Monday, 25 May 2020

সৃটিকর্তা কি সবসময় মানুষের ডাকে সাড়া দেয় ?


#Fatima_Jannat,

আপনি আপনার পোস্টে যে প্রশ্নগুলো করেছেন, সেগুলোর সংক্ষেপ হলো-

ধর্ষণের শিকার হওয়া বা খুন হওয়া শিশুগুলোর কান্না সৃষ্টিকর্তা কিভাবে সহ্য করেন ? দ্রৌপদী আর ইউসুফ নবী, ভগবান কৃষ্ণ এবং আল্লাকে বিপদের সময়ে ডেকে যেমন দ্রুত থেকে দ্রুততম সার্ভিস পেয়েছিলো, অবুঝ নিরীহ বাচ্চাগুলো তা পায় না কেনো ? ভারতের নির্ভয়া (২৩বছর), বাংলাদেশের রুপাকে ( ২২/২৩বছর) যখন চলন্ত বাসের মধ্যে ধর্ষণ করে জন্তু জানোয়ারের মতো খাবলে খাবলে মারা হচ্ছিলো ওরাতো তখন নিশ্চয় আল্লাহ গো, ও আল্লাহ কিংবা ভগবান বাঁচাও বলে চিৎকার করে সৃষ্টিকর্তার সাহায্যের জন্য কাঁদছিলো। তাহলে সৃষ্টিকর্তা ওদেরকে কেনো দ্রৌপদী আর ইউসুফ নবীর মতো দ্রুত উদ্ধার করলেন না? ভগবান কৃষ্ণের কাছে দৌপদীর কান্না কি নির্ভয়ার চিৎকারের চেয়ে বেশী শক্তিশালী ছিলো? তাহলে সৃষ্টিকর্তা কেনো ঐ নিরীহ মানুষগুলোর আর্তনাদ শুনলেন না? ধর্মগ্রন্থগুলোতে তো লিখা আছে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকার কারনে কতো মানুষকে তিনি ঝটপট সাহায্য করেছেন। তাহলে কেনো নির্ভয়া, রুপাকে বিনা দোষে এতো অসহ্য যন্ত্রনা পেয়ে মরতে দিলেন?

এই প্রশ্নগুলোর ভিত্তিতে আপনি হিন্দু ও মুসলমানদের উদ্দেশ্যে যে কথাগুলো বলেছেন, সেগুলো হলো-

প্রিয় মুমিন মুসলিম এবং হিন্দু মুমিন ভাইয়েরা নিশ্চয়ই বলবেন স্রষ্টা পৃথিবীতে ঐ নিরীহ নিহত মানুষগুলোর পরীক্ষা নিয়েছেন বিনিময়ে মৃত্যুর পর জান্নাত কিংবা স্বর্গে পুরস্কার আর পুরস্কারে তাদের ভরিয়ে দেওয়া হবে।
সিরিয়াসলী, দুই বছরের দুধের বাচ্চা আয়েশা মনির এইটুকু শরীরটার উপর ধর্ষন এবং হত্যার মতো অত্যাচার করিয়ে সৃষ্টিকর্তা পরীক্ষা নিয়েছেন

সিরিয়া, প্যালেস্টাইনের বাচ্চাগুলোকে তাদের বাবা মায়ের সামনে বোমায় ঝাঁজরা হতে দিয়ে,

ছোট ছোট রিফিউজি বাচ্চাগুলো কে তাদের বাবা মায়ের সামনে সাগরে ডুবে মরতে দিয়ে,

ইয়েমেন, সোমালিয়ার শিশুগুলোকে ক্ষুধার কষ্টে নি:শ্বাস ত্যাগ করতে দিয়ে,

সৃষ্টিকর্তা পরীক্ষা নিয়েছেন শুধু পরকালে তাদের অনেক লোভনীয় পুরস্কার দিবেন এই কারনে

তাহলে ইউসুফ নবী আর দ্রৌপদীকে কেনো উদ্ধার করলেন? ওদেরকেও কেনো পরীক্ষা নিলেন না? একটু সর্বনাশ হলে কি সমস্যা হতো ওদের। অনন্তকাল তো উনারা জান্নাতে পুরস্কার আর পুরস্কারের উপর লুটোপুটি খেতে পারতেন।

প্রিয় মুমিন মুসলিম এবং হিন্দু মুমিন ভাইয়েরা যদি এটা বলেন সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা/মর্জি কিংবা পরিকল্পনা উনি কাকে সাহায্য করবেন কিংবা করবেন না। তাহলে আমি বলবো ভাই, এটা লটারী কেনার মতো হয়ে গেলো না। কিনলাম কপালে থাকলে উঠবে। বিপদে স্রষ্টাকে ডাকলাম। উনার পরিকল্পনা থাকলে বাঁচাবে নইলে না।

তাই সত্যি জানতে ইচ্ছা করছে সৃষ্টিকর্তা ঠিক কার কার ডাকে সাড়া দেন এবং কেনো শুধু তাদের ডাকেই সাড়া দেন ?

------------------------------

এবার শুনুন আমার কথা-

আপনি নাস্তিক হিসেবে প্রশ্নগুলো তুলেছেন, আর নাস্তিকরা যেহেতু সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে না, সেহেতু জগতের সকল রহস্যের জবাব তাদের কাছে নেই, যেমন নেই আপনার কাছে। আপনি হিন্দু ও মুসলমান উপাখ্যান থেকে একটি করে দুটি উদাহরণ দিয়ে হিন্দু ও মুসলমানদেরকে এক সাথে প্রশ্ন করেছেন। সামাজিক বাস্তবতার নিরীখে ইসলাম যেহেতু একটি অবাস্তব থিয়োরি এবং যেহেতু জগত ও জীবনের সকল রহস্যের সমাধান ইসলামে নেই, সেহেতু কোনো মুসলমানের পক্ষে সম্ভব নয় আপনার প্রশ্নগুলোর জবাব দেওয়ার; আপনার প্রশ্নগুলোর যে জবাব তারা দিতে পারে, সেটা তো আপনি নিজেই উল্লেখ করেছেন যে- এটা নির্যাতিতদের জন্য পরীক্ষা এবং পার্থিব এই কষ্টভোগের কারণে জান্নাতে তারা সুখ সুবিধা পাবে এবং এই উত্তর যে আপনি শুনতে চান না বা এই উত্তরে যে আপনি সন্তুষ্ট নন, সেটা আপনি আপনার পোস্টেই বুঝিয়ে দিয়েছেন; কিন্তু সনাতন ধর্ম পারে আপনার প্রশ্নের যুক্তিসঙ্গত জবাব দিতে, যেটা আজ একজন সনাতনী হিসেবে আপনাকে আমি দেবো।

একজন শিশু নিষ্পাপ হয়ে জন্ম নেয় এবং এই বিশ্বাসকে ভিত্তি করে আপনি প্রশ্নগুলো উত্থাপন করেছেন, যেটা আপনার প্রথম ভুল। পৃথিবীর কোনো মানব শিশুই নিষ্পাপ নয়, শুধু মানব শিশুই কেনো, এই পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া কোনো প্রাণীই নিষ্পাপ নয়। ইতর শ্রেণীর জীবজন্তুর কথা বাদ দিয়ে এই প্রবন্ধে শুধু মানুষের কথাই বলছি, আপনি যেহেতু মনে করেন, পৃথিবীর সকল মানব শিশু নিষ্পাপ, তাহলে নিচের প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবুন-

১. কেনো সকল মানব শিশু একই আর্থ সামাজিক অবস্থায় জন্ম নিয়ে জীবনের সকল সুখ সুবিধা একইরকম ভাবে ভোগ করতে পারে না ?

২. কেনো কারো- দরিদ্র, খ্যাতিহীন, ক্ষমতাহীন পরিবারে জন্ম হচ্ছে; কেনো কারো ধনী, মানী এবং ক্ষমতাবান পরিবারে জন্ম হচ্ছে ?

৩. কেনো কোন শিশু মানুষের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় মাতৃগর্ভেই নিহত হচ্ছে বা মারা যাচ্ছে ?

৪. আবার কেনো কেউ জন্মের পরপরই মারা যাচ্ছে, কেনো কেউ মারা যাচ্ছে শিশু বা বাল্যকালে, কেনাো কেউ মারা যাচ্ছে যৌবনে, আবার কেনোই বা কেউ পূর্ণ জীবনের আয়ু ভোগ করে সকল সাধ আহ্লাদ মিটিয়ে মারা যাচ্ছে ?

ইসলাম অনুযায়ী সকল রূহ বা আত্মা একই সময়ে আল্লা সৃষ্টি করে রেখেছে, যাদেরকে সে পর্যায়ক্রমে পৃথিবীতে পাঠাচ্ছে, তাহলে সমযোগ্যতার সকল আত্মার মধ্যে কেনো কেউ কুৎসিত, কেউ পঙ্গু বা কেউ মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্ম নিচ্ছে বা জন্মের পর তাদের এই পরিণতি হচ্ছে; আবার কেনো কেউ সুন্দরদেহ এবং প্রচুর মেধা নিয়ে জন্ম নিয়ে পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়ে সম্মানিত হচ্ছে ?

এই সব সমস্যার যে ইসলামি ব্যাখ্যা, যেটা আপনি নিজেও উল্লেখ করেছেন যে, এটা আল্লার পরীক্ষা এবং এই সব পার্থিব দুর্ভোগের কারণে পরকালে গিয়ে তারা বেহেশতি সুখ সুবিধা পাবে; এটা দিয়ে ধর্মান্ধ কোনো মুসলমানকে বুঝ দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু আপনার আমার মতো যুক্তিবাদী বা জ্ঞানী কাউকে এটা দিয়ে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়; কারণ পরীক্ষা নিতে গেলে আগে পড়ার সময় দিতে হয়, তারপর একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিতে হয়, আবার পরীক্ষার জন্য সবাইকে দিতে হয় সমান সুবিধা ও সমান সুযোগ। জন্ম থেকেই যে দরিদ্র, কুতসিত, মেধাহীন এবং শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী, তাদেরকে আল্লা পরীক্ষায় ফেলেছে কেনো, তাদেরকে পড়ার সুযোগ আল্লা কবে কোথায় দিয়েছে? এ কারণে মুসলমানরা যতই চিল্লাক যে ইসলাম হলো পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা এবং ইসলাম দিয়ে জগত ও জীবনের সকল রহস্য বা প্রশ্নের জবাব দেওয়া সম্ভব, বাস্তবে সেটা ফাঁকা বুলি, তরবারি, চাপাতি এবং ষাঁড়ের মতো রাগ ছাড়া, ইসলাম ও মুসলমানদের পৃথিবীতে কোনো ক্ষমতা নেই।

এবার দেখুন সনাতন ধর্ম এই বিষয়গুলোকে কিভাবে ব্যাখ্যা করেছে-

সনাতন ধর্ম মতে- ঈশ্বর, যখন বিভিন্ন অবতার রূপ ধরে পৃথিবীতে আসেন, তখন তাঁরা তাঁদের কর্মের মাধ্যমে লোকশিক্ষা দেওয়ার জন্য নানারকম লীলা করেন। মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ, দ্রৌপদীর ব্যাপারে যা করেছেন, সেটাও ছিলো তাঁর লোকশিক্ষা। কাউকে তার বিপদের সময় সাহায্য করলে যে নিজের বিপদের সময় সাহায্য পাওয়া যায়, দ্রৌপদীর মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণ আসলে সেই শিক্ষাটাই জগতকে দিয়েছেন; যেমন- ইন্দ্রপ্রস্থে থাকার সময় একদিন ফুলের বাগানে কাজ করাকালীন শ্রীকৃ্ষ্ণের আঙ্গুল কেটে যায়, সেটা দেখে দ্রৌপদী তৎক্ষনায় তার শাড়ি ছিঁড়ে সেই শাড়ির কাপড় দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের আঙ্গুল বেঁধে দিয়ে রক্ত বন্ধ করতে সাহায্য করেন। এরপর হস্তিনাপুরের রাজপ্রাসাদে যখন দ্রৌপদীর শাড়ি খুলে ফেলার চেষ্টা হচ্ছিলো, তখন কোনো উপায় না দেখে দ্রৌপদী শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করে, ফলে অলৌকিকভাবে শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে এই অপমান থেকে রক্ষা করে।

দ্রৌপদীর এই রক্ষা ছিলো আসলে দ্রৌপদীর নিজেরই সুকর্ম, শাড়ি ছিঁড়ে শ্রীকৃষ্ণের হাত বেঁধে দেওয়া ফল। ঈশ্বর হিসেবে শ্রীকৃষ্ণ যেহেতু মানব শরীরে সেই সময় পৃথিবীতে উপস্থিত ছিলেন, তাই তিনি তার সাহায্যগুলো দিয়েছেন মানবরূপেই। কিন্তু কারো যদি অপর কাউকে কোনো বিপদে সাহায্য করার সুকর্ম থাকে, সে নিজে যখন বিপদে পড়বে, তখন ঈশ্বরকে স্মরণ করলে, ঈশ্বর কাউকে ঠিক পাঠিয়ে দেন বা দেবেন তার সাহায্যার্থে। বিপদে পড়ে ঈশ্বরকে স্মরণ করা আসলে- আমি যে সাহায্য চাই, সেটা ঈশ্বররূপ প্রকৃতির কাছে প্রকাশ করা, যার কারণে কেউ না কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসে এবং এই বিপদগ্রস্থ ব্যক্তি সাহায্য পাচ্ছে বা পাবে, শুধুমাত্র তার যদি অপরকোনো ব্যক্তিকে বিপদে সাহা্য্য করার সুকৃতি থাকে, তবেই। অন্যের বিপদে আপনি চোখ বন্ধ করে চলে গেলেন, আর আপনার বিপদে আপনি সাহা্য্য পাবেন, সেটা আপনি ভাবলেন কী করে ? তখন যতই আপনি ঈশ্বরকে ডাকেন, ঈশ্বর আপনার ডাকে সাড়া দেবেন কেনো ?

বাস্তবে ঈশ্বর কারো ডাকে সাড়া দেয় না, ঈশ্বর শুধু মানুষের কর্মফল দেয়, কেউ যদি সুকর্ম করে, তার যেমন ভালো ফল ঈশ্বর তাকে দেয়, তেমনি কেউ যদি কুকর্ম করে তারও খারাপ ফল ঈশ্বর তাকে দেয়, ঈশ্বর নিজে থেকে কাউকে কিছু দেন না, যে যা অর্জন করে, ঈশ্বর তাকে শুধু সেটাই দেন। নাস্তিক হিসেবে আপনার যদি প্রকৃতির সকল কর্মের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাউকে মানতে অসুবিধা হয়, আপনি মানুষের ভালো মন্দ কর্মের প্রতিফল দাতা হিসেবে প্রকৃতিকেও ভাবতে পারেন; কারণ, সনাতন ধর্ম মতে প্রকৃতিই হলো ঈশ্বর। সাধারণ মানুষের প্রকৃতিরূপ ঈশ্বরকে বুঝতে জ্ঞানের অপ্রতুলতা আছে বলে, সনাতন ধর্মে তাকে সাকার রূপ দেওয়া হয়েছে, যাতে তার কাছে নত হতে এবং তাকে স্মরণ করতে সুবিধা হয়।

সৃষ্টিকর্তা কার ডাকে সাড়া দেয় বা কার ডাকে সাড়া দেয় না বা কেনো দেয় না বা কেউ কোনো বিপদে কিভাবে সাহায্য পায়, আশা করছি- উপরের আলোচনা দ্বারা তা আপনাকে বোঝাতে পেরেছি ।

এবার দেখা যাক, কেনো কোনো ব্যক্তির নির্মমভাবে মৃত্যু হয় বা কেনো কোনো শিশু বা যুবতী নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে খুব খারাপভাবে মৃত্যুবরণ করে ? আবার কেনো আপনার জন্ম শেখ হাসিনার মতো ভাগ্য নিয়ে হয় নি, বা কেনো আপনার ছেলের জন্ম হাসিনাপুত্র জয়ের মতো ভাগ্য নিয়ে হয় নি, বা কেনো আপনি বা আপনার ছেলে জন্মগত কোনো ত্রুটি বা মানসিক প্রতিবন্ধিতা জন্ম নেন নি, আমি এখানে ধরে নিচ্ছি যে আপনারা মা ছেলে উভয়েই সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ।

সনাতন ধর্ম জন্মান্তরের কথা বলে। এই জন্মান্তর হলো পূর্বের বহুজন্মের সঞ্চিত কর্মের ফলে বর্তমান জন্ম প্রাপ্ত হওয়া। এই জন্মান্তরের চক্রে, এক একটি আত্মাকে সর্বমোট ৮৪ লক্ষ বার পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রাণীরূপে জন্ম নিতে হয় এবং পৃথিবীর সকল প্রাণী ও লিঙ্গের সুখ দুঃখ ভোগ করতে হয়। ইতরপ্রাণীরূপে ৮০ লক্ষবার জন্ম মৃত্যুর পর কোনো আত্মার মানুষরূপে জন্ম হয় এবং মানুষ রূপে প্রায় ৪ লক্ষবার জন্মমৃত্যুর কোনো এক সময়ে সে ঈশ্বর চিন্তায় মগ্ন হয়ে ঈশ্বরকে লাভ ক'রে এই জন্মমৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হয়, যাকে বলা হয় মোক্ষ।

এখন আপনি এই জন্মে পুরুষ হয়ে জন্ম নিয়ে বিবেককে বিসর্জন দিয়ে ভারতের নির্ভয়া বা বাংলাদের রূপার মতো কোনো যুবতী নারীকে ধর্ষণ করে হত্যা করলেন বা শিশু আয়েশার মতো কাউকে যৌন নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করলেন, আপনি রাষ্ট্র ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি পান কি পান, পরজন্মে আপনি নারী হিসেবে জন্ম নিয়ে সেই শাস্তি ঠিক পাবেন, যা আপনি আপনার পূর্বজন্মে করে এসেছেন। একইভাবে আপনি যদি পুরুষ হিসেবে জন্ম নিয়ে কোনো নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করে তার গর্ভ সঞ্চার করেন, এবং পরে লোকলজ্জার ভয়ে তার গর্ভের সন্তানকে হত্যা করেন এবং আপনার এইসব ঘটনা কেউ জানতে না পাওয়ায় রাষ্ট্রব্যবস্থার শাস্তি থেকে যদি আপনি রেহাইও পান, সৃষ্টিকর্তার আদালত থেকে আপনার রেহাই নেয়, পরের জন্মে একইভাবে আপনি কোনো মাতৃগর্ভে নিহত হবেন এবং আপনার সঙ্গিনী নারী হিসেবে জন্ম নিয়ে বেশ্যার জীবন যাপন করবে, যেহেতু সে আগের জন্মে বেশ্যার মতো কাজ করেছিলো।

এই ভাবে শুধু পূর্বের একজন্মের নয়, বহুজন্মের সঞ্চিত কর্মের ফল মানুষ বর্তমান জন্মে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন আর্থ সামাজিক অবস্থানে জন্ম নিয়ে থাকে এবং বিভিন্ন ধরণের শাস্তি ও সুখভোগ করে থাকে। এখন বলেন যুবতী নির্ভয়া বা যুবতী রূপা বা শিশু আয়েশার যে পরিণতি হয়েছে, তার জন্য কে দায়ী ? কারো কর্মের ফল ভোগ করা থেকে ঈশ্বরও কাউকে রেহাই দিতে পারে না; কারণ, ঈশ্বর যদি কাউকে রেহাই দেয়, তাহলে যার সাথে অন্যায় করার ফলে সে শাস্তি পাচ্ছিলো, তার সাথে তো অন্যায় করা হবে। কিন্তু ঈশ্বর কি কারো সাথে অন্যায় করতে পারেন ? পারেন না। ঈশ্বর দয়াবান নয়, ঈশ্বর শুধু ন্যায়বিচারক। তিনি সবার সাথে ন্যায় করেন, তাই শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন- কেউ আমার প্রিয় নয়, কেউ আমার অপ্রিয় নয়।

যা হোক, সনাতন ধর্ম এটাও বলে- ঈশ্বর, মানুষের পূর্ব জন্মের সঞ্চিত কর্মের ফলে বিভিন্ন আর্থ সামাজিক পরিবেশে তাদেরকে সৃষ্টি করে থাকেন এবং জন্মের পর বিবেক বুদ্ধি দিয়ে তাদেরকে স্বাধীন করে দেন। এখন জীবন ও জগতের রহস্য জানার চেষ্টা না ক'রে, সঠিক পথকে নির্বাচন এবং সঠিক ধর্মবিশ্বাসকে অবলম্বন না ক'রে, কোনো মানুষ তার বিবেককে ভুল পথে চালিত ক'রে, পরের জন্মে তার স্থিতি কোথায় নিয়ে যাবে, সেটা ঐ ব্যক্তির নিজস্ব ব্যাপার, এতে ঈশ্বরের কোনো কোনো কিছু করার নেই। আপনি যদি নিজের বিবেককে ভালো পথে চালিত করেন, আপনার মাধ্যমে ঈশ্বর জগতের ভালো কাজগুলো করিয়ে আপনাকে মান সম্মানে উন্নীত করে সুখ সুবিধা ভোগ করাবে, পরের জন্মে আপনি আরো অধিকতর ভালো সুখ সুবিধা ও ক্ষমতার মধ্যে জন্ম নিয়ে জগতের কল্যান করবেন; এভাবেই জন্ম জন্মান্তরের ভালো কাজের ফলে কোনো মানুষ একজন্মে মহান হয়ে উঠে, পৃথিবী তাদেরকে কোনোদিন ভুলে না। আর আপনি যদি নিজের বিবেককে কাজে না লাগিয়ে খারাপ পথে নিজেকে পরিচালিত করেন, আপনার মাধ্যমেই ঈশ্বর সেই সব ব্যক্তিকে শাস্তি দেবেন, যাদের সেই শাস্তি প্রাপ্য এবং এই খারাপ পথে চালিত হওয়ায় পরের জন্মে আপনার স্থিতি আরো খারাপ হবে; আপনি- কানা, ল্যাংড়া, পঙ্গু, নপুংসক, দারিদ্রতা ইত্যাদি অধিকতর থারাপ অবস্থার মধ্যে পতিত হবেন।

ইসলামে যেহেতু অপরের ধন সম্পত্তি লুঠ করে খাওয়ার এবং অপরের নারী শিশুকে ধর্ষণ করার বিধান আছে এবং ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য যেহেতু এইসব অমানবিক কাজগুলো করা ইসলাম মতে পুন্যের কাজ, সেহেতু ইসলাম হলো মানুষরূপী জানোয়ারদের একটি মতবাদ; তাই ইসলাম মনে প্রাণে পালন করে কোনো মুসলমান পরের জন্মে নিজের আত্মার উন্নততর জন্ম কখনো ঘটাতে পারবে না। এরা আস্তে আ্স্তে কঠিন থেকে কঠিনতর খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়বে, তাই বাস্তবে যারা মনে প্রাণে ইসলা্ম পালন করে তারা কোনোদিনই জীবনে ভালো থাকে না; কারণ, ইসলাম পালন করে কেউ কখনো ভালো থাকতে পারে না; যেহেতু ইসলাম মানেই আচারহীন সংস্কৃতি, আর আচারহীন সংস্কৃতি মানেই বহুবিবাহ, সতীনের সংসার, তালাক, অবৈধ যৌনাচার, অযাচার- যে জীবনে কোনো শান্তি নেই। এর বিপরীতে মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও যারা আপনার মতো বিবেকবান এবং যুক্তি দিয়ে সবকিছু বিচার করে এবং কোরান হাদিস অনুসারে না চলে মানুষের মতো আচরণ করে, তারাই প্রকৃতপক্ষে ভালো থাকে, ভালো জীবন যাপন করতে পারে এবং পরের জন্মে তাদের স্থিতিই ভালো হয় বা হবে।

পৃথিবীতে ধর্ম একটাই, যেটা সনাতন, যা মানুষের ধর্ম, যার মূল কথা হচ্ছে- পরের স্ত্রী-কন্যাকে নিজের মায়ের মতো দেখবে এবং পরের সম্পদকে মাটির ঢেলা বিবেচনা করবে। ব্যক্তিমতের যে ধর্মেই কোনো মানুষ জন্মগ্রহন করুক না কেনো, সে যদি সনাতন ধর্মের মূল নীতি- পরের স্ত্রী-কন্যাকে নিজের মায়ের মতো দেখা এবং পরের সম্পদকে মাটির ঢেলা বিবেচনা করা, এই দুটি মূল নীতি অনুসরণ করে, সে অবশ্যই মানুষ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং পরের জন্মে অবশ্যই তার আত্মার উন্নততর জন্ম নিশ্চিত করতে পারবে।

গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, সকল মানুষ আমার পথই অনুসরণ করে। যারা পূর্বজন্মের পুন্যের ফলে সরাসরি সনাতনী হিসেবে জন্ম নেওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছে বা যারা অন্য ব্যক্তিমতের ধর্মে জন্ম নিয়েও সনাতনী মতে জীবন পরিচালিত করে, বা যারা মুসলমানদের মতো আসুরিক জীবন যাপন করে, সকলেই শ্রীকৃষ্ণের পথই অনুসরণ করে। পার্থক্য হচ্ছে- সনাতনীরা জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে, ব্যক্তিমতের ধর্মে জন্ম নেওয়া কিন্তু সনাতনী রীতির অনুসারীরা মুক্তির পথে সনাতনীদের পেছনেই আছে, পরের জন্মে হয়তো তারা সনাতনী হিসেবে জন্ম নিয়ে নিজেকে মুক্তির যোগ্য করে তুলতে পারবেন। আর মুসলমান হিসেবে জন্ম নেওয়া এবং মনে প্রাণে ইসলাম পালনকারীরা জন্ম জন্মান্তর ধরে মানবেতর জীবন যাপন করতেই থাকবে, যতক্ষণ না তারা বিবেকের দ্বারা পরিচালিত হয়ে সনাতনী জীবনধারাকে অনুসরণ না করছে। সুতরাং সবাই ঈশ্বরের পথেই আছে, কেউ সরল পথে, কেউ বাঁকা বা ঘুর পথে।
আপনি বলেছেন, এটা আপনার ২৮ নং প্রশ্ন, আগের প্রশ্নগুলো আমার নজরে আসে নি, তাই সেগুলোর উত্তর দিতে পারি নি; এই প্রশ্নটি আমার নজরে আনানো হয়েছে, তাই আমি তার উত্তর দিলাম। যদি আপনার আগের প্রশ্নগুলো আমার নজরে আসে, তবে অবশ্যই সেগুলোর উত্তরও আমি দেবো। কারণ, আমি মনে করি জীবন ও জগতের এমন কোনো প্রশ্ন নেই, সনাতন ধর্মে যার উত্তর নেই। একজন সনাতনী হিসেবে সেগুলো আমি জানার চেষ্টা করি এবং অপরকে জানানোর চেষ্টা করি, যাতে অন্যরা কোনো ভুল না করে বা যারা ভুল পথে আছে, তারা যেন নিজেকে শুধরে নেয়, এই আশায়।

শেষে বলছি- যারা নাস্তিকতায় বিশ্বাসী, তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে এবং তারা তাদের জ্ঞান দিয়ে কখনো জগত ও জীবনের সকল রহস্যের সমাধান দিতে বা করতে পারবে না। তারা শুধু প্রশ্ন করতে বা তুলতে পারবে, কিন্তু সমাধান দিতে পারবে শুধুমাত্র সনাতন ধর্ম তথা সনাতনীরা।

শেষে আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন, যেখানে আপনি বলেছেন-" একটা শেষ প্রশ্ন সব ধর্মের মানুষকে করবো" এখান থেকে অবশ্যই আপনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদেরকে বাদ দেবেন। কারণ, সনাতন ধর্ম এই ধরণের প্রশ্নের আওতাতেই পড়ে না। আর আপনি সনাতন ধর্মের সাথে অন্যান্য ব্যক্তিমতবাদকেও গুলিয়ে ফেলে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন; এর কারণ হলো ধর্মের প্রকৃত সংজ্ঞা এবং প্রকৃতধর্ম কী সেটাই আপনি জানেন না। ব্যক্তিমতের উপর যে তত্ত্বগুলো প্রতিষ্ঠিত, সেগুলো যে ধর্ম নয়, ব্যক্তিগত মতবাদ এবং প্রকৃত ধর্মের যে কখনো প্রবর্তক থাকে না, আশা করছি এই ব্যাপারে জ্ঞান লাভ করার পর, আপনি পরবর্তী পোস্ট লিখবেন।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment