Thursday 24 September 2020

রাধার নাম আসিল কোথা হইতে ?


রাধার নাম আসিল কোথা হইতে ?

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর কৃষ্ণচরিত্র গ্রন্থে প্রশ্ন করেছেন- এই রাধা আসিলেন কোথা হইতে, আর আমি আজকে প্রশ্ন করছি- রাধার নাম আসিল কোথা হইতে ?

#Rayon_Chakrabarty নামে এক বইপোকা আছে, যার কাজ শুধু বই পড়ে পড়ে কোন বইয়ে কোন তথ্য আছে, সেটা প্রকাশ করা; অবশ্য এটা একদিক থেকে ভালো দিক যে- বিভিন্ন তথ্য যেহেতু সে প্রকাশ করে, সেহেতু বিষয়গুলো অনেকে জানতে পারে এবং সেগুলো নিয়ে নানারকম আলোচনা হয় ও লোকজন প্রকৃত সত্যের দিকে ধাবিত হতে পারে। কিন্তু এই বইপোকার সত্যকে উপলব্ধি করার ক্ষমতা কম বা বলতে গেলে একেবারেই নেই। সে, যে গ্রন্থে যে তথ্য পায়, সেটাকেই সে সত্য মনে করে এবং সেটাকেই প্রচার করে, সেই তথ্য দ্বারা সমাজের উপকার হচ্ছে, না অপকার হচ্ছে, সেটা তার দেখার বিষয় নয়, তার ভিডিওগুলো দেখলে আমার এই কথা ই মনে হয়। এই বই পোকা আবার অনূকূল ঠাকুরের ভক্ত বা অনুসারী, যে অনুকূলকে তার ভক্ত শিষ্যরা পূর্ণব্রহ্ম বলে মনে করে, যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন; জগতে পূর্ণব্রহ্ম একজনই, তিনি হলেন পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ, অন্য কারো পূর্ণব্রহ্ম হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই; কারণ, পূর্ণব্রহ্ম হওয়ার জন্য যে ক্ষমতা থাকতে হয়, সেটা শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া অন্য কারো কাছে ছিলো না এবং কারো মধ্যে সেটা থাকাও সম্ভব নয়। কিন্তু এ নিয়ে এই বইপোকাকে কখনো কিছু বলতে শুনি নি, আর এই একটি তথ্যই প্রমাণ করে যে তার জ্ঞান বুদ্ধি সবকিছু অর্থহীন।

শ্রীকৃষ্ণের যে প্রামাণ্য জীবনী- হরিবংশ এবং মহাভারত, সেখানে রাধার নামের কোনো অস্তিত্ব নেই। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি হরিবংশ এবং মহাভারত একে অপরের পরিপূরক গ্রন্থ, শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে যে তথ্য হরিবংশে আছে, সেটা মহাভারতে নেই, আবার মহাভারতে যে তথ্য আছে, সেটা হরিবংশে নেই। এজন্য হরিবংশে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম থেকে বাল্যলীলার সবকিছু আছে, কিন্তু মহাভারতে আছে তার বাল্য ও কৈশোর লীলার পরবর্তী ঘটনাগুলো।

কোনো নারী যদি কোনো ব্যক্তির জীবনে থেকে থাকে, আর সেই ব্যক্তিকে নিয়ে যদি একাধিক গ্রন্থ থাকে, তাহলে বিভিন্ন গ্রন্থে সেই নারীর কাহিনী থাকবে, এককথায় ঐ নারীকে নিয়ে ঐ ব্যক্তির জীবনে অনেক বাস্তব ঘটনা থাকবে, যেটা প্রমাণ করবে যে -ঐ ব্যক্তির জীবনে ঐ নারীর অস্তিত্ব ছিলো। কিন্তু কৃষ্ণের জীবনে রাধাকে নিয়ে এমন কোনো ঘটনা বাস্তবিক আকারে নেই, যেটা প্রমাণ করে যে কৃষ্ণের জীবনে রাধা নামক কোনো নারীর অস্তিত্ব ছিলো, যার সাথে কৃষ্ণের প্রেম ভালোবাসা বা যৌনতার সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু এই বইপোকা সে সব বিষয় বিবেচনা না ক'রে কোথায় কোথায় রাধার নাম আছে, সেসব তথ্য তুলে ধরে এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে- শ্রীকৃষ্ণের জীবনে রাধার অস্তিত্ব আছে। এ সম্পর্কে একটি ভিডিও সে নেটে ছেড়েছে, তার লিঙ্ক এই প্রবন্ধের সাথে যুক্ত করে দিয়েছি, প্রয়োজনে সেটা দেখে নিতে পারেন, তার ভিডিওতে সে যেসব তথ্য দিয়েছে, সেগুলো আমি খণ্ডন করবো আজকের এ প্রবন্ধে-

আমি একটা কথা প্রায়ই বলি যে- গীতার সাতশত শ্লোক ছাড়া সনাতনী ধর্মীয় প্রায় সমস্ত গ্রন্থ কোনো না কোনোভাবে বিকৃত এবং কোনো কোনো গ্রন্থ তো অর্বাচীনদের দ্বারা লিখিত হয়ে সনাতন ধর্মের শাস্ত্রগ্রন্থ হিসেবে পরিচিত লাভ করে ফেলেছে, তাই এই সব গ্রন্থের কোনো একটির তথ্যের ভিত্তিতে কোনোভাবেই কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায় না; কোনো একটি গ্রন্থের তথ্যকে সত্য বলে ধরে নেওয়ার আগে, পূর্বাপর সমস্ত তথ্যকে যাচাই বাছাই করে অর্থাৎ ক্রস চেক করে দেখতে হবে যে ঐ তথ্যটি সত্যই সঠিক কি না, তারপর সেটাকে গ্রহন করতে হবে।

বর্তমানে বৈষ্ণব মতবাদের গ্রন্থ ছাড়া প্রায় সমস্ত সনাতনী গ্রন্থ বেদব্যাসের নামে চলে, যেটা মোটেই সত্য নয়। ভাগবতে যে বলা হয়েছে অষ্টাদশ পুরাণ বেদব্যাস রচিত, সেটাও সত্য নয়। কারণ, অষ্টাদশ পুরাণের মধ্যে ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের নামও আছে, কিন্তু কোনোভাবেই ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের মতো একটি- উদ্ভট, অবাস্তব ও অশ্লীল কাহিনীর বর্ণনা সমৃদ্ধ পুরাণ, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ সম্পূর্ণ লম্পট চরিত্র, যে বেদব্যাসের হাতে শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর হিসেবে বর্ণিত, সেই বেদব্যাসের হাতে এই পুরাণ কিছুতেই রচিত হতে পারে না। এই ভাগবতেই গৌতমবুদ্ধকে অবতার বলা হয়েছে, যে গৌতমবুদ্ধের জন্ম, বেদব্যাসের অন্তত ২৭০০ বছর পর, তাহলে সেই ভাগবত কিভাবে বেদব্যাসের হাতে রচিত হয়। তাছাড়াও এমন কাহিনি প্রচলিত আছে যে- ভাগবত রচনা ক'রে বেদব্যাস, তার পুত্র শুকদেবকে শোনান; শুকদেব, রাজা পরীক্ষিতকে শোনান, কিন্তু মহাভারতের একটি তথ্যে আছে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগেই শুকদেব মারা গেছে, তাহলে সেই শুকদেব কিভাবে পরীক্ষিতকে ভাগবতের কাহিনী শোনায় ?

এই ভাগবতেই আছে রাসের নামে কৃষ্ণের যৌণলীলার কাহিনী, কিন্তু রাসের সময় কৃষ্ণের বয়স ছিলো মাত্র ৭ বা আট বছর, এই বয়সী একটি শিশু কিভাবে যুবতী নারীদের সাথে যৌণক্রিয়া করতে পারে, বা তার মাথায় এই ধরণের চিন্তা আসতে পারে ? যদি বলেন যে ঈশ্বরের পক্ষে সবই সম্ভব আর তার যৌণতার খুবই প্রয়োজন, তাহলে শ্রীকৃষ্ণ, ২৯ বছর বয়সে রুক্মিণীকে বিয়ে করতেন না, অনেক আগেই করতেন, আর তখন রুক্মিণীকে না পেলে, যদি রাধার সাথে শ্রীকৃষ্ণের কোনো সম্পর্ক থাকতো, তাহলে রাধাকেই বিয়ে করতেন; আর অবতারগণ এসেছিলেন যেহেতু লোকশিক্ষা দিতে, সেহেতু তারা এমন কোনো আদর্শ সৃষ্টি করবেন না, যে আদর্শের উদাহরণে তারা লম্পট হিসেবে আখ্যায়িত হবেন। তাই বিভিন্ন গ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণের জীবনে যেসব যৌনক্রিয়া বা লাম্পট্যের ঘটনা আছে, সেগুলো যে সত্য নয়, এটা খুব সহজেই অনুমান করা যায়। এসব সনাতনধর্ম ও কৃষ্ণ বিরোধীদের মিথ্যা প্রচারণার অংশ মাত্র।

যা হোক, এই বই পোকা, রাধার অস্তিত্ব বা কৃষ্ণের জীবনে রাধার অস্তিত্ব প্রমাণে যেসব রেফারেন্স দিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে একটি হলো- নারায়ণ গীতি স্তোত্রের ১০ নং শ্লোক, সেখানে বলা হয়েছে-

"রাধাধর মধু রসিকা রজনী-কর-কূল-তিলকাঃ।

নারায়ণ নারায়ণ জয় গোবিন্দ হরে।

নারায়ণ নারায়ণ জয় গোপাল হরে।"

এটা কোনো সংস্কৃত শ্লোক নয়, এটি সম্পূর্ণ বাংলা শ্লোক, যা বৈষ্ণবদের দ্বারা রচিত, যে বৈষ্ণবদের কোনো কথাকে বিশ্বাস করা যায় না, এরা সনাতন ধর্মের সমস্ত সিস্টেমকে ধ্বংস করেছে, করছে।

এরপর ঐ যুক্তিহীন বই পোকা, সৌভাগ্যলক্ষ্মী তন্ত্র ১৩/৩ এর একটি রেফারেন্স দিয়েছে, যেখানে শ্রীকৃষ্ণকে বলা হয়েছে রাধানাথ। নাথ মানে স্বামী, তাই রাধানাথ মানে রাধার স্বামী। কিন্তু ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ ছাড়া অন্য কোথাও বলা হয় নি যে শ্রীকৃষ্ণ রাধার স্বামী, আর আগেই বলেছি- ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ বেদব্যাসের হাতে রচিত নয়, তাই এই তথ্য সম্বলিত সৌভাগ্যলকক্ষ্মী তন্ত্রের তথ্য যে মনগড়া, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

এরপর মৎস্য পুরাণ ১৩/৩৮ এর একটি রেফারেন্স দিয়ে স্থূলচিন্তক এই বই পোকা বলেছে- "গঙ্গাপারে রতিপ্রিয়া, শিবকুণ্ডে শিবানন্দা, দেবিকাতটে নন্দিনী, দ্বারবতীতে রুক্মিণী, বৃন্দাবনে রাধা, মথুরায় দেবকী।"

-কিন্তু এই সকল নারী কি কৃষ্ণের সঙ্গিনী বা শয্যা সঙ্গিনী ? যদি তাই হয় তাহলে যে বলা হয়েছে মথুরায় দেবকী, তাহলে কি দেবকীও কৃষ্ণের শয্যা সঙ্গিনী ? নিশ্চয় নয়; কারণ, দেবকী হলেন শ্রীকৃষ্ণের জন্মদাত্রী মা। তাহলে নিশ্চয় এই শ্লোকটি দিয়ে যেসব নারীর কথা বলা হয়েছে, তাদেরকে দিয়ে কৃষ্ণের শয্যাসঙ্গিনীর কথা বলা হয় নি, কোন নারী কোথায় ছিলো, সেটা বোঝাতে এই শ্লোকটি ব্যবহার করা হয়েছে। এই সূত্রে রাধা যে বৃন্দাবনে ছিলো, তাতে তো কোনো সমস্যা নেই। কৃষ্ণের ছোটবেলার সঙ্গী সাথীদের মধ্যে যে রাধা বলে একজন ছিলো, সেটা তো আমি অস্বীকার করি না, আমি যেটা অস্বীকার করি, সেটা হলো যুবক কৃষ্ণের সাথে যুবতী রাধার যে প্রেম-ভালোবাসার কথা বলা হয়, সেটা। মৎস্যপুরাণের এই শ্লোকটি কি রাধার সাথে কৃষ্ণের প্রেম ভালোবাসাকে প্রমাণ করে ? কোথাও রাধার নাম থাকলেই যে সেটা কৃষ্ণের জীবনে রাধার অস্তিত্বকে প্রমাণ করে, ব্যাপারটা তো এমনও নয়।

এরপর রায়ণের দেওয়া একটি রেফারেন্স হলো- অচ্যুতাষ্টকম এর ৪ নং শ্লোক, যেখানে বলা আছে, "দেবকীতনয় দুঃখদবাগ্নে, রাধিকারমণ রম্য-সুমূর্ত্তে।"

-এই গ্রন্থটি কার লেখা ? এটি কি বেদব্যাস রচিত ? কমা (,) এবং হাইফেন (-) দ্বারা লিখিত শ্লোকটি যে আধুনিক যুগে কারো দ্বারা রচিত, সেটা নিয়ে কি আর বেশি কিছু বলার দরকার আছে ? প্রাচীন বাংলা বা সংস্কৃত ভাষায় কমা, হাইফেন বলে কিছু ছিলো না, এগুলো গদ্য লিখার সুবিধার্থে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ইংরেজি থেকে ধার করেন। এই সব বিরামচিহ্ন সহযোগে লিখিত শ্লোকে রাধিকারমণ শব্দ ব্যবহার করে শ্রীকৃষ্ণকে রাধার সেক্স পার্টনার প্রমাণ করা চেষ্টা করা হয়েছে, এই সব রচনার উদ্দেশ্য কী ? রায়ণ তার ভিডিওর এক স্থানে বলেছে, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে ব্রহ্মার পৌরহিত্যে রাধা ও কৃষ্ণের বিয়ে হয়েছে, তাহলে তাদের মধ্যে যৌনসম্পর্ক হলে সমস্যা কী ? 

আমার ধারণা, রায়ণ, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ ঠিকমতো পড়ে নি, পড়লে জানতো পারতো যে, যখন রাধা ও কৃষ্ণের বিয়ে দেখানো হয়েছে ঐ পুরাণে, তার অনেক আগে থেকে রাধা ও কৃষ্ণের যৌনতার কথা বলা হয়েছে, নিশ্চয় বিয়ের আগে যৌনতা ভালো কোনো বিষয় বা ভালো কোনো উদাহরণ নয় মানুষের জন্য, যেহেতু কৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিলো লোকশিক্ষা দিয়ে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আর রাধার সাথে যদি কৃষ্ণের বিবাহই হয়, তাহলে সেটা হরিবংশে বা মহাভারতে উল্লেখ নেই কেনো ? বিয়ে কোনো মানুষের জীবনে সাধারণ ঘটনা নয়, ভীষণ উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা, যে ঘটনা মানুষের সারাজীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলে, সেই বিয়ের ঘটনা, কৃষ্ণের উল্লেখযোগ্য দুটি জীবনীর একটিতেও নেই, ব্যাপারটা কি স্বাভাবিক ? এর চেয়েও এখানে বড় প্রশ্ন হলো- কৃষ্ণ, ১০+ বছর বয়সে বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরায় চলে যান, পরে আর কোনো দিন বৃন্দাবনে ফিরে যান নি, রাধারও বৃন্দাবনের বাইরে যাওয়ার কোনো প্রমাণ নেই, তাহলে, যুবক কৃষ্ণের সাথে যুবতী রাধার দেখা হয়েছিলো কখন, আর তাদের মধ্যে প্রেম বা বিয়েও হয়েছিলো কখন ? আগেই বলেছি, বিয়ে কোনো মানুষের জীবনে সাধারণ ঘটনা নয়, বলরামের সাথে রেবতীর এবং কৃষ্ণের সাথে রুক্মিনীর বিয়ে মহাধুমধামে সকল আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতে হয়েছিলো, রাধা ও কৃষ্ণের বিয়েতে কে কে উপস্থিত ছিলো ? কে কন্যাদান করেছিলো ? শুধু হুট করে একটি কথা বললেই হয় না, সেই কথার সাপেক্ষে বিভিন্ন যুক্তি প্রমাণও থাকতে হয়। আর যেটা বাস্তব ঘটনা তার সাপেক্ষে বিভিন্ন যুক্তি প্রমাণ থাকেও। রাধার সাথে কৃষ্ণের বিয়ের ঘটনা যেহেতু বাস্তব নয়, তাই একটি উদ্ভট ও অশ্লীল পুরাণ ব্যতীত, তার স্বপক্ষে কোথাও কোনো যুক্তি বা বাস্তব ঘটনার প্রমাণ নেই।

এরপর রাধাতন্ত্র এর ১৬/৭ নং শ্লোকের রেফারেন্স রায়ণ দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, "রাধিকা কৃষ্ণ বল্লভা"

-যেখানে হরিবংশ এবং মহাভারতে রাধার সাথে কৃষ্ণের প্রেম বিবাহ যৌনতার বিষয়ে কিছু বলা হয় নি, এমনকি গৌতমবুদ্ধের জন্মের পর রচিত ভাগবতেও রাধা সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই; কারণ, ঐ সময় রাধার কাল্পনিক কাহিনীর ডালপালাগুলো মেলে নি, সেখানে রাধাতন্ত্র নামে এই গ্রন্থটি কে রচনা করলো, এটি কার হতে রচিত হলো ? রাধার সাথে কৃষ্ণের প্রেম বিবাহ যৌনতার কথা প্রথম পাওয়া যায় ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে, বিশেষজ্ঞদের মতে যেটা কোনোভাবেই ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের আগের রচিত নয়, যার কাহিনীর উপর ভিত্তি করে সংস্কৃত কবি জয়দেব রচনা করে গীত গোবিন্দ, বাংলা কবি বড়ুচণ্ডীদাস লিখে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য, আর চৈতন্য পূর্ববর্তী মধ্যযুগের বৈষ্ণব কবিরা লিখে বৈষ্ণব পদাবলী, সুতরাং কৃষ্ণের সাথে রাধার নাম জড়িয়ে লেখা রাধাতন্ত্র যে চৈতন্যপন্থীদের হাতে রচিত, তাতে কি কোনো সন্দেহ আছে ? আর চৈতন্যপন্থীরা তো বরাবরই মূর্খ, এরা প্রকৃত সত্যকে ধরতে পারে না, আর প্রকৃত সত্যকে বোঝেও না। এজন্যই তো এরা হরিবাসর বা হরিসভার নামে রাধা-কৃষ্ণের প্রেম সম্পর্কিত লীলাকীর্তনের প্রচার করে হিন্দুসমাজটাকে রসাতলে নিয় গেছে, যাচ্ছে। এদের হাতে রচিত গ্রন্থ দ্বারা আপনি কৃষ্ণের জীবনে রাধার অস্তিত্বকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন, আপনার জ্ঞান বুদ্ধি বা সত্যকে উপলব্ধি করার ক্ষমতা যে কতটুকু, সেটা কি আপনি বুঝতে পারছেন ?

এরপর যমুনাষ্টকস্তোত্র ৬ নং শ্লোকের রেফারেন্স দিয়ে "রাধিকাঙ্গ" শব্দ দ্বারা আপনি রাধার অস্তিত্বকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তাতেই কি প্রমাণ হয় যে- শ্রীকৃষ্ণের জীবনে রাধা আছে ?

এরপর গর্গসংহিতা দ্বারকাখণ্ড ১৭/১৮ শ্লোকের রেফারেন্স দিয়ে রায়ণ দেখিয়েছে-

"রুক্মিণী কহিলেন, হে বৃষভানুনন্দিনী রাধে! তুমি ধন্যা, তোমার ভক্তিভাবে এই কৃষ্ণ বশীভূত হইয়াছেন। যে কৃষ্ণের কথা ত্রিলোকবাসী সর্বদা কীর্তন করে, সেই কৃষ্ণ তোমারই কথা সর্বদা কহিয়া থাকেন।"

-এখন বাস্তবতার দৃষ্টিতে এই দৃশ্যটির কথা কল্পনা করুন। যদি কোনো পুরুষ সব সময় কোনো নারীর কথা ভাবে, তার কথা বলে, তাহলে এটাই প্রমাণ হয় যে, সেই পুরুষ, সেই নারীর প্রেমে উন্মত্ত। এই ধরণের কোনো পুরুষের প্রতি, তার স্ত্রীর প্রেম-ভালোবাসা-শ্রদ্ধা-ভক্তি কিছুই থাকতে পারে না। সেই নারী, সব সময় তার স্বামীকে নিয়ে বিরক্তিতে থাকবে, স্বামীর সাথে ঝগড়াঝাটি করবে, প্রয়োজনে মারপিটও করবে, যেহেতু তার স্বামী তাকে ছাড়া অন্য নারীকে নিয়ে ভাবছে, তার কথা বলছে। এই পরিস্থিতিতে সেই নারী কি, তার স্বামীর গার্লফ্রেন্ড সম্পর্কে এই ধরণের কথা বলতে পারে যে- তুমি ধন্যা, তোমার প্রেমে আমার স্বামী বশ হয়েছে ? 

পৃথিবীর এমন কোনো নারী নেই যে, তার প্রেমিকের স্ত্রীর সাথে নিজে গিয়ে দেখা করার সাহস রাখে। এসব ক্ষেত্রে স্বামীর লুচ্চামি টের পেলে, স্ত্রীরাই খোঁজ নিয়ে তার স্বামীর প্রেমিকার সাথে দেখা করে তাকে সাইজ করে, তার সাথে ভালোভাবে কথা বলে না, আর বলে না যে- তুমি ধন্যা। বরং এমন কথা বলে যে, তুই যদি আমার স্বামীর দিকে নজর দিস, তোর চোখ আমি তুলে নেবো, আর যদি আমার স্বামীর দিকে দিকে হাত বাড়াস তোর হাত আমি ভেঙ্গে ফেলবো বা কেটে নেবো। এছাড়াও কৃষ্ণ যদি সব সময় রাধার কথাই ভাবে, রাধার কথাই বলে থাকে, তাহলে শ্রীকৃষ্ণ অধর্মীদের বিনাশ করে ধর্ম প্রতিষ্ঠার ভাবনা ভেবেছে কখন, আর তার জন্য কাজ করেছে কখন, এটা কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে- শ্রীকৃষ্ণের পৃথিবীতে অবতরণের উদ্দেশ্যই হলো দৃষ্কুতকারীদেরকে বিনাশ করে, ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা, প্রেম করা নয়।

আচ্ছা, যদি ধরেও নিই যে গর্গসংহিতার বর্ণনাটি সত্য, তাহলে এটা প্রমাণ হয়ে যে- নিজের স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও রাধার দিকে মন দেওয়ায় কৃষ্ণ লম্পট। তো ঘটনাটি সত্য হোক বা মিথ্যা হোক, গর্গসংহিতার রেফারেন্স টেনে এনে আপনি কি কৃষ্ণকে লম্পট প্রমাণ করতে চাইছেন না ? যদি তাই হয়, সনাতন ধর্ম ও সমাজের ব্যাপারে আপনার উদ্দেশ্য কি সৎ ? আপনার পিতার জীবনে যদি কোনো নারী কেলেঙ্কারী থাকে, সেটাকে আপনার চাপা দেওয়া উচিত, না প্রকাশ করা উচিত ? আর যদি আপনার পিতার জীবনে কোনো নারী কেলেঙ্কারী না থাকে, কিন্তু কেউ যদি সেরকম কোনো কথা বলে, তাহলে আপনার কী করা উচিত ? তাকে দমন করা, না তার প্রশংসা করা ? যদি আপনি আপনার পিতার আদর্শ পুত্র হন, আপনি চেষ্টা করবেন জন মানসে আপনার পিতার একটি স্বচ্ছ ও সুন্দর ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে, যদি কোনো স্ক্যান্ডাল তার জীবনে থেকে থাকে, সেগুলোকে চাপা দিতে। আর এর বিপরীত কিছু করে যদি আপনি আপনার পিতার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেন, তাহলে আপনি আদর্শ পুত্র নয়, আপনি কুলাঙ্গার। 

শ্রীকৃষ্ণ হলেন এই জগতের পিতা, সেই কৃষ্ণের জীবনে রাধার অস্তিত্বকে প্রমাণের অপচেষ্টা করতে গিয়ে গর্গসংহিতার রেফারেন্স তুলে ধরে আপনি কি সেই কুলাঙ্গার পুত্রের ভূমিকা পালন করেন নি বা করছেন না ?

এছাড়াও রুক্মিণী যদি বলে থাকেন- "যে কৃষ্ণের কথা ত্রিলোকবাসী সর্বদা কীর্তন করে", এটা শ্রীকৃষ্ণের তিরোভাবের বহু পরে মোটামুটি আধুনিক যুগের কথা হতে পারে, কোনোভাবেই শ্রীকৃষ্ণের যৌবন কালের কথা নয়; কারণ, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পূর্বপর্যন্ত অখণ্ডভারতের বেশির ভাগ মানুষ শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান বা ঈশ্বর মনে করতো না, তাই যে কৌরবদের এত কুকীর্তি দেশজুড়ে পরিচিত ছিলো, সেই কৌরবপক্ষে দেশের অধিকাংশ রাজা যোগ দিয়েছিলো, যার ফলে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অংশ নেওয়া মোট ১৮ অক্ষৌহিনী সৈন্যের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের পক্ষে ছিলো মাত্র ৭ অক্ষৌহিনী সৈন্য। বর্তমানেও যেখানে প্রায় সব হিন্দু বিশ্বাস করে যে শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ঈশ্বর, তারপরও পৃথিবীর প্রায় ৮০% মানুষ শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর মনে করে না। আর সেই সময় শ্রীকৃষ্ণের যখন যৌবন কাল, তখন রুক্মিণী এই কথা বলতে পারেন না যে- যে কৃষ্ণের কথা ত্রিলোকবাসী সর্বদা কীর্তন করে! কারণ, মর্ত্যের তখন অর্ধেক লোকও কৃষ্ণের কথা কীর্তন করতো না। এই তথ্য থেকে এটা প্রমাণ হয় যে, হয় গর্গসংহিতাকে বিকৃত করে রুক্মিণী ও রাধা সংক্রান্ত এই কথাগুলো চৈতন্য আন্দোলনের পর ঢুকানো হয়েছে, না হয় গর্গসংহিতা নাম দিয়ে কোনো চৈতন্যপন্থী এই গ্রন্থ রচনা করে তাকে সনাতনী শাস্ত্র বলে চালিয়ে দিয়েছে।

যা হোক- এইসব চুলচেরা বিশ্লেষণে, বাস্তবতার নিরীখে, গর্গসংহিতার এই বর্ণনাটি যে কোনোভাবেই সত্য হতে পারে না, এটি প্রমাণিত, তাই এর কোনো মূল্য নেই।

এরপর নারদপাঞ্চরাত্র-২/৩/৫০,৫১ তে বলা হয়েছে,

"রাধিকার উপাখ্যান অপূর্ব, গোপনীয়, সুদুর্লভ, সদ্যোমুক্তিপ্রদ, পবিত্র, বেদের সারভূত ও পুণ্যপ্রদ।"

-তো রাধিকার উপাখ্যান মানেই তো ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে বর্ণিত রাধা ও কৃষ্ণের অবৈধ, অনৈতিক, পরকীয়া প্রেম ও যৌনতা; কারণ, উভয়েরই স্বামী ও স্ত্রী আছে, চটিগল্প হিসেবে এটা অবশ্যই অপূর্ব, গোপনীয় নয় মোটেই, সুদুর্লভও নয়, সদ্যমুক্তিপ্রদ কিভাবে হতে পারে, সেটা আমার বোধের অতীত, আর এটা যদি পবিত্র হয়, পৃথিবীতে অপবিত্র সম্পর্ক বলে কিছু নাই; আর এটা যদি পূণ্যপ্রদ হয়, তাহলে পৃথিবীতে পাপ বলেও আর কিছু নাই; এছাড়াও এটা যদি বেদের সারভূত হয়, তাহলে বেদে রাধা ও কৃষ্ণ সম্পর্কিত কোনো উপাখ্যান পর্যন্ত নেই কেনো? বেদে শ্রীকৃষ্ণের নাম পর্যন্ত নেই, এক স্থানে কৃষ্ণ শব্দটি আছে, কিন্তু সেটা কোনো একজন ঋষির নাম হিসেবে, পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ হিসেবে নয়। আবার বেদে কয়েক জায়গায় অবশ্য- রাধা, রাধস টাইপের কিছু শব্দ আছে ঠিকই, কিন্তু এগুলো দিয়ে কোনো মানবীকে বোঝায় না, বোঝায় ধন সম্পদ, তাই রাধার ভক্তরা বেদের সেই শব্দের কথা বলে আবার রাধার অস্তিত্বকে প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন না, তাহলে আপনাদের মুখ কিন্তু কেউ রক্ষা করতে পারবে না।

যা হোক, নারদপাঞ্চরাত্র নামের এই বালছাল কে লিখেছে ? যেখানে শিবের মুখ দিয়ে কৃষ্ণের কাল্পনিক লাম্পট্যকে সত্য প্রমাণ করার চেষ্টা করে কৃষ্ণের চরিত্রকে কলুষিত করার অপচেষ্টা করেছে ? শ্রীকৃষ্ণ যেখানে ঈশ্বর হিসেবে সনাতনধর্মীয় গ্রন্থে প্রমাণিত, সেখানে এই সব বাল ছাল লিখে কি শ্রীকৃষ্ণের চরিত্রকে কলঙ্কিত করা যাবে, আর সেগুলোকে বিশ্বাস করতে হবে ? এগুলোকে বিশ্বাস করতে পারে রায়ণের মতো স্থিরবুদ্ধির কিছু লোকজন, যাদের সত্য মিথ্যা বোঝার কোনো ক্ষমতা নেই, বইয়ে যা পড়ে সেটাকেই সত্য বলে ধরে নিয়ে ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করে।

এরপর পদ্মপুরাণ পাতাল খণ্ড ৩৮/১২০ এ বলা হয়েছে-

"তাঁহার প্রিয়তমা কৃষ্ণবল্লভা রাধিকাই আদ্যা প্রকৃতি। সেই রাধিকার কোটি কোটি কলাংশ হইতেই ত্রিগুণময়ী দুর্গা প্রভৃতি দেবীগণের উৎপত্তি। ঐ রাধিকার পাদধূলি স্পর্শে কোটি বিষ্ণুর উৎপত্তি হইয়া থাকে।"

পদ্মপুরাণের এই শ্লোকগুলো যিনি লিখেছেন, হয় তার সনাতনধর্মীয় দেবতত্ত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা ছিলো না, নয় তো ইচ্ছে করেই রাধাকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে এই বিকৃতি তিনি ঘটিয়েছেন। সাধারণভাবেই আমরা জানি যে- আদ্যাশক্তি হলেন মহামায়া, যিনি দেবীদুর্গা, যার আরেক রূপের নাম মহাকালী। সৃষ্টির মূল হলেন বিষ্ণু, বিষ্ণুর ধ্বংসকারী রূপের নাম শিব এবং শিবের নারী শক্তি হলেন দুর্গা বা কালী যিনি মহামায়া নামে পরিচিতা, যাকে বলা হয় আদ্যাশক্তি। পদ্মপুরাণের এই শ্লোকে রাধাকে আদ্যাশক্তি বানিয়ে তার কোটি কোটি কলাংশ হতে দেবীগণের উৎপত্তি দেখানো হয়েছে এবং রাধিকার পাদধূলি থেকেই নাকি কোটির বিষ্ণুর উৎপত্তি হয়েছে। তাহলে এখানে প্রশ্ন হচ্ছে- রাধিকার পাদধূলি থেকে যদি কোটি বিষ্ণুর উৎপত্তি হয়, তাহলে আমরা তো এক বিষ্ণুকে চিনি বা জানি, অন্য বিষ্ণুগণ কোথায়, কী করছে ? আর আদ্যাশক্তি শব্দটির দিকে খেয়াল করুন, এর মধ্যে শক্তির একটি ব্যাপার আছে, যে শক্তির পরিচয় আমরা দুর্গা বা কালীর মধ্যে দেখতে পাই, রাধার মধ্যে কি সেই শক্তির কোনো ব্যাপার আছে ? যদি না থাকে তাহল তাকে আদ্যাশক্তি বলা হচ্ছে কেনো ?

শ্রীকৃষ্ণের এক লীলায়- ব্রহ্মা একবার, শ্রীকৃষ্ণের সকল সঙ্গী সাথীকে ঘুমে অচেতন করে চুরি করে নিয়ে যায়। এটা বুঝতে পেরে শ্রীকৃষ্ণ একাই তার সকল সঙ্গী সাথীতে রূপান্তরিত হয়ে সব জায়গায় বিরাজ করতে থাকে, এভাবে এক বছর কেটে গেলে ব্রহ্মা বৃন্দাবনে এসে দেখে শ্রীকৃ্ষ্ণ আগের মতোই সে তার সঙ্গী সাথী দেরকে নিয়ে খেলাধূলা করছে। এটা দেখে ব্রহ্মা নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করে এটা কিভাবে সম্ভব ? ব্রহ্মার উপস্থিতিতেই হাজার হাজার ব্রহ্মা চারদিক থেকে আসতে থাকে, এটা দেখে আরও অবাক হয়ে ব্রহ্মা বলে- আমিই তো ব্রহ্মা, তাহলে এত সব ব্রহ্মা কোথা থেকে আসছে ?

এরপর শ্রীকৃষ্ণ, নিজেকে বিষ্ণুতে পরিণত করে বলে- চতুর্মুখী ব্রহ্মা, তুমি তো কেবল একটি ব্রহ্মাণ্ডের রচয়িতা, কিন্তু এই সমগ্র মহাবিশ্ব জুড়ে অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ড রয়েছে, যাদের রচয়িতারা তোমার থেকেও বহুগুণ বেশি জ্ঞানী ও শক্তিশালী, আর তারা সবাই আমার অধীনস্থ, আমার নির্দেশেই তারা কাজ করে এবং আমিই সেই সবগুলো ব্রহ্মাণ্ডের নিয়ন্ত্রক; আজ তোমার অবস্থান তোমাকে বোঝানোর জন্য সেই সকল ব্রহ্মাকে এখানে আহ্বান করেছি, যাদেরকে তুমি তোমার চারপাশে দেখতে পাচ্ছো। এরপর ব্রহ্মা, বিষ্ণু অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের নিকট ক্ষমা নিয়ে ফিরে যায় এবং শ্রীকৃষ্ণের খেলার সঙ্গীসাথীদেরকে ঘুমন্ত অবস্থায় ফেরত দিয়ে যায়।

এছাড়াও গীতার ৯/১৭ তে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,

"পিতাহমস্য জগতো মাতা ধাতা পিতামহঃ।

যার অর্থ : আমিই এই জগতের পিতা মাতা, বিধাতা ও পিতামহ।

গীতার এই বাণী এবং শ্রীকৃষ্ণের ঐ লীলা থেকে বোঝা যায়, শ্রীকৃষ্ণ বা বিষ্ণুই এই মহাবিশ্বের মূল, তিনিই সবার সৃষ্টিকর্তা বা নিয়ন্তা। অথচ পদ্মপুরাণ মতে- এই বিষ্ণুর মতো কোটিকোটি বিষ্ণু নাকি রাধিকার পাদধূলি থেকে উৎপন্ন ! স্বল্পমাত্রা গাঁজা অবশ্যই উপকারী, কিন্তু বেশি মাত্রা গাঁজা এই রকম অসম্ভব এবং অবাস্তব সব কল্পনার জন্ম দিয়ে থাকে, যার জন্য বলা হয়- গাঁজার নৌকা পাহাড় বাইয়া যায়। পদ্মপুরাণের লেখক বা এর বিকৃতকারীরা নিশ্চয় অধিক মাত্রায় গাঁজা সেবনে অভ্যস্ত ছিলেন। না হলে যে বিষ্ণু সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নিয়ন্ত্রক, সেই রকম কোটি কোটি বিষ্ণুর জন্মদাতা রাধা, এক কৃষ্ণের সাথে মিলনের ক্ষমতা রাখে না, তাকে সারাজীবন ধরে কৃষ্ণ বিরহে পুড়তে হয় ? ব্যাপারটা এমন- হাজার হাজার মন চাউলের মালিক সারা বছর ধরে এক প্লেট ভাতের জন্য ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই সে সেটা পাচ্ছে না, ব্যাপারটি বাস্তব ? এই ব্যাপার যদি বাস্তব না হয়, তাহলে রাধার পাদধূলি থেকে কোটি কোটি না হোক, অন্তত একজন বিষ্ণুর উৎপত্তিও সম্পূর্ণ অবাস্তব, সেই সাথে অবাস্তব রাধার কোটি কোটি কলাংশ হতে দেবীগণের উৎপত্তির বিষয়টিও। এবং এসব কারণেই পদ্মপুরাণের ঐ শ্লোকের বক্তব্য সম্পূর্ণ- মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং অবাস্তব; যাকে রায়ণের মতো বইপোকারা বিশ্বাস করতে পারে, কিন্তু যুক্তিবাদীদের পক্ষে বিশ্বাস করা অসম্ভব।

এরপর স্কন্দপুরাণ, প্রভাষখণ্ড, দ্বারকামহাত্ম্য- ১২/৩০ নং শ্লোকে "রাধোবাচ" শব্দ দ্বারা রায়ণ রাধার অস্তিত্বকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, যদিও এতে রাধার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়, কিন্তু তাতেই কি শ্রীকৃষ্ণের পাশে বা শ্রীকৃ্ষ্ণের জীবনে রাধার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয় ?

এরপর স্কন্ধপুরাণ, বিষ্ণুখণ্ড, শ্রীভাগবত মাহাত্ম্য ২/১১ এর রেফারেন্সে বলা হয়েছে- "কালিন্দী বলিলেন- আত্মারাম কৃষ্ণের আত্মা রাধিকা, আমি তাঁহার দাসী, তাঁহার দাস্য প্রভাবেই কাতরতা আমাকে স্পর্শ করিতে অসমর্থ।"

ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ মতে এই কালিন্দী শ্রীকৃষ্ণের তথাকথিত প্রধান ৮ স্ত্রীর একজন, আমি কৃষ্ণের জীবনে রুক্মিণী ছাড়া অন্য কোনো নারীকে স্বীকার করি না, তর্কের খাতিরে যদি ধরে নিই যে কালিন্দী, কৃষ্ণের স্ত্রী, তার মানে কৃষ্ণের জীবনে রুক্মিণীর মতোই কালিন্দীরও প্রভাব ছিলো। সেই কালিন্দী যদি রাধার দাসী নিজেকে মনে করে, যেকারণে কোনো প্রকার কাতরতা তাকে স্পর্শ করতে না পারে, তাহলে তার বাস্তবায়ণের জন্য তো রাধাকে দ্বারকায় গিয়ে কৃষ্ণের বাসভবনে থাকতে হবে, এরকম ঘটনার উল্লেখ কি কোথাও আছে যে- রাধা, দ্বারকায় গিয়ে কৃষ্ণের বাসভবনে গিয়ে বাস করেছে ?

এছাড়াও যেকোনো স্ত্রী, নিজেকেই তার স্বামীর আত্মা মনে করে, অন্য কোনো নারীকে নয়। যদি কোনো নারী এটা জানতে পারে যে, তার স্বামীর আত্মা অন্য কোনো নারী, তাহলে সেই নারীর পক্ষে সেটা সহ্য করা অসম্ভব, সেক্ষেত্রে গর্গসংহিতা প্রসঙ্গে রুক্মিণী ও রাধার কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে উপরে যা বলেছি, সেই একই কথা এক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তার মানে কালিন্দী ও রাধা সম্পর্কে এই পুরাণে যা বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এরপর বরাহপুরাণের ১৬৪/৩৩,৩৪ নং শ্লোকে যে রাধাকুণ্ড এবং অরিষ্টকুণ্ডের কথা বলা হয়েছে, তার কাহিনী হলো- কৃষ্ণ যখন বৃন্দাবনে, তখন কংসের নির্দেশে অরিষ্টাসুর নামে এক বিশালাকৃতির ষাঁড়, কৃষ্ণকে হত্যার জন্য বৃন্দাবনে কৃষ্ণের পাড়ায় গিয়ে তাণ্ডব শুরু করে। এই সংবাদ পেয়ে কৃষ্ণ নিজের পাড়ায় উপস্খিত হয়ে বিশালাকৃতির ঐ ষাঁড়কে হত্যা করে। কিন্তু যেহেতু এটি ছিলো ষাঁড় অর্থাৎ গরু, সেহেতু রাধা এবং তার সখীরা কৃষ্ণকে বলে, এই অরিষ্টাসুরকে হত্যার জন্য তার গোহত্যা পাপ হয়েছে, এই পাপমোচনের জন্য তাকে পৃথিবীর সমস্ত পবিত্র নদীতে গিয়ে স্নান করতে হবে। কৃষ্ণ বলে ঠিক আছে, সারা পৃথিবী ভ্রমণ করে সমস্ত পবিত্র নদীতে স্নান করার পরিবর্তে সব পবিত্র নদীকে এখানে এনে স্নান করে নেবো। এরপর কৃষ্ণ তার পা দিয়ে মাটিতে একটা আঘাত করে, ফলে একটি পুকুর বা কুণ্ডের সৃষ্টি হয় এবং কৃষ্ণ বাঁশি বাজাতে শুরু করলে পবিত্র নদীরূপ দেবী, যেমন- গঙ্গা, কাবেরি, গোদাবরী, সরস্বতী, নর্মদা, যমুনা- সেখানে উপস্থিত হয় এবং সবাই জলরূপে ঐ পুকুরে পতিত হয়, এভাবে ঐ পুকুরটি জলে ভরে উঠে, তাতে শ্রীকৃষ্ণ স্নান করে রাধা এবং তার সখীদের দাবী মতো নিজেকে পাপ মুক্ত করে এবং শ্রীকৃষ্ণ ঐ কুণ্ডের নাম দেয় শ্যামকুণ্ড।

তারপর শ্রীকৃষ্ণ, রাধা এবং সঙ্গিনীদের বলে অরিষ্টাসুরের পক্ষ নিয়ে কথা বলে তোমরাও পাপ করেছো, এই কুণ্ডে স্নান করে তোমরাও পাপমুক্ত হয়। জবাবে শ্রীকৃষ্ণের চিরশত্রু রাধা বলে, তুমি স্নান করেছো বলে ঐ কুণ্ডের জল অপবিত্র হয়ে গেছে, আমরা নিজেরাই আরেকটি কুণ্ড বানিয়ে নিয়ে তাতে স্নান করবো। তারপর রাধা এবং সখীরা অরিষ্টাসুরের তাণ্ডবে তার পায়ের আঘাতে যেখানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছিলো, সেখান থেকে আরো মাটি খুঁড়ে তুলে ফেলে ছোটখাটো একটি পুকুর বানিয়ে ফেলে, কিন্তু জল পাবে কোথা থেকে ? কৃষ্ণের এই প্রশ্নের জবাবে রাধা বলে পাশের যমুনা নদী থেকে তারা কলসী দিয়ে জল এনে এই পুকুর ভরাবে। এর পর তারা কয়েকজনে মিলে কয়েক কলসী জল এনে ঐ পুকুরে ঢালেও, কিন্তু তারা বুঝতে পারে এইভাবে পুকুর ভরাতে গেলে তাদের সারাজীবন লেগে যাবে, এই ভেবে যখন তারা হতাশ হয়ে বসে পড়ে, তখন কৃষ্ণের নির্দেশে পূর্বোক্ত ৬ জন দেবী আবার জলরূপে রাধারকুণ্ডে পতিত হয়। তখন কৃষ্ণ বলে তোমার কুণ্ড তো আমার কুণ্ডের চেয়ে বেশী সুন্দর, এই বলে কৃষ্ণ রাধাকুণ্ডে নেমে পড়ে এবং বলে প্রতিদিন সে এই কুণ্ডে নেমে স্নান করবে, এর ফলে রাধাও আগের ঝগড়াঝাটি ভুলে কৃষ্ণকে বলে তোমার কুণ্ডও খুব সুন্দর, আমিও তোমার কুণ্ডে নেমে প্রতিদিন স্নান করবো। এই ভাবে সৃষ্টি হয় শ্যামকুণ্ড ও রাধাকুণ্ড, যেটা শ্রীকৃষ্ণের বাল্যকালের ঘটনা। শ্রীকৃষ্ণের বাল্যকালে বৃন্দাবনে কৃষ্ণের সমবয়সীদের মধ্যে যে রাধা নামে কেউ ছিলো সেটা তো আমি অস্বীকার করি না, যেটা আগেই বলেছি। আমার আপত্তি শুধু যুবক কৃষ্ণের পাশে যুবতী রাধাকে দাঁড় করিয়ে কৃষ্ণের স্বর্গীয় মহিমাকে কলঙ্কিত করায়।

যা হোক, বরাহ পুরাণের এই ঘটনাটি কি প্রমাণ করে যে যুবক কৃষ্ণের জীবনে যুবতী রাধার কোনো অস্তিত্ব আছে বা কৃষ্ণের সাথে রাধার প্রেম ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক ছিলো ?

শেষে দেবীভাগবতের একটি রেফারেন্স দিয়ে লেখাটি শেষ করবো, ইচ্ছে করেই এই আলোচনাটিকে আমি শেষে রেখেছি, বিশেষ একটি উদ্দেশ্যে-

দেবীভাগবতের ৯/৫০/১৬ তে বলা হয়েছে- রাধিকার পূজা ব্যতীত শ্রীকৃষ্ণের পূজার অধিকার হয় না। সুতরাং সকল বৈষ্ণবেরই রাধার পূজা করা অবশ্য কর্তব্য। এই অনুবাদ যে ভুল বা সঠিক নয়, এমনটি বলা যাবে না; কারণ, শ্লোকের মধ্যেই বলা আছে, "বৈষ্ণবৈঃ সকলৈস্তস্মাং কর্ত্তবং রাধিকার্চ্চনম।"

বৈষ্ণব শব্দের উৎপত্তির দুটো সোর্স আছে, প্রথমত যারা বিষ্ণুর ভক্ত, তাদরেকে বলে বৈষ্ণব; দ্বিতীয়ত যারা চৈতন্যদেবের অনুসারী, তাদেরকে বলে বৈষ্ণব বা বৈরাগী। যদি এই শ্লোকটি বিষ্ণুর ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলা হতো, তাহলে এখানে বৈষ্ণব শব্দটাই ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়তো না; কারণ, থিয়োরি অনুযায়ী সকল সনাতনী ই বিষ্ণুর ভক্ত, সেই হিসেবে সবাই বৈষ্ণব, আর বিষ্ণু সংশ্লিষ্ট কোনো কাহিনীতে রাধার কোনো অস্তিত্ব নেই। এই শ্লোকটি শুধুমাত্র চৈতন্যদেবের অনুসারী বৈষ্ণবদের উদ্দেশ্যে রচিত, যেকারণে বলা হয়েছে- "রাধার পূজা ব্যতীত শ্রীকৃষ্ণের পূজার অধিকার হয় না। সুতরাং সকল বৈষ্ণবেরই রাধার পূজা করা অবশ্য কর্তব্য।" এ থেকে এটা প্রমাণ হয় যে- দেবী ভাগবতের এই শ্লোকটি কোনো চৈতন্যপন্থী বৈষ্ণবের হাতে রচিত, না হলে- যে রাধার মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণের চরিত্রকে শুধু কালিমালিপ্তই করা হয়, সেই রাধার পূজা ব্যতীত শ্রীকৃষ্ণের পূজার অধিকার হয় না, এমন কথা বলতে পারতো না।

সনাতন ধর্মের চুড়ান্ত জ্ঞান হলো গীতা, আর সনাতন ধর্মের চুড়ান্ত বিষয় হলো শ্রীকৃষ্ণ, যেকারণে গীতায় বলা হয়েছে, শ্রীকৃষ্ণকে জানা ই হলো চুড়ান্ত জ্ঞান। এই চুড়ান্ত শ্রীকৃষ্ণের পূজা রাধার পূজা ব্যতীত হবে না, যদি এটা সত্য হতো, তাহল নিশ্চয় সনাতন ধর্মের চুড়ান্ত থিয়োরি গীতায় অবশ্যই এ ব্যাপারে কিছু না কিছু বলা থাকতো বা ইঙ্গিত থাকতো, কিন্তু সেরকম কি কিছু আছে ? নেই। তাহলে সনাতন ধর্মের শেষ কথা গীতায়, যেখানে শ্রীকৃষ্ণের পূজার আগে রাধার বা অন্য কারো পূজার বিষয়ে কিছু বলা নেই, সেখানে দেবী ভাগবত নামের একটি পুরাণ, যার মূল বর্ণিত বিষয় হলো দেবী দুর্গার মাহাত্ম্য বর্ণনা, সেখানে হুট করে দু একটি শ্লোকে এরকম কথা বলা কি অযৌক্তিক বা অসঙ্গত নয় ?

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবনী মোটামুটি কমবেশি সবাই জানে। সেখানে কোনো এক অখ্যাত লেখকের অখ্যাত গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যদি এমন কোনো তথ্য দেওয়া হয় এবং বলা হয় যে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, কিন্তু সেই তথ্য যদি আগের জানা তথ্যগুলোর সাথে ম্যাচ না করে, তাহলে লোকজন সেই অখ্যাত লেখকের অখ্যাত গ্রন্থের কথাকে বিশ্বাস করবে ? দেবী ভাগবতে রাধার পূজা ব্যতীত শ্রীকৃষ্ণের পূজার ব্যাপারটাও সেরকম। যে শ্রীকৃষ্ণ মানবের মুক্তিদাতা, তার সম্পর্কে এতবড় একটি তথ্য, সনাতন ধর্মের প্রধান প্রধান গ্রন্থ, যেমন- গীতা, বেদ, মহাভারত, রামায়ণ, উপনিষদ কোথাও নেই, আছে এক অপ্রচলিত পুরাণে, তাহলে সেই কথা কি মেনে নেওয়া যায় ?

গীতার শেষ উপদেশ হিসেবে অষ্টাদশ অধ্যায়ের ৫৭ এবং ৬৫ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন,

"তুমি মনে মনে সমস্ত কর্ম আমাতে সমর্পন করিয়া, মৎপরায়ণ হইয়া, সাম্যবুদ্ধির যোগ অবলম্বন করিয়া সর্বদা আমাতে চিত্ত রাখো এবং যথাধিকার কর্ম করিতে থাকো। তুমি একমাত্র আমাতেই মন দাও, আমাকে ভক্তি করো, আমাকে পূজা করো, আমাকে নমস্কার করো, … তুমি নিশ্চয় আমাকেই পাইবে।"

কৃষ্ণের জীবনে রাধা যদি এত গুরুত্বপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ হতো এবং রাধাকে পূজা না করলে যদি শ্রীকৃষ্ণের পূজার অধিকার না থাকতো, তাহলে কি কৃষ্ণ অর্জুনকে গীতার এই উপদেশগুলো দিতেন ? আর রাধার পূজা ব্যতীত শ্রীকৃষ্ণের পূজা ফলবান না হলে শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর নয়, রাধাই পরমেশ্বরী হয়; কিন্তু রাধার পরমেশ্বর হওয়ার পেছনে সনাতন ধর্মের প্রামান্য কোনো গ্রন্থে কি তার কোনো রেফারেন্স আছে ? নাই। তাহলে দেবীভাগবতের এই সব কথা যে ভিত্তিহীন, সেটা কি এখনও চোখে আঙ্গুলের গুতা দিয়ে রায়ণ এবং রায়ণের মতোদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে ?

শুধু দেবী ভাগবতের এই শ্লোকটি নয়, সনাতন ধর্মীয় যেসব গ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণের পাশে রাধার অস্তিত্বকে প্রমাণ করার অপচেষ্টা করা হয়েছে, সেসবই যে চৈতন্যপন্থী বৈষ্ণবদের কারসাজি সেটা বোঝানোর জন্যই দেবী ভাগবতের এই আলোচনাটিকে আমি শেষে রেখেছিলাম।

যে ভিডিও বক্তব্যর উপর ভিত্তি করে এই প্রবন্ধটি লিখেছি, তার লিঙ্ক-

https://www.youtube.com/watch?v=5hsoW2kwWYc&feature=share&fbclid=IwAR0-pNFbdJHnpDVrwovS_7mrojMgBOrmTaKdqVyGVkpwzCcSLWmAKwqrxX8

জয় হিন্দ।

জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীকৃষ্ণ।

No comments:

Post a Comment