Wednesday 12 August 2020

কে মহাপ্রভু- চৈতন্যদেব, না শ্রীকৃষ্ণ ?


কে মহাপ্রভু- চৈতন্যদেব, না শ্রীকৃষ্ণ ?

'মহা' একটি বিশেষণ পদ, এর ইংরেজি হলো- গ্রেট, যার বাংলা প্রতিশব্দগুলো হলো- আকার, পরিমাণ বা মাত্রায় সাধারণের উর্ধ্বে, বড়, মস্ত, বিশিষ্ট ক্ষমতা বা গুন সম্পন্ন, গুরুত্বপূর্ণ, সুবিদিত, উঁচু পদমর্যাদাসম্পন্ন, প্রবল, প্রচণ্ড।

বাংলায় মহা যুক্ত শব্দগুলো, যেমন- মহাসাগর, মহাগুরু, মহাকবি, মহাকর্ষ, মহাকাব্য, মহাকায়, মহাকাল, মহাকালী, মহাকাশ, মহাজন, মহাজ্ঞান, মহাতেজ, মহাদেব, মহাদেশ, মহানগর, মহাপাপ, মহাপ্রয়াণ, মহাপ্রলয়- এর সবকিছুর দ্বারাই শেষ বা চুড়ান্ত কিছুকে বোঝায়; এককথায় যে শব্দের সাথে মহা যুক্ত হবে, সেটাই হবে শেষ বা চুড়ান্ত কথা, তার পরে আর কোনো কথা নেই।

মুসলমানরাও মহানবী শব্দ দ্বারা মুহম্মদকে বোঝায় এবং তাই মুসলমানদের কাছে মুহম্মদই শেষ কথা, এমনকি মুসলমানদের কাছে মুহম্মদ, ক্ষেত্র বিশেষে আল্লার চেয়েও বড়; একারণে দেখবেন, আল্লার সমালোচনা করলে মুসলমানরা যতটা না ক্ষেপে, মুহম্মদের সমালোচনা করলে ক্ষেপে তার কয়েকগুন।

আল্লা কাল্পনিক ব্যাপার, আল্লাকে কেউ কখনো দেখে নি, এমনকি মুহম্মদ যে বলে গেছে, মেরাজের ঘটনার সময় সে আল্লার সাথে দেখা করে এসেছে, সেটাও পুরোটাই বোগাস। কাল্পনিক আল্লাকে বাদ দিলে মুসলমানদের কাছে ঐতিহাসিক সত্য হলো মুহম্মদ, সেকারণে তারা তাকে চুড়ান্ত মনে করে এবং এই চুড়ান্ত মনে করেই মুসলমানরা মুহম্মদকে বলে মহানবী। কিন্তু হিন্দু সমাজে মহাপ্রভু বলে যাকে আমরা বলে থাকি, এবার দেখা যাক তার অবস্থা কী ?

উপরেই বলেছি মহা যুক্ত শব্দগুলো দ্বারা বোঝায় চুড়ান্ত বা শেষ অবস্থা; এককথায় কোনো শব্দের সাথে যদি মহা যুক্ত থাকে, তার চেয়ে বড় আর কিছু থাকবে না বা তারপর আর কোনো কথা থাকবে না। কিন্তু সনাতন ধর্মে মহপ্রভু বলে খ্যত চৈতন্যই কি শেষ কথা ? বাস্তবতা বলে মোটেই তা নয়। কারণ, মহাপ্রভু বলে কথিত চৈতন্যদেবের উপরে সনাতন ধর্মের ঐতিহাসিক সত্য শ্রীকৃষ্ণ রয়েছেন, যে শ্রীকৃষ্ণ শুধু সকলেরই আরাধ্য নয়, মহাপ্রভু বলে খ্যাত চৈতন্যদেবেরও আরাধ্য। শুধু তাই নয়, চৈতন্যদেবের উপরে সনাতন ধর্মের আরও ঐতিহাসিক সত্য বা সত্ত্বা হলো- শ্রীরাম চন্দ্র, বলরাম, পরশুরামসহ অবতারগণ; এনারা তো বিষ্ণুর ডাইরেক্ট অবতার, অন্যদিকে চৈতন্য তো বিষ্ণুর কোনো অবতারই নন। তাহলে যেখা্নে সনাতন ধর্মের ঐতিহাসিক সত্য বিষ্ণুর অংশ অবতারগণ রয়েছেন, রয়েছেন বিষ্ণুর পূর্ণ অবতার পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ, গীতা অনুসারে যিনি জগতের প্রভু অর্থাৎ মহাপ্রভু, তাকে বাদ দিয়ে আমরা মহাপ্রভু বলে উল্লেখ করছি চৈতন্যদেবকে; আর এটা করে নিজের জনককে পিতা বলার পরিবর্তে আমরা এমন একজনকে আমাদের পিতা বলছি, যিনি নিজেও পরমপিতা শ্রীকৃষ্ণের সন্তান এবং ভক্ত। 

বাপকে বাপ না বলে আমরা যদি বড় ভাইকে বাপ বলি বা দূর গাঁয়ের কোনো অপরচিতকে বাবা বলে ডাকি, সেটা যেমন শুধু আমাদের বাপেরই অপমান নয়, আমাদের নিজেদের জন্যও লজ্জার; তেমনি মহাপ্রভু হিসেবে শ্রীকৃষ্ণকে সম্বোধন না করে, চৈতন্যদেবকে মহাপ্রভু মনে করে, আমরা জগতপিতা শ্রীকৃষ্ণকেই অপমান করছি, যেটা বোঝার মতো বোধ-বুদ্ধিও আমাদের নেই, আর যাদের বোধ-বুদ্ধি থাকে না, তাদের লজ্জাও কি থাকে ? থাকে না। আমরা হিন্দুরা হচ্ছি সেই নির্লজ্জ ও নির্বোধ জাতি।

জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী জগতে তিনটি গণ বা শ্রেণীর মানুষ আছে- দেবগণ, নরগণরাক্ষসগণ। রাক্ষসগণের মানুষেরা জগতের সকল অশান্তির কারণ; নরগণের মানুষ হলো সাধারণ মানুষ আর দেবগণের মানুষ হলো দেবতা স্বভাবের মানুষ। দেব স্বভাবের মানুষ ছোট বেলা থেকেই পরোপকারী, সমাজ সেবক এবং ধর্মানুরাগী; এই সূত্রে চৈতন্য ছিলেন দেব স্বভাবের মানুষ, তাই তাকে রামকৃষ্ণদেবের মতো চৈতন্যদেব বলা যেতেই পারে এবং যেটা বলা হয়ও, কিন্তু কিছুতেই চৈতন্যদেবকে মহাপ্রভু বলা যায় না বা বলা উচিত নয়; কারণ, তাহলে জগৎপ্রভু শ্রীকৃষ্ণকে অপমান বা অস্বীকার করা হয়। 

আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে চৈতন্যদেব যে মহাপ্রভু নয়,  এই বিষয়টি বোঝাতে পেরেছি।

জয় হিন্দ।

জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

'ওঁ সহানা ভবতুঃ'(ঈশ্বর আমাদেরকে রক্ষা করুন।)

No comments:

Post a Comment