প্রসঙ্গ : ভাইফোঁটা এবং যম ও যমীর কথোপকথন
হিন্দু সমাজের যা কিছু ভালো এবং যা মুসলিম সমাজে নেই, একটা বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে সেটার সমালোচনা করে হিন্দু সমাজকে সেই প্রথা থেকে দূরে রাখাই হলো মুসলমানদের মূল উদ্দেশ্য, যাতে হিন্দুরা আস্তে আস্তে মুসলমানদের মতো হয়ে যায় এবং সমাজ হিসেবে সভ্যতার একেবারে নিচুস্তরে নেমে যেতে বাধ্য হয়।
ভাইফোঁটার উৎপত্তি যেখান থেকেই হোক আর এ বিষয়ে পুরাণে যা ই থাকুক, হিন্দু সমাজে ভাই বোনের সম্পর্কে সারাজীবন মধুর রাখতে এই ভাইফোঁটা প্রথার কোনো তুলনা নেই।
অন্যদিকে মুসলিম সমাজে পিতার সম্পত্তির ভাগ নিয়ে ভাই বোনের মধ্যে- মনোমালিন্য, ঝগড়া, মারামারি এবং দেওয়ানি মামলার কোনো শেষ নেই। বস্তুত ভাই বোনের সম্পর্ক সারাজীবন ভালো রাখতে ইসলামে কোনো ব্যবস্থাই নেই; আর থাকবেই বা কেনো, মুসলমানরা তো কাউকে বোন মনেই করে না, সবাইকে মনে করে বউ; এজন্য মুসলিম মেয়েরা তাদের কোনো চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো ভাইকে যেমন নিরাপদ মনে করে না, তেমনি নিরাপদ মনে করে নিজের ভাই এবং বাপকেও; তাই তারা বাইরে তো বটেই, নিজের বাড়ির মধ্যে পর্দার নামে নিজের শরীরকে বাপ ভাইয়ের দৃষ্টি থেকে আড়াল করে রাখে। মুসলমানরা সবধরণের বোনকেই যেহেতু কল্পনা করে নিজের বউ হিসেবে, তাই ইসলামে ভাইফোঁটা বা এই জাতীয় কোনো প্রথা বা উৎসব নেই।
মুসলমানরা, ভাইফোঁটার মতো হিন্দুদের এরকম একটি মহৎ অনুষ্ঠানকে কলুষিত করার জন্য যম ও যমীর প্রসঙ্গ টেনে নানা বাজে কথা বলে বা বলবে, এ বিষয়ের ভেতরের রহস্য জানতে হলে পড়ুন নিচের এই প্রবন্ধটি-
যম ও যমীর কথোপকথনের মূল রহস্যটা আসলে কী ?
ঋগ্বেদের ১০ মণ্ডলের ১০ম সূক্তে যম ও যমীর কথোকথন রয়েছে। পৌরাণিক কাহিনী মতে, এই যম ও যমী হলো সূর্যের পুত্র ও কন্যা। বিজ্ঞান মতে, সূর্য একটি প্রাকৃতিক শক্তি, আর প্রকৃতির সকল শক্তিই হিন্দুশাস্ত্রে কোনো না কোনো দেব-দেবী রূপে কল্পিত, এই সূত্রে সূর্যও হিন্দুদের একটি দেবতা এবং এই দেবতার কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে সূর্যকে মানুষ এবং তার আবাসস্থানকে সূর্যলোক এবং তাতে সূর্যের পিতা মাতা স্ত্রী কন্যা পুত্র এবং তাদেরকে নিয়ে বিভিন্ন কাহিনীর কল্পনা ও বর্ণনা করা হয়েছে। সূর্য বাস্তব, কিন্তু সূর্যকে কেন্দ্র করে পুরাণে যে গল্পগুলো বলা হয়েছে, সেগুলো শুধুই গল্প, বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই, কিন্তু সূর্যকে কেন্দ্র করে সৌরজগত এবং দেব-দেবীদের যে গল্প বানানো হয়েছে এবং সৌরজগতের গ্রহগুলোর মানুষের উপর প্রভাব সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ বাস্তব, জ্যোতিষ শাস্ত্র সম্পর্কে যাদের কিছু জ্ঞান রয়েছে, তারা আমার কথা ভালো বুঝতে পারবেন।
কোনো গল্প বানাতে গেলে গল্পের চরিত্রগুলোর মুখে ভাষা তুলে দিতে হয়, এজন্য জীবজন্তুদেরকে নিয়ে লেখা ঈশপের গল্পগুলোতেও দেখা যায় বাঘ সিংহ হরিণ বানরেরা অবিকল মানুষের মতো কথা বলছে, পৌরাণিক কাহিনীগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়, এখানে যেসব চরিত্র কল্পনা করা হয়েছে, সেগুলো যেহেতু মানুষই কল্পনা করেছে, তাই সেই চরিত্রগুলোকেও মানুষের আকারেই তারা কল্পনা করেছে এবং মানুষের মুখের ভাষার মতোই তাদের মুখেও তারা সেই ভাষা তুলে দিয়েছে।
সূর্যের কারণেই সৃষ্টি হয় দিন ও রাতের, তাই পুরাণে দিন ও রাতকে সূর্যের সন্তান হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে এবং তাদের নাম যম ও যমী। এখানে যমকে কল্পনা করা হয়েছে দিন হিসেবে এবং যমীকে রাত্রি হিসেবে।
ঋগ্বেদের ১০ মণ্ডলের ১০ম সূক্তে যম ও যমীর কথোকথনের মূল বক্তব্য হলো- যমী, যমকে দৈহিকভাবে কামনা করে, কিন্তু যম অনৈতিক মনে করে তাতে রাজী হয় না; এই বিষয়টি নিয়েই মুসলমানদের চুলকানির শেষ নেই, তারা এই বিষয়টি নিয়ে নানা বাজে কথা বলে এবং ঠাট্টা তামাশা করে। কিন্তু তারা এটা বোঝে না যে- যম ও যমী, মুহম্মদ ও মারিয়া বা জয়নাবের মতো মানুষ নয়, তাই তারা মানুষের মতো যৌনাকামনা করতে পারে না বা তাদের সেটা করার প্রয়োজন নেই, যমীর যৌন কামনার মধ্যে দিয়ে আসলে অন্য কিছুকে প্রকাশ করা হয়েছে।
মানুষের সবচেয়ে শক্তিশালী আবেগ হলো যৌনতা, এই যৌনতার ফাঁদে ফেলে বা যৌনতার লোভ দেখিয়ে যৌন সক্ষম পুরুষকে দিয়ে এমন কোনো কাজ নেই যা করানো সম্ভব নয়। ইহকালে গনিমতে মালের নামের পরাজিত অমুসলিমদের মেয়েদের ভোগ এবং পরকালে বেহেশতের ৭২ বেশ্যার লোভ দেখিয়েই মুহম্মদ তার ইসলামে দলে দলে লোক টানতে পেরেছিলো।।
যা হোক, যেকোনো আবেগের মতো মানুষের যৌনতার আবেগও রাত্রিকালে বেশি বৃদ্ধি পায় এবং পৃথিবীতে ম্যাক্সিমাম যৌনক্রিয়ার ঘটনাগুলো ঘটে রাত্রে, একারণেই রাত্রির প্রতীক যমীকে যৌনতার প্রতীক হিসেবে বেদ বা পুরাণে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং তার প্রস্তাবে যম যে কিছুতেই রাজী হচ্ছে না, এর মানে হলো রাত কিছুতেই দিনকে ধরতে পারে না। রাত ও দিনের এই ব্যাপারগুলোই আসলে রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে বেদের এই মন্ত্রগুলোতে।
কিন্তু যম ও যমী, যারা আসলে দিন ও রাত্রি, যারা প্রকৃতপক্ষে কোনো মানুষ তো দূরের কথা জীবজন্তুও নয়, যাদের সেক্স করার কোনো প্রয়োজন্ও নেই, সেই যম ও যমীর যৌনালাপ নিয়ে মুসলমানদের আগ্রহ ও কৌতূহলের শেষ নেই, এটা নিয়ে তাদের ঠাট্টা, তামাশা, বিদ্রুপ এবং চুলকানিরও শেষ নেই; কিন্তু যে মুহম্মদ একজন মানুষ এবং যার ক্ষুধা তৃষ্ণা যৌনতা ছিলো, যে মুহম্মদ ছিলো এত সেক্সি যে, যার ছিলো ৩০ জন পুরুষের যৌনশক্তি; যার বউ ছিলো অগুনতি, যে দিনে রাতে পর্যায়ক্রমে ১১ জন স্ত্রীর সাথে যৌনমিলন করতো, এতজন স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও যার যৌনকামনা মিটতো না, যাকে তার দাসীর সাথে শুতে হতো, গোত্রের সবাইকে হত্যার দিনই যে ব্যক্তি রিহানা ও সাফিয়াকে ধর্ষণ করেছিলো, নীতি নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে যে পালক পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করেছিলো, সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় এবং বেমানান সত্ত্বেও যে ৫০ বছর বয়সে ৬ বছরের আয়েশাকে বিয়ে করেছিলো এবং আয়েশার নয় বছর বয়সে যে আয়েশার সাথে বাসর করেছিলো- সেই মুহম্মদকে নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা থাকা তো দূরের কথা লজ্জা-শরমও নেই; এই লম্পট ও চরিত্রহীন মুহম্মদই নাকি আবার তাদের কাছে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ! লম্পট ও চরিত্রহীনেরা্ই তো লম্পট ও চরিত্রহীনকেই তাদের আদর্শ বলে মানবে, এতে আর আশ্চর্য হওয়ার কী আছে ?
পুরাণ মতে যম ও যমী জমজ ভাই বোন; যমী, যমকে যৌনমিলনের জন্য আহ্বান করছে, কিন্তু যম তাতে রাজী হচ্ছে না, এতে যমের নীতি নৈতিকতা ই প্রকাশ পাচ্ছে; কারণ, এই কাহিনীগুলো হিন্দু মুনি ঋষিদের দ্বারা রচিত; হিন্দুরা যেমন অনৈতিক চিন্তাও করে না, তেমনি অনৈতিক কাজও করে না। কিন্তু এই ক্যারাক্টারগুলো যদি মুসলিম হতো তাহলে কী ঘটতো ? যমীর যমকে আহ্বান করাই লাগতো না, যমই তক্কে তক্কে থাকতো, কখন যমীকে একলা পাবে, আর তার কাপড় খুলতে পারবে। মুহম্মদই তো তার ফুফাতো বোন জয়নবকে বিয়ে করেছিলো, ফুফাতো বোন আর নিজের বোনের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু ? তো যে মুসলমানরা কাজিন সম্পর্কের যেকোনো বোনকে বিয়ের নামে ইয়ে করতে ছাড়ে না, তাদের কাছে নিজের বোনের কাপড় খোলা আর কত বড় কাজ ?
পৌরাণিক কাহিনীর পৌরাণিক চরিত্র হওয়া সত্ত্বেও যম যম ও যমীকে নিয়ে মুসলমানদের ঠাট্টা তামাশার শেষ নেই; কিন্তু ইসলামের গল্প অনুযায়ী- যে আদম হাওয়ার মাধ্যমে মানবজাতির সৃষ্টি হয়েছে, সেই আদম হাওয়ার ছেলে মেয়েদেরই তো একে অপরের সাথে বিয়ে হয়েছিলো, যারা ছিলো পরস্পরের ভাই বোন, এদের মধ্যে কি যৌনক্রিয়া হয় নি ? না হলে ইনসেস্ট সেক্সের ফল মুসলমান জাতির শুকরের মতো বংশ বৃদ্ধি পৃথিবীতে হলো কিভাবে ?
যমী, যমকে যৌনতার আহ্বান জানিয়েছিলো মাত্র, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো যৌনক্রিয়া হয় নি, কিন্তু আদম হাওয়ার ছেলে মেয়েরা তো একে অপরকে দুচে দুচে মুসলমানদের জন্ম দিয়েছে। ভাই বোনের মধ্যে যৌনালাপ অবশ্যই খারাপ, কিন্তু ভাই বোনের মধ্যে যৌনক্রিয়াটা কী ভালো ? নিকটাত্মীয়, যার সাথে যৌনক্রিয়া করা উচিত নয়, তার সাথে তা করলে তাকে ইনসেস্ট সেক্স বা অজাচার যৌনক্রিয়া বলে; আদম হাওয়ার ছেলে মেয়েদের মধ্যে এই ইনসেস্ট সেক্সের ফলে জন্ম নেওয়া মুসলমানরা আবার যমের কাছে যমীর যৌন ইচ্ছা প্রকাশ করা নিয়ে সমালোচনা করে, এ যেন নিজে হারামজাদা হয়ে এমন একজনকে হারামজাদা বলা যার পিতৃপরিচয় নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
আশা করছি, উপরের এই আলোচনা থেকে যম ও যমীর কথোপকথনের মূল ব্যাপারটা আমার পাঠক বন্ধুদেরকে বোঝাতে পেরেছি, সেই সাথে এই বিষয় নিয়ে মুসলমানদের কটূক্তির জবাব কীভাবে দিতে হবে সেটাও বোঝাতে পেরেছি।
জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।
No comments:
Post a Comment