Friday, 24 July 2020

শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্যদেবের চরণ ধুয়ে তার সেবা করছে !


ফটো পোস্টে দেখুন, এক চৈতন্যভক্ত ফটোশপ দিয়ে ছবি বানিয়েছে- যেখানে শ্রীকৃষ্ণ, চৈতন্যদেবের চরণ ধুয়ে দিয়ে তার সেবা করছে এবং ছবির ক্যাপশনে লিখেছে- হরেকৃষ্ণ জয় গৌর জয়নিতাই।

তার মানে হরেকৃষ্ণ সে স্বভাববশত বলেছে এবং জয় কামনা করেছে গৌর অর্থাৎ চৈতন্যদেবের। বৈষ্ণব সমাজের চৈতন্য এবং শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে যে মনোভাব এই ছবির মাধ্যমে আসলে সেটাই ফুটে উঠেছে। বৈষ্ণব সমাজ- অজ্ঞতা এবং মিথ্যাপ্রচারের ফলে চৈতন্যদেবকেই বড় মনে করে, তাই তাকে বলে মহাপ্রভু, কিন্তু এই তথাকথিত মহাপ্রভু চৈতন্যই যে ছিলেন পরমকৃষ্ণ ভক্ত এবং তিনি তার ভক্ত শিষ্যদেরকে সব সময় কৃষ্ণ নাম করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি নিজেই কৃষ্ণকে পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলেন, সেটা বেশির ভাগ বৈষ্ণবই মনে হয় জানে না, তাই তারা কৃষ্ণ নাম বাদ দিয়ে ভজ গৌরাঙ্গ, লহ গৌরাঙ্গের নাম বলে চিৎকার করে এবং কৃষ্ণকে ছোট ক'রে এই রকম ছবি বানানোর মতো ক্ষমাহীন পাপ করে। যা হোক, বৈষ্ণব সমাজ আর কী কী ভাবে চৈতন্যদেবকে শ্রীকৃষ্ণের চেয়ে বড় মনে করে, সেটা দেখে নিন নিচের প্রবন্ধ থেকে-

বৈষ্ণব মতবাদে শ্রীকৃষ্ণ নয়, চৈতন্যদেবই বড় :

বৈষ্ণব সমাজে মহাপ্রভুর ভোগ ব্যাপকভাবে প্রচলিত। কেউ মারা গেলে বাধ্যতামূলকভাবে মহাপ্রভুর ভোগ তো দিতেই হয়, কেউ কেউ ছেলে মেয়ের অন্নপ্রাশনেও মহাপ্রভুর ভোগ দেয়, আবার কেউ শখ করেও দেয়।

যা হোক, বৈষ্ণব সমাজের এই মহাপ্রভুর ভোগ মানে চৈতন্যদেবের উদ্দেশ্যে নিবেদিত ভোগ, চৈতন্যদেবকে এখানে মহাপ্রভু হিসেবে বোঝানো হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মহাপ্রভু হলেন শ্রীকৃষ্ণ, চৈতন্যদেব নয়। কারণ, মহা মানেই চুড়ান্ত কিছু, তাই মহাপ্রভু মানেই শেষ কথা, আর এই শেষ কথার বিচারে হিন্দুধর্মের মহাপ্রভু হলেন শ্রীকৃষ্ণ; কারণ, শ্রীকৃষ্ণের উপরে কিছু নেই। কিন্তু বৈষ্ণব সমাজ মহাপ্রভু বলতে চৈতন্যদেবকে বোঝায়, যেটা তাদের প্রথম ভুল এবং সাধারণ হিন্দু সমাজেরে জন্য একটি চুড়ান্ত ধোকা।

বৈষ্ণব সমাজে আরেক প্রকার ভোগ প্রচলিত, যাকে বলে গিরিধারীর ভোগ। এই ভোগ কথিত মহাপ্রভুর ভোগের চেয়ে ছোট, তাই এর আয়োজন কম এবং খরচও অল্প।

বৈষ্ণব সমাজসহ প্রায় সব হিন্দু এটা জানে যে চৈতন্যদেব আসলে কে, কিন্তু বৈষ্ণবসহ সবাই যদি জানতো যে গিরিধারী আসলে কে, তাহলে আমার মনে হয় চৈতন্যর নামে দেওয়া ভোগের চেয়ে গিরিধারীর ভোগ বড় হতো।
আমরা অনেকেই জানি যে, শ্রীকৃষ্ণ ৭ বছর বয়সে, দেবরাজ ইন্দ্রের অহংকারকে চূর্ণ করার জন্য বৃন্দাবনবাসী কর্তৃক ইন্দ্রের পূজা বন্ধ করে গোবর্ধন নামে এক পর্বতের পূজা শুরু করেন, এতে ইন্দ্র ক্ষেপে গিয়ে বৃন্দাবন বাসীর উপর এক ভয়্ঙ্কর ঝড় বৃষ্টি চাপিয়ে দেয়। ইন্দ্রের এই কোপ থেকে বৃন্দাবনবাসীকে রক্ষা করার জন্য শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং গোবর্ধন পর্বতকে হাতের উপর ছাতার মতো তুলে ধরেন এবং ৭ দিন ঐ অবস্থায় তুলে রাখেন।

যা হোক, শ্রীকৃষ্ণের শক্তির পরিচয় পেয়ে শেষ পর্যন্ত ইন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণের কাছে হার স্বীকার করেন এবং নিজের ভুল বুঝতে পারেন। পর্বতের সমার্থক শব্দ হলো গিরি। শ্রীকৃষ্ণ যেহেতু গিরি গোবর্ধনকে নিজের হাতের আঙ্গুলের উপর ধারণ করেছিলেন, তাই শ্রীকৃষ্ণের আরেক নাম গিরিধারী। এই শ্রীকৃষ্ণের নামে যে ভোগ হয় তাই গিরিধারী ভোগ, এর গুরুত্ব বা সম্মান বৈষ্ণব সমাজে কম এবং সেই শ্রীকৃষ্ণের যিনি ভক্ত সেই চৈতন্যের নামে যে ভোগ হয়, তার গুরুত্ব বৈষ্ণব সমাজে বেশি; এভাবে বৈষ্ণব মতবাদে শ্রীকৃষ্ণ নয়, চৈতন্যদেবই বড় এবং শ্রীকৃষ্ণ তাদের মহাপ্রভু নয়, মহাপ্রভু শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত চৈতন্যদেব!

এই বৈষ্ণব সমাজের এবং বৈষ্ণব সমাজ কর্তৃক প্রভাবিত হিন্দুদের, যারা মনে করে মহাপ্রভু হলেন শ্রীচৈতন্য এবং গিরিধারীর ভোগকে যারা ছোট ভোগ মনে করে এবং চৈতন্যের নামে দেওয়া ভোগকে বড় মনে করে, সেই সব ভক্তের আত্মার কোনো সদগতি হবে ?

হবে না।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment