Saturday, 23 May 2020

গীতা অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণের পূজা করা ঠিক নাকি ভুল ?


এই যে তোপ,

আমরা সনাতনীরা বেদকে সনাতন ধর্মের ভিত্তি মনে করি, আর্য সমাজীদের মতো বেদকে নিজের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করি না, তাই বেদ আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ, বেদ আমাদের উপর কোনো তোপ নয়।

গীতার ৪/৫ নং শ্লোকে যে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- তোমার ও আমার বহু জন্ম অতীত হয়েছে, এটা তিনি বলেছেন সনাতন ধর্মের একটি থিয়োরি এবং প্রকৃতির ধ্রুব সত্য জন্মান্তরকে বোঝাতে, নিজে মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়েছেন, সেটা বোঝানোর জন্য নয়; কারণ, তিনি এর পরের শ্লোকেই বলেছেন, "আমার জন্ম ও মৃত্যু নাই। আমি সকলের ঈশ্বর"-(৪/৬)।

শ্রীকৃষ্ণের জন্ম যে কোনো আর্য সমাজীর মতো সাধারণ জন্ম নয়, দিব্য জন্ম; সে কথা তিনি বলেছেন গীতার ৪/৯ নং শ্লোকে, এভাবে-

"যিনি আমার দিব্য জন্ম ও কর্ম প্রকৃতভাবে জানেন।"

মানুষ হিসেবে কৃষ্ণের যে জন্ম হয়েছিলো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু সে জন্ম কোনো সাধারণ জন্ম ছিলো না, ছিলো দিব্য জন্ম; সেটা উপরের শ্লোক দ্বারা প্রমাণিত। তাই গীতার ২/২৭ এ যে বলা হয়েছে-"জন্মিলে মৃত্যু আর মরিলেই জন্ম", সেটা আমার, আপনার বা আর্য সমাজীদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য; ঈশ্বররূপ শ্রীকৃষ্ণ, যিনি স্বেচ্ছায় জন্ম নিয়েছেন, আর স্বেচ্ছায় দেহ ত্যাগ করেছেন, তাঁর জন্য নয়।

অপঘাতে মৃত ব্যক্তি, যাদের আত্মা পৃথিবী থেকে কোনো কারণে মুক্তি পায় না, তারা পৃথিবীতে ভূত প্রেত হিসেবে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সূক্ষ্মদেহে বিরাজ করে। গীতার ১৭/৪ এ বলা হয়েছে, যারা এই সব ভূত প্রেতের পূজা করে তারা তামসিক ব্যক্তি। আপনি বলেছেন, শ্রীকৃষ্ণও মৃত্যু বরণ করেছিলেন, তাই তাঁর পূজা করা তামসিক; কারণ, আপনার হিসেবে শ্রীকৃষ্ণ ভূত বা প্রেত।

কোনো মানুষ মরার পর পৃথিবীতে সে ভূত বা প্রেত হিসেবে যে থেকেই যায়, সেটা আপনি কিভাবে শিউর ? নাকি আপনার বিবেচনায় মরার পর সবাই ভূত-প্রেত হিসেবে পৃথিবীতে থেকে যায় ? তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম যে- শ্রীকৃষ্ণ সাধারণ মানুষ ছিলেন, কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর আত্মাই যে পৃথিবীতে ভূত বা প্রেত হিসেবে অবস্থান করছে, এটা আপনি নিশ্চিত কিভাবে ?

আগে, পিছে বা গভীরভাবে না ভেবে, যে বা যারা কথা কথা বলে, তারা কিন্তু একেবারেই সাধারণ মানুষ; আপনারা, আর্যরাও আসলে এর বাইরে কিছু নন। অনেকেই বলে, আপনাদের কথার জবাব দেওয়া আসলে সময় নষ্ট করা, সূক্ষ্ম অর্থে তা ই। কিন্তু ইতর শ্রেণীর পশুদের মল মূত্র যদি বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী লোকেরা পরিষ্কার না করে, তাহলে তো সুস্থভাবে সমাজে বসবাসই করা যাবে না, এই দায় থেকেই আপনাদেরে অর্থহীন কথার জবাব আসলে আমি দিই, নিজেদের সুস্থভাবে বসবাস এবং ইহকালীন ও পরকালীন কল্যানের স্বার্থে।

এরপর আপনার পোস্টের কমেন্টেই আপনি মন্তব্য করেছেন-

"১২০০ বছর ধরে পেদানি খেলে তবু তোমার ঈশ্বরের দেখা নেই কেন ? এখনও ধর্মের থেকে অধর্ম বেশি তো আপনার ঈশ্বর কোন গর্তে ? তাই গীতার ঐ যদা যদা শ্লোক ধরে অবতাব বাদ কে ব্যাখ্যা করলে গীতার ঐ শ্লোক মহামিথ্যা শ্লোক।"

-১২০০ বছর ধরে হিন্দুরা পেদানি খেয়েছে ঈশ্বরের শিক্ষাকে গ্রহন না করার কারণে, এখানে ঈশ্বরের গর্তে থাকার কোনো ব্যাপার নেই। শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, আমাকে স্মরণ করো এবং যুদ্ধ করো, কিন্তু হিন্দুরা সেটা করে নি বলেই তাদের সেই শাস্তি হয়েছে, ক্ষেত্র বিশেষে এখনও হচ্ছে। এছাড়াও ধর্ম ও অধর্ম পৃথিবীতে সর্বদায় থাকবে, যার পৌরাণিক প্রতীক হলো দেবতা ও অসুর বা শুভ ও অশুভ। স্বর্গে দেবতাদের আধিপত্য সর্বদায় থাকলেও, মাঝে মাঝে অসুররাও শক্তিশালী হয়ে স্বর্গ দখল করতো, যেটা পৃথিবীতে মাঝে মাঝে অধর্ম বেশী হয়ে যাওয়ার পৌরাণিক প্রতীক বা ইঙ্গিত। কিন্তু স্বর্গের উপর আধিপত্য অসুররা যেমন চিরদিন রাখতে পারে নি, তেমনি অধর্মও পৃথিবীতে বেশিদিন আধিপত্য বিস্তার করে রাখতে পারে না, যার বাস্তব উদাহরণ হলো আইএস এর মতো ইসলামের বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনগুলোর উত্থান এবং বিনাশ।

আবার ব্রাহ্ম সমাজের বিলুপ্তিও আমাদেরকে এটা বলে যে, তত্ত্বগত অধর্মও পৃথিবীতে বেশিদিন টিকে থাকে না, যার পরবর্তী উদাহরণ হলো আপনারা, আর্য সমাজীরা্। থিয়োরিটিক্যাল অধর্মের জন্য আর্য সমাজের বিলুপ্তিও আজ হোক বা কাল হোক অবশ্যই হবে, সেটা আমার হাতে না হলেও আমার উত্তরসূরীদের হাতে; কারণ, আর্য সমাজীদেরকে দমন করবে যে শক্তি, সেই শক্তির বীজ অলরেডি আমি বপন করে ফেলেছি; নাউ জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।

আপনারা আর্য সমাজীরা গীতা পড়েন, গীতার বাণীর মর্মকে উপলব্ধি করার জন্য নয়, গীতার ভুল ত্রুটি ধরার জন্য, বাস্তবে যা নেই। যদি গীতার বাণীর মর্ম উপলব্ধি করার জন্য পড়তেন, তাহলে বুঝতে পারতেন, পৃথিবীতে যেসব মানুষ অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তারা ঈশ্বরের বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট বা ঐশ্বরিক শক্তিরই বিশেষ রূপ। যে কথা শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন গীতার ১০/৪১ নং শ্লোকে, এভাবে-

"যাহা কিছু ঐশ্বর্যযুক্ত, শ্রীসম্পন্ন অথবা শক্তিসম্পন্ন দেখ, তাহাই আমার শক্তির অংশ হইতে উদ্ভূত বলিয়া জানিবে।"

এর মানে কী দাঁড়ালো ?

অধর্মী বা অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সব সময় বিষ্ণুকেই পৃথিবীতে আবির্ভূত হতে হবে ? কারা, অধর্মীদের বা অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করবে, তার ইঙ্গিত কি গীতার এই শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ দিয়ে রাখেন নি ?

বর্তমান যুগে পৃথিবীতে মুসলমানরা হলো পৌরাণিক অসুরদের প্রতিনিধি। এই মুসলমানদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি যখন কোনো দেশ বা অঞ্চল দখল করার জন্য বা দখল করে সন্ত্রাস শুরু করে নিরীহ মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে, তখন কি তাদেরকে কেউ দমন করে না ? আমেরিকার ট্রাম্প, রাশিয়ার পুতিন, ভারতের- মোদী, অমিত, ডোভালকে কি আপনাদের সাধারণ মানুষ বলে মনে হয় ?

যদা যদা হি… শ্লোকের মাধ্যমে ঈশ্বর বলেছেন যে- যখন অধর্ম বেড়ে যায়, তখন তা দমন করার জন্য এবং ভালো মানুষদেরকে রক্ষা করার জন্য আমি আবির্ভূত হই। শ্রীকৃষ্ণ কিন্তু এই বাক্যগুলো ফিউচার টেন্সে বলেন নি যে, তখন আমি আবির্ভূত হবো। শ্রীকৃষ্ণ এই কথাটি বলেছেন, তার পূর্ববর্তী ৮ জন অবতারের কথা বলতে গিয়ে। আর কল্কি অবতার সম্পর্কে পুরাণের বক্তব্য হলো- কল্কি অবতার কলি যুগের শেষে এসে অধর্মীদের বিনাশ করে সত্যযুগের সূচনা করবেন, এই তথ্যে কিন্তু এটা স্পষ্ট যে কল্কি অবতার কলিযুগের জীবের উদ্ধারের জন্য আবির্ভূত হবেন না। তাহলে কলিযুগের সনাতনীদের উদ্ধার এবং রক্ষার জন্য থাকলো কী বা কে বা কারা ?

কলিযুগের মানুষদের জন্য শ্রীকৃষ্ণ রেখে গেছেন তাঁর নিজের আদর্শ এবং গীতা, যা ফলো করলে সনাতনীদের কোনো সমস্যাই আসতে পারবে না, আর সাময়িক সময়ের জন্য সমস্যা এলেও সেই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ঈশ্বর তৈরি করবেন- মোদী, অমিত, ডোভালের মতো শক্তিমান পুরুষদেরকে, যাদের কথা শ্রীকৃষ্ণ বলে গেছেন গীতার ১০/৪১ নং শ্লোকে। অবশ্য এই ধরণের শক্তিমান পুরুষ, যারা সমাজ ও রাষ্ট্রের রক্ষার জন্য কাজ করবেন, তাদেরকে ঈশ্বরের অবতার হিসেবে ধরে নেওয়া যাবে না বা অবতার বলা যাবে না। গীতার ১০/৪১ নং শ্লোকের ভাষ্যমতে এরা ঈশ্বরের বিশেষ আশীর্বাদধন্য প্রেরিত পুরুষ। এছাড়াও আমার নিজের মোহিনী লেখনীশক্তি এবং ভগবদ বিষয়ক জ্ঞানের জন্য আমিও নিজেকে ঈশ্বরের বিশেষ আশীর্বাদধন্য ব্যক্তি মনে করি এবং সেই সাথে এটাও মনে করি যে, ঈশ্বর আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তৈরি করেছেন আপনাদের মতো অজ্ঞানাসুরদের সাথে জ্ঞান দিয়ে লড়াই করার জন্য।

কমেন্টে আপনি আরো বলেছেন- আমি জন্মরহিত বলতে কৃষ্ণের শরীর তো জন্মরহিত নয়। অর্থাৎ কৃষ্ণের দেহ জন্ম এবং মৃত্যুপ্রাপ্ত। আর কৃষ্ণের যদি মৃত্যু হয়, তাহলে সে কিভাবে ঈশ্বর হলো ?

প্রকৃতির একটি নিয়ম হলো- পৃথিবীতে যে জন্ম নেবে, তাকে তিনটি বিষয় স্বীকার করতেই হবে, সেগুলো হলো- ক্ষুধা, যৌনতা এবং মৃত্যু। শ্রীকৃষ্ণ মানুষ রূপে পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছিলেন, তাই তাকে প্রকৃতির নিয়ম মেনে স্থূল অর্থে মৃত্যুকে বরণ করতে হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতই কি শ্রীকৃষ্ণ মৃত্যুবরণ করেছেন ? মুত্যু হয় দেহের, আত্মারই তো কখনো মৃত্যু হয় না, তাহলে পরমাত্মার কিভাবে মৃত্যু হবে ? আর শ্রীকৃষ্ণই যে পরমাত্মা বা পরমব্রহ্ম, সেটা তো গীতার ১১/১৮ এবং ১১/৩৮ নং শ্লোক দ্বারাই প্রমাণিত।

কমেন্টে আপনি এও বলেছেন- মৃত্যু একমাত্র জীবের হয়, জীবদেহ থেকে জীবাত্মা বেরিয়ে যাওয়াকে মৃত্যু বলে।

- তাহলে যে কৃষ্ণ নিজেই জীবাত্মা; তিনি আমার, আপনার দেহ থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন, কিন্তু নিজের থেকে কিভাবে বেরিয়ে যাবেন ?

পরমাত্মারূপী শ্রীকৃষ্ণ জগতের প্রয়োজনে দেহকে ধারণ করে তার লীলাপ্রকাশ করে জগতকে কিছু শিক্ষা প্রদান করে গেছেন এবং যখন প্রয়োজন শেষ হয়েছে, তখন তিনি সেই দেহকে ত্যাগ করেছেন। তাঁর এই দেহ ত্যাগকে যারা সাধারণ মানুষের মতো মৃত্যু বলে বিবেচনা করে, তারা আসলে শুধু সাধারণ জ্ঞানের মানুষ নয়, খুবই সাধারণ জ্ঞানের মানুষ, এই সাধারণ জ্ঞান নিয়ে তাদের ব্রহ্ম বিষয়ে চিন্তা ভাবনা এবং তা প্রকাশ করা উচিত নয়।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment