গীতায় চন্দ্রকে নক্ষত্র বলা হয়েছে, এটা কি গীতার ভুল নয় ?
গীতার ১০ম অধ্যায়, যেটা বিভূতি যোগ, তার ২১ নং শ্লোকে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,
“নক্ষত্রাণামহং শশী”
অর্থাৎ, নক্ষত্রদের আমি চন্দ্র।
আপাত দৃষ্টিতে এবং প্রচলিত বিজ্ঞান মতে এটাকে ভুল মনে হওয়ায় এটা নিয়ে নাস্তিক ও মুসলমানদের উৎসাহ ও চুলকানির শেষ নেই; কিন্তু কোরানের যে পাতায় পাতায় ব্যাকরণগত ও বিজ্ঞানগত ভুল, সেটা বোধহয় তাদের চোখে পড়ে না!
মূল আলোচনার যাওয়ার পূর্বে একটা উদাহরণ দিই, যেটা আপনাদেরকে প্রকৃত ব্যাপারটা বুঝতে সাহায্য করবে।
আপনার জন্মের পর আপনার বাবা মা আপনার একটা নাম সিলেক্ট করে দিয়েছে, যে নামে হয়তো আপনি ২০/৩০ বছর অতিবাহিত করেছেন, এখন কেউ যদি সেটার বদলে অন্য একটা নাম আপনার রাখে, সেটা কি গ্রহনযোগ্য ?
নিশ্চয় নয়।
বিজ্ঞানীদের দ্বারা চন্দ্রের নাম উপগ্রহ রাখাও এই ধরণের একটি ধৃষ্টতা বা ভুল।
গীতার ভাষ্যমতে, সৃষ্টি জগতের শুরু থেকেই গীতার জ্ঞান পৃথিবীতে ছিলো, কিন্তু মাঝখানে এই জ্ঞানের কিছু বিকৃতি হয় (গীতা, ৪/১,২); তাই শ্রীকৃষ্ণ, অর্জুনকে এই জ্ঞান পুনরায় প্রদান করেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পূর্বে।
এখানে নাস্তিকরা বলতে পারে, গীতার জন্মই তো হলো মহাভারত থেকে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময়, তাহলে এই জ্ঞান কিভাবে এবং কোন নামে আগে প্রচলিত ছিলো ?
এই ধরণের প্রশ্ন অর্জুনই করেছিলো শ্রীকৃষ্ণকে (গীতা, ৪/৪); জবাবে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, আমার ও তোমার বহু জন্ম অতীত হয়েছে, আমি সেগুলোর কথা স্মরণ করতে পারি, কিন্তু তুমি তা পারো না (গীতা, ৪/৫)।
যা হোক, সৃষ্টির শুরু থেকেই গীতার জ্ঞান “গীতোপনিষদ” নামে প্রচলিত ছিলো, কিন্তু মাঝখানে এই জ্ঞান তার পরম্পরা ও বিশুদ্ধতা রক্ষা করতে না পারায়, শ্রীকৃষ্ণ, এই জ্ঞান আবার নতুন করে অর্জুনের মাধ্যমে জগতকে দেন, ফলে গীতোপনিষদের আর প্রয়োজন না হওয়ায় তা আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
গীতোপনিষদের কথা না হয় বাদই দিলাম, মহাভারত প্রসূত যে গীতা, তারও আবির্ভাব তো হয়েছে প্রায় ৫৩০০ বছর আগে; অন্যদিকে পৃথিবীর প্রথম বিজ্ঞানী বলে যাকে বলা হয়, সেই ‘থেলিস’ যার জন্ম মাত্র ২৫০০ বছর পূর্বে গ্রীসে, সেই থেলিস ধারার বিজ্ঞানীরা কিভাবে, সিন্ধু ও আর্য সভ্যতায়, চন্দ্রকে কী নামে অভিহিত করা হয়েছে, সেই খোঁজ-খবর না নিয়ে চন্দ্রকে উপগ্রহ হিসেবে অভিহিত করতে পারে ?
এটা কি বিজ্ঞানীদের অজ্ঞানতা বা ভুল বা মূর্খতা নয় ?
উপরেই বলেছি, আপনার প্রচলিত নাম বাদ দিয়ে কেউ যদি আপনাকে অন্য নামে ডাকে, সেটা কি গ্রহনযোগ্য ?
অবশ্যই নয়।
একইভাবে চন্দ্রকে যে বিজ্ঞান বলেছে উপগ্রহ, সেটাও গ্রহনযোগ্য নয়।
বর্তমানে সাত বারের নাম (শনি, রবি …) যে সারা পৃথিবীতে প্রচলিত, যে নামগুলো নেওয়া হয়েছে সাতটি গ্রহের নাম থেকে এবং যে নামগুলো দিয়েছে আমাদের বেদ এর রচয়িতা মুনি ঋষিরা জ্যোতিষ শাস্ত্রকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে, সেই নামগুলো বিজ্ঞানীরা নিতে পারলো; আবার যে মিনিট সেকেন্ডের হিসাব, যার জ্যোতিষ শাস্ত্রীয় একক হচ্ছে দণ্ড, পল; যার উপর ভিত্তি করে আধুনিক সময়ের হিসাব গড়ে উঠেছে; আবার ৭ দিনে যে এক সপ্তাহ, সাধারণভাবে ৩০/৩১ দিনে যে এক মাস এবং ৩৬৫ দিনে যে এক বছর, এর আবিষ্কারকও সিন্ধু ও আর্য সভ্যতার মুনি ঋষিরা, সেই হিসাবগুলো আধুনিক বিজ্ঞানীরা হিন্দু জ্ঞান থেকে ধার করতে পারলো, আর হিন্দু জ্ঞান যে চন্দ্রকে নক্ষত্র বলে অভিহিত করেছে, সেটা তারা নিতে পারলো না কেনো ?
অল্পজ্ঞানী নাস্তিকরা বলতে পারে চন্দ্রকে নক্ষত্র বলা ভুল বলেই বিজ্ঞানীরা এটাকে উপগ্রহ হিসেবে অভিহিত করেছে।
এর জবাবে বলছি, প্রথমে আপনার যে নাম রাখা হয়েছিলো, সেটা কি তাহলে ভুল ছিলো ?
নাম রাখার আগে নাম কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, একবার নাম রাখার পর তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। যেমন আমি যাতে এই প্রবন্ধটি লিখছি, তার নাম এর আবিষ্কারকরা দিয়েছে ল্যাপটপ, তাই এটা ল্যাপটপ নামে সারা পৃথিবীতে পরিচিত পেয়েছে, এর নাম তারা যদি দিতো ল্যাপকম, তাহলে এটা ল্যাপকম নামেই পরিচিতি হতো। বাস্তবে এটার নাম ল্যাপটপ কোনো ভাবেই মানায় না। ল্যাপ মানে কোল, আর টপ মানে শীর্ষ বা উপর। তার মানে ল্যাপটপ মানে “কোলের উপর”, এর মধ্যে কি কম্পিউটারের কিছু আছে ?
নেই।
তাই ল্যাপটপ এর পরিবর্তে এর নাম যদি হতো ল্যাপকম, তাহলেই বরং বোঝা যেতো যে, কোলে নিয়ে যে কম্পিউটারে কাজ করা যায়, তার নাম ল্যাপকম। কিন্তু আমি এখন এইসব সার্থকতা বিবেচনা করে যতই চিৎকার করি না কেনো এর নাম ল্যাপকম, তাতে কেউ কর্ণপাত করবে না; কারণ, এর ল্যাপটপ নাম প্রচলিত হয়ে গেছে। তাই কোনো কিছুর নাম রাখার পর সেই নাম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে, নাম রাখার আগে যেকোনো একটি নাম রাখলেই হয়, যেমন কোনো ভীতু ছেলের নাম যদি হয় ভীম, লোকে তাকে ভীম বলেই ডাকবে, ভীমের সাথে ভয় পাওয়ার যে কোনো ব্যাপার নেই, লোকে সেটা আর চিন্তা করবে না।
তাই গীতায়, প্রচলিত আধুনিক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের জন্মের বহু পূর্বেই যে চন্দ্রকে নক্ষত্র নাম দেওয়া হয়েছে, সে নাম পাল্টানোর কোনো প্রয়োজন ছিলো না এবং তা করার তাদের কোনো অধিকারও ছিলো না; কারণ, পিতার নাম পুত্র বদলাতে পারে না।
চন্দ্র ও সূর্য ছাড়া আকাশে যেসব বস্তু দেখা যায়, সাধারণ লোকজন সাধারণভাবে এগুলোকে বলে ‘তারা’ বা স্টার, কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলে জ্যোতিষ্ক। এই জ্যোতিষ্কদের মধ্যে সূর্য পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান বস্তুসমূহের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল ব’লে, শ্রীকৃষ্ণ, ঐ শ্লোকেই বলেছেন, জ্যোতিষ্কদের মধ্যে আমি সূর্য। একই কারণে রাতের বেলা আকাশে দৃশ্যমান বস্তুসমূহের মধ্যে চন্দ্র সবচেয়ে উজ্জ্বল ব’লে, শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, নক্ষত্রসমূহের মধ্যে আমি চন্দ্র।
বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের অনেক আগে সনাতন ধর্মের আবির্ভাব এবং সনাতন ধর্ম থেকে অনেক থিয়োরি বিজ্ঞান গ্রহন করেছে; সুতরাং সনাতন ধর্মের বিজ্ঞানকে অনুসরণ করার দরকার নেই, বিজ্ঞানেরই উচিত সনাতন ধর্মকে অনুসরণ করা।
বিজ্ঞানের মত হচ্ছে, মহাশূন্যে ভাসমান যেসব বস্তুর নিজস্ব আলো আছে, তারা নক্ষত্র; নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে সেই নক্ষত্রের চারিদকে যারা ঘুরে বেড়ায়, তারা গ্রহ; আর গ্রহদের চারপাশে যারা ঘুরে বেড়ায়, তারা উপগ্রহ।
এই সংজ্ঞার বদলে যদি বলা হতো, গ্রহদের চারপাশে যারা ঘুরে বেড়ায় তারা নক্ষত্র, আর মহাশুন্যে ভাসমান যেসব বস্তুর নিজস্ব আলো আছে, তারা উপগ্রহ বা অন্য কোনো নাম, তাহলে কী কোনো ক্ষতি হতো ?
কোনো ক্ষতিই হতো না, বরং আর্য সভ্যতার যে মুনি ঋষিদের কাছে বিজ্ঞানীরা বহুল পরিমানে ঋণী, তাদের প্রতি কিছুটা শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হতো।
এখন নাস্তিকরা বলতে পারে, হিন্দু মুনি ঋষিদের কাছ থেকে বিজ্ঞানীরা কী এমন ধার করেছে যে তাদের কাছে বিজ্ঞানীদের কৃতজ্ঞ থাকতে হবে ?
১৬০০ সালের দিকে টেলিস্কোপ বা দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার হওয়ার পর আকাশ পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখতে পায় যে, আমাদের সূর্যের আশে পাশে কয়েকটি গ্রহ ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আকাশে রয়েছে অসংখ্য নক্ষত্র বা নক্ষত্রপুঞ্জ; কিন্তু সূর্যের চারপাশে যে গ্রহরা ঘুরে বেড়ায় এবং আকাশে রয়েছে অসংখ্য নক্ষত্র, এই কথা আমাদের মুনি ঋষিরা বলে গেছেন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ হাজার বছর আগে, বেদ এর মধ্যে, জ্যোতিষ শাস্ত্রকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে; কেননা, আকাশে গ্রহদের আবর্তন এবং নক্ষত্রদের অবস্থানই হলো জ্যোতিষ শাস্ত্রের মূল কথা। শুধু তাই নয় গ্রহদের নামকরণ করার পাশাপাশি, পৃথিবীতে জন্মগ্রহনকারী প্রাণীদের উপর যে নক্ষত্রগুলোর প্রভাব রয়েছে সেগুলোর নামকরণও তারা করে গেছেন এবং এই নামগুলো সিন্ধু সভ্যতার পরে গড়ে উঠা মিশর ও গ্রীস সভ্যতাতে এত বেশি প্রচলিত ছিলো যে, বিজ্ঞানীরা পরে সেই নামগুলোই গ্রহন করতে বাধ্য হয়েছে; এগুলো কি হিন্দু মুনি ঋষিদের কাছে বিজ্ঞানীদের ধার বা ঋণ নয় ?
একটু আগেই জ্যোতিষ শাস্ত্রের কথা বলতে গিয়ে আমি নক্ষত্র বলতে অন্য কিছু বুঝিয়েছি এবং গীতায় নক্ষত্র বলা হয়েছে চাঁদকে; এই ব্যাপারটি কারো কারো কাছে স্ববিরোধী বলে মনে হতে পারে; কারণ, গভীর বিবেচনায়, আচরণ এবং বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে চন্দ্র ও নক্ষত্রের স্বভাব সম্পূর্ণ আলাদা, কিন্তু মানব জীবনের উপর প্রভাব বিবেচনায় চন্দ্র ও নক্ষত্রগুলো সমজাতীয়, এই বিবেচনায় এবং পৃথিবী থেকে রাতের বেলা আকাশে দৃশ্যমান বস্তুসমূহের মধ্যে চন্দ্র সবচেয়ে উজ্জ্বল বলে, উজ্জ্বলতার দিকটি বিবেচনা করে, গীতায় চন্দ্রকে নক্ষত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
উপরে আমি বলেছি, ৩৬৫ দিনে যে বছর গণনার রীতি, এটার আবিষ্কারক সিন্ধু বা আর্য সভ্যতার মুনি ঋষিরা, নাস্তিক ও মুসলমানরা বলতেই পারে যে, এর পেছনে আমার কাছে কী প্রমান রয়েছে ?
আমি কোনো রেফারেন্স দিতে না পারলেও, আমি যে যুক্তি দেখাবো, সেটা যদি আপনি খণ্ডন করতে না পারেন, তাহলেই প্রমান হবে যে, আমি যা বলেছি, তাই সত্য।
ভারতের হায়দরাবাদে অবস্থিত “ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্টিফিক রিসার্চ অন ভেদাজ” বা সংক্ষেপে ‘আই-সার্ভ’ নামের গবেষণা সংস্থার গবেষকরা প্ল্যানেটোরিয়াম সফ্টওয়্যারের সাহায্যে গবেষণা চালিয়ে জানিয়েছেন, ৫১১৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ১০ জানুয়ারি বেলা ১২টা থেকে ১টার মধ্যে অযোধ্যায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন রামচন্দ্র। এই হিসেবে রামচন্দ্রের আবির্ভাব হয়েছিলো ২০১৮ সাল থেকে ৭১৩২ বছর আগে। এই রামায়ণ থেকে একটি ঘটনার উল্লেখ করলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে, ৩৬৫ দিনে বছর গণনার রীতি হিন্দু মুনি ঋষিদের আবিষ্কার কি না ?
বাল্মীকি রামায়ণের অরণ্যকাণ্ডের সীতাহরণ পর্বে এ কথা স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে যে, রাম যখন বনে গমন করে, তখন তার বয়স ২৫ এবং সীতার ১৮। বছর গণনার রীতি যদি তখন না থাকতো, তাহলে কিভাবে রাম সীতার বয়সের গণনা করা সম্ভব হয়েছিলো ?
এছাড়াও বহুলভাবে প্রচারিত ও প্রচলিত যে, রাম ১৪ বছরের জন্য বনে গিয়েছিলো। বনবাসের ১৩ তম বছরের শুরুর দিকে রাবন, সীতাকে অপহরণ করে এবং তারপর রাম, যুদ্ধ করে সীতাকে উদ্ধার করতে করতে চৌদ্দ বছর পূর্ণ হয়ে যায়; ফলে সীতাকে নিয়ে রাম অযোধ্যায় ফিরে আসে। তখন যদি বছরের হিসেব না থাকতো, তাহলে কিভাবে রাম সীতা, তাদের বনবাসের দিনের হিসেব রেখেছিলো ?
এ থেকে প্রমাণিত যে, রামায়ণের ঘটনারও বহু পূর্ব থেকে হিন্দু সভ্যতায় ৩৬৫ দিনে বছর গণনার রীতি প্রচলিত ছিলো এবং এটা যে সিন্ধু বা আর্য সভ্যতার মুনি ঋষিদের আবিষ্কার তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন যে, সিন্ধু বা আর্য সভ্যতার এই বছর গণনার রীতি তো সৌরবর্ষ না হয়ে চন্দ্রবর্ষও হতে পারে, আর এটা হলে রামায়ণের বছর গণনা তো ৩৬৫ দিন না হয়ে ২৫৪ দিন হবে ?
তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, বাল্মীকি রামায়ণের অযোধ্যাকাণ্ডেরই ‘দশরথের অভিলাষ’ পর্বে বলা আছে, দশরথ ব্রাহ্মণদেরকে বলছে,
“এই পবিত্র চৈত্রমাসে আপনারা রামকে যৌবরাজ্যদানের আয়োজন করুন।”
এই চৈত্র বৈশাখ মাসকে কিন্তু চন্দ্রবর্ষ মতে গণনা করা হয় না, হয় সৌরবর্ষ মতে; আশা করছি, এ প্রসঙ্গে আর কিছু বলতে হবে না।
শুধু তাই নয়, মহাভারতে আছে আরো সূক্ষ্ম সময়ের হিসেব, যে জ্ঞান এক উন্নত বুদ্ধিমান ও সভ্য জাতির লোকজনের পক্ষেই করা সম্ভব। চাঁদের উদয় দেখে রোযা রাখা শুরু করা বা সূর্যের অস্ত দেখে রোযা ভঙ্গ করার মতো মূ্র্খ জ্ঞানের বিধান এটা নয়। আর এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে, মহাভারতের সময় বর্তমান থেকে প্রায় ৫৩০০ বছর আগের, আর তথাকথিত আধুনিক ধর্মের আবির্ভাব কিন্তু মাত্র ১৪০০ বছর পূর্বে; যারা সময়ের সূক্ষ্ম হিসেব করতে না পেরে বা না বুঝে, সূর্য ও চন্দ্রের উদয় অস্ত দেখে ধর্মীয় বিধি বিধান পালনের নির্দেশ দিয়েছে এবং সম্পূর্ণ অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক চন্দ্রবর্ষ চালু করেছে, এগুলো এই আধুনিক যুগেও চুড়ান্ত মূর্খামি তো বটেই, ৮/১০ হাজার বছর পূর্বেও হিন্দুরা এগুলোকে চুড়ান্ত মূর্খামি বলেই মনে করতো। কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীতেও, যেখানে জ্যোতির্বিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আগামী হাজার বছরের ঈদের দিন তারিখ বলে দেওয়া সম্ভব, সেখানে মুসলমানরা আজও চাঁদের উদয় না দেখে ঈদের দিন ঠিক করতে পারে না, এরা কী ধরণের স্টুপিড একবার চিন্তা করুন।
যা হোক, মহাভারতের সময়ের লোকজন জানতো যে বছরের কোন নির্দিষ্ট দিন থেকে দিন বড় হওয়া শুরু হয় এবং কোন দিন থেকে দিন ছোট হওয়া শুরু হয়; এটাই মহাভারতে উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন নামে পরিচিত। এই উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ণের হিসেব করেই ইচ্ছে মৃত্যুর বরদান প্রাপ্ত ভীষ্মদেব উত্তরায়ণ অর্থাৎ সূর্য উত্তর গোলার্ধ অভিমুখে চলা শুরু করলে বা দিন বড় হওয়া শুরু করলে প্রাণত্যাগ করেন।
নির্দিষ্ট তারিখ থেকে দিন ছোট বড় হওয়ার হিসেবও কিন্তু বিজ্ঞানীরা হিন্দু মুনি ঋষিদের কাছ থেকেই ধার করেছে।
এছাড়াও চিকিৎসা বিজ্ঞানের শুরু বেদ থেকে, যার কারণে পৃথিবীর প্রাচীনতম চিকিৎসা পদ্ধতির নাম আয়ুর্বেদ; এরকম অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যায়, যা বিজ্ঞানীরা ধার করেছে হিন্দু মুনি ঋষিদের জ্ঞান থেকে। আর সেই হিন্দু জ্ঞান, যেখানে চন্দ্রকে বলা হয়েছে নক্ষত্র, তার নাম বদলে দিয়ে এখন হিন্দু বিরোধীরা প্রমান করার চেষ্টা করছে যে গীতায় ভুল আছে !
গীতায় চন্দ্রকে নক্ষত্র বলা হয়েছে, এই বিষয়টি যে কোন ভুল নয়, নামের হেরফের মাত্র, আশা করছি, তা আমার পাঠক বন্ধুদেরকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
No comments:
Post a Comment