Friday, 26 June 2020

বেদ সম্পর্কে মুসলমানদের মিথ্যাচারের জবাব- 4


বেদের পৃথিবী স্থির নয়, স্থির কোরানের পৃথিবী :

বেহেশতি ৭২ হুরের লোভে ইসলামের দোষ-ত্রুটি সম্বন্ধে অন্ধ মুসলমানদের একটি দাবী হলো বেদে নাকি বলা হয়েছে পৃথিবী স্থির! মুসলমানদের দাবী করা এরকম কয়েকটি রেফারেন্স নিয়েই করবো আজকের এই আলোচনা, তাই কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।

ইসতিয়াক নামের এই মুসলমানের প্রথম দাবী হলো অথর্ববেদের ৬/৪৪/১ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে, "পৃথিবী স্থির ও নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে", অগ্নিবীর কর্তৃক প্রকাশিত ড. তুলসীরাম দাসের বেদ থেকে এই মন্ত্র এবং তার অর্থের একটি স্ন্যাপশট এই প্রবন্ধের সাথে যুক্ত করে দিয়েছি, নিশ্চয় সেটা দেখেছেন, তারপরও এখানে আমি সেই ইংরেজি এবং তার বাংলাটা করে দিচ্ছি, দেখুন, সেই মন্ত্রে আসলেই কী বলা আছে-

"The solar region is firm and undisturbed it stands. The earth stands firm and still, undisturbed. This entire cosmos is firm and undisturbed. The high standing trees, dreaming and sleeping, stand still. Let this malady too stand still, it must not aggravate."

এর বাংলা হলো- "সৌরজগত তার নিজ অবস্থানে দৃঢ় এবং শৃঙ্খলিত। পৃথিবী তার নিজ অবস্থানে দৃঢ়, অবিরত এবং শৃঙ্খলিত। সমগ্র মহাবিশ্ব দৃঢ় এবং শৃঙ্খলিত। দণ্ডায়মান উঁচু গাছগুলি ঘুমায় এবং স্বপ্ন দেখে, এগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দাও, এগুলোকে অবশ্যই উত্যক্ত করবে না।"

এখানে Firm শব্দের অর্থ 'দৃঢ়' এবং এই 'দৃঢ়' শব্দ থেকেই মুসলমানরা ধরে নিয়েছে যে পৃথিবী স্থির এবং নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এখানে 'দৃঢ়' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে সুনিয়ন্ত্রিত ও শৃঙ্খলিত অর্থে, যার মানে পৃথিবী একটি নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ এবং এই একই কথা বলা হয়েছে আমাদের সৌরজগত এবং মহাবিশ্বের ক্ষেত্রেও- যে তারা দৃঢ় এবং শৃঙ্খলিত।

সুতরাং পৃথিবীর স্থির রাখতে মুসলমানদের প্রথম অস্ত্র যে ভোঁতা তা খুব সহজেই প্রমাণ হয়ে গেলো। এবার দেখা যাক মুসলমানদের দ্বিতীয় অস্ত্রের অবস্থা কী ?

বেদের মাধ্যমে পৃথিবী স্থির প্রমাণ করতে এই মুসলমানের পরের দাবী হলো- অথর্ববেদের ৬/৭৭/১ মন্ত্রেও নাকি বলা আছে যে পৃথিবী স্থির, দেখা যাক এই মন্ত্রের অনুবাদে তুলসীরাম দাস কী বলেছেন,

"The sun is stable in its own place. The earth is stable in its own place. This entire dynamic universe is stable in its own state. The mountains abide in their own places. I have stabilised my 'horses', i.e., sense and mind and panic energies, in their own places and functions."

মোটামুটি এর বাংলা অর্থ হলো- সূর্য তার নিজের জায়গায় সুস্থির। পৃথিবী তার নিজের স্থানে সুস্থির। সমগ্র মহাবিশ্ব সুস্থির তার নিজ ক্ষেত্রে। পর্বতগুলো থাকে তার নিজের জায়গায়। আমি আমার জ্ঞান, মন এবং আতঙ্ক সৃষ্টিকারী শক্তিরূপ ঘোড়াগুলোকে স্থির রেখেছি তাদের নিজের জায়গায় এবং কাজে।

-এখানে খেয়াল করুন, পৃথিবীর বেলায় ব্যবহার করা হয়েছে The earth is stable in its own place বাক্যটি; একইভাবে সূর্যের বেলায় ব্যবহার করা হয়েছে "The sun is stable in its own place বাক্যটি। আপাতদৃষ্টিতে পৃথিবীকে না হয় স্থির বলে মনে হয়, কিন্তু সূর্যকে কি স্থির বলে মনে হয় ? হয় না। আপাতদৃষ্টিতে সূর্যকে গতিশীল বলে মনে হয়। তাহলে পৃথিবী ও সূর্যের বেলায় একই শব্দ stable ব্যবহার করে আসলে পৃথিবীকে স্থির বলে বলা হয় নি, বলা হয়েছে সুনিয়ন্ত্রিত, তার মানে সূর্য যেমন একটি নিয়মের মধ্যে চলে, তেমনি পৃথিবীও একটি নিয়মের মাধ্যমে আবর্তন করে। শুধু তাই নয়, খেয়াল করুন, মহাবিশ্বের বর্ণনায় বলা হয়েছে, This entire dynamic universe is stable in its own state. এখানে শুরুতেই বলে দেওয়া হয়েছে Dynamic Universe, মানে গতিশীল মহাবিশ্ব এবং গতিশীল মহাবিশ্বের বর্ণনাতেও ব্যবহার করা হয়েছে Stable শব্দটি, তার মানে stable দ্বারা কোনোভাবেই "স্থির" কোনো কিছুকে বোঝানো হয় নি।

তার মানে পৃথিবীকে স্থির প্রমাণ করতে মুসলমানদের এই অস্ত্রও যে ভোঁতা তা প্রমাণিত। এবার দেখা যাক এই মুসলমানের পরের দাবীর অবস্থাটা কী ?

এই মুসলমানের পরের দাবী হলো ঋগ্বেদের ১০/৪৯ নং মন্ত্রেও নাকি বলা আছে, "সবিতা পৃথিবীকে স্থির রেখেছেন খুঁটি দ্বারা", যার ইংরেজি অনুবাদ সে লিখেছে, "Savitar has fixed the earth with support" দেখে নিন সেই মন্ত্রটি-

"সবিতা যন্ত্রৈঃ পৃথিবীমরম্ণামদস্কম্ভণে সবিতা দ্যামদৃংহৎ"

ড. তুলসীরাম দাস এই মন্ত্রের অনুবাদে ইংরেজিতে লিখেছেন-

"Savita, lord creator, place the earth in orbit, and Savita places the region of light, in columnless place by the force of cosmic gravitation."

এর বাংলা হলো- সবিতা, পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন তার কক্ষপথে এবং স্থাপন করেছেন আলোর রাজ্য স্তম্ভ বা খুঁটিবিহীন ভাবে মহাকর্ষ শক্তির দ্বারা।

মুসলমানদের দাবী মতো এখানে কী বলা আছে যে, সবিতা পৃথিবীকে স্থির রেখেছে খুঁটি দ্বারা ? বরং এর উল্টোটাই তো বলা আছে, খুঁটিবিহীনভাবে তিনি আলোরজগত এবং পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন মহাকর্ষ শক্তির দ্বারা।

যা হোক, পৃথিবীকে বেদের দ্বারা স্থির রাখতে এই মুসলমানের শেষ আবর্জনা হলো, ঋগ্বেদের ১৮/৮৯ এবং সামবেদের ৪/১/৫ এ নাকি বলা আছে যে- দেব ইন্দ্র পৃথিবীকে স্থির রেখেছেন!

এই রেফারেন্সে আসলেই কী বলা আছে, সেটা আপনাদেরকে দেখানোর কোনো ক্ষমতা আমার নেই; কেননা, ঋগ্বেদের ১৮/৮৯ বলে কোনো রেফারেন্স ই হয় না; কারণ, ঋগ্বেদের মোট মণ্ডল সংখ্যা ১০টি, তাহলে ঋগ্বেদে ১৮ নং মণ্ডল আসবে কোথা থেকে ? একই কথা প্রযোজ্য সামবেদের রেফারেন্সের ক্ষেত্রেও; কারণ, সামবেদের রেফারেন্সগুলো হয় খুবই সরল, সামবেদে মোট ১৮৭৫টি সাম বা গান বা মন্ত্র আছে, তাই সামবেদের শেষ মন্ত্রের রেফারেন্স হবে এই রকম-(সামবেদ, ১৮৭৫), তাই সামবেদের রেফারেন্স ৪/১/৫ হওয়া কখনোই সম্ভব নয়।

মিথ্যা বলে অমুসলিমদেরকে ধোকা দিয়ে ইসলামের দিকে টানা মুসলমানদের জন্য সোয়াব বা পুন্যের কাজ, একে বলে তাকিয়া; মিথ্যা হলো ইসলাম প্রচারের একটি অংশ, একবার ভাবুন ইসলাম কত মহান (!) ব্যাপার, যার ভিত্তি হচ্ছে মিথ্যা। তাই মুসলমানরা ইসলাম প্রচারের অংশ হিসেবে এই ধরণের ভুল-ভাল রেফারেন্স দিয়ে বা বেদ সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার করে মুসলমানরা হিন্দুদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে বা করছে; কিন্তু চিন্তা নেই, আমি তো আছি, সত্য যতই গভীরে থাকুক, তাকে পাতাল খুঁড়ে হলেও বের করে আমি আনবোই এবং ধর্ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিয়ে বা জানিয়ে সেই বিষয় সম্পর্কে হিন্দুদের হীনম্মন্যতা দূর আমি করবোই।

যা হোক, এবার দেখুন, বেদের ভুল-ভাল রেফারেন্স দিয়ে মুসলমানরা পৃথিবীকে স্থির রাখতে কেনো এত মরিয়া ?

কোরানের কয়েকটি আয়াত অনুযায়ী পৃথিবী স্থির, তাই বেদের মাধ্যমে পৃথিবীকে স্থির করতে না পারলে তো মুসলমানদের প্রেস্টিজ থাকছে না, তাই তারা মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে বেদের মাধ্যমে পৃথিবীকে স্থির প্রমাণ করার; কিন্তু যা মিথ্যা, তা কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব, যেখানে প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে ভাইরাস মারতে এ্যান্টিভাইরাসের জন্ম হবেই। জাকির নায়েক এবং তার অনুসারীরা হচ্ছে ভাইরাস, এই ভাইরাসকে দমন করতেই ঈশ্বর আমাকে এ্যান্টিভাইরাস রূপে তৈরি করেছেন এবং আমি সেভাবেই আমার কাজ করে যাচ্ছি।

একটু আগেই বলেছি কোরান মতে পৃথিবী স্থির, এবার তার প্রমাণ দিচ্ছি-

কোরানের ৭৮/৭ নং আয়াতে বলা আছে,

"পাহাড়-পর্বতসমূহকে কীলক স্বরূপ গেড়ে দিয়েছি।"

এর কারণ কী ? কী কারণে পাহাড় পর্বতকে আল্লার কীলক স্বরূপ ব্যবহার করতে হবে ?

এর ইসলামিক কারণ হলো- আল্লা যখন পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলো, তখন পৃথিবী নাকি কাঁপছিলো, তাই তিনি কোরানের ২১/৩১ নং আয়াতে বলেছেন,

"আর আমি যমীনে পাহাড় খাড়া করে দিয়েছি, যেন তা তোমাদেরকে নিয়ে কেঁপে ঢলে না পড়ে।"
এর মানে হলো আল্লা পাহাড় পর্বতকে পৃথিবীর উপরে কীলক স্বরূপ পুঁতে দিয়ে পৃথিবীকে স্থির করে দিয়েছেন মানুষের বসবাসের সুবিধার জন্য।

উপরে কোরানের দুটি আয়াতে যা বলা হয়েছে, সেই কথাগুলোই আবার বলা হয়েছে নিচের এই দুটি আয়াতে, দেখুন-

"পর্বতমালা দেখো না, সেগুলোকে কিভাবে শক্ত করে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে ?"- (কোরান, ৮৮/১৯)

এবং

"তিনি যমীনে পাহাড়সমূহ গেড়ে দিয়েছেন যেন যমীন তোমাদেরকে নিয়ে হেলতে দুলতে না পারে।"- (কোরান, ১৬/১৫)

উপরের এই চারটি আয়াত মতে কোরানের পৃথিবী যে স্থির তাতে কোনো সন্দেহ নেই; এছাড়াও কোরানের পৃথিবী যে স্থির, তার প্রমাণ আছে নিচের এই দুটি আয়াতে, আগে দেখে নিন সেগুলো-

"সে সর্বপ্রথম পশ্চিমের দিকে এক অভিযান চালাবার আয়োজন করে। যখন সে সূর্যের সীমা পর্যন্ত পৌঁছে গেলো, তখন সে সূর্যকে এক কালো পানিতে ডুবে যেতে দেখতে পেলো।"- (কোরান, ১৮/৮৫, ৮৬)

এবং

"পরে সে এক অভিযানের আয়োজন করে, এমন কি সে সূর্যোদয়ের স্থানে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে সে দেখতে পেলো সূর্য এমন এক জাতির লোকের উপর উদয় হচ্ছে, যাদের জন্য সূর্যের তাপ থেকে বাঁচার কোনো ব্যবস্থা আমি করে দিই নি।"- (কোরান- ১৮/৮৯, ৯০)

এই দুটি আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, পৃথিবী স্থির এবং সূর্য তার চারপাশে ঘুরছে, এজন্যই কোনো একজন পশ্চিম দিকে যাত্রা করে সূর্যাস্ত স্থানে পৌঁছে এবং সূর্যকে পঙ্কিল জলাশয়ে ডুবতে দেখে এবং সে আবার পূর্ব দিকে যাত্রা করে সূর্যোদয় হতে দেখে।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কোরানে বক্তব্য অনুযায়ী সব দিক থেকেই পৃথিবী স্থির, কিন্তু বিজ্ঞান বলে পৃথিবী গতিশীল; এখন কোরান দ্বারা তো আর পৃথিবীকে গতিশীল প্রমাণ করে কোরানকে বিজ্ঞানময় প্রমাণ করা সম্ভব হচ্ছে না, তাই কোরানের নিচু লেভেলে বেদকে টেনে এনে যদি প্রমাণ করা যায় যে বেদেও বলা আছে পৃথিবী স্থির, তাহলে কোরানের ভুলকে বেদের (কাল্পনিক) ভুলের সাথে একটা ব্যালান্স করা যায় আর কি, এই জন্যই মুসলমানদের এই বেদ নিয়ে যত রকম মিথ্যাচার এবং বেদের মন্ত্রের অর্থকে বিকৃত করার অপচেষ্টা। কিন্তু মিথ্যা কবে কোথায় জয়লাভ করেছে ? আর সত্যকেই বা কতদিন চাপা দিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে ? সত্য প্রকাশ হতে শুরু করেছে এবং তা হতে থাকবে এবং সত্যের আড়ালে একদিন অবশ্যই চাপা পড়ে যাবে ইসলাম নামের মহামিথ্যা।

সুতরাং- বেদের নয়, কোরানের পৃথিবী ই যে স্থির, আশা করছি আমার পাঠক বন্ধুদেরকে তা তথ্য-প্রমাণসহ বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment