Saturday, 23 May 2020

বেদ দ্বারা কি মোক্ষলাভ করা সম্ভব ?


বেদ দ্বারা কি মোক্ষলাভ করা সম্ভব ?

আসুন দেখি এ ব্যাপারে গীতা কী বলে-

গীতার দ্বিতীয় অধ্যায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,

"হে পার্থ, অল্পবুদ্ধি ব্যক্তিগণ বেদের কর্মকাণ্ডের স্বর্গফলাদি প্রকাশক প্রীতিকর বাক্যে অনুরক্ত, তাহাদের মতে ইহা ছাড়া অন্য কোনো তত্ত্ব নাই, জন্মকর্ম-ফলপ্রদ বহুক্রিয়াযুক্ত ভোগৈশ্বর্যে তাহারা সর্বদা কামনাপরায়ণ ও স্বর্গকামী হয়। এই সকল শ্রবণ রমণীয় বাক্য দ্বারা অপহৃতচিত্ত, ভোগৈশ্বর্যে আসক্ত ব্যক্তিগণের কার্যাকার্য নির্ণায়ক বুদ্ধি এক বিষয়ে (ঈশ্বরে) স্থির থাকে না।"- (২/৪২,৪৩,৪৪)

"হে অর্জুন, বেদের কর্মকাণ্ড ও ক্রিয়াসকল ত্রিগুণাত্বক। তুমি সকল প্রকার কর্মফলের আশা ছাড়িয়া নিত্যসত্ত্বস্থ হও, সুখ দুঃখের দ্বারা বিচলিত হইও না।"- (২/৪৫)

"ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলাশয়ে যে প্রয়োজন সিদ্ধ হয়, এক বিস্তীর্ণ মহাজলাশয়ে সেই সমস্তই সিদ্ধ হয়, সেইরূপ বেদোক্ত কাম্য কার্মসমূহে যে ফল লাভ হয়, ব্রহ্মবেত্তা ব্রহ্মনিষ্ঠ পুরুষের সেই সমস্তই লাভ হয়।"- ২/৪৬)

-গীতার এই তিনটি শ্লোকে সরল অর্থ হলো- নির্বোধেরা শুধু বেদ নিয়ে পড়ে থাকে, তাই তাদের জ্ঞান ঈশ্বরে নিবিষ্ট হয় না। বেদের কর্মকাণ্ড- সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ- এই তিন গুন দ্বারা প্রভাবিত, এর উর্ধ্বে না উঠলে মোক্ষলাভ হয় না এবং ব্রহ্মনিষ্ঠ পুরুষের বেদের কর্মকাণ্ডের ফল এমনিই লাভ হয়, তার জন্য বেদের চর্চা করতে হয় না।

এরপর গীতার নবম অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-

"ত্রিবেদী যাজ্ঞিকেরা যজ্ঞাদি দ্বারা আমার পূজা করিয়া যজ্ঞশেষে সোমরস পানে পাপ হইতে মুক্ত হইয়া স্বর্গলোক প্রার্থনা করেন, তাহারা পুণ্যফলে স্বর্গে গিয়া দিব্য স্বর্গসুখ ভোগ করেন।"- (৯/২০)

"তাহারা সেই স্বর্গসুখ ভোগ করিয়া পুণ্যক্ষয় হইলে আবার মর্ত্যলোকে জন্ম নেন। এইরূপে যাগযজ্ঞাদি বেদোক্ত ধর্ম অনুষ্ঠান করিলে কামকারীরা পুনঃ পুনঃ সংসারে যাতয়াত করিয়া থাকেন।"-(৯/২১)

-গীতার এই দুটি শ্লোকের সরল বক্তব্য হলো- বেদ নির্দেশিত কর্মকাণ্ডের দ্বারা স্বর্গ লাভ হয় এবং স্বর্গভোগ শেষে পুনরায় পৃথিবীতে জন্ম হয়, মোক্ষ লাভ কখনো হয় না।

আর্য সমাজীরা বলেন- গীতায় যেখানে 'আমি' দ্বারা শ্রীকৃষ্ণ কথা শুরু করেছেন, সেটা তিনি যোগ দ্বারা ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হয়ে ঈশ্বরের কথাই বলেছেন। তো গীতার ৯ম অধ্যায়ের এই দুটি শ্লোক, আর্য সমাজীদের মতে পরমব্রহ্মেরই বাণী, যোগ দ্বারা পরমব্রহ্মের সাথে যুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণ যেটা বলেছেন; তাহলে পরমব্রহ্ম এখানে কী বললেন ? পরমব্রহ্ম তো বললেন, বেদ নির্দেশিত কর্মকাণ্ড দ্বারা স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটে, মোক্ষ লাভ হয় না, ফলে আত্মাকে বারবার পৃথিবীতে দেহ ধারণ করে  আসতে হয়।

এরপরও কি আর্য সমাজীরা দাবী করবে যে- বেদ এ মোক্ষলাভের বিষয়ে বলা আছে ?
তারা দাবী করতেই পারেন; কারণ, তারা তো যুক্তির ধার ধারেন না, তারা শুধু বোঝেন একগুয়েমী তর্ক। কোথাও আটকে গেলেই তারা আপনাকে লাইভে বা কমেন্ট বক্সে এসে তর্ক বিতর্ক করার আহ্বান জানাবেন, কিন্তু আপনার যুক্তিসঙ্গত পোস্টের জবাব কখনোই তারা পোস্ট লিখে দেবেন না। আর দেবেন কোথা থেকে, যুক্তি থাকলে তো পোস্ট লিখে জবাব দেবেন ?

পাড়ার ঝগড়াটে মহিলাকে সবাই এড়িয়ে চলে, তার কথার জবাব যুক্তিতে দিতে পারবেন না, এই ভয়ে নয়; ঐ ঝগড়াটে মহিলা যুক্তি না বুঝে চিৎকার করে গলা ফাটিয়ে নিজে জয়ী হওয়ার চেষ্টা করবে, এই ভয়ে। বর্তমান সনাতনী সমাজে আর্য সমাজীগণও পাড়ার সেই ঝগড়াটে মহিলার মতো, যারা যুক্তি বুঝবে না, আপনার কথার যুক্তিসঙ্গত জবাবও দেবে না, কিন্তু ঠিক আপনাকে- বালক, শিশু, মূর্খ, গাধা বলে গালি দেবে।

আরে ভাই, আপনারা বেদ গবেষণা করে সনাতন ধর্মের যে প্রকৃত সত্য জেনেছেন, সেগুলো বৈষ্ণব গুরুদের মতো নিজেদের পেটের মধ্যে না রেখে প্রবন্ধ লিখে অনলাইনে প্রকাশ করেন, আপনাদের যুক্তি যদি সঠিক হয়, আমরাও আপনাদের অনুসারী হবো। কিন্তু আমাদের কথার যুক্তিসঙ্গত ও ভদ্রোচিত জবাব না দিয়ে যদি আমাদেরকে মূর্খ বলে গালি দেন, শুধু আমরাই আপনাদের থেকে দূরে সরে যাবো না, কিভাবে আপনারা জনশূন্য হন, সেই চেষ্টাও করবো।

আর্য সমাজীগণের উদ্দেশ্যে চুড়ান্ত কথা বলছি- আমাকে কেউ রোধ করতে পারে শুধুমাত্র সঠিক যুক্তি ও সত্যের ভিত্তিতে, অন্য কিছুতে নয়।

আশা করছি- কী বললাম, সেটা বুঝতে নয় উপলব্ধি করতে পেরেছেন।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment