Sunday, 24 May 2020

“হর হর মহাদেব” মানে কী ?


“হর হর মহাদেব” মানে কী ?

ধ্বংসের দেবতা মহাদেব শিবকে, তেজঃবীর্য অর্থাৎ জোশের সাথে স্মরণ করতে সবাই বলে থাকে “হর হর মহাদেব”, কিন্তু খুব কম মানুষই আছে, যারা এর প্রকৃত অর্থ জানে বা প্রকৃত অর্থকে উপলব্ধি করতে পারে বা পেরেছে।

বিশেষ্য পদ হিসেবে ‘হর’ শব্দের অর্থ- সংহার কর্তা, শিব বা রুদ্র; অর্থাৎ ‘হর’ মানেও শিব আবার মহাদেব মানেও শিব। এই সূত্রে ‘হর হর মহাদেব’ মানে ‘শিব শিব শিব’ বা তিনবার একই সাথে শিবকে স্মরণ করা।

অংকের ক্ষেত্রে ‘হর’ মানে ভগ্নাংশের নিচের অংশ, যা ধারণ করে উপরের অংশকে এবং ‘হর’ সেটাই যা লবের চেয়ে বড়; অর্থাৎ হর রূপী মহাদেব সবচেয়ে বড়, যা ধারণ করতে পারে বা ধারণ করে রেখেছে সবাইকে।

কিন্তু এগুলোর বাইরেও ‘হর’ শব্দের আরেকটি গূঢ় অর্থ আছে, যা প্রমান করে সকলের মধ্যেই ঈশ্বর বিরাজমান।

বাংলায়- “যত জীব, তত শিব” বলে একটা কথা আছে এবং এই কথা দিয়ে এটা বোঝায় যে, প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যেই শিব বাস করে এবং এটা দিয়ে প্রকৃতিতে সৃষ্ট প্রতিটি প্রাণীকে শ্রদ্ধা করতে বা ভালোবাসতে শিক্ষা দেয় সনাতন মানব ধর্ম বা হিন্দুধর্ম।

এর বিপরীতে ইসলামে পশুদের জন্য রয়েছে শুধুই ঘৃণা। দেখে নিন সে সম্পর্কিত কয়েকটি হাদিস-

সহীহ মুসলিমের ৪/১০৩২ নম্বর হাদিসে বলা আছে,

“কালো কুকুর মানেই শয়তান।”

কুকুরকে শুধু শয়তান বলেই মুহম্মদ ক্ষান্ত হয় নি, তাদেরকে হত্যা করার আদেশও দিয়ে গেছে সে। দেখুন নিচের হাদিস-

“আব্দুল্লাহ বিন উমর বর্ণিত, হুযুর বলিয়াছেন কুকুরকে মারিয়া ফেলা উচিত। ( বুখারী, ৫৪/৫৪০)

এছাড়াও কোনো মুসলমান যেন বাড়িতে কুকুর না পুষে সেজন্য মুহম্মদ বলে গেছে,

“ফেরেশতা ঢুকেন না সেই ঘরে, যে ঘরে কোনো কুকুর বা ছবি রয়েছে” – (বুখারি, ৪/৫৪/৫৩৯)

শুধু কুকুর নয়, সাপও বোধহয় মুহম্মদের পাছা মারিয়াছিল, তাই সে সাপকে হত্যা করতে নির্দেশ দিয়ে গেছে এবং সাপকে হত্যা করার কারণ সম্পর্কে যে বৈজ্ঞানিক কথাবার্তা মুহম্মদ বলে গেছে, তা পড়লে আপনি হাসি আটকাতে পারবেন কিনা সন্দেহ। দেখুন সেই হাদিস-

“আয়শা হইতে বর্ণিত, হুযুর লেজ-কাটা এবং পিঠে দুইটি দীর্ঘ সাদা রেখাবিশিষ্ট সাপ মারিয়া ফেলিবার নির্দেশ দিয়াছেন এবং বলিয়াছেন যে, এই জাতীয় সাপ চক্ষুর জ্যোতি নষ্ট করে এবং গর্ভপাত ঘটায়।” ( বুখারী, ৫৪/৫২৭,২৮)

এছাড়াও মুসলমানদের দ্বারা কুরবানীর নামে প্রতি বছর নির্বিচারে কোটি কোটি পশু হত্যার কথা তো সবাই জানেন এবং এটাও জানেন যে, রোগাক্রান্ত কোনো পশুর স্বাভাবিক মৃত্যু হয় না কোনো মুসলিম পরিবারে। রোগ ব্যাধিতে কোনো পশু মরতে লাগলেই মুসলমানরা তাকে জবাই করে খেয়ে ফেলে, এরা এমনই নিষ্ঠুর এবং নির্মম। এজন্যই আমি একটা প্রবাদ বাক্যের জন্ম দিয়েছি,

“শকুনের দেশে যেমন কোনো পশু পচে না, তেমনি মুসলমানদের দেশেও কোনো পশু মরে না।”

এর বিস্তৃত ব্যাখ্যা হলো- শকুনের দেশে যদি কোনো পশু মরে, সেই পশুর দেহ পচে যাওয়ার আগেই শকুনেরা তা খেয়ে ফেলে; সেইরূপ মুসলিম পরিবারে কোনো পশু রোগাক্রান্ত হয়ে মরতে লাগলে, মুসলমানরা তাকে জবাই করে মেরে ফেলে, তার স্বাভাবিক মৃত্যু হতে দেয় না !

যা হোক, ফিরে যাই মূল আলোচনায়, যত জীব, তত শিবেরই আরেকটি রূপ হলো “হর হর মহাদেব”, আর এটা বুঝতে হলে আপনাকে ঢুকতে হবে বাংলা ব্যাকরণে।

“রোজ রোজ” মানে প্রতিদিন, আর ‘রোজ রোজ’ এর আরেকটি রূপ হলো ‘হর রোজ’, তাই হর রোজ এর মানেও প্রতিদিন। তাহলে এখানে ‘হর’ এর মানে দাঁড়াচ্ছে প্রতি বা প্রত্যেক বা প্রতিজন। এখন ‘হর’ এর মানে প্রতি হিসেবে ধরে ‘হর হর মহাদেব’ এর অর্থ হলো ‘জনে জনে শিব’ বা প্রতিজনই শিব, এখন এটাকে উপরে বলা ‘যত জীব তত শিব’ এর সাথে মিলিয়ে দেখুন, দুটো বিষয় একই অর্থ প্রকাশ করে কি না ?

‘হর হর মহাদেব’ এবং ‘যত জীব তত শিব’ যে একই অর্থ প্রকাশ করে, আশা করছি সবার কাছে সেটা ক্লিয়ার হয়েছে। কিন্তু এই হর হর মহাদেব শব্দগুচ্ছের মধ্যে অন্য কী অর্থ বা কী শিক্ষা লুকিয়ে আছে আমাদের জন্য ?

সবাই জানেন যে, শিব হলো ধ্বংসের দেবতা। শিব তাকেই ধ্বংস করে, যে বা যারা সমাজের জন্য অশুভ, ভয়ংকর বা ক্ষতিকর। শিব কোনো শুভ শক্তিকে ধ্বংস করে না। হর হর মহাদেব শব্দগুচ্ছটি আমাদেরকে এই বার্তা বা এই শিক্ষাই দেয় যে, অন্যায় বা অশুভকে দমন করার জন্য আমাদের প্রত্যেককে হতে হবে শিবের মতো সংহার কর্তা, দমন করতে হবে দুষ্কৃতকারীদের এবং রক্ষা করতে হবে সাধুদের।

প্রকৃতপক্ষে ‘হর হর মহাদেব’ বাক্যটি আমাদেরকে এই শিক্ষাই দেয় যে, অন্যায় ও অশুভ শক্তিকে দমনে তোমরা প্রত্যেকে হয়ে উঠো এক একজন শিব এবং বিনাশ করো সকল অত্যাচারীকে।

আমরা অনেকেই বলি হর হর মহাদেব, কিন্তু ক’জন এই প্রকৃত সত্যকে হৃদয়ে লালন করি বা সেই মতো কাজ করি ?

মহাদেবের আদর্শ এবং তার ত্রিশুলই হিন্দু সমাজকে রক্ষা করার একমাত্র পথ। যেদিন প্রতিটি হিন্দুর হাতে থাকবে একটি করে ত্রিশুল, সেই দিন হবে না কোনো হিন্দু নারী ধর্ষণ, হবে না কোনো হিন্দুর ভিটে মাটি দখল, কোনো মুসলমান কোনো হিন্দু মেয়েকে লাভ জিহাদের কবলে ফেলেও দখল করতে পারবে না, কোনো হিন্দুকে ত্যাগ করতে হবে না তার জন্মভূমি।

তাই আমি সকল হিন্দুকে অনুরোধ করবো, মুখে ‘হর হর মহাদেব’ বলার সাথে সাথে অন্তরে ধারণ করুন এই বাক্যের মর্ম এবং হয় উঠুন এক একজন শিব। তাহলে আপনার হাতেই রক্ষা পাবে হিন্দুধর্ম এবং হিন্দু সমাজ।

জয় হিন্দ।
ঔঁ নমো শিবায়
হর হর ম হা দে ব ।

No comments:

Post a Comment