Monday, 25 May 2020

পাণ্ডবরা কি সত্যিই ঠাণ্ডা মাথার খুনি ?


পাণ্ডবরা কি সত্যিই ঠাণ্ডা মাথার খুনি ?

নাস্তিকতার আড়ালে কিছু লোক এখন হিন্দুধর্মের পেছনে লেগে, হয় ইসলামকে সুবিধা দিতে চাইছে, নয়তো ইসলামের বর্বরতাগুলোকে আড়াল করতে চাইছে। ফটোপোস্টে দেখুন, অনলাইনে তারা একটি প্রবন্ধ ছেড়েছে, যেখানে তারা বলেছে- ধার্মিক পাণ্ডবরা হলো ঠাণ্ডা মাথার খুনি! কিন্তু প্রকৃত সত্য কি তাই ? পাণ্ডবরা যদি ঠাণ্ডা মাথার খুনি বা অধার্মিক হতো, তাহলে তারা কি শুধু প্রতিজ্ঞা রক্ষার জন্য ছলনার পাশা খেলায় হেরে রাজ্য হারিয়ে ১২ বছরের জন্য বনবাস স্বীকার করে নিতো ?

আবার বনবাস কালের ১২তম বছরে, দুর্যোধনের ভগ্নিপতি জয়দ্রথ, দ্রৌপদীকে হরণ করে নিয়ে গেলে অর্জুন তাকে উদ্ধার করার সাথে সাথে জয়দ্রথকে উঠিয়ে আনে এবং এত বড় অপরাধ করার পরও, জয়দ্রথ তাদের বোনের স্বামী, এই বিবেচনায়, পাণ্ডবরা শুধু তার মাথা ন্যাড়া করে ছেড়ে দেয়, পাণ্ডবরা অধার্মিক হলে কি জয়দ্রথকে খুন না করে ছেড়ে দিতো ?

যা হোক, পুরো মহাভারত থেকে এরকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়, যেখানে প্রতিটা ঘটনায় প্রমাণিত যে পাণ্ডবরা কখনো অধর্ম করে নি; কারণ, যুধিষ্ঠির নিজে ছিলেন ধর্মরাজের অংশ, ভীম মাঝে মাঝে অধর্ম করে সুবিধা নিতে চাইলেও যুধিষ্ঠির তাকে নিরস্ত করেছে, এ প্রসঙ্গে যুধিষ্ঠিরের বক্তব্য ছিলো- একটা গাছের উপর একবার বাজ পড়ুক বা ১০ বার পড়ুক, ঘটনা তো একই হয়, প্রথম বাজেই গাছটা পুড়ে যায়। অধর্মই যদি করবো, তাহলে ১৩ বছর ধরে এই কষ্ট স্বীকার করছি কেনো ? এই যেখানে পাণ্ডবদের মনোভাব, তারা শুধু কথায় হেরে ১৩ বছর ধরে রাজ্য থেকে নির্বাসিত হয়ে বনবাসকে মেনে নিয়েছিলো, সেখানে তারা স্বেচ্ছায় কাউকে খুন করে কোনো সুবিধা নেবে, এটা কি সম্ভব ? পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলা মানে নিজের সতী মাকে বেশ্যার অপবাদ দেওয়া।

যা হোক, দেখা যাক মূল ঘটনা আসলে কী ঘটেছিলো ?

পাণ্ডবদের জন্ম বনে, বন থেকে তারা যখন ১০/১১ বছর বয়সে হস্তিনাপুর আসে, তখন থেকেই দুর্যোধনের নেতৃত্বে কৌরবরা, তাদেরকে নানাভাবে অত্যাচার, মানসিক নির্যাতন করতে থাকে, এক পর্যায়ে দুর্যোধন তো ভীমকে বিষ প্রয়োগে হত্যাই করে ফেলেছিলো, পবনদেবের নির্দেশে নাগরাজ বাসুকি ভীমকে বাঁচায়। এরপর সবাই মিলে যখন গুরুদ্রোণের কাছে শিক্ষার জন্য যা্য়, সেখানেও দু্র্যোধন, ভীমকে হত্যার চেষ্টা চালায়, পরে শিক্ষাগ্রহন শেষে সবাই হস্তিনাপুর ফিরে এলে, কে হবে যুবরাজ, এটা নিয়ে দুর্যোধনের সাথে পাণ্ডবদের লড়াইয়ে শকুনি ও দুর্যোধন নানা কূটকৌশল করেও যখন জিততে পারে নি এবং পাণ্ডবদের যোগ্যতায় যুধিষ্ঠির যখন যুবরাজ হয়েই যায়, তখন দুর্যোধন পরিকল্পনা করে সপরিবারে পাণ্ডবদেরকে হত্যা করার, এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই কৌশলে তাদেরকে বারনাবতে পাঠানো হয় এবং সেখানেই পুরোচন নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে আগুন দিয়ে তাদেরকে পুড়িয়ে মারার নীল নকশা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বিদুরের ইঙ্গিত এবং পাঠানো সংবাদে পাণ্ডবরা যখন দু্র্যোধন ও শকুনির পরিকল্পনা বুঝতে পারে, তখন তারা নিজেকে বাঁচাতে কিছু পরিকল্পনা করে। এ প্রসঙ্গে রাজশেখর বসুর মহাভারতের আদিপর্বে বলা হয়েছে,

"পাণ্ডবগণ বারনাবতে এলে… পুরোচন মহাসমাদরে তাঁদেরকে এক বাসভবনে নিয়ে গেলেন… সেখানে দশরাত্রি বাসের পর তিনি পাণ্ডবদের অন্য এক ভবনে নিয় গেলেন, তার নাম শিব।… যুধিষ্ঠির সেখান গিয়ে ঘৃত বসা ও লাক্ষার গন্ধ পেয়ে ভীমকে বললেন, নিপুন শিল্পীরা এই গৃহ আগ্নেয় পদার্থ দিয়ে প্রস্তুত করেছে, পাপী পুরোচন আমাদের দগ্ধ করতে চায়। ভীম বললেন, যদি মনে করেন এখানে অগ্নিভয় আছে তবে পূর্বের বাসস্থানেই চলুন। যুধিষ্ঠির তাতে সম্মত হলেন না, বললেন, আমরা সন্দেহ করছি জানলে পুরোচন বলপ্রয়োগ করে আমাদের দগ্ধ করবে। যদি পালিয়ে যাই তবে দুর্যোধনের চরেরা আমাদের হত্যা করবে। আমরা মৃগয়ার ছলে এই দেশের সর্বত্র বিচরণ করে পথ জেনে রাখব এবং এই জতুগৃহের ভূমিতে গর্ত করে তার ভিতরে বাস করব।"

দুর্যোধন ও শকুনি পাণ্ডবদেরকে এই রকম বিপদের মধ্যে ফেলেছিলো, যেখানে তাদের বাঁচার কোনো পথই খোলা ছিলো না। খেয়াল করুন যুধিষ্ঠির বলেছে, "আমরা সন্দেহ করছি জানলে পুরোচন বলপ্রয়োগ করে আমাদের দগ্ধ করবে। যদি পালিয়ে যাই তবে দুর্যোধনের চরেরা আমাদের হত্যা করবে।" তাই দুর্যোধনের হাত থেকে বাঁচার একটাই উপায় ছিলো, সেটা হলো- আগুনে পুড়ে মরার ভান করা এবং আত্মগোপনে চলে যাওয়া, পাণ্ডবরা তাই করেছিলো, তাদের পরিকল্পনায় প্রকৃতি তাদেরকে সহায়তা করেছিলো মাত্র।

সনাতন ধর্ম বলে, আততায়ী, অর্থাৎ যে হত্যা করতে আসছে বা হত্যার পরিকল্পনা করছে, তাকে খুন করলে কোনো পাপ নেই, এই সূত্রে পুরোচনকে যে পাণ্ডববা আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, তাতে কোনো অধর্ম নেই; কারণ, এটাই ছিলো পুরোচনের কর্মফল।

মহাভারতের আদিপর্বেই বলা আছে, "প্রাণসংশয়ে এবং সর্বস্ব নাশের সম্ভাবনায় মিথ্যা বললে পাপ হয় না।" মিথ্যা মানে অধর্ম, আর অধর্ম মানে যেকোনো পাপ। সুতরাং নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য যেকোনো প্রকার সুযোগ নেওয়া যেতেই পারে। এই সুযোগই নিয়েছিলেন পাণ্ডবরা, এভাবে- কুন্তী একদিন ব্রাহ্মন ভোজন করালেন, সেদিন অনেক লোক খেয়ে দেয়ে চলে গেলো, কিন্তু এক নিষাদ স্ত্রী তার পাঁচ পুত্রকে নিয়ে খেতে এসে প্রচুর পরিমাণ মদপান করে মৃতপ্রায় হয়ে গৃহমধ্যেই পড়ে রইলো, পাণ্ডবদের মনে কোনো প্রকার সংশয় নেই বিবেচনা করে পুরোচন সেই দিনই আগুন লাগানোর পূর্বে পাণ্ডবরা নিজেরাই পুরোচনের গৃহে আগুন লাগিয়ে তাকে পুড়িয়ে মারলো এবং নিজেদের গৃহে আগুন লাগিয়ে সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে গেলো।

এই ঘটনায়- পাণ্ডবদের ধার্মিকতায় মুগ্ধ- বারানতবাসী এটাই মনে করলো যে, আগুন লাগাতে গিয়ে পুরোচন নিজেই পুড়ে মরেছে, এছাড়াও অন্য ছয়জনের পোড়াদেহ দেখে তারা মনে করলো, সেগুলো ৫ পাণ্ডব আর তাদের মায়ের লাশ।

যাকে রক্ষা করা দরকার, প্রকৃতিরূপ ঈশ্বর তাকে রক্ষা করেন এবং তাকে রক্ষার কার্যকারণও মিলিয়ে দেন। যদিও যুধিষ্ঠির বলেছিলো, "আমরা অন্ধকারে আগুন দিয়ে পুরোচনকে দগ্ধ করবো এবং অন্য ছ জনকে এখানে রেখে চলে যাব।"কিন্তু সেই ছয় জনের মধ্যে যে একজন নারী এবং অপর পাঁচজন যে পুরুষই হবে, সেটা কি পাণ্ডবরা নির্ধারণ করেছিলো ? যে ছয়জন আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিলো, তাদেরকে পাণ্ডবরা ডেকে আনে নি, তারা স্বেচ্ছায় খেতে এসেছিলো এবং খাওয়া দাওয়া শেষে বেশি মদপান করে  নিজেরাই অচেতন হয়ে পড়েছিলো, এমন অবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে আগুন লাগানোর ঘটনায়, তারা পুড়ে মারা যায়, যেটা ছিলো সম্পূর্ণ এ্যাকসিডেন্ট এবং ঈশ্বরের মিলিয়ে দেওয়া কার্যকারণ, যাকে বলা হয় কাকতালীয়। তাই এই ঘটনাকে কোনোভাবেই ঠাণ্ডা মাথার খুন এবং তার জন্য পাণ্ডবদেরকে ঠাণ্ডা মাথার খুনি বলা যায় না। এটা ছিলো একটি আত্মরক্ষার পরিকল্পনা, যে পরিকল্পনায় প্রকৃতি পাণ্ডবদেরকে সহায়তা করেছিলো মাত্র।
পৃথিবীতে ঠাণ্ডা মাথার খুন- নাস্তিক এবং মুসলমানরাই করতে পারে, পৃথিবী জুড়ে যার রয়েছে বহু উদাহরণ। রাশিয়ার স্ট্যালিন এবং চীনের মাওসেতুং তাদের বহু বিরোধীকে একেবারে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছিলো। ২০১৪/১৫ সালে ইরাক সিরিয়ায় আইএস খুব ঠাণ্ডা মাথায় হাজার হাজার মানুষকে খুন করেছিলো, যেটা বলতে গেলে আমাদের চোখের সামনে ঘটেছে।

এছাড়াও যেসব ইসলামি জঙ্গীগ্রুপ বিভিন্ন জনসমাবেশে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ খুন করে, তারাও ঠাণ্ডা মাথার খুনি এবং এরা বিশ্বাসে মুসলমান।

২০১৬ সালের ১ জুলাই,  ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজানে রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে যে ২০ জনকে খুন করা হয়েছিলো, সেই ঘটনা তো ঘটিয়েছিলো মুসলমানরাই হাসতে হাসতে, সেটা কি ঠাণ্ডা মাথার খুন ছিলো না ?

যা হোক, সারা বিশ্বে মুসলমানরা কাফের নিধনের নামে যে খুন খারাপি চালিয়ে যাচ্ছে, সেটা ঠাণ্ডা মাথার খুন ই; কারণ, এসব খুনের পেছনে তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য কাফের হত্যা করে বিনা বিচারে বেহেশতে যাওয়া, যে থিয়োরি তাদেরকে দিয়ে গেছে মুহম্মদ, কোরান ও হাদিস নামের দুটি সন্ত্রাসী গ্রন্থে এবং মুহম্মদ ও তার সাহাবীরাই যে পৃথিবীর প্রথম ঠাণ্ডা মাথার খুনি, তার অনেক উদাহরণ আছে কোরান হাদিসে, এই পোস্টে আমি শুধু তার একটি ঘটনাকে উল্লেখ করছি-

মুহম্মদ কর্তৃক কুরাইজা গোত্রের ৮০০ ইহুদিকে একদিনে হত্যা এবং রিহানাকে দখলের নৃশংস ইতিহাস :

মদীনা সনদে সকল ধর্মের লোকেদের মদীনায় বসবাসের সমান অধিকার দিয়ে সকলের সম্মতিতে চুক্তি হওয়ার পরও তুচ্ছ সব ঘটনা নিয়ে মুহম্মদ শুধু ইহুদি কবিদের হত্যা ই নয়, কানুইকা ও নাজির গোত্রের ইহুদিদেরকে, তাদের সকল সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে মদীনা থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরই প্রেক্ষাপটে খন্দকের যুদ্ধে কুরাইজা গোত্রের ইহুদিরা মক্কার কুরাইশদের পক্ষ নেয়। কিন্তু এই যুদ্ধেও কুরাইশরা, মুসলমানদের ছল-চাতুরি ও ধোকাবাজির জন্য জিততে না পেরে অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে মক্কায় প্রত্যাবর্তন করে এবং মুহম্মদ তার বাহিনী নিয়ে কুরাইজাদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য মদীনা থেকে ৩ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে কুরাইজাদের দূর্গ অবরোধ করে।

প্রায় দেড় মাস অবরুদ্ধ থাকার পর কুরাইজারা বলে পাঠায়, তাদের ছেড়ে দিলে, তারাও কানুইকা ও নাজির গোত্রের মতো সকল সম্পত্তি ফেলে খালি হাতে মদীনা ছেড়ে চলে ইচ্ছুক। কুরাইজারা এই বিশ্বাসে এই প্রস্তাব দিয়েছিলো যে, মুহম্মদ তাদের এতজন লোককে হয়তো হত্যা করবে না; কারণ, তারাও তো মানুষ। কিন্তু তারা হয়তো জানতো না যে, মুহম্মদের কাছে মানুষের কোনো দাম নেই, দাম আছে শুধু মুসলমানের; সেই মুসলমান যদি চোর-ডাকাত-খুনি-ধর্ষকও হয়, সেও মুহম্মদের কাছে শ্রেষ্ঠ, একজন অমুসিলমের চেয়ে। বিশ্বাস না হলে দেখে নিন নিচের এই হাদিস-

“আবু দার বর্ণিত- আমি নবীর নিকট যখন আসলাম তখন তিনি সাদা কাপড় পরে ঘুমাচ্ছিলেন। অত:পর তিনি যখন ঘুম থেকে উঠলেন তখন আমি তার কাছে গেলাম। তিনি বললেন- আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এ বিশ্বাস নিয়ে যে মারা যাবে সে বেহেস্তে যাবে। আমি বললাম- যদি সে ব্যভিচার ও চুরি করে? তিনি বললেন- যদিও সে ব্যভিচার ও চুরি করে। আমি আবার বললাম- যদি সে আবারও ব্যভিচার ও চুরি করে ? তিনি আবার বললেন- যদিও আবার সে ব্যভিচার ও চুরি করে। আমি আবারও বললাম – এর পরেও যদি সে ব্যভিচার ও চুরি করে? তিনি বললেন- এর পরেও যদি সে ব্যভিচার ও চুরি করে।” -(সহি বুখারি, ভলিউম-৭, বই-৭২, হাদিস-৭১৭)

যা হোক, আত্মসমর্পনের পর কুরাইজারা যখন দূর্গ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন মুহম্মদের ইচ্ছা অনুসারে তাদের মহিলা-শিশুদেরকে এবং পুরুষদেরকে আলাদা করা হয় এবং পুরুষদেরকে পিঠ মোড়া করে বেঁধে ফেলা হয়। মহিলাদের মধ্যে মুহম্মদের চোখ সুন্দরী রিহানার উপর উপর পড়ে এবং মুহম্মদ তাকে তার জন্য আলাদা করে রাখে। আত্মসমর্পনের আগেই কুরাইজারা মুহম্মদের কাছে আবেদন করে জানিয়েছিলো, তারা যদি ভুল করে থাকে তাহলে তাদের বিচারের ভার আউসগোত্রের কাউকে দিয়ে করানো হোক। নবী সঙ্গে সঙ্গে বিচারক হিসেবে আউসগোত্রের সাদ ইবনে মুয়াজ এর নাম প্রস্তাব করে। কারণ, সাদ ইতোমধ্যেই ইসলাম গ্রহন করেছিলো এবং খন্দকের যুদ্ধে কুরাইজারা, কুরাইশদের পক্ষ নেওয়ায়, সাদও কুরাইজাদের উপর ক্ষেপে ছিলো, এসব খবর কুরাইজারা জানতো না, কিন্তু মুহম্মদ ঠিকই জানতো।

ইতোমধ্যে কুরাইজাদের সকল অস্থাবর সম্পত্তি গনিমতে মাল হিসেবে দুর্গের বাইরে এনে স্তুপ করে রাখা হয়। একদিকে পিঠমোড়া করে বাঁধা মৃত্যু ভয়ে ভীত ৮০০ পুরুষ, অন্যদিকে ভয়ে ম্লান প্রায় ১২০০ নারী ও শিশু। মাঝখানে গনিমতের মালের স্তুপ। অত্যন্ত বিষাদময় পরিস্থিতি। সবাইকে ঘিরে আছে মুসলমান বাহিনী; তাদের চোখ, নারী শিশু ও গনিমতে মালের উপর। মুহম্মদ, সাদকে তার রায় জানাতে বলে, অন্যদিকে কুরাইজারাও সাদকে, তাদেরকে দয়া করার আবেদন জানিয়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে সাদ কুরাইজাদের উদ্দেশ্যে বললো, "আমি যে রায় দেবো, আল্লার রায় বলে তোমরা কি তা মেনে নেবে ?" কুরাইজারা সম্মতি জানালে সাদ বলে, 'আমার রায় হলো, সকল পুরুষদেরকে হত্যা করা হবে, সকল নারী ও শিশুকে ক্রীতদাস হিসেবে বাজারে বিক্রি করা হবে এবং গনিমতের মাল মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করা হবে।"

মুহম্মদ তৎক্ষণাৎ এই রায়কে সম্পূর্ণ সঠিক বলে ঘোষণা করে বলে, "সপ্তম স্বর্গ থেকে স্বয়ং আল্লাহর বিচারই যে সাদ এর বিচারের মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।"

রায় ঘোষণার পর প্রায় ১২০০ নারী ও শিশুকে আলাদা করে এবং ৮০০ পুরুষকে একটি বড় গুদাম ঘরে বন্দী করে রাখা হয়।

সেই দিন রাতেই মদীনার বাজারে ৮০০ লোককে মাটি চাপা দেবার মতো একটি বিশাল গর্ত খোঁড়া হয় এবং পরদিন ভোর থেকেই শুরু হয় কোতল পর্ব। পিছনে হাত পা বাঁধা অবস্থায় ৫/৬ জন বন্দীকে সেই গুদাম ঘর থেকে বের করে আনা হতে থাকে এবং আলী ও নবীর আর এক চাচাতো ভাই জুবায়ের তাদের গলা কেটে কেটে সেই গর্তে ফেলতে থাকে। গুদাম ঘরের বন্দীরা প্রথমে বুঝতেই পারে নি, ৫/৬ জন করে করে তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যে ব্যক্তি তাদের ডেকে নিয়ে যাচ্ছিলো, তাকে একজন বৃদ্ধ ইহুদি জিজ্ঞেস করে, ডেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো ? তখন সে বললে, এখনও মাথায় ঢোকেনি ? যাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে,তারা কি আর ফিরে আসছে ?” তখন তারা হত্যার বিষয়টি বুঝতে পারে এবং এক অসহায় ক্রন্দনে গুদাম ভরে উঠে।

এই হত্যাকাণ্ড ভোর থেকে শুরু হয়ে সারাদিন চলে। সন্ধ্যার পর অন্ধকার হয়ে এলেও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হয় নি, গর্তের চারপাশে মশাল জ্বালিয়ে আলোকিত করা হয়, এভাবে মধ্যরাত পর্যন্ত হত্যাকাণ্ড চলার পর ৮০০ ইহুদির কোতল পর্ব শেষ হয়। এই পুরো ঘটনা মুহম্মদ এক জায়গায় বসে বসে প্রত্যক্ষ করে।

আমার এই বর্ণনায় কারো যদি সন্দেহ থাকে বুখারি শরীফের ২৬০৩ নং হাদিস এবং মুসলিম শরীফের ৪৩৬৪ নং হাদিস বের করে দেখতে পারেন। আরো সন্দেহ থাকলে কোরানের ৩৩ নং সূরার ২৬ নং আয়াত দেখতে পারেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মুহম্মদ এই আয়াতটি ডাউনলোড করে। এই আয়াতে বলা হয়েছে,

"আহলি কিতাবদের (ইহুদি খ্রিষ্টান) মধ্য যারা এই আক্রমনকারীদের সাহায্য করেছিলো (অর্থাৎ কুরাইশদের) আল্লাহ তাদেরকে তাদের গহ্বর (দুর্গ) হতে উঠিয়ে আনলেন এবং তাদের অন্তরে এমন ভীতির সঞ্চার করে দিলেন যে, আজ তাদের একদলকে (পুরুষদেরকে) তোমরা হত্যা করছো, অপর দলকে ( নারী ও শিশুদেরকে) বন্দী করে নিচ্ছো।"

যা হোক, কোতল পর্ব শেষ হওয়ার পর, পরদিন সকালে গনিমতে মালগুলো চার ভাগে ভাগ করা হয়। জমি-জায়গা বা স্থাবর সম্পত্তি, অস্থাবর সম্পত্তি, গৃহপালিত পশু এবং নারী ও শিশু অর্থাৎ ক্রীতদাস। মুহম্মদ সব ভাগ থেকেই তার কমিশন ২০% নেয়। মুহম্মদের ভাগে যেসব নারী পড়ে, তাদের মধ্য থেকে সুন্দরী কয়েকজনকে মুহম্মদ তার ক্লোজফ্রেন্ডদের উপহার দেয়, বাকিদেরকে বিক্রি করার জন্য নেজাদ নামক এক স্থানের দাস বিক্রির বাজারে পাঠিয়ে দেয়। সবচেয়ে সুন্দরী যে মেয়েটি, রিহানা, তাকে তো মুহম্মদ আগেই নিজের জন্য আলাদা করে রেখেছিলো। এই রিহানাকে মুহম্মদ বিয়ে করতে চাইলে রিহানা মুসলমান হতে অস্বীকার করে এবং সে মুহম্মদকে নাকি চড় মারে, ফলে তাকে মুহম্মদের যৌনদাসী হিসেবেই জীবন কাটাতে হয় এবং নিজ গোত্রের সমস্ত পুরুষকে খুন হতে দেখা রিহানা শোক সইতে না পেরে কয়েক বছর পর যুবতী বয়সেই, মুহম্মদের আগেই মারা যায়। এই ঘটনা সম্পর্কেই মুহম্মদ ডাউনলোড করে কোরানের ৩৩ নং সূরার ২৭নং আয়াত। সেখানে বলা হয়েছে,

"তিনি তোমাদেরকে তাদের যমীন, ঘর-বাড়ি এবং তাদের ধন মালের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিয়েছেন, আর তাদের সেই সব অঞ্চল তোমাদের দিয়েছেন, যেখানে ইতিপূর্বে তোমরা কখনো পদসঞ্চার করো নি।"

এই সব নারী ও শিশুদেরকে আরবের অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসকারী ইহুদিরা মানবিকতার দায়ে চড়া দামে কিনে তাদেরকে মুক্ত করে। ফলে এই মানুষ বিক্রি থেকেও মুসলমানরা প্রচুর টাকা আয় করে।

দেখা যাচ্ছে জিহাদে গেলে মুসলমানদের শুধুই লাভ, আর লাভ; একবার আক্রমন করে পরাজিত করতে পারলেই তাদের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি লাভ, পরে বন্দী নারী শিশুদেরকে বাজারে দাস হিসেবে বিক্রি করেও লাভ। বিনা পুঁজির এই ব্যবসার একমাত্র আবিষ্কারক, নিঃসন্দেহে, হযরত মুহম্মদ। ইহকালীন লাভ ও পরকালের কল্যানের জন্য, এজন্যেই জিহাদ হচ্ছে, মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে পূণ্যময় কাজ এবং বেহেশতে যাওয়ারও সবেচেয়ে সহজ উপায়। কারণ জিহাদকারীর মর্যাদা আল্লা ও নবীর কাছে সর্বোচ্চ।

জিহাদকারীর মর্যাদা, কেনো আল্লা ও নবীর কাছে সর্বোচ্চ, সেই ব্যাপারটা বুঝতে হলে, উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন নিচের এই চারটি আয়াতের অর্থ :

"যারা আল্লার পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে মৃত মনে করো না। প্রকৃতপক্ষে তারা জীবিত, তারা আল্লার কাছ থেকে জীবিকা পেয়ে থাকে।"-( কোরান, ৩/১৬৯)

"প্রকৃত কথা এই যে, আল্লাহ তায়ালা মুমীনদের নিকট হতে তাদের হৃদয় মন এবং মাল সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে খরিদ করে রেখেছেন। তারা আল্লার পথে মরে ও মারে।"- (কোরান, ৯/১১১)

"প্রকৃতপক্ষে মুমিন তো তারাই, যারা আল্লা ও তার রসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, অতঃপর কোনো সন্দেহ করে না এবং নিজের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। তারাই সত্যবাদী-সত্য নিষ্ঠ লোক।"- (কোরান, ৪৯/১৫)

"যারা আল্লার পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে মৃত মনে করো না। প্রকৃতপক্ষে তারা জীবিত, তারা আল্লার কাছ থেকে জীবিকা পেয়ে থাকে।"-(কোরান, ৩/১৬৯)

"তোমরা কি মনে করেছো, তোমরা এমনিতে বেহেশতে প্রবেশ করবে , যতক্ষণ না আল্লাহ তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে, আর কে করে নি, তা না জানছেন ?" - ( কোরান, ৩/১৪২)

যা হোক, এই মুসলমান এবং নাস্তিক, যারা ধর্মীয় এবং আদর্শগত কারণে একেবারে রেজিস্টার্ড ঠাণ্ডা মাথার খুনি, তারা নিজেদের ঠাণ্ডা মাথায় করা খুন খারাবিগুলোকে চাপা দেওয়ার জন্য বা আড়াল করার জন্য মহাভারতে পাণ্ডবদের মাধ্যমে ঘটা একটা এ্যাকসিডেন্ট, যেখানে মাত্র ৬ জন লোক মারা গিয়েছিলো, সেটাকে ঠাণ্ডা মাথার খুন বলে প্রচার করে কোন ঘটনা বা কাদেরকে আড়াল করতে চাইছে বা কাদেরকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করছে ? পাণ্ডবরা যদি ঠাণ্ডা মাথার খুনি হতো, তাহলে তারা নিজ রাজ্য উদ্ধারের জন্য ষড়যন্ত্র করতো, ষড়যন্ত্র করতো যেকোনো প্রকারে কৌরবদেরকে বিনাশ করে দ্রুত রাজ্য উদ্ধার করতে, কিন্তু তারা তা করে নি, তারা ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করেছে এবং তাদের প্রতিটা ক্ষেত্রে তারা ধর্ম তথা ন্যায়কে অনুসরণ করেছে, এই পাণ্ডবরা কিভাবে ঠাণ্ডা মাথার খুনি হতে পারে, প্রশ্ন রেখে গেলাম নাস্তিক ও মুসলমানদের প্রতি।

জয় হিন্দ।

No comments:

Post a Comment