Friday, 24 July 2020

শ্রাদ্ধের কি কোন ভূমিকা আছে ?


#Shib_Shankar_Dhar,

শ্রাদ্ধের অবশ্যই ভিত্তি আছে, এ ব্যাপারে সনাতন ধর্মের অন্যান্য শাস্ত্রগ্রন্থে কী বলা আছে, সেসব বিষয়ে অত ডিটেইলসে না গিয়ে সনাতন ধর্মের সর্বোচ্চ গ্রন্থ গীতা, সেই গীতাতে কী বলা হয়েছে, শুধু সেই বিষয়টিই এখানে আলোচনা করবো -

গীতার ১ম অধ্যায়ের ৩৯, ৪০ ও ৪১ নং শ্লোকে বলা হয়েছে,

"কূলক্ষয় হইলে সনাতন কূলধর্ম নষ্ট হয়। ধর্ম নষ্ট হইলে অধর্ম সমস্ত কূলকেই দূষিত করিয়া থাকে। কূল অধর্মগ্রস্ত হইলে কূলস্ত্রীগণ ভ্রষ্টা হয়। ভ্রষ্টা স্ত্রীগণ হইতে বর্ণসঙ্কর জন্মগ্রহন করে। বর্ণসঙ্কর কূলনাশকারীদের এবং কূলের নরকের কারণ হয়। শ্রাদ্ধ তর্পনাদি লোপ পাওয়ায় পিতৃপুরুষগণও নরকে পতিত হয়।"

এর মধ্যে ৪১ নং শ্লোকে স্পষ্ট বলা হয়েছে- শ্রাদ্ধ তর্পনাদি লোপ পাওয়ায় পিতৃপুরুষগণ নরকে পতিত হয়।

পূর্বপুরুষদের আত্মার সদগতির জন্য শ্রাদ্ধ যে গুরুত্বপূর্ণ, সে ব্যাপারে গীতা মাহাত্ম্যের ৬৩ এবং ৬৪ নং শ্লোকও উল্লেখ করা যায়, যেখানে বলা হয়েছে-

"পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধে যিনি গীতা পাঠ করেন, তাঁহার পূর্বপুরুষগণ অতীব সন্তুষ্ট হইয়া নরক হইতে উদ্ধার পাইয়া স্বর্গে গমন করেন। গীতা পাঠের ফলে পূর্বপুরুষগণ সন্তুষ্ট হন এবং শ্রাদ্ধে তৃপ্তিলাভ করিয়া পুত্রগণকে আশীর্বাদ করিতে করিতে পিতৃলোকে চলিয়া যান।"

সুতরাং সনাতন ধর্মের সর্বোচ্চ গ্রন্থ গীতার ভাষ্যমতে- পূর্বপুরুষদের আত্মার সদগতির জন্য তাদের উদ্দেশ্যে পিণ্ড দিতে হবে এবং শ্রাদ্ধ করতে হবে।

পৃথিবীতে সন্তান জন্মদানের উদ্দেশ্যই হলো নিজের আত্মার সদগতির জন্য পিণ্ডপ্রাপ্তি ও শ্রাদ্ধ করার জন্য লোক পৃথিবীতে রেখে যাওয়া। পিণ্ডদান ও শ্রাদ্ধ করার জন্য যদি কোনো সন্তান না থাকে সেই ব্যক্তি স্বর্গে স্থান পায় না, সরাসরি নরকে যায়; এজন্যই মহাভারতে বলা হয়েছে- নিঃসন্তানের উপবাস, দান সবই ব্যর্থ, তার স্বর্গপ্রাপ্তিও হয় না।

পিতা মাতার মাধ্যমে আমরা এই পৃথিবীতে এসেছি, পিতা মাতা সব সময়ই আমাদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল চান, তাই সন্তান হিসেবে আমাদেরও উচিত পিতা মাতার আত্মার যাতে সদগতি হয় তার ব্যবস্থা করা, সেই ব্যবস্থারই প্রথম ধাপ হলো পিতা মাতার মৃত্যুর পর তাদের উদ্দেশ্যে পিণ্ডদান ও শ্রাদ্ধ করা।

যারা সনাতনী হিন্দু, তারা সবাই এই নিয়ম পালন করে, পিতা মাতার মৃত্যুর পর পিণ্ডদান করে এবং নির্দিষ্ট দিনে শ্রাদ্ধ করে লোকজনকে অন্ন জল প্রদান করে। কিন্তু হিন্দু সমাজের অন্তর্গত বৈষ্ণব সমাজের সদস্যরা পিতা মাতার মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধ করে না, তারা চৈতন্যদেবকে মহাপ্রভু মনে ক'রে, তার নামে ভোগ দিয়ে, লোকজনকে খাইয়ে যাবতীয় দায় দায়িত্ব সারে; যার কোনো শাস্ত্রীয় স্বীকৃতি বা ভিত্তি নেই। অথচ বৈষ্ণব মতবাদের প্রবর্তক চৈতন্যদেব নিজে তার পিতার মৃত্যুর পর বৈদিক মতে শ্রাদ্ধ করেছিলেন এবং গয়ায় গিয়ে পিণ্ড দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রথা বর্তমান বৈষ্ণব সমাজে নেই। শ্রাদ্ধ ও তর্পন না করলে যেখানে পূর্বপুরুষদের আত্মার সদগতি হয় না, তারা নরকে পতিত হয়, সেখানে বৈষ্ণব সমাজ, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার নামে চৈতন্যদেবের উদ্দেশ্যে ভোগ দিয়ে কি নিজেদের বা নিজেদের পূর্বপুরুষদের আত্মার কোনো সদগতি করতে পারবে ?

এই প্রসঙ্গে আমার প্রশ্ন- গীতায় যেখানে বলা হয়েছে যে, শাদ্ধ না করলে পূর্বপুরুষদের আত্মার সদগতি হয় না, তারা নরকে পতিত হয়, সেখানে শ্রাদ্ধ না করা বৈষ্ণব সমাজের সদস্যদের আত্মার সদগতি কী ?

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment