচ্ছা বলে মেনে নিয়ে এই চিন্তা করবেন যে- ভারতের সুষমা স্বরাজ, নির্মলা সীতারমন; বাংলাদেশের সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া রহমানের মতো ক্ষমতাবান নারীও তো আছে, আপনার মেয়েগুলো তাদের মতো হবে, যারা যেকোনো সাধারণ ছেলের চেয়ে অনেক অনেক বেশি উপকারী।

সব দিক বিচারে এক সন্তানের জন্ম দেওয়া কোনোপ্রকারেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়, সেটা ছেলে হোক বা মেয়ে হোক। একটি সন্তান কন্যা হলে আপনার শেষ জীবন কষ্টপূর্ণ হতে বাধ্য, আর এক সন্তান যদি ছেলেও হয়, সে যদি কোনো কারণে মারা যায়, আপনার পরিণতি আরো খারাপ হতে বাধ্য। তাই একাধিক বিকল্প অপশান সব সময় রাখবেন, যেটা সবদিক বিচারে সর্বোচ্চ বুদ্ধিমানের কাজ।

সকল হিন্দুর মধ্যে এই বোধ ঢুকুক, তাদের মাধ্যমে সনাতন হিন্দু সমাজ স্বমহিমায় মাথা উঁচু করে টিকে থাকুক, এই কামনায় বলছি-

জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

জয় হিন্দ।

No comments:

Post a Comment