হিন্দুদের- চন্দনের তিলক, তুলসীর মালা পরা এবং মাথায় টিকি রাখার শাস্ত্রীয় ও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা কী ?
চন্দন গাছ থেকে চন্দন কাঠ পাওয়া যায়; এই চন্দন কাঠ, ঠাণ্ডা ধরণের এক জাতীয় কাঠ; আর এই কাঠ, পাথরের উপর জল দ্বারা ঘষলে এক ধরণের আধা তরল পদার্থ পাওয়া যায়, যার দ্বারা তিলক পরা হয়।
এছাড়াও গোপিচন্দন নামে এক ধরণের চন্দন পাওয়া যায়, এটা আসলে এক ধরণের মাটি, এই মাটি পাওয়া যায় বৃন্দাবনের রাধাকুণ্ড নামক এক জায়গায়। বৃন্দাবন, নবদ্বীপ ছাড়াও হিন্দুদের বিভিন্ন তীর্থস্থানে এবং বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় মেলায় এই চন্দন কাঠ এবং গোপিচন্দন নামের মাটি পাওয়া যায়। চন্দন কাঠ ঘষে চন্দনের ক্বাথ বের করা বেশ সময় সাপেক্ষ ও পরিশ্রমের ব্যাপার, এ থেকে বাঁচার জন্য এবং যাদেরকে বেশি পরিমান চন্দন ব্যবহার করতে হয়, তারা গোপিচন্দন ব্যবহার করে থাকেন।
সাধারণত চন্দনের তিলক ব্যবহার করার নিয়ম কপালে, এটা হিন্দু হিসেবে হিন্দুদের পরিচয় পত্র বা সাইনবোর্ড। U আকৃতির যে তিলক ব্যবহার করা হয়, এটা বিষ্ণু বা কৃষ্ণের প্রতীক এবং আনুভূমিকভাবে তিনটি সমান্তরাল দাগ দিয়ে যে তিলক ব্যবহার করা হয় এটা শিবের প্রতীক, এজন্য শিব লিঙ্গের উপরের দিকে এরকম তিনটি দাগ দেওয়া থাকে। সাধারণ হিন্দুরা, সাধারণত, বাড়িতে বা কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গেলে, U আকৃতির চন্দন তিলক দিয়ে থাকে, কিন্তু যারা শিবের সাধনা করেন, তারা আনুভূমিক সমান্তরাল তিনটি দাগের দ্বারা চন্দন তিলক পরিধান করে থাকেন।
দাড়ি রাখা, টুপি পরা যেমন মুসলমানিত্বের প্রতীক, তেমনি চন্দনের তিলক পরাও হিন্দুত্বের প্রতীক, যেটা একটু আগেও বলেছি।
কিন্তু এর আসলে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী ?
আমরা জানি যে, আমাদের দেহের সমস্ত স্নায়ু এসে মিলিত হয় ব্রেইন বা মস্তিষ্ক্যে এবং এই ব্রেইনই সেই সব স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে সারা দেহকে পরিচালিত করে থাকে। আমাদের হাতের বা পায়ের নখের আগাতেও স্নায়ুতন্ত্রের কানেকশন আছে, এজন্য সেখানে একটি পিঁপড়া কামড় দিলেও আমরা সেটা বুঝতে পারি। মাথার মধ্যে এই সব স্নায়ুতন্ত্রের সেন্টার পয়েন্ট হলো আমাদের কপালে মধ্যখানে, যেখানে চন্দনের তিলক পরা হয়।
আমার এই কথায় বিশ্বাস না হলে একটি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন-
যখন কেউ কোনো কারণে আপনার কপালে তার আঙ্গুল দিয়ে চন্দন বা কোনো কিছুর তিলক বা ফোটা দিতে আসে, কপালে আঙ্গুল স্পর্শ করার ঠিক পূর্ব মূহুর্তেই আপনার সারা দেহে এক ধরণের শিহরণ অনুভূত হয়; কপালে আঙ্গুল স্পর্শ করে ফোটা দেওয়ার সময় আপনি যদি চোখ বন্ধ করেন, এটা আরো ভালোভাবে অনুভব করতে পারবেন। চন্দন বা কোনো ধরণের পদার্থ ছাড়া শুধু একজন অন্যজনের কপালে আঙ্গুল স্পর্শ করলেও এই ধরণের একটি শিহরণ অনুভূত হয়, আপনার কাছে কেউ থাকলে এখনই এই পরীক্ষাটি করে দেখতে পারেন। আমাদের কপালে ঠিক মাঝখানে নার্ভের সেন্টার পয়েণ্ট বলেই এমন হয়।
এখানে আর একটা বিষয় বলে রাখি, কারো কপালে যদি আপনাকে আপনার আঙ্গুল দ্বারা কোনো ফোটা দিতে হয় বা কারো থেকে ফোটা নিতে হয়, অবশ্যই নেবেন বা দেবেন অনামিকা আঙ্গুলের দ্বারা; কখনো মধ্যমার দ্বারা নেবেন না বা দেবেন না। এটা আমাদের শাস্ত্রীয় নির্দেশ; কারণ, মধ্যমা বা সবচেয়ে বড় আঙ্গুল হলো জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে শনির আঙ্গুল, এই আঙ্গুল দিয়ে যদি আপনি কারো কপালে ফোটা দেন বা নেন, তাহলে শনির প্রভাবে উভয়েরই কিছু না কিছু অমঙ্গল হতে পারে; কিন্তু অন্য কোনো আঙ্গুল দিয়ে নিলে বা দিলে এরকম অমঙ্গলের সম্ভাবনা নেই; তবে সবচেয়ে মঙ্গলজনক হলো অনামিকা আঙ্গুলের দ্বারা ফোটা দেওয়া বা নেওয়া; কারণ, জ্যোতিষ মতে, এই আঙ্গুল রবির আঙ্গুল, এই আঙ্গুলের দ্বারা ফোটা নিলে বা দিলে উভয়েরই জীবন উজ্জ্বল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যা হোক, ফিরে যাই নার্ভের সেন্টার পয়েন্টের আলোচনায়, ধ্যান বা মেডিটেশনের মাধ্যমে যখন মনকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তখন চোখ বন্ধ করে দুই ভ্রু এর মাঝখানে, যেখানে তিলক পরা হয়, সেখানে মনোযোগকে নিয়ে আসতে হয় এবং এটা করলে মন সেখানে কেন্দ্রীভূত হয়। কোয়ান্টাম মেথডের লোকজন এবং সাধু মহাপুরুরা ঠিক এভাবেই ধ্যান করে তাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে; আর এটা সম্ভব হয় একারণেই যে, নার্ভের সেন্টার পয়েন্ট ঠিক সেখানেই। নার্ভের এই সেন্টার পয়েন্টকে শান্ত ও সুস্থ রাখার মাধ্যমে মাথা ঠাণ্ডা রেখে সব কাজ ঠিক মতো করার জন্যই দুই ভ্রু এর মাঝ বরাবর কপালে ঠাণ্ডা জাতীয় পদার্থ চন্দনের তিলক পরা হয়, ঠিক যেমন মাথা ঠাণ্ডা রেখে ভালো ঘুমের জন্য নবরত্ন বা হিমগঙ্গা বা এই জাতীয় তেল মাথায় মাখা হয়।
নার্ভের সেন্টার পয়েন্টের উপর চন্দনের প্রভাব যে সঠিক, একথা প্রমানিত হয়েছে আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায়; কেননা, বিজ্ঞানীরা বলেছেন,
“কপালে চন্দনের তিলক দিলে মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকে, ধৈর্য শক্তি বৃদ্ধি হয়, মন শান্ত থাকে এবং মনের একাগ্রতা বাড়ে।”
বৈজ্ঞানিক গবেষণার হাজার হাজার বছর আগে আমাদের মুনি ঋষিরা চন্দনের এই গুনাগুন সম্পর্কে জানতে পারেন এবং তারা কপালে চন্দনের তিলক দেওয়ার বিধি প্রবর্তন করেন। শুধু হিন্দুত্বের প্রতীক বলেই নয়, চন্দনের এই গুনের জন্য ঈশ্বরের প্রতি যারা সর্বদা মন নিবিষ্ট রাখতে চান, সেই সব সাধু-সন্ন্যাসী ও বৈষ্ণবরা সবসময় চন্দনের তিলক পরিধান করে থাকেন এবং একারণেই যেকোনো মন্দির বা কোথাও হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলে- সেই অনুষ্ঠানের প্রতি এবং অনুষ্ঠানের বিষয়- ঈশ্বরের প্রতি সকলের একাগ্রতা যাতে বজায় থাকে, সেজন্য মন্দিরে বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া মাত্র ভক্তদের কপালে চন্দনের তিলক দিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও যেসব মেয়েরা কপালে নিয়মিত টিপ পরে, তারাও নিজের অজান্তেই তাদের নার্ভ পয়েন্টের কিছু না কিছু উপকার করে চলেছে।
এখানে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়, সাধারণ হিন্দুদের কপালে, সাধারণত মন্দির বা কোনো ধর্মানুষ্ঠানে গেলেই কেবল তাদের কপালে চন্দনের তিলক দেওয়া হয়, অনেক সময় এতে শুধু কপালে চন্দনের তিনটি ফোটা দেওয়া হয়, এই তিন ফোটা- ব্রহ্মা, বিষ্ণু এ মহেশ্বরের প্রতীক; আপনি যদি ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের প্রকৃত রূট বা মূল না জানেন; অর্থাৎ- ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বর যে আলাদা তিনটি সত্ত্বা নয়, তারা একই ঈশ্বরের তিনটি কার্যকরী রূপের নাম, এই তত্ত্ব যদি আপনি বিস্তারিত না জানেন, তাহলে এই তিনটি ফোটা, আপনার ঈশ্বর বিশ্বাসকে তিনভাগে বিভক্ত করে ফেলে আপনাকে বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারে; কিন্তু U আকৃতির চন্দনের তিলক বিষ্ণু বা কৃষ্ণ অর্থাৎ এক ঈশ্বরের প্রতীক, এজন্য সবসময় U আকৃতির চন্দনের তিলক এবং তা শুধু কপালেই পরা উচিত।
কিন্তু বৈষ্ণব সমাজের কেউ কেউ দেহের নানা জায়গায় চন্দনের তিলক দিয়ে থাকেন এবং এটা নিয়ে তাদের নানান ধরণের ব্যাখ্যা আছে; এই সব ব্যাখ্যা, চৈতন্যদেব এবং তার শিষ্যবৃন্দ কর্তৃক উদ্ভাবিত, যেগুলোর শাস্ত্রীয় সমর্থন বেদ-গীতায় খুব কমই আছে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে নেই ই; যেমন- কেউ মারা গেলে বৈষ্ণব সমাজের নিয়ম হচ্ছে শ্রাদ্ধ বাদ দিয়ে চৈতন্যদেবের উদ্দেশ্যে( মহাপ্রভুর) ভোগ দিতে হবে, কিন্তু এই ভোগের কথা বেদ বা গীতায় বলা নেই, সেখানে বলা আছে, শ্রাদ্ধ করেই সাধ্যমতো লোকদেরকে খাওয়াতে হবে। বৈষ্ণব সমাজের অনেকেই, নিজেদেরকে বেশি হিন্দু বা নিষ্ঠাবান হিন্দু প্রমান করার জন্য, অনেক ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ি করে থাকে, এজন্যই প্রবাদ বাক্যের সৃষ্টি হয়েছে- ‘দুই দিনের বৈরাগী নয়, ভাতেরে কয় অন্ন’। আমার ধারণা, এই বাড়াবাড়ির কারণেই শুধু এক জায়গা, কপালের তিলককে, তারা দেহের পাঁচ জায়গা বা ১২ জায়গায় নিয়ে গেছে, আমার মতে এটি বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়।
এবার আসি তুলসী মালার প্রসঙ্গে:
অনেকেই হয়তো জানেন না যে, বেল গাছে যেমন শিব বাস করে, তেমনি তুলসী গাছে বাস করে স্বয়ং বিষ্ণু এবং সাধারণভাবে লোকজন যেহেতু লক্ষ্মীকে বিষ্ণুর স্ত্রী মনে করে, সেজন্যই লক্ষ্মী পূজায়, লক্ষ্মীর পায়ে তুলসী পাতা দেয় না। বাস্তবের স্বামী স্ত্রীর মতো বিষ্ণু এবং লক্ষ্মী, স্বামী-স্ত্রী না হলেও আসলে বিষ্ণুর নারী শক্তি হলো লক্ষ্মী। বিষ্ণু যেহেতু পালন কর্তা, আর কাউকে পালন করতে লাগে ধনসম্পদ, এজন্য বিষ্ণুর নারী শক্তি লক্ষ্মী হলো ধনের দেবী।
তুলসী গাছে বাস করে বিষ্ণু, সেই সূত্রে তুলসীর কাঠ এবং তুলসী কাঠের মালাতেও বাস করে বিষ্ণু। এজন্যই তুলসী গাছ মরে গেলে তা আগুনে পোড়ানো হয় না, জলে ভাসিয়ে দিতে হয় এবং তুলসী কাঠের মালা গলায় পরিধান করার মানেই হলো, শিব যেমন সাপকে তার গলায় পেঁচিয়ে রেখে সাপকে আপন করে নিয়েছে, তেমনি আপনিও তুলসীর মালাকে গলায় পেঁচিয়ে রেখে বিষ্ণুকে আপন করে রেখেছেন। এখন স্বয়ং ঈশ্বর যদি আপনার গলায়, আপনার সাথে থাকে, তাহলে সে আপনার কেমন উপকার করবে, একটু চিন্তা করুন; কারণ, তার সাথে আপনার সম্পর্ক তখন সাধারণ সম্পর্ক নয়, একেবারে আত্মার সাথে আত্মার সম্পর্ক, এজন্যই আত্মার সাথে আত্মার সম্পর্ক বোঝাতে বলা হয়-গলায় গলায় ভাব। কেউ যখন তুলসীর মালা গলায় পরে, তার সাথে আসলে ঈশ্বরের সম্পর্ক এ্রই রকম স্তরে পৌঁছায়। এর উপর ভিত্তি করেই শাস্ত্রে তুলসীর মালা পরার উপকারিতা সম্পর্কে বলা হয়েছে- আপনার এই উপকার হবে, ঐ উপকার হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি নানা ইহলৌকিক এবং পারলৌকিক মঙ্গল ও উন্নতির কথা। তবে বাস্তবেও তুলসীর মালা গলায় পরলে আপনার যে উপকার হবে বা হয় সেগুলো হলো- খারাপ চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা যায়, মন শান্ত থাকে, দেহ ও মন নানা প্রকার রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকে, পরিবারে সুখ শান্তি বজায় খাকে, কোনো অশুভ শক্তি কোনো ক্ষতি করতে পারে না; যিনি তুলসী মালা গলায় পরেন, তিনিই যে শুধু এই উপকারগুলো পান, তাই নয়, তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এর সুফল কিছুটা পায়।
এবার আসি মাথার টিকি বা শিখার প্রসঙ্গে :
মাথার সব চুল যদি কোনো কারণে কামিয়ে ফেলা হয়, তাহলে হিন্দু বিশ্বাস মতে, মাথার ঠিক উপরে শীর্ষবিন্দুতে, যেখানে চুলের মধ্যে পাক থাকে, সেখানে একগুচ্ছ চুল রেখে দিতে হয়; যদিও এটা এখন শুধু ব্রাহ্মণ এবং বৈষ্ণবদের মধ্যেই দেখা যায়, তবুও এটা শুধু সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী ই নয়, সকলের জন্যই প্রযোজ্য, এর বৈজ্ঞানিক কারণ হলো- মাথার যে জায়গায় টিকি বা শিখা রাখার নিয়ম, ঠিক তার নিচে থাকে নার্ভের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সেন্টার পয়েন্ট।
মস্তিষ্ক্যের স্নায়ুতন্ত্রের সুরক্ষার জন্যই মানুষের মাথায় চুলের উৎপত্তি। একারণে কেউ যদি নিয়মিতভাবে ন্যাড়া মাথায় থাকে, তাহলে তার কোনো না কোনো স্নায়ুবিক ক্ষতি হতে বাধ্য। এছাড়াও প্রাকৃতিক কারণে যাদের মাথায় টাক পড়ে, সেটা তো শারীরিক কোনো প্রব্লেম বা হরমোন জাতীয় সমস্যার কারণেই পড়ে। প্রাকৃতিকভাবে হওয়া টাকের এই সমস্যায় প্রমান করে যে, কেউ যদি নিয়মিত ইচ্ছাকৃতভাবে মাথার চুল কামিয়ে ফেলে সেও কোনো না কোনো শারীরিক সমস্যাকে নিজের মধ্যে ডেকে আনছে।
অনেকদিন আগে, হয় হঠাৎ আমার মনে হয়েছিলো বা কারো কাছ থেকে শুনেছিলাম যে, ‘যার মাথার উপরে কিছু নেই, তার মাথার ভেতরেও কিছু নেই’।
প্রাকৃতিকভাবে যারা টাকের শিকার, তারা বিষয়টিকে অন্যভাবে নেবেন না, আপনারা তো বুঝতেই পারছেন যে, কোনো শারীরিক সমস্যার কারণেই আপনাদের এই সমস্যার উৎপত্তি, অর্থাৎ আপনাদের কোনো না কোনো হরমোনাল প্রব্লেম আছে; এটা নিয়ে আপনাদের কষ্ট আছে, অসময়ে এটা হলে তা সারানোর চেষ্টাও আছে; কিন্তু আমাদের সাধু-সন্ন্যাসীরা ইচ্ছা করে নিয়মিতভাবে তাদের মাথার চুল ফেলে দেয় কেনো, বিশেষ করে ইসকন ভক্ত এবং চৈতন্যদেবের অনুসারীরা ? রাম, কৃষ্ণসহ আমাদের মুনি ঋষিরা, কে কবে, কোথায়, কখন তাদের মাথা্র চুল ফেলে দিয়েছিলো ? মাথায় চুল গজাবে এবং তাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে, যেমন রাখা হয় হাতের নখ- এটাই প্রকৃতির নিয়ম। প্রকৃতির এই নিয়মকে তারা মানতো বলেই তারা সমাজ ও ধর্মের জন্য কিছু করে যেতে পেরেছে, তাই তাদেরকে আমরা পূজা করছি, সেই তুলনায় আমাদের হাজার কোটি টাকার মালিক সংগঠন ইসকন এবং কোটি টাকার মালিক আশ্রমগুলো হিন্দু সমাজের জন্য কী করতে পারছে ?
যাদের মাথার উপরে কিছু নেই, তাদের মাথার ভেতরেও যে কিছু নেই, এটা কি আর এমনি আমার মাথায় বা অন্য কারো মাথায় এসেছে বা এখন তা সঠিক মনে হচ্ছে ? বর্তমান সাধু- সন্ন্যাসীদের আচরণ এবং মনোভাব দেখেই এটা বিশ্বাস হতে বাধ্য হচ্ছে। এটা যদি আরো ভালো করে বুঝতে চান, তাহলে বাংলাদেশের হিন্দুদের কথা না হয় বাদ ই দেন, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের মার খাওয়ার এবং বিভিন্ন স্থানে পূজা করতে না পারা এবং এই সব বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের অলি গলিতে স্থাপিত হিন্দু ধর্মীয় আশ্রমের ন্যাড়া মাথার সাধু-সন্ন্যাসী-মহারাজদের ভূমিকাকে বিশ্লেষণ করে দেখুন। এই গত ২০১৭ সালেই সরস্বতী পূজা করার জন্য স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চারা রাস্তায় নেমে পুলিশের মার খেয়ে মাথা ফাটাচ্ছে, আর এসবের প্রতিবাদ না করে, আমাদের মুণ্ডিত মস্তক হিজড়া মহাশয়েরা আশ্রমে বসে হিন্দুদের টাকায় খেয়ে বসে খেয়ে খেয়ে নাদুস নুদুস দেহে হরি নাম গাইছে! আরে হারামজাদারা, হরি নামই যদি হিন্দুর মুক্তির একমাত্র এবং শেষ পথ হতো, তাহলে শ্রীকৃষ্ণ কি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ লাগাতো, না অর্জুনকে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করতে বলতো ?
যা হোক, মস্তিষ্ক্যের এই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নার্ভ পয়েন্ট, কোনো কারণে মাথার চুল কামিয়ে ফেললেও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তার জন্য কিছুটা রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের নাপিতরা এই বিজ্ঞান জানে না ব'লে, ছোট করে মাথার উপরে টিকি রাখে, যাতে তা দেখা না যায়; আর আমরাও অন্যের উপহাসের শিকার যাতে না হই, আবার যাতে শাস্ত্রও মানা হয়, সেজন্য নাপিতদেরকেও ছোট করে টিকি রাখতে বলি। কিন্তু এই টিকি রাখতে হবে কমপক্ষে আধা বর্গইঞ্চি এলাকা জুড়ে এবং ঠিক যেখানে মাথার চুলের মধ্যে পাক আছে, সেখানে। তাহলেই কেবল আপনার মাথার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নার্ভ পয়েন্ট সূর্যের আলো বা অন্য কোনো ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকবে; আর এটা তো পরিষ্কার যে, স্নায়ুতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য, কারণে অকারণে যখন তখন মাথার চুল কামিয়ে ন্যাড়া হওয়া যাবে না।
আশা করছি- তিলক পরা, তুলসীর মালা গলায় দেওয়া এবং মাথার টিকি বা শিখা রাখার কারণ সম্পর্কে, বন্ধুদেরকে কিছুটা হলেও ধারণা দিতে পেরেছি।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রী কৃষ্ণ।
No comments:
Post a Comment