Thursday, 16 July 2020

Sodkirti Das এর তমঃ, রজঃ ও সত্ত্ব গুণের জ্ঞান !


Sodkirti Das এর তমঃ, রজঃ ও সত্ত্ব গুণের জ্ঞান !

Sodkirti Das আমাদেরকে সত্ত্ব, তম ও রজগুনের জ্ঞান প্রদান করিয়াছেন, আসুন আমরা সেই জ্ঞান গ্রহন করে নিজেদেরকে আলোকিত করি।

এই আলোচনায় যাবো একটু পরে, তার আগে Sodkirti Das এর কাছে আমার একটি প্রশ্ন- গোঁড়া বৈষ্ণবরা মসুর ডাল খায় না কেনো ?

বৈষ্ণবপন্থীরা আমিষ খায় না ব'লে, আমরাই তো তাদের কাছে এই প্রশ্ন করি যে- শুধু মাছ মাংস, ডিমেই আমিষ নেই, অন্যান্য খাবারেও আমিষ আছে, তাহলে আমিষ আহার ত্যাগ হলো কোথায় ?

তাদের কাছে এর জবাব হলো- তোরা এসব বুঝবি না।

হ্যাঁ, এটা আমরা বুঝি না, যেমন আমরা বুঝি না, যে মাছ ছুঁলে বা মাছ মাংসের কড়াই হাড়িতে রান্না করা খাবার খেলে বা আমিষ বাসনপত্রের সাথে তাদের নিরামিষ বাসনপত্রের স্পর্শ লাগলে যে বৈষ্ণবদের জাত থাকে না, সেই বৈষ্ণবরা আবার মাছের বাসস্থান নদীর জলকে কিভাবে পবিত্র মনে করে, সেই জলে কিভাবে স্নান করে বা সেই জলকে কিভাবে বিভিন্ন পূজায় ব্যবহার করে ? এসব আমাদের বোধের বাইরে।

আবার এটাও বুঝি না- আমিষভোজীরা, নিরামিষ বাসনপত্রে রান্না করে দিলেও নিরামিষভোজীরা খায় না, যেকারণে প্রায় সব নিরামিষভোজী নিজে রান্না করে খায়, সেই নিরামিষভোজীরা বাজার থেকে মুসলমানদের কাছ থেকে কিনে আনা শাকসবজি ফল চাল ডাল কিভাবে খায় ? মাছ মাংস ডিম খাওয়া হিন্দুর চেয়ে মনে হয় গরু খাওয়া মুসলমানেরা, নিরামিষভোজীদের কাছে বেশি পবিত্র।

যা হোক, বর্তমানে অনেক বৈষ্ণব বাড়িতেই এক বা একাধিক গোঁড়া বৈষ্ণব মহিলা আছে, যারা কারো হাতেই খায় না, সম্পূর্ণ নিজে রান্না করে খায়, এই বৃদ্ধারা যখন অতিবৃদ্ধা হয়ে নিজে আর রান্না করতে পারে না, রোগব্যাধিতে বিপর্যস্ত হয়ে শুধু বিছানায় শুয়ে শুয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, তখন এই বৃদ্ধারা কিন্তু আমিষভোজী ছেলের বউ বা আমিষভোজী মেয়ের হাতে রান্না ঠিকই খায় বা খেতে বাধ্য হয়, তাহলে তার সারাজীবনের যে সাধনা, কোনো আমিষভোজীর হাতে খাবে না, সেটা গেলো কোথায় ? যারা বাস্তবতাকে বুঝে না বা স্বীকার করে না, প্রকৃতি তাদেরকে ঠিক এই ভাবেই শাস্তি দেয়, তারা যা করতে চায় না, প্রকৃতি তাদেরকে শেষ পর্যন্ত সেটাই করতে বাধ্য করে।

যা হোক, #Sodkirti_Das তার প্রবন্ধের এই অংশের এক জায়গায় বলেছে- চাল ডাল ও শাকসবজিতে প্রচুর আমিষ থাকে।

-প্রচুর কাকে বলে জানেন ? যখন কোনো কিছুতে কোনো জিনিস ম্যাক্সিমাম পরিমাণ থাকে, তখন তাকে প্রচুর বলে। শাকসবজি চাল ডালে যদি প্রচুর পরিমাণ আমিষ থাকতো, তাহলে তো আমিষ জাতীয় খাদ্য হিসেবে মাছ মাংস ডিমের কেউ উদাহরণই দিতো না। এই প্রসঙ্গে আরেকটি কথা শুনে রাখুন- বনের হাতি, জিরাফ, মহিষেরা সারাদিন লতা পাতা খায়, এরা প্রচুর শক্তিশালী হয়, বিশাল আকৃতিরও হয়, দীর্ঘদিন বাঁচেও; তারপরও এরা কেউ বনের রাজা হতে পারে নি, বনের রাজা হয়েছে বাঘ বা সিংহ, যারা মাংসাশী প্রাণী। এর মানে হলো রাজা বা নেতা হওয়ার জন্য যে মানসিক বৈশিষ্ট্যের দরকার, যে যোগ্যতা দরকার, সেটা নিরামিষ খেলে অর্জন হয় না, তার জন্য প্রাণীজ আমিষ খেতে হয়। প্রকৃতির দিকে তাকালেও দেখা যায়- একটি মহিষের যা শক্তি, তা দিয়ে সে একসাথে দুই তিনটা সিংহের সাথে ফাইট করতে পারে, কিন্তু তারপরও চার পাঁচটি সিংহ মিলে এক দেড়শকে মহিষকে তাড়া করে নিয়ে যায় বা চার পাঁচটি সিংহের আক্রমনে এক দেড়শ মহিষ ভয়ে পালাতে থাকে, কেনো জানেন ? নিরামিষ খেলে, কারো আক্রমনকে প্রতিহত করার যে মানসিকতা দরকার, সেটাই থাকে না, তাহলে সেই শক্তির কি মূল্য, যে শক্তি প্রয়োজনের সময় ব্যবহার হয় না ? যুদ্ধ, আত্মরক্ষা বা টিকে থাকার প্রশ্নে নিরামিষ খাবার এখানেই ব্যর্থ, এই খাবার খেয়ে মুখে বড় বড় কথা বলা যায়, কিন্তু নিজেকে রক্ষা করা যায় না, শক্তির মুখে পড়লে ভয়ে পালাতে হয়।

যা হোক, এরপর Sodkirti Das তার প্রবন্ধের এক স্থানে বলেছে-

"গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন, আমাদের প্রতিদিনের আহার্য খাদ্যও তিন গুনের দ্বারা প্রভাবিত।

১) তমোগুনের আহার হল বাসি পচা শুটকি, বেজী, সাপ, শামুক, কাকড়া, চিকা, ইদুর, মাদকদ্রব্য ইত্যাদি। এগুলো পাজাড়ীরা খায় বা খেতো।

২)রজগুনের আহার হলো অতি স্বাদযুক্ত বড় বড় মাছের তরকারী, মাংস, বিরানী ইত্যাদি।

৩)সত্বগুনের আহার হল, বিভিন্ন শাক, সবজি যে কোনো অন্ন, সাগু, ফল মূল, দুধ, ঘি, ছানা দ্বারা তৈরী খাদ্য ইত্যাদি।"

-এখন দেখা যাক গীতায় সত্ত্ব, তমঃ ও রজগুন বলতে আসলে কী বোঝানো হয়েছে ?

সত্ত্ব, তমঃ, রজঃ- এগুলো হলো গুন বা বৈশিষ্ট্য, যা জীবের আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় এবং এই শব্দগুলো থেকে উদ্ভূত সাত্ত্বিক, তামসিক ও রাজসিক শব্দ দ্বারা কোনো ব্যক্তি বিশেষকে বোঝায় এবং একারণেই এগুলো কোনো বস্তু বা পদার্থের গুন নয়, তাই এই শব্দগুলো থেকে উদ্ভূত সাত্ত্বিক, তামসিক ও রাজসিক শব্দ দ্বারা কোনো বস্তু বা খাদ্যদ্রব্যকে বোঝায় না।

এই বিষয়টি আমরা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবো যদি গীতার কয়েকটি শ্লোকের অর্থ ভালোভাবে বুঝতে পারি।

গীতার ১৭/৪ নং শ্লোকে বলা হয়েছে,

“যজন্তে সাত্ত্বিকা দেবান্ যক্ষরক্ষাংসি রাজসাঃ।
প্রেতান্ ভূতগণাংশ্চান্যে যজন্তে তামসা জনাঃ।।” -১৭/৪

এর অর্থ- সাত্ত্বিক ব্যক্তিরা দেবতাদের পূজা করে, রাজসিক ব্যক্তিরা যক্ষ ও রাক্ষসদের পূজা করে এবং তামসিক ব্যক্তিরা ভূত ও প্রেতাত্মাদের পূজা করে।

এখানে- সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক শব্দ দ্বারা সবক্ষেত্রেই ব্যক্তি বিশেষকে বোঝানো হয়েছে, কোনো খাদ্য বা বস্তুকে বোঝানো হয় নি।

এরপর গীতার ১৭/৮ শ্লোকে বলা হয়েছে,

“আয়ুঃসত্ত্ববলারোগ্যসুখপ্রীতিবিবর্ধনাঃ।
রস্যাঃ স্নিগ্ধাঃ স্থিরা হৃদ্যা আহারাঃ সাত্ত্বিকপ্রিয়াঃ।।”

এর অর্থ- যে সমস্ত আহার- আয়ু, সত্ত্ব, বল, আরোগ্য, সুখ ও প্রীতি বর্ধনকারী এবং রসযুক্ত, স্নিগ্ধ, স্থায়ী ও মনোরম, সেগুলি সাত্ত্বিক লোকেদের প্রিয়।

মানে সাত্ত্বিক লোকেরা কোন ধরণের খাবার পছন্দ করে, এখানে সেই কথা বলা হয়েছে। কিন্তু হিন্দু সমাজের কিছু কিছু দিব্যজ্ঞানী, এই শ্লোকের দ্বারা মনে করে যে, গীতায় সাত্ত্বিক আহারের কথা বলা হয়েছে এবং সাত্ত্বিক মানে নিরামিষ! যেমন দিব্যজ্ঞানী Sodkirti Das সাত্ত্বিক আহার বলতে বোঝে- বিভিন্ন শাক, সবজি যে কোনো অন্ন, সাগু, ফল মূল, দুধ, ঘি, ছানা দ্বারা তৈরী খাদ্য ইত্যাদি।" কিন্তু গীতায় কি বলা হয়েছে যে কোন কোন বা কোন ধরণের খাবার সাত্ত্বিক ?

যারা সাত্ত্বিক মানে নিরামিষ বুঝে থাক, তাদেরকে বলছি-

তুই নিরামিষ খাবি খা, কেউ তো তোকে আমিষ খেতে বাধ্য করছে না। কিন্তু গীতায় সাত্ত্বিক শব্দ দ্বারা নিরামিষ আহারের কথা বুঝিয়েছে, এটা তোকে কোন বলদে বুঝিয়েছে, আর গীতার বাণীর এরকম অপব্যাখ্যা করতে তোকে কে করতে বলেছে ?

সাত্ত্বিক বলতে যে কোনো দ্রব্য বা বস্তুকে বোঝায় না এবং সাত্ত্বিক বলতে যে সত্ত্ব গুন বা বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন কোন ব্যক্তিকে বোঝায়, সেটা তো উপরেই উল্লেখ করেছি।

এই একই কথা প্রযোজ্য গীতার ১৭/৯ শ্লোকের ক্ষেত্রেও-

“কট্বম্ললবণাত্যুষ্ণতীক্ষ্ণরূক্ষবিদাহিনঃ।
আহারা রাজসসেষ্ট্যা দুঃখশোকাময়প্রদাঃ।।”

এর অর্থ- যে সমস্ত আহার অতি তিক্ত, অতি অম্ল, অতি লবনাক্ত, অতি উষ্ণ, অতি তীক্ষ্ণ, অতি শুষ্ক, অতি প্রদাহকর এবং দুঃখ, শোক ও রোগ উৎপাদনকারী, সেগুলি রাজসিক ব্যক্তিদের প্রিয়।

-এখানে রাজসিক ব্যক্তিরা কোন ধরণের খাবার পছন্দ করে, সে কথা বলা হয়েছে, অথচ দিব্যজ্ঞানী Sodkirti Das রজঃগুনের খাবার বলত বোঝে- অতি স্বাদযুক্ত বড় বড় মাছের তরকারী, মাংস, বিরানী ইত্যাদি। এই সব মনগড়া কথা অন্য কাউকে, অন্য কোথাও গিয়ে বলিস, যেখানে আমার নজর পৌঁছাবে না, ফেসবুকের মতো পাবলিক ফোরামে কখনো বলিস না; কারণ, এসব অশাস্ত্রীয় কথাবার্তাকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে না দেওয়ার জন্য পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ আমাকে সেই জ্ঞান এবং লেখার জন্য সেই সময়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

যা হোক, এরপর তামসিক বৈশিষ্ট্যের ব্যক্তিদের প্রিয় খাবার সম্পর্কে গীতার ১৭/১০ শ্লোকে বলা হয়েছে,

“যাতযামং গতরসং পূতি পর্যুষিতং চ ষৎ।
উচ্ছিষ্টমপি চামেধ্যং ভোজনং তামসপ্রিয়ম্।।”

এর অর্থ- যে খাদ্য অনেক আগে রান্না করা হয়েছে, যার রস শুকিয়ে গেছে, যা দুর্গন্ধযুক্ত, বাসী, উচ্ছিষ্ট ও অপবিত্র, তা তামসিক লোকদের প্রিয় ।

অর্থাৎ এই দুটো শ্লোকে বলা হয়েছে- রাজসিক এবং তামসিক ব্যক্তিরা কোন কোন ধরণের খাবার পছন্দ করে এবং বলা হয় নি যে কোন কোনো খাবার রাজসিক বা তামসিক ? অথচ দিব্যজ্ঞানী Sodkirti Das তমঃগুনের খাবার বলতে বোঝে- বাসি পচা শুটকি, বেজী, সাপ, শামুক, কাকড়া, চিকা, ইদুর, মাদকদ্রব্য ইত্যাদি। এগুলো আবার নাকি পাজাড়ীরা খায় বা খেতো।

যা হোক, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বর্তমানের কোনো সুস্থ ব্যক্তি কি এই তামসিক বা রাজসিক বৈশিষ্ট্যের খাবার খায় ? খায় না। তার মানে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই এমন ধরণের খাবার খাই যেগুলো সাত্ত্বিক লোকেদের প্রিয়। এর মানে কি এই যে, আমরা সবাই সত্ত্বঃগুন সম্পন্ন মানুষ ? নিশ্চয় নয়। পৃথিবীর সব লোক যদি সত্ত্বগুন সম্পন্ন মানুষ হতো, তাহলে কি পৃথিবীতে এত অধর্ম থাকতো, না হতো ? থাকতোও না আর হতোও না।

পৃথিবীর যেখানেই মুসলমান, সেখানেই অধর্ম, অর্থাৎ- মিথ্যাচার, দুর্নীতি, ছলনা, কপটতা এবং হানাহানিতে পূর্ণ; এসব তামসিক লোকেদের কাজ, তার মানে মুসলমানরা সব সময়, তামসিক লোকেদের প্রিয় খাদ্য বলে গীতায় যা বলা হয়েছে- যে খাদ্য অনেক আগে রান্না করা হয়েছে, যার রস শুকিয়ে গেছে, যা দুর্গন্ধযুক্ত, বাসী, উচ্ছিষ্ট ও অপবিত্র।- সেসব খাবার খায় ? খায় না। এ থেকেও এটা স্পষ্ট যে, তামসিক শব্দ দ্বারা কোনো খাদ্য বা বস্তুকে নির্দেশ করা হয় নি, এই একই কথা প্রযোজ্য রাজসিক শব্দের ক্ষেত্রেও।

এই অংশের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে, গীতায় খাবার দাবার সম্পর্কে বলা হয়েছে- সাত্ত্বিক, রাজসিক বা তামসিক ব্যাক্তিরা কোন ধরণের খাবার খায়; বলা হয় নি যে কোন খাবার সাত্ত্বিক, রাজসিক বা তামসিক? আর এসব বলা হবেই বা কেনো, আগেই তো বলেছি, এই তিনটি শব্দ দ্বারা কিছু গুন বা বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়, যেগুলো মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কোনো বস্তু বা দ্রব্যের বেলায় নয়।

তারপরও কিছু কিছু দিব্যজ্ঞানী গীতার এই শ্লোক-

“পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি।
তদহং ভক্ত্যুপহৃতমশ্নামি প্রযতাত্মনঃ।।”- ৯/২৬

অর্থ: যে বিশুদ্ধচিত্ত নিষ্কামভক্ত ভক্তি সহকারে আমাকে পত্র পুষ্প ফল ও জল অর্পন করে, আমি তার সেই ভক্তিপ্লুত উপহার প্রীতি সহকারে গ্রহণ করি।

-উল্লেখ করে বলবে যে, গীতায় শ্রীকৃষ্ণকে- পত্র, পুষ্প, ফল নিবেদন করতে বলা হয়েছে, এর মানে তাকে নিরামিষ খাবার নিবেদন করতে হবে।

এইসব দিব্যজ্ঞানীদের জন্য নিচের এই আলোচনা:

এই শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, পত্র পুষ্প ফল ও জল তাকে অর্পন করতে, কিন্তু তিনি কি তার ভক্তদেরকে এগুলোই বা শুধু এগুলোই খেতে বলেছেন ? যদি শ্রীকৃষ্ণ তার ভক্তদেরকে এগুলোই খেতে বলে থাকেন, তাহলে তো আমাদেরকে শুধু পত্র পুষ্প ফল ও জল খেয়েই বেঁচে থাকতে হবে। ফল ও জল না হয় খাওয়া যায় বা যাবে, কিন্তু পত্র ও পুষ্প অর্থাৎ পাতা ও ফুল কিভাবে খাওয়া যাবে ? কিছু কিছু সবজিজাত পাতা ও ফুল অবশ্য মানুষ খায়, কিন্তু সেগুলো কি মানুষ কোনো দেবতাদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করে ? করে না। তার মানে, যে পাতা ও ফুলের কথা গীতায় বলা হয়েছে সেগুলো মানুষের খাদ্য নয়। এখন নিরামিষভোজীদের জন্য বাকি থাকলো ফল ও জল; এখন আপনারাই বলেন, আপনারা কি শুধু ফল ও জল খেয়ে থাকেন, অন্য কিছুও খান ?

গীতা শুধু পড়লেই হয় না, গীতার বাণীর মর্মকে উপলব্ধি করতে হয়। যেমন- এক জায়গায় বলা হয়েছে, কাম ক্রোধ নরকের দ্বার। তার মানে কি কাম ক্রোধকে ত্যাগ করতে বলা হয়েছে ? না, কাম ক্রোধকে কন্ট্রোল করতে বলা হয়েছে, যাতে তার দ্বারা কোনো অনর্থ না ঘটে। শ্রীকৃষ্ণ যদি কামকে ত্যাগ করতেন তাহলে কি তিনি বিয়ে করতেন ? ক্রোধকে ত্যাগ করলে কি তিনি শিশুপালকে হত্যা করতেন ? এভাবেই পত্র পুষ্প ফুল ও জল শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করার বিষয়টি হলো প্রতীকী, এর মাধ্যমে শুধুমাত্র সেগুলোই আমাদেরকে খেতে বলা হয় নি, বলা হয়েছে, দিনে অন্তত একবার হলেও তার উদ্দেশ্যে সেগুলো নিবেদন করে যেন তাকে স্মরণ করি; পত্র পুষ্প ফুল ও জল হলো শ্রদ্ধা প্রর্দশনের একটি মাধ্যম মাত্র, যেমন- শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধে বা মৃত কোনো বিখ্যাত মানুষের মূর্তির বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়।

আপনারা অনেকেই হয়তো করে থাকেন বা কাউকে করতে দেখেছেন যে, ভাত খাওয়ার পূর্বে কেউ কেউ গ্লাস থেকে হাতে জল নিয়ে থালার চারপাশে বৃত্তের মতো জল দিয়ে ভাতকে প্রণাম করে খাওয়া শুরু করে, এটাও এক প্রকারের নিবেদন এবং উপরের শ্লোকে জল নিবেদনের যে কথা বলা হয়েছে, এটাও তার এক প্রকারের রূপ।

আশা করছি- দিব্যজ্ঞানী Sodkirti Das এর সত্ত্ব, তমঃ ও রজঃ গুন সম্পর্কে করা মিথ্যাচারের জবাব দিয়ে এর প্রকৃত ব্যাপারটা আমার পাঠক বন্ধুদের কাছে ক্লিয়ার করতে পেরেছি।

সত্ত্ব, তমঃ ও রজঃ গুন সম্পর্কে -"সত্ত্ব, তমঃ ও রজঃ গুন বলতে আসলে কী বোঝায় ?" শিরোনামে আমার আরও একটি প্রবন্ধ আছে, সেটা পড়লে এই বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাবেন বলে আমি মনে করি।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রী কৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment