Monday 25 May 2020

হিন্দু ধর্মে জাতি ভেদ আছে, কিন্তু তার জন্য এক হিন্দু কখনো অন্য হিন্দুকে খুন করে না


#Farman_Ansari,

হিন্দু ধর্মে জাতি ভেদ আছে, কিন্তু তার জন্য এক হিন্দু কখনো অন্য হিন্দুকে খুন করে না, এ নিয়ে কোনো মন্দিরে কখনো গন্ডগোলও হয় না; তাই জাতিভেদ নিয়ে হিন্দুদের মধ্যে খুনোখুনির কথা কখনো শোনা যায় নি। কিন্তু তথাকথিত তোমার সাম্যের ধর্ম ইসলাম, যাতে নাকি কোনো জাতিভেদ ই নাই, যাতে সব মানুষ সমান- সেই মহান(!) ধর্ম ইসলাম, ভিন্নমতের কারণে শুধু- হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদিদেরকেই হত্যা করে না, হত্যা করে সামান্য মতভেদের কারণে নিজের জাতি ভাই মুসলমানদেরকেই এবং এইসব হত্যাকাণ্ড মসজিদের মধ্যে ঢুকে করতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না, প্রত্যেকটা মুসলিম দেশে রয়েছে যার অসংখ্য উদাহরণ।

হিন্দু ধর্মে জাতিভেদ আছে, এটা সত্য; কারণ, জাতিভেদ হলো সমাজের বাস্তবতা, অন্য পেশার লোকজনের কথা না হয় বাদ ই দিলাম, সব মানুষ সমান হলে জুতা সেলাই করতো কে বা পায়খানা পরিষ্কার করতো কে ?

তুমি বলেছো, "ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় এবং সমাজপতিরা এই প্রথার উদ্ভাবক। তারা নিজেদের সুবিধার জন্য এই প্রথার সৃষ্টি করেছে।"

-তুমি সনাতন ধর্মের বাল জানো, তাই এই কথা বলতে পেরেছো।

গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- কর্মের ভিত্তিতে আমিই মানুষের মধ্যে চারটি শ্রেণী সৃষ্টি করেছি।

এই চারধরণের মানুষ সৃষ্টি করার কারণ হলো, এই চারপ্রকার মানুষ ছাড়া সমাজ চলবে না। একধরণের মানুষ সমাজকে শিক্ষা দেবে, এদের নাম দেওয়া হয়েছে ব্রাহ্মণ শ্রেণী; একধরণের মানুষ সমাজকে শাসন করবে, সমাজকে রক্ষা করবে, এদের নাম দেওয়া হয়েছে ক্ষত্রিয়; একধরণের মানুষ কৃষি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে সমাজে অর্থের প্রবাহ ঠিক রাখবে, এদের বলা হয়েছে বৈশ্য শ্রেণী; আর এক ধরণের মানুষ উপরোক্ত তিন শ্রেণীর মানুষের চাকরি করবে, এদেরকে বলা হয়েছে শুদ্র শ্রেণী। মানুষের এই শ্রেণীবিভাগ জন্মসূত্রে নয়, কর্মসূত্রে।

সমাজের সব লোক কখনো এক সমান হবে না; কারণ, এটা হলে সমাজ চলবে না। রাজ্যের সবাই যদি রাজা হয়, তাহলে সৈনিক হয়ে রাজ্যরক্ষা করবে কে ? সেই রাজাদের খাদ্যের যোগান দেবে কে ? বা সেই রাজাদেরকে সেবা করবে কে ? একটা অফিসে বস যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ অফিসের পিয়ন এবং নাইটগার্ডও। একজনকে ছাড়া অপরজনের চলবে না। সমাজের বাস্তবতাকে প্রকাশ করে বলেই সনাতন ধর্ম বাস্তবতার ধর্ম, কর্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে শ্রেণীবিভাগ ক'রে, সনাতন ধর্ম এই বাস্তবতাকে প্রকাশ করেছে মাত্র।

তুমি আরো বলেছো- এই জাত পাতের কারণে প্রতিনিয়ত উঁচু জাতির কাছে নীচু জাতির লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়।

-এইসব কাল্পনিক তথ্য তুমি কোথায় পেয়েছো ?

জাতপাতের কারণে মানুষ শাস্তি পায় না, শাস্তি পায় তাদের অবিবেচক এবং অনৈতিক কর্মের ফলে। স্বামী বিবেকানন্দ জন্মসূত্রে কায়স্থ, কিন্তু তিনি তার কর্মের দ্বারা নিজেকে ব্রাহ্মণ শ্রেণীতে উন্নীত করেছেন, তাই আজ সব শ্রেণীর হিন্দু তাকে সম্মান করে। জন্মসূত্রে কায়স্থ হওয়ার কারণে কি কোনো হিন্দু তাকে অসম্মান করে ? এরকম বহু উদাহরণ দেওয়া যাবে, যারা জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ শ্রেণীর না হয়েও নিজেদের কর্মে নিজেদেরকে ব্রাহ্মণ অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ শ্রেণীতে উন্নীত করেছেন এবং সমাজে পূজ্য হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি রাজ্য সভাপতি দীলিপ গোষ এবং হিন্দু সংহতির তপন ঘোষ, দুজনেই তো জন্মসূত্রে বৈশ্য; কিন্তু দুজনেই তো দুই আঙ্গিকে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের মাথার মনি; তারা জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ না হওয়ায় কি লাঞ্ছিত ? সুতরাং জন্মসূত্রে কোনো হিন্দু যে লাঞ্ছনার শিকার নয়, সেটা প্রমাণিত। এর বিপরীতে জন্মসূত্রে যেসব মুসলমান, সুন্নীদের তুলনায় সংখ্যালঘু- শিয়া, আহমাদিয়া, কাদিয়ানি এবং এরকম আরো শত শত জাতি, তারা কি সংখ্যাগুরু সুন্নীদের দ্বারা হত্যা-নির্যাতন-নির্মমতার শিকার নয় ? এমনকি এদের মসজিদও আলাদা আলাদা এবং এরা একে অপরকে খুন করে মসজিদের ভেতরেই, এটা কি হিন্দুদের জাতিভেদের চেয়ে ভয়ংকর এবং ঘৃণ্য নয় ? নিজে- ময়লা আবর্জনা বা মল মূত্রের মধ্যে বাস করে, সুস্থভাবে বাস করা কারো দিকে আঙ্গুল তোলা যায় কি ?

এরপর তুমি বলেছো- ব্রাহ্মণরা কখনো অপর তিন জাতির সাথে একসাথে বসে খায় না।

-ইসলামে জাতিভেদ না মানলেও- বর্তমানে সামাজিক বাস্তবতার কারণে মুসলমানদের মধ্যে নাপিত, জেলে, মেথরসহ আরো নানা নিচু শ্রেণীর জাতের উদ্ভব হয়েছে। তুমি কি একজন মুসলমান মেথরের পাশে একসাথে বসে ভাত খেতে পারবে ? তুমি কি তোমার ছেলে বা মেয়েকে কোনো মুসলিম মেথরের সাথে বিয়ে দেবে ? আমি জানি, অবশ্যই তা করবে না। এর কারণ হলো সামাজিক বাস্তবতা। অথচ ঐ মুসলমানটিই যদি মেথরের কাজ না করে এমন কোনো কাজ করতো, যেটা তোমার লেভেলের, তাহলে তার সাথে বসে তোমার খাবার খেতে বা তার সাথে আত্মীয়তা করতে কিন্তু তোমার বাধতো না। বাস্তবতায় পড়ে মানুষ যা ভাবে বা চিন্তা করে বা যেই কাজ করে, সনাতন ধর্মে সেই ব্যাপারটাই বলা হয়েছে, যদিও সময়ের ব্যবধানে সেগুলো একটু এদিক ওদিক হয়েছে।

এছাড়াও তুমি বলেছো- বেদ, গীতা সমস্ত ধর্মীয় বইতে ব্রাহ্মণদের জয়জয়কার করা হয়েছে।

-ব্রাহ্মণদের জয়জয়কার করা হবে না কেনো ? ব্রাহ্মণ মানে বোঝো ? ব্রাহ্মণ মানে হলো মানুষদের মাঝে শ্রেষ্ঠ, যারা মানুষকে জ্ঞান দেয়, শিক্ষা দেয়। একারণেই তো জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ না হয়েও- স্বামী বিবেকানন্দ, দীলিপ ঘোষ, তপন ঘোষের মতো ব্যক্তিদের আজ জয়জয়কার। এছাড়াও স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সে জন্মসূত্রে যা ই হোক না কেনো, এমনকি ইসলাম মতে সে কাফের হলেও তুমি কি তাকে সম্মান করো না ? কেনো তাকে সম্মান করো ? কারণ সে তার কর্মের দ্বারা নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে পেরেছে। সমাজের এই শ্রেষ্ঠরাই ব্রাহ্মণ, তোমার ভাবনামতে- অর্থের বিনিময়ে যারা হিন্দুদের বাড়িবাড়ি গিয়ে দেব-দেবীদের পূজা করে বেড়ায়, তারা নয়।

এরপর তুমি বলেছো- অবাক করার ব্যাপার হলো এতগুলো অবতার জন্ম নিলো ধরাধামে তারপরও এই প্রথার বিলুপ্ত হলো না।

- এই প্রথা বিলুপ্ত হবে কেনো ? অবতারগণ কি এই প্রথা বিলুপ্ত করার উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন ? কর্মের ভিত্তিতে জাতিভেদ প্রথা হলো সমাজের সিস্টেম, আর এই সিস্টেম ছাড়া সমাজ চলবে না, তাহলে ঈশ্বরের অবতারগণ এই প্রথা তুলতে যাবে কেনো ? এর বিপরীতে তোমার নবী মুহম্মদ তো সব মুসলমানের জন্য এক নিয়ম চালু করেছিলো, তোমার সেই মুসলিম সমাজ আজ ৭৩ ভাগে বিভক্ত কেনো ? এছাড়াও সামাজিক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে- তোমার নবী- সুদকে নিষিদ্ধ করেছে, নিষিদ্ধ করেছে যৌতুক প্রথাকে, মুসলমানদের জন্য গান-বাজনা-নাচ-ছবি আঁকাসহ সকল প্রকার শিল্পের চর্চাকে নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু এর বাস্তবতা কোথায় ? সুদের সংস্পর্শ ছাড়া কোনো মুসলমান চলতে পারবে ? মুসলিম সমাজের প্রায় সকল নারী নির্যাতন ঘটনা ঘটে যৌতুক প্রথাকে স্বীকার না করার ফলেই। অভিনয় সহ সকল প্রকার শিল্পচর্চা ইসলামে নিষিদ্ধ হলেও মুসলমানরা কি এগুলো থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে পারছে ? সনাতন ধর্ম হলো বাস্তবতার ধর্ম, তাই সকল প্রকার বাস্তবতাকে সনাতন ধর্ম স্বীকার ও ধারণ করে, তোমার ইসলামের মতো অবাস্তবতাকে লালন করে না।

অবতার প্রসঙ্গে তুমি আরো বলেছো, এমনকি সমাজপতিদের বানানো সতীদাহ প্রথা পর্যন্ত বিলুপ্ত করতে পারলো না এই সব অবতার। করলো একজন সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়।

-সতীদাহ প্রথা সমাজপতিদের বানানো, এই সত্য উপলব্ধি এবং স্বীকার করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ; কারণ, কোনো মুসলমান তো এটা স্বীকারই করে না। তারা হিন্দুদেরকে হেয় করতে ভাঙ্গা ঢোলের মতো বাজিয়েই চলে যে সতীদাহ হিন্দুধর্মের প্রথা; কিন্তু বাস্তব হচ্ছে- সতীদাহ হিন্দুধর্মের কোনো প্রথা নয়, এটা বিভিন্ন কারণে উদ্ভূত একটি সামাজিক প্রথা। আর এই সামাজিক প্রথার উদ্ভব হয়েছে ভারতে বিদেশী শাসন শুরু হওয়ার পর, সনাতন ধর্মের শেষ অবতার দ্বয় বলরাম ও শ্রীকৃষ্ণের তিরোভাবের প্রায় ৪ হাজার বছর পর, তাহলে এই প্রথাকে কোনো অবতার তুলতে পারবে কিভাবে, যে প্রথার উদ্ভব তাদের দেহত্যাগের পর হয়েছে? রাম মোহন রায় এই কুপ্রথাকে নির্মূল করেছেন, কিন্তু রাম মোহন যে ঈশ্বরের শক্তির সাহায্যে এই কাজ করেন নি বা রামমোহনকে দিয়ে এই কাজ করানোর জন্য ঈশ্বর তাকে সেই জ্ঞান এবং শক্তি প্রদান করেন নি, সেটা আপনি নিশ্চিত কিভাবে ? গীতার ১০ম অধ্যায়ের ৪১ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, "এই পৃথিবীতে যাহা কিছু ঐশ্বর্যযুক্ত, শ্রী সম্পন্ন অথবা শক্তিসম্পন্ন দেখ, তাহাই আমার শক্তির অংশ হইতে উদ্ভূত বলিয়া জানিবে।" সুতরাং ঈশ্বরই যে রামমোহনকে দিয়ে সতীদাহ প্রথাকে উচ্ছেদ করেছেন, সেটা তো নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত।

শেষে তুমি বলেছো- তাই হিন্দু মায়েদের বলছি, পূজা ই যদি করেন তো কৃষ্ণ পূজা বাদ দিয়ে রামমোহন রায়ের পূজা করুন, কারণ তিনিই আপনাদেরকে এই নিকৃষ্ট প্রথা থেকে রক্ষা করেছিলেন।

-এই নিকৃষ্ট প্রথা থেকে কে কিভাবে হিন্দু মেয়েরদেরকে রক্ষা করেছে, সেটা উপরের প্যারাতেই বলেছি, তাই হিন্দু মেয়েরা যে কৃষ্ণপূজা করে সেটা একদম ঠিক, এটা নিয়ে তোমাকে মাথা না ঘামালেও চলবে।

বুঝেছো।

আশা করি- বুঝেছো।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment