Thursday, 4 June 2020

জ্যোতিষ শাস্ত্রে সূর্য কেনো গ্রহ এবং রাহ ও কেতুর অবস্থান কোথায় ?


জ্যোতিষ শাস্ত্রে সূর্য কেনো গ্রহ এবং রাহ ও কেতুর অবস্থান কোথায় ?

যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয় ১ বছরে কত দিন ? সে উত্তর দেবে ১ বছরে ৩৬৫ দিন। সাধারণভাবে এই উত্তরটি সঠিক, কিন্তু সূক্ষ্মতার বিচারে এটি একটি ভুল উত্তর; কারণ, সূর্যের চারপাশে পৃথিবী এক পাক ঘুরলে হয় এক সৌর বছর, যাকে আমরা বলি বৎসর বা বছর, এই এক পাক ঘুরতে পৃথিবীর বর্তমানে সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড। এখন বলেন, এক বছরে যদি বলা হয় ৩৬৫ দিন, সেটা ভুল কি না ? কিন্তু এই উত্তরটিকেই আমরা সঠিক বলে ধরে নিয়েছি সাধারণ বিচারে।

আবার যদি জিজ্ঞেস করা হয় ১ দিনে কত ঘন্টা ? বলবে- ২৪ ঘন্টা। কিন্তু ২৪ ঘন্টার মধ্যে কি রাত নেই ? অবশ্যই আছে। তাহলে ১ দিন সমান ২৪ ঘন্টা এই উত্তরটাও সাধারণভাবে ভুল; কিন্তু এটাকেও আমরা সঠিক উত্তর বলে ধরে নিয়েছি সাধারণ বিচারে।

ভারতীয় জ্যোতিষে- শনি, রবি(সূর্য), সোম(চন্দ্র), মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্র এবং রাহু ও কেতু- এই নয়টিকে নবগ্রহ হিসেবে ধরে নিয়ে জ্যোতিষের বিচার বিশ্লেষণ করা হয়। বৈদিক মুনি ঋষিরা এই নয়টিকে নিয়ে তাদের হিসেবে নিকেশ করেছিলেন; কারণ, খালি চোখে তারা এই নয়টিকেই দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে ইউরোপ আমেরিকার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা টেলিস্কোপ দ্বারা ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটো আবিষ্কার করার পর আগের ৯টির সাথে এই ৩টি যুক্ত করে বিচার বিশ্লেষণ করেন, ফলে ভারতীয় বা প্রাচ্যের পরিবর্তে পাশ্চাত্য জ্যোতিষ বা ওয়েস্টার্ন এস্ট্রোলজি অনেক বেশি নির্ভুল এবং কার্যকর।

যা হোক, আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটো আবিষ্কার করার পর আমাদের সৌরজগতের মোট সদস্য এখন পৃথিবীসহ ১১, এর সাথে সাম্প্রতিক আবিষ্কার এক্স এ ভালকানকে যুক্ত করলে এই সংখ্যাটি হয় ১৩, কিন্তু এক্স ও ভালকান, জ্যোতিষ বিচারে এখনও অংশগ্রহন করতে পারে নি বলে, এদেরকে আমি আলোচনা থেকে বাদ দিচ্ছি।

যা হোক, সৌরজগতের মোট ১১ সদস্যের মধ্যে একজন হলো নক্ষত্র (সূর্য) এবং আরেকজন হলো উপগ্রহ(চন্দ্র), বাকিগুলো হলো গ্রহ। কিন্তু জ্যোতিষ বিচারে পৃথিবীকে বাদ দিয়ে অন্তরীক্ষের সবগুলোকেই গ্রহ বলে ধরে নিয়ে হিসেব নিকেশ করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- কেনো ? কেনো জ্যোতিষীরা সূর্য, চন্দ্রসহ সবগুলোকেই গ্রহ বলে বিবেচনা করেন ?

এই প্রবন্ধের শুরুতেই দুটি উদাহরণ দিয়েছি, উত্তরটা তার মধ্যেই রয়েছে, আর সেটা হলো- সাধারণ বিচারে।

আরেকটি বিচারে জ্যোতিষীরা সৌরজগতের সদস্যগুলোকে ঢালাওভাবে একই কাতারে ফেলে গ্রহ হিসেবে বিবেচনা করেন, আর সেটা হলো কার্যকারিতার দিক থেকে।

জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী একটা মানুষের উপর পৃথিবীর উপগ্রহ চন্দ্রের যেমন প্রভাব, তেমনি নক্ষত্র বলে বিবেচিত সূর্য বা রবিরও একই ধরণের প্রভাব, আবার এই একই ধরণের প্রভাব অন্যান্য গ্রহেরও, যদিও প্রত্যেকটা গ্রহের কার্যকারিতার ফল আলাদা আলাদা, এই প্রভাবের বিচারে সৌরজগতের সকল সদস্যের ভূমিকা একই। এই কারণেই- জ্যোতিষ শাস্ত্রে, সৌরজগতের বেশিরভাগ সদস্যের পদবী অনুযায়ী সৌরজগতের সকল সদস্যকে সাধারণ বিচারে গ্রহ বলে সম্বোধন করা হয়।

আশা করছি- জনৈক নাস্তিকের প্রথম প্রশ্নের জবাব দিতে পেরেছি, এবার দেখা যাক এ সম্পর্কে তাদের দ্বিতীয় প্রশ্ন- নবগ্রহে রাহু ও কেতুর অবস্থান কোথায়, সে সম্পর্কে -

আমরা জানি, সৌরজগতের- চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবীর আবর্তনের ফলে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ হয়। এই প্রক্রিয়ার একটি টার্ম হলো প্রচ্ছায়া ও উপচ্ছায়া। চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময় যে ছায়ার সৃষ্টি হয় তাকে বলে প্রচ্ছায়া, এই প্রচ্ছায়ারও যে ছায়া তাকে বলে উপচ্ছায়া। আলোক উৎস একবিন্দু না হয়ে যদি উৎস হয় বড় কিছু তখন ছায়ার দুটি অংশ তৈরি হয় একটি প্রচ্ছায়া, অন্যটি  উপচ্ছায়া । এই প্রচ্ছায়া ও উপচ্ছায়ার দৈর্ঘ্য নির্ভর করে উৎস থেকে অস্বচ্ছ পদার্থের দূরত্ব এবং যার ওপর ছায়া পড়বে তার অবস্থানের ওপর।

যা হোক, সৌরজগতের মধ্যে প্রচ্ছায়া হলো গাঢ় কালো অন্ধকার এবং উপচ্ছায়া হলো সেই গাঢ় অন্ধকারের পাশেই চারেদিকে আর একটু কম অন্ধকার।

সৌরজগতের গ্রহগুলো যেমন মানুষের উপর প্রভাব ফেলে, তেমনি সেই গাঢ় কালো অন্ধকারও মানুষের উপর প্রভাব ফেলে। এই গাঢ় কালো অন্ধকারের প্রচ্ছায়া অংশটিকে রাহু এবং উপচ্ছায়া অংশটিকে কেতু বলে কল্পনা করা হয়েছে এবং এগুলো যেহেতু দেখতে অনেকটা গোলাকার বলয়ের মতো এবং শনিরও গোলাকার বলয় আছে, তাই রাহু ও কেতুকে প্রায় শনির সমতুল্য ফল দাতা বলে মনে করা হয়।

নাস্তিকেরা আধুনিক বিজ্ঞানের জ্ঞান নিয়ে বহু বাহাদুরী করে, কিন্তু সনাতন ধর্ম যে আধুনিক বিজ্ঞানীদের বাপের আদি বাপ, সেটা তারা খেয়াল করে না। যেমন- চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের প্রকৃত কারণ বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে এই সেদিন, ৬০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ইসলামের নবী মুহম্মদ তো সূর্যগ্রহণের ভয়ে প্রায় প্রস্রাব করে ফেলতো, ১৪/১৫শ সালের আগে কোনো বিজ্ঞানীও তো বিশ্বাস করতো না যে সূর্য নয় পৃথিবীই ঘুরে; কিন্তু সেই ৮/১০ হাজার বছর আগে আমাদের মুনি ঋষিরা চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের ঘটনাকে বিশ্লেষণ করে প্রচ্ছায়া ও উপচ্ছায়াকে রাহু ও কেতু বলে বর্ণনা করে গেছেন, সেটাও আবার সম্পূর্ণ থালি চোখে দেখে। বিজ্ঞানীরা যখন কিছু বলে তখন সেটা ঠিক, আর সেই একই তথ্য যখন কোনো হিন্দু পুরাণে থাকে, তখন সেটা নিয়ে নাক সিটকানি, এই হলো নাস্তিকদের স্বভাব, তাদের এই স্বভাব তখনই যাবে, যখন তাদের পাছায় আঁচাছা বাঁশ ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে, যেটা এখন বর্তমানে আমি লেখার মাধ্যমে করে যাচ্ছি।

যা হোক, প্রযুক্তির কোনো সাহায্য ছাড়াই সম্পূর্ণ খালি চোখে দেখে সেই ৮/১০ হাজার বছর আগে, শুধু সৌরজগতের গ্রহগুলোর বর্ণনা দেওয়াই নয়, আমাদের সৌরজগতের আশে পাশের ২৭টি নক্ষত্রপুঞ্জ, যাদেরকে জ্যোতিষ শাস্ত্রে শুধু নক্ষত্র হিসেবে বর্ননা করা হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কেও বলে গেছেন আমাদের মুনি ঋষিরা; মুনি ঋষিদের দিব্যজ্ঞান বা ক্ষমতা কতখানি ছিলো, সেটা একবার চিন্তা করুন। শুধু এখানেই শেষ নয়, সেই গ্রহ নক্ষত্রগুলোর মানুষের উপর কী প্রভাব, কোন গ্রহ নক্ষত্র কোন অবস্থানে থাকলে কোনো মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কেমন হবে, সে সম্পর্কেও বলে গেছেন আমাদের মুনি ঋষিরা, যা চিরন্তন সত্য। এ ব্যাপারে মুনি ঋষিদের জ্ঞানের কাছে আমাদের বিজ্ঞানীরা শুধু শিশু নয়, তাদের এখনও জন্মই হয় নি, এমনকি তারা মাতৃগর্ভেও নেই।

পৃথিবীর কোনো ঘটনা ই হিন্দু পুরাণে বর্ণিত ঘটনার বাইরে নয়, এমনকি নাস্তিকেরাও নয়। নাস্তিক মানে হলো যে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করে না। হিন্দু পুরাণে এমন অনেক অসুর আছে যারা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করে না, যেমন হিরণ্যকশিপু, তাই হিরণ্যকশিপু, তার হরিভক্ত পুত্র প্লহ্লাদকে জিজ্ঞেস করেছিলো, কোথায় থাকে তোর ভগবান, তাকে ডাক। ফলে সাথে সাথেই ঘরের পিলার বা স্তম্ভ বিদীর্ণ করে নৃসিংহরূপী ভগবান আবির্ভূত হন এবং হিরণ্যকশিপুকে হত্যা করে।

নাস্তিকতা সনাতন ধর্মের একটি অংশ, তাই শাস্ত্রে বলা হয়েছে- "নাস্তিকো পরমঃ ভক্তো"। নাস্তিকেরা এরকম প্রশ্ন তুলে বলেই আমার মতো হরি ভক্তরা সেগুলোর জবাব দেয় এবং তার ফলে সাধারণ মানুষরা সে সম্পর্কে জানতে পারে। তাই নাস্তিকদের আমি খারাপ মনে করি না, কিন্তু যখন তারা নিজেদের অবস্থান ভুলে গিয়ে নিজেদেরকে অসনাতনী মনে করে এবং সনাতন বা হিন্দুধর্ম সম্পর্কে যা তা বলে তখনই তাদের পাছায় বাঁশ দিতে ইচ্ছা হয়।

যা হোক, কোনো নাস্তিক বা কেউ যখন সনাতন ধর্মের সমালোচনা করে, তখন আমার মনে হয় সে অক্সিজেনের সমালোচনা করছে, যে অক্সিজেন নিয়ে সে বেঁচে আছে। পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই, যে একদিন সনাতন ধর্মের বিধি বিধান পালন করা ছাড়া দিন অতিবাহিত করতে পারে; কারণ- প্রকৃতি, যাতে মানুষের জন্ম এবং যা বাস্তব অর্থাৎ যা করতে মানুষ বাধ্য হয় তাই সনাতন ধর্ম। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি- পূজা পার্বন সনাতন ধর্ম নয়, সনাতন ধর্মীয় মানুষের এক একটি অনুষ্ঠান বা উৎসব মাত্র।

আশা করছি নাস্তিকদের সাথে সাথে আমার পাঠক বন্ধুরাও উপর্যুক্ত প্রশ্নের যোগ্য জবাব পেয়েছে।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment