Saturday, 23 May 2020

দয়ানন্দ সরস্বতী কি মহর্ষি ? - ২


#Tusar_Kanti_Sarker এর উদ্দেশ্যে নিবেদিত পোস্ট-

দয়ানন্দ সরস্বতী কি মহর্ষি ? - ২

ভক্ত-শিষ্যরা, ভালোবেসে তাদের গুরুদেরকে নানারকম উপাধিতে ভূষিত করে, এটা যতক্ষণ তাদের গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, ততক্ষণ এতে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু যখন সেটা পুরো সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং তার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত শাস্ত্রীয় বিষয়গুলোকে আঘাত করা হয়, তখন সেটাকে আর বরদাস্ত করা যায় না।

আর্য সমাজীরা, তাদের গুরু দয়ানন্দ সরস্বতীকে মহর্ষি বলে এবং তার পেছনে নানা কুযুক্তি পেশ করে সেটাকে শাস্ত্রসম্মত বানানোর চেষ্টা করে বা করছে, এর ফলে সনাতন ধর্মের মূল কাঠামোতে আঘাত লাগছে এবং সনাতন ধর্মের শ্রদ্ধার্ঘ্য বা পূজনীয় ব্যক্তিদেরকে অপমান করার চেষ্টা হচ্ছে, আর্য সমাজীদের এই হীন অপচেষ্টার বিরুদ্ধেই আমার এই প্রতিবাদ-

দয়ানন্দ সরস্বতীকে মহর্ষি বলার প্রতিবাদে আমি- "দয়ানন্দ সরস্বতী কি মহর্ষি ?" শিরোনামে একটি প্রবন্ধ বেশ অনেক আগেই ফেসবুকে পাবলিশ করেছি, সম্প্রতি সেই পোস্ট খণ্ডন করার চেষ্টা করে তুষার সরকার নামে এক আর্য সমাজী, দয়ানন্দকে কেনো মহর্ষি বলা যাবে, সেই বিষয়ে একটি প্রবন্ধ অনলাইনে ছেড়েছে, যেটাকে আমি প্রকৃত ডিবেট মনে করি; কারণ, এখানে হাতাহাতি বা মারামারি ঘটার সুযোগ নেই, আবার তাতক্ষণিক যা তা জবাব দেওয়ার পরিবর্তে চিন্তা ভাবনা করে সময় নিয়ে উত্তর দেওয়ার সুযোগ আছে; এসব কারণেই আমি আর্য সমাজীদেরকে বার বার পোস্ট লিখে জবাব দিতে অনুরোধ করছিলাম, কিন্তু তারা তো ভাসমান জলের মাছ, তাই আমার কথার গভীরতাকে উপলব্ধি করতে না পেরে বার বার আমাকে লাইভে বা সামনা-সামনি ডিবেট করতে ডাকে। কিন্তু আমি তো আর বাচ্চাদের কথা শুনে তাদের বা নিজের ক্ষতি করতে পারি না, তাই তাদের কথাকে পাত্তা দিই নি। যা হোক, অনেকদিন পর হলেও আর্য সমাজীরা আমার একটি পোস্টের জবাব লিখিত আকারে দিয়েছে, এই পোস্টে সেটার পয়েন্ট টু পয়েন্ট নয়, অন দ্যা পয়েন্টে জবাব দেবো; কারণ, যে রেফারেন্সগুলো তুষার উল্লেখ করেছে, বাস্তবে সেগুলো কোনো রেফারেন্সই নয়, যেহেতু সেগুলো বেদ গীতা থেকে প্রদত্ত হয় নি, আর সনাতন ধর্মের কোনো মীমাংসায় বেদ, গীতার বাইরে কোনো রেফারেন্সই গ্রহনযোগ্য নয়; কারণ, যে আইন সম্পর্কে দেশের সংবিধানে বলা নেই, বাস্তবে কোনো আইনের বইয়ে সেই আইনের উল্লেখ থাকলেও তার কোনো গুরুত্ব নেই। ফটো হিসেবে স্ন্যাপ করে তুষারের সম্পূর্ণ পোস্ট দিয়ে দিয়েছি, সেখান থেকে প্রয়োজন বোধ করলে আপনারা তুষারের রেফারেন্সগুলো দেখে নিতে পারেন।

তুষারের পোস্টের পয়েন্ট টু পয়েন্ট জবাব দেবার কোনো প্রয়োজনই নেই; তারপরও সবার বোঝার সুবিধার্থে দু একটি রেফারেন্স নিয়ে আলোচনা করছি-

শতপথ ব্রাহ্মণের একটি রেফারেন্স দিয়ে তুষার বলেছে-
"প্রাচীন কালে যাঁরা বেদমন্ত্রের তাৎপর্য জানতে কঠোর পরিশ্রম ও তপস্যা করেছিলেন, তাঁদেরই ঋষি বলা হয়।"

-অর্থাৎ গর্ভধারিণী জন্মদাত্রী মা এবং পালনকারী মায়ের মর্যাদা এক ব'লে তুষার এখানে বোঝাতে চাইছে; কিন্তু বাস্তবে যেটা এক নয়। কোনো ব্যক্তির কাছে তার জন্মদাত্রী মায়ের মর্যাদা সমগ্র নারী শুধু নয়, সমগ্র দেবীরও উপরে, মাতৃপ্রণাম মন্ত্রে "দেবীভ্যো রমণী শ্রেষ্ঠা"র মাধ্যমে যেকথা বলা হয়েছে। কিন্তু তুষার আমাদেরকে বোঝাচ্ছে জন্মদাত্রী মা এবং পালনকারী মায়ের মর্যাদা সমান; অর্থাৎ যারা তাদের কষ্টসাধ্য ধ্যানে এবং জ্ঞানে বেদমন্ত্রকে জানলেন এবং পৃথিবীতে আনলেন, আর যারা সেই বেদ মন্ত্রকে শুধু বুঝতে পারলেন, তাদের উভয়ের মর্যাদা নাকি সমান, উভয়েই ঋষি ! একথা শুনলে মূর্খরা না হাসুক, কুত্তাও হাসবে।

পোস্টের আরেক জায়গায় তুষার বলেছে- "ঋষি হচ্ছেন বেদ মন্ত্রের ব্যাখ্যাকর্তা।"
-উপরের অনুচ্ছেদে যা বললাম, এক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য। বাড়তি যা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, তা হলো- আপনি বা আমিও বেদমন্ত্রের ব্যাখ্যা করে ঋষি হতে পারি। এরজন্য দেব-দেবী বা ঈশ্বরের সাথে আধ্যাত্মিক যোগাযোগের কোনো ব্যাপার বা প্রয়োজন নেই। আমার তো মনে হচ্ছে, আর্য সমাজীদের এই সব প্রচার যদি হালে পানি পায়, তাহলে দয়ানন্দ সরস্বতীকে মহর্ষি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পর, নিজেদেরকেও ঋষি/মহর্ষি হিসেবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করার কাজ তারা শুরু করে দেবে। এদের এই অপচেষ্টাকে এখনই রোখা না গেলে নকল ঋষি/মহর্ষিদের ভীড়ে, আসল ঋষি/মহর্ষিরাই হয়তো হারিয়ে যাবে, আর হারিয়ে না গেলেও নকলদের কারণে আসলরা যে অপমানিত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই; কারণ, যে ব্যক্তি পিতা নয়, তাকে বাপ বললে ডাকলে আসল বাপেরই তো অপমান হয়। তাই আর্য সমাজীদের এই হীন অপচেষ্টাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করে দেওয়া প্রতিটি সনাতনীর ধর্মীয় দায়িত্ব।

যা হোক, নানা ছেঁড়া কাপড় চোপড় জোড়া তালি দিয়ে দয়ানন্দকে ঋষি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করার পর, তুষার, দয়ানন্দকে মহর্ষি হিসেবে তুলে ধরার জন্য কী বলেছে, সেটা দেখুন নিচের অনুচ্ছেদে-

" প্রাচীন কালে মনুষ্যগণ দেবতাদের (বিদ্বানদের) প্রশ্ন করেছিলেন যে, মনুষ্যদের মধ্যে কারা ঋষি হবেন। এর উত্তরে দেবতাগণ (বিদ্বানগণ) বলেছিলেন যে, তর্কই ঋষি। অর্থাৎ যাঁরা তর্কের মাধ্যমে গবেষণা পূর্বক বেদার্থ বুঝতে পারবেন, তাঁরাই আর্য ঋষি।[নিরুক্ত- ১৩।১২ তথা নিরুক্ত পরিশিষ্ট- ১।১২] নিরুক্ত পরিশিষ্টের এই উক্তি থেকে বোঝা যায়, তর্কের মাধ্যমে যাঁরা বেদার্থ জ্ঞাত হন, তাঁরাই ঋষি। এখন দয়ানন্দজীর জীবনী যদি আপনারা দেখেন, তবে দেখতে পারবেন তিনি এক জীবনে সহস্রাধিক তর্কসভায় অংশ গ্রহণ করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছিলেন। এমনকি এমনও অবস্থা হয়েছে, মহর্ষির সাথে তর্কে না পেরে তৎকালীন পণ্ডিতগণ অনেক কূটকৌশল, ছলের আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাই এমন সুতার্কিক বেদজ্ঞকে কি মহর্ষি বলাটা অন্যায়, অশাস্ত্রীয়?"

- প্রথমে আপনি দয়ানন্দকে ঋষি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করলেন-"প্রাচীন কালে যাঁরা বেদমন্ত্রের তাৎপর্য জানতে কঠোর পরিশ্রম ও তপস্যা করেছিলেন, তাঁদেরই ঋষি বলা হয়।" বা "ঋষি হচ্ছেন বেদ মন্ত্রের ব্যাখ্যাকর্তা।"- এই দুটো বাক্যের মাধ্যমে, যেখানে আপনি বুঝিয়েছেন, যারা বেদমন্ত্রের অর্থ বুঝতে পেরেছে, তারাই ঋষি। কিন্তু পরে আপনি দেবতাদের উক্তির মাধ্যমে বোঝাচ্ছেন যে- তর্কই ঋষি বা তর্কের মাধ্যমে যারা গবেষণা পূর্বক বেদার্থ বুঝতে পারবেন, তাঁরাই আর্য ঋষি। তাহলে এখন আপনিই বলুন, দয়ানন্দ বেদের অর্থ বুঝে সেই জ্ঞান নিয়ে তর্ক করতে গিয়েছিলেন, না তর্ক করতে গিয়ে বেদের জ্ঞান বুঝে গিয়েছিলেন ? আমরাও তো ঋষি বা মহর্ষি হতে চাই, তাই ঋষি বা মহর্ষি হওয়ার সঠিক পথ বা উপায়টা আমাদেরকেও জানান। আপনারা শুধু একাই কি ঋষি বা মহর্ষি হবেন ?

আপনি এও বলেছেন- "এমনকি এমনও অবস্থা হয়েছে, মহর্ষির সাথে তর্কে না পেরে তৎকালীন পণ্ডিতগণ অনেক কূটকৌশল, ছলের আশ্রয় নিয়েছিলেন।"

-এই কূটকৌশল ও ছলের কবলে প'ড়ে আপনার মহর্ষি যে পটল তুলেছেন, সেটা চেপে গেলেন কেনো ?

আমরা জানি যে- দয়ানন্দের মুখ বন্ধ করার জন্য ছলের আশ্রয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছিলো। যাঁরা মহর্ষি হিসেবে পরিচিত, তাঁরা অবশ্যই দিব্যজ্ঞানী ছিলেন এবং দিব্যজ্ঞানের দ্বারা তারা অনেক কিছু অগ্রীম জানতে পারতেন। তাছাড়া আপনারাই রেফারেন্স দিয়ে অনেকবার প্রমাণ দিয়েছেন যে যোগীদের ভূত ভবিষ্যৎ দর্শন করার ক্ষমতা ছিলো, যোগীদের স্থান তো মহর্ষিদের নিচে, তাহলে যোগীদের যদি ভূত ভবিষ্যৎ দর্শন করার ক্ষমতা থাকে, মহর্ষিদের থাকবে না ? অবশ্যই থাকবে। তার মানে দয়ানন্দ যদি প্রকৃতই মহর্ষি হতো, তাহলে তার দিব্যজ্ঞান থাকতো এবং তিনি তার ভবিষ্যৎ জানতে পারতেন, আর এই ক্ষমতা থাকলে অপঘাতে তার মৃত্যু হতো না বা কেউ তাকে হত্যা করতে পারতো না। কোনো প্রকৃত মহর্ষির অপঘাতে মৃত্যু হয়েছে বা কেউ কোনো মহর্ষিকে হত্যা করেছে, এমন কোনো রেফারেন্স দেখান দেখি ?

যা হোক, নিরুক্ত, নির্ঘণ্টু, নিরুক্ত পরিশিষ্ট, টীকা, টীকা ভাষ্য থেকে কালেক্ট করা কিছু গুরুত্বহীন রেফারেন্সের পর তুষার কিছু বাস্তব উদাহরণ প্রয়োগ করেছে দয়ানন্দকে মহর্ষি সিদ্ধ করার জন্য, এবার নজর দিই সেদিকে-

তুষার তার পোস্টে বলেছে- "এখন সেইসব কুচক্রী, অপপ্রচারকারী গন্ধমূষিকগণ নিশ্চয়ই ত্যানা নিয়ে বসবেন যে, এসব গ্রন্থে তো প্রাচীন কালের ঋষিদের কথা বলা হয়েছে। আধুনিক যুগের কেউ কিভাবে ঋষি হতে পারে? এর উত্তর হচ্ছে, সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র ও অরবিন্দ বুঝি প্রাচীন বৈদিক যুগের মানুষ? বঙ্কিমচন্দ্রকেও তো তাঁর সনাতন ধর্ম বিষয়ক গবেষণার জন্য ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র বলা হয়। শুধু তাই নয়, সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রকে ঋষি উপাধি দিয়ে ভারতে কলেজও রয়েছে।"

- বঙ্কিমচন্দ্র এবং অরবিন্দকে মানুষ ভালোবেসে ঋষি বলে, তাদের জ্ঞান এবং দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তাদের কল্যানকর কর্মের জন্য। উনারা নিজেকে কখনো ঋষি হিসেবে দাবী করেন নি বা তাদের কোনো ভক্ত শিষ্যও নেই যে তারা তাদেরকে হিন্দু সমাজে ঋষি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে বা করছে ? তাদেরকে কেউ ঋষি বলুক বা না বলুক, তাতে কারো কিছু যায় আসে না, আর তাতে সনাতন ধর্মের প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বেও কোনো ক্ল্যাশ সৃষ্টি হয় না। একই কথা প্রযোজ্য নরেন্দ্রমোদীকে রাজর্ষি বলার ক্ষেত্রেও, তার- জ্ঞান, গুন ও কর্মের জন্য তার অনুগামীরা তাকে ভালোবেসে রাজর্ষি বলে। কিন্তু আপনরা আর্য সমাজীরা দয়ানন্দকে মহর্ষি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একেবারে উঠে পড়ে লেগেছেন, এতে আমাদের প্রকৃত মহর্ষিদের অপমান হচ্ছে বলেই আমরা এর প্রতিবাদ করছি।

তুষার রেফারেন্স দিয়েছে- কোনো এক মুসলিম, হিন্দু হওয়ার জন্য যোগী আদিত্যনাথের কাছে এলে তিনি তাকে গীতা এবং সত্যার্থপ্রকাশ পড়ার জন্য বলেছেন।

-কোরান পড়া মুসলিম বা মুসলমানদের দ্বারা বিভ্রান্ত হিন্দুর জন্য সত্যার্থপ্রকাশ উপযোগী গ্রন্থ, তাই যোগী আদিত্যনাথ, তাকে সেই উপদেশ দিয়েছেন। কিন্তু একজন প্রকৃত হিন্দুর জন্য সত্যার্থপ্রকাশ যে একটি বিভ্রান্তমূলক গ্রন্থ, সেটা কিন্তু বর্তমানে নানা ভাবে নানা জনের দ্বারা প্রমাণিত। আমি নিজে কট্টর হিন্দু, সত্যার্থপ্রকাশ পড়ে হই নি, হয়েছি সনাতন ধর্মের বাস্তবতা এবং কৃষ্ণের মহিমাকে উপলব্ধি করে। তো আমার জীবনে সত্যার্থপ্রকাশের ভূমিকা কোথায় ?

তুষার, আরো রেফারেন্স দিয়েছে- ১৯৪০ সালের আগে আর এস এস এও আর্যসমাজের প্রার্থনা অনুসারে প্রার্থনা করা হত।"

-তো এখন করা হয় না কেনো ? নিশ্চয় আরএসএস এর কর্তারা বুঝতে পেরেছে যে আর্য সমাজকে ফলো করলে পুরো হিন্দু সমাজ ডেস্ট্রয় হয়ে যাবে, তাই তারা তা বাদ দিয়ে দিয়েছে।

প্রকৃত সত্যের পাশে কৃত্রিম তত্ত্বকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হলে কী সমস্যার সৃষ্টি হয়, তা বোঝানোর জন্য বাংলাদেশের একটি উদাহরণ দিই-

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের একজন মুক্তিযোদ্ধা, যিনি একটি সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে এবং যুদ্ধ করাকালীন তিনি সৌভাগ্যক্রমে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে বেতারে কয়েকবার পাঠ করে দেশবাসীকে তা জানিয়ে দেন। এটা একটি ঐতিহাসিক সত্য। কিন্তু জিয়ার দল বিএনপি ক্ষমতায় এসে, জিয়াকে বঙ্গবন্ধুর সমান করার চেষ্টা করে এবং এটা প্রচার করে যে জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষক। বিএনপি যতদিন ক্ষমতায় ছিলো বিএনপির এই প্রচার হালে পানি পেলেও, বিএনপি ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর এখন জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা দূরে থাক, তার নাম নেওয়ার লোকও এখন নাই। অথচ জিয়ার যে প্রকৃত পরিচয় তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, সেটাকে সবাই মানে এবং সেই হিসেবে তাকে সম্মানও করে। একইভাবে আর্য সমাজীরা যদি দয়ানন্দকে মহর্ষি বানানোর চেষ্টা করে, দয়ানন্দ সরস্বতীর প্রকৃত যে পরিচয় বা স্থান, একজন বেদপ্রচারক সন্ন্যাসী, সেটাও সে হারাবে, আর এর মূল কারণ হবে- বিএনপির মূর্খ লোকজনের মতো, আর্য সমাজের মূর্খ সদস্যরা, যারা তাদের গুরুকে যথাস্থানে না রেখে এত বড় করে তুলতে চায় যে সেখান থেকে তার পতন ছাড়া অন্য কোনো গতি নেই।

শেষে তুষার যা বলেছে, সেটা শুধু তার ধৃষ্টতা নয় অপরাধ, আর এই অপরাধের জন্য ওকে যদি গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলাও হয়, তাহলেও কোনো অন্যায় হবে না। কারণ, তুষার বলেছে-

"এক হরিয়ানার কবিরপন্থী রামপাল মহর্ষির নামে মিথ্যাচার করে আজ নারী কেলেঙ্কারির দায়ে জেলে রয়েছে। কয়েকদিন পর যে বাংলার সেই রামপালের অবৈধ যৌন কেলেঙ্কারিতুতো সন্তান, ব্যাঙের মতো লম্ফকারী, সারমেয় ও বরাহের ক্রাস ছানাটির ভাগ্যেও রামপালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কে দিচ্ছে? কাজেই অনলাইনে ধর্মচক্রের নামে মধুচক্র চালানো রাম রহিম, রামপাল, আশারাম বাপুর ভবিষ্যৎ বাংলা ভার্সন থেকে সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হল।"

-এতক্ষণ তুষারকে আমি বেশ সম্মান দিয়ে কথা বলেছি, কিন্তু এরপরও যদি সম্মান দিয়ে কথা বলি, সেটা হবে আমার নপুংসকতা, তাই তুষার যা পাবার যোগ্য, এবার ওকে আমি সেটাই দিচ্ছি-

তুই আমাদেরকে পরামর্শ দেওয়ার কে ? আমরা কি তোদের বাংলাদেশি গুরু সুভাষ শাস্ত্রীর মতো যৌন লিপ্সায় ভুগি যে মেয়ের বয়সী মধুছন্দার মতোদেরেকে যৌন সুড়সুড়ি মার্কা কথা বার্তায় আলাপ জমিয়ে যৌনতার স্বাদ নিতে চায় ?
দয়ানন্দের নামে সমালোচনা করে কবিরপন্থী রামপাল জেলে গিয়েছে, তাই না ? তোর দয়ানন্দের তো দেখি বিরাট আধ্যাত্মিক ক্ষমতা ? তাহলে সে অন্যের ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে রক্ষা করে নিজের প্রাণ বাঁচাতে পারে নি কেনো ?
আর আমরা বাংলার কৃষ্ণভক্তরা রামপালের অবৈধ যৌন কেলেঙ্কারীর সন্তান, তাই না ? এর মাধ্যমে তুই মাতৃজাতিকে অপমান করেছিস, সেটা বুঝতে পারছিস ? এর জবাবে আমি বলতে পারি তোদের মতো আর্য সমাজীদের জন্ম বারোয়ারি সিস্টেম, কিন্তু আমি সেটা বলবো না; কারণ, আমার মাকে যেমন আমি সম্মান করি, তেমনি তোর মাকেও আমি মা মনে করি, তাই তোর মাকে আমি অসম্মান করতে পারি না। যদি মানুষ হোস, আশা করছি তাহলে তুই তোর নিজের এবং আমার মধ্যের পার্থক্যটা বুঝতে পারবি।

তুই কৃষ্ণভক্তদের সম্পর্কে বলেছিস- ব্যাঙের মতো লম্ফকারী, সারমেয় ও বরাহের ক্রাস ছানাটির ভাগ্যেও রামপালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কে দিচ্ছে?

- নিশ্চয়তা ছিলো, যদি তোদের গুরু দয়ানন্দ প্রকৃতই মহর্ষি হতো। কারণ, মহর্ষিদের অভিশাপ কখনো মিথ্যা হয় না। দয়ানন্দ যেহেতু প্রকৃত মহর্ষি নয়, তাই সেটা নিয়ে আমাদের কোনো টেনশন নেই। বরং এটা ভেবে দ্যাখ, মহর্ষি না হয়েও নিজেকে মহর্ষি বলে প্রচার করার জন্যই তার উপর ঋষিদের অভিশাপ বর্ষিত হওয়ায় তার অমন অপঘাতে মৃত্যু হয় নি তো ? আর আমরা ব্যাঙ, কুকুর বা শুকর, এজন্মে না হলেও আগের জন্মে হয়ে থাকলে থাকতেও পারি; কারণ, আমরা তো পৌরাণিক পুনর্জন্মে বিশ্বাস করি। তবে এটা নিশ্চিত, কৃষ্ণ বিরোধী হওয়ায় তোরা আর্য সমাজীরা যে পরের জন্মে- ব্যাঙ, কুকুর, শুকর বা আরো খারাপ যোনীতে জন্ম হতে যাচ্ছে, এটা নিশ্চিত।

আর আমরা যে- অনলাইনে ধর্মচক্রের নামে মধুচক্র চালানো রাম রহিম, রামপাল, আশারাম বাপুর ভবিষ্যৎ বাংলা ভার্সন- সেটা তোরা পাবলিকের কাছে প্রমান করবি কিভাবে? একটা বুদ্ধি দিচ্ছি, তোদের স্ত্রী-কন্যা এবং বোনদেরকে ঐ চক্রের সাথে যুক্ত করে দিস, তাতে তোদের পেটও চলবে, আবার আমরাই যে সেই চক্রের লোক নয়, সেই প্রমাণও পেয়ে যাবি।

শোন, কৃষ্ণভক্তদের নামে বাজে কথা বলা বন্ধ কর। কারণ, শ্রীকৃষ্ণ কখনো বাজে কাজ করে নি, আর তার ভক্তদেরকেও তা করতে বলে নি। যারা ধর্মের আড়ালে বাজে কাজ করছে, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার, তাদের সাথে সকল কৃষ্ণভক্তের নাম জুড়ে দিয়ে নিজেরা যে চুড়ান্ত মূর্খ, সেটা আর প্রমান করিস না।

শেষে আরেকটি কথা বলি- তোরা আর্য সমাজীরা যতই চেষ্টা কর আমার মুখ বন্ধ করতে পারবি না বা আমাকে রোধ করতে পারবি না, তোরা যে যুক্তিই দে, সেটা যদি সত্য না হয়, তার পাল্টা যুক্তি আমি হাজির করবোই এবং তাতে তোদের নিজেদেরই ক্ষতি হবে, খেয়াল করে দেখ, আমার পোস্টে এসে কৃষ্ণ সম্পর্কে উল্টা পাল্টা মন্তব্য করে বা আমাকে চুলকিয়ে তোরা নিজেরাই আর্য সমাজের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছিস।

তোর এই পোস্টের জবাব আমি মাত্র কয়েকটা বাক্যে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু লিখতে লিখতে সেটা এত বড় হয়ে গেলো; এর কারণ হলো লিখতে বসি আমি, আর আমাকে দিয়ে লিখায় স্বয়ং পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ।

আপাতদৃষ্টিতে খুব বড় কথা বলে ফেললাম বলে আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা বিষয়টির অন্য মানে ধরে নেবেন না, এটাই বাস্তব এবং আমরা যা ই করি, সেটা তো ঈশ্বরই আমাদেরকে দিয়ে করায়। মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হয়েছিলো কৃষ্ণের পক্ষের এবং কৃষ্ণের বিরুদ্ধ শক্তির মধ্যে। সেই যুদ্ধ প্রসঙ্গে গীতার ১১/৩৩ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ যেমন অর্জুনকে বলেছেন- তুমি যুদ্ধের নিমিত্ত মাত্র হও, যা করার আমি করবো; তেমনি আমিও অর্জুনের মতো কৃষ্ণ বিরোধীদের সাথে কলম যুদ্ধে লিপ্ত আছি, যা করার স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণই করছেন, আমি আসলে এমনটাই বিশ্বাস করি।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment