Sunday, 24 May 2020

শনিদেবের বাহন কাক এবং বিষ্ণুর বাহন গরুড় কেনো ? বা দেব-দেবীদের বাহন তত্ত্ব – 3 :


শনিদেবের বাহন কাক এবং বিষ্ণুর বাহন গরুড় কেনো ?
বা দেব-দেবীদের বাহন তত্ত্ব – 3 :

এর আগে “দেব-দেবীদের বাহন তত্ত্ব- 1 ও 2” শিরোনামে দুটি পোস্ট লিখে সেখানে বহুল প্রচলিত কয়েকটি বাহন সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম। সেই পোস্টগুলো পড়ে অনেকে- শনিদেবের বাহন কাক এবং বিষ্ণুর বাহন গরুড় সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এই পোস্টে জানানোর চেষ্টা করছি সেগুলো সম্পর্কে -

প্রথমেই বলছি শনিদেবের বাহন কাক সম্পর্কে:

শনিদেবের বাহন সম্পর্কে দুই ধরণের তথ্য পাওয়া যায়, কোথাও বলা আছে শনির বাহন শকুন আবার কোথাও কাক। কিন্তু আমার বিবেচনায় শনির বাহন কাক হওয়া ই যুক্তিসঙ্গত, এর কারণ এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টির ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছি:

আমি আগেই বলেছি দেব-দেবীদের বাহন বলে কিছু হয় না; কারণ, দেব-দেবীরা এমনিতেই সুপার ন্যাচারাল শক্তির অধিকারী, তারা ইচ্ছা করলেই যেখানে সেখানে যখন তখন যেতে পারে, তাই তাদের চলাচলের জন্য কোনো বাহনের প্রয়োজন নেই। বরং দেব-দেবীদের সাথে থাকা প্রাণীগুলো বিশেষ কিছু তথ্য বহন করে, যা ঐ দেব-দেবী সম্পর্কে আমাদেরকে আরো স্পষ্ট ধারণা দেয়।

শনির সাথে থাকা কাক, আমাদেরকে আসলে কী বার্তা দেয়, এটা বুঝতে হলে জ্যোতিষ শাস্ত্র সম্পর্কে কিছু জ্ঞান থাকা দরকার, না হলে এই বিষয়টা বোঝা আসলে কঠিন।

জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে, আমাদের জীবনের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে গ্রহ নক্ষত্র এবং এটাই চিরন্তন সত্য, না হলে কোনো একটা বিষয়ে আপনি কেনো বিশেষভাবে পারদর্শী বা কোনো বিষয়ে কেনো আপনার ব্যাপক আগ্রহ বা কোনো একটি রং কেনো আপনার বিশেষ পছন্দের ?

জ্যোতিষ শাস্ত্র ছাড়া এগুলোর ব্যাখ্যা আপনি কিছুতেই দিতে পারবেন না।

জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে শনি গ্রহ হচ্ছে, পৃথিবীর যেকোনো শক্ত ও কালো পদার্থ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যার কারণ বা কারক । এগুলোর বাইরেও শনির আরও কারকতা আছে, কিন্তু আমার এই আলোচনায় যতটুকু দরকার, আমি ততটুকুই উল্লেখ করলাম বা করবো।

যে ব্যক্তির উপর শনির বেশি প্রভাব থাকে- তার গায়ের রং কিছুটা কালো, দৈহিক গঠন স্লিম এবং কোনো না কোনো বিষয়ে তার কিছুটা ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞান অবশ্যই থাকবে।

সমস্ত পাখিদের মধ্যে কোকিল যেমন গায়ক পাখি, তেমনি কাক হলো ইঞ্জিনিয়ার পাখি। এমনও তথ্য পাওয়া যায় যে, কাক শুধু তাদের প্রয়োজন মতো যন্ত্রপাতি বানিয়েই নিতে পারে না, তার ব্যবহারও করতে পারে। যদিও কাকের যন্ত্রপাতি বানানো এবং তা ব্যবহার করার কোনো প্র্যাকটিক্যাল প্রমাণ এখন আমি দিতে পারবো না, কিন্তু একটি গল্পের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে কাকের ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞান সম্পর্কে আপনারা কিছুটা ধারণা পাবেন।

আমরা অনেকেই ছোটবেলায় ঈশপের একটি গল্প পড়েছি বা শুনেছি যে, একটি তৃষ্ণার্ত কাক জলের জন্য এখানে সেখানে উড়ে বেড়াচ্ছিলো, কিন্তু কোথাও জল পাচ্ছিলো না, শেষে সে একটি কলসের তলায় জল আবিষ্কার করে কিন্তু তা পান করার ক্ষমতা তার ছিলো না; কারণ, তার ঠোঁট অতদূর পৌঁছাচ্ছিলো না। এরপর সে আশপাশ থেকে নুড়ি পাথর সংগ্রহ করে ঐ কলসের মধ্যে ফেলতে থাকে, ফলে জল কলসের মুখ পর্যন্ত উঠে আসে এবং সে তা পান করে।
ঈশপ ছিলো মিশরের অধিবাসী এবং তার গল্পগুলো খ্রিষ্টপূর্ব সময় থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিলো। কিন্তু তার গল্পগুলো শুধুই গল্প, না এর মধ্যে কিছুটা বাস্তবতা আছে, এই তথ্যের অনুসন্ধানে একদল প্রাণী বিজ্ঞানী কাকের উপর নজর রাখা শুরু করে এবং তারা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করে, ঈশপ তার গল্পে যা বলেছে, কাক, সেই রকম বিপদে পড়লে আসলে সেই রকমআচরণই করে।

ঈশপের গল্পটি বাচ্চাদের কাছে একটি মজার গল্প হলেও এর মধ্যে রয়েছে একটি চমৎকার ইঞ্জিনিয়ারিং। খেয়াল করুন, কাক যখন- খাল, বিল, নদী বা পুকুরে জল পাচ্ছিলো না, তখন সে চুপচাপ বসে না থেকে জলের অনুসন্ধান করে যাচ্ছিলো এবং শেষ পর্যন্ত সে একটি কলসের তলায় জল আবিষ্কার করে, যা একজন অনুসন্ধিৎসু ইঞ্জিনিয়ারের কাজ। এরপর যখন সেই কাক, সেই কলসের তলায় থাকা জল খেতে ব্যর্থ হলো, তখনো সে বসে না থেকে আশপাশ থেকে নুড়ি কুড়িয়ে সেই কলসের মধ্যে ফেলতে থাকলো এবং নিজের কাজ উদ্ধার করলো বা সমস্যার সমাধান করলো, যা একজন ইঞ্জিনিয়ারের ধর্ম, গুন বা বৈশিষ্ট্য, যার মাধ্যমে সে যেকোনো সমস্যার সমাধান করে।

আগেই বলেছি, শনি গ্রহ যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যার কারক, প্রকৃতিতে তেমনি কাকও ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যার প্রতীক। কাকের রং যেমন কালো, তেমনি শনির রংও কালো। আবার কালোর সমগোত্রীয় বা বিবর্তিত রূপ নীল ব’লে কৃষ্ণ বা শনিদেবের গায়ের রংও কালোর পাশাপাশি নীল, যদিও এই বিষয়টি আমাদের আলোচনায় কোনো কাজে আসবে না, কিন্তু প্রসঙ্গ এলো বলেই তথ্যটা জাস্ট শেয়ার করলাম ।

যা হোক, শনি দেবের সাথে কাক থেকে জ্যোতিষ বিদ্যার অনেক বিষয় প্রকাশের সাথে সাথে আমাদেরকে যে ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যার বিষয়টির কারকতা সম্পর্কেও ধারণা দেয়, সেই বিষয়টি সম্ভবত আমি আপনাদেরকে বোঝাতে পেরেছি। এর সাথে আবার এই কথাটিও বলছি যে, জ্যোতিষ শাস্ত্র সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান না থাকলে এই বিষয়টি বোঝা খুব একটা সহজ নয় বা বোঝা একেবারেই সম্ভব নয়।

একটা কথা মনে রাখবেন, হিন্দু সমাজ ব্যবস্থার কোনো কিছু্ অযথা বা বোগাস নয়, প্রতিটি আচরণের পেছনে রয়েছে সুনির্দিষ্ট মানসিক, সামাজিক ও বৈজ্ঞানিককারণ। হিন্দুজীবন ব্যবস্থার কোনো কিছুকে যদি আপনার অযথা বা বোগাস বলে মনে হয়, সেই সমস্যা হিন্দুশাস্ত্রের নয়, সমস্যা আপনার; কারণ, আপনি সেটা জানার সৌভাগ্য লাভ করেননি বা জানার চেষ্টা করেন নি।

এর পরের প্রশ্ন হচ্ছে, বিষ্ণুর বাহন কেনো গরুড় পাখি ?

এ প্রসঙ্গে একটি পৌরাণিক কাহিনী আছে, সেটা আগে সংক্ষেপে বলে নিই।

মহাভারতের আদিপর্ব অনুযায়ী গরুড়ের মাতা বিনতা নিজের সতীন সর্পমাতা কদ্রুর নিকট একটা বাজিতে পরাজিত হয়ে কদ্রুর দাসীতে পরিণত হয়। গরুড়, কদ্রুর নিকট মাতার দাস্যমুক্তির জন্য বললে, কদ্রু তাঁকে বলে যে, যদি সে অমৃত নিয়ে আসতে পারে তাহলে সে বিনতাকে মুক্ত করে দেবে। মাতার মুক্তির জন্য গরুড় অমৃত আনতে স্বর্গে চলে যায়। স্বর্গের সকল দেবতা চেষ্টা করেও গরুড়কে নিবৃত্ত করতে বিফল হন। দেবরাজ ইন্দ্র নিজের বজ্র প্রয়োগ করলেও তা ব্যর্থ হয়। এভাবে সকল দেবতাকে পরাস্ত করে গরুড় অমৃত হরণ করে নিয়ে আসে এবং নিজের মাতাকে মুক্ত করে।

গরুড় অমৃত আহরণে সক্ষম হলেও অমৃতে তাঁর কোন লোভ ছিল না। অমৃত সে নিজের হাতে বহন করে নিয়ে এলেও একবিন্দু অমৃত পান করে নি। গরুড়ের এই চরিত্রে খুশি হয়ে বিষ্ণু তাঁকে বর দিতে ইচ্ছা করেন। তখন গরুড় অমৃতপান ব্যতীত অমরত্বলাভ এবং সর্বদা বিষ্ণুর উপরে থাকার বর প্রার্থনা করে। বিষ্ণু তা স্বীকার করেন এবং গরুড়কে নিজের উপরে স্থান দিতে তিনি নিজের ধ্বজায় গরুড়কে স্থান দেন। এরপর গরুড় নিজেই বিষ্ণুকে বর দিতে ইচ্ছা করে, বিষ্ণু বর হিসেবে গরুড়কে তাঁর বাহন হতে বলেন এবং গরুড়ও তা মেনে নেন।এই ভাবেই গরুড় পাখি হয় বিষ্ণুর বাহন।

এবার বাস্তবতার দিকে তাকানো যাক, গরুড় যে মোটেও কোনো কাল্পনিক পাখি নয়, তার প্রমান হলো,

উইকিপিডিয়া বলছে, “ ব্রাহমিনি কাইট পাখিটিকে গরুড়ের সমসাময়িক রূপ মনে করা হয়।” তার মানে হচ্ছে গরুড় পাখি এবং ব্রাহমিনি কাইট পাখিটি সমসাময়িক, গরুড় বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিন্তু ব্রাহমিনি এখনও টিকে আছে। গরুড় পাখি যে ছিলো এবং তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তার আরেকটি প্রমান প্রাণি বিজ্ঞানীদের হাতে এসেছে, ঘটনাটি এরকম:

“অস্থিবিদেরা পৃথিবীর দক্ষিণাংশে অনেকগুলো বৃহদাকার পাখির ফসিল পেয়েছেন । প্রথম দিকে এই পাখিগুলোর নাম পাওয়া না গেলেও পরবর্তীতে নাম জানা যায়। ওই প্রাপ্ত ফসিলগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ছিলো তিতানিস পাখির। বিজ্ঞানীদের মতে এই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া পাখির নাম তিতানিস, প্রাচীণ ভারত বর্ষের সাহিত্যে যাকে বলা হয়েছে গরুড় পাখি । ইউরোপ আমেরিকায় এই পাখির নাম তিতানিস হলেও ভারতর্ষে এই পাখির গরুড় নামকরণের কারণ হলো, মহাকাশে ঈগল মণ্ডল নামক একটি তারামণ্ডল রয়েছে, যার ভারতীয় নাম গরুড়, এ থেকেই গরুড় নামটি এসেছে, যেমন ইউরোপ আমেরিকায় স্যাটার্ন বলে যাকে বলা হয়, তার ভারতীয় নাম শনি।

বিজ্ঞানীরা আরো জানিয়েছে, পৃথিবীর তৎকালীন অবস্থায় বসবাসকারী পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগামী এবং শিকারী পাখি ছিল তিতানিস তথা গরুড়। এই পাখির উৎস মূলত উত্তর আমেরিকা হলেও, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এর ফসিল পাওয়া গেছে।

একদল বিজ্ঞানীর দাবি, প্রায় দুই মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে এই পাখির বিচরণ ছিল।কিন্তু টেক্সাসে যে ফসিল পাওয়া যায় তার কার্বণ ডেটিং করে দেখা গেছে যে তাদের বয়স প্রায় পাঁচ মিলিয়ন বছর পুরনো। প্রাগৈতিহাসিক সময়কার বর্ণনায় দেখা যায়, তিতানিস পাখি ছিল পক্ষীকূলের মধ্যে ভয়ঙ্কর শিকারী, যাদের ছিল শক্ত থাবা যুক্ত পা এবং ভারি ডানা। এর বাইরে এদের মস্তিষ্ক্যের হাড়ের গঠন ও তীক্ষ্ণ এবং ধারালো ঠোঁট অন্যান্য পাখিদের তুলনায় ভিন্ন ছিল। আর এই কারণেই উত্তর আমেরিকার অনেক বিজ্ঞানী তিতানিসকে পাখি না বলে ডায়নোসর গোত্রীয় বলেও আখ্যা দেন।

বিজ্ঞানীদের দাবি এক একটি তিতানিসের উচ্চতা ছিল প্রায় আট ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা এবং প্রায় দেড়শ কিলোগ্রাম ওজন। ভারি ডানা কাজে লাগিয়ে তারা ঘণ্টায় প্রায় ৬৫ কিলো মিটার বেগে উড়তে পারতো। তবে অন্যান্য পাখিদের ডানার গড়নের তুলনায় তিতানিসের ডানার গড়ন ছিলো ভিন্ন। এদের ছোটো ডানার পেছনের অংশের হাড় সরাসরি মেরুদন্ডের হাড়ের সঙ্গে যুক্ত, যে কারণে অন্যান্য পাখিদের মতো পা দিয়ে বেগ সৃষ্টি করে উড়তে হতো না তিতানিসদের।ডানার বেগ কাজে লাগিয়েই তারা উড়তে পারতো।

তবে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত ফসিল গুলোর মধ্যে কিছু দৃশ্যমান পার্থক্য দেখা যায়।কয়েকটি ফসিলে শুধু ডানার অস্তিত্বের পাশাপাশি হাতের অস্তিত্বও পাওয়া গেছে। যে তিতানিসদের হাতছিল তাদের ডানা তুলনামূলক কম শক্তিশালী ছিল এবং সেই ডানাদিয়ে লড়াই করতে পারতোনা তারা। লড়াইয়ের জন্য হাত ও বিশাল ঠোঁট ব্যবহার করতে হতো। খাদ্যশৃঙ্খলের হিসেব অনুযায়ী তিতানিস গোত্র ছিল মূলত মাংশাসী। ভূমিতে বসবাস যোগ্য প্রাণী ছিল তাদের খাবার।

এই গরুড় পাখি যে প্রাচীন কাল থেকেই পৃথিবীতে কী পরিমাণ প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় ছিলো তার প্রমান পাওয়া যায়, নিচের এই তথ্যে:

“গরুড়- ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং মঙ্গোলিয়ার জাতীয় প্রতীক।”

শুধু তাই নয়, ইন্দোনেশিয়ান এয়ারলাইন্সের নামও গরুড় পাখির নামে।

শুধু যে গরুড়ের প্রভাবশালীতার কারণেই, গরুড় ঐসব দেশের জাতীয় প্রতীকে পরিণত হয়েছে বা ইন্দোনেশিয়ার এয়ার লাইন্সে স্থান করে নিয়েছে, তা কিন্তু নয়; শুধু বৃহদাকার বা হিংস্র শিকারী হওয়ার কারণে গরুড় যদি কোনো দেশের জাতীয় প্রতীক অর্থাত শ্রদ্ধার প্রতীকে পরিণত হতো, তাহলে দুই একটি দেশের জাতীয় প্রতীক ডায়নোসোরও হতে পারতো, কিন্তু তা হয় নি। আসলে গরুড়ের জাতীয় প্রতীক বা শ্রদ্ধার প্রতীকে পরিণত হওয়ার পেছনে ছিলো একটা ধর্মীয় আবেগ, যে ধর্মটা ছিলো সনাতন ধর্ম এবং এই তথ্য এটা প্রমান করে যে প্রাচীন কালে ইন্দোনেশিয়া থেকে সুমেরু পর্যন্ত ছিলো সনাতন ধর্মের এলাকা। এখানে আরো একটি তথ্য দিয়ে রাখি, রাশিয়ার পাশে কৃষ্ণসাগর বলে যে সাগর আছে, সেটা কিন্তু পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের নামে। এই তথ্যগুলো এই প্রমান দেয় যে, প্রাচীন কালে এক বিশাল ভূখণ্ড জুড়ে সনাতন ধর্মের বিস্তৃতি ছিলো, কিন্তু আমাদের ধর্মগুরুদের নির্বুদ্ধিতা ও উদাসীনতায়, তা সংকুচিত হতে হতে বর্তমান ভারতের ভূখণ্ডে স্থিতি হয়েছে, বহুমুখী ইসলামি চক্রান্তকে মোকাবেলা করতে না পারলে, হয়তো সেটাও আমরা হারাবো।

এবার গরুড়ের ধর্মীয় থিয়োরির দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক।

প্রকৃতির প্রায় সকল উল্লেখযোগ্য শক্তি হিন্দু ধর্মে দেব-দেবী হিসেবে পরিচিত। যেমন জলের শক্তির দেবতা বরুন, বায়ুর শক্তির দেবতা পবন, স্থলজ প্রাণির শক্তির দেবতা হাতি, হিংস্র শক্তির দেবতা সিংহ, বিষাক্ত শক্তির দেবী মনসা; তেমনি গরুড় হচ্ছে উড্ডীয়মান প্রাণীর শক্তির দেবতা। উড্ডীয়মান সকল পাখিদের মধ্যে যেহেতু গরুড় হচ্ছে সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে শক্তিশালী, সেহেতু পরমব্রহ্ম বা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের পালনকারী রূপ, বিষ্ণুর সাথে তাকে কল্পনা করা হয়েছে, প্রচলিত অর্থে যাকে আমরা বলছি, বিষ্ণুর বাহন। কিন্তু গরুড় পাখি আসলে বিষ্ণুর শক্তিমত্তা ও প্রভাব প্রতিপত্তির প্রতীক, এছাড়াও গরুড়কে বৈদিক জ্ঞানের প্রতীক বলা হয়।

দেব-দেবীর বাহন তত্ত্ব পোস্ট পড়ে যিনি বা যারা যমরাজের বাহন এবং মনসার বাহন সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, যমরাজের কোনো বাহন আছে বলে কখনো শুনি নি বা অনুসন্ধানেও পাই নি, আর সাপ বা নাগ হচ্ছে মনসার প্রতীক, কোনো বাহন নয়; তাই সাপ মনসার সাথে থেকে কোনো বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে না. মনসার প্রতীকী রূপটি প্রকাশ করে মাত্র।

জয় হিন্দ।
জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment