Monday, 25 May 2020

বেদ সম্পর্কে মুসলমানদের মিথ্যাচারের জবাব- ১


বেদ সম্পর্কে মুসলমানদের মিথ্যাচারের জবাব- ১ :

ইসতিয়াক নামের এই হুরলোভী লম্পট, তার ভাষায় বেদের কিছু ভুল তুলে ধরেছে, দেখা যাক আদৌ সেগুলো ভুল কি না বা বেদের সেই সব শ্লোকে আসলেই কী বলা হয়েছে ? মুসলমানদের কাজই তো হলো শুধু কপি পেস্ট করে কমেন্ট করা, তাই এই একই ধরণের পোস্ট আপনারা বিভিন্ন মুসলমানের নামে পাবেন, সেই সকল পোস্টের জন্য আমার এই একই জবাব, জেনে নিন এবং প্রয়োজন মতো বাঁশ দিন।

যা হোক, এই মুসলমান ঋগ্বেদের ২/১২/১২ রেফারেন্স দিয়ে বলেছে, সেখানে নাকি লিখা আছে, "দেব ইন্দ্র পৃথিবীকে স্থির রেখেছেন।"

আসুন দেখে নিই ঋগ্বেদের সেই মন্ত্রটা এবং তার প্রকৃত অর্থ-

"যঃ সপ্তরশ্মি বৃষভস্তু বিষ্মানবাসৃজৎ সর্তবে সপ্ত সিন্ধূন্।
যো রোহিণমস্ফুরদ্বজ্রবাহুর্দ্যামারোহন্তং স জনাস ইন্দ্রঃ।"

এর অর্থ হিসেবে হরফ প্রকাশনীর বেদ, যার মালিক একজন মুসলমান, সেই বেদে লিখা হয়েছে,

"হে মনুষ্যগণ, যিনি সপ্তরশ্মিবিশিষ্ট, অভিষ্টবর্ষী ও বলবান, যিনি সাতটি নদীকে প্রবাহিত করে দিয়েছিলেন, যিনি বজ্রবাহু হয়ে স্বর্গারোহণোদ্যোত রোহিণকে বিনাশ করেছিলেন, তিনিই ইন্দ্র। এই একই ধরণের কথা লিখা আছে অগ্নিবীর কর্তৃক প্রকাশিত ড. তুলসীরাম দাসের ইংরেজি অনুবাদে, যার একটি স্ন্যাপশট এই পোস্টের সাথে ফটো হিসেবে যুক্ত করে দিয়েছি, নিশ্চয় সেটা দেখেছেন।

এই মুসলমানের মতে, এই একই ধরণের কথা নাকি বলা আছে, যজুর্বেদের ৩২/৬ নং মন্ত্রে; যদিও যজুর্বেদ যে কৃষ্ণ ও শুক্ল, এই দুইভাগে বিভক্ত, সেটা এই মুসলমান যে জানে না, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত; কারণ জানলে সে উল্লেখ করতো যে এটা শুক্ল যজুর্বেদের ৩২/৬ নং মন্ত্র থেকে নেওয়া; আর জানবেই বা কিভাবে, বেদ কি সে চোখে দেখেছে, জাকির নায়েকের লেকচারের কোনো বই থেকে কপি পেস্ট করে সে এখানে মাস্তানি দেখাচ্ছে, এই মাস্তানি সে আবার একা দেখাচ্ছে না, সাথে নাকি আবার কাকে নিয়েছে, যে কথা সে শুরুতেই স্বীকার করেছে এইভাবে, "আমাদের এক ভাই আমাদের এ বিষয়ে হেল্প করেছে।" এজন্যই ইসতিয়াকের জন্য আমার একটি উপদেশ বা পরামর্শ- বিয়ের পর যখন বৌ এর সাথে বাসর করতে যাবেন, তখন কোনো বন্ধুকে সাথে রাইখেন; কেননা, আপনি তো আবার একা একা কিছু করতে পারেন না।

যা হোক, দেখে নিন সেই মন্ত্রটি এবং তার অর্থ-

"যেন দৌরুগ্রা পৃথিবী চ দৃঢ়া যেন স্বঃ স্তভিতং যেন নাকঃ।
যো অন্তরিক্ষে রজসো বিমানঃ কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম।।

হরফ প্রকাশনীর বেদে এর অর্থ দেওয়া আছে,
" যে পুরুষ ( বৃষ্টিদানে) দ্যুলোক উগ্র করেছেন, প্রাণীধারণ, বৃষ্টিগ্রহণ ও অন্ন নিষ্পাদন করে পৃথিবী দৃঢ় করেছেন, যিনি আদিত্যমণ্ডল ও স্বর্গলোক স্তব্ধ করেছেন, যিনি অন্তরিক্ষলোকে জলের নির্মাতা, তাকে ছাড়া আর কাকে হবি দেব ?"

এখানে পৃথিবী দৃঢ় করেছেন মানে- প্রাণীধারণ, বৃষ্টিগ্রহণ ও ফসল ফলানোর মাধ্যমে অন্ন সংস্থানের একটি ব্যবস্থা করে পৃথিবীকে একটি সিস্টেমের মধ্যে এনে একে প্রাণীজগতের জন্য সুনিয়ন্ত্রিত করেছেন। অথচ এই মন্ত্র থেকে মুসলমানরা বুঝেছে- ঈশ্বর এই পৃথিবীকে স্থির রূপে তৈরি করেছেন! ড. তুলসীরাম দাসের ইংরেজিতে অনুবাদ করা এই মন্ত্রের একটি স্ন্যাপশট এই পোস্টের সাথে যুক্ত করে দিয়েছি, সেখানেও দেখুন তো- The God who made the earth stable- জাতীয় কোনো বাক্য সেখানে আছে কি না ?

এই মুসলমানের আরো অভিযোগ হলো অথর্ববেদের ১২/১/১১ নং মন্ত্রেও নাকি এই কথা বলা আছে যে- "ইন্দ্র এই বিশাল পৃথিবীকে স্থির রেখেছেন", যার ইংরেজি অনুবাদ সে লিখেছে, "Indra protects the wide earth, which is immovable and has many forms."

এই মন্ত্রটির অনুবাদ হরফ প্রকাশনীর বেদ এ নেই, তাই মূল মন্ত্রটিও উল্লেখ করলাম না। কিন্তু ড. তুলসীরাম দাস, তার ইংরেজি অনুবাদে লিখেছেন,

"Earth Mother, may your hills and mountains capped with snow, and your woodland be good and grand and pleasant, and, on this land, brown and productive, dark green and fertile, red and luxuriant, vast and varied in form and hue, firm and unshakable seat of settlement guarded by mighty heroes of Indra, may we live safe and secure with pride and confidence unconquered free, unbroken and unviolated."

এর বাংলা হলো- "মা বসুন্ধরা, তোমার পাহাড় ও পর্বতগুলি তুষারে আবৃত এবং তোমার বনভূমি সুন্দর ও মনোজ্ঞ এবং তোমার এই ভূমি বাদামী রং এর এবং উৎপাদনশীল, গাঢ় সবুজ এবং উর্বর, লাল এবং প্রাচুর্যময়, সীমাহীন এবং বিভিন্ন বর্ণে রঞ্জিত, শক্তিশালী বীর ইন্দ্র দ্বারা সুরক্ষিত নিশ্চিত বসতি, যাতে আমরা নিরাপদে, গর্ব এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে অপরাজিত, স্বাধীন ও সন্ত্রাসমুক্তভাবে বাস করতে পারি।"

এর মধ্যে কি কোথাও বলা আছে- " Indra protects the wide earth which is immovable and has many forms" কোথা থেকে যে এরা এসব অনুবাদ পায়, না এরা নিজেরাই এসব অনুবাদ করে কে জানে ? যেমন- নেটে মুসলমানরা গীতার একটি এ্যাপ ছেড়েছে, সেখানে তারা গীতার অধ্যায়গুলোর নাম ইচ্ছামতো চেঞ্জ করেছে এবং গীতার শ্লোকগুলোকে উল্লেখ করেছে আয়াত হিসেবে, এ সংক্রান্ত দুটি ফটো, এ্রই পোস্টের সাথে যুক্ত করে দিলাম, সেটা দেখে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করেন; আমার মনে হয়, বেদের এই বিকৃত অনুবাদগুলোও মুসলমানদের কাজ বা মুসলমান দ্বারা প্রভাবিত।

এতক্ষণ তো দেখলেন মুসলমানরা কিভাবে বেদের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে পৃথিবীকে স্থির করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে, এবার দেখুন মুসলমানদের প্রাণ কোরানে কিভাবে পৃথিবীকে স্থির হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে-

ইসলামিক গাল গল্প নয়, বাল গল্পে বলা হয়- আল্লা যখন পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলো, তখন তা কাঁপছিলো, তারপর পৃথিবীকে স্থির করতে আল্লা যা করে তা বলা আছে নিচের এই তিনটি আয়াতে -

"পাহাড়-পর্বতসমূহকে কীলক স্বরূপ গেড়ে দিয়েছি।"- (কোরান, ৭৮/৭)

এর কারণ হিসেবে উপরের এই আয়াতে বক্তা বলেছে-

"আমি যমীনে পাহাড় খাড়া করে দিয়েছি, যেন তা তোমাদেরকে নিয়ে কেঁপে ঢলে না পড়ে।"- (কোরান, ২১/৩১)
এই একই কথা আবার বলা আছে নিচের এই আয়াতে, কিন্তু সেটা আল্লার জবানীতে নয়, অন্য কারো জবানে, দেখুন নিচে-

"তিনি যমীনে পাহাড়সমূহ গেড়ে দিয়েছেন যেন যমীন তোমাদেরকে নিয়ে হেলতে দুলতে না পারে।"- (কোরান, ১৬/১৫)

এই কথা যে মুহম্মদ বলেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু মুসলমানরা তো সিলগালা মানসিক প্রতিবন্ধী, তারা কোরানের এই ব্যাকরণগত ভুল বুঝবে কিভাবে ? কোরানে যতই ভুল থাক আর যতই বলদের গু থাক, মুসলমানদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে কোরান নির্ভুল; কেননা, এটা বিশ্বাস না করলে মুসলমানদের পরম চাওয়া বেহেশতের ৭২ হুরকে দোচার সুযোগ তারা পাবে না, একটা জাতি কী পরিমাণ লম্পট হলে এই ভাবনা নিয়ে নামায-রোজা-হজ-তাবলীগ করতে পারে সেটা একবার কল্পনা করুন।

যা হোক, উপরে কোরানের যে তিনটি আয়াত উল্লেখ করলাম, এগুলো থেকে প্রমাণিত যে, কোরানের ভাষ্যমতে পৃথিবী সৃষ্টি করার পর সেটা কাঁপছিলো ব'লে আল্লা পাহাড় পর্বতকে কীলক হিসেবে ব্যবহার করে পৃথিবীর এখানে সেখানে সেগুলো পুঁতে দিয়েছে, ফলে পৃথিবী স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং মানুষদেরকে নিয়ে হেলে দুলে পরে যাচ্ছে না।

এই যদি হয় প্রকৃত ঘটনা, তাহলে তো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমান অনুপাতের দূরত্বে, যেমন ১০০ মাইল পর পর বা ৫০০ মাইল পর পর বা ১০০০ মাইল পর পর পাহাড় পর্বতগুলো থাকা উচিত ছিলো, কিন্তু সেটা নেই কেনো ? কেনো শুধু বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এ সিলেট এলাকায় একস্থানে গুচ্ছ গুচ্ছ পাহাড় বা কেনো শুধু নেপাল ভারত চীনের হিমালয় এলাকায় একস্থানে প্রায় ২ হাজারটি পর্বত ? এমনও দেশ আছে যাদের কোনো পাহাড় পর্বতই নেই, আবার এমনও দেশ আছে, যার পুরোটাই পাহাড় পর্বতে ঘেরা, এমন কেনো ? কোরানের বক্তব্য সত্য হলে পৃথিবীর পৃষ্ঠে সমান দূরত্ব অনুপাতে পাহাড় পর্বতগুলো থাকতো; যখন এটা নেই, তখন এটা থেকেই প্রমাণিত যে, কোরান মিথ্যা, কোরান যেহেতু মুহম্মদের মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছে তখন মুহম্মদ মিথ্যুক এবং মুহম্মদের আইডিয়া আল্লা পুরাটাই বোগাস, ফলে মুহম্মদ প্রবর্তিত ইসলাম একটা টোটাল বোগাস বা ভুয়া ধর্ম। এখন যদি কোনো মুসলমানের সেই ঈমানী জোর থাকে তাহলে উপরে যে তিনটি আয়াতের উল্লেখ করেছি, সেগুলোর সাপেক্ষে পৃথিবী যে স্থির নয়, তা প্রমাণ করুক; গালাগালি দিয়ে এটা বলার কোনো দরকার নেই যে, তুই কোরানের কী বুঝিস বা কোরানের এই আয়াতগুলোকে বিকৃত করা হয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি; এসব না বলে আমি যে তিনটি আয়াতের কথা উল্লেখ করেছি, সেগুলোর সাপেক্ষে বল যে, আমার বক্তব্য যদি ভুল হয় তাহলে ঐ আয়াতগুলোতে, তোদের মতে আসলে কী বলা হয়েছে ?

আমি মুসলমানদের অনেকবার বলেছি, তোরা হিন্দুধর্ম নিয়ে চুলকাস না; কারণ, হিন্দুধর্ম নিয়ে চুলকালেই কোরান হাদিস ঘেঁটে ইসলামকে এমনভাবে ন্যাংটা করবো যে, তাকে ঢাকার জন্য ছেঁড়া কাপড়ও খুঁজে পাবি না; এই পোস্টে তার প্রমাণ আবারও পেলি, বেদের অপব্যাখ্যা দিয়ে পৃথিবীকে স্থির প্রমান করতে গিয়ে সেটা তো পারলিই না, উল্টো কোরানেই যে পৃথিবীকে স্থির বলা হয়েছে সেটা বেরিয়ে পড়লো এবং সৃষ্টিকর্তার বাণীতে যেহেতু কোনো ভুল থাকতে পারে না এবং যেহেতু কোরানে ভুল পাওয়া গেলো, সেহেতু এটা প্রমাণ হয়ে গেলো যে কোরান কোনো সৃষ্টিকর্তার বাণী নয়, এটা মুহম্মদ নামের এক বদ্ধপাগলের কিছু তার ছেঁড়া কথাবার্তা এবং সেই বদ্ধপাগলের ধ্যান ধারণার সমষ্টি ইসলাম পুরোটাই ভুয়া। এখন বল, হিন্দুধর্ম নিয়ে আর চুলকাবি ?

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

বি.দ্র # ইসতিয়াক এবং তার মতো কপি পেস্ট মুসলমানদেরকে কানে কানে বলছি এখনই যেন তোরা ফেসবুক ছেড়ে পালিয়ে যাস না; কারণ, তোদের জন্য এরকম আরো বেশ কয়েকটি আচাঁছা বাঁশ আসছে।

No comments:

Post a Comment