“ভগবানের কিন্তু এক চোখ কানা” :
শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ প্রদর্শন প্রসঙ্গে, শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে, ফেসবুকে উপরের এই কটূক্তি করেছিলো, 'নাজমুস সাকিব গালিব' নামের এক হুর লোভী বান্দা। শুরুতেই তার কথাগুলো আগে পড়ে নিন, তারপর শুনবেন আমার বক্তব্য-
“ভগবানের কিন্তু এক চোখ কানা জানি আপনারা বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু গীতায় অর্জুন ভগবানকে নিজের চোখে দেখেছেন যে তার এক চোখ কানা। বিষয়টা একটু পরিস্কার হবে যদি গীতা থেকে দেখেন। "আমি দেখিতেছি, তোমার আদি নাই, মধ্য নাই, অন্ত নাই, তোমার বলৈশ্বর্যের অবধি নাই; অসংখ্য তোমার বাহু, চন্দ্রসূর্য তোমার নেত্র স্বরূপ, তোমার মুখমন্ডলে পবিত্র হুতাশন জ্বলিতেছে; তুমি স্বীয় তেজে নিখিল বিশ্বকে সন্তাপিত করিতেছে।" গীতা, অনুবাদ- শ্রী জগদীশ্চন্দ্র ঘোষ, অঃ-১১, স্লোক-১৯ এখন, অসংখ্য তোমার বাহুর কথা বাদ দিলাম, চন্দ্রসূর্য যদি কারো দুই চোখ হয়, তবে সূর্যের যেহেতু নিজের আলো আছে তাই ভাগবানের ধরে নিলাম এক চোখ ভালো আছে। কিন্তু চাঁদের যেহেতু নিজের আলো নেই, তাই অবশ্যই ভগবানেরও একচোখে আলো নাই, মানে ভগবানের একচোখ কানা। হিন্দুরা দাবী করে থাকে যে গীতাতে কোন ভুল নেই, কিন্তু বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটা স্পষ্ট ভুল। কারন চাঁদ আর সূর্য এক নয়। চাঁদের কোন নিজস্ব আলো নেই যেটা খালি চোখে আমরা ভুল দেখি। সুতরাং যারা এই গীতা লিখেছিলেন তাদের কোন বিজ্ঞানের জ্ঞানই ছিল না।”
এই মুমিন প্রথমেই বলেছে, “গীতায় অর্জুন ভগবানকে নিজের চোখে দেখেছেন যে তার এক চোখ কানা”।
ক্লাস থ্রি ফোরের জ্ঞান নিয়ে বিশ্বসৃষ্টিকে ব্যাখ্যা করতে গেলে এরকম ভুল বা মনে হওয়া ই স্বাভাবিক। ভুলটা কোথায় সেটা একটু পরেই বুঝতে পারবেন, যদিও এই মুমিন তার কিছুই বুঝবে না বলে আমার মনে হয়। এই হুর লোভী বান্দা ফোকাস করেছে, “চন্দ্রসূর্য তোমার নেত্র স্বরূপ” এই অংশটির উপরে। এখানে প্রথমেই খেয়াল করার ব্যাপার হলো, উপরের এই কথাগুলো কিন্তু কৃষ্ণ নিজের সম্পর্কে বলে নি; অর্জুন, কৃষ্ণকে- কৃষ্ণ সম্পর্কেই বলেছে এবং এখানে অর্জুন, কৃষ্ণের দুই চোখকে, চন্দ্র ও সূর্যের যে প্রভা, তার সাথে তুলনা করেছে। এখানে কি অর্জুন কৃ্ষ্ণকে বলেছে যে, তোমার এক চোখে দেখছি চন্দ্র এবং অন্য চোখে সূর্য ? অর্জুন যদি এই কথা বলতো, তাহলে মুমিনের এই ব্যাখ্যাকে সঠিক বলে ধরে নেওয়া যেতো। কিন্তু এখানে অর্জুন বলেছে, “চন্দ্রসূর্য তোমার নেত্র স্বরূপ”, অর্থাৎ কৃষ্ণের চোখের জ্যোতিকে চন্দ্র সূর্যের প্রভার সাথে তুলনা করা হয়েছে, আলাদা করে বলা হয় নি যে, এক চোখ চন্দ্র ও এক চোখ সূর্য।
শেষের দিকে মুমিন বলেছে যে, “হিন্দুরা দাবী করে থাকে যে গীতাতে কোন ভুল নেই, কিন্তু বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটা স্পষ্ট ভুল। কারণ চাঁদ আর সূর্য এক নয়। চাঁদের কোন নিজস্ব আলো নেই যেটা খালি চোখে আমরা ভুল দেখি। সুতরাং যারা এই গীতা লিখেছিলেন তাদের কোন বিজ্ঞানের জ্ঞানই ছিল না।”
এটা যে গীতার কোনো ভুল নয়, মুসলমানদের বোঝার ভুল, সেটা তো উপরেই প্রমান করে দিলাম।
এরপর সে শেষ করেছে এই বাক্য দিয়ে যে, সুতরাং যারা এই গীতা লিখেছিলেন তাদের কোন বিজ্ঞানের জ্ঞানই ছিল না।”
এখানে প্রথম তথ্যগত ভুল হচ্ছে, গীতা একাধিক ব্যক্তি লিখে নি, বলেছে একজন এবং তা সরাসরি কয়েকজন শুনলেও লিখেছে অন্য একজন। আর তাদের বিজ্ঞানের কোনো জ্ঞানই ছিলো না, এর জবাব হচ্ছে, গীতা যখন লিখা হয়েছে, সেই ৫ হাজার বছর আগে, তখন কি পৃথিবীতে বিজ্ঞান বলে কিছু ছিলো ? প্রথম বিজ্ঞানী বলা হয় গ্রীসের অধিবাসী থেলিস কে, ইনি খ্রিষ্টপূর্ব ৪ শতকের লোক। তো যখন বিজ্ঞানই ছিলো না, তখন গীতার মধ্যে বিজ্ঞান আসবে কোথা থেকে ? তবে কোনো প্রশ্ন উঠলে এভাবে বলা যায় যে, বর্তমানের বিজ্ঞান প্রদেয় তথ্যের সাথে এই তথ্য সামঞ্জস্য নয়। এখানে আরেকটা কথা মনে রাখা দরকার যে, জাকির নায়েকের বাড়াবাড়ির আগে হিন্দুরা কিন্তু কখনোই বলে নি বা প্রচার করে নি যে, হিন্দু ধর্মের গ্রন্থগুলোর মধ্যে এই বিজ্ঞান আছে, ঐ বিজ্ঞান আছে; এর বিপরীতে মুসলমানরা হাজার বছর ধরে প্রচার করে আসছে যে কোরান এক মহা বিজ্ঞানময় গ্রন্থ, শুধু তাই নয়, কোরান এতটাই বিজ্ঞানময় গ্রন্থ যে, বিজ্ঞানীরা শুধু কোরানকেই রাত দিন গবেষণা করে সকল প্রকার আবিষ্কার সম্পন্ন করেছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। যদিও বিজ্ঞানের জন্মের ১ হাজার বছর পর কোরানের আবির্ভাব, তারপরও এই কোরানে কত বিজ্ঞানগত ভুল আছে, আজ তার কিছু প্রমান দিয়ে, মুসলমানদের গীতা নিয়ে চুলকানির জবাব দেবো।
এই মুমিন, গীতায় বর্ণিত চন্দ্র সূর্য নিয়ে বলা কথার প্রকৃত অর্থ বুঝতে না পেরে, তার ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, সেজন্য এই পোস্টে কথা বলবো শুধু কোরান হাদিসে বর্ণিত চন্দ্র সূর্য সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে এবং প্রমান করে দেবো যে, কোরান আসলে কত বিজ্ঞানময়!
মুমিন বলেছে যে, “চাঁদের কোন নিজস্ব আলো নেই, যেটা খালি চোখে আমরা ভুল দেখি।”
হুমম এটাই বিজ্ঞানের সত্য। চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই, সূর্যের আলো চাঁদের এক পৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীর দিকে আসে, যেটাকে আমরা দেখি এবং সরল মনে যেটাকে আমরা চাঁদের আলো বলে বিশ্বাস করি। কিন্তু এ ব্যাপারে বুখারি শরীফের 4:54:422 নং হাদিসে বলা আছে,
“পুনরুত্থানের দিনে চন্দ্র এবং সূর্যকে ভাঁজ করে ফেলা হবে এবং তাদেরকে আলোক প্রদান থেকে বঞ্চিত করা হবে।”
'তাদেরকে আলোক প্রদান থেকে বঞ্চিত করা হবে' এর মানে হলো চন্দ্র ও সূর্যের আলো আছে, তা প্রদান থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হবে, আর এর সরল মানে হলো সূর্য ও চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। সূর্যের তো নিজস্ব আলো আছে, কিন্তু চন্দ্রের কি আলো আছে ? মুমিন, বিজ্ঞানের তথ্য ধার করে বলছে, চাঁদের নিজস্ব আলো নেই, কিন্তু মুমিনের হাদিস বলছে, মানে মুমিনের আদর্শ মুহম্মদ বলে গেছে, চাঁদের আলো আছে। মুহম্মদের কথাকে অস্বীকার করার জন্য এই মুমিন কি বেহেশতে যেতে পারবে, আর ৭২টা হুরের সাথে শোয়ার সুযোগ পাবে ?
এছাড়াও কোরানের ৭১/১৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে, আকাশে চন্দ্রকে রাখা হয়েছে আলো প্রদান কারী বস্তু হিসেবে। অনেক মুসলমান হাদিসের কথা আর বিশ্বাস করে না, তাছাড়া মুসলমানরা হাদিসের বই থেকে অনেক হাদিসকে ডিলিট করে দিয়ে নতুন করে প্রিন্ট করেছে বা অনলাইনে ছেড়েছে, সেজন্য অনেক হাদিসের নাম্বার মিলে না; কিন্তু কোরান নিয়ে এসব ছলচাতুরি করার সুযোগ কোনো মুসলমানের নেই; কারণ, তাহলে তাদের সাধের পতিতালয়রূপী বেহেশত, মুহম্মদ তাদের পাছার মধ্যে ঢুকিয়ে দেবে, এজন্য কোরানের রেফারেন্স কোনো মুসলমান অস্বীকার করতে পারে না, বড় জোর বলত পারে, এই ব্যাখ্যা ঠিক নয়, কিন্তু কোনো মুসলমানের এই মুরোদও হয় না ঐ আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা হাজির করার।
যা হোক, তাহলে ঘটনা দাঁড়ালো, বিজ্ঞান বলছে, চাঁদের নিজস্ব আলো নেই, কিন্তু কোরান হাদিস বলছে, আলো আছে। গীতা কিন্তু হাজার বছর আগে লেখা, আর কোরান মাত্র ১৪০০ বছর আগের। যদিও গীতায় কোনো ভুল নেই, তথাপি যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যায় যে, গীতায় ভুল আছে, তবুও সেই ভুল কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যাপার এই কারণে নয় যে, প্রাচীন কালের একটি গ্রন্থে এইরকম দু একটি ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে, কিন্তু কোরানে ভুল থাকবে কেনো ? কোরান তো এই সে দিনের বই।
এরপর কোরানের ৩৬/৩৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে”, এখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে সূর্য পৃথিবীর চারেদিকে ঘোরে, কিন্তু সূর্য কী পৃথিবীর চারেদিকে ঘুরে ? ঘুরে না। বিজ্ঞান যখন এই কথা বললো যে, সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘুরে এবং সমস্ত গ্রহকে সাথে নিয়ে সূর্যও মহাবিশ্বের মধ্যে ঘুরে, তখন বিপদ বুঝতে পেরে মুসলমানরা বলা শুরু করলো, এখানে সূর্যের ঘোরা বলতে সেই মহাবিশ্বের মধ্যে ঘোরার কথা ই বলা হয়েছে, পৃথিবীর চারেদিকে ঘোরার কথা বলা হয় নি। এই ব্যাপারটা এমন- ক্লাস টু এর জ্ঞান, যে জ্ঞান দিয়ে সূর্য ঘুরছে বলেই শিশুরা বিশ্বাস করে, সেই জ্ঞান নিয়ে মুসলমানরা নাসার বিজ্ঞানীদের মতো কথা বলছে! যে কোরান বলে পৃথিবী সমতল; কারণ কোরানের ১৮/৮৫ এবং ১৮/৯০ অনুসারে সূর্যের একটি উদয়াচল এবং অস্তাচল আছে অর্থাৎ পৃথিবীর দুই প্রান্ত আছে অর্থাৎ পৃথিবী সমতল, সেই কোরান নাকি এই কথা বলবে যে, সূর্য মহাবিশ্বের মধ্যে ঘুরে ! যা হোক, মুসলমানরা যতই স্থির রেখে পৃথিবীকে ঘোরানোর চেষ্টা করুক, কফিনে শেষ পেরেক এর মতো কোরানের ১৩/২ নং আয়াতে বলা আছে, “সূর্য ও চন্দ্র প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক আবর্তন করে”, তার মানে চন্দ্র যেমন পৃথিবীর চারেদিকে ঘোরে, তেমনি সূর্যও ঘোরে।
কোরান নিশ্চয় মহান বিজ্ঞানময় গ্রন্থ, কী বলেন মুমিনরা ?
এ ছাড়াও কোরানের ৩১/২৯ নং আয়াতে বলা আছে, “আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন, তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে।”
এখানে বলা হচ্ছে, আল্লা দিনকে রাতের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন, আর রাতকে দিনের মধ্যে- ব্যাপারটা বুঝতে গিয়ে যেন মাথা গরম করে ফেলবেন না, কারণ যা বিজ্ঞান ও যুক্তিসম্মত নয়, তা বোঝার চেষ্টা না করে হাসি দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া ভালো, একজন আরেক জনের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়, বিজ্ঞান দ্বারা এটাকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না হলেও আমার কিন্তু সমকামী সেক্স এর উদাহরণটি মাথায় এসেছে, আমি আর তার ব্যাখ্যা না দিলেও আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
এই আয়তে আরও বলা হচ্ছে, তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে।” এর মানে হলো চন্দ্র ও সূর্য আল্লার দাস, অবশ্য চন্দ্র ও সূর্যের আল্লার দাস হতে আপত্তি নেই, যদি আল্লা চন্দ্র ও সূর্যকে সৃষ্টি করে থাকে। কিন্তু যে আল্লার জন্মই মুহম্মদের হাতে ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে হেরা গুহায়; সেই আল্লা সূর্যকে ৪৬০ কোটি বছর আগে কিভাবে সৃষ্টি করবে ? এখানে বলে রাখি উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে ৪৬০ কোটি বছর আগে আমাদের এই সৌরজগতের জন্ম, সেই সময়ই আমাদের সৌরজগতের সকল গ্রহ ও সূর্যের জন্ম। কিন্তু সৌরজগতের জন্মের কিছু পর নবীন পৃথিবী ও মহাকাশের কোনো বস্তুর সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীর একটা অংশ ভেঙ্গে ছিটকে বেরিয়ে গিয়ে চাঁদের জন্ম হয়, এই ঘটনা কমপক্ষে হলেও ৪০০ কোটি বছরের পুরোনো। তাহলে এই চাঁদকেও আল্লা সৃষ্টি করবে কিভাবে ?
যদিও মুসলমানরা, খ্রিষ্টান ও ইহুদি মতবাদের সৃষ্টিতত্ত্বকে দখল করে বলে যে, পৃথিবীর শুরু থেকেই ইসলাম আছে, কিন্তু তাদেরকেই যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে, ইসলামের প্রবর্তক কে ? বলবে, মুহম্মদ। তাহলে যে মুহম্মদের জন্মই ৫৭০ সালে সে পৃথিবীর শুরু থেকে ইসলামকে কিভাবে পৃথিবীতে চালু করবে ? এখানে আরেকটা তথ্য বলে রাখি, ইহুদি ও খ্রিষ্টান সৃষ্টিতত্ত্ব মতে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০৪ সালে, মানে মাত্র ৬ হাজার বছর আগে, মুহম্মদ যেহেতু কোরানের মাধ্যমে ইহুদি খ্রিষ্টানদের সৃষ্টিতত্ত্বকে দখল করেছে, সেহেতু ইসলামও বিশ্বাস করে তাই। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান বলছে ভারতের আর্য সভ্যতার বয়স ১০/১২ হাজার, তাহলে পৃথিবী যদি মাত্র ৬ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি হয়, তাহলে সেই সভ্যতা ও তার লোকগুলো এলো কোথা থেকে। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞান বলছে মিশরীয় সভ্যতাও কমপক্ষে ৫ হাজার বছরের পুরোনো, সভ্যতা তো আর একদিনে গড়ে উঠে না, এটা গড়ে উঠতে সময় লাগে; তাহলে ইসলাম, খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের সৃষ্টি তত্ত্বের হবেটা কী ? এসব ধর্মীয় বিষয় না হয় বাদ ই দিলাম, বিজ্ঞান বলছে, আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্স এর উদ্ভবই হয়েছে ২৩/২৪ লক্ষ বছর আগে।
ইসলাম কোথায় রে মুমিন ?
যা হোক, এই আয়াতের শেষ বাক্যে বলা হচ্ছে, “(চন্দ্র সূর্য) প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে।” অর্থাৎ নির্দিষ্ট কাল বলতে এখানে বলা হচ্ছে, চন্দ্র রাতের বেলা এবং সূর্য দিনের বেলা। কিন্তু চন্দ্র ও সূর্যের অভিধানে রাত ও দিন বলে কি কিছু আছে ? রাত ও দিন আছে পৃথিবীর। স্থির সূর্যকে কেন্দ্র পৃথিবী ঘুরছে, এজন্য সূর্যের যে দিকে পৃথিবীর যে অংশ থাকে সেখানে দিন ও অন্যদিকে রাত হয় এবং চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে ঘুরার সময় পৃথিবীর রাতের অংশের এলাকা থেকে চাঁদকে দেখা যায়। এককথায় দিন রাত পৃথিবীর সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যাপার, পৃথিবী না ঘুরলে এর এক পাশ সবসময় দিন ও অন্য পাশে রাত থাকতো, তাই দিন রাত ঘটানোর জন্য চন্দ্র সূর্যের কোনো ভূমিকা নেই, যদিও সূর্যের আলোর ফলেই পৃথিবীতে দিনরাত ঘটছে, কিন্তু সেই আলো কাজে লাগছে পৃথিবীর ঘূর্ণণের ফলে, তাহলে কোরান যে চন্দ্রের সাথে সাথে সূর্যকেও পৃথিবীর চারপাশে ঘোরাছে, তার কী হবে ?
কোরান খুব বিজ্ঞানময় গ্রন্থ তাই না রে মুমিন ?
যা হোক, এই ৩১/২৯ আয়াতের মূল কথা হলো, পৃথিবী স্থির এবং চন্দ্র ও সূর্য তার চারপাশে ঘুরছে, কিন্তু বিজ্ঞান কি তা বলে ? মুসলমানদের কাছে শুধু জবাব ই চাই না, সেই সাথে এটাও বলতে চাই যে, গীতায় বিজ্ঞানের ভুল না খুঁজে কোরানে আগে ভালো করে পড়; কারণ, নিজের ছিদ্রকে ঢেকে রেখে অন্যের ছিদ্র নিয়ে কথা বলা উচিত কর্ম নয়।
আবার ২১/৩৩ নং আয়াতে বলা আছে, “তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।”
“তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র” এই কথা কে বলেছে- মুহম্মদ, না আল্লা ?যদি আল্লা বলতো তাহলে বাক্যটা হতো এরকম, “আমিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র”, তারপরও নাকি কোরান আল্লার বাণী। এরপর বলা হচ্ছে, সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” চন্দ্রের তো একটা কক্ষপথ আছে বুঝলাম, কিন্তু সূর্যের কক্ষপথ কোনটা ? তাছাড়া দিন বা রাতের কক্ষপথটাই বা কোনটা ? মুমিনগন, জবাব আছে তো ?
এছাড়াও ১৬/১২ নং আয়াতে বলা হচ্ছে, “তিনিই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি, দিন, সূর্য এবং চন্দ্রকে।”
এই বাক্যটাও শুরু 'তিনি' দিয়ে, সুতরাং এটিও যে আল্লার বাক্য নয়, এটুকু বলেই এই প্রসঙ্গ শেষ করলাম। এই আয়াতে বলা হচ্ছে- রাত্রি, দিন, সূর্য এবং চন্দ্র নাকি মানুষের কাজে নিয়োজিত। তাহলে তো রাত্রি দিন সূর্য ও চন্দ্রকে মানুষের মর্জি মতো চলা উচিত, সময়কেও তো মানুষের কথামতো চলা উচিত; কারণ, এগুলোই নিয়ন্ত্রণ করে সময়কে, কিন্তু এদের কেউ কি মানুষের মর্জি মতো চলে ? না, মানুষদেরকেই এদের মর্জি মতে চলতে হয় ? তাহলে কোরানে যে বলা হলো- রাত্রি, দিন, সূর্য এবং চন্দ্র - মানুষের কাজে নিয়োজিত অর্থাৎ মানুষের দাস, সেই কথার বাস্তবতা কোথায় ? এই সব বাল ছাল দিয়ে মুসলমানদেরকে বশে রাখা সম্ভব, কোনো বুদ্ধিমান মানুষকে নয়।
১৬/১২ আয়াতের যে কথা বললাম, সেই একই কথা বলা আছে ১৪/৩৩ আয়াতে। ৩১/২৯ আয়াতে যে কথা বলা আছে, সেই একই কথা বলা আছে ৩৯/৫ এবং ৩৫/১৩ আয়াতে। শুধু মদখোরেরাই একই কথা বারবার বলে। পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে নিশ্চয় কোরান এক মহা নির্ভুল বরকতময় কিতাব! মুমিনগন, কিছু কি ভুল বললাম ?
কোরানের ২/২৫৮ আয়াতে বলা হয়েছে, “ইব্রাহীম বললেন, নিশ্চয়ই তিনি সূর্যকে উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে” । এখানে ইব্রাহিমের বচনে 'তিনি' বলতে আল্লাকে বোঝানো হয়েছে, এখানে ব্যাকরণগত কোনো প্রব্লেম নেই; কিন্তু প্রব্লেম হলো- বলা হচ্ছে, তিনি সূর্যকে উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে, তার মানে এখানে পৃথিবী স্থির এবং সূর্যকে ঘোরানো হচ্ছে। বিজ্ঞান এ ব্যাপারে কী বলে রে মুমিন ?
এছাড়াও ৫৫/৫ আয়াতে বলা আছে, চন্দ্র ও সূর্য হিসাব মতো চলে। এই হিসাব হলো, চন্দ্র রাতের বেলা এবং সূর্য দিনের বেলা। তবে চন্দ্র রাতের বেলা পরিভ্রমন করে কোথায় যায়, সে ব্যাপারে ইসলাম কিছু বলতে না পারলে, সূর্য কোথায় যায়, কী করে, সেসব কথা কিন্তু বলা আছে কোরানের 13:2, 21:33, 31:29, 36:38-40, 18:86-90 এইসব আয়াতে এবং SahihBukhari 4:54:421 Sahih Muslim 1:297 এর এইসব হাদিসে। সূর্য সারাদিন পরিভ্রমন করে অস্ত যাওয়ার পর রাতের বেলা আল্লাহর আরশের নিচে সেজদা দিতে থাকে এবং পরদিন সকালে আবার উদিত হওয়ার জন্য প্রার্থনা করতে থাকে, আল্লা যদি অর্ডার দেয় তাহলে পরদিন সূর্য উদিত হয়।
মুমিনগন, এই ব্যাপারে বিজ্ঞান কী বলে ? সূর্য কি কখনো অস্ত যায় ? সূর্য যদি অস্ত যেত তাহলে সারা পৃথিবীতে একসাথে অন্ধকার নেমে আসতো, আবার উদয় হওয়ার পর এক সাথে আলোকিত হয়ে যেতো। কিন্তু এই রকম ঘটনা কী পৃথিবীতে ঘটে ? কোরান খুব বিজ্ঞানময় গ্রন্থ তাই না ? এত বিজ্ঞান যে, কোরান থেকে বিজ্ঞান উপচে উপচে পড়ছে! এই রকম উদ্ভট বিজ্ঞানের প্রবক্তা যে মুহম্মদ, তার কথায় বিশ্বাস করে আপনারা জীবনটাকে মাটি করে দিচ্ছেন, সত্যিই আপনাদের মূর্খতা দেখলে করুণা হয়।
এরপর কোরানের ১৮/৮৫ আয়াতে বলা আছে, " জুলকারনাইন যখন সূর্যের অস্তগমন স্থানে পৌঁছলো, তখন সূর্যকে কর্দমময় জলপ্রণালী মধ্যে অস্তমিত হইতেছে অবস্থায় পাইলো।"
বোঝেন অবস্থা, কোরান সূর্যকে ডুবাচ্ছে কাদার মধ্যে! এই কোরান নাকি লিখেছে আবার মহাজ্ঞানী আল্লা, যে আল্লার মহাবিশ্ব দূরে থাক, সৌজগত সম্পর্কেও কোনো জ্ঞান ছিলো না। শুধু এখানেই শেষ নয়, কোরানের ১৮/৯০ আয়াতে বলা হচ্ছে, " জুলকারনাইন যখন সূর্যের উদয় ভূমি পর্যন্ত পৌঁছলো, তখন তাকে এক সম্প্রদায়ের উপরে প্রকাশ পাইতেছে অবস্থায় পাইলো।"
এই দুই আয়াতের মূল ব্যাপার হচ্ছে, জুলকারনাইন নামের এক মুসলমান ভূ-বিজ্ঞানী (!) পৃথিবীর শেষ প্রান্ত কোথায় তা দেখা জন্য পশ্চিমে যাত্রা করে, তখন সে এক জায়গায় গিয়ে সূর্যকে কর্দমাক্ত জলাশয়ে ডুবতে দেখে এবং তারপর সে সূর্যের উদয় স্থান দেখার জন্য পূর্ব দিকে যাত্রা করে এবং সেখানে এক সম্প্রদায়ের উপর উদিত হতে দেখে। এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে ইসলাম মতে, পৃথিবী একটি গোলাকার সমতল সিডি ডিস্ক, যার প্রান্ত আছে এবং পূর্ব দিকে সূর্য উদয় হয়ে সারাদিন ধরে পৃথিবীর বুকে আলো প্রদান করে, সন্ধ্যায় কদর্মাক্ত জলাশয়ে ডুবে যায় এবং আল্লার আরশে নিচে গিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে পরদিন উদয় হওয়ার পারমিশন পাওয়ার জন্য। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, আল্লা থাকে পৃথিবীর নিচে, তাহলে মুহম্মদ যে আল্লার সাথে দেখা করার জন্য বোরাকে চড়ে উর্ধ্ব আকাশে গমন করেছিলো, তার কারণটা কী ?
আবার কোরানের ৫৪/১ আয়াত এবং বুখারির 4:56:830-32, 5:58:208-211 এই হাদিস গুলো অনুযায়ী মুহম্মদ আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ দ্বি-খণ্ডিত করেছিলো এবং জোড়া লাগিয়েছিলো! এত বড় ঘটনা মাত্র ১৪০০ বছর আগে মুহম্মদ ঘটালো, সেটা মক্কার দু চারজন লোক ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো জায়গা বা দেশ থেকে কেউ দেখতে পেলো না ? ঐ চাঁদ কি মুহম্মদের ঘরের ছাদে ঝুলছিলো ? লোকে যে বলে - 'আকাশে উঠিলে চাঁদ দেখিবে সবাই', তাহলে এই ঘটনা কেউ দেখলো না কেনো ? এই ঘটনা আর কেউ দেখে নি, কারণ, কোরান ও হাদিস ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো গ্রন্থে সৌরজগতের এই বিশাল ঘটনার কোনো প্রমান নেই।
বুখারীর 2:18:158 নং হাদিস মতে, চন্দ্র ও সূর্যগ্রহন ঘটে মানুষকে ভয় পাওয়ানোর উদ্দেশ্যে। মানুষ যখন এর প্রকৃত কারণ জানতো না, তখন হয়তো ভয় পেতো, কিন্তু এখন কি কেউ ভয় পায় ? আসল ব্যাপার হচ্ছে, চন্দ্র ও সূর্যগ্রহন শুরু হলেই মুহম্মদ মনে করতো এই বুঝি কেয়ামত শুরু হয়ে গেলো, যেটাকে মুহম্মদ খুবই ভয় করতো, তার এই ভয় পাওয়ার কথা ই বলা হয়েছে এই হাদিসে এবং একারণেই মুহম্মদ মনে করতো কেয়ামত অতি নিকটবর্তী (কোরান, ৩৩/৬৩)।
বুখারির ৪/২৯৬১ হাদিস মতে, কেয়ামত ঘটানোর পূর্বে আল্লা সূর্যকে আদেশ দেবেন পশ্চিম দিক থেকে উদিত হতে, এই ঘটনাও প্রমান করে যে, পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য ঘুরছে। কিন্তু এখানে অন্য প্রসঙ্গ হলো- সৌরজগত সম্পর্কে যার ন্যুনতম জ্ঞান আছে, তার পক্ষেও এটা বোঝা সম্ভব যে, সূর্য কখনোই পশ্চিম দিক থেকে উঠতে পারে না, যদি কখনো এই ঘটনা ঘটে, তাহলে তা হবে পৃথিবীর কক্ষচ্যুতের ফলে, আর এটা হলে ঐ ঘটনা দেখার জন্য পৃথিবীতে কেউ জীবিত থাকবে না; কারণ এক সেকেণ্ডের মধ্যে পৃথিবীর সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। আর তখন সূর্য আস্তে আস্তে পশ্চিম দিকে উঠবে না, পৃথিবী যদি কখনো তার কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয় তাহলে মূহুর্তের মধ্যে হয় পৃথিবী আমাদের সৌরজগত থেকে ছিটকে বেরিয়ে যাবে বা সূ্র্যের মধ্যে গিয়ে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। কিন্তু এই ধরণে কক্ষচ্যুতের ঘটনা না ঘটার সম্ভাবনাই বেশি; কারণ এখন পর্যন্ত এই ধরণের ঘটনা মহাবিশ্বে ঘটেছে বলে শোনা যায় নি, যা ঘটেছে তা ব্ল্যাক হোলের ঘটনা, আর এটা ঘটলে সূর্য আস্তে আস্তে নিভে গিয়ে সমস্ত সৌরজগত অন্ধকারে ডুবে যাবে। বিজ্ঞানের এই সব তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, ইসলামে বর্ণিত কেয়ামত পৃথিবীতে কোনোদিনই ঘটবে না। তাই ইসলামের কেয়ামত এবং চন্দ্র ও সূর্য সম্পর্কিত গল্পগুলো- শুধু গালগল্প নয়, বালগল্প।
মুসলমানদেরকে বলছি, আমি কিন্তু ইহুদিদের থিয়োরিতে বিশ্বাস ও কাজ করি। ২০১৪ সালে ফিলিস্তিনি মুসলমানরা ৩ জন ইজরাইলিকে মেরেছিলো, এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইহুদিরা প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনিকে মারে, ঘর-বাড়ি ভাঙ্গে কয়েক হাজার। তোরা চন্দ্র সূর্য নিয়ে হিন্দুদেরকে একটু খুঁচিয়েছিস, তার বিনিময়ে তোদেরকে সেই চন্দ্র সূর্য নিয়েই কত বড় আর কতগুলো বাঁশ দিলাম, সেটা একটু গুনে দেখ। এরপর যখন খোঁচাবি, একটু ভেবে চিন্তে খোঁচাস; কারণ, হিন্দুধর্ম সম্পর্কে জাকির নায়েকের এবং তার থেকে ধার করা কটূক্তির জবাব দেওয়ার জন্য, হিন্দু সমাজে- 'জাকিরের বাপ' নয়, জাকিরের "বাপের বাপ" এর জন্ম হয়েছে।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম। জয় শ্রীকৃষ্ণ।
No comments:
Post a Comment