Saturday, 18 July 2020

বলরামের পিতা কে ? আর মুহম্মদের পিতাই বা কে ?


বলরামের পিতা কে ? আর মুহম্মদের পিতাই বা কে ?

Farman ansari,

হিন্দুদের কাছে কোনো প্রশ্ন করার আগে, নিজের কাছে বা মুসলমানদের কাছে আগে প্রশ্ন কর। আর বলরামের পিতা কে, সেটা সন্ধান করার আগে, মুহম্মদের পিতা কে, সেটা আগে সন্ধান কর।

কারণ, মুহম্মদের কথিত পিতা আব্দুল্লাহর সাথে আমিনা এবং আব্দুল্লাহর পিতা মোতালেবের সাথে আমিনার চাচাতো বোন হালার একইদিনে বিয়ে হয়। বিয়ের ছয়মাস পর আব্দুল্লাহ মারা যায় এবং তার কিছুদিন পর নাকি মুহম্মদের জন্ম হয়, কিন্তু হাদিস মতে- হালার পুত্র হামজা, মুহম্মদের চেয়ে চার বছরের বড়; এটা কিভাবে সম্ভব ? হালার পুত্র হামজা যদি মুহম্মদের চেয়ে চার বছরের বড় হয়, তাহলে আমিনা ও আব্দুল্লাহর বিয়ের অন্তত পাঁচ বছর পর মুহম্মদের জন্ম, কিন্তু এটা সর্বজন স্বীকৃত যে আমিনার সাথে বিয়ের ছয়মাস পরেই আব্দুল্লাহ মারা গেছে। তাহলে তার মৃত্যুর অন্তত সাড়ে চার বছর পর জন্ম নেওয়া মুহম্মদ কিভাবে আব্দুল্লাহর পুত্র হয় ? প্রশ্ন থাকলো এই Farman ansari সহ সকল মুসলমানের কাছে।

এবার শোন, বলরামের পিতা কিভাবে বসুদেব ?

বসুদেবের দুই স্ত্রী- রোহিনী ও দেবকী। দেবকীর অষ্টম সন্তান কংসের মৃত্যুর কারণ হবে, এই দৈববাণী শুনে, কংস, দেবকী ও বসুদেবকে বন্দী করে রাখে, অন্যদিকে বসুদেবের অপর স্ত্রী রোহিনী, বসুদেবের বন্ধু নন্দের বাড়িতে আশ্রিত থাকে। সনাতন ধর্মে যোগমায়া বলে একটি চরিত্র আছে, ইনি বিষ্ণুর নারী শক্তি, যার মাধ্যমে বিষ্ণু নানা ধরণের অসম্ভব সম্ভব করে থাকেন। যেমন কৃষ্ণের জন্মের রাতে এই যোগমায়ার মাধ্যমেই বিষ্ণু বৃন্দাবনে ভয়ংকর রকমের ঝড় বৃষ্টি ঘটান, কংস সহ তার সমস্ত প্রহরীকে ঘুমে অচেতন রাখেন এবং কারাগারের সব দুর্ভেদ্য তালাকে খুলে দিয়ে সদ্যজাত কৃষ্ণকে নিয়ে, বসুদেবকে কারাগারের বের হতে সাহায্য করেন।

এই যোগমায়ার মাধ্যমেই বিষ্ণু, দেবকীর সপ্তম সন্তানকে, রোহিনীর গর্ভে স্থানান্তর করেন। ফলে কংস মনে করে দেবকীর সপ্তম গর্ভ নষ্ট হয়ে গেছে, এর ফলে বলরামের জন্ম কারাগারে হয় না এবং কংস তাকে হত্যা করতে পারে না। এটি করার উদ্দেশ্য হলো- শ্রীকৃষ্ণ তাঁর শিশু ও বাল্যকাল যে বৃন্দাবনে কাটাবে, এটি ছিলো বিষ্ণুর পূর্ব পরিকল্পনা; কিন্তু বাস্তবে বৃন্দাবনে কৃষ্ণের রক্তের সম্পর্কের কেউ ছিলো না, তাই শিশুকৃষ্ণের একজন সাপোর্ট হিসেবে বলরামকে, রোহিনীর মাধ্যমে বৃন্দাবনে জন্ম দেওয়া হয়; বাস্তবেও বলরাম, কৃষ্ণের শিশু ও বাল্যকালে নানাভাবে তাকে সাপোর্ট দিয়েছিলো, যদিও তার কোনো প্রয়োজন ছিলো না; কারণ, কৃষ্ণ নিজেই ছিলো স্বয়ং সম্পূর্ণ, তারপরও মানবরূপে তাঁর জন্ম হওয়ায় এবং লোকশিক্ষার জন্য মানুষের নানা সুখ দুঃখ তাঁকে শিকার করতে হয়েছিলো, যাতে তাঁর পাশে সব সময় ছিলেন বলরাম।

সনাতন ধর্মীয় কাহিনীতে মানুষের জন্য নানা ধরণের শিক্ষা এবং দিকনির্দেশনা রয়েছে। যেমন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ, সঞ্জয়কে সরাসরি দেখানোর মাধ্যমেই বিজ্ঞানীদের জন্য এই ইঙ্গিত ছিলো যে- যত দূরেই কোনো ঘটনা ঘটুক, সেই ঘটনা সরাসরি একসময় দেখা যাবে, যার বাস্তব রূপ হচ্ছে বর্তমানের লাইভ টিভি সম্প্রচার। একইভাবে দেবকীর গর্ভ, রোহিনীতে স্থানান্তরের মাধ্যমে বিজ্ঞানীদের জন্য এই ইঙ্গিত ছিলো যে একটা সময় প্রয়োজন অনুসারে মানুষ গর্ভকেও স্থানান্তর করতে পারবে, একটু এদিক করে যার বর্তমান রূপ হচ্ছে সারোগেসি পদ্ধতি, যে পদ্ধতিতে কোনো দম্পতির শুক্রানু ও ডিম্বানুকে সংগ্রহ করে তা ল্যাবে ভ্রুণে রুপান্তরিত করার পর ভিন্ন এক মহিলার গর্ভে স্থানান্তর করা হয়, যে মহিলা ঐ সন্তানের জন্ম দেয়।

তাই বসুদেব ও দেবকীর সন্তান বলরামকে রোহিনীর জন্ম দেওয়া আসলে সারোগেসিরই একটা রূপ। সারোগেসিতে কোনো দম্পতির ডিম্বানু ও শুক্রানুকে কালেকশন করে তা মানবদেহের বাইরে ল্যাবে ভ্রূণে রূপান্তরিত করা হয় এবং সেই ভ্রুণ অন্য এক মহিলার গর্ভে স্থানান্তরিত করা হয়, এটা তখনই করতে হয়, যখন কোনো মহিলা কোনো কারণে তার গর্ভে সন্তানের জন্ম দিতে বা সন্তানধারণে সক্ষম না হয়। কিন্তু দেবকীর যেহেতু ঐ সমস্যা ছিলো না, এর আগে সে পরপর ৬ টি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলো, তাই বলরামের বেলায় ভ্রুণ তৈরির কাজটি দেবকীর গর্ভেই সম্পন্ন হয়েছিলো, কংসের হাত থেকে রক্ষার অজুহাতে যাকে রোহিনীর গর্ভে স্থানান্তর করা হয় মাত্র।

তাই সনাতন ধর্মের কাহিনীগুলো নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার আগে ভালো করে বার বার নিজেকেই প্রশ্ন করা দরকার যে এই প্রশ্ন তোলা ঠিক হচ্ছে কি না বা এই প্রশ্ন তোলা অযৌক্তিক হবে কি না ? কারণ, সনাতন ধর্মের কোনো কাহিনীই অযৌক্তিক নয়, যেটাকে আপনার অযৌক্তিক মনে হবে, বুঝবেন সেই ব্যাপারে আপনার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু মুহম্মদের পিতা সম্পর্কে আমি যে প্রশ্ন তুলেছি, সেটার কোনো যুক্তিযুক্ত জবাব কি কোনো মুসলমানের কাছে আছে ? যদি থাকে, তারা যেন তার জবাব দিয়ে আমার মুখ বন্ধ রাখে।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
------------
বি.দ্র # হামজা যে মুহম্মদের চেয়ে চার বছরের বড় ছিলো, তার রেফারেন্স- Muhammad ibn Saad. Kitab al-Tabaqat al-Kabair vol. 3. Translated by Bewley, A. (2013). The Companions of Badr. London: Ta-Ha Publishers.

No comments:

Post a Comment