হিজড়া সন্তানের জন্ম প্রসঙ্গে ইসলাম ও সনাতন ধর্মের ব্যাখ্যা :
নপুংসক বা হিজড়ারা কিভাবে জন্ম নেয়, সে সম্পর্কে ইসলামের কী ব্যাখ্যা, সেটা আপনার ফটোপোস্টে দেখতে পাচ্ছেন; এখানে হিজড়া সন্তানের জন্ম সম্পর্কে দুই ধরণের কথা বলা হয়েছে। প্রথমে বলা হয়েছে- যৌনকর্মের শুরুতে পুরুষ যদি বিসমিল্লাহ না বলে, তাহলে তার পুরুষাঙ্গের ছিদ্রপথে শয়তান আশ্রয় গ্রহণ করে এবং সেই যৌনক্রিয়ার ফলে যদি কোনো সন্তান গর্ভস্থ হয়, সে হিজড়া হয়। দ্বিতীয় ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- নারীর ঋতুস্রাব চলাকালীন সময় যদি যৌনক্রিয়া করা হয় এবং সেই সময় যদি কোনো সন্তান গর্ভস্থ হয়, তাহলে সেই সন্তান হিজড়া হয়।
এই দুটি ব্যাখ্যা ই যে সম্পূর্ণরূপে মূর্খের প্রলাপ এবং হাস্যকার, সেটা আমার আলোচনা শেষে আপনারা কমপ্লিটলি বুঝতে পারবেন।
ইসলাম মতে যৌনক্রিয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলার আরেকটি ফজিলত আছে, আর সেটা হলো- যৌনক্রিয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বললে নাকি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। দেখে নিন সেই হাদিস-
"যৌনকর্মের সময় বিসিমিল্লাহ (আল্লাহর ইচ্ছা) বললেই জন্ম নেবে পুত্র সন্তান – (Sahih Bukhari 4:52:74)
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- যৌন কর্মের সময় বিসমিল্লাহ বললেই যদি পুত্রসন্তান জন্ম নেয়, তাহলে মুসলিম সমাজের সকল মেয়ে কি বিসমিল্লাহ না বলার ফল ? বা তারা কি আল্লার ইচ্ছায় সৃষ্টি নয় ? পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বাস্তবতার কারণেই কন্যার চেয়ে পুত্রসন্তানকে দামী বলে মনে করা হয়; একারণেই বাংলার প্রায় সব দম্পতি চায় তাদের সন্তান পুত্র হোক, মুসলমানরাও এর ব্যতিক্রম নয়, এই প্রেক্ষাপটে ইসলামে যেখানে এত সহজে পুত্র জন্মানোর বিধান আছে, সেখানে মুসলমানরা কি তা কাজে লাগায় না ? যদি কাজেই লাগায়, তাহলে মুসলিম সমাজে এত কন্যা জন্মায় কিভাবে ? অন্যান্য সমাজের মতো মুসলিম সমাজেও পুত্র কন্যা জন্মানোর হার প্রায় সমান, যা প্রকৃতির বিধান, এ থেকে এটা প্রমাণিত যে যৌনকর্মের শুরুতে বিসমিল্লাহ বললেই পুত্র সন্তান জন্মাবে, এটা আসলে একটা বোগাস এবং হাস্যকর কথা।
ইসলাম মতে যৌনক্রিয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ না বললে যে শুধু পুত্র সন্তানই জন্ম নেয় না, তা ই নয়, সেই সন্তান হিজড়াও হয়। পৃথিবীতে মুসলমানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২০% এর মতো, এই ২০% মুসলমানের মধ্যেও ৯০% সঠিকভাবে ইসলাম পালন করে না, ফলে তারা যে যৌনক্রিয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলে না এটা তো স্বাভাবিক; ফলে পৃথিবীতে ৯৮% মানুষ যৌন কর্মের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলে না, তাদের ঘরে কি পুত্রসন্তান জন্ম নিচ্ছে না ? খ্রিষ্টান, ইহুদিদের কথা না হয় বাদই দিলাম, হিন্দু আর বৌদ্ধরা তো আর যৌন কর্মের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলে না, ফলে তাদের ঘরে কি পুত্র সন্তান জন্ম নেয় নি বা নিচ্ছে না্ বা তাদের সব সন্তান কি হিজড়া হচ্ছে ? হচ্ছে না। ফলে যৌনকর্মের শুরুতে বিসমিল্লাহ বললে পুত্র সন্তা্ন জন্ম নেবে, এটা প্রকৃতির কোনো সূত্র নয়, এটা মূর্খ মুহম্মদের একটি মনগড়া কথা মাত্র।
হিজড়া সন্তান জন্মানোর দ্বিতীয় ইসলামি ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে নারীদের ঋতুস্রাব চলাকালীন যদি পুরুষ তার সাথে যৌনক্রিয়া করে, তাহলেও সেই সন্তান হিজড়া হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে যার ন্যূনতম জ্ঞান আছে, তার পক্ষে কি এধরণের কথা বলা সম্ভব ? সম্ভব নয়। ঋতুস্রাব, নারীগর্ভে সন্তান জন্মানোর প্রসেসের কোনো শুরু নয়, শেষ। অর্থাৎ প্রতিমাসের একটি নির্দষ্ট সময় ধরে নারী গর্ভে ডিম্বানু প্রস্তুত হয়ে থাকে শুক্রানুকে গ্রহন করার আশায়, যদি সেই ডিম্বানু, শুক্রানু না পায়, তাহলে সেটা নষ্ট হয়ে যায় এবং তা ভেঙ্গেচুরে যোনী দিয়ে বের হয়ে আসে, এটাই ঋতুস্রাব। নারী গর্ভে এই ডিম্বাণু প্রস্তুত থাকতে পারে ঋতুস্রাব শুরুর ৮ম দিন থেকে ২১ তম দিন পর্যন্ত সময়ের কোনো এক সময়ে ৩৬ ঘণ্টা ব্যাপী; ফলে এই ৮ম দিন থেকে ২১তম দিনের বাইরে যেকোনো সময় অরক্ষিত যৌনমিলন করা হলেও গর্ভসঞ্চারের কোনো সম্ভাবনায় নেই, সেক্ষেত্রে ঋতুস্রাব চলাকালীন যৌনমিলনের ফলে সন্তান গর্ভে আসা এবং সেই সন্তান হিজড়া হওয়া এমন তথ্য ইসলামি বিজ্ঞানেই থাকা সম্ভব, যে ইসলামি বিজ্ঞানের অপর নাম মূর্খতা।
হিজড়া সন্তান জন্মানো সম্পর্কে মুহম্মদের বাণীগুলো যে কী পরিমাণ অবৈজ্ঞানিক, এতক্ষণে আশা করছি সেটা বুঝতে পেরেছেন, এবার দেখুন সনাতন ধর্মে হিজড়া সন্তান জন্মানোর বিষয়ে কী বলা হয়েছে।
জ্যোতিষ শাস্ত্র মুনি ঋষিদের দ্বারা রচিত, সুতরাং জ্যোতিষ শাস্ত্র সনাতন ধর্মের অংশ, সেই জ্যোতিষ শাস্ত্রে পুত্র, কন্যা বা হিজড়া সন্তান কিভাবে জন্ম নেয়, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে।
ভারতীয় জ্যোতিষে সৌরজগতের ৯টি সদস্যের কথা বলা হয়েছে, বলার সুবিধার্থে জটিলতা এড়াতে যাদেরকে সাধারণভাবে গ্রহ বলা হয়। কোনো মানুষের জন্মসময়ে এই ৯টি গ্রহ সৌরজগতে যেভাবে অবস্থান করে, সেটাই সেই মানুষের জন্মকোষ্ঠী বা হরস্কোপ; এই ৯টি গ্রহ, মানুষের- কোষ্ঠী বা কুষ্ঠি বা হরস্কোপের ১২টি ঘরে বিভিন্নভাবে অবস্থান করে মানুষের চরিত্র, স্বভাব ও ভাগ্য নির্ধারণ করে। যেমন সূর্য বা রবি যদি কোনো মানুষের হরস্কোপের ১ নং ঘরে থাকে, তার চরিত্র হবে একরকম; যদি ২ নং ঘরে থাকে চরিত্র হবে একরকম; যদি ৩ নং ঘরে থাকে, তার চরিত্র হবে আরেকরকম; এভাবে ১২ ঘরে সূর্যের অবস্থানে মানুষের চরিত্র হবে ১২ রকম, একই বিষয় প্রযোজ্য অন্যান্য গ্রহের ক্ষেত্রে। এই গ্রহগুলো নানা বিষয়ের কারক, সেই আলোচনায় যাবো না, এই প্রবন্ধের বিষয় যেহেতু হিজড়া সন্তান, সেহেতু সেই দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখার চেষ্টা করবো।
গ্রহগুলোর মধ্যে লিঙ্গগত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে কয়েকটি গ্রহ আছে পুরুষ স্বভাবের, কয়েকটি আছে নারী স্বভাবের এবং কয়েকটি ক্লীব স্বভাবের। হরস্কোপের ৫ম ঘর অনেক কিছুর মধ্যে মানুষের সন্তানের লিঙ্গ এবং বৈশিষ্ট্যকে নির্ধারণ করে, সুতরাং কোনো মানুষের ৫ম ঘরে যদি রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতি থাকে, সেই মানুষের পুত্র সন্তান জন্মাবে; কারণ এই গ্রহগুলো পুরুষালী স্বভাবের। একইভাবে ৫ম ঘরে যদি শুক্র এবং চন্দ্র থাকে, তার কন্যা সন্তান জন্মাবে; কারণ, এগুলো নারী স্বভাবের গ্রহ; আবার ৫ম ঘরে যদি শনি এবং বুধ গ্রহ থাকে, তাহলে সেই মানুষের যে সন্তান জন্ম নেবে তার মধ্যে লিঙ্গগত সমস্যা থাকবে অর্থাত তারা নপুংসক বা হিজড়া হবে; কারণ, শনি এবং বুধ ক্লীব গ্রহ। এভাবে হরস্কোপের ৫ম ঘরে গ্রহের অবস্থান বলে দেয়, আসলে তার কোনো ধরণের সন্তান জন্মাতে যাচ্ছে।
এরপর যেদিন স্বামী স্ত্রী তাদের যৌনকর্মের মাধ্যমে মাতৃগর্ভে সন্তানের সূচনা করছে, সেই দিনের উপরও নির্ভর করে সন্তানের লিঙ্গ, যেমন- রবি, মঙ্গল এবং বৃহস্পতিবারে যৌনকর্মের ফলে পুত্র সন্তানের জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, শুক্র এবং সোমবারে যৌনকর্মের ফলে কন্যা সন্তান এবং শনি এবং বুধবারে যৌনকর্মের ফলে নপুংসক সন্তান জন্মানোর সম্ভাবনা বেশি।
হরস্কোপের ৫ম ঘরে গ্রহের অবস্থান, যৌনকর্মের সাপ্তাহিক বার ছাড়াও সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সূর্যমতে কোন রাশি চলার সময় যৌনকর্ম করা হচ্ছে সেটার উপরও, যেমন- ১২টি রাশির মধ্যে ৬টি আছে পুরুষ রাশি এবং ৬টি আছে নারী রাশি। কোনো দম্পতির উভয়ের হরস্কোপের ৫ম ঘরে যদি এক বা একাধিক পুরুষ গ্রহ থাকে এবং পুরুষ রাশির সময়ে যদি তারা পুরুষ দিনে যৌনকর্ম করে, তাদের পুত্র সন্তান জন্মাবে মাস্ট; একইভাবে কোনো দম্পতির উভয়ের হরস্কোপের ৫ম ঘরে যদি নারী গ্রহ থাকে এবং তারা নারী রাশির সময়ে নারী দিনে যৌনকর্ম করে তারা কন্যা সন্তানের জন্ম দেবে। একজন আদর্শ নারী জন্ম দেওয়ার জন্য- হরস্কোপের ৫ম ঘরে নারী গ্রহ থাকা এবং নারী রাশি ও নারী দিনে যৌনকর্ম করা যেমন আবশ্যক, তেমনি আদর্শ পুত্র সন্তানের জন্ম দিতেও পুরুষ রাশি, পুরুষ দিন এবং হরস্কোপে পুরুষ গ্রহের কম্বিনেশন প্রয়োজন। যদি এগুলোর ব্যতিক্রম ঘটে তাহলেই জন্ম হবে নারী স্বভাবের পুরুষ বা পুরুষ স্বভাবের নারীর। আর যদি স্বামী স্ত্রী উভয়ের হরস্কোপের ৫ম ঘরে কোনো ভাবে শনি বা বুধ গ্রহের প্রভাব থাকে এবং তারা যদি শনি বা বুধবারে যৌনকর্ম করে সন্তানের জন্ম দেয়, তাহলে সেই সন্তানের লিঙ্গগত সমস্যা থাকবে, অর্থাৎ সেই সন্তান নপুংসক বা হিজড়া হবে।
এই হলো সনাতন ধর্মে হিজড়া সন্তান জন্মানোর ব্যাখ্যা, যা যথেষ্ট জটিল এবং যা সম্পূর্ণ বাস্তব। এর বিপরীতে ইসলামের হিজড়া সন্তান জন্মানোর ব্যাখ্যাটাকে স্মরণ করুন, মুহম্মদের মূর্খামিকে ভাবলে আপনার শুধু হাসিই পাবে।
ইসলাম- এই জগতের প্রায় সবকিছুকেই খুব সহজভাবে ব্যাখ্যা করার অপচেষ্টা করে, যেগুলো কিছু মূর্খ, বিনা প্রশ্নে মেনেও নেয় বা বিশ্বাসও করে, এরাই মুসলমান নামে পরিচিত; কিন্তু জগতের কোনো কিছুই এত সহজ সরল নয়, জগত বড়ই জটিল, আর এই জটিল জগতকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এবং সমগ্র জগতকে ধারণ করতে গিয়ে সনাতন ধর্মও হয়ে উঠেছে জটিল, তাই জগতের কোনো কিছুরই এককথায় ব্যাখ্যা দেওয়া সনাতন ধর্মমতে প্রায়ই সম্ভব হয় না; আর এই সুযোগ নিয়েছে এবং নিচ্ছে সনাতন ধর্ম বিরোধী শক্তিগুলো, তারা সনাতন ধর্মের প্রচার দুর্বলতার ম্যাকানিজমকে হাতিয়ার করে হিন্দু ছেলে মেয়েদের মাথায় অন্যান্য ব্যক্তিগত মতবাদকে গুজে দিচ্ছে, যার ফলে হিন্দু ছেলে মেয়েরা বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং সনাতন ধর্ম ত্যাগ করছে। এই ঘাটতি পুরণে হিন্দু সমাজকে জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ নির্মানে এগিয়ে আসতে হবে, আর এজন্য শুধু কীর্তনের মধ্যে হিন্দুদের ধর্মাচরণকে সীমাবদ্ধ না রেখে আলোচনাভিত্তিক ধর্মসভার আয়োজন করতে হবে, তাহলেই রক্ষা পাবে হিন্দুসমাজ এবং হিন্দুধর্ম এবং কালের অন্ত পর্যন্ত উচ্চারিত হবে-
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
No comments:
Post a Comment