বেদ এ কি পুনর্জন্ম নেই ?
#Md_Rashidul নামের এই বলদা কেনো যে এত অল্পজ্ঞানে বেদ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে যায়, সেটাই তো বুঝি না। একে কত আচাঁছা বাঁশ দিলাম, তবু দেখি এর লজ্জা হয় না। মুসলমান মানেই যে মূর্খ, সেটা তো চিরসত্য, কিন্তু মুসলমান মানেই কি নির্লজ্জ ? না হলে এর বোধ বুদ্ধির কোনো উদয় হয় না কেনো ? একের পর এক এ সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আজে বাজে মন্তব্য এবং মিথ্যা অভিযোগ করে যাচ্ছে, কিন্তু যার একটি অভিযোগেরও কোনো সত্যতা নেই। অতীতে এর বহু মিথ্যা অভিযোগের বিষয়ে জবাব দিয়েছি, আজও তেমন একটা বিষয়ে আলোচনা করছি, আলোচনা শেষে, আপনারা নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন, এ প্রকৃতই মিথ্যুক এবং উন্মাদ কি না ?
ফটোপোস্টে দেখুন, এর অভিযোগ হচ্ছে হিন্দুধর্মে স্বর্গ নরকের সুখ দুঃখ আছে, কিন্তু পুনর্জন্ম নেই। এটার রেফারেন্স হিসেবে সে লিখেছে ঋগ্বেদ ১০/১৬ এর ৪ ও ৫ নং মন্ত্র। এই মন্ত্র এবং এই মন্ত্রের অর্থ আমি হরফ প্রকাশনীর বেদ, যে বেদ একজন মুসলমানের দ্বারা প্রকাশিত এবং যার বেদ প্রকাশনা উদ্দেশ্যমূলক, সেই বেদ থেকেই তুলে দিচ্ছি, আপনারা নিজেই দেখুন এই মন্ত্রে প্রকৃতপক্ষেই কী বলা হয়েছে-
“অজো ভাগস্তপসা তং তপস্ব তং তে শোচিস্তপতু তং তে অর্চিঃ।
আস্তে শিবাস্তন্বো জাতবেদাস্তাভির্বহৈনং সুকৃতামু লোকম্ ।।
অব সৃজ পুনরগ্নে পিতৃভ্যো যস্ত আহুতশ্চরতি স্বধাভিঃ।
আয়ুর্বসান উপ বেতু শেষঃ সং গচ্ছতাং তন্বা জাতবেদঃ।।”
এর অর্থ- "হে মৃত! তোমার চক্ষু সূর্যে গমন করুক, তোমার শ্বাস বায়ুতে যাক। তুমি তোমার পুন্যফলে আকাশ ও পৃথিবীতে যাও। অথবা যদি জলে গেলে তোমার হিত হয়, তবে জলে যাও। তোমার শরীরের অবয়বগুলি উদ্ভিজ্জবর্গের মধ্যে গিয়ে অবস্থিতি করুক। এ মৃত ব্যক্তির যে অংশ অজ অর্থাৎ জন্মরহিত, চিরকালই আছে, হে অগ্নি, তুমি সে অংশকে তোমার তাপ দ্বারা উত্তপ্ত কর, তোমার তাপ, তোমার শিখা সে অংশকে উত্তপ্ত করুক। হে জা্তবেদা বহ্নি! তোমার যে সকল মঙ্গলময়ী মূর্তি আছে, তাদের দ্বারা এ মৃতব্যক্তিকে পুন্যবান লোকেদের ভুবনে বহন করে নিয়ে যাও।"
এর মধ্যে কি শুধু উন্মাদ রাশিদুলের অভিযোগ মতো- স্বর্গের সুখ এবং নরকের চিরকাল শাস্তির কথা বলা আছে ? রাশিদুল যে বেদের ৪০১ পৃষ্ঠার স্ন্যাপশট দিয়ে এই কথা বলেছে, আমি সেখান থেকেই আলোচনা করে দেখাচ্ছি যে রাশিদুল কতখানি নির্বোধ।
এই দুটি মন্ত্রের শুরুতেই বলা আছে, "হে মৃত! তোমার চক্ষু সূর্যে গমন করুক, তোমার শ্বাস বায়ুতে যাক।"
সূর্য তার আলোর মাধ্যমে যেকোনো প্রাণীকে সবকিছু দেখতে সাহায্য করে, যেকোনো প্রাণী বা মানুষের চোখ আসলে মানুষকে দেখতে সাহায্য ক'রে সূর্যের ভূমিকাই পালন করে, এজন্যই প্রার্থনা করা হয়েছে, "হে মৃত! তোমার চক্ষু সূর্যে গমন করুক।"
আর আমরা সবাই জানি মানুষের শ্বাস আসলে বাতাস বা বায়ু, বায়ুর সা্থে শ্বাসের সংযোগ আছে বলেই যেকোনো প্রাণী বা মানুষ বেঁচে আছে। মানুষের শ্বাস আসলে বায়ুরই অংশ, তা্ই প্রার্থনা করা হয়েছে, তোমার শ্বাস বায়ুতে যাক। এরপর বলা হয়েছে, "তুমি তোমার পুন্যফলে আকাশ ও পৃথিবীতে যাও। অথবা যদি জলে গেলে তোমার হিত হয়, তবে জলে যাও। তোমার শরীরের অবয়বগুলি উদ্ভিজ্জবর্গের মধ্যে গিয়ে অবস্থিতি করুক।"
এই অংশে স্পষ্ট করে পুনর্জন্মের কথাই বলা হয়েছে, আকাশে যাওয়ার কথা বলে পাখি, পৃথিবীতে যাওয়ার কথা বলে স্থলচর প্রাণী, জলে যাওয়ার কথা বলে জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিজ্জবর্গের মধ্যে যাওয়ার কথা বলে গাছ হিসেবে জন্ম নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তারপর বলা হয়েছে, "এ মৃত ব্যক্তির যে অংশ অজ অর্থাৎ জন্মরহিত, চিরকালই আছে, হে অগ্নি, তুমি সে অংশকে তোমার তাপ দ্বারা উত্তপ্ত কর, তোমার তাপ, তোমার শিখা সে অংশকে উত্তপ্ত করুক।"
অজ বা জন্মরহিত বলতে আত্মাকেই বোঝানো হয়; কারণই আত্মারই জন্ম বা মৃত্যু হয় না, পুনর্জন্মের মাধ্যমে আত্মা শরীর পরিবর্তন করে মাত্র, সেই আত্মাকেই আগুনে পুড়িয়ে শুদ্ধ করতে অগ্নির কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে। এটাকে নরকের শাস্তি হিসেবে ধরে নেওয়া গেলেও যেতে পারে, কিন্তু এই শাস্তি, বলদ রাশিদুলের অভিযোগ মতো চিরকালীন শাস্তি নয়। কারণ এরপরেই বলা হয়েছে, "হে জা্তবেদা বহ্নি! তোমার যে সকল মঙ্গলময়ী মূর্তি আছে, তাদের দ্বারা এ মৃতব্যক্তিকে পুন্যবান লোকেদের ভুবনে বহন করে নিয়ে যাও।" অর্থাৎ অগ্নির কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে, যখন এই আত্মার শাস্তি শেষ হবে, তখন তাকে বহন করে পুন্যবান লোকেদের ভুবনে অর্থাৎ স্বর্গে নিয়ে যেতে। তার মানে মৃত্যুর পর পাপী আত্মা নরকে শাস্তি পাবে এবং শাস্তি শেষে সেই আত্মা স্বর্গে স্থান পাবে, কিন্তু এর কোনটাই চিরকালীন নয়। কারণ, এর পরের মন্ত্র ১০/১৬/৬ এ বলা আছে, "তা জীবন প্রাপ্ত হয়ে উত্থিত হোক, সে পুনর্বার শরীর লাভ করুক।" তার মানে পুনর্জন্মের বিষয়টি বেদে স্বীকৃত এবং রাশিদুল যে অভিযোগ করেছে, তার পুরোটাই মিথ্যা।
মৃত্যুর পর শুধু হিন্দুরাই নয়, পৃথিবীর সব লোক স্বর্গ বা নরকেই যাবে, কিন্তু কোন প্রসেসে যাবে এবং পুনর্জন্ম কিভাবে ঘটবে, সেটা জানতে ও বুঝতে হলে নিচের এই অংশটির প্রতি গভীরভাবে মনোযোগ দিতে হবে; কেননা, এই অংশটুকু খুব ভালোভাবে পড়লে বুঝতে পারবেন পুনর্জন্ম বা জন্মান্তরবাদ ধ্রুব সত্য, যেটা এই মুমিন অস্বীকার করেছে-
কোনো মানুষের মৃত্যুর পর তার আত্মাকে যমরাজ নিয়ে যায় পিতৃলোকে, যেখানে সে তিনপুরুষ পর্যন্ত বাস করে।
পৃথিবীতে মৃত ব্যক্তির চতুর্থ প্রজন্মের মৃত্যু হলে, সেই আত্মা যখন পিতৃলোকে যায়, তখন পিতৃলোকে অবস্থান করা সবচেয়ে সিনিয়র আত্মাটি মুক্ত হয়ে, পৃথিবীতে তার কর্মফল এবং তার পরবর্তী বংশধর, যাদেরকে সে পৃথিবীতে রেখে গেছে, তাদের কর্মফলের উপর ভিত্তি করে, সে হয় নরকে বা স্বর্গে যায়। এই সিস্টেমে পিতৃলোকে সব সময় তিনটি আত্মাই অবস্থান করে। এজন্য পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পন করতে হলে, যে তর্পন করছে, তাকে সব সময় তার পূর্ব তিন পুরুষদের আত্মার সদগতির জন্য প্রার্থনা করতে হয়, যেটা করতে হয় দুর্গাপূজার মহালয়ার আগের ১৫ দিন সেই তিথিতে, যে তিথিতে পিতা বা মাতা মারা গেছেন, এজন্য এই পক্ষটা পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত।
পিতৃলোক থেকে আত্মারা মুক্ত হয়ে তাদের কর্মফল অনুযায়ী হয় স্বর্গে যায়, বা নরকে যায় বা নরক ভোগ শেষ স্বর্গে যায়, এই নরক ও স্বর্গভোগ শেষে সেই আত্মা আবার পৃথিবীতে জন্ম নেয়, এটাই পুনর্জন্ম তত্ত্ব।
সনাতন ধর্মে সবকিছুই প্রবাহমান এবং কালের অন্ত পর্যন্ত এই প্রবাহ চলতে থাকবে। মানুষের জন্ম ও মৃত্যু এই প্রবাহেরই একটি ধারা। এজন্যই বলা হয়- মানুষের জীবন হলো আত্মার ভ্রমণ।
সনাতন ধর্মের যে পুনর্জন্ম থিয়োরি, সেটা যে বেদে স্বীকৃত, তার প্রমাণ তো আমি রাশিদুলের দেওয়া রেফারেন্স থেকেই দেখিয়ে দিয়েছি। এখন দেখা যাক ইসলামে পুনর্জন্ম আছে কি না এবং মুসলমানরা যে পুনর্জন্মকে স্বীকার করে না, সেটা কতটা বাস্তবসম্মত ?
পুনর্জন্ম যদি না ই থাকে, তাহলে মানুষের মধ্যে জন্ম বৈষম্য কেনো ? কেনো কেউ জন্মেই অঢেল সুথ ঐশ্বর্য ভোগ করছে, কেনো কেউ দরিদ্র জীবন যাপন করছে ? শুধু তাই নয়, কুকুর হয়ে জন্ম নিলেও বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া কুত্তা আর জাপান আমেরিকায় জন্ম নেওয়া কুকুরের ভাগ্যের আকাশ পাতাল পার্থক্য, এটা কেনো ?
ইসলাম মতে সকল রূহ বা আত্মা নাকি আল্লা একই সাথে একই সময়ে সৃষ্টি করে রেখে দিয়েছে, তারপর তাদেরকে ক্রমান্বয়ে পৃথিবীতে পাঠাচ্ছে। এই সূত্রে সকল আত্মা নির্দোষ, তাহলেও মুসলমানদের মধ্যে ধনী গরীবের বৈষম্য কেনো এবং কেনো কোনো শিশু, ধনী ও বিখ্যাত পরিবারে জন্ম নিয়ে অশেষ সুখ ভোগ করছে, আবার কেনো কেউ বস্তিতে জন্ম নিয়ে রাস্তার খাবার কুড়িয়ে খেতে বাধ্য হচ্ছে ?
জবাব আছে রাশিদুলের বা কোনো মুসলমানের ?
এ প্রসঙ্গে মুসলমানদের যুক্তিহীন জবাব অবশ্যই আছে, আর সেটা হলো- দরিদ্র পরিবারে জন্ম দিয়ে আল্লা মানুষের পরীক্ষা নিচ্ছে।
আরে বলদা, পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া ই যদি পরীক্ষা হয়, তাহলে সে পড়ার সুযোগ পেলো কখন ? আর যার পড়ার সুযোগ দেওয়া হয় নি অর্থাৎ কর্ম করার সুযোগই দেওয়া হয় নি, তার আবার পরীক্ষা কিসের ? ৫/৭ বছরের একটি কন্যা শিশু যখন ধর্ষণের শিকার হয়ে নিহত হচ্ছে, কোন পাপের ফলে তার সেই পরিণতি হচ্ছে ? ইসলাম মতে ৭ বছর বয়স পর্যন্ত তো কোনো শিশুর পাপ পুন্যই হিসেব করা হয় না।
যে যুক্তি বোঝে না বা যুক্তি মানতে চায় না, একমাত্র তার পক্ষেই ইসলামকে মেনে চলা সম্ভব; কারণ, যুক্তিবাদীদের কাছে ইসলাম সম্পূর্ণ অবাস্তব এক থিয়োরি।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই গজমূর্খ মুমিন বান্দা, সনাতন ধর্মের পুনর্জন্মের থিয়োরিকে অস্বীকার করলেও, ইসলামেই যে পুনর্জন্মকে স্বীকার করা হয়েছে, সেটা জানে না। কারণ, বোখারি শরীফে বলা আছে,
“বানর আর শুকর মানেই যারা পূর্বে বাদ্য যন্ত্র বাজাতো।” (Sahih Bukhari 7:69:494)।
এখানে স্পষ্ট করে বলা আছে, এজন্মে যারা বানর ও শুকর তারা পূর্বের জন্মে গান বাজনার সাথে যুক্ত ছিলো।
এ প্রসঙ্গে কি উন্মাদ রাশিদুলের কিছু বলার আছে ? যদি থাকে তাহলে ঘেউ ঘেউ শুরু কর; আর না থাকলে হিন্দু ধর্মের বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে সনাতন কালচার পালন করে মানুষ হ; কেননা, তাতেই- সমাজ, দেশ ও পৃথিবীর মঙ্গল; কারণ, কোনো হিন্দু বা সনাতনী আদর্শে বিশ্বাসী কোনো মানুষ, কোনোদিন ‘আল্লাহু আকবার’ বলে কারো উপর চাপাতি নিয়ে হামলা করবে না বা লোকজনের উপর ট্রাক তুলে দিয়ে তাদেরকে গণহারে হত্যা করবে না বা দেশ-বিদেশে বসে মাতৃভূমিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করবে না বা প্রার্থনা স্থানে সশস্ত্র হামলা করে মানুষ খুন করবে না। এসব করে না বা করবে না বলেই, হিন্দুরা প্রকৃত শান্তির ধারক ও বাহক।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
No comments:
Post a Comment